চিত্তসন্ধি পর্ব ২৩ লেখা: #Azyah

0
4

#চিত্তসন্ধি
পর্ব ২৩
লেখা: #Azyah

পরনে কালো বোরকা আর মুখে মাস্ক পরিহিত এক নারীকে আদরের জায়গায় বসে থাকতে দেখে ভরকে উঠেছে মেহতাব।এটা কে?তার কেবিনে কি করে!

হন্তদন্ত পায়ে এগিয়ে এসে বলল,

“আপনি কে?”

বোরকার আড়ালে লুকিয়ে থাকা নারী কোনো উত্তর দিলনা।এড়িয়ে খাতা কলম বের করছে।মেহতাব আবার বললো,

“কি ব্যাপার!বলছেন না আপনি কে?”

নিচু স্বরে উত্তর আসলো,

“আমি আদর”

কন্ঠস্বর চিনতে পেরেছে।চেনার পরও বিষম খেয়ে আছে। উৎসুৎকতা নিয়ে প্রশ্ন করলো,

“এই অবস্থা কেন আপনার?”

“কি অবস্থা?”

“বোরকা পরে জীবনেও আসতে দেখিনি আপনাকে।আজকে নতুন লুক?”

আদর মাস্কের নিচে দাতে দাত চেপে আছে।আরেহ বেক্কল ব্যাটা তোর থেকে নিজেকে আড়াল করার জন্য এই পদ্ধতি অবলম্বন করেছি। অন্তত নিজেকে শান্তনা দেওয়া যাবে। বোরকার আড়ালে নিজের লজ্জাবোধকে লুকিয়ে রাখা যাবে।কিন্তু সে যেই হারে পুলিশের মতন প্রশ্ন উত্তর পর্ব শুরু করলো!আদর কতক্ষন ময়দানে টিকে থাকতে পারে সেটাই দেখার বিষয়।

“মন চাইলো পড়লাম।কেনো কোনো সমস্যা?”

“মন চেয়েছে না?…এসব যে আপনার ঢং আমি খুব ভালো করেই বুঝি”

“মোটেও ঢং না!”

“মাস্ক খুলে তর্ক করেন সাহস থাকলে”

ঘুঘু দেখেছেন ঘুঘুর ফাঁদ দেখেননি। দ্বিতীয় বর্ষে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় ছেলেদের একটা আস্ত দলকে নাকানি চুবানি খাইয়েছি।আপনি কি জিনিস!আপনার সাথেও করতাম তর্ক।কিন্তু আপনিতো আমাকে লজ্জায় ফেলে দিয়েছেন।আমার বিতর্কের চেয়ে বেশি লজ্জা আমাকে ঘিরে রেখেছে।তাই বেচে গেলেন।

“শেষ?”

“হ্যা?..কি?”

“আপনার চিন্তা ভাবনা।শেষ হলে মাস্ক খুলে বসেন”

“চেহারা দেখাতে পারবো না”

মেহতাব ডেস্কের উপর একহাত ঠেকিয়ে সামান্য ঝুঁকে পড়লো। সন্দিহান নজরে প্রশ্ন করলো,

“কোনো কলঙ্গ লাগিয়ে ঘুরছেন নাকি চেহারায়?”

“আপনি সবচেয়ে বড় কলঙ্ক”

সামান্য উচ্চশব্দে হেসে উঠলো মেহতাব।তার হাসি দেখে হা করে চেয়ে আছে।এটাও কি স্বপ্ন?হাসতে জানে কসাই সাহেব? বাবাহ! এইদিনও দেখার ছিলো।কি এমন কৌতুক বলেছে আদর?কিন্তু তার হাসিটা সুন্দর। গুমোট চেহারায় বিশাল হাসিটা যেনো অদ্ভূত রকমের মুগ্ধতার প্রতিমা।যে কারো চোখকে আকর্ষিত করতে বাধ্য!আদরের অবাক মুখমণ্ডল জুড়েও হাসি ফুটলো মেহতাবের হাসিতে।একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে।

ফটাফট হাসি থামিয়ে মুখের ভাব করলো ঠিক আগের মতন।রং পাল্টাতে এক মিনিটও নিলো না।নিজের চেয়ারে আরাম করে বসে বললো,

“মাস্ক খুলুন।ভনিতা করবেন না।আর আমার এককাপ চা দরকার”

কাচুমাচু হয়ে মাস্ক খুলে চা বানাতে চলে গেলো।মেহতাব চেয়ার ঘুরিয়ে তার পানে চেয়ে।সকল কর্মকান্ড নজরদারি করার ভঙ্গিতে আছে।পানি গরম করতে এক কাপ পানি নিলে মেহতাব বলে উঠলো,

“আরেক কাপ নেন”

“কেনো?”

“আপনি খাবেন। যতোটুকু বুঝতেছি আপনার মাথায় গন্ডগোল চলছে।চা খান ঠিক হয়ে যাবে”

“আমারতো মাথায় গন্ডগোল।আপনি পুরাটাই গন্ডগোল”

“কিছু বললেন?” মেহতাব গলা উচিয়ে প্রশ্ন করলো।

“নাহহহহ ” আদরও একই ভঙ্গীতে উত্তর দিলো।

জোর-জবরদস্তিভাবে ঠিক মেহতাব এর সামনে বসে চা খেতে হচ্ছে।একবাক্যে জানিয়ে দিয়েছে ঠিক তার সামনের চেয়ারে বসে পুরো চায়ের কাপ খালি করতে হবে।এই আদেশে চরম বিরক্ত আদর।বারবার চাইছে সামনাসামনি না আসতে।ততই বারবার আসতে হচ্ছে।মেহতাব প্রতিক্রিয়াহীনভাবে চা খাচ্ছে।এরকম বিষাদ চা কি করে খায় মানুষ।চিনি ছাড়া কড়া লিকার?চায়ের চেয়ে ভালো করলার জুস চুলোয় গরম করে খাওয়া।স্বাদ কাছাকাছি পাবে।আরো একটি প্রশ্ন মনে?এত স্বাভাবিক কি করে?যেদিকে তার অস্তিত্ব আদরকে লজ্জায় দুমড়ে মুচড়ে দিচ্ছে।কুচকে যাচ্ছে সে।আর এই জনাবের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।ভুলে যাওয়া রোগ আছে নাকি আবার?

চায়ের কাপ টেবিলে রেখে দিলো ঠক করে।খাওয়া শেষ। দৃষ্টি কাপের দিকে রেখে খালি কাপ হাত দিয়ে ঘোরাতে ঘোরাতে বললো,

“স্যারের কি অবস্থা?”

“স্যার কে?”

“আপনার বাবা”

“আছে ভালো।একটু কথা কম বলে”

“একটু ভীত তিনি এখন।ঠিক হয়ে যাবে আস্তে আস্তে। ডোন্ট ওয়ারি”

আদর তাচ্ছিল্যের হাসি দেখে নিয়ে বললো,

“ডোন্ট ওয়ারি বললেই চিন্তা বাদ দেওয়া যায় না।আমি আমার বাবা মাকে খুব ভালোবাসি। সমস্যা হলো মুখে প্রকাশ করতে জানি না ভালবাসাগুলো, অনুভূতিগুলো।যে আমার চোখ দেখে বুঝে নেয়।সে পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান মানুষ।আমি আমার জীবনের বিনিময়ে তাদের চাই।কিছু হতে দেওয়া যাবে না তাদের। কিচ্ছু নাহ!”

মেহতাব খুব মনোযোগ সহকারে আদরের কথা শুনছে।সব কথা শুনে বললো,

“আপনার জীবনকে বাজি রাখার প্রয়োজন নেই।কিছুই হবে না।না আপনার না আপনার বাবা মার”

“কোনো নিশ্চয়তা আছে কিছু হবে না?আমার বাবা বলে মানুষের বয়স বেড়ে গেলে মানুষ পৃথিবীতে ত্যাগ করে এটা ভুল।মানুষের সময় যখন আসে চলে যাওয়ার তখন সে চলে যায়।হোক সে নবজাতক আর একশো বছরের বৃদ্ধ।আমার সময় হলে আমিও চলে যাবো।সময়টা হতে পারে আজ থেকে আরো অনেক বছর পর।বা আজই”

“ফালতু কথা বলতে একবারও মুখে বাজে না আপনার!কি অবলীলায় আজেবাজে বলে যাচ্ছেন।আসলে আপনার মা ঠিকই বলেছিলো।আপনি ভালো কথা শুনার মেয়ে না।আপনাকে সবসময় ধমকের উপর রাখা উচিত”

আকস্মিক মেহতাবকে রেগে যেতে দেখে হতভম্ব হয়ে গেলো আদর।সেতো রেগে যাওয়ার মতন কিছুই বলেনি।

মেহতাব উঠে দাড়িয়ে বললো,

“আজ থেকে আপনার খাতা কলম নিয়ে আমার সাথে রাউন্ডে যাবেন।দ্রুত আসুন”

এতবড় লোকের সাথে পায়ে পা মিলিয়ে এদিক থেকে ওদিক ছুটছে।একবার এক পেশেন্টের বেডের দিকে আরেকবার আরেক জনের।নিজেকে নেহাইতি ইদুর মনে হচ্ছে।এদিক থেকে ওদিক ছুটাছুটি করা ইদুর।আর মেহতাবকে সাদা বিড়াল।আজকে সাদা রঙের শার্ট পরে আছে।একটু এদিক ওদিক বলে পৃষ্ট করে ফেলবে তাকে।তার এক কদম আদরের পাঁচটা কদমের সমান।পায়ে পা মিলিয়ে চলতে ব্যর্থ।আর এই ব্যর্থতার উপহার হিসেবে মেহতাবের রাগী দৃষ্টিও ফ্রি।

___

দিনের নিভু নিভু অবস্থায় মেহতাবের পাশের সিটে বসে আছে আদর।খুব দক্ষতার সাথে ড্রাইভ করছে।আজ গাড়ীর গতি একদম ঠিকঠাক।হাতের রগগুলো ফুলে আছে।একটু ভালোভাবে লক্ষ করলে দেখা যায় হাতে ছোট্ট একটা স্পটও আছে।হয়তো ব্যথা পেয়েছিল।কোনো বাইকার,রিকশা,গাড়ি উল্টোপাল্টা করলেই চোখ রাঙিয়ে তাকায়।সবই বসে বসে পর্যবেক্ষণ করছে আদর।সব ব্যাপারে বাধ্য করার স্বভাবটা আজকাল বাড়তি।বাড়িও নাকি এখন তার সাথে ফিরতে হবে।বাড়ির রোড পার হয়ে আরো অনেকটা এগিয়ে গেলো কালো রঙের গাড়িটি।

আদর জানালার বাহিরে উকি দিয়ে মেহতাবের দিকে ঘুরে তাকালো,

“আমার বাড়ি পেছনে ফেলে রেখে এসেছেন”

মেহতাবের ভাবলেশহীন উত্তর, “জানি”

“তাহলে? কোথায় যাচ্ছেন? এটাতো আমার বাড়ির রাস্তা না।আর সামনে এগোলে গাড়ি ইউ টার্ন নেওয়ারও সুযোগ নেই।অনেক দূরে গিয়ে ঘোরাতে হবে।একদম উল্টো রাস্তা।এখনও সময় আছে থেমে যান।আমি হেঁটে চলে যাবো”

“একটা সেকেন্ড চুপ থাকতে পারেন না আপনি?”

“আমাকে বাড়িতে নামিয়ে দিন।আপনাকে কে বলেছে আমাকে পিক অ্যান্ড ড্রপ সার্ভিস দিতে?”

ভ্রুদ্বয় মাত্রাতিরিক্ত কুচকে মেহতাব বললো, “তুলে নিয়ে যাচ্ছি নাতো।একটু চুপ করে বসেন।সহি সালামতে বাড়ি পৌঁছে দিলেইতো হয় নাকি?”

গাড়ি চলতে চলতে এক জায়গায় এসে থামলো।দেখে মনে হচ্ছে কোনো রেস্টুরেন্ট।তবে ডেকোরেশন একদম ভিন্ন। সম্পুর্ণ কাঠের তৈরি সবকিছু। ছাদটা দেওয়া ছন দিয়ে।সাথে একটা লেকও আছে।গ্রাম বাংলার পরিবেশের সামান্য ছোঁয়া এই উচু দালানের শহরে।এখানে বসে লেক দেখতে দেখতে খাবার উপভোগ করছে অনেকেই।

“আমরা এখানে কেনো এসেছি?”

“মানুষ রেস্টুরেন্টে কেনো আসে? নাচগান করতে অবশ্যই না!”

বলেই আদরের হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলো। আচমকা হাত ধরায় আবারো চমকে উঠেছে।এমন চমকাতে চমকাতে কোনদিন আকাশে বিদ্যুৎ হয়ে যায় কে জানে।এমনটা একটা অদ্ভূত ভাবনায় আদর নিজের মুখ নিজে কুচকে নিলো।নিজেকে বলছে তোর মাথায় এসব আজাইরা কোথা থেকে আসে!চমকাতে চমকাতে কোনদিন আকাশে বিদ্যুৎ হয়ে যাবে!ছাতার মাথা!মনযোগ ঘুরে গেলো আবার হাতের দিকে।মেহতাব তাকে হালকাভাবে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।যেনো এক বিশাল অধিকারবোধ।অনুমতিটুকু চাইলো না?হাত ধরার ক্ষেত্রেও তার জোর খাটানো লাগবে?সেদিনও এভাবেই হাত ধরেছিল।নিজের বিশাল হাতের আঙ্গুলের ভাজে আকড়ে ধরে ছিলো আদরের ছোটখাটো হাতটা।সেদিন হাতে উষ্ণতা অনুভব করলেও আজ ঠান্ডা স্পর্শ পাচ্ছে।

মুখোমুখি বসে আছে দুজন।মেহতাব দুহাত কাঠের টেবিলে ঠেকিয়ে দূরে লেকের দিকে চেয়ে আছে।আদরের দিকে একবারও তাকায়নি।মাথা ঘুরিয়েই বলে উঠলো,

“কি খাবেন?”

সুযোগ পেয়ে আদর বলে বসলো,

“আপনি নিজেই আমাকে এত বড় একটা ডায়েট চার্ট ধরিয়ে দিয়েছেন।অত্যাচার করে করে এসব আধ সেদ্ধ জিনিস খাওয়াচ্ছেন। এখন নিজেই জিজ্ঞেস করছেন রেস্টুরেন্টে এসে কি খাবো?নিজেই নিজের কথার খেলাফ করছেন?”

মেহতাব নির্বিকার হাসলো। মেনুটা আদরের দিকে এগিয়ে দিয়ে ভ্রু উচু করে ইশারা করে বললো দেখতে।মেনুর খাবার দেখে আদর হাসছে।স্বাভাবিক হাসি নয়।তাচ্ছিল্যের হাসি।সে কল্পনাও কিভাবে করলো মেহতাব তাকে রেস্টুরেন্টে এনে জাঙ্ক ফুড খাওয়াবে?যেকিনা মার কাছে বড় গলায় বলেছিলো সে তার কাজের প্রতি অনেক লয়াল।এসব নিতান্তই বোকামি।তার মতন মানুষ এসব কাজ করতেই পারে না।মেনু কার্ডে বড়বড় নয় ছোট অক্ষরেই খাবারের লিস্ট দেওয়া।আদরের চোখ সুস্থ।হলুদ লাইটের আলোয় ভালোভাবে পড়তে পারছে।বাংলা খাবার!সব ধরনের ভর্তা, ভাত,খুদের ভাত ইত্যাদি।

তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে মেনু কার্ড পুনরায় মেহতাবের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,

“আমি খাবো না। আপনিই খান”

মেহতাব কথা বাড়ায়নি।ওয়েটারকে ডেকে নিজ থেকে খাবারের অর্ডার করেছে।খুদের ভাত আর সকল রকমের ভর্তা।যা অর্ডার করেছে দুটো করে।এটা আদরের দ্বিতীয় বোকামি। সে বলেছে খাবে না।আর এটা মেহতাব মানবে। উহু!জোর করে গিলাবে।

খাওয়া দাওয়া শেষ। বিল দেওয়ার জন্য ওয়েটারকে ডাকলে আদর বললো,

“আপনি দিয়েন না।আমি দেই”

“নাহ”

“এটা রেসিজম জানেন।”

“আপনি টাকা পাবেন কোথায়?”

“ওমা!আমি চাকরী করি না? স্যালারিটাওতো পেলাম মাত্র।আমি একজন সাবলম্বী মেয়ে”

“স্যালারিটা আপনাকে কে দিয়েছে শুনি?”

“আপনি”

“তাহলে লাভ কি হলো? টাকাতো আমারই”

“আমি কষ্ট করে কাজ করেছি।আমার পারিশ্রমিক ঐটা।আপনি কাজের বিনিময়ে দিয়েছেন টাকা আমাকে।”

“শুয়ে,বসে,কাজ বাড়িয়ে খুব পরিশ্রম করেছেন।”

খোটা দিলো?সারাদিন দৌড়ের উপর রেখে বলে সে নাকি শুয়ে,বসে কাজ করেছে!অপমানের একটা লিমিট থাকা উচিত।কি সুন্দর ভাষায় অপমান করে ছেড়ে দেয়?সামনে বসা মানুষ উত্তর দেওয়ার জন্য কোনো শব্দই খুঁজে পায় না।আদর বিশাল ভাবনা চিন্তার ভান্ডার খুলে বসেছে।তার সেই মেহতাব বিল মিটিয়ে নিলো।

পরাজিত সাবলম্বী নারীর মতন আবার মেহতাব এর পেছনে ছুটেছে।এবার হাতটা ধরলো না কেনো?না ধরুক আমার কি?গাড়ীর অল্প দুরত্বে এসে পায়ের গতি থামিয়ে দিল মেহতাব।তার দেখাদেখি আদরও ব্রেক কষেছে।একদম দেড় ইঞ্চ দুরত্বে।এখনই নাহয় ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনা হয়ে যেতে।উনি থেমে গেলো কেন?কিছু ফেলে রেখে এসেছে?পেছন ঘুরে আদরের সামনে এসে দাঁড়ালো।হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে আদরের ঠোঁটে লেগে থাকা খাবার মুছে বললো,

“নিজেকে গোছান।সো ম্যাসি ইউ আর”

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here