#চিত্তসন্ধি
পর্ব ৩
লেখা: #Azyah
ব্যস্ত নগরী।রাতের নিস্তব্ধতা এই সদা জাগ্রত শহরে অনুভব করা দায়। রাস্তায় চলাচল করছে মালবাহী ট্রাক, দূরপাল্লার বাস সাথে আরো অনেক যানবাহন।দুইপ্রান্তে জ্বলজ্বল করছে হলুদ রঙের ল্যাম্প পোস্টের বাতি।ক্লিনিকের কৃত্রিম বাতিগুলো রোগীদের সুবিধার্থে জ্বালানো।কেউ ঝিমোচ্ছে,কেউ দায়িত্বের সাথে কাজ করে যাচ্ছে।এখানে বিশ্রাম নেই।পালা বদলে কাজ করে মানুষ।ডাক্টার নামক প্রাণীরা।তাদেরও ঘুম আসে,ক্লান্ত হয় তারাও। দায়িত্বের জেরে নিজেদের জীবনও চলে অন্যের অধিনস্ত হয়ে।জানালার সাদা পর্দা টেনে কালো রঙের চেয়ারে বসেছে মেহতাব।এতখন নিশি বিলাস করছিলো।শহর বিলাস করছিলো। শরীর জানান দিলো একটু বিশ্রামের প্রয়োজন।সেই প্রয়োজনীয়তাকে কেন্দ্র করেই গা এলিয়ে দেওয়া।সাদা সচ্ছ কাছের চশমা খুলে পাশে রেখে চোখ বুজেছে।ঘুমোবে না আবার জাগনাও থাকবে না।ইংরেজি ভাষায় যাকে বলে “ন্যাপ” নেওয়া।
চোখ বুঁজে মাথাটা শীতল হতে শুরু করলো। বন্ধ চোখে ভেসে উঠলো অদ্ভুত সব চিত্র।যেনো কোনো ইলুশনের মধ্যে বিভোর।পাহাড় চূড়ায় নীল আকাশে জ্বলজ্বল করছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তারা।তারাদের সংখ্যা অসংখ্য থেকেও অসংখ্য।ভ্রম সবই ভ্রম।তবে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে এখানে।নিজেকে হ্যালুসিনেট করতে ইচ্ছে হচ্ছে নিজেই।
“স্যার!স্যার!”
নারী কণ্ঠে ধিরফরিয়ে উঠলো।ঘড়ির কাঁটা তখন বলছে রাত তিনটে বাজে।ঘুমিয়ে পড়েছিল সে।এক লাফে উঠে সামনে দেখতে পেলো জোহরা খাতুনকে।
উৎকন্ঠা হয়ে জোহরা খাতুন আবার বললেন,
“স্যার আদর ওয়াশরুমে বমি করতে গিয়ে পড়ে গেছে।রক্ত বেরোচ্ছে কপাল থেকে।প্লিজ আসুন আমার সাথে।”
“আসছি”
বলে সাথেসাথে তিনতলায় পা বাড়িয়েছে।পায়ের গতি দেখে মনে হচ্ছে সে হাঁটছে না দৌড়াচ্ছে। দেলওয়ার হোসেন একজন বিশ্বস্ত মানুষ।অল্প শিক্ষিত হলেও ছায়ার মতন লেগে থাকেন মেহতাবের সাথে।আজ তাকে নাইট ডিউটি করতে দেখে সেও বাড়ি ফেরে নি।তাকে তরিহরি করতে দেখে পেছনে সেও দৌড় লাগালো।জোহরা খাতুনকে পেছনে ফেলে আগে গিয়ে পৌঁছলো ৩০৪ নাম্বার রুমে।কপালে রুমাল চেপে বেডের কোণায় বসে আবারো অস্রু ঝরিয়ে যাচ্ছে আদর।
মেহতাব এগিয়ে গিয়ে নরম কন্ঠে বলল,
“দেখি”
কপালের অনেকটা অংশ কেটে গেছে।রুমাল চেপে রাখায় রক্ত প্রবাহ কমলেও ব্যান্ডেজ করতে হবে। দেলোয়ার হোসেনের দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমার কেবিন থেকে ফার্স্ট এইড নিয়ে আসেন। দ্রুত!”
মিনিট পাঁচেক পর দেলাওয়ার ফিরে এসেছেন ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে।আদর মাথা ঝুঁকিয়ে বসে আছে। সামনেই মেহতাব দাড়িয়ে।মাথা এতটাই নামানো যে কীভাবে ব্যান্ডেজ করবে সেটা বুঝতে পারছে না।
ঝাঁঝালো স্বরে বললো,
“মাথা তোলেন!”
ঝাড়ি খেয়ে আদর মাথা তুলেছে ঠিকই কিন্তু ভীষণ রাগ হচ্ছে তার।এমনেই সে এখন একজন রোগী।তার মধ্যে ব্যাথা পেয়ে বসলো।তারপরও এই ডাক্তারের তাকে ধমকানো লাগবে কেনো?ঠোঁট চেপে মাথা তুলে দিয়েছে।মুখে বিরক্তির ছাপ।নাক ফোলাচ্ছে বারবার।যা মেহতাবের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। ভালোই বুঝেছে তার রাগটা।
আলতো হাতে দ্রুত ব্যান্ডেজ সেরে বললো,
“পাকনামো কেনো করা লাগবে? হাটা চলার শক্তি না থাকলে মাকে ডাকা যেতে পারতো।নিজে নিজে মাতব্বরি না করলে এতবড় কান্ড ঘটতো না আর।”
তার কন্ঠ গম্ভীর কিন্তু শীতল।ঠান্ডা স্বরে অপমান করে বসে থাকলেও মানুষ দ্বিধায় পরে যাবে।অতিরিক্ত জ্ঞানী মানুষ ছাড়া তার কথার ধাঁচ বোঝা সম্ভব নয়।ঠান্ডা মাথায় খুন করা।আদর ঠিকই বুঝেছে কথাটি তাকেই ইঙ্গিত করে বলা।
“দেলাওয়ার চাচা?”
“জ্বি স্যার।”
“এই ওষুধটা নিজের ফার্মেসী থেকে নিয়ে আসুন। ইনজেকশন দিয়েছি অনেক সময় পার হলো।এই মেডিসিন লাগবে এখন।”
“ইনজেকশনতো আপনি দেননি!পালিয়েছেন”
খট করে আদরের মুখ ফসকে বেরিয়ে গেলো।বলেও যেনো ফেঁসে গেছে।মেহতাবের রাগী দৃষ্টির স্বীকার হয়েছে।মুখ চেপে ধরলো সাথেসাথে।এই ভুল সময়ে ভুল কথা বলার অভ্যাস তাকে একদিন জেলে নিবে।
দেলাওয়ার হোসেন এর অপেক্ষা করতে পাশের সোফায় বসল মেহতাব।জোহরা বেগম মেয়েকে শুইয়ে দিয়ে পাশের সোফায় তিনিও বসেছেন।চুপচাপ বসে তিনি। মেহতাবও।তিনি মেহতাবের বিদ্ধস্ত চেহারার দিকে চেয়ে।দেখেই বুঝা যাচ্ছে ক্লান্ত।চোখে ঘুমঘুম ভাব।মলিন হয়ে আছে চেহারাটাও।সবসময় সেট থাকা চুলগুলো এলোমেলো।
“আপনাকে ক্লান্ত মনে হচ্ছে স্যার”
“জ্বি একটু কাজের চাপ”
“চা খাবেন স্যার?”
“হয়তো ডাক্তার হিসেবে আমার বয়স বেশি।কিন্তু আপনার আমি আপনার ছেলের বয়সের।বারবার স্যার ডাকবেন না প্লিজ।আমার ওকওয়ার্ড লাগে”
জোহরা খাতুন স্মিথ হাসলেন। তারও মেহতাবকে স্যার ডাকতে অসস্তি লাগছিলো।তিনি আবার বললেন,
“আমি চা নিয়ে আসি”
“কষ্ট করা লাগবে না। আই অ্যাম ওকে”
“কিসের কষ্ট?পাশেইতো ক্যান্টিন।আপনাকে দেখে ভীষণ ক্লান্ত লাগছে।আমি আনছি আপনি বসুন।”
“অযথা কষ্ট করছেন”
“মাত্রই বললেন আপনি আমার ছেলের বয়সের।এতে কষ্ট কিসের?মায়েদের কাছে এসব ছোটখাটো বিষয়।আপনি বসুন।”
জোহরা খাতুন মিশুক ধরনের মানুষ।কেউ বসে দু চারটে কথা বললেই বরফের মত গলে যান।সুন্দর করে কথা বললে তাকে আপন ভাবতে শুরু করেন। মেহতাবের চেহারা দেখে অনেক মায়া লাগছিলো।শক্তপোক্ত পুরুষ কিভাবে কাহিল হয়ে বসে আছে।
জোহরা বেগমের যাওয়ার পানে চেয়ে মেহতাব ভাবলো তার মা-ওতো এমন ছিলো!ছিলো এখন আর নেই।খুব তাড়া ছিল তার।চলে গেছে অনেক দূরে।ফেলে রেখে গেছে তার দুই সন্তানকে।একা! অভিমান হয় তার উপর অনেক।আরো কিছু সময় রয়ে গেলেই পারতো?বাবা-মারা সন্তানের সাথে দীর্ঘসময় কাটায়।তার মা এত নিষ্ঠুর হলো কেনো?মাত্র পনেরো বছর সময় দিলো তাকে!বাকি পনেরো বছর একা কিভাবে কাটিয়েছে সেটা কি তার মা জানে?অবশ্য জানে হয়তো।পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে মার পুরনো ছবিতে আঙ্গুল ছোঁয়ালো।এখনই হয়তো আবেগপ্রবন হয়ে পড়বে।সেটা আর হলো না। আদরের আওয়াজে।
ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে বিড়বিড় করছে।তার দিকে চোখ যেতেই দেখলো ঘুমের মধ্যে কি জেনো আবোলতাবোল বলছে এই মেয়ে।
তোয়াক্কা করলো না মেহতাব।জোহরা খাতুন আসতে দেরি করছেন।পেছনের দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে ফোনের স্ক্রিনে চোখ দিলো।বেশিক্ষণ সেখানে মনোযোগ আড়ষ্ট করতে পারলো না। পূনরায় চোখ অবাধ্য এর মতন আদরের নাকে জ্বলজ্বল করতে থাকা নোসপিনের দিকে গেলো।কেমন অদ্ভুতভাবে আকর্ষণ করছে এই জড়বস্তুটি তাকে!নোসপিনের বাহানায় চোখ গেলো আদরের ঘুমন্ত চেহারাতে।লাল রেশগুলো ধীরেধীরে কমে চেহারার সাথে মিশে যাচ্ছে।আহামরি সৌন্দর্য্য বলতে কিছুই নেই চেহারায়।একজন নারীর মুখ স্বাভাবিকভাবে যেমন হওয়া উচিত ঠিক তেমনি।আলাদাভাবে টান অনুভব করার মতনও কিছু খুজে পেলো না।তারপরও চোখ সেখানে আটকে।অনেক যুবতী মেয়ের চিকিৎসা করেছে সে।এমনটা কখনো হয়নি।ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করার নূন্যতম ইচ্ছে জাগেনি।তবে?মা বলেছিলো সে নিজে তার জন্য একটা বউ খুঁজে আনবে।যেখানে মা নেই সেখানে কোনো মেয়ের প্রতি আর আকর্ষিত হয়ে ইচ্ছেও হয়নি।এই মেয়েটিকে ভ্রমের মতন লাগছে এই মুহূর্তে।মেয়েটির সাথে এই তৃতীয়বারের মতন দেখা।মুখটা কেমন মেহতাবের চোখকে টেনে ধরে আছে।যেনো এক মুহূর্তের জন্য নজর সরাতে না পারে।
মোবাইলের স্ক্রিনে গান বাজছে।অনুভূতিহীন চোখদুটো একদিকে নিবদ্ধ।জোহরা খাতুন রুমে প্রবেশ করেছেন।হাতে ফ্ল্যাক্স।টেবিলের উপর চায়ের কাপ রেখে ঢালতে শুরু করলেন।চা ঢেলে মেহতাবের সামনে দিলেন।তার কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।একহাতে মোবাইল সামান্য উচু করে ধরে সামনে বেডের দিকে তাকিয়ে আছে সে।একটা জলজ্যান্ত মানুষ রুমে প্রবেশ করে চা ঢেলে তার দিকে এগিয়ে দিলো। অথচ তার কোনো হুশ নেই।
“চা টা খেয়ে নিন”
হঠাৎ পাশ থেকে কারো কণ্ঠ শুনতে পেয়ে চমকে উঠলো। ফোনটা স্লিপ খেয়ে টেবিলে শব্দ করে পড়েছে।জোহরা খাতুন কখন এলেন?সে এখানে বসে থেকেও দেখতে পেলো না?আশ্চর্যের চরম সীমায় তার প্রশ্নগুলো।
“আপনি?কখন এলেন?”
“মাত্রই আপনার সামনে দিয়ে আসলাম।আপনি হয়তো কিছু ভাবছিলেন।”
“ওহ!”
“চা খেয়ে নিন।ফ্রেশ লাগবে”
“থ্যাংকস”
দেলাওয়ার হোসেন অনেক সময় নিয়েছেন।এসেই হাপিয়ে বললেন,
“নেন স্যার।নিচের কোনো ফার্মেসীতে এই ওষুধ ছিলো না।অনেক দূর থেকে আনা লাগছে।”
“এসব বিষয়ে যারা দায়িত্বরত আছে তাদের আমার সাথে মিটিং এ ডাকবেন।গাফিলতি আমার একদম পছন্দ না।কেনো একটা ক্লিনিকের ফার্মেসিতে সব ধরনের ওষুধ থাকবে না?”
____
ফজরের আযানের সময় হয়েছে।রাত চারটার পর নিজের কেবিনে এসে বসে ছিলো।মাথাটা ভারী হয়ে ছিলো তার।তাই কেবিনের বেডে শুয়ে নিজেকে বিশ্রাম দেওয়ার চেষ্ঠা করেছিলো।তাতে ব্যর্থ হয়।মাথাটা এই মুহূর্তে বোঝা বোঝা মনে হচ্ছে।তাই কাক ডাকা ভোর অনুভব করতে করিডোরে এসে দাঁড়িয়েছে।বাহিরে মাত্রই আযানের ধ্বনি বেজে উঠলো।হসপিটালের অনেকেই নামাজ ঘরে নামাজ পড়তে যাচ্ছেন। মেহতাব ঠিক পাশের করিডোরে রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে।
“আপনি এখনও বাড়ি যাননি?”
পেছনে তাকাতেই জোহরা খাতুনকে দেখতে পেলো সে।মাথায় কাপড় বেধে সেও যাচ্ছিলেন নামাজ পড়তে। মেহতাবকে দেখে থেমে যায়।
“জ্বি একটু পরই যাবো।”
“আচ্ছা আমি নামাজ পরে আসি তাহলে”
“আচ্ছা!”
অন্ধকার ৩০৪ নাম্বার রুম।সাদা পর্দার আড়াল থেকে মৃদু আলো ভেসে আসছে।কিন্তু তাতে রুমে তেমন আহামরি পরিবর্তন আসেনি।আরামে ঘুমোচ্ছে আদর।ঘুমে থাকলে কোনো ধ্যান জ্ঞান থাকে না তার। বিভোরে ঘুম যায়।কিন্তু সেটা নিজের ঘরে নিজের বিছানায়। হসপিটালের বিছানাটাকে মনে হচ্ছে শক্ত পাথরের।শান্তি পায়নি সারারাত ঘুমিয়েও।এপাশ ওপাশ করেছে।বেশকিছু সময় পর পিটপিট করে চোখ খুললো।সবকিছু আবছা আবছা লাগছে চোখের সামনে।অন্ধকারও বটে।ঠোঁট কামড়ে সিলিং ফ্যানের দিকে চেয়ে আড়মোড়া হয়ে উঠতে নিলো।ঠিক তখনই পাশে কারো অবয়ব দেখে আতকে উঠলো।আবছা অন্ধকারে বুকে হাত বেধে কেউ দাড়িয়ে আছে। সম্পূর্ণটা পরিষ্কার নয়।তবে এটা নিশ্চিত এটা তার মা নয়।একজন পুরুষ। মস্তিষ্ক সচল হতেই চিৎকার করতে চাইলে অবয়বটি তার মুখ চেপে ধরে। চোঁখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে আদর।একহাতে মুখ চেপে অন্য হাতে রুমের লাইট অন করে দিলো মেহতাব।পরপর বলে উঠলো,
“শাট আপ!”
“আপনি!..আপনি এখানে কি করেন?”
“চেকাপ করতে এসেছি”
“এভাবে অন্ধকারে?চোরের মতন?”
“আমাকে আপনি চোর বলছেন!!” রাগী স্বরে বলে উঠলো মেহতাব।
“না না।আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আপনি লাইট অন করে নিলেই পারতেন।”
রাগ দমে গেলো।কন্ঠ শীতল শীতল হলো। স্টেটস্কোপ কাধে ঝুলিয়ে বলল,
“আপনি ঘুমোচ্ছিলেন।”
কথা বাড়ায়নি আর আদর।এর সাথে কথা বলতে অদ্ভুত লাগে।কথায় কথায় আগুন বর্ষায়।অযথা নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারার কি দরকার?অযথা অপমানিত হবে। এমনেতেই তার আর তার ডায়েট চার্ট এর উপর আদরের ভীষণ রাগ।তার উপর যদি চ্যাটাং চ্যাটাং কথা বলে নির্ঘাত মাথা দুভাগ করে ফেলতে ইচ্ছে হবে।
“আপনি জানেন আপনি যদি চিৎকার করতেন কেমন একটা বাজে সিন ক্রিয়েট হতো?নির্বোধ আপনি?নিজের মুখ খোলার আগে বুঝে শুনে খুলবেন।”
আদর দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।কই ভেবেছিল মুখ খুলবে না।খুললেই ঝাঁঝালো কথার সম্মুখীন হবে।এখানে দেখি মুখ না খুলেও তার কথার সম্মুখীন হতে হলো।এর চেয়ে ভালো একটা কিছু বলেই ফেলত।কিছু না করে দোষী হওয়ার চেয়ে ভুল করে দোষী হওয়া বহুগুণে ভালো।আর সে কিনা নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ে চেপে দিচ্ছে!কে বলেছিল ভূতের মতন এসে দাড়িয়ে থাকতে?হুট করে ঘুম ভেংগে এভাবে কাউকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে কে না ভয় পাবে?
____
“আপনাকে একটা অনুরোধ করবো।কিছু মনে করবেন না”
জোহরা খাতুনের কথায় মেহতাব সাবলীলভাবে উত্তর দিলো,
“জ্বি অবশ্যই ”
“সেদিন শুনলাম আপনি কাজের জন্য অ্যাসিস্ট্যান্ট খুঁজছেন।একজন শিক্ষিত ছেলে অথবা মেয়ে।আমি আসলে বলতে চাচ্ছিলাম….”
“হেজিট্যাট ফিল করবেন না।কি বলতে চাচ্ছেন বলেন”
আদরও মায়ের দিকে চেয়ে।কি বলতে চাচ্ছে এমন?তার অ্যাসিস্ট্যান্ট এর ব্যাপারে মায়েরই বা কি কথা থাকতে পারে?
“আদরের ওয়ার্ক এক্সপিরিয়েন্স আছে আগের।পড়ালেখাও করছে।এখন ঘরেই আছে।আমি বলতে চাচ্ছিলাম যদি ওকে অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে…”
জোহরা খাতুনের কথার অর্থ বুঝতে পেরে সর্বপ্রথম চোখ গেলো আদরের দিকে।আদর তার মায়ের দিকে।হা করে চেয়ে আছে।কি বললো সে?জেনে বুঝে বাঘের মুখে ফেলে দিতে চাচ্ছে!এতদিন তার কথামত সেদ্ধ আর হেলথি খাবার খাইয়েছে।এবার কিনা তাকে পুরোপুরি হস্তান্তর করে দেওয়ার পরিকল্পনা?
মেহতাব এর চেহারা দেখে জোহরা বেগম বললো,
“এমনিতে আমাদের কোনো প্রবলেম নেই।তবে কাজ করা ভালো।এক্সপিরিয়েন্স হয়।পরবর্তীতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজে আসে।আপনার সমস্যা থাকলে বাদ দিন।কিছু মনে করবেন না”
“না না আমার কি সমস্যা হতে পারে।উনি কোন ব্যাকগ্রাউন্ড এর?”
সুযোগ পেয়ে বসলো আদর।তার সাথে মেহতাব এর ব্যকগ্রাউন্ড কোনোভাবে মেলে না।সে রাষ্ট্রবিজ্ঞান এর ছাত্রী। চট করে বলে ফেললো,
“আমিতো আর্টস ব্যাকগ্রাউন্ড এর।আমার সাথে এসব মেডিকেল টেডিকেল কি যায়?”
ড্রয়ার থেকে একটি কার্ড বের করে আদরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
“এখানে আমার মেইল আছে।সিভি সেন্ড করে দিবেন”
চলবে…