চিত্তসন্ধি পর্ব ২৭ লেখা: #Azyah

0
4

#চিত্তসন্ধি
পর্ব ২৭
লেখা: #Azyah

নিত্যদিনের কাজ ঠিক একইভাবে চলছে।পেশেন্ট আসা থেকে শুরু করে রাউন্ডে যাওয়া সব নিয়ম মাফিক চলছে। মেহতাব এর পেছন পেছন বিড়াল ছানার মতন ঘুরছে আদর।কিন্তু তার মেজাজ নিত্যদিনের মতন নেই।ভীষণ রেগে।সেদিন তার কথার উপর দেওয়া হয় নি। কাল ভার্সিটিতে নাতাশা মেহতাবের সাথে ঘেঁষাঘেঁষি করেছে। হিংসুটে বলা হয়েছে আদরকে।তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে হাত চেপে ধরা হয়েছে তার।সব মিলিয়ে মেজাজের পারদ চড়ে। সর্বোচ্চে,সীমা ছাড়িয়ে। মেহতাব আদরের অবস্থা দেখে মিটিমিটি হাসছে।লজ্জা পেয়ে নাক লাল হতে দেখেছে।রেগে গিয়ে পুরো মুখশ্রীতেই লাল আভা।আনন্দ দিচ্ছে মেহতাবকে।

প্রায় সন্ধ্যার দিকে কেবিনে ফেরার সময় পেলো।গুনে গুনে ৪টা ওয়ার্ড আর ১০টা কেবিনের রোগীকে চেকাপ করতে হয়েছে। মেহতাব এর অভ্যাস থাকলেও আদরের পায়ের অবস্থা নাজেহাল।হেঁটে কোমর ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে।পায়ে বোধহয় ঠোসাও পড়ে গেলো।জুতো খুলে একবার দেখে নেওয়া উচিত।

মেহতাব রুমে এসেই চেয়ারে গা এলিয়ে চোখ বুজে ছিলো।এভাবেই ক্লান্তি দুর করে সে।বাহিরে বাতাসের সাই সাই শব্দে চোখ খুলে তাকালো মেহতাব।পুরোপুরি সন্ধ্যা না নামলেও বিদঘুটে অন্ধকার বাহিরে। অম্বরে কালো মেঘের ঘনঘটা। সম্পূর্ণ আকাশে অধিপত্ত বিস্তার করে আছে।বৃষ্টি আসবে বোধহয়।উঠে দাড়ালো মেহতাব।ধীরে সুস্থে জানালার সামনে গিয়ে কাচ হালকা তুলে নিয়েছে। কাচ তুলতেই এক ঝড় হাওয়া মেহতাবের শরীর ছুঁয়ে গেছে।বাহিরে বৃষ্টির ছিটেফোঁটাও নেই।শুধু বাতাস।আকাশে মৃদু বিদ্যুৎ চমকে উঠছে।গর্জন তুলছে একটু পরপর।কালবৈশাখীর আভাস।বাতাস অনুভব করতে করতে মনে পড়লো আদরের কথা।

পেছন ফিরে এসে আদরকে প্রশ্ন করলো,

“আকাশের অবস্থা ভালো না।বাড়ি যাবেন কি করে?”

আদর পা মালিশ করতে করতে উত্তর দিলো,

“দেখি কিছুক্ষন অপেক্ষা করে।যাওয়ার মতন পরিস্থিতি হলে চলে যাবো।”

মেহতাব এর চোখ গেলো আদরের পায়ে।তার হাত আর মুখের তুলনায় পা অনেক ফর্সা।সেদিন লেকে এতটা ভালো করে দেখা হয়নি।রক্ত জমে লাল হয়ে আছে পা দুটো।

“বেশি ব্যাথা করে?”

আদর ছোট করে উত্তর দিলো, “হুম”

মেহতাব তার ড্রয়ার থেকে একটা ম্যাসাজার বের করে আদরের দিকে এগিয়ে দিলো আর বললো,

“এটা দিয়ে পায়ের তালু ম্যাসাজ করেন ঠিক হয়ে যাবে। ব্যাথা না কমলে মেডিসিন দিবো”

আদর নিজ কাজে মনোযোগ দিয়ে মুখ বেকিয়ে বোঝাতে চাইলো তার এসবের দরকার নেই।এত দরদের দরকার নেই।জুতো মেরে গরু দান। উক্তিটি পুরোপুরি না মিললেও অনেকাংশে মিলে যাচ্ছে।

“গায়ে শক্তি না থাকলে হাতপা ব্যথা করবেই।নিজেই ভুগছেন এখন।আমি আপনার চেয়ে বেশি সময় কাজ করি।কই আমিতো একদম ফিট।কথা শুনেন না।ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করেন না।আমি আমার লাইফে আপনার মতন পেশেন্ট দেখিনি। যার নিজের প্রতিই নিজের ভালোবাসা নেই।”

“বুঝেছি আর খোটা দিতে হবে না”

ম্যাসাজারটা টেবিলের উপর রেখে পুনরায় ফিরে গেলো নিজের চেয়ারে।আজ আদরের রাগের পিঠে রাগ দেখাতে ইচ্ছে হচ্ছে না। উপভোগ করতে মন চাইছে। মেহতাব ভালো করেই জানে তার রাগের কারন।মেহতাব মনে করে তার সাথে দুষ্টুমিটা ঠিক যায় না।বয়সের কারণে আর স্বভাবের কারণে।কিন্তু মনে ঠিকই বাসনা জাগে একটু দুষ্টুমি,ফাজলামো করাই যায়।ইচ্ছাটা মনেই থেকে যায়।পূরণ করা হয়ে ওঠে না।আজ আদরের মুখ দেখে ভীষণ হাসি পাচ্ছে।মেহতাব ভাবলো,তাকে আরেকটু রাগালে কেমন হয়?আমাকেতো সারাদিন বিরক্ত করে,রাগিয়ে দেয়,বারবার নিজের দিকে টানে।সেই হিসেবটা সমান সমান কথা উচিত না?অবশ্যই উচিত।এইযে হৃদয়ে তোলপাড় তুলে বারবার সেটা জানে?তার কম্পিত ওষ্ঠজোড়া,চোখের ঘন পাপড়ি,নাকে জ্বলজ্বল করতে থাকা নোসপিন, লজ্জা রাঙ্গা চেহারা!ইচ্ছে হয় তাকে কাছে টেনে নিতে।নিজের সাথে মিশিয়ে রাখতে।সারা মুখে গাঢ় চুম্বন এঁকে দিতে।নিজের নিয়ন্ত্রণ কতবার হারাতে কতবার সামলেছি সেটা জানে?সে দায়ী এসবের জন্য।আমার মতন মানুষকে জব্দ করার জন্য সেই দোষী।এই দায়ভারটা তারই বহন করতে হবে।

ফোন তুলে নিলো।ভুলভাল নাম্বারে ডায়াল করেছে।একবার ভাবলো কাজটা কি ঠিক হবে? বাচ্চামো দেখাবে নাতো?এই মেয়ের জন্য সেসবও করতে বাধ্য করছে আমার মন যা কোনোদিন কল্পনাও করতে পারিনি।আদরের দিকে তাকিয়ে তৎখনাৎ মত বদলিয়ে ফেললো।কোনো বাচ্চামো দেখাবে না।বরং আদরের প্রতিক্রিয়া দেখার মতোন হবে।

“হ্যালো সামান্তা”

সামান্তা নামটি শুনে কান খাড়া হয়ে গেলো আদরের। মেহতাবের দিকে চোখ যেতে দেখলো সে চেয়ারে অনেকখানি হেলান দিয়ে একপাশ ঘুরে কথা বলছে।তার চেয়ে অদ্ভুদ তার কথা বলার ভঙ্গি।সামান্তা অবশ্যই একটা মেয়ের নাম।হেসে হেসে রোমান্টিকভাবে তার সাথে চলছে মেহতাবের আলাপ।একপাশের ভ্রু উচিয়ে সন্দিহান দৃষ্টি ছুড়লো মেহতাব এর দিকে।মেহতাব কথায় ব্যস্ত। বিশ্রী লাগছে মেহতাব এর হাসি মুখ!তার এত নরম প্রেমময় কন্ঠস্বর বিষের মতন লাগছে।আর তার লাজুক মুখ!কেউ কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দিলে হয়তো আদরের মন শান্ত হবে।হাতপা উসখুস করছে।আজ সাহস আর শরীরে শক্তি থাকলে চেয়ার উপ্রে ফেলে দেওয়া যেতো।এত ভয়ানক ভয়ানক চিন্তাভাবনার পর আদর নিজেকে থামালো।

প্রশ্ন করতে লাগলো নিজেকে,

“তোর কি?উনি যা ইচ্ছে করুক।প্রেম করুক,বিয়ে করুক, ডিভোর্স দেক।তোর কি?তুই এমন হিংস্র বাঘের মতোন থাবা মারার চিন্তায় আছিস কেনো?রিল্যাক্স হ।সে কোনো ইম্পর্ট্যান্ট কেউ না” বলে বড় বড় দুটো শ্বাস ছেড়ে নিজেকে শান্ত করলো আদর।

মেহতাব মুখে বিশাল হাসি ফুটিয়ে বললো, “ওকে ডিনার প্ল্যান ফাইনাল তাহলে।আমি অ্যাড্রেস সেন্ড করে দিবো।সি ইউ টু নাইট।”

চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম।ডিনার প্ল্যান!সি ইউ টু নাইট! আদরের মাথার এপাশ থেকে ওপাশে বাড়ি খেয়েই যাচ্ছে।আদরের কাছে এতটুকু পরিষ্কার সে একটা মেয়ের সাথে ডিনারে যাবে!

দাত কিরমির করে আদর মনে মনে বলছে,

“লুচ্চা ব্যাটা!ছ্যাচড়া! ক্যারেক্টারলেস! এভাবেই মেয়েদের নিয়ে ঘুরে বেড়াস!ওই মেয়েদের তালিকায় আমাকেও বাদ রাখিসনি।অসভ্য।এই ভোলাভালা গম্ভীর চেহারার পেছনে কি আছে সেটাতো আর কেউ জানে না।ধীরে ধীরে আসল চরিত্র সামনে আসছে।”

তড়াক করে উঠে দাড়ালো আদর।সিদ্ধান্ত নিয়েছে এক মুহূর্ত এখানে থাকবে না। ঝড় হাওয়ার কারণে অপেক্ষা করছিল বসে।তার নষ্টামি দেখে আর থাকা যাচ্ছে না এখানে। ডাক্টার নামের কলঙ্ক সে।জোরে জোরে হাত চালিয়ে প্রয়োজনীয় যাবতীয় জিনিস ব্যাগে ভরতে শুরু করেছে।

মেহতাব জিজ্ঞেস করলো, “কোথাও যাচ্ছেন?”

উত্তর দেয়নি আদর।মুখ শক্ত করে নিজের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

“আমিও বের হবো।একটু ওয়েট করেন গুছিয়ে নেই”

“তার কোনো প্রয়োজন নেই।”

“চুপ”

“আমি কোথাও যাচ্ছি না আপনার সাথে।আপনি আপনার কাজে যান।লেট হয়ে যাবে আপনার”

“আমার আবার কি কাজ?”

“ডিনার ডেট!” দ্রুত বলে দাত দিয়ে জ্বিভ কাটলো।মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে।

মেহতাব চোখ ছোট করে সন্দিহান দৃষ্টিতে জিজ্ঞেস করলো, “আপনি আমার কথা কান পেতে শুনছিলেন?”

থতমত খেয়ে গেলো আদর।এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে বললো,

“আপনি এত জোড়ে বলেছেন আমি কেনো কেবিনের বাইরে দেলোয়ার চাচাও শুনতে পাবে।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।এবার পার্কিংয়ে দাড়ান।”

“আমি একবার বলেছি না যাবো না।সবসময় জোর করবেন না”

মেহতাব ধমকের সুরে উত্তর দিলো,

“বাহিরে কি অবস্থা দেখেছেন!বেশি বাড়াবাড়ি করলে ভালো হবে না”

“আমি আমার পার্সোনাল কোনো ব্যাপারে আপনার কোনো কথা শুনতে বাধ্য নই!”

বলার সাথেসাথে বিশাল বজ্রপাতে ইলেকট্রিসিটি চলে গেলো।ট্রান্সফরমার ব্লাস্ট হয়েছে।চারপাশ অন্ধকারে ঢেকে গেলো।সাথে মেহতাবের কেবিনটাও।আকাশের গর্জন আর ট্রান্সফরমার ব্লাস্ট হওয়ার শব্দে কানে হাত চেপে ধরেছে আদর।ভয় পেয়ে গেছে।মেহতাব উদ্বিগ্ন হয়ে টেবিল হাতড়ে মোবাইল খুঁজছে।এখনও জেনারেটর অন হচ্ছে না কেনো?নিশ্চয়ই ভয় পেয়েছে মেয়েটা। হন্তদন্ত হয়ে মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইট অন করে আদরের মুখে ধরলো।আদর তখনও কানে হাত চেপে।

মেহতাব আদরের কাছে গিয়ে হাত টেনে বললো,

“ভয় পেয়েছো?”

লাইটের আলো আর মেহতাব এর কণ্ঠে হুশ ফিরল আদরের। এতক্ষন ভয়ে খিচে ছিলো।মাথা নাড়িয়ে বললো ভয় পেয়েছে।মেহতাব ফ্ল্যাশ লাইট টেবিলে রেখে আদরের দুইহাত ধরে বললো,

“এতটুকুতে ভয় পেয়ে গেলে।বাহিরে যাওয়ার পর যদি এমন হতো?ভালোর জন্য বলি সেটা তোমার কানে যায় না”

“আমাকে নিয়ে আপনার না ভাবলেও চলবে।যেতে দিন আমাকে।”

মেহতাব শক্ত কণ্ঠে বলে উঠলো, “আদর!আরেকবার বলছি বাড়াবাড়ি করো না।”

“আমার ইচ্ছে আমি বাড়াবাড়ি করবো।আপনি কে আমার বিষয়ে নাক গলানোর?আপনার মন চাইলে আপনিও বাড়াবাড়ি করেন।..হাহ্! করবেন কি?আপনি করছেন বাড়াবাড়ি।”

“কি চাই তোমার?” শীতল কণ্ঠে বললো মেহতাব।

কাটকাট জবাব আসলো আদর থেকে,”আমার কিছুই চাই না”

বলে হাত ছাড়িয়ে ফ্ল্যাশ লাইটের আলোয় দরজার দিকে হাটা দিয়েছে।পেছন থেকে মেহতাব এসে আদরকে আটকে দরজার উপরের ছিটকিনি আটকে দিলো।আদরের একহাত তারই পিঠের পেছনে চেপে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিতে এক মুহূর্ত দেরি করে নি। ফ্ল্যাশ লাইট আবছা আলোয় জ্বলজ্বল করছে মেহতাব এর চোখ।ভারী নিঃশ্বাসের গতি প্রবল বেজে ছুটতে শুরু করলো।

“আমি বাড়াবাড়ি শুরু করলে সহ্য করতে পারবে না।তুলোর মতন হাওয়ায় উড়ে যাবে।আমার বাড়াবাড়ি সামলে নেওয়ার মতন শক্ত তুমি না”

আদর তেজী গলায় বললো, “এভাবে বারবার কাছে টেনে নেন কোন সাহসে?কোন অধিকারে? সব মেয়েদের সাথেই এমন করেন বুঝি?”

“শুধু তোমার সাথে”

মেহতাব এর কন্ঠ ঠান্ডা।স্রোতের মতোন।ঘোর লাগানো।বরফের মতন জমে যাচ্ছে আদর।মেহতাব একটু ঢিল ছাড়লেই আদরের পিঠ ঠেকে দেয়ালে।সামনে দাড়ানো মানুষটিকে চেনাই যাচ্ছে না।পাগল পাগল লাগছে তাকে দেখতে।মনে হচ্ছে সে তার জ্ঞানে নেই। উস্কুখুস্ক চুলগুলো কপালে পড়ে আছে।চোখজোড়া লাল। ভয়ংকর দেখাচ্ছে।একটু আগেও তো ঠিক ছিলো। মুহুর্তেই তার চক্ষুদ্বয়ের রং বদলালো কি করে?মেহতাবের ছন্নছাড়া দৃষ্টি দেখে বুক কেপে উঠছে বারবার।চোখের পলকে আদরের কাছ থেকে আরো কাছে এসে দাড়ালো।নড়াচড়া করার সুযোগ অব্দি দিবে না। দুইহাত দেয়ালে ঠেকিয়ে নেশা ভরা চোখে আদরের দিকে চেয়ে আছে।আদরের বেহায়া চোখও তাকে দেখতে ব্যস্ত।নজর সরাতে চাইছে না তার চোখ থেকে।ডুবে যেতে চাইছে এই মোহে।আদরের কপালে চুমু খেতেই আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেললো আদর। ওড়না চেপে থরথর কাপছে।আদরের বুজে থাকা চোখ জোড়ায়ও নিজের ঠোট ছুয়েছে।ধীরেধীরে সারা চেহারায় চুমুতে ভরিয়ে দিল। মেহতাবের একেকটা স্পর্শে যেনো বিদ্যুৎ প্রবেশ করছে শরীরে।গলা দিয়ে কথা বেরোতে চাচ্ছে না।

আদরের কানের কাছে মুখ এনে থমকে থাকা আদরের কাছে কাতর কণ্ঠে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো,

“আদর!….আমার পাগল পাগল লাগছে!”

মেয়েটা প্রথম থেকেই অদ্ভুতভাবে টানে মেহতাবকে।মায়াজাল বলা যায় তাকে।মেহতাব তাকে সবক্ষেত্রে জোর করলেও তার মনের উপর সমস্ত আয়ত্ব আদরের।দখল করে রেখেছে সকল অনুভূতিকে।নিজের নিয়ন্ত্রনকে ধুলোয় মিশিয়ে দিতে ইচ্ছে করে।আটকে রাখতে ইচ্ছে হয় আদরকে নিজের মধ্যে।

আদরের ঘাড়ে দুহাত রেখে তার কাপতে থাকা ঠোঁটের দিকে অগ্রসর হতেই দরজায় টোকা পড়লো। দেলাওয়ার চাচা এসেছেন।দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে স্যার,স্যার বলে চেচাচ্ছেন। জেনারেটরে সমস্যা দেখা দিয়েছে এটাও জানিয়ে দিলেন।বাহিরে দাড়িয়ে থাকা দেলাওয়ার চাচা বেশ চিন্তিত।তার স্যার অন্ধকারে একা কিভাবে আছেন?বারবার দরজা ধাক্কানোর শব্দে মেহতাব আদরের দিকে দৃষ্টি স্থাপন করেই গলার স্বর উচু করে বললো,

“আপনি যান দেলাওয়ার চাচা।আমি ঠিক আছি।”

“কিন্তু স্যার!”

“আপনি যান!”

আদর চোখ বন্ধ করে আছে এখনো।মূর্তির মতন দাড়িয়ে।জোরেজোরে শ্বাস নিচ্ছে।মেহতাব আবদার করলো,

“চোখ খুলো!”

সাথেসাথে চোখ খুললো না আদর।নিজের সাথে যুদ্ধ করে সময় নিয়ে ধীরে সুস্থে দৃষ্টি তুলে তাকিয়েছে। ঝড়ের গতিতে আদরের ওষ্ঠজোড়া নিজের দখলে নিয়ে নিলো।আদর পুনরায় চোখ বন্ধ করে নেয়।মস্তিষ্ক ফাঁকা হতে শুরু করেছে তার।সময়ের সাথে মেহতাবের ওষ্ঠের স্পর্শ গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে। নেশায় ডুবে আছে। প্রতিক্রিয়াহীন আদরের শ্বাসপ্রশ্বাস সেখানেই থমকে।শার্ট খামচে ধরে আছে মেহতাবের।শরীরের সমস্ত শক্তি হারিয়ে ফেলতে শুরু করলো।মুখ ঘুরিয়ে নিস্তেজ হয়ে ঢলে পড়ছে মেহতাব এর বুকে।মেহতাব তাকে সঙ্গেসঙ্গে বুকে মিশিয়ে নেয়।মনে হচ্ছে বুকের বিশাল ঝড় থামবে একে অপরের সাথে মিশে থাকার মাধ্যমেই।

কিছুক্ষন জড়িয়ে ধরে রেখে মাথা তুললো।আদরকে পূনরায় দেয়ালের সাথে আটকেছে।মাথা বেকিয়ে ঘোর লাগানো কণ্ঠে মেহতাব বললো,

“তুমি বাঁধা পড়ে গেছো।পালানোর রাস্তা সব বন্ধ করে রেখেছি আমি।তোমার এখানেই থাকা লাগবে।আমার বেড়াজালে।তাছাড়া আর কোনো উপায় নেই।না থাকতে চাইলেও বাধ্য তুমি থাকতে।আর সেচ্ছায় থাকতে চাইলে স্বাগতম।”

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here