#চিত্তসন্ধি
পর্ব ২৮
লেখা: #Azyah
পায়ের উপর পা তুলে বারান্দার বিন ব্যাগের উপর মেহতাব বসে।চোখ শূন্যে তুলে চিন্তার ভাবনার কারখানা গড়ে তুলেছে মস্তিষ্কে।মুখটা ভার।শুষ্ক ঠোঁট।নিজের স্থানে আর কল্পনায় স্থির। কাল রাতে ঠিকঠাক ঘুম হয়নি।বাড়ি ফিরে লম্বা শাওয়ার নিয়েছে।অস্থির লাগছিলো।প্রেশার লো হতে শুরু করেছিলো।আদরকে ইকবাল চাচার সাথে বাড়ি পাঠিয়ে নিজে বাড়ি এসেছে বেশ রাত করে।অনেকবার ফোন হাতে নিয়েছে তার খোজ নেওয়ার জন্য।সাহস হয়নি।লম্বা নিঃশ্বাস নিতে চোখের পলক ফেললো অনেকসময় পর। এতক্ষন ঝলমলে আলোকিত আকাশের দিকে চেয়ে চোখ ধাঁধিয়ে গেছে। ঠোঁট কামড়ে উঠতে নিলেই রায়হানের আওয়াজ ভেসে এলো,
“বারান্দায়ই থাক।আসছি”
নিচ থেকে চেঁচিয়ে বলছে রায়হান। দূর থেকেই দেখে নিয়েছে মেহতাবকে বারান্দায় বসে থাকতে।মেহতাব দু কদম পেছনে নিয়ে আবার বসে পড়ল।রায়হান এসেছে মিনিট পাঁচেক সময় নিয়ে।হাতে তার একটা বক্স।টেবিলের উপর রেখে দিয়ে বললো,
“তোর জন্য এনেছি।ভাবলাম একা থাকিস।তোর একটা সঙ্গী দরকার।”
মেহতাব জবাবে বললো, “এই বক্স আমার সঙ্গী?”
“বেক্কলের মতন প্রশ্ন করিস কেনো? বক্সের ভেতরে দেখ কি?”
আকস্মিক বক্সটা নড়ে উঠলো।মেহতাব একবার রায়হানের দিকে তাকিয়ে বক্স হাতে নিয়েছে।ধীরে সুস্থে বক্স খুলে বেরিয়ে আসলো ছোট্ট একটি বিড়ালের বাচ্চা। গম্ভীর মুখে হাসি ফুটেছে।সাদা পশমের ছোট্ট একটা বাচ্চা। তৎক্ষনাৎ কোলে বসিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করছে।কিছুসময় বিড়ালকে আদরে ভরিয়ে দিয়ে রায়হানের দিকে চেয়ে বলল,
“তোকে আমার ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছে হয় না”
“লাগবে না তোর ধন্যবাদ।আজ আমাকে তোর হাতের স্পেশাল নুডুলসটা বানিয়ে খাওয়াস।”
“ঠিক আছে”
“এই বিড়ালের নাম কি জানিস?”
“কি?”
“আদর!”
খুশি ভরা মন এবার বিগড়ে গেলো।চোখ রাঙিয়ে রায়হানকে বললো,
“থাপ্রে গাল লাল করে ফেলবো”
“ওহ! খুব ভয় পেলাম! আজ থেকে দুটো বিড়াল তোর পিছু পিছু ঘুরবে একটা আদর আরেকটা এই পুঁচকে বিড়ালটা।”
“সব কথায় আদরকে না টানলে হয় না তোর?”
“নাহ্! এবার আপনি আমাকে কিছু খাওয়াবেন। ক্ষুদা পেয়েছে আমার”
মেহতাব ছোট নিঃশ্বাস ছেড়ে উঠে দাড়ালো।বিড়াল ছানাটিকে রায়হানের কোলে নিয়ে চলে গেলো কিচেনে।রায়হান তাকে কোলে নিয়ে মেহতাব এর পেছনে পেছনে ছুটেছে।দক্ষ হতে নুডুলস বানানোর প্রক্রিয়া শুরু করলো।রান্না করতে করতে কয়েকবার হাত বুলিয়েছে বিড়ালের মাথায়। নুডুলস রান্না করতে করতে ভাবলো আদরকে একদিন তার হাতের তৈরি নুডুলস খাওয়াবে।সাথেসাথে সিদ্ধান্তের পরিবর্তন করেছে।একদিন কি? কালই তার জন্য বানিয়ে নিয়ে যাবে।কোননা কোনো বাহানায় খাইয়ে দিবে।না খেতে চাইলে ধমক ফ্রি।
রায়হান তৃপ্তির সাথে নুডুলস খাচ্ছে।দুই বাটি সাবার করেছে ইতিমধ্যে। মেহতাব নিজেও খাচ্ছে তবে তার সম্পূর্ণ মনোযোগ তার নতুন সঙ্গীর দিকে।খাওয়ার মধ্যে রায়হান বললো,
“ওর একটা নাম রাখ”
“পোষা প্রাণীর নাম রাখা নিয়ে ভাবাভাবির সময় আছে আর?’
“তারপরও বিড়াল বিড়াল বলবি?ওকে একটা নাম দে যেনো ডাকলেও ছুটে আসে তোর কাছে”
“ভেবে দেখবো।”
“আচ্ছা হসপিটালে গেলে ওকে কোথায় রাখবি?অনেক ছোটো ও একা রাখা ঠিক হবে না”
“ক্যারিয়ারে করে সাথে নিবো।কেবিনের একদম শেষ কোনায় নিয়ে রাখবো।পেশেন্টের কোনো প্রবলেম যেনো না হয়।একটু বড় হলে জয়তুন খালার কাছে রেখে যাবো”
_____
“তুমি বাঁধা পড়ে গেছো।পালানোর রাস্তা সব বন্ধ করে রেখেছি আমি।তোমার এখানেই থাকা লাগবে।আমার বেড়াজালে।তাছাড়া আর কোনো উপায় নেই।না থাকতে চাইলেও বাধ্য তুমি থাকতে।”
ওষ্ঠে মেহতাব এর উষ্ণ স্পর্শ সবটা জ্বলের মতন পরিষ্কার করে দিয়েছে আদরের কাছে।বাড়িয়েছে অসস্তি।মেহতাব এর বলা লাইনগুলো বারবার আওরিয়েছে।অর্থ বুঝতে পারেনি সারাদিন ভেবেও।তবে আজ? ক্লিনিকে যাওয়ার জন্য রেডি হতে হতে তার বলা কথাগুলোর সত্যতা পাচ্ছে।আসলেই বাঁধা পরে গেছে,পালানোর রাস্তা বন্ধ,এখানেই থাকা লাগবে।নাহলে কেনো নিজের লজ্জা, দ্বিধা, অসস্তিকে উপেক্ষা করে যেতে হচ্ছে তার সামনে? মুখোমুখি হওয়ার সাহস নেই। তারপরও আদর বাধ্য।
নিজের অনিচ্ছা সত্বেও ক্লিনিকে গিয়ে পৌঁছেছে।নিজেকে স্বাভাবিক দেখানোর অভিনয় করতে হবে।মনেমনে দুআ করছে যেনো মেহতাবের চোখে চোখ না পড়ে।ভুলেও সেদিনের কথা মনে না পড়ে।দুআ করতে করতে দরজার সামনে এসেই চমকে উঠলো।রায়হান,মেহতাব আর দেলাওয়ার চাচা কথা বলছেন।আদর মাথা নিচু করে তাদের পেছনে দাড়াতেই মেহতাব বললো,
“ভেতরে গিয়ে বসেন”
মেহতাবের স্বাভাবিক কন্ঠ শুনে অনেকটা বিস্মিত আদর। সচরাচর যেভাবে কথা বলে সেভাবেই বলছে।কথার মধ্যে কোনো দ্বিধা নেই।অনেকটা নিত্যদিনের মতোই তার ভাব ভঙ্গি।
আদর ভেতরে প্রবেশের কয়েক মিলি সেকেন্ডের মধ্যে চিৎকারের শব্দ ভেসে আসলো। ভীষন জোরে চেচাচ্ছে আদর।মেহতাব ঘাবড়ে দ্রুত কেবিনে ঢুকেছে।তার সাথে সাথে রায়হান আর দেলাওয়ার চাচাও।ভেতরে ঢুকে যেই দৃশ্য দেখলো তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।আদর বেডের উপর দাড়িয়ে আছে।নিচেই বিড়াল ছানা তার দিকে চেয়ে “মেও মেও ” শব্দে আদরকে ডাকছে।
ভীত কণ্ঠে আদর বলে উঠলো, “এটা এখানে কিভাবে আসলো?ওকে সরান।কামড়ে দিবে আমাকে।”
এতটুকু একটা বিড়াল ছানাকে দেখে যে আদর ভয় পেয়েছে সেটা সবার কাছেই স্পষ্ট।ভয়ের পরিমাণ বেশি।আদর বেডের উপর দাড়িয়ে পর্দা খামচে ধরে আছে।দেলাওয়ার চাচা মুখ চেপে হাসছেন।রায়হান শব্দ করেই হেসে উঠলো। মেহতাব হাসতে চেয়েও নিজেকে আটকে। বিস্ফোরিত নয়নে আদর তাদের তিনজনের দিকে চেয়ে আবার বিড়ালটি “মেও” করে উঠেছে।আদর পারছে না জানালা ভেঙে বাইরে চলে যায়। মেহতাব কাছে গিয়ে বিড়ালকে কোলে তুলে নিলো।
রায়হান পেছন থেকে বলে উঠলো, “একটা বিড়ালইতো মিস আদর।কিছু করবে না।নেমে আসুন”
“স্যার এটাতো মানুষের হাসপাতাল।এখানে বিড়াল কি করে?আপনারা প্রাণী বিভাগ খুলেছেন নাকি?যদি এমন হয় আমি আর কাজ করবো না।আমি এসব অনেক ভয় পাই”
দেলাওয়ার হোসেন আর হাসি চেপে রাখতে পারলেন না। এত্তুটুকু তুলোর মতন বিড়ালকে কেউ ভয় পায়?হেসেই ফেললেন তিনি।মেহতাব কোনদিকেই নজর দিচ্ছে না। বিড়ালকে আদর করতে করতে সামান্য মাথা বেকিয়ে তাকালো।তার হালকা ঘুরে তাকানোই ছোট্ট ইশারা।রায়হান আর দেলাওয়ার হোসেন বেরিয়ে গেছে কেবিন থেকে।
মেহতাব চোখ তুলে তাকিয়ে আদরের দিকে।সে এখনও ভয়ে পর্দা চেপে আছে।এক পায়ে জুতো।দৌঁড়াতে গিয়ে আরেকটা নিচেই ফেলে রেখেছে।ঠান্ডা স্বরে বললো,
“নিচে নামো”
“এটাকে সরান আগে”
“এটা আবার কি? বিড়াল এটা”
“জানি আমি।কিন্তু সরান প্লিজ ভয় করে।”
মেহতাব এক হাত এগিয়ে দিয়ে বললো, “দ্রুত নামো”
আদর হাত ধরতে না চাইলে মেহতাব এগিয়ে গিয়ে তার হাত টেনে তাকে নামিয়ে আনলো।বললো,
“বসো এখানে”
বিড়ালকে আড়চোখে দেখে নিয়ে সাবধানতার সাথে বসে পড়েছে আদর। মেহতাবও পাশে বসেছে।
“কোলে নাও ওকে”
ঝটপট উত্তর দিলো আদর, “মোটেও না।”
“একটা ছোট বাচ্চা ও ভয় পাওয়ার কি আছে আজব”
“ছোট হোক বড় হোক। সব ধরনের জীবজন্তু আমার ভয় করে।”
মেহতাব ভেবে চিন্তে বলে উঠলো, “আমি সাহায্য করছি।এসো”
একলাফে উঠে দাড়ালো আদর।মাথা দুপাশে দুলিয়ে বলতে লাগলো,
“আমি পারবো না”
আদরের হাত টেনে পুনরায় পাশে বসিয়ে বললো, “আমার অর্ডার এটা।”
মেহতাব কাছে এসে আদরের কোলে বসিয়ে দিলো বিড়ালটিকে।আদরের হাত টেনে তার মাথায় রাখলো।চোখ দিয়ে ইশারা করছে ওর মাথায় হাত বুলাতে।আদরের হাত কাপছে।কি নরম তুলতুলে শরীর।ধরলেই মনে হচ্ছে তুলোর মতন উড়ে যাবে।চোখগুলো বেশি সুন্দর।আদর বিড়াল পছন্দ করলেও শুধু দুর থেকে দেখে।ভীষণ ভয় পায় কাছে যেতে।ধীরেধীরে হাত এগিয়ে নিয়ে আবার নামিয়ে ফেললো।এক অজানা অধিকারবোধ নিয়ে মেহতাব এগিয়ে গেলো।বুক ঠেকিয়েছে আদরের পিঠের সাথে।নিজের হাত এগিয়ে দিয়ে আদরকে সাহায্য করছে বিড়ালের প্রতি ভয় কাটাতে।সাথে নিজের মনের লুকানো ইচ্ছেকেও পূর্ণতা দিলো।আদরের কাছাকাছি থেকে।বিড়ালের ভয়ে মেহতাবকে ভুলতে বসেছিল আদর।হুট করে তার বুকে পিঠ ঠেকলে মস্তিস্ক জেগে উঠে।হাতের উপর তার হাতের স্পর্শ আবার অনুভব করাচ্ছে তাকে।
মেহতাব নিচু কণ্ঠে বললো,
“দেখেছো কিভাবে আবেশে বসে আছে?এতটুকু বাচ্চাকে কেউ ভয় পায়?”
আদর মাথা উপর নিচ করে বোঝালো। হ্যা ভয় পায়।আদর ভীষণ ভয় পায়।
“ও খুব কিউট তাই না?”
আদর উত্তর দেয়নি।মেহতাব ছোট্ট সুরে আবার জিজ্ঞেস করলো,
“হুম?”
কোনো জবাবই দিচ্ছে না আদর।শুধু মাথা এদিক ওদিক দুলিয়ে যাচ্ছে। মেহতাব কাছে থাকলেই এমন হাসফাস করে।এটা খুব ভালো করেই বুঝলো সে।আবার বললো,
“আজ থেকে ওর দায়িত্ব তোমার।যতক্ষন এখানে থাকবে ওর দেখাশুনা করবে।যত্ন নিবে। পেশেন্টরা আসলে ক্যারিয়ারে করে একপাশে রেখে দিবে।ঠিক আছে?”
“ভয় করে আমার”
“ভয় কেটে যাবে।”
কানের কাছে মেহতাব এর নিঃশ্বাস কোনদিকে মনোযোগ দিতে দিচ্ছে না।আজ কি সুন্দর বুঝিয়ে সুঝিয়ে কথা বলছে।কথার মাঝে কোনো রুক্ষতা নেই।রাগ নেই। বিরক্তি নেই। বিড়ালটা যে আদরের কোলে এতক্ষন যাবৎ বসে আছে সেদিকেও খেয়াল নেই তার।মেহতাব সমস্ত মনোযোগ নিজের দিকে ঘুরিয়ে রেখেছে।
“খাওয়া দাওয়া করে আসোনি তাই না?”
হুটহাট শক দিতে মোটেও কার্পণ্যবোধ করেননা তিনি।আজও তাই।আদর টেনশনে কিছুই খেয়ে আসেনি।পেট গুলিয়ে আসছিলো। বক্ষস্থলে তোলপাড়টা এখনও থামেনি।তারপরও নিচু স্বরে বললো,
“খেয়েছি আমি”
“আমার মিথ্যে পছন্দ না।নুডুলস আছে।এক্ষনি পুরো বাটি খালি চাই আমি।খাওয়া শেষে রুটিন চেকআপ করবো তোমার।”
মেহতাব সরে গেলো। বিড়ালটিকে নিজের কোলে নিয়ে ব্যাগ থেকে নুডুলস বের করে আদরের হাতে দিয়েছে। আদর একবার বাটির দিকে আরেকবার মেহতাবের দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে ফেলে।তার হাবভাব বলছে এখনই খাওয়া শুরু করতে হবে।মেহতাব এক কথার মানুষ।প্রত্যেকটা শব্দ কামান থেকে বেরিয়ে যাওয়া গোলার মতন।ফিরে আসেনা।আদর কথা রাখতে বাধ্য।না মানলেও সমস্যা নেই।মেহতাব জোর জবরদস্তি নিজের কথা মানিয়ে ছাড়বে।
নিঃশব্দে এক চামচ,এক চামচ করে খাচ্ছে আদর।খেতে বেশ মজা।কে রেধেছে এটা?তার জানা মতে মেহতাব বাড়িতে একা থাকে।খেতে খেতে দুয়েকবার মেহতাবের দিকে তাকিয়েছেও।সে তার নিজের কাজে ব্যাস্ত।বিড়ালকে কোলে নিয়ে এদিক ওদিক ঘুরছে।আবার বসে মাথায় হাত বুলাচ্ছে।দেখেই বোঝা হয়ে যায় এই ছোট্ট প্রাণীটির প্রতি তার কতটা মায়া।সাদা এপ্রোনের সাথে সাদা রঙের ছোট্ট বিড়ালটাও মিলেমিশে আছে।চোখ বুজে আয়েশ করে তার মালিকের কোলে বসে।মেহতাব মনে মনে ভীষণ খুশি।বাড়ি ফিরলেই একা একা লাগে। একস্ট্রা কাজ করেও সময় পার করা যায়না। রায়হানকে ধন্যবাদ দিতেই হয় এরজন্য।কিন্তু দিবে না। অসভ্য একটা ছেলে সে।শুনে বুঝে তার দুর্বলতার সূযোগ নেয়।
ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখলো পেশেন্ট আসবে একটু পর থেকে। বিড়ালটিকে যত্ন করে ক্যারিয়ারে রেখে পূনরায় ফিরে এলো।আদরের উদ্দেশ্যে বললো,
“এতটুকু খাবার খেতে এতক্ষন লাগে?”
“আমি আর খেতে পারছি না।”
“আচ্ছা রেখে দিন।পড়ে খেয়ে নিয়েন বাকিটুকু”
কখনো আপনি কখনো তুমি।এর হিসাবটা গরমিল আদরের কাছে।হুটহাট তার কি হয়?কখনো এমনভাবে এড়িয়ে যায় যেনো চেনেই না।কখনো শীতল কণ্ঠে মন ভুলিয়ে দেয়।কখনো অধিকার খাটিয়ে নিজের মধ্যে আবদ্ধ করে রাখে।আবার কখনো অযথাই রাগ দেখায়।
“বললেন না খেয়ে কেমন লাগলো?”
আদর ছোট্ট শব্দে উত্তর দেয়, “ভালো”
মেহতাব স্মিথ হাসলো।দেখা যায় না এমন।জানতে দেয়নি সে নিজ হাতে সকালে জলদি উঠে তার জন্যে রান্না করে এনেছে।রান্না করতে গিয়ে ভাবনা চিন্তার সাগরে ডুবে হাতটাও পুড়িয়েছে।হুটহাট হাতের জ্বলনি অনুভব করাচ্ছে তার বেখেয়ালিপনা।দিনদিন পাল্টে যাওয়া তার স্বভাব। শক্ত বরফ খন্ড বিগলিত হয়ে পানিতে পরিণত হচ্ছে। উপলদ্ধি করতে পারছে মেহতাব নিজেও।
মুখের সামনে বার্ণল ক্রিম ধরে আছে আদর।এটা দেখে মেহতাব বেশ চমকিত। ভ্রুদ্বয়ের মধ্যিখানে ভাজ ফেলে আদরের পানে চেয়ে।আদর অন্যদিকে ঘুরে আছে।
মেহতাবই প্রশ্ন করলো,
“এটা কেনো?”
“পুড়ে যাওয়া অংশে লাগাতে হয় এই ক্রিম”
“সেটা আমি জানি।আপনি আমাকে দিচ্ছেন যে?”
“আপনি জানেন না কেনো দিচ্ছি?নিজের হাত পুড়েছে এটা নিজেই জানেন না?”
“আমি জানি।আপনি জানলেন কি করে সেটা জিজ্ঞেস করলাম।কথার সার্কাজম বুঝেন না?”
“আমি এত সার্কাস্টিক কথাবার্তা বুঝি না।যখন সেখানে বসে বিড়াল ছানার মাথায় বুলিয়ে দিচ্ছিলেন তখন দেখেছি”
মেহতাব হাত এগিয়ে দিয়ে বললো, “আচ্ছা দেন।দরকার ছিলো এটার।ধন্যবাদ।”
চলবে…