চিত্তসন্ধি পর্ব ৪৪ লেখা: #Azyah

0
182

#চিত্তসন্ধি
পর্ব ৪৪
লেখা: #Azyah

“নাহ মেহতাব বিয়ে করেছে।না ওর কোনো হবু অথবা বর্তমান বউ আছে।আর যেই কার্ডটা দেখছেন এটা সম্পূর্ণ বানোয়াট।এখনও যদি বিশ্বাস না করে থাকেন তাহলে আরো বলি। মেহতাবের বাবার নাম কি দেওয়া কার্ডে?নাসির হোসেন।কিন্তু আসলেতো মেহতাবের বাবার নাম নাসির উদ্দিন।আপনাদের বোকামো দেখে অবাক না হয়ে পারি না।সামান্য একটা কার্ডের ভিত্তিতে সব বিশ্বাস করে নিলেন?”

এক নিঃশ্বাসে সবটা বলে ফেললো রায়হান।সে ঠিক ধরে ফেলেছে এটা একটা ষড়যন্ত্র।আদর আর মেহতাবকে আলাদা করার।কিন্তু কে করবে এটা? কার লাভ তাদের আলাদা করে?

শান্তা বলল, “তাহলে আপনি কি বলতে চাচ্ছেন এগুলো সব মিথ্যে?”

“জ্বি মিথ্যে।মেহতাব সত্যিই বিয়ে করে নি। আফটার অল সে পাগলের মতন খুঁজছে আদরকে।ওর চেহারা দেখে বোঝেন না?কিন্তু এটা সত্যি যে আদরের মনে ভুল চিন্তা ঢোকানো হয়েছে।কেউ একজন করেছে এটা।গভীর সরজন্ত্র এটা।তারপরও আপনার বিশ্বাস না হলে চলুন আপনার সকল বন্ধুদের দিয়ে মেহতাবের বাসায়।দেখে নিবেন।আপনাদের আর আদরের যে সকল প্রমাণ দরকার সব দেবো।”

শান্তা তাদের কথায় হতভম্ভ।এমনটাও হতে পারে সে ভাবেনি।হয়তো আদরও ভাবেনি।তাইতো এত বড় সিদ্ধান্ত নিমিষেই নিয়ে ফেললো।

“আপনারা কাউকে সন্দেহ করছেন?”

এত সময় চুপচাপ তাদের কথোপকথন শুনল।এমনেতেই আদরের চলে যাওয়া ভেঙে দিয়েছে তাকে।তার উপর এমন একটা কথা সামনে এলো।

স্বাভাবিক কণ্ঠে বললো, “ফোনটা দিনতো”

পূনরায় ফোন হাতে নিলো।কার্ডের ছবির পাশাপাশি আরও কিছু স্ক্রিন শট দিয়েছে আদর।যাতে স্পষ্ট বাসায় আদরকে মেহতাব থেকে দূরে থাকার হুমকি দেওয়া হয়েছে।উপরেই ভেসে আসছে নাম্বার।নিজের ফোন অন করে টুকে নিলো নাম্বারটা।

“একটা ছোট রিকোয়েস্ট।আদরকে আমার সাথে কথা বলিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করুন প্লিজ।”

“আমি চেষ্ঠা করবো।কিন্তু আমার প্রশ্ন এখনও এটাই।কে করতে পারে এই কাজ?আদরকে আপনার,আমাদের সবার থেকে দূরে সরিয়ে দিলো।”

মেহতাব বলে উঠে,

“সেটা খুজে বের করে ছাড়বো আমি।”

___

সময় ব্যয়িত হচ্ছে।তাকে ধরা ছোঁয়ার কোনো সাধ্য কারো নেই।কাজে লাগানোর সামর্থ আছে।যদি সেটায়ও সে ব্যর্থ হয় তাহলে তার চেয়ে অভাগা কেউ নেই।এই মুহূর্তে সবচেয়ে অভাগা মেহতাব।বহু চেষ্টার পর বের করতে পারেনি কে করলো তার এত বড় ক্ষতি? শান্তা তাদের দলে যোগ দিয়েছে।রায়হান নাম্বারের মালিককে খুঁজতে ব্যস্ত।রোহিত,রুবির সাথে কথা বলে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে আদরের সাথে যোগাযোগ করার।

রায়হান এসে বললো, “কার নামে এই নাম্বার রেজিস্ট্রি করা সেটা এখনও বের করতে পারলাম না।এসব কাজে অনেক ঝামেলা। পরিচিত লোক লাগে।”

“এখন উপায় কি?”

“টেনশন করিস না।আমার এক বন্ধুকে বলেছি।সে বললো দেখবে বিষয়টা।”

“শুধু দেখলে হবে না রায়হান!”

“আমি সর্বোচ্চ চেষ্ঠা করছি।তুই শুধু ধৈর্য্য ধর।”

মেহতাব হাসলো।এই হাসিতে কোনো প্রাণ নেই।একদম নিষ্প্রাণ।বললো,

“কি লাভ এতকিছু করে? আদরকেতো হারিয়ে ফেলেছি!জানিনা কোন প্রান্তে গিয়ে কার সাথে ঘর বেধেছে।…..আদরের সাথে অন্য কোনো পুরুষ?”

কথাটি বলে শেষ করার আগে পেপার ওয়েট ছুঁড়ে ফেললো সামনের দিকে। আদরের ডেস্কের কাচ পাশ দিয়ে অনেকটা ভেঙে গেছে।অল্প দিনে মেহতাব এমন হাজারো পাগলামো করেছে।রায়হান মাঝেমধ্যে তাকে চিনে উঠতে পারে না।ভীষণ অপরিচিত লাগে।যে ছেলে সবকিছুতে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে থাকে সে কিনা একটা মানুষের জন্য মরিয়া হয়ে আছে?

“রায়হান?”

“বল”

“আদর সত্যি বিয়ে করে নিয়েছে তাই না?”

রায়হান চুপসে গেলো।কি জবাব দেবে?সবার ভাষ্যমতে আদর বিয়ে করে ফেলেছে।আর এটা মেহতাবের সহনশীলতার বাহিরে।বারবার একই কথা জিজ্ঞেস করো নিজের মনকে শান্তনা দিতে চাইছে।কেউ বলুক এসে।কেউ একজন বলুক আদর বিয়ে করেনি।বিয়ে করলে হাজার চেষ্টা করেও তাকে ফেরানো যাবে না।আর মেহতাব নিজের সমস্ত হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে বসবে।

___

পরদিন বিকেলে রায়হান অনেক চেষ্টার পর নাম্বারের মালিককে বের করতে পেরেছে।সেই নাম,ঠিকানা, যাবতীয় পরিচয় নিয়ে মেহতাবের সামনে বসে। রায়হানের দিকে চেয়ে মেহতাব ভাবলো আজ রায়হান না থাকলে হয়তো সে একদম ভেঙে পরতো। নিঃশেষ হয়ে যেত।নাম দেখে রায়হান আর মেহতাব উভয়ের চোখ ছানাবড়া।তারা কল্পনাও করতে পারেনি এমন একজন মানুষ এই কাজ করতে পারে।আর সে হয়তো ভাবতে পারেনি নিজের পরিচয়পত্র দিয়ে রেজিষ্টেশন করা সিম দিয়ে এই কাজ করে ধরা পড়ে যেতে পারে।

এক সেকেন্ড অপেক্ষা করেনি তারা।রাগে গদগদ করছে মেহতাব।সব প্রমাণ নিয়ে বেরিয়ে গেলো ক্যাবিনের বাইরে।রায়হান তার পিছু পিছু।রক্ত চড়ে আছে মাথায়।কোনদিকে তোয়াক্কা না করে জোরে ধাক্কা দিয়ে আরেক কেবিনে প্রবেশ করেছে।

“ডক্টর মেহতাব?আপনার কথাই ভাবছিলাম।আসুন।মিটিং আছে একটু পর। ডিসকাশন করে নেই আগেই”

মেহরাব চেয়ার টেনে বসলো।পায়ের উপর পা তুলে বললো, “আমাকে নিয়ে ইদানিং একটু বেশিই ভেবে ফেলছেন না?”

“মানে বুঝলাম না। আমিতো মিটিং এর জন্য বলছিলাম”

“আমার সাথে আপনার এখন পার্সোনাল মিটিং হবে।ভেবে নেন আপনি আমি এখন কেউই ডক্টর না।”

“আপনি কি বলছেন আমি কিছুই বুঝলাম না ”

চোয়াল শক্ত করে মেহতাব বললো, “আপনার সাথেতো আমার বিয়ের কথা ছিলো। কার্ডও ছাপিয়েছেন।কই করলেন না যে বিয়ে?আর আপনাকে কি নামে ডাকবো? ফাহা নাকি ফারিহা?”

শুকনো ঢোক গিললো ডক্টর ফারিহা শেইখ।ধরা পড়ার ভয়ে কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে।জ্বিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বললো,

“ইয়ার্কি করছেন আমার সাথে?”

“ইয়ার্কি আমি না।আপনি করেছেন।কি কি করেছেন এবার নিজ মুখে স্বীকার করে ফেলুন।”

“আমি কি স্বীকার করবো আশ্চর্য্য!” ঝাঁঝালো গলায় বলে উঠলো ফারিহা শেইখ।

রায়হান বললো,”আপনি বাদ দেন।আমি বলছি আপনি কি কি করেছেন।প্রথমে মেহতাব আর আপনার বিয়ের মিথ্যে কার্ড বানিয়েছেন।নিজের নাম পাল্টে ফাহা দিয়েছেন।তারপর মিস আদরকে কল করেছেন।কল করে ওনাকে মিথ্যে বলেছেন আপনার আর মেহতাবের বিয়ে সম্পর্কে।অপমান করেছেন ওনাকে।ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করার চেষ্ঠা করেছেন।”

রেগে গেলো ফারিহা শেইখ।টেবিলে শব্দ করে হাত রেখে দাড়িয়েছে। ক্ষোভে ভরা কণ্ঠে বললো, “হাও ডেয়ার ইউ?এসব মিথ্যে অপবাদ কিসের ভিত্তিতে দিচ্ছেন আমাকে?”

“প্রমাণতো আছে।না থাকলেই কি আপনার কাছে আসি?”

“বলেন।কি প্রমাণ আছে?”

মোবাইলে একটি সিসিটিভি ফুটেজ অন করা হলো।সেই ফুটেজে দেখা যাচ্ছে মেহতাব আর আদরের অনুপস্থিতিতে।একজন লোক আর ফারিহা শেইখ প্রবেশ করেছে কেবিনে।দেয়ালের এক কোনায় আড়াল করে একটা চিপ জাতীয় কিছু লাগিয়ে দিয়েছে।এটা বেশ কিছুদিন আগেই মেহতাবের চোখে পড়ে।

ফারিহা শেইখ ঘাবড়ে বলে উঠলো, “আপনার কেবিনে সিসি ক্যামেরা ছিলো?”

মেহতাব বললো, “হ্যা!শুধু ক্যামেরা না।আরো একটা ভয়েস চিপ ছিলো।আপনি যা যা কথা বলেছেন সব এটায় রেকর্ডেড।এবার সত্যিটা বলুন।”

ফারিহা মুখ খুললো না।চুপচাপ বসে রইলো মুখ শক্ত করে।ভয়ে হাত পা কাপছে তার।মেহতাব আর রায়হান বারবার জেরা করেই যাচ্ছে তাকে।শেষমেশ না পেরে বললো,

“আপনি একটা সামান্য অ্যাসিস্ট্যান্ট এর জন্য আমাকে জেরা করছেন?কি আছে আদরের মধ্যে?ওই চিপের মাধ্যমে আপনাদের সব কথা শুনেছি আমি।আমি একজন ডাক্তার আপনি একজন ডাক্তার।আপনার সাথে আদরের যায় না ডক্টর মেহতাব।”

রায়হানের কাছে সব পরিষ্কার। মেহতাবকে পাওয়ার লোভে এসব করেছে ফারিহা শেইখ।সে বললো, “আপনি মেহতাবকে পছন্দ করেন?”

কেদে ফেলে ফারিহা শেইখ রায়হানের কথা শোনা মাত্র।চোখ দিয়ে জ্বল ফেলে বলে,

“হ্যা।আজ থেকে নয় যেদিন থেকে এই হসপিটালে জয়েন করেছি ঠিক তবে থেকে।আমি জানতাম ডক্টর মেহতাব মেয়েলী কোনোকিছুতে জড়িত নেই।কিন্তু সেদিন কক্স বাজারে আদরকে জড়িয়ে ধরতে দেখি।আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।আমি বুঝে উঠতে পারছিলাম না কি করবো। সবকিছু এলোমেলো লাগছিলো।তারপর আমি সিদ্ধান্ত নেই যে করেই হোক জানবো ওই মেয়ে আদর আর ডক্টর মেহতাবের মধ্যে কি চলছে।তাই আমি সেদিন চিপ লাগাই কেবিনে।আদর আর ডক্টর মেহতাব যখন বিয়ের ব্যাপারে আলোচনা করছিলেন তখন আমি সব শুনতে পেয়েছি আমার ক্যাবিনে বসে।তখনই আমার মাথায় বুদ্ধি আসে। মিথ্যে কথা বলে আদরকে সরানোর চেষ্ঠা করি।”

মেহতাব বলে উঠে, “আমার এতবড় ক্ষতিটা করে ফেললেন?”

“কি আছে আদরের মধ্যে ডক্টর মেহতাব?আপনার কোনোদিন আমাকে চোখে পড়েনি?”

“আমার আদরের মধ্যে কি আছে সেটা আপনি কোনোদিন বুঝবেন না।আর আপনি কখনও তার মতন হতেও পারবেন না।আগামীকাল থেকে এই হসপিটালে আপনার ডিউটি শেষ।”

রায়হান বললো, “কারো ক্ষতি করার আগে হাজারবার ভাববেন।এর পরিণতি কি হতে পারে।আপনার ভাগ্য মেহতাব আপনার বিরুদ্ধে কোনো একশন নিচ্ছে না।”

“ডক্টর ফারিহা আপনি একশন নিচ্ছি না।কিন্তু নিবো না এটা কিন্তু বলিনি।আপনি কোনোদিন আমাকে পাবেন না।এটা মাথায় রাখেন।আপনি যা যা করেছেন আদরের কাছে স্বীকার করবেন।আপনি একজন ভালো ডাক্তার।নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবুন।এমন মানুষের পেছনে ছুটে সময় নষ্ট করবেন যে যে মানুষটা অন্য কারো।আদর নির্দোষ।ওকে কেনো এতটা অপমান করলেন।ওকে কষ্ট দেওয়ার শাস্তি কতটা ভয়ানক হতে পারে আপনি জানেন?আমি আপনাকে শাস্তি দিচ্ছি না।বরং সুযোগ দিচ্ছি।শুধরে নিন ভুলটা।” শীতল কণ্ঠে বলে উঠে মেহতাব।

ফারিহা শেইখ অপরাধী মুখ নিয়ে নিচে তাকিয়ে আছে।এটা সত্য যে সে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে।মেহতাব ভীষণ রকমের রাগী ব্যক্তি।এটা তার মুখ দেখলে বোঝা যায়।তার শীতল কণ্ঠে হুমকি অনেকটা ভয়াবহ হতে পারে।কি করবে কিছু বুঝে উঠতে পারছে না।সবটা স্বীকার করে মেহতাবকে চিরতরে হারিয়েছে।স্বীকার না করলেও মেহতাব কোনো না কোনোভাবে বের করেই ফেলত।

রায়হান বললো, “শেষ সুযোগ।সবটা স্বীকার করে সসম্মানে বিদায় হন হসপিটাল থেকে।নাহয় একজন আদর্শ ডাক্তারের কীর্তি ফাঁস করা হবে পুরো হসপিটালের সামনে।জীবনে প্রেম ভালোবাসা আসবে যাবে।কিন্তু ক্যারিয়ার?।আপনার ক্যারিয়ার নষ্ট করতে চাইবেন না অবশ্যই”

ফারিহা শেইখ মাথা নিচু করে ভাবছে।আচ্ছামত নিজের জালে নিজেই ফেঁসে গেছে।গলা দিয়া একটা শব্দ বেরোচ্ছে না।এখানে মিথ্যে বলে পার পেয়ে যাওয়া যাবে না।এটা ভাবাও নিতান্ত বোকামি। পরাজিত সুরে বললো,

“আদরকে ডাকুন।আমি বলবো সব”

আদরকে কোথায় পাবে?সেতো মেহতাবকে ভুল বুঝে দূরে সরে গেছে। কোথায় আছে জানা নেই।কেমন আছে সেটাও জানা নেই।যতবার আদরের নামটা আসে ততবার মেহতাবের ড্রাম বাজিয়ে কেউ বলে যায় আদর এর তোর নেই। হৃদয়ে হাতুড়ি পেটা করে মনে হয় কেউ।মনে হয় এখানেই সব শেষ।জীবনে বাকি নেই কিছু।উঠে হনহনিয়ে বেরিয়ে গেলো মেহতাব।মাথাটা ভার ভার লাগছে। এতএত জিনিস সামনে আসছে যে কোনোভাবেই নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে পারছে না মেহতাব।

____

সময়ের চেয়ে দ্রুত গতির কোনো অশ্ব নেই।দৌড়ে ঝাপটে চলে গেলো।নিয়ে গেলো পুরো একটি মাস।কারো জীবন থেকে কেড়ে নিয়েছে সকল সতেজতা।হারানোর বেদনায় রাত জেগে কাতরাচ্ছে কেউ। দ্বারে দ্বারে খুঁজে বেড়াচ্ছে সবখানে।তবে দিন শেষে খালি হাতে ফিরতে হয়।বুকে এক পাথর সমান বোঝা নিয়ে ঘুমোনোর চেষ্ঠা করতে হয়।অনিচ্ছা সত্ত্বেও দায়িত্ব পালন করতে হয়।দিন যাচ্ছে দিনের মনে।কাউকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিচ্ছে।এখন মানতে বসেছে মেহতাব আদর তার নেই।হয়েছে অন্য কারো অর্ধাঙ্গিনী। ঘর বেড়েছে অন্যের সাথে।সে দোষী।সে নিজেই আদরের অপরাধী।অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছে মেয়েটাকে।এখন এমন কষ্ট তার প্রাপ্য।সে এটারই যোগ্য।ধরে রাখতে জানে না সে।হারিয়ে ফেলেছে। যার ভয় ছিলো তাই হয়েছে। নিঃস্ব!একা!মাঝপথে জীবনে অল্প সময়ের সুখ এসে আবারো হারিয়ে গেলো।

ফারিহা শেইখকে বের করে দেওয়া হয়েছে।রায়হান ছায়ার মতন লেগে থাকে মেহতাবের সাথে।এক পলক চোখের আড়াল করেনি।মিশা বারবার কল করে ভাইয়ের অবস্থা জানে।রোহিত,রুবি, শান্তা আকাশ পাতাল এক করে ফেলছে আদরের খোজ নিতে।

“এত রাগ,অভিমান তোমার?মনে পড়ে না আমার কথা?ভুলে গেছো?ভালো আছো আমাকে ছাড়া?আমি জানি তুমি ভালো নেই।আমিও নেই।একটাবার ফিরে এসো।আমি যে তোমাকে তোমার চেয়ে বেশি অনুভব করি সেটা বলবো।আমিতো ধীরেধীরে নিজের শক্ত খোলস ছেড়ে নিজেকে তোমার কাছে আত্মসমর্পণ করছিলাম।একটু সময় দিয়ে দেখতে?সরাসরি আমার সাথে এসে কথা বলতে এই বিষয়ে?কেনো ভুল বুঝে চলে গেলে আদর?তোমার ঘ্রাণ এখনও এই কেবিনে ভাসে।আমার চুলে তোমার স্পর্শ এখনও লেগে আছে।আমার বুকে?কতদিন কাটিয়েছি তোমার ভিডিও ক্লিপগুলো দেখে জানো।মন ভরে আদর।আমাকে একটা সুযোগ দাও।আমি তোমাকে নিজের করে নিবো। কোথাও হারাতে দিবো না।কোনো অভিযোগ করার সুযোগ দেবো না।”

ধরফরিয়ে কেবিনে প্রবেশ করলো রোহিত।তাকে মেহতাব অল্পদিন হলো চেনে।সরাসরি আজই দেখছে। হাপাতে হাপাতে বললো,

“স্যার!দ্রুত চলুন”

“কোথায়?”

“আপনি চলুন আপনাকে সব যেতে যেতে বলবো।আদর এসেছে।ওকে অনেক কষ্টে ঢাকা এনেছি আমরা।জলদি চলুন”

আদর এসেছে শুনে সারা দেহ কেপে উঠলো মেহতাবের। শিরশির করছে।উঠে দাঁড়ানোর সাহস পাচ্ছে না।শরীরে শক্তি পাচ্ছে না।কেদে ফেললো তৎক্ষনাৎ। রোহিত রায়হানকে কল করে মেহতাবকে নিয়ে গেলো সাথে।

__

রুবিদের বাসায় বিষণ্ণ মুখে বসে আছে আদর।ভীষণ রাগ সে। মিথ্যে বলে ঢাকায় অনানো হয়েছে তাকে। রোহিত অ্যাকসিডেন্ট করেছে এই মিথ্যেটা শুনে কোনোদিন না তাকিয়ে ঢাকা ফিরে আসে।এই স্বরযন্ত্রে তার মাও জড়িত।সামনে বসে আছে রুবি, শান্তা আর শাহরিয়ার।রাতের গাড়িতে আদরের বাবা মা ফিরবে।আদরকে শাহরিয়ারের সাথে পাঠিয়েছে।এতদিন পর আদরকে দেখে প্রায় কাদো কাদো অবস্থা রুবি আর শান্তার।কিন্তু এসবে কোনো প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে না আদর। মূর্তি হয়ে বসে আছে।অনেকবার কথা বলানোর চেষ্টায় সকলে ব্যস্ত।

“আদর!”

চমকে উঠলো আদর।ধ্যান ভেঙে গেলো মুহুর্তেই। চিরচেনা কন্ঠস্বর।সেই গম্ভীর গলা।এখনই দুর্বলতা হানা দিবে।গুলিয়ে ফেলবে সবকিছু।এটা যেনো স্বপ্ন হয়।চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো আদর।

হাতে হেছকা টানে দাড়িয়ে পড়েছে আদর।চোখ খুলে সেটাই দেখলো যার ভয় ছিলো। মেহতাব তার সামনে দাড়িয়ে। চোখে চোখ রাখার সাহস নেই।হাতের শক্ত বাধন!ঠোঁট কামড়ে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।এতদিন পর মেহতাবের ভারী নিঃশ্বাসের শব্দ মনে তুফান তুলে দিচ্ছে।

“কোথায় ছিলে তুমি?”

“ছাড়েন আমাকে!কোন সাহসে আমার হাত ধরে আছেন হ্যা?”

একে একে সবাই বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে।শুধু শাহরিয়ার বাদে।ছেলেটি আদরের পেছনে দাড়িয়ে আছে।মুখে কোনো শব্দ নেই তার।আদরের হাত ছেড়ে মেহতাব রেগে বললো,

“আপনি যাচ্ছেন না কেনো?কথা বলছি দেখছেন না।বের হন”

আদর চিৎকার করে বলে উঠলো, “আপনি বের হন।উনি কোথাও যাবে না।আর এভাবে কথা বলেন কোন মুখে?আমি এখানে এক মুহুর্ত থাকবো না যেতে দেন আমায়।”

আদর প্রত্যেকটা কথা চোখ নামিয়ে বলছে। মেহতাবের দিকে তাকানো অর্থই হচ্ছে নিজের সমস্ত শক্তি হারিয়ে ফেলা।মেহতাব হুট করে কান্ড ঘটিয়ে বসলো। শাহরিয়ারের কলার চেপে ধরেছে।

বজ্র কণ্ঠে বলে উঠে, “তুই হাসবেন্ড আদরের হ্যা?ওকে বিয়ে করেছিস”

শাহরিয়ার নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে স্বাভাবিক কণ্ঠে বলল, “আপনারা কথা বলেন।আমি বাহিরে যাচ্ছি”

মেহতাব পূনরায় ফিরে এসেছে আদরের কাছে।চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় বইছে অস্রু।কতটা দুর্বল সে!আদরের চেহারা দেখে মন কোনো বাঁধাই মানছে না।নাই অস্রু ধারারা।কাপা কাপা হাতে আদরের দুইগালে রাখলো। অস্বাভাবিক নিঃশ্বাসের গতি।কপালে কপাল ঠেকিয়ে বললো,

“এত রাগ তোমার?আমি কি অবস্থায় আছি তুমি জানো?”

মেহতাবের কান্না জড়িত কন্ঠ শুনে আদর থমকে গেলো। মুহূর্তের মধ্যে দুমড়ে মুচড়ে দিচ্ছে ভেতরের সব কিছু।তার এই রূপও আছে।সে কাদতে জানে?চোখ আপনাআপনি মেহতাবের দিকে চলে গেলো।তার চোখ মুখ দেখে আতকে উঠলো।এ কি অবস্থা তার?কি হাল করেছে নিজের! ঠোঁট উল্টে কাদতে নিলো আদর।সাথেসাথে নিজেকে আটকেছে।কানে বেজে উঠলো সেদিন রাতে সেই মেয়ের বলা কথাগুলো আর মেহতাবের বিয়ের কথা।

ছিটকে সরে গেলো আদর।রাগে,অভিমানে বলে উঠে,

“একদম ছুবেন না আমায়।আপনার মতন লোকের স্পর্শ আমি ঘৃনা করি।”

“তো কার স্পর্শ ভালো লাগে?ওই ছেলের!তোমার সো কল্ড হাসবেন্ড এর?”

“তো?হাসবেন্ড হয় আমার।অবশ্যই তার স্পর্শ আমার জন্য অপবিত্র না!”

মেহতাব এগিয়ে গেলো।আদরের হাত মুড়ে নিজের কাছে নিয়ে এসেছে।নিজের সাথে মিশিয়ে আদরকে জেদী গলায় প্রশ্ন করলো,

“ওই ছেলে তোমাকে ছুঁয়েছে?”

“আপনাকে বলবো কেনো আমি?কে আপনি!”

“আমি ওকে জানে মেরে ফেলবো।তোমাকে স্পর্শ করার অধিকার শুধু আমার।তোমাকে দেখার অধিকার আমার।আর কেউ চোখ তুলে তাকালে আমি চোখ উপড়ে ফেলবো।আমার ধৈর্যবান,ঠান্ডা রূপ দেখেছো।আমি ভয়ঙ্কর হলে তুমি কল্পনাও করতে পারবে না আমি কি করবো আদর।”

আদর মেহতাবকে তাচ্ছিল্য করে বললো,

“ধোঁকাবাজ লোকের বড়বড় কথা!”

আদরকে ছেড়ে দেয় মেহতাব সঙ্গেসঙ্গে।পূনরায় হাত টেনে ধরে।টানতে টানতে রুমের বাইরে নিয়ে এসেছে।এখানে সবাই উপস্থিত।মেহতাব সবার উদ্দেশে বললো,

“আমি প্রথমে লয়ারের কাছে যাবো।তারপর কাজী অফিস।কেউ কি যেতে ইচ্ছুক আমার সাথে?”

শাহরিয়ার বললো, “মানে কি?”

আদরের হাত ধরে রেখেই শাহরিয়ারের কাছে গিয়ে মেহতাব বলে,

“মানে হলো আজকে একটা ডিভোর্স হবে।আরেকটা বিয়ে।”

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here