#চিত্তসন্ধি
পর্ব ৪৯
লেখা: #Azyah
প্রকৃতি সেজেছে নতুন রূপে।কলরব ছড়াচ্ছে অনুষ্ণ ভোরে। নভেম্বরে বাংলাদেশে এই এমন ঠান্ডা পড়ার কথা না।আকাশটাও পরিষ্কার।তবে অন্ধকারছন্ন।গুমোট পরিবেশে হিমশীতল হাওয়া বইছে।বারান্দার দরজাটা খোলাই রয়ে গিয়েছিল রাতে।বাতাসে বারান্দার দরজায় ঝোলানো উইন্ড চাইমটাও শব্দ করে উঠছে বারবার।শীতল পরিবেশে আদর উষ্ণ। মেহতাবের বুকে ওম পাচ্ছে। টিশার্ট খামচে ধরে আস্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে তাকে।আদরের চুল মুখে গিয়ে পড়লে অসস্তি বোধ করে মেহতাব।নড়েচড়ে উঠে। ঘুমটাও হালকা হয়ে আছে।ভারী চোখ নিয়ে তাকায়।তার সাথে জড়িয়ে থাকা নিত্যনতুন বিড়াল ছানাকে দেখে নেয় একবার।সে হিতাহিত জ্ঞান সম্পুর্ণ।
বাহিরে তাকিয়ে আদরের কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করলো,
“আজকের আবহাওয়াটা বেশ ভয়ঙ্কর আদর।এভাবে জরিয়ে উষ্ণতা দিচ্ছ আমায়।আজকের সকাল আমার জন্য সবচেয়ে প্রিয়। স্মরণীয়!কল্পনার বাহিরে এক স্বস্তি অনুভব করছি।এতদিন বুকের বামপাশটা খালি ছিলো।আজ পরিপূর্ণ লাগছে।তুমি পূর্ণতা।আমার নিঃস্ব জীবনের পূর্ণতা।শক্ত পাথরের মতন মনকে মোমের মতন গলিয়ে দিলে?কিভাবে ধন্যবাদ জানাই?”
আধ ঘন্টা যাবৎ আদরের মুখশ্রীর পানে চেয়ে আছে মেহতাব।ঘুমের সুযোগে চুমুও খেয়েছে।বারবার আমার বিড়াল ছানা বলে আওড়িয়েছে।বেশি ভালো বাসতে বাসতে ঘুম ভাঙিয়ে দিল আদরের।চোখ খুলে নিজেকে মেহতাবের কাছে দেখে ঘাবড়ে উঠেছে।
রসগোল্লার মতন চোখ বড় করে বলল,
“আপনি এখানে কি করেন?ঘুমের মধ্যে সুযোগ নিচ্ছেন?”
মেহতাব উঠে পড়ল।নিজের চুলে হাত বোলাতে বোলাতে বললো,
“চোরের মার বড় গলা!”
“আমাকে চোর বলছেন?”
“চোরের মা বলছি!”
“আমার কোনো বাচ্চাকাচ্চা নেই।আমি মা হলাম কি করে?তাও আবার চোরের?ছিঃ!”
মেহতাব ঘুরে তাকালো।তার চাহনি দেখে মনে হচ্ছে এখন এমন কিছু একটা বলবে যা আদরকে অসস্তিতে ফেলে দিবে।আদর নিজেকে নিজে বললো।নাহ এত কথা বলা মোটেও ঠিক হয়নি।কি বলতে কি বলে ফেলেছে। যার অর্থ বিশ্লেষন করলে ঝামেলা হয়ে যাবে।মেহতাব ফ্রেশ হতে যাচ্ছিল।আদরের কথা শুনে তার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি স্থাপন করে আছে।ঝড়ের গতিতে মেহতাবকে টপকে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো আদর।মেহতাব হতভম্ব!কই যাবে এই মেয়েকে নিয়ে?
চোখ মুখে পানির ছিটা দিয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হতে যায় আদর।দরজা খুলতে চাইলে খোলে না। আশ্চর্য্য! লক লেগে গেলো নাতো?কোনদিকে না তাকিয়ে দ্রিম দ্রিম করে হাত চালিয়ে দিলো দরজায়।মেহতাব বাহিরে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাড়িয়ে আছে।কেননা দরজাটা বাহির থেকে বন্ধ সেই করেছে।কারো কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে আদর চেচিয়ে উঠলো,
“এই শুনছেন!দরজা খোলে না কেন? লক লেগে গেছে বোধহয়।”
আরেকদফা বললো, “আপনি কি আছেন এখানে?”
এবারও মেহতাব কোনো কথা বললো না।মুখ টিপে হাসছে।আদর করুন কণ্ঠে বলে উঠলো,
“আপনি কি আছেন?একটু বলেন না।আমার ভয় করছে।”
মেহতাব এর হাসি নিমিষেই উধাও হয়ে গেলো।আদরের ভয়ের কথা শুনে দ্রুত দরজা খুলে দিয়েছে।ভেসে আসলো আদরের মলিন চেহারা।বড্ড ভীতু মেয়েটা।সামান্য দিনের বেলায় বাথরুমে ভয় পেয়ে বসে আছে।দরজা খোলা পেয়ে বেরিয়ে আসলো।মেহতাব সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“বেশি ভয় পেয়েছো?”
“উহু”
“সরি!”
মেহতাবের মুখে সরি শুনে অবাক হলো আদর।সরি বলছে কেনো?সে ভেবেই নিয়েছে বাথরুমের দরজা লক হয়ে গিয়েছিল।
“কেনো?”
“আমি লক করেছিলাম দরজা”
মলিন মুখটা আর মলিন রইলো না।তেতে উঠলো। কপট রাগ দেখিয়ে বললো,
“এত বড় একটা লোক হয়ে আপনি এই ধরনের ফাজলামো কি করে করলেন?”
“আবার দেখবে কিভাবে করলাম?এসো আবার আটকে দেই!”
___
আদরকে ঘরে তোলার পর ফরিদা বেগম আর রায়হান এখানেই রয়ে গেছেন।সকাল সকাল জয়তুন বেগম নেহারি বসিয়েছেন চুলোয়।তাকে সাহায্য করছে মিশা আর ফরিদা বেগম। ভোর সাতটা থেকে তাদের এই আয়োজন চলছে।ঘরে নতুন বউ এসেছে বলে কথা।আদর মাথায় ওড়না টেনে কিচেনের দিকে এগিয়ে গেলো।সবাইকে সালাম দিয়ে বললো,
“হেল্প করি?”
ফরিদা বেগম বললেন, “না মা তুমি বসো গিয়ে।নাস্তা রেডি”
“আচ্ছা আমি সার্ভ করি টেবিলে?”
জয়তুন বেগম বলে উঠলেন, “বউ কয় কি?তুমি আমগোর আব্বার বউ। ঠাটবাটে থাকবা।কি খাইবার মন চায় আমারে একটা আওয়াজ দিলেই আমি বানায় দিয়া যামু”
মিশা প্লেট হাতে নিয়ে বলল, “ঘুম কেমন হলো ভাবি?”
আদর মাথা নামিয়ে বললো, “ভালো”
“চলো খেতে বসবে”
পেছন থেকে মেহতাব এসে জয়তুন বেগমকে বললো, “আমার চা?”
“দিতাছি আব্বা।আপনি বসেন গিয়া”
আদর এগিয়ে গেলো।এমনেতেই তারা কাজে ব্যস্ত।এরমধ্যে চা বানানো আলাদা ঝামেলা হবে। সামনে এসে বললো,
“চা আমি বানিয়ে দিচ্ছি”
সবাই একে অপরের দিকে চাও়াচাওয়ি করে বলে, “দিবা? জানোতো কেমনে চা খায় আব্বায়?”
“জানি”
ফরিদা বেগম বললেন, “হ্যা অন্য কোনো কাজে হাত না দিলেও নিজের স্বামীর কাজ করতেই পারো।”
বিছানায় আধ শোয়া হয়ে আছে মেহতাব।ফোন দেখছে আপন মনে।আদর রুমে এসে চায়ের কাপ এগিয়ে দিলো।আদর চা এনেছে। ব্যাপারটা তার ঘরে নতুন।একপলক তার দিকে তাকিয়ে চায়ের কাপটি নিলো।আদর পাশেই দাড়িয়ে।মেহতাব চায়ে চুমুক দিয়ে বললো,
“আলমারিতে জায়গা করেছি।কাপড় লাগেজ থেকে বের করে সেট করে রেখো। এখনতো আবার সবকিছুতে ভাগ বসাবে।”
মেহতাবের কথায় বেশ খারাপ লাগলো আদর।ভাগ বসাবে মানে?এখন থেকে সবকিছুইতো তাদের দুজনের।আলাদা বলতে কিছুই নেই।আদর মলিন মুখে বললো,
“আমার কাপড় লাগেজেই থাকুক।আমাকে কোনোকিছুর ভাগ দিতে হবে না।”
আদর এর মুখে স্পষ্ট অভিমান।চলে গেলো রুম থেকে। মেহতাব চোখ বুজে নিজের উপর রাগ ঝারছে।বেশিবেশি বলে ফেলে একদম।দ্রুত পা বাড়ালো আদরের পেছনে।সবার চোখের আড়ালে টেনে নিয়ে গেল ছাদে।দুইহাত রেলিংয়ে ঠেকিয়ে ঝুঁকে আছে আদরের দিকে।আদর মুখ ফিরিয়ে নিলো। মেহতাবও তাকে নকল করে তার দিকে মাথা বেকিয়েছে।আদর আবার অন্যদিকে ঘুরে গেছে।
“তোমার রাগ কমানোর টোটকা আছে আমার কাছে”
“আমি রাগ টাগ নই!”
“তাই নাকি?”
“হুম”
“কিন্তু আমার এই টোটকা এপ্লাই করতে ইচ্ছে করছে।”
“আপনি সরুন সামনে থেকে।”
বলে উদ্যত হলো চলে যাওয়ার জন্য।মেহতাব তাকে সেই সুযোগ দেয়নি।আরো ঘনিষ্ট হয়েছে তার সাথে।নিঃশব্দে মুখ ডুবিয়ে দিলো আদরের গলায়।উন্মাদনা ছেয়ে গেল সর্বাঙ্গে।আদরের কোমড় খামচে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়েছে। ঘন ঘন নিঃশ্বাস ছেড়ে ঠোঁটের গভীর স্পর্শ দিতে লাগলো আদরের সারা ঘাড়ে।বারবার কেপে উঠ আদর মেহতাবের চুল টেনে ধরে আছে।সময় নিয়ে শান্ত হলো মেহতাব।এখনও আদরকে জড়িয়ে নিঃশ্বাস নিচ্ছে।
“নেক্সট টাইম থেকে রাগ,অভিমান করলে বুঝে শুনে করবে।আমি কিন্তু আরো বেশি চরিত্রহীন হতে পারি”
হতবুদ্ধি অবস্থায় আদরকে আদরকে ফেলে রেখে চলে গেলো মেহতাব।ঘটনার রেশ কাটাতে পারছে না আদর। স্থির দাড়িয়ে।মেহতাব পুনরায় ফিরে এলো।মনে হলো তার এভাবে আদরকে ছাদে একা ফেলে আসা উচিত হয়নি।এসে সামনে দাড়িয়ে বললো,
“নিচে চলো”
আদরের হাত ধরে নিজেই নিয়ে এলো ঘরে।রায়হান তাদের দুজনকে একসাথে ঢুকতে দেখে প্রশ্ন করলো, “কি ভাবি? ছাদে গিয়েছিলেন?কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করে আসলেন বুঝি?”
আদর বললো, “তেমন কিছু না”
“বুঝি বুঝি।নতুন বিয়ে ঘরে এত মানুষ।সময় দিতে পারছেন না একজন আরেকজনকে। ব্যাপার না হয় এমন”
মেহতাব আশপাশে চোখ ঘুরিয়ে নিয়েছে।নাহ কেউ নেই।সেই সুযোগে রায়হানের উদ্দেশে বললো,
“কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করার জন্য বেডরুম আছে আমাদের।তোর এতো ভাবাভাবি কিসের হ্যা?নিজের চরকায় তেল দে”
আদর ঝড়ের গতিতে স্থান ত্যাগ করলো।বুঝলো এই তর্ক অনেকদূর গড়াবে।আর আদর হেনস্তা হবে তাদের কথার মাধ্যমে।কিসব কথাবার্তা!লজ্জা করলো না ভাইয়ের সামনে এসব বলতে?
__
বৌভাতের অনুষ্ঠান করা হয়নি।কিন্তু আদরের বাবা মাকে আর বন্ধুদেরকে দাওয়াত করা হয়েছে।নিয়ম অনুযায়ী মেহতাব আর আদর আজ আদরদের বাড়ি যাবে। আশরাফ মাহমুদ আর জোহরা খাতুনের সাথে। মেহতাব মোটেও ইচ্ছুক নয় যেতে।মূল কথা সে আদরকে যেতে দিতে ইচ্ছুক নই।সে একদিন থেকে চলে আসবে।আদর থাকবে আরো দুয়েকদিন। একদিনে বউ পাগল হওয়া মেহতাব কোনো রকমের দূরত্ব চাচ্ছে না আদরের কাছ থেকে।
ঘরে কোনো কাজই করতে দেওয়া হচ্ছে না তাকে।মেহতাব বাহিরে গেছে কিছু কেনাকাটা করতে।ঘরে অলস সময় পার করছে আদর।বারবার নিজের হাতের মেহেদী দেখে যাচ্ছে।বদ লোকটা হাতের মেহেদীটা পর্যন্ত দেখলো না।কি সুন্দর করে তার নামটা লিখা।সে অবশ্য জানেও না মেহেদিতে তার নামে লেখা হয়েছে।যে করেই হোক দেখাতে হবে তাকে।বাড়ি আসুক।মেহতাব ফিরে এসেছে বাজার করে।নতুন নতুন গুন সামনে আসছে তার।বাজার রেখে দ্রুত চলে গেলো শাওয়ার নিতে।আদরও বাজার সাজিয়ে তার পিছুপিছু।অপেক্ষা করছে গোসল থেকে বেরিয়ে আসার।অনেক সময় পার করে মেহতাব বের হয়নি। লম্বা শাওয়ার নিচ্ছে।আদর আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল আঁচড়াতে নিলে সাথেসাথে মেহতাব বেরিয়ে আসে খালি গায়ে।শুধু ট্রাউজার পড়ে আছে।আয়নার অপরপাশে তাকে অর্ধনগ্ন অবস্থায় চুল মুছছে মেহতাব।হাতের আর বুকের কালো লোম ফুটে আছে।লজ্জাজনক বিষয়!দেখে চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো আদর।আয়নার দিকে ফিরে শক্ত হয়ে দাড়িয়ে আছে।আদরকে এমন মূর্তি হয়ে থাকতে দেখে মেহতাব বললো,
“স্ট্যাচু হয়ে গেছো?”
মেহতাবের প্রশ্নের উত্তরে আদর বলে,
“আপনি টি শার্ট পড়েছেন?”
“নাহ”
“পড়েন জলদি।লজ্জা নাই নাকি?”
মেহতাব বুঝে গেছে আদরের চোখ বুঝে মূর্তি হয়ে থাকার কারণ।তাকে জ্বালালে কেমন হয়?ইচ্ছে হলো বিরক্ত করতে।একটু ভয় পাবে,একটু লজ্জা পাবে।আর মেহতাব সেটা উপভোগ করবে।পুরুষ জাতি বরাবরই তার ব্যক্তিগত নারীর কাছে নির্লজ্জ্ব।আদরের পেছনে দাড়িয়ে মেহতাব বলে উঠে,
“হ্যাঁ টি শার্ট পড়েছি।চোখ খুলো”
মেহতাবের কথায় বিশ্বাস করে দ্রুত চোখ খুলেছে আদর।চোখ খুলে হাসফাঁস করে উঠলো।মিথ্যুক লোক!খালি গায়ে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে।আদর চোখ নামিয়ে ফেললো।আদরের দিকে ঝুঁকে মেহতাব চিরুনি নিয়ে বললো,
“বাপের বাড়ি গিয়ে কয়দিন থাকার প্ল্যান?”
“এক সপ্তাহ থাকি?”
“ইম্পসিবল!
মেহতাব ততক্ষণে টি শার্ট গায়ে জড়িয়েছে।আদর তার দিকে ঘুরে বললো,
“আম্মু আব্বুর জন্য এখনই টেনশন হয়।কিভাবে থাকবে একা?আমারতো কোনো ভাইও নেই।আগে মনে হতো আমি একা রাজত্ব আমার।ভাই বোন থাকলে হয়তো ভালোবাসার ভাগ হতো।এখন মনে হচ্ছে পরিবারে একটা ভাই থাকা উচিত।বাবা মার বুড়ো বয়সের লাঠি।”
মেহতাব আলরামি থেকে কিছু একটা বের করতে নিয়েও থেমে গেলো।দরজা ধরিয়ে দাড়িয়ে আছে। মুখশ্রী দেখে বোঝা যাচ্ছে কিছু ভাবছে।আদরও তার পানে চেয়ে।মুখ পড়ার চেষ্টায়।
আদর বলে উঠলো,
“কোথায় হারিয়ে গেলেন?”
আদরের প্রশ্নে হুশ ফিরল।বললো,
“হুম? নাহ ভাবছি তোমার বাবা মা কি খেতে পছন্দ করেন?”
“ওনাদের যা দিবেন তাই খাবে।কিন্তু কেনো?”
“আংকেল হার্ট পেশেন্ট।অয়েলি ফুড ঠিক হবে না।রেগুলার খাবার করতে বলি?একটু ডিফারেন্ট স্টাইলে?”
“আপনার ইচ্ছা”
“আচ্ছা তুমি বসো আমি দেখছি।তুমি খাবে কিছু?”
“নাহ”
“ওকে”
___
জোহরা খাতুন আর আশরাফ মাহমুদ এসে গেছেন বিকেলে।মেয়েকে ধরে ফুপিয়ে কেদে উঠলেন।আদর নিজেকে অনেকটা শক্ত করে আছে।হাসিমুখে কথা বলছে।বাবা মাকে আশ্বস্ত করতে হবে সে খুশি।বাবা মা যদি স্বস্তি পায়?তাদের দুশ্চিন্তায় রাখতে চায় না।এসেই কুশল বিনিময়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।সবাই বসার ঘরে কথা বলছে।
প্রায় সন্ধ্যা।
বাবা মাকে নাস্তা পরিবেশন করে ঘরে এসেছে আদর।প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস ব্যাগে নিচ্ছে।একটি পরই বাবা মার সাথে বাড়ি যাবে। মেহতাবও সাথে যাচ্ছে।ঘরে এসে রেডি হয়ে নিলো মেহতাব।
আদর হাতে চুড়ি পড়তে পড়তে বললো,
“মিশাকে সাথে নিয়ে চলেন।ঘুরে আসলে ভালো লাগবে। এমনেতেই বেশিদিন দেশে নেই”
“বাবা একা কিভাবে থাকবে?”
“ফরিদা আন্টি আছে না?আবার জয়তুন খালাও আছে।”
“বলে দেখো যায় কিনা।আর শোনো আমার কিন্তু কালকে থেকে ডিউটি”
“আমাদের বাসায় থাকবেন না?”
“একরাত থাকতে পারবো।”
“আচ্ছা”
অবশেষে ডিসাইড হয়েছে মিশাও যাবে সাথে।আদর,মেহতাব আর মিশা আদরদের বাড়ি যাবে।রাতের খাবার শেষে রওনা হলো তারা।আশরাফ মাহমুদ থেকে বিদায় নিয়ে।রায়হান আর ফরিদা বেগম আজ মেহতাবদের বাড়িতে আছে।বাড়ি পৌঁছতে পৌঁছতে প্রায় রাত দশটা।এসেই ফ্রেশ হয়ে যারযার রুমে শুয়ে পড়লো।মেহতাব আজ প্রথম আদরের ঘরে এসেছে।সম্পূর্ণ ঘরের দেয়ালে বাচ্চামোর ছাপ।নানা ধরনের গাছ পালার পেইন্টিং,গাছ, ফেইরি লাইটে সাজানো ঘরটা।যা মেহতাবের পছন্দের একদম উল্টো।সে ছিমছাম পরিবেশ পছন্দ করে।একস্ট্রা কোনোকিছুই ঘরে থাকলে ফাঁপড় লাগে তার।
নিজের ঘরে এসে আদর সব হাতিয়ে দেখছে।মাত্র একদিন হলো বাড়ি থেকে গিয়েছে।তার মধ্যেই মিস করতে শুরু করেছে সবকিছু।
মেহতাব দুষ্টুমির ছলে বললো,
“দেখে মনে হচ্ছে কোনো একটা বাচ্চা থাকতো এই ঘরে”
মেহতাব এর ইঙ্গিত বুঝতে পেরে আদরও জবাব দিয়ে বসলো,
“হ্যা বাচ্চাইতো।এই বাড়ির ওয়ান অ্যান্ড ওনলি বাচ্চা।আদর শিকদার”
“একটা বিবাহিত বাচ্চা”
“আপনার দোষে বিবাহিত।জোর করে কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করেছেন।”
মেহতাব স্মিথ হেসে বললো, “আমি বিয়েটা না করলে কেউ করতো না।তোমাকে সামলানোর মতন কার এত ধৈর্য্য আছে?”
অপমানিত বোধ হলো। আদর বলে উঠলো, “বিয়েই করতাম না!”
“খুবতো গিয়েছিল বিয়ে করতে।আমাকে মেসেজে কি কি লিখেছিলে মনে নেই?”
“আপনার সাথে কথা বলাই বেকার!”
রাত বাড়ছে।মেহতাব ল্যাপটপে কাজে ব্যস্ত।তর্জনী আঙ্গুল ঠোঁটের উপরে চেপে কিছু একটা দেখছে।আর তাকে দেখছে আদর।বারবার তাকে প্রশ্ন করতে হলে হাজারবার ভাবতে হয়।ভালো,সোজা উত্তরতো দিবে না।এটা জানা আছে। ভাবনা চিন্তাকে বালিশের নিচে চাপা দিয়ে শুয়ে পড়লো।ঠিক তখনই মেহতাব বললো,
“একটা কোর্স সম্পর্কে আর্টিক্যাল দেখলাম।ঘরে বসে কাজ। বাট ইউ হ্যাভ টু বি প্রফেশনাল। কোর্সটা করবে।আর হ্যা বিয়ের রেশ কাটাও তারপর আবার কাজে জয়েন করছো তুমি।পড়ালেখার পাশাপাশি কাজ চালিয়ে যাও”
ঘুমোনোর জন্য চোখ বন্ধ করে আবার খুলে ফেললো। মেহতাবের কথা শুনে।ঘুরে জিজ্ঞেস করলো,
“কোন কোর্স?কোন কাজ?”
“কোর্সটা কাইন্ড ওফ ফ্রিল্যান্সিং টাইপ।আর কাজ হচ্ছে আগে যেটা করতে সেটাই”
“আপনার অ্যাসিসট্যান্টের?”
মেহতাব ল্যাপটপ বন্ধ করে পাশের টেবিলে রেখে দিলো।নিজেও শুয়ে পড়েছে আদরের দিকে ফিরে।বললো,
“অর্ধাঙ্গিনী বলতে কি বোঝায়?অবশ্যই বুঝো?”
“হুম।কিন্তু এখানে এই কথা আসছে যে?”
“আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট না আমার অর্ধাঙ্গিনী হিসেবে কাজ করবে।আমাকে সাহায্য করবে।ব্যাক সাপোর্টে থাকবে।সারাক্ষণ পাশে আর সাথে থাকবে আমার ”
চলবে..