চিত্তসন্ধি পর্ব ৫৭ লেখা: #Azyah

0
190

#চিত্তসন্ধি
পর্ব ৫৭
লেখা: #Azyah

“সময় কেটে যায়, বহমান, প্রবাহমান হয় কি করে?সময়তো বাতাসের ন্যায়।কখন আসে কখন ছুঁয়ে দিয়ে চলে যায় কেউ ধরতে পারে?শুধু আচ পায়।প্রশ্ন জাগে!তাহলে বাতাসও কি কিছু দিয়ে যায়,কিছু নিয়ে যায়?নতুন হয় পুরনো হয়?…..মনে আছে এই বছরের গ্রীষ্মের উত্তপ্ত বায়ুর কথা?তারপর পরই যে এক তীব্র ঝড় হাওয়া বইলো?আর তারপর এখন যে ঠান্ডা শীতের হাওয়া বইছে?সময় কি তাহলে বাতাসের মতন না?”

কালো শাল জড়ানো আদর।পাশে বসে ঠান্ডায় থরথর কাপছে রুবি।আদরের শালে হাত পেঁচিয়ে রেখেছে।মাঠের এক কোণায় আগুন জ্বালানোর প্রচেষ্টায় রোহিত। শান্তা বাতাস আর সময়ের মেলবন্ধন সশব্দে পড়ে শোনালো। দীর্ঘসময়ের প্রচেষ্টা সফল হলো। আগুন জ্বলে উঠেছে।এবারে একটু শীত নিবারণ হবে।আগুনে হাত সেকে নিচ্ছে একে একে। আড্ডায় মগ্ন সকলের মধ্যে আদরের মন মধ্যিখানে উড়াল দিয়ে চলে যায়।ঘড়ির কাঁটার সাথে বারবার নেত্রের সাক্ষাৎ হচ্ছে।একটু পরই মেহতাব আসবে।তাকে নিয়ে সরাসরি এয়ারপোর্ট যাবে। উদ্দেশ্য একটাই!বোন আর বাবা আসছে।পনেরো দিন পর রায়হান আর মিশার আকদ।তাই বিলেতি ঝামেলা মিটিয়ে আবারো দেশের মাটিতে ফিরে আসা। রায়হানের পাগলামির কাছে হার মেনে পরিপূর্ণভাবে বন্দিনী হতে ফিরতে হচ্ছে মিশাকে।

পরিস্থিতি ব্যতিক্রম বাক্য আসলো রুবি থেকে। কাপতে কাপতে বললো, “আমার কোনো বোন নেই।”

আদর,রোহিত আর শান্তা দৃষ্টিপাত করলো রুবির দিকে।তার এমন কথায় খানিক আশ্চর্য্য হয়েছে তারা সকলে।

শান্তা বিপরীতে বলে,

“আপন বোন নেইতো কি হয়েছে আমরা আছি না?”

আদরও বলে উঠে, “তাইতো”

গলা ঝাড়া দিয়ে রুবি এবার বললো, “তাহলে আমার একটা ইচ্ছে পূরণ কর।”

“কি ইচ্ছে?” শান্তা প্রশ্ন করে উঠে।

“তুই পারবি না আমার এই ইচ্ছে পূরণ করতে।আদর পারবে”

অবাক আদর রুবির কথার অর্থ বুঝেনি।সেখানে উপস্থিত রোহিত আর শান্তাও বুঝেনি।কি এমন ইচ্ছে হতে পারে?যা আদরই পূরণ করতে পারে?

অগ্যতা প্রশ্ন করে বসে,

“কি ইচ্ছে বল শুনি?”

“আমার মনটা কিছুদিন যাবত খালা ডাক শুনার জন্য আনচান করছে।”

কথার অর্থ আন্দাজ করতে কারোই সময় লাগেনি।ঠিক তেমনই বিদ্যুতের গতিতে রুবির পিঠে চাপড় পড়লো।শীতের দিনে হুট করে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে বেশ ব্যাথাই পেয়েছে।পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বললো,

“মারলি কেনো?”

“কেনো মারলাম অবশ্যই বুঝেছিস!” আদর বললো।

“খালা হতে চাওয়া কি পাপ?এটা আমার…সরি আমাদের অধিকার।তাই না শান্তা বল?”

শান্তা একবার রুবির দিকে আরেকবার আদরের দিকে চাইলো। কার পক্ষে কথা বলবে ভেবে চিন্তে নেয়।শেষমেশ রুবির হয়েই উত্তর দেয়,

“হ্যাঁ তাতো বটেই।”

আদর বড়বড় চোখ করে শান্তার উদ্দেশে বলে, “তুইও?”

“তোকি? বিয়ে করেছিস এখন আবদার করা স্বাভাবিক।খালা কবে হতে যাচ্ছি তাই বল?”

আদর লাজুক চোখ নামিয়ে সরাসরি উত্তর দিলো, “আমি জানি না”

“ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করি?”

“থাপ্পড় চিনিস!”

মুহূর্তেই হাসির রোল পড়লো আড্ডায়।শুধু হাসলো না আদর।মাথা নিচু করে ফোনের দিকে চেয়ে রইলো।কল আসলেই বেরিয়ে পড়তে হবে। ভাবতে ভাবতেই ফোনের স্ক্রিনে মেহতাবের নাম ভেসে আসে।কল করেছেন।দ্রুত কল রিসিভ করার পর আদর জানলো এখনই বের হতে হবে। বন্ধুমহলকে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে পরে।

____

ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়।গাড়ীর দরজা খুলতেই সুন্দরতম পুরুষের সুন্দর হাসি চোখে পড়ে।সেদিনের পর থেকে আদরের কথা রাখতে মেহতাব হাসে।শুধু তার সান্নিধ্যেই হাসে।পাশে এসে বসলে একগুচ্ছ গোলাপ হাতে ধরিয়ে দেয়।

“হঠাৎ?”

“জ্যামে একটা বাচ্চা ছেলে গোলাপ ফুল বিক্রি করছিলো।তাই নিয়ে নিলাম”

“বাচ্চা ছেলের জন্য খারাপ লেগেছে বলে কিনেছেন নাকি আমার কথা ভেবে কিনেছেন?”

মেহতাব স্মিথ হেসে উত্তর দিলো, “দুটোই”

হটাৎ করেই এক সাহসী কান্ড ঘটিয়ে বসলো আদর। মেহতাবের মনোযোগ ড্রাইভিং থেকে হরণ করে নিজের দিকে করে নিয়েছে।আচমকা দুঃসাহসিকতার প্রমাণ দিয়ে মেহতাবকে চুমু খেয়েছে। সঙ্গেসঙ্গে দৃষ্টি ফুলের তোরায় নিবদ্ধ করে। আরচোখে মেহতাবকে অবাক চোখে চেয়ে থাকতে দেখে আদর বললো,

“আপনি আমাকে এত সুন্দর ফুলগুলো গিফট করেছেন আমিও এর বিনিময়ে আপনাকে কিছু দিলাম।এবার আমার দিকে এভাবে না তাকিয়ে সামনের তাকান।”

ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে আবারো সামনে সোজা রাস্তায় মনোযোগী হলো মেহতাব।ধীর কণ্ঠে বলল,

“এর হিসেব আমি বাড়ি গিয়ে নিবো”

“আমি আজ মিশার সাথে সারারাত আড্ডা দিবো”

“দেখা যাবে!”

___

ঘর পরিপূর্ণ আর উৎসবমুখর পরিবেশ।মিশার বিয়ের আয়োজন চলছে।ঘরোয়াভাবে হলেও দায়িত্বের আর কাজের শেষ নেই। রায়হানের হুটহাট পাগলামোর স্বভাব আগেকার। মতিগতি সুবিধার কখনোই ছিলো না।এবারও নতুন আবদার।বিয়ে করার আবদার। মেহতাবের কাছে বরাবরের মতই অহেতুক লেগেছে।যেনো পালিয়ে যাচ্ছে তার বোন। মিশারও একই মতামত বিয়েটা হয়ে যাক। উভয়পাক্ষিক মতামত গ্রহণ করেই বিয়ের সিদ্ধান্ত এসেছে।হসপিটাল থেকে দুইদিনের ছুটি নিয়ে শপিংয়ে ব্যস্ত মিশা আর রায়হান।
বসার ঘরে নাসির সাহেব আর মেহতাব আলোচনা করছে।হিসাব নিকাশ,মেহমানদের লিস্ট তৈরি করছে।খুব কাছের মানুষ ছাড়া দাওয়াত করা হবে না কাউকেই।

তাদের সামনে চায়ের ট্রে রেখে আদর বলে উঠলো,

“আপনারা এবার নাস্তা করে নিন।আলোচনা পড়ে হবে”

নাসির সাহেব বৌমার কথায় হাসি মুখে চায়ের কাপ তুলে নিয়ে বললো,

“আমার মেয়ের বিয়ে আমি আনন্দ করে দিন পাড় করতাম।কিন্তু তোমার বর সেটা হতে দিলো কোথায়?কাগজ কলম হাতে ধরিয়ে বসিয়ে দিয়েছে আমাকে!”

আদর স্বর খাদে নামিয়ে আলগোছে বলে উঠে, “ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন ওনাকে বাড়ি থেকে”

অতি ধীর শব্দে বললেও মেহতাব শুনে ফেলে।আদরের দিকে তীক্ষ্ণ নজর ছুঁড়তেই আদর মুখ ঘুরিয়ে নেয়। মিটিমিটি হাসতে থাকে অন্যদিকে চেয়ে।

নাসির সাহেব আদরের কথা শুনতে পায়নি বিধায় আবার প্রশ্ন করে,

“কিছু বললে বৌমা?”

এর জবাবে মেহতাব বললো, “বলেছে আমাকে ঘর থেকে বের করে দিতে”

“তাই নাকি?দিবো?”

বোকা বনে যায় আদর।একবার মেহতাবের দিকে আরেকবার নাসির সাহেবের দিকে তাকাচ্ছে।কি উত্তর দিবে? নাসির সাহেব বেশ বুঝলেন। মিথ্যে আদেশ করার ভঙ্গীতে বললেন,

“বৌমা যেহেতু বলেছে তুমি মিশার বিয়ের পর বাড়ি ছেড়ে চলে যেও।”

কাগজ কলম একপাশে রেখে চায়ের কাপ নিয়ে উঠে যায় মেহতাব।যাওয়ার পথে বলে,

“তোমার বৌমাকে স্মরণ করিয়ে দিও আমি এখন একা নয়।আমি বাড়ি ছাড়া হলে সেও সাথে যাবে আমার।”

তরতর পায়ে পিছু নিয়েছে মেহতাবের। ঘর অব্দি গিয়ে থামলো।বিছানায় আরাম করে শুয়ে মোবাইল ফোন স্ক্রল করছে মেহতাব।আদরের উপস্থিতিকে তেমন একটা তোয়াক্কা করেনি।আদর দরজার কোণ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে।অপেক্ষারত!মেহতাব তাকে প্রশ্ন করবে।জানতে চাইবে কি চায়?কিন্তু তেমন কিছু ঘটার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।আপনমনে নিজের ফোনে মগ্ন মেহতাব।

না পেরে বলেই উঠলো,

“শুনুন”

“শুনছি”

“আমরা শপিং করবো না?”

“না”

“কেনো!” জোরালো কণ্ঠে বলে উঠে আদর।

ঠোঁটে হাসির রেখা কিছু মিলি সেকেন্ডের মধ্যে বিলুপ্ত করে মেহতাব উত্তর দিলো, “টাকা নেই”

“মিথ্যে বলবেন না একদম!”

মাথা তুলে আদরের দিকে চেয়ে মেহতাব বললো, “এখন এটা নিয়ে ঝগড়া করবে?”

“অবশ্যই করবো।আর কেমন ভাই আপনি?বোনের বিয়েতে পুরনো কাপড় পড়বেন নাকি?আমাকেও পুরোনো কাপড় পড়াবেন?”

পূনরায় ফোনে চেয়ে মেহতাব বললো, “আলমারিতে নতুন কাপড় আছেতো”

কথায় কোনোকালেই পারা যাবে না। ত্যাড়া উত্তরের মাধ্যমে মাথার তার এলোমেলো করে দেওয়া মেহতাবের হয়তো জন্মগত স্বভাব।সামান্য শপিংয়ের বিষয়েও তার অমত। কিছুক্ষণ তার ভাবলেশহীন মুখের দিকে তাকিয়ে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।

মেহতাব একই ভঙ্গীতে বলে উঠে,

“যাচ্ছো যেহেতু চায়ের কাপটা নিয়ে যাও”

হনহন করে ঘরে এসে চায়ের কাপ হাতে তুলে নেয় আদর।বের হওয়ার আগে পূনরায় বাধাপ্রাপ্ত মেহতাব এর আওয়াজে,

“কাল নিয়ে যাবো শপিংয়ে”

পা জোড়া থেমে গেলো।চায়ের কাপ সাইড টেবিলে রেখে বললো,

“এটা আগে বলতে পারলেন না?শুধু শুধু জ্বালাতন করেন।”

আদরের দিকে এক নজর দিয়ে মেহতাব বলে উঠে, “ভালো লাগে জ্বালাতে।”

আদর মুচকি হেসে চোঁখ নামিয়ে নিলো। বিছানায় আঙ্গুল দিয়ে আকাঝুকি করতে করতে আনমনে ভাবনার সাগরে ডুব দেয়। পরক্ষণে বলে,

“আমি কালো শাড়ি পড়বো বিয়েতে।”

“আচ্ছা”

“আপনিও কালো রঙের পাঞ্জাবি পড়বেন”

“আচ্ছা”

“আমরা দুইজন সেম সেম”

“ঠিক আছে”

“আমাদের বেবী আসলে ওকেও আমাদের মতন সেম সেম কাপড় পড়াবো”

“হুম…কি!”

আদরের মুখে বাচ্চার কথা শুনে মুখভঙ্গী পাল্টালো।ভীষণ দ্রুত গতিতে কথার ধরনও।চোখজোড়া কপালে উঠে যাওয়ার উপক্রম।যা শুনেছে তাই ঠিকতো?বেডের হার্ডবোর্ড থেকে মাথা তুলে সোজা হয়ে বসে মেহতাব।আদরের নুয়ে থাকা মুখশ্রীর দিকে কপাল কুচকে তাকায়।

প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়, “কি বললে?”

আদর চোখ তুলে সঙ্গেসঙ্গে নামিয়ে ফেলে।বলে, “শুনেননি বুঝি?”

“শুনেছি।বুঝিনি”

“আমার মানুষের বাচ্চাকাচ্চা দেখতে আদর করতে অনেক ভালো লাগে”

মেহতাব নড়েচড়ে বসে। কথার স্রোত কোথায় যাচ্ছে সেটা আঁচ করতে চাইছে।বললো,

“সেটাতো ভালো জিনিস”

“নিজের হলে আরো ভালো লাগবে।”

“হঠাৎ?”

“হ্যাঁ হঠাৎ- ই ইচ্ছে জন্মেছে।”

“ইচ্ছে হলেই সেটা সাথেসাথে পূরণ করতে হয় না। কিছু ইচ্ছেকে সময় দিতে হয়।”

“কেনো?আপনার……”

আদরের কথার মাঝেই মেহতাব বললো,”একটা বাচ্চা অনেক বড় দায়িত্ব।আর তুমি সেটা নিতে পারবে না এখন।আমি কোনো রিস্ক নিবো না।”

মেহতাবের কথায় হতাশ হয়ে পড়লো আদর।সারাদিন রুবির কথা ভেবেছে।ভাবনার চিন্তার অবসান ঘটেছে এই সিদ্ধান্তে।তাদের জীবনে তৃতীয়জনের আগমন চায় সে।নিজেকে অনেকটা সামলে মুখ খুলেছে মেহতাবের কাছে। জানতো মেহতাব মানবে না। প্রত্যাখ্যান এর পর যেনো ইচ্ছেরা আরো বেগ পেয়ে গেলো।

জেদ করে বসলো,

“আপনার দেখছি আমার উপর ভরসাই নেই।আমি পারবো সত্যিই”

“এসব মাথা থেকে ঝাড়ো।সামনে অনেক সময় পড়ে আছে”

____

দেখতে দেখতে মিশার বিয়ের দিন চলে এসেছে।লাল বেনারসি শাড়িতে বউ সেজে মন খারাপ করে বসে।ঠিক তার পাশে বসে আছে আদর।তার ইচ্ছে মতোই কালো শাড়ি পরেছে।মেহতাব বাইরের দিকটা দেখছে। ননোদিনীর মন খারাপ দূর করতে কতশত কথা বলে ফেললো।কিছুতেই তাকে মানানো যাচ্ছে না।মায়ের ছবি হাতে নিয়ে চুপচাপ বসে।তার মনের কষ্ট অল্প হলেও উপলদ্ধি করতে পারছে আদর।তার মা বেচেঁ থাকা স্বত্বেও আদর তার থেকে দূরে। হুটহাট দেখা করা যায় না। জড়িয়ে ধরা যায় না।ভালোবাসার পরশ নেওয়া যায় না।তবে আজকের দিনে মিশার মুখে হাসি ফোটানোও একটি কাজ।

“দেখো মিশা মা তোমাকে এভাবে মন খারাপ করে বসে থাকতে দেখলে সত্যি কষ্ট পাবেন।তিনি থাকলে অবশ্যই চাইতেন না আজকের দিনে তুমি এভাবে কারো সাথে কথা না বলে চুপচাপ থাকো।এত স্পেশাল দিনটা খারাপ করবে?”

কাদো কাদো কণ্ঠে মিশা উত্তর দিলো, “আমার মার কথা অনেক মনে পড়ছে ভাবি।দেখো এই ছবিটায়?আমাকে বউ সাজিয়ে কিভাবে কোলে নিয়ে ছবি তুলেছিল?আজ যখন সত্যিই বউ সাজলাম মা নেই।”

“আছে! মা যাওয়ার পর কে তোমাদের দেখে রেখেছে বলোতো?কে যত্ন করেছে?মায়ের অভাব দূর করার চেষ্ঠা কে করেছে?”

“চাচিমা”

“এবার তুমিই নিজেই বিচার করো মা আছে কি নেই?রায়হান ভাইয়া তোমাকে অনেক ভালোবাসে।আর চাচীও।তোমার ভাইয়া,আমি আর বাবাও।আমাদের জন্য হলেও হাসো”

আদরের হাতজোড়া নিজ হাতে নিয়ে মিশা বললো, “আমার ভাইও তোমাকে অনেক ভালোবাসে ভাবি।তুমিও তাকে দেখে রেখো”

আদর দুদিকে মাথা নাড়িয়ে বললো, “তোমার ভাই-ই আমাকে সারাদিন দেখে দেখে দৌড়ের উপর রাখে।”

শুষ্ক মুখখানায় অনেক সময় পর হাসি ফুটেছে।দরজার বাহিরে দাড়িয়ে সব দেখেছে আর শুনেছে মেহতাব।তাদের হাসির পালা শেষ হওয়ার আগেই নিজের উপস্থিতি জানান দিতে গলা পরিষ্কার করলো।পরক্ষনেই ভেতরে চলে আসে।

মিশার মাথায় হাত বুলিয়ে আদরকে বললো,

“আমার বোনের কাছে আমার দুর্নাম করে লাভ নেই।”

“দুর্নাম করছিও না।যা বলেছি একদম সত্যিসত্যি বলেছি!”

মেহতাবের হাত শক্ত করে ধরে আছে আদর।সামনেই বিয়ে পড়ানো হচ্ছে।থমথমে গম্ভীর চেহারা মেহতাবের।মুখ দেখে বোঝার উপায় নেই ভেতরের কি অবস্থা।অথচ আদর আজ সারাদিন তার।চোখে দেখেছে একরাশ বেদনা।সব অনুভুতি লুকিয়ে ছাপিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্ঠা করে সে।সবার কাছে আড়াল করতে পারলেও আড়াল হয়নি আদরের কাছে।সে ঠিকই বুঝেছে।অনেবার শান্তনাও দিয়েছে।কতটুক কাজ হলো কে জানে। বোনকে কতটা ভালোবাসে সেটা প্রকাশ করার প্রয়োজন হয় না।কাটকাট হয়ে দাড়িয়ে আছে।কবুল বলার সাথেসাথে কেঁদে উঠে মিশা।সাথে একফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল নাসির সাহেবের চোখের কোণ বেয়ে।সেখানে শক্ত মেহতাব। মূর্তি যেনো কোনো।সেখানে এক আকাশ পরিমাণ খুশির ঝলক দেখা যাচ্ছে রায়হানের মুখে।অনেকটা সময় অপেক্ষা করেছে।অনেকটা বছর! অবশেষে জয়ী মনে হলো নিজেকে।ভালোবাসার মানুষকে জিতে নিজেকে।মুরব্বিদের সিদ্ধান্তে যে কয়দিন দেশে আছে মিশা তার শ্বশুরবাড়ি থাকবে।

__

মিশা চলে গেছে।আদরের বাবা মাও মাত্র বিদায় নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলেন।ধীরেধীরে সকল মেহমানই চলে গেছে। ঘর সম্পুর্ণ খালি।খাওয়া দাওয়ার পর্ব চুকিয়ে ঘরে আসলো আদর।অন্ধকার ঘর। হাই পাওয়ারে এসি চলছে।সাথে ফ্যানও।আদর এসেই লাইট জ্বালিয়ে দিলো। উপুড় হয়ে শুয়ে আছে মেহতাব।মায়া হলো আদরের।ভীষণ ক্লান্ত বুঝি? নাহয় কিছু না বলে,না ডেকে এভাবেই শুয়ে পড়লো এসে?

পাশে বসে চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে আদর বলে,

“খারাপ লাগছে আপনার?”

“কাছে এসে বসো” অস্ফুট স্বরে বলল মেহতাব।

আদর তার কথামত মেহতাবের মাথার কাছটায় এসে বসে। মেহতাব সামান্য উঠে আদরের কোলে মাথা গুঁজেছে।

“চুলগুলো টেনে দাও”

“আপনার কি মাথা ব্যথা করছে?”

“উহুম”

“তাহলে?”

মেহতাব ঘন নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,

“আমি মিশাকে কখনো একরাতের জন্যও একা ছাড়িনি।সবসময় আমি থেকেছি নয়তো বাবা”

“একা কোথায়?রায়হান ভাইয়া আছে”

“ওই ছেলেকে আমি একবিন্দু বিশ্বাস করিনা।”

নিঃশব্দে হেসে উঠে আদর।তাদের রেষারেষি কোনোদিন শেষ হবে না।বললো,

“এই ডায়লগ আমাকেও দেন।আমাকে একবিন্দু বিশ্বাস করেন না।অথচ আমাকে নিয়েই আছেন।”

পরিস্থিতির বিপরীতে মেহতাব বললো,

“তো তুমি কি চাও অন্য কাউকে তোমার জায়গায় নিয়ে আসি?ঘরে সতীন চাইছো তুমি?”

আদর তৎক্ষনাৎ মেহতাবের হাত শক্ত করে খামচে দিয়ে বললো,

“আমাকে নিয়ে আছেন আমাকে নিয়েই থাকা লাগবে।যদি কেউ আসে তাহলে সেটা হবে আমাদের সন্তান।আর কেউ না!এখন না কোনোদিন না”

“তোমার যে একটা বাচ্চা আছে তার কথা ভুলে গেলে হবে?ম্যাথিও।রায়হান ওকে দিয়ে গেছে দেখনি?”

“কিন্তু ম্যাথিও ওতো একটা বিড়ালছানা।”

“আগে বিড়ালের বাচ্চা পালতে শিখো।তারপর মানুষের বাচ্চা পালবে।”

আদর মেহতাবের কথার কোনো উত্তর দেয়নি।মনেমনে বললো,

“এবার আমি আমার কথা মানিয়ে ছাড়বো।আপনি দেখে নিয়েন।”

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here