#চিত্তসন্ধি
পর্ব ৪৩
লেখা: #Azyah
আদর নেই আজ এগারোদিন।বিশাল অভিমানের পাহাড় নিয়ে হারিয়ে গেছে কোথাও।চেষ্ঠা,অনুরোধ,অনুনয়,বিনয় করে ফেরানো যায়নি তাকে।সেতো শুনতেই পায়নি কোনো আর্জি।যা করেছে মেহতাব নিজের মনে মনে করেছে।বেহাল দশা তার।নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে।হুট করে ফেলে রেখে চলে যাওয়ার সঠিক কারণটা জানতে পায়নি।নিজেকে অপরাধী ভাববে তারও উপায় নেই।তার দোষটা কি?কি অভিনয় করেছে সে?কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে এভাবে চোরাবালিতে ফেলে রেখে গেলো কেনো? এতবড় শাস্তি দিলো?দোষটা ধরিয়ে যেতো।সারাজীবন নাহয় নিজের অপরাধের ভার বহন করে চলে যেত।দোষারোপ করতে করতে শেষ করে দিত নিজেকে।আজ সবকিছুই ধোয়াশা।কি অপরাধে শাস্তি দেওয়া হলো?
একাকি রাস্তায় বসে আছে মেহতাব।নিজেও জানে না কোথায় আছে।ফুটপাতে বসে গাড়ীদের চলতে দেখছে।আজ নিজের স্বভাবের পরিবর্তে কাজ করছে।প্রত্যেকটা মেয়ের চেহারার পানে চেয়ে খুঁজছে।এরমধ্যে যদি কোনো একজন আদর হয়?মোবাইল ফোনটা শব্দ করে বেজে উঠলো।প্রতিবার ফোনের শব্দে মনে একটা আশা জাগে। পরমুহুর্তে ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।আজও হলো। রায়হান কল করেছে।ঘড়িতে একটা বাজে।মিশা আর নাসির সাহেবকে এয়ারপোর্টএ দিয়ে এক অপরিচিত রাস্তায় বসে।কিছুক্ষন চেয়ে ফোন রিসিভ করলো।
রায়হান চিন্তিত ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলো, “কই তুই ভাই?”
“জানি না”
“জানি না মানে পাগল হয়ে গেছিস।”
খুব ঠাণ্ডা কণ্ঠে মেহতাব উত্তর দিলো, “হ্যা পাগল হয়ে গেছি”
“দেখ বসে সমস্যার সমাধান করা যাবে।আমাকে বল কোথায় আছিস আমি আসছি।”
“আমি সত্যিই জানি না আমি কোথায়”
“আমরা আদরকে খুঁজতে যাবো।চল!দরকার পড়লে সারা বাংলাদেশ খুজবো।তুই বল কোথায় আছিস?”
মেহতাব আশপাশ তাকিয়ে দেখলো ভালো করে।দূরে এয়ারপোর্ট দেখা যাচ্ছে।মাথা নামিয়ে বললো,
“এয়ারপোর্টের সামনের রোডে।”
“থাক আসছি”
মিশা আর নাসির সাহেব ফ্লাইটে উঠে যাওয়ার সাথেসাথে মেহতাব গায়েব হয়ে যায়। রায়হান পুরো এয়ারপোর্ট খুঁজে তাকে পায় নি।পাগলের মতন খুঁজেছে চারপাশে।মিনিট দশেক এর মধ্যে এসে হাজির রায়হান। মেহতাবকে টেনে ধরলো।
ঝাঁঝালো স্বরে বলে উঠলো, “বাড়ি চল”
“চল না রায়হান আদরকে খুঁজে আনি।আমি ওকে বলবো আমি ওকে ছাড়া ভালো নেই।”
“হ্যাঁ কালকে যাবো আমরা।আগে আমাদের জানতে হবে আদর কেনো চলে গেলো।তারপর সে কোথায় আছে সেটাও জানতে হবে।এরপর খুঁজতে গেলে আমাদের জন্য ইজি হবে।চল”
“সত্যিই যাবিতো?”
“তোর জন্য সব করবো।সব।এবার আমার কথা শোন আমার সাথে বাড়ি চল।”
___
মাটিতে পা গুটিয়ে আছে মেহতাব।মাথাটা খাটে এলানো। চক্ষুদ্বয় বন্ধ করে আছে।বারবার ভাসছে আদরের মায়া ভরা চেহারা।দমবন্ধ হয়ে যাবে।নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধে হচ্ছে।
“কিছু খুজে পেলি রায়হান?”
“আদরের একটা ফ্রেন্ডকে পেয়েছি।নাম শান্তা। ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়েছি।দেখি কি করে।”
“যা করার দ্রুত কর”
“তুই রিল্যাক্স থাক”
মেহতাবকে মিথ্যে বলে সামলে নিলো।অথচ শান্তার সাথে বিগত আধঘণ্টা যাবৎ কথা হচ্ছে।সে জানিয়েছে আদর বিয়ে করে ফেলেছে।কাকে, কবে কিছুই সে জানে না।কোন গ্রামে আছে সেটাও জানে না।তাদের সাথে সম্পূর্ণ যোগাযোগ বন্ধ আদরের। ফোন,ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ সবকিছু বন্ধ।বাবা মার নাম্বার পর্যন্ত বন্ধ করে রেখেছে।সাহসে কুলাচ্ছে না মেহতাবকে এসব কথা জানানোর।ভেঙে যাবে সে।
রায়হান এর কথার প্রতিক্রিয়া দিলো অনেক সময় পর।লাফ দিয়ে উঠেছে।পাগলের মতন চুল টেনে ধরেছে নিজের।চিৎকার করে বললো,
“আমি থাকতে পারছি না।আমার এখনই চাই আদরকে! এক্ষণ!”
রায়হান ল্যাপটপ বন্ধ করে মেহতাবের সামনে এসে বললো, “পাবি।টেনশন নিস না”
রায়হানের বাহু ঝাঁকিয়ে বললো, “কোথায় পাবো? বল?কই পাবো আদরকে। ওতো নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে। কোনোভাবেইতো পাচ্ছিনা ওকে।কোনো রাস্তা নেই খোঁজার।”
আরো একবার মেহতাবের চোখের পানি দেখতে পেলো রায়হান।অনেকদিন পর।অনেক বছর পর। চোখ জোড়া লাল হয়ে গেছে তার।কতটা দুর্বলতা থাকলে মেহতাব কাদতে পারে সেই ব্যাপারে রায়হান জানে।
“আদরের মা বলেছিলো আমাকে।আমি ওনাকে আশ্বাস দিয়েছিলাম আমি আদরকে বিয়ে করবো।আমার একটু সময় প্রয়োজন।আমি ওকে একটি জ্বালিয়ে,বিরক্ত করে ওকে বিয়ের কথা বলে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম।এরমধ্যে কি হয়ে গেলো?”
“কেনো বলিসনি ওকে?বলে দিতি!আমি বারবার বলেছি মেহতাব বেশি সময় নিস না।”
টেবিলে রাখা ফুলদানি ভেঙে ফেললো চোখের পলকে। বিছানার চাদর টেনে তুলে ফেললো।দেয়ালে ঘুষি দিয়ে রক্তাক্ত করলো নিজের হাত। রায়হান তার পিছু। শক্তির সাথে পেরে উঠছে না।বড্ড ভয়ঙ্কর অশান্ত মেহতাব।তছনছ করে দিচ্ছে সবকিছু।সম্পূর্ণ ঘোর এলোমেলো। তাণ্ডব চালাচ্ছে ঘরের প্রতিটা জিনিসে।পাগলের মতন ড্রেসিং টেবিলের সবকিছু এলোমেলো করে থেমে গেলো।নিজের মায়ের ছবি দেখে আটকে গেছে।
“সব আমার দোষ।আমি খারাপ।আমি অনেক অপেক্ষা করিয়েছি ওকে।বারবার জানতে চেয়েছে আমার মনের কথা।আমি বলিনি।আমার ভয় আমাকে আটকে রেখেছিল।আজ সেই ভয়টা সত্যি হয়ে গেলো।আদর আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।হারিয়ে গেছে আমার জীবন থেকে”
রায়হানের সামনে গিয়ে বলল, “জানিস ও বলেছিলো ও বিয়ে করে ফেলছে। ও যদি সত্যি বিয়ে করে ফেলে?আমি কি করবো?কি করে বাঁচবো?আমি যত শক্ত দেখাই আমি অতটা শক্ত না রায়হান।আদরকে এনে দে।ওকে বল ও যা চায় তাই হবে।আমি একদম জ্বালাবো না ওকে।অনেক সুখে রাখবো।মাথা নত করে রাখবো সবসময় ওর সামনে।প্লিজ রায়হান”
রাত বাড়ছে মেহতাবের পাগলামির মাত্রা বেড়েই চলেছে।বারবার একটা কথা বলে যাচ্ছে আদরকে চাই। রক্তাক্ত হাত ব্যান্ডেজ পর্যন্ত করতে দেয়নি। রায়হানের ভয়ের মাত্রা বাড়লো।নিচে থেকে জয়তুন বেগমের নাতি জহিরকে ডেকে আনলো।দুজন মিলে জোর করে তাকে স্বাভাবিক করার চেষ্টায়।তবে ব্যর্থ।
জহির বললো, “ভাইজান? ওনারে ঘুমের ইনজেকশন দেন। আপনারাতো ডাক্তার।”
জহিরের কথা ভেবে দেখলো রায়হান।ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া ঠিক হবে?এই মুহূর্তে মেহতাবকে শান্ত করা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।নাহয় নিজের অনেক বড় ক্ষতি করে ফেলবে।জহিরকে কোনো মতে রেখে দৌড় লাগালো। প্রেস্কিপশন নেই। ফার্মেসিতে ডক্টর এর প্রেফারেন্স ছাড়া ইনজেকশন দিবে না।জহিরের কাছে না দেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।দ্রুত পায়ে দৌড় লাগলো।যত কম সময়ে পেরেছে ফিরে এসেছে। মেহতাবকে ভুলিয়ে ফুসলিয়ে ইঞ্জেকশন পুশ করে দিল।মিনিট দশেকে নিস্তেজ হয়ে পড়েছে মেহতাব।ঘুমের কোলে ঢলে পড়লো।তারপরও মুখ অনবরত আদরের নাম জপছে।
___
উঠোনে বসে একা চাঁদ দেখছে আদর। আশপাশটা একদম চুপচাপ।আজ বেশ কিছুদিন যাবত এই চাঁদটাইতো সঙ্গী।তার দিকে চেয়ে থাকলে আর কিছু মনে পড়ে না।ভুলে থাকা যায় সবকিছু। যান্ত্রিক দুনিয়া থেকে দূরে এখানেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ছে। কাদে না এখন আর সে।অনেকটা শক্তভাবে তৈরি করছে নিজেকে।সময়ের সাথে নাকি সব ঘা শুকিয়ে যায়।ভুলে যায় সবকিছু।সময় মানুষকে পরিবর্তন করে।আদরও পরিবর্তন হয়ে গেছে।হয়তো?আদর চাঁদের দিকে চেয়ে স্বশব্দ প্রশ্ন করলো,
“আচ্ছা সে কেমন আছে এখন?আমাকে এভাবে ঠকিয়ে নিশ্চয়ই খুব ভালো আছে।ওহ! তারতো আবার বিয়ে।নিজের সদ্য বিবাহিত স্ত্রী নিয়ে অবশ্যই খুব ব্যস্ত।ভীষণ হিংসে হয়েছিলো।যখন ঐ বিয়ের কার্ডে তার নামটা দেখেছিলাম।কি ছিল তার স্ত্রীর নাম?ফাহা?সেখানে আমার নাম থাকতে পারতো না?আমি আসলেই তার যোগ্য না?আমিতো পার্ট টাইম জব করতাম।অবশ্যই পড়ালেখা শেষে ভালো কোনো চাকরিতে জয়েন দিতাম।আমিতো খারাপ ছাত্রী না।একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়ুয়া মেয়ের সাথে ডাক্তারের যায় না?আমার লেভেল এতটা নিচু?”
“কারো লেভেল দেখে ভালোবাসা হয় না।প্রত্যেকটা মানুষ যারযার অবস্থানে নিখুঁত।”
ইদানিং শাহরিয়ার আদরের প্রতিটি ক্ষেত্রে থাকে।সবখানে!অনেক বিরক্ত হয় আদর।কিন্তু মুখ ফুটে বলতে চায় না।অন্য একটা পুরুষ এই কথাটি আত্মা কাপিয়ে তোলে। মেহতাবের নাম রক্ত কণিকার মতন দৌঁড়াতে থাকে সারা দেহে।
“বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত।কিন্তু আপনার বান্ধবি বারবার কল করে যাচ্ছে আপনার নাম্বারে।একবার কথা বলে নেন।হয়তো জানতে চায় সমস্ত ঘটনা।জানিয়ে দিন।তারাও হালকা অনুভব করবে।আপনিও”
একটু আগেই ফোনটা অন করেছে।তাতেই শান্তার কল। বিষাদগ্রস্ত মন নিয়ে ফোন ধরে বললো,
“বল!”
শান্তা যেনো স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ছে আদরকে ফোনে পেয়ে। চট করে বলে উঠলো,
“আদর বিয়েটা কি করে ফেলেছিস?”
“হ্যাঁ”
“মিথ্যে বলছিস তাই না?”
আদর একটু থেমে বলল, “নাহ সত্যি”
“তুই আমাকে বলবি কেনো চলে গেলি এভাবে? ডক্টর মেহতাবের সাথে কিছু হয়েছে।”
“এই নামটা দ্বিতীয়বার যেনো না শুনি।আর দ্বিতীয়বার শুনার সুযোগও নেই।কারণ আমি ফোনটা কেটে এখনই বন্ধ করে দিবো।”
“দোহায় লাগে তোর। বল না কি হয়েছিল?”
আদর চিৎকার করে উঠলো।নিজের মধ্যে চাপাতে পারলো না।বললো,
“ঠকিয়েছে আমাকে।আমাকে ফাঁদে ফেলে অন্য আরেকজনকে বিয়ে করে নিয়েছে।আমি কেনো বসে থাকবো।আমি কি ফেলনা?”
“সবটা খুলে বল।”
নিজের মধ্যে চেপে রাখতে পারেনি আদর।নিজেকে হাল্কা করার সিদ্ধান্ত নিলো।সবটা খুলে বললো শান্তাকে।বলতে গিয়ে অঝোরে অস্রু ঝরিয়েছে। শান্তা সবটা শুনে বললো,
“কিন্তু আমাকে তার ভাই মেসেজ করেছে ফেসবুকে। ডক্টর মেহতাব নাকি তোকে হন্ন হয়ে খুঁজছে।”
“আর তুই বিশ্বাস করে ফেললি?”
“না বিশ্বাস করার মতন কিছু আছে?”
“আমার সাথে এতদিন সাবলীল অভিনয় করে গেছে।আমি ধরতে পারিনি। তোকেতো জাস্ট মেসেজ করেছে।উনি যে বিয়ে করেছেন তার প্রমাণ আমার কাছে আছে।তোকে বিয়ের কার্ডের ছবি দিচ্ছি।দেখে নে।আর আমাকে কল করিস না।আমি একা থাকতে চাই।প্লিজ”
___
“ডক্টর মেহতাব আছেন?”
দেলাওয়ার সাহেবের মন মেজাজ ভালো নেই।কেননা মেহতাব উদ্ভট ব্যবহার করছে।ভীষণ চিন্তিত তাকে নিয়ে। বিগত দিনগুলো মেহতাবকে যেই অবস্থায় দেখেছেন তার চিন্তা করা স্বাভাবিক।সামনে দাড়ানো মেয়েটির দিকে চেয়ে বললেন,
“আছে।সিরিয়াল দিন।পনেরো মিনিট পর পেশেন্ট দেখা শুরু করবেন”
শান্তা বলল, “আমি পেশেন্ট না।আমি ডাক্তারের সাথে দেখা করতে এসেছি।আর্জেন্ট দরকার।”
“এপোয়েনমেন্ট নিয়েছেন?”
“জ্বি না”
“তাহলে দেখা করা সম্ভব না”
“আমার ওনার সাথে দেখা করাটা জরুরি আংকেল। বোঝার চেষ্টা করেন”
দেলাওয়ার সাহেব সোজাসুজি বলে দিলেন, “দুঃখিত”
ঠিক তখনই কেবিন থেকে রায়হান বেরোলো। শান্তাকে দেখার সাথেসাথে চিনে ফেলেছে।আদরের ব্যপারে তার সাথে কথা বলার সুবাদেই তার ছবি দেখা।
“আপনি?”
“জ্বি ডক্টর মেহতাবের সাথে দেখা করতে এসেছি”
“আসুন ভেতরে আসুন।”
তিনজন বসে আছে।রায়হান পাশে বসে আছে।মেহতাব নিঃশব্দে বসে আছে শান্তার সামনে।চোখ নামিয়ে।একজন বিধ্বস্ত পুরুষের সামনে বসে আছে যেনো শান্তা। চেহারা দেখে মনে হচ্ছে সুস্থ নেই।মায়া হলো।তারপরও তার বন্ধুর প্রতি করা অন্যায়ের উত্তর চাইবে।
“কেনো করলেন এমন?আদরের কি দোষ ছিলো?”
রায়হান ভ্রু কুচকে বললো, “কি করেছে?”
“আপনি জানেন না কী করেছে?জেনে শুনে সাধু সাজছেন কেনো?অভিনয় করে,ধোঁকা দিয়ে ভালো সাজা হচ্ছে?”
রায়হান খানিকটা রেগে বললো, “আপনি এভাবে কথা বলতে পারেন না।”
“আর আপনারা যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন? নিজেতো বিয়ে করে নিয়েছেন।এখন আবার পাগল প্রেমিকের ভং ধরেছেন কেনো?”
চোখ তুলে তাকালো মেহতাব।বিস্মিত চোখে চেয়ে আছে। রায়হানকে থামিয়ে মুখ খুললো মেহতাব,
“বিয়ে? কার বিয়ে?”
শান্তা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো, “নিজে বিয়ে করে ফেলেছেন ডাক্তার।আর নিজেই জানেন না? হাস্যকর ব্যাপার!”
শক্ত গলায় বলে উঠে মেহতাব, “মিস!আমি কোনো বিয়ে টিয়ে করিনি।করেছে আপনার বান্ধুবি।আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।কোনো দোষ ছাড়াই আমাকে শাস্তি দিচ্ছে। আমার অবস্থা দেখেছেন?আমি এমন ছিলাম না।আজ একমাত্র আদরের কারণে আমি এমন।”
শান্তা ফোন অন করল।করে সাথেসাথে কার্ডের ছবিটা দেখালো মেহতাবকে।আর প্রশ্নবিদ্ধ করলো,
“এটাও মিথ্যে?এমন কি আপনি আদরকে বলেওছিলেন খুব শীগ্রই বিয়ে করবেন।কাকে করবেন সেটা বলেননি।আদরকে বলেছেন বাবা মার পছন্দে বিয়ে করে নিতে।আপনার কথা আর এই বিয়ের কার্ড মিলে যাচ্ছে না?আর কোনো এক্সকিউজ আছে আপনার কাছে?”
ছো মেরে নিয়ে নিলো মোবাইলটা।চোখ গেরে দেখছে নিজের কার্ডটা।এরমধ্যে শান্তা আবার বললো,
“শুধু কি তাই?আপনার হবু বউ আদরকে ফোন করে যাচ্ছেতাই বলে অপমান করেছে।বলেছে আপনি নাকি ওকে ইউজ করেছেন!কোনো ভালো টালো বাসেন না।আদরের কি দোষ ছিল বলেনতো?সেতো আপনার কাজটাই করতে চায়নি।না আপনার কাছে আসার চেষ্ঠা করেছে।আপনি ওকে অনুভব না করালে হয়তো আপনাকে ভালোও বাসতো না।তাহলে?কেনো অপমান করল আপনার ওয়াইফ আদরকে?কেনো আপনি ওকে ধোঁকা দিলেন?আদর কি খেলনা পুতুল?”
সবটা শুনে মেহতাব আর রায়হান থ মেরে আছে। শান্তা যা বলছে সবটাই তাদের বোধগম্যতার বাহিরে।কে অপমান করেছে আদরকে?আর এই কার্ড?এটা হতেই পারে না। সবটা শুনে কি প্রতিক্রিয়া দিবে সেটা ভাবছে দুজনই। পুরোটাই একটা সাজানো গোছানো প্ল্যান।কেউ তাদের মধ্যে সমস্যা সৃষ্টি করার জন্য এই কাজটি করেছে।কিন্তু কে?কেই বা জানে আদর আর মেহতাবের কথা।শুধু রায়হান।রায়হান প্রথমেই ভাবলো অন্তত শান্তার কাছে সবটা ক্লিয়ার করতে হবে।তাহলেই আদর পর্যন্ত পৌঁছানো সম্ভব।
চলবে..