চিত্তসন্ধি পর্ব ৪৮ লেখা: #Azyah

0
182

#চিত্তসন্ধি
পর্ব ৪৮
লেখা: #Azyah

বিয়ের ডেট পড়েছে। মেহতাব তার বাবাকে আগেই শিখিয়ে পরিয়ে এনেছে শুক্রবারেই যেনো বিয়েটা হয়। হলোও তাই।রুবি আর শান্তা এসে মাত্রই খবরটা দিয়ে গেলো আদরকে।সাথেসাথে কলিজাটা ছ্যাত করে উঠলো।সময় এত দ্রুত যাচ্ছে কেনো?বিয়ের আর মাত্র পাঁচদিন বাকি?কিভাবে কি করবে? ঘামতে শুরু করেছে আদর।রুবি আর শান্তার সাথে রোহিত যোগ দিলো।

বললো, “তুই ঠিকই বলেছিলি আদর রানী।তুই এমন একজনকে বিয়ে করবি যেকিনা তোকে পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে থাকবে”

আদরের সেদিন বলা কথাটি মনে পড়ে গেলো। আলগোছে বলে ফেলেছিলো কথাটি।সত্যি হয়ে যাবে ভাবতেও পারেনি।সবইতো মিলে গেলো।আদর দূরত্ব দেওয়ার পর মেহতাব প্রায় মরিয়া হয়ে উঠেছিল তার জন্য।তাকে পাওয়ার জন্য!

প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে আদর প্রশ্ন করলো, “কি কথা হচ্ছে বসার ঘরে?তুই এখানে এসেছিস কেনো? গিয়ে সব শুনে আয়”

রুবি বলল, “মোবাইলে রেকর্ড করে নিয়ে আয়”

“আরেহ ওই একই কথা।বিয়ের ডেট নেক্সট ফ্রাইডে এটা হচ্ছে মেইন কথা”

শান্তা খুন উত্তেজনা নিয়ে বলে উঠে, “আমি খুব এক্সাইটেড রে তোর বিয়ে নিয়ে।কত কি করবো ভেবে রেখেছি!”

রোহিত শান্তাকে ব্যঙ্গ করে বললো, “জ্বি না চশমিশ আপা।সেই দ্যা গ্রেট ডক্টর মেহতাব জানিয়েছেন বিয়েতে কোনো প্রকার আয়োজন হবে না।আদরের বাবা যেনো একটা টাকাও এই বিয়েতে খরচ না করে!”

আদর মুখ বেকিয়ে বললো, “ঢং!বিয়ে করতে এসে খাবে কি?বাতাস?আর আমার মা ঘরে মানুষ আসলে পারে না পুরো বাজার তুলে আনে।সেখানে একমাত্র মেয়ের বিয়েতে জামাইকে আর জামাই বাড়ির মানুষকে হাওয়া খাওয়াবে!”

রায়হান আর মিশা আদরের কথা শুনতে পেয়েছে। দরজায় দাড়িয়ে ছিলো তারা।তার কথায় না হেসে পারলো না।

ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে রায়হানকে বললো, “মেহতাব বাতাস খাওয়ারই যোগ্য। আমরাতো পেট পুড়ে লেগ পিস খাবো। আন্টির হাতের খাবার যা মজা।সেদিন খেয়ে আমি পুরাই ফিদা!”

মিশা বলে উঠে, “দেখেছো ভাবি কত বড় রাক্ষস?”

“ম্যাডাম এই রাক্ষস লোকটা আপনার হবু স্বামী।আমাকে খাবার না দিলে আপনার মাথা খাবো”

___

“ভাই আমাদের তেমন কেউ নেই।যারা আছে তারা হয়তো দূরে থাকে নয়তো যোগাযোগ নেই তেমন।আপন বলতে আমার ছোট ভাইয়ের পরিবার।এইযে রায়হান আর ফরিদা।রায়হান কিন্তু আমার মেয়ের হবু বর”

নাসির উদ্দিনের কথায় আশরাফ মাহমুদও বলে উঠে,

“আমাদেরও তেমন কেউ নেই।আদরের খালা আছে একজন আর আমার এক চাচাতো ভাই।আর আদরের তিনজন বন্ধু।আমরা অনেকটা একই নৌকায় অবস্থানরত”

নাসির সাহেব উঠে দাড়ালেন। আশরাফ মাহমুদের সাথে কোলাকোলি করে বললেন,

“আগামী শুক্রবার আমার আরেক মেয়ে নিয়ে যাচ্ছি তাহলে?”

“জ্বি ভাইজান”

সবাই মিষ্টিমুখ করলো।ফরিদা বেগম আর জোহরা খাতুন বসে কথাবার্তা বলছেন।সাথে আশরাফ মাহমুদ আর নাসির সাহেবও।তাদের মধ্যে জড়োসড়ো হয়ে বসে মেহতাব।বোন আর রায়হান আগেই তাকে ফেলে রেখে চলে গেছে আদরের সাথে দেখা করতে। ভদ্রতার খাতিরে উঠে যাওয়া যাচ্ছে না।কেউ যেতেও বলছে না।দাতে দাত চেপে এদিক ওদিক চেয়ে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

__

আগামীকাল বিয়ে।এটার নাম দিয়েছে মেহতাব অফিসিয়াল বিয়ে।আহামরি কোনো আয়োজন না হলেও আদরের খালা আর মা ভীষণ রকমের ব্যস্ত।একটু পরই রুবি, রোহিত আর শান্তা চলে আসবে।আজ রাতে ঘাটি জমাবে এখানেই।তার মধ্যেই মেহতাব এর কল।দ্রুত ধরলো।

ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে মেহতাব বলে উঠে,

“নিচে এসো”

“এই সময়?”

“এই সময় মানে?মাত্র সন্ধ্যা এখন!”

“আপনি আসেন বাসায়?”

“নাহ।দ্রুত এসো সময় নেই”

গায়ে ওড়না পেঁচিয়ে নিলো আদর।চুল বেঁধে খোঁপা করেছে।মায়ের চোখের আড়াল করে দৌড়ে বেরিয়ে গেলো দরজার বাইরে।মেহতাব দাড়িয়ে আছে।গাড়ীর উপর হেলান দিয়ে মোবাইলে মনোনিবেশ করে।আদরকে আসতে দেখে ফোন পকেটে রাখলো।

স্বাভাবিক ভঙ্গিতে প্রশ্ন করলো, “প্যাকিং করেছো?”

“এটা জানার জন্যে ডেকেছেন?”

“এটা একটা ইম্পর্ট্যান্ট টপিক বলে তোমার মনে হয়না?”

“হয় না!”

“তো এখন কি করা দরকার আমার?রাস্তার মাঝখানে দাড়িয়ে প্রেম করি তোমার সাথে?”

ইশ! ভাষার কি শ্রী!আদরের মাথায় খেলে না এই লোকটা কেমন?আগামীকাল তাদের বিয়ে। সেকিনা আগেরদিন সন্ধ্যায় দাড় করিয়ে ঝাঝালো গলায় কথা বলছে? মুখে কি রসকষ নেই?নাকি জন্মের সময় মধু দেওয়া হয়নি?হতেও পারে মেজাজ ভালো নেই।সেটা এখানে ঝাড়া লাগবে কেন?ভাবনা চিন্তা মুখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে ভেঙে দিল।গাড়ীর পিছনের সিট থেকে শপিং ব্যাগ বের করে আদরের হাতে এগিয়ে দিয়েছে।

এক একটা ব্যাগ দেখিয়ে বললো,

“এটা তোমার বাবার,এটা মার,এরা তোমার খালার।রুবি, শান্তা, রোহিতদের জন্যেও আছে।”

আদর সবার ব্যাগ দেখে নিলো। উত্তেজনাসহিত মুখ ফসকে বলে ফেললো,

“আমারটা?”

“তোমারটা আবার কি? তুমি ঘরের কাপড়ে যাবে আমার সাথে”

রাগ দেখিয়ে আদর বললো, “আপনি কোনোদিন ভালো হবেন নাহ!”

চলে যেতে চাইলে মেহতাব ওড়না টেনে ধরে।আদর ভরকে উঠলো।আশপাশ তাকিয়ে দেখছে কেউ আছে কিনা। এ কেমন অসভ্যতা?রাগী দৃষ্টি ছুঁড়ে দিলো মেহতাবের দিকে। মেহতাব কিছুটা বল প্রয়োগ করে আদরকে তার আগের জায়গায় এনে দাড় করিয়েছে।ওড়না ছেড়ে একটি শাড়ির প্যাকেট এগিয়ে দিল।তারপর আরো একটি ব্যাগ।
আর বললো,

“বিয়ের শাড়ি আর গয়না। কাল এগুলো পড়ে রেডি থাকবে।”

“পড়বো না।আপনি মানুষটা অনেক বাজে”

“বাধ্য তুমি পড়তে।ভুলে যেয়ো না তিন না ছয় কবুল বলে নিয়ে যাবো।রাগ,অভিমান,শাস্তি সব ছয়গুণ হবে কথা না শুনলে।”

আদর চলে গেলো।পেছনে রয়ে গেলো মেহতাব এর গভীর চোখ।ঠোঁটে এক চিলতে হাসি।সে কি ভেবেছে তাকে বিরক্ত করে পাড় পেয়ে যাবে?মোটেও না।শাস্তির নাম করে তাকে আরো জ্বালানো হবে।এতটা দুর্বল করে দিবে তার কাছে যেনো মেহতাব ব্যতীত অন্ধকার দেখে চারিপাশে।

__

গাঢ় মেহেদী রাঙা হাত নিয়ে বসে আছে আদর। হাতের ঠিক মধ্যিখানে জ্বলজ্বল করছে মেহতাব এর নাম।পরনে গাঢ় সবুজ রঙের শাড়ি।মাথায় দোপাট্টা।হালকা সাজে অমায়িক দেখাচ্ছে।একটু আগেই বাবা মাকে ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছে নিজের নতুন ঠিকানায়।তাদের কথা ভাবতেই বুক কেপে উঠে।কিভাবে থাকবে একা? রোহিত, শান্তা,রুবি আছে।কিন্তু কতদিন।চোখের কোণ বেয়ে সরু অশ্রুরেখা বয়ে গেলো। তৎখনাৎ ঘাবড়ে উঠেছে “মেও” শব্দে।আদরের পাশে বসে খুব মনোযোগ সহকারে দেখছে আদরকে ম্যাথিও।ওর কথাতো ভুলেই গিয়েছিল।আজ সাহস করে কোলে তুলে নিলো তাকে।ধীরেধীরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। চারপাশ মো মো করছে ফুলের সুবাসে।বেশ সজ্জিত ঘরটি।এটা মেহতাবের ঘর।খোলামেলা ঘর তার। আসবাবপত্র যতটুক প্রয়োজন ঠিক ততটুকু আছে।আদরের চোখ গিয়ে ঠেকেছে বড় বুক শেলফটার দিকে।এত মোটামোটা বই দেখে নাক কুচকে নিলো আদর।

ম্যাথিওকে বললো, “এই বইগুলো কি ডাক্তার সাহেবের?”

ম্যাথিও বলে উঠে, “ম্যেও”

আদর তার মেওকেই হ্যা বোধক উত্তর ভেবে নিলো। ম্যাথিওকে নিয়ে উঠে দাড়ালো।এতখন বসে থেকে পা ঝিম ধরে গেছে। মেহতাবের অপেক্ষা করতে করতে পা দুটো আর আস্ত নেই।তাকে কোলে নিয়ে দরজার কাছে যেতেই শাড়িতে হোচট খেয়েছে।পড়ে যেতে নিলে এক শক্তপোক্ত হাত তাকে আটকে ফেলে।

“শান্তি নেই তোমার?এখনই পড়ে যেতে”

মেহতাবের বাহুডোরে থমকে গেছে আদর।তার বাড়িতে তাকে নিতে আসার পর থেকেই মুগ্ধ সে।সাদা পাঞ্জাবিতে কোনো পুরুষকে এতটা সুন্দর কিভাবে লাগতে পারে?তার দিকে তাকালেই কেনো হুশ জ্ঞান হারিয়ে বসবে। একটাবারের জন্য চোখ তুলে তাকানোর সাহস হয়নি।অন্যদিকে মেহতাব একজোড়া নেশাতুর লোভী চোখে আদরের দিকে চেয়ে আছে।বিয়ের ঝামেলায় ভালোমতন দেখাই হয়নি তাকে। হৃদয়ের স্পন্দন অল্প অল্প করতে বাড়তে শুরু করলো।বারবার ঢোক গিলছে।অস্থির চিত্ত।এমনেতেই কম পাগল করেনি এই মেয়ে।আজ বউ সাজে বেসামাল করে ফেলছে এই অল্পসময়ে।মন ইশারা দিচ্ছে নিয়ন্ত্রণ হারাতে। ম্যাথিও দ্রুত পায়ের উপর দিয়ে লাফিয়ে দরজার বাহিরে চলে গেলো।ঘোর কাটলো মেহতাবের।এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে সরে গেলো সামনে থেকে।

কোনো কথা খুঁজে না পেয়ে বললো,

“কি অবস্থা করেছে ফুল দিয়ে!তুমি যাও চেঞ্জ করে এসো।”

“আচ্ছা।”

আদর কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়েছে।দরজা বন্ধ করার শব্দে মেহতাব জোরে জোরে নিঃশ্বাস ছাড়লো।নিজের মনকে শান্ত করলো।বিছানায় ছড়িয়ে থাকা ফুলগুলো সরিয়ে নিয়েছে। ঘরেই কাপড় বদলে নিয়েছে সে।বাহিরে মোটামুটি শীত।আদরকে গোসল করে বের হতে দেখে মেহরাবের কপালে ভাঁজ পরেছে।

চট জলদি বসা থেকে দাড়িয়ে বললো, “এত রাতে শাওয়ার নিয়েছো কেনো?বাহিরে ঠান্ডা পড়েছে খেয়াল আছে?”

ঠান্ডায় থরথর কেপে আদর বললো, “কই ঠান্ডা?”

“ঠান্ডায় কাপছো আবার বলো কই ঠান্ডা।এদিকে আসো।চুল মুছো ভালো মতন।”

আদরকে বসিয়ে নিজ হাতে চুল মুছে দিচ্ছে।ভীষণ রাগ হচ্ছে তার উপর।তারমধ্যে তার কাপনি এখনও কমেনি।দাতে দাত চেপে বললো,
“কি দরকার ছিল এই সময় গোসলটা করার?”

“টায়ার্ড লাগছিলো।আর মুখে মেকআপ ছিলো। একটু রিল্যাক্স হলাম গোসল সেরে”

“ঠান্ডা লাগলে আরো রিল্যাক্স লাগবে।”

আদরের চোখে মুখে অন্ধকার নেমে আসলো।আজকেও ধমকানো হচ্ছে?আসলেই অনেক নির্দয় এই লোক।নতুন বউ তার আদর।মাত্রই নিয়ে এলো তার বাড়িতে।একটু সুন্দর করে কথা বলবে কি? নাহ সে বকে দিচ্ছে এই গোসল করার মতন সামান্য একটা বিষয় নিয়ে।বাংলার পাঁচ মুখ বানিয়ে বসে আছে।মেহতাব যত্ন করে চুল মুছে দিলো আদরের।

প্রশ্ন করলো, “ঐযে কি যেনো নাম এগুলোর?চুল শুকায় যে?”

“হেয়ার ড্রায়ার”

“আছে তোমার?”

“নাহ”

“কিনে দিবো।আর ওয়াশরুমে গিজার আছে।এই ঠান্ডায় যেনো ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল না করা হয়।”

“আচ্ছা”

“কিছু খাবে?”

বিয়ের টেনশনে একটা ফোঁটা খাবার গলা দিয়ে নামেনি আদরের।তাদের বাড়িতে খাবার টেবিলে বসে অল্প একটু খাবার মুখে দিয়ে বসে ছিলো।অনেকটা নার্ভাসনেস কাজ করছিলো।মেহতাব সবটা লক্ষ্য করেই খাবারের জন্য বলেছে আদরকে।

তবে আদর উত্তর দিলো উল্টো,

“নাহ!”

“আমি খাবার নিয়ে আসছি”

মেহতাব প্রথমে আদরের অনুমতি নিবে।তারপর সেটাই করবে যেটা তার নিজের ইচ্ছে।তাহলে জিজ্ঞেস করার মানে কি?কয়েক মিনিট পর গরম গরম ধোঁয়া ওঠা বিরিয়ানি নিয়ে হাজির। বেডে এক পা গুটিয়ে বসে আদরের মুখে তুলে দিলো।

“খাও”

একবার খাবারের দিকে আরেকবার মেহতাবের দিকে তাকাচ্ছে আদর।হসপিটালে স্যুপ খাইয়ে দিয়েছিল। বাসর ঘরে বসে বিরিয়ানী খাওয়াচ্ছে।আদর জানে সে খেতে বাধ্য।মেহতাব তাকে না খাইয়ে ছাড়বে না।কোনো প্রকার দেরি না করে খেয়ে নিল মেহতাবের হাতে।

মেহতাব প্রশ্ন করলো, “কেমন?”

“ভালো”

“শুধু ভালো?”

“কে রান্না করেছে?”

“আমি”

“আপনি রান্না জানেন?”

“এই বাড়িতে বিরিয়ানি রান্না করা আমার কাজ!”

আদর বিস্ময় চোখে তাকিয়ে রইলো মেহতাবের দিকে। তার এই গুনও আছে? রান্নাও জানে?তাও আবার বেশ মজার রান্না। বাহ!

মেহতাব আদরের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে, “এভাবে অবাক হচ্ছ কেনো?এক সময় ব্যচলোর ছিলাম। পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে সব শিখতে হয়েছে।”

“এজন্যই বলি এত তেতো কেনো টেস্ট?তেতো মানুষের হাতে তৈরি যে”

মেহতাব আরো এক লোকমা বিরিয়ানি মুখে পুরে দিয়ে বললো,

“থ্যাংকস!”

নিঃশব্দে পুরো বিরিয়ানী খাইয়েছে আদরকে।আদরও বাধ্য মেয়ের মতন পুরোটা খেয়ে নেয়।কিছু বললেই ডাক্তার সাহেব আবার জোয়ালামুখী হয়ে উঠবেন।মেহতাব উঠে গেছে কিচেনে।খাবারের প্লেট রেখে হাত ধুয়ে ফিরে এলে দেখে আদর কোমরে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে বিছানার দিকে চেয়ে।দরজা লাগিয়ে দিলো মেহতাব শব্দ করে।দরজা লাগানোর শব্দে মৃদু লাফিয়ে উঠেছে।হটাৎ এমন আওয়াজে কে না ভয় পায়।

“কি ভাবছো?”

আদর মিয়ে কণ্ঠে বলে, “ঘুমাবো কোথায়?”

তেতে উঠলো মেহতাব।আদরকে খোচা মেরে বললো, “আমার মাথায় ঘুমাও। এমনিতেও তুমি ছোট মানুষ।আরামে জায়গা হয়ে যাবে আমার মাথায় তোমার।”

আদর মেহতাব এর সামনে তেরে গেলো।হাত দিয়ে হাইট মেপে দেখিয়ে বললো,

“আমি আপনার কাধ বরাবর পরি।আপনি আমাকে ছোট বলতে পারেন না!”

মেহতাবের দৃষ্টি শীতল হলো। গভির ছোটছোট পিটপিট করা দুটো চোখ।দৃষ্টি সরিয়ে নিলো আদর।ঘুরে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়েছে।বেশ আয়েশ করে কম্বল মোড়া দিয়ে।যেনো এটা তারই ঘর,তারই বেড।অবশ্য এখন তারও অধিকার আছে এখানে। লাইট নিভিয়ে মেহতাব পাশে এসে শুয়ে পড়েছে। ড্রিম লাইটের আলোয় উল্টো ঘুরে থাকা আদরের উন্মুক্ত ঘাড়ের কিছু অংশ দৃশ্যমান।চুলগুলো সরে আছে। মেহতাব চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে বারেবারে।শ্বাস টেনে নিজের লাগাম টেনে দিলো।একটাই কম্বল।আদরের কাছ থেকে একটানে কম্বল নিয়ে নিজে অন্যদিকে ফিরে শুয়ে পড়লো। হন্তদন্ত হয়ে উঠেছে আদর।

“আপনি কম্বল টানলেন কেনো?”

“ঠান্ডা কি তোমার একার লাগে?”

“আপনার কম্প্রোমাইজ করা উচিত!”

মেহতাব মাথা ঘুরিয়ে বললো, “কেনো? কোথায় লেখা আছে এটা?”

আদর মুখ ফুলিয়ে শুয়ে পড়লো।নিজেকে পরাজিত মনে হচ্ছে। কাদো কাদো কণ্ঠে বলল,

“আজকেও ঝগড়া করছেন আমার সাথে?”

মেহতাব হাসলো।এই হাসিটা আদরের চোখে পড়েনি।আদরের দিকে ফিরে বললো, “তো কি করা উচিৎ আমার আজকে?”

এমন কথায় লজ্জা পেয়ে বসেছে।নাক ফুলিয়ে ঘুরে গেলো উল্টপাশে।ঠান্ডায় কুকড়ে বিড়বিড় করে বলতে থাকে,

“কিছুই না।একটু ঘুমোতেও দিবে না শান্তিমত।নিজের বাড়ি বলে যা ইচ্ছা তাই করবে? পাষাণ! নির্দয়!নতুন বউয়ের সাথে এমন আচরণ করার ফল পাবেন একদিন!”

একটু বিরক্ত করেই মায়া হতে শুরু করেছে।মেয়েটার সাথে একদম পারা যায় না। কঠোর হওয়া যায় না।কম্বল নিয়ে গায়ে উড়িয়ে দিলো।অন্যপাশে ঘুরে থাকা আদরের মুখে বিজয়ের হাসি।খুব শান্তিতে চোখ বুজে নিয়েছে।

_

গভীর রাত।হাত পা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে আদর। গভীর ঘুমটা হুট করে ভেঙে গেলো।চোখ খুলে নতুন ঘর,নতুন জায়গা দেখে কপাল কুঁচকে নিলো।বামপাশে ঘুরতেই আত্মার পানি শুকিয়ে গেছে! মেহতাবকে দেখে ভয়ে হৃদপিণ্ড ওঠানামার গতি বাড়িয়ে দিয়েছে।ঘুমের মধ্যেও বুকে হাত গুজে শুয়ে আছে।উজ্জ্বল শ্যামলা রং! হাফ হাতার কালো টিশার্টে ফুলে থাকা হাতগুলো বেশ আকর্ষণীয়। জাগ্রত অবস্থায় যেমন গুছানো ঠিক ঘুমন্ত অবস্থায়ও তেমনি। শীতে একটু পরপর কেপে উঠছে।কপাল কুঁচকে উঠছে ঘুমের মধ্যে। মাথায় খেলে গেলো সেতো এখন বিবাহিত।স্বামীর ঘরে আছে।সামনে শুয়ে থাকা মানুষটি তার অসভ্য, বদমেজাজি বর।আদরের মনে ইচ্ছে জাগলো।ভয়ংকর ইচ্ছে।এই ইচ্ছের পরিমাণ কি হবে সে আপাদত ভাবতে চাইছে না।

মেহতাবকে ডাকলো, “ঘুমিয়ে গেছেন?”

কোনো সাড়াশব্দ নেই। নিঃশ্বাসের গতি বুঝিয়ে দিচ্ছে সে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।আদর তার গায়ে কম্বল উড়িয়ে দিলো।ধীরেধীরে হাত এগিয়ে নিয়ে গেলো তার চুলে।এই চুলের প্রতি আদরের অনেক লোভ।আলতো করে হাত বুলিয়ে হাত সরিয়ে ফেললো। মেহতাবের হাতের বাধন খুলছে খুব সাবধানতার সঙ্গে।জেগে গেলে একটা বড় কান্ড হয়ে যাবে।চুরি করছে বারবার খেয়ালও রাখছে।অবশেষে হাত সরিয়ে নিজের অবস্থান করে নিলো মেহতাবের বুকে। বিড়ালছানার মত হাত পা গুটিয়ে মিশে আছে তার সাথে।মুখ লুকিয়ে।একটু পরপর সামান্য মাথা তুলে দেখছে মেহতাবকে।নাহ!সে ঘুমিয়ে। নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়েছে।অন্ধকারে আদরের আড়াল হয়ে গেলো ঘুমের ভান করে থাকা মেহতাবের ঠোঁটে ফুটে থাকা হাসি।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here