চিত্তসন্ধি পর্ব ৫৫ লেখা: #Azyah

0
161

#চিত্তসন্ধি
পর্ব ৫৫
লেখা: #Azyah

নতুন পড়ার টেবিলে বইপত্র ছিটিয়ে বসে আছে আদর। আগামীমাসে ফাইনাল এক্সামের ডেট।পরীক্ষার এক সপ্তাহ আগে পুরো সিলেবাস কমপ্লিট করা আদরকে একমাস আগে পড়তে বসতে হয়েছে।তাও তার অনিচ্ছায়।কলম চিবুচ্ছে বসেবসে।পেছনে একপা ঝুলিয়ে বিছানায় অর্ধ শোয়া মেহতাব।আপন মনে কাজ করে যাচ্ছে।তার দিকে বারবার করুন মুখে তাকিয়েও তেমন একটা লাভ হয়নি আদরের।আদরের কোনরকম কথা বার্তা শুনতে নারাজ সে।তার করুন চেহারাকে ইতিমধ্যে শতাধিকবার অগ্রাহ্য করেছে।তার কথা মতে দুইঘন্টার আগে পড়ার টেবিল ত্যাগ করা যাবে না।

পঁয়তাল্লিশ মিনিটে আর ধৈর্য্য ধরতে না পেরে আদর পেছন ফিরে বলে,

“শুনছেন?”

“নাহ”

“শুনেন আমার একটু রেস্ট দরকার।”

“কোনো রেস্ট টেস্ট দরকার নেই”

চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালো।এক দুই পায়ে মেহতাবের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।নাদান মুখে বলে উঠে,

“সত্যিই আমার একটু একটু একটুখানি রেস্ট দরকার।”

“যাও পাঁচ মিনিট দিলাম”

অতীব খুশিতে আটখানা।পাঁচ মিনিট যেনো নয় পাঁচ ঘণ্টা।আদরের মতলব ভালো না।পাঁচ মিনিট শেষ হলে আবারও করুন মুখ বানিয়ে দশ মিনিট চেয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা।শুয়ে পড়লো।মোবাইল হাতে নিয়ে ফেসবুক স্ক্রোল করতে শুরু করেছে। মিটিমিটি হাসছে বন্ধুদের গ্রুপের সামান্য সময়ের আড্ডায়।কাটায় কাটায় পাঁচ মিনিট পর ফোনটা কেড়ে নিলো মেহতাব। চটজলদি উঠে বসেছে।

মেহতাবের সামান্য কাছে এসে বসে বললো,

“আর পাঁচ মিনিট?”

“একদম না!”

“প্লিজ”

“নো মোর এক্সকিউজ আদর।”

“আপনি এত নিষ্ঠুর কেনো?মায়া হয় না আমার জন্য?”

“কোনো কথায় কাজ হবে না।পড়তে বসো।ভালোর জন্য বলি।”

রেগে গিয়ে আদর বললো,

“এত প্যারা দেন কেনো আপনি?আপনার সব কথা শুনি তারপরও আপনি আমাকে ছাড় দেন না।আমি থাকবো না আপনার সাথে।বাড়ি চলে যাবো।”

“আদর!”

ধমক দিয়ে উঠে মেহতাব। এতোটা জোরেই ধমকেছে আদরের চোখে পানি আসতে সময় নিলো না। চক্ষুদ্বয় ছলছল করতে শুরু করেছে অস্রুতে।

নাক ফুঁসে বললো,

“আমি এখনই চলে যাবো আর আসবো না।থাকেন আপনি একা।শুধু আমার উপর বারবার জোর খাটান।”

রাগী চোখ শীতল হয়ে গেলো। ভয়াবহ শীতলতা। আদরের কাছ থেকে নজর সরিয়ে ফেলেছে। ল্যাপটপ বন্ধ করে উঠে দাড়ালো। অত্যন্ত শান্ত কণ্ঠে বলল,

“যতক্ষন ইচ্ছে রেস্ট নাও।আমি ছাদে যাচ্ছি হাঁটতে”

হুট করে বদলে যাওয়া আচরণ ভাবাচ্ছে আদরকে। মেহতাব ছাদে যাওয়ার পরপর সেও দৌড়ে গেলো তার পিছনে।সিড়ি বেয়ে উঠে হাপিয়ে গেছে।দরজা খোলা। অন্ধকারে আবৃত রাত।ছাদে হলদে বাতি খুলে আলোকিত করার চেষ্টায়। রেলিংয়ে হাত ঠেকিয়ে দাড়িয়ে আছে মেহতাব।এগিয়ে গিয়ে পাশে দাড়ালো তার।আদরকে অনুভব করছে তবে কোনো প্রতিক্রিয়া দিলো না।কথাও বললো না।মুখ শক্ত করে অন্যদিকে ঘুরে আছে।

“রেগে?”

“নাহ”

“কথা বলেন তাহলে আমার সাথে”

“মুড নেই”

“আরেহ!”

“আদর নিচে যাও।”

একটু একটু করে এগিয়ে মেহতাবের বাহু ঘেঁষে দাড়ালো।মাথা উচু করে মুখপানে চেয়ে।বোঝার চেষ্টায় আছে আদর।অল্পসময়ের বিরতি নিয়ে কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই মুখ খুললো মেহতাব।বলে উঠে,

“আমি সম্পর্কটাকে গোছাতে পারছি না।অনেক চেষ্ঠা করছি যত্নে রাখার।হচ্ছে না।আমি ঝামেলাবিহীন একটা সম্পর্ক চাই তোমার সাথে।কিন্তু ঘুরেফিরে প্যাচ লেগেই যায়।আমি বেশি ম্যাচুরিটি দেখিয়ে ফেলছি নাকি তুমি অত্যন্ত বাচ্চা মানসিকতার?কিছু বুঝতে পারছি না আমি।অনেক জুলুম করে ফেলছি না তোমার সাথে?এজন্যই বারবার ছেড়ে চলে যাও!”

মেহতাবের হাতে হাত রেখে আদর বলে উঠে,

“আমি কি সত্যি সত্যি ছেড়ে যাবো বলেছি নাকি?একটু ভয় দেখিয়েছি যেনো আমাকে একটু ছাড় দেন”

তুচ্ছ হাসি হেসে মেহতাব হাত ছাড়িয়ে নিলো।আকাশপানে চেয়ে বললো,

“ভয়?ভয়ে ভয়ে জীবন পাড় করেছি।এটা একটা ফোবিয়া।মাকে হারানোর পর থেকে যে কয়জন মানুষ আমার জীবনে ছিলো,আছে!সবাইকে নিয়ে আমার ভয়।তাদের চেহারার দিকে চেয়ে আতঙ্কে থাকি কখনও যদি এরা আমাকে ছেড়ে চলে যায়?”

“আমি কক্ষনো যাবো না”

“দুই দুইবার ছেড়ে চলে গেছো।তুমি জানো আমি তোমাকে ছাড়া অসহায়। ভীষন বাজেভাবে আটকে গেছি তোমার মধ্যে।দূরে যাওয়ার কথা মাথায় আসতেই ভেতরে দুমড়ে মুচড়ে উঠে সবকিছু।তোমাকে নিয়ে আমার আরো বেশি ভয়।মানুষের মনে যা থাকে সেটাই মুখে আসে।অবশ্যই ছেড়ে যাওয়ার সাহসটা আছে বলেই মুখ ফুটে বলতে পেরেছো নির্বিঘ্নে।”

কাতর কণ্ঠে আদর বলে উঠে, “ভুল বুঝছেন”

“যা ইচ্ছা করো আদর।আমি তোমাকে কোনকিছুতে জোর করবো না।তোমার একটা লাইফ আছে।আমি জব্দ করে রেখেছিলাম তোমাকে। আই অ্যাম রিয়েলি সরি!”

সামান্য একটা কথা অনেকটা আঘাত করে ফেলতে পারে।যেমনটা এই মুর্হুতে মেহতাবকে করেছে।হরেহারে টের পাচ্ছে আদর। মায়াও হচ্ছে তার চেহারার দিকে চেয়ে। অসহায় তার মুখখানা।নেই কোনো কঠোরতা।একদম মলিন!এতটা হারানোর ভয় বুঝি?

“আপনি….”

আপনার সম্পুর্ণ কথা শেষ হওয়ার আগেই থামিয়ে দিলো তাকে।যাওয়ার জন্য উদ্যত হয়ে বলে,

“নিজের একান্ত ব্যক্তিগত মানুষ ভেবে কাছে টানা যায়।সেটা হয় ভালোবাসা?আর সেই মানুষের ভালোর জন্য তার উপর জোর চালালে,অধিকার খাটালে সেটা হয়ে যায় প্যারা।মানুষ শুধু নিজস্ব লাভটাই খুঁজে বেড়ায়।”

___

সকাল সকাল না জানিয়ে বেরিয়ে পড়েছে ক্লিনিকের উদ্দেশ্যে।আদর ঘুম থেকে উঠে তাকে পায়নি।আশপাশ কোথাও খুঁজে পায়নি।গতকালের পরিহিত কাপড়গুলো বিন ব্যাগে রাখা। বাহিরেই থালা বাসনের ঝঙ্কার বেজে উঠছে। কিচেনের দিকে এগিয়ে গেলে জয়তুন বেগমকে দেখতে পায়।

আদর প্রশ্ন করে বসে,

“খালা?”

“জ্বি আম্মা কন?”

“উনি কই?”

“আপনার উনিতো কামে গেছে।আজকে নাকি মেলা কাজ।আপনারে ডাকে নাই ইচ্ছা কইরা।নাস্তা দিমু?”

ইচ্ছে করে ডাকা হয়নি।বেশ ভালই বুঝেছে আদর।রেগে চলে গেছে দ্রুত।তাকে নেয়নি আজ সাথে। মন ঘুরে গেলো জয়তুন বেগমের দিকে। বয়সের তাড়নায় শরীরে শক্তি কম।তারপরও এটা ঐটা কাজ করতেই থাকবে।কারো কথা গ্রাহ্য করে না কাজের ক্ষেত্রে।

হাত থেকে বড় থালা বাসন কেড়ে নিয়ে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে উঠলো,

“খালা না করেছি না এসব কাজ করতে?কথা শুনেন না কেনো?আমি কি এগুলো পরিষ্কার করতে পারি না?এতদিন ভালোভাবে বলেছি শুনেননি।এবার দেখছি আপনার সাথে কঠিন না হলে চলবে না”

জয়তুন বেগম আঁচলে হাত মুছে বললেন, “কি করমু?কামের অভ্যাস হইয়া গেছে।”

“অভ্যাস ছাড়তে হবে।শরীর স্বাস্থ্য সবার আগে।রান্না করে দেন অতটুকুই যথেষ্ট।একদম আলাদা কোনো কাজে হাত দিবেন না”

“আচ্ছা আচ্ছা বুইচ্ছি।এবার আহেন নাস্তা খাইবেন।”

সকাল গড়িয়ে দুপুর। মেহতাবকে গুনে গুনে পাঁচটা মেসেজ দেওয়া হয়েছে।অন্যপাশ থেকে কোনো ফিরতি উত্তর আসেনি।এখন লাঞ্চ টাইম।হাসফাস করতে থাকা আদর সুযোগ বুঝে কল করে বসলো।

“আমাকে না নিয়েই চলে গেলেন কেনো?”

সময় নিয়ে মেহতাব উত্তর দিলো, “ঘুমিয়ে ছিলে তাই”

“ডাকতে পারতেন না?”

“পারতাম”

“তাহলে ডাকলেন না যে?”

“তোমার যাওয়ার ইচ্ছে থাকলে নিজে থেকে উঠতে।আমি ডেকে নিয়ে গেলে আবার জোর করা হয়ে যেত”

বুঝতে বাকি নেই রাগের রেশ এখনও আছে। কাটেনি বিন্দু পরিমাণ।ধমকে রাগ ঝেড়ে ফেলে যে মানুষ সে আজ নিস্তব্ধ।ঠান্ডা মাথায় রাগ দেখাচ্ছে।নাকি অভিমান?

“আপনার রাগ কমবে কি করলে?”

“আমি রাগ করিনি।”

“অভিমান করেছেন?”

“সেটা করা তোমার কাজ!”

“আচ্ছা আপনার জন্য আপনার পছন্দের খাবার রান্না করি?”

“প্রয়োজন নেই।”

ফোন কেটে দিলো মেহতাব।আদরও আর ফোন দিয়ে বিরক্ত করেনি। মস্তিষ্ক হীন হতে থাকলে ফোনে মেসেজ আসে,

“আজ নাইট ডিউটি। আর্জেন্ট কিছু পেশেন্টের কেস আছে।আগামী কাল রাতে ফিরবো।”

___

ছোট্ট মস্তিষ্কে অত্যন্ত চাপ প্রয়োগ করছে।কোনকিছুতেই মস্তিষ্ক তার বুদ্ধির দরজা খুলছে না।জং লেগে গেছে হয়তো তালায়।অনেকদিন বুদ্ধির ব্যবহার হচ্ছে না যে।পাশে জয়তুন খালা নাক ডাকছেন।রাত গভীর।ঘুম নেই চোখে।বারবার মনে পড়ছে মেহতাবের কথা।রাগ হোক আর স্বাভাবিক।পাশে থেকে,কাছে থেকে ভীষণ সস্তি দেয়।আজ সেটাও নেই। হারেহারে টের পাচ্ছে কারো সাথে রেগে থাকলে কেমন অনুভব হয়।কতবার মেহতাবের সাথে নীরবে রাগ দেখিয়েছে। তিক্ত সত্যি দূরেও চলে গিয়েছিল।আজ নিজেও ভুক্তভুগী।তার বোকামির কারণেই এই হাল।

ভোরের আলো ফোটার আগেই মুঠোফোন হাতে নিলো।কল করে বসলো চিরচেনা নাম্বারে।ফোন রিসিভ হতেই অপরপ্রান্ত থেকে ভেসে এলো ঘুমুঘুমু কন্ঠস্বর।আদর আওয়াজ টেনে বললো,

“দোওওওস্ত”

“হু?”

“ইমারজেন্সি তোর হেল্প লাগবে।”

চোখ কচলিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলো রুবি।প্রেম,ভালোবাসা সম্পর্কিত জ্ঞান তার প্রচুর।নিজের পূর্ব এবং বর্তমান অভিজ্ঞতা মিলিয়ে এখন বেশ বহুদর্শি রমণী সে।

অলস নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে উঠে,

“কি হেল্প লাগবে বইন তাও এই অর্ধ রাতে?”

“ব্যাপারটা সিরিয়াস তাই এই সময় কল করেছি।”

“বলে ফেল” হাই তুলে বললো রুবি।

“ডাক্টার সাহেবতো সেই ক্ষেপা আমার উপর।”

“ওনাকে দেখেই রাগী রাগী মনে হয়।”

“সেটাতো বটে।কিন্তু আমার উপর সেইরকম রাগ করেছে।আগে রাগ করলে ধমকে ডিসমিস করে ফেলবো। এখনতো কথাই বলছে না। বললেও ভার ভার গলায় কথা বলে।এখন আইডিয়া দে রাগটা কিভাবে ভাঙ্গাই?”

রুবি গভীর চিন্তায় পড়ে যাওয়ার ভান করছে।আদর বারবার ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে দ্রুত সমাধান দেওয়ার জন্য তাগাদা দিলেও সে চুপ।অনেকক্ষন বিজ্ঞ জ্ঞানীর বেস ছেড়ে বলে উঠে,

“একটা আছে মিডিয়াম লেভেলের রাগ ভাঙ্গানোর টোটকা আরেকটা হাই লেভেলের।তুই কোনটা এপ্লাই করতে চাস?”

আদর ভেবে চিন্তে উত্তর দিলো, “দুটোই বল।যেটা বেশি ইফেক্টিভ মনে হয় সেটাই করবো।”

___

ভীষণ রকমের মন খারাপ নিয়ে ক্লিনিকের ছাদে একা বসে।পা দুটো সবসময়ের মতন ঝুলছে। বিশ্রী স্বাধের চা-টা আজ আরো বিদঘুটে লাগছে।মনের এক কোণে প্রিয় রমণীর আভাস।উকিঝুকি দিয়ে যাচ্ছে বারেবারে।একটুখানি ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।চোখে ধারণ করতে ইচ্ছে হচ্ছে। মধুমিসৃত কন্ঠস্বর শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে।আরেক মন তাকে প্রশ্ন করে যাচ্ছে কেনো বোঝে না আদর তাকে?শুধু পাগলামো করে,জেদ করে।

“ভাবি মেরেছে?”

পরিচিত কণ্ঠে বিরক্তিরা বেড়ে গেলো।এমনেতেই মনের অবস্থা ভালো নেই।তার মধ্যে আবোলতাবোল কথা।প্রতিবার মেহতাবের সাথে নাইট ডিউটিতে রয়ে যায় তাকে জ্বালাতন করার জন্য।

পাশে এসে পা ঝুলিয়ে বসে পড়লো রায়হান।উত্তর না পেয়ে আবার বললো,

“বিয়ে হওয়ার পরও বিরহে বসে আছিস। নট ফেয়ার”

“বিরহে না। ভাবছি ”

“কি ভাবছিস?”

“আদরকে নিয়ে।”

“সেটাতো জানি।কিন্তু ভাবছিসটা কি?”

“আমি আদরকে পেয়ে গেছি ঠিকই।কিন্তু ওর সাথে একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং গ্যাপ আছে আমার।”

মেহতাবের কাধে হাত রেখে রায়হান বললো, “টাইম কিউরস এভরিথিং।সময় দে। মাত্রতো শুরু।এত জলদি কিছু আশা করাও ঠিক না আশা হারানোও ঠিক না।”

“আমি আদরকে আর হারাতে চাই না রায়হান”

“প্রথম কথা আদর কোনোদিন তোকে ছেড়ে যাবে না।এটার গ্যারান্টি আমি দিচ্ছি।দ্বিতীয় কথা গতবারের মতন ভুল ভুলেও করিস না।আগলে রাখ ওকে। মেয়েদের অনেক যত্নে রাখা লাগে।সামান্য অনীহা তাদের ভীষণ রকমের আঘাত দিতে পারে।ভুল করলে শুধরে নিস।ভুল বুঝলে ঠিক করে বুঝিয়ে দিস।পাগলামো করলে মাথা পেতে নিস।”

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here