সুদর্শন শঙ্খচিল’ [৩৫] লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

0
48

‘সুদর্শন শঙ্খচিল’
[৩৫]
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

পরেরদিন অফিসে যাওয়ার পথে তুরাগের সঙ্গে ইলার দেখা হয়ে গেল। তুরাগ না দেখার ভাণ করে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিল। ইলা তুরাগের পথ আঁটকে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,”শুনলাম গ্রামের গেঁয়ো একটা মেয়েকে বিয়ে করেছ?অবশেষে গেঁয়ো মেয়ে জুটল তোমার ভাগ্যে, আহারে!” তুরাগ নিরুত্তর হয়ে ইলার মুখের দিকে তাকাল। ইলার কথাবার্তা চাল চলনে অহংকার ঝরে পড়ছে। তুরাগকে চুপ দেখে ইলা পুনরায় হেসে বলল,”বামুন হয়ে চাঁদ হাত বাড়ালে এমনই হয়। থাক কষ্ট পেও না! একদিন বউকে নিয়ে চেম্বারে এসো দান হিসেবে নাহয় ফ্রিতে চিকিৎসা দিব।”

কথাটা শুনে তুরাগ ওর ঘাড়টাকে ডানে বামে ঘাড় ঘুরিয়ে বলল,” ফকিন্নির দান আমার প্রয়োজন নেই।” তুরাগের কথায় ইলা রেগে আঙ্গুল তুলে বলল,”হাও ডেয়ার ইউ তুরাগ? মাইন্ড ইওর ল্যাঙ্গুয়েজ।” তুরাগ হেসে ইলার আঙ্গুল নামিয়ে বাঁকা হেসে বলল,”সম্পর্ক চলাকালীন আমার থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে এখন এসেছিস ভাষণ শুনাতে?বাহ রে! বাহ! এই না হল শিক্ষিত বুদ্ধিমতী ফকিন্নি। যার কাছে সম্পর্কের চেয়ে টাকার মূল্য সবচেয়ে বেশি। সে নাকি আমাকে দান করবে, হাস্যকর তো।” ইলা চুপ হয়ে আড়চোখে তুরাগের দিকে তাকাল। তুরাগ দাঁতে দাঁত চেপে বলল,”হুম আমি তোর মতো শিক্ষিত, সুন্দরী, ম্মার্ট বউ পায়নি। কিন্তু একটা মানুষকে বিয়ে করেছি, অমানুষকে নয়। পথ ছাড়! তোর মতো মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে রুচি বাঁধছে, ইয়াক থু!”

কথাটা বলে তুরাগ গাড়িতে বসে দ্রুত স্থান ত্যাগ করল। ইলা রেগে তুরাগের গুষ্ঠি উদ্ধার করতে লাগল। ওদের সুন্দর সম্পর্কটা নষ্ট হয়েছে ইলার লোভের জন্য। ওদের সম্পর্ক চলাকালীন ইলা অযুহাত দিয়ে তুরাগের থেকে লাখ লাখ টাকা নিত। ওর এটা ওটা আবদার প্রায় লেগেই থাকত। তুরাগও সরল মনে ইলার সব আবদার পূরণ করত। প্রিয় মানুষটার আবদার তুরাগ কখনও অপূর্ণ রাখত না। এখন সেই ইলা ডক্টর হওয়ার পর তুরাগকে এড়িয়ে চলে। কথায় কথায় অপমান করে ছোট করে। তুরাগ ওর ব্যবহারে কষ্ট পেলেও হেসে উড়িয়ে দিত। কিছুদিন পর তুরাগ জানতে পারে, ইলা একজন ডক্টরের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছে। তখন ইলা একথাটা অকপটে অস্বীকার করে। ওদের এনগেজমেন্ট ঠিক পর ইলা সেই ডক্টরের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়। একথা ইলার বান্ধবী তুরাগকে প্রমানসহ দেখায়। তুরাগ ইলাকে জিজ্ঞাসা করায় তখন ইলা এবার স্বীকার করে নেয়। এবং অহংকারী গলায় বলে,”আমার সঙ্গে তোমাকে মানায় না তুরাগ। আর সমানে সমানে নাহলে আমি সোসাইটিতে মুখ দেখাতে পারব না।” ইলার কথা শুনে তুরাগ ভেজা কন্ঠে বলেছিল,”অহংকার পতনের মূল। তোরও খুব শীঘ্রই পতন ঘটবে। তোর নোংরা শরীর বেঁচে তুই আরো বড়লোক হ, ব্লাডি বিচ।”

একথা বলে তুরাগ ইলার সঙ্গে সম্পর্কের ইতি ঘটিয়েছিল। এবং মূলত এজন্যই তুরাগ তিন্নিকে বিয়ে করে। যাতে ইলার নামটা ওর জীবন থেকে মুছে ফেলতে পারে। তুরাগ ইলাকে সত্যিই খুব ভালবাসত। কিন্তু ইলার তো ভালবাসা নয়! বেশি বেশি টাকা আর হাই সোসাইটি প্রয়োজন ছিল। এজন্য সে তুরাগকে ফেলে এক ডক্টরকে বেঁছে নিয়েছে। কারন নিঃসন্দেহে ডক্টরদের অনেক টাকা।

রনিতের আম্মু লাল শাকের বেঁছে সেগুলো কাটছেন। আর
দিশা কাঁচা মরিচের বোঁটা ছাড়াচ্ছে। সে এখন সংসারে টুকটাক কাজ করে। স্বামীর মার খেয়ে শাশুড়ির সঙ্গে আর খারাপ ব্যবহার করেনা। একটুদূরে রনিতের দাদী বসে পান সাজাচ্ছেন। দিশা ওর শাশুড়ি আর দাদী শাশুড়ির দিকে একবার আড়চোখে তাকিয়ে বলল, “মা একটা ব্যাপার খেয়াল করেছেন? ওই ডাক্তার ইচ্ছেকে উনার কাছে রেখে দিল। কিন্তু উনি স্বার্থ ছাড়া ইচ্ছেকে রেখেছে বলে মনে হচ্ছে না ?” রনিতের দাদী পানে চুন লাগাতে লাগাতে বললেন,”হ্যাঁ লো নাতবউ কথাখান তো ভাবিনি লো। কি স্বার্থে ডাক্তার ছেড়িডারে রাখল ক দেহি?”

দিশা আলু টুকরো করে কেটে রেখে বলল,”ক্যান দাদী ইচ্ছের বাপ মায়ের মেলা টাকা পয়সা আছে তো। আবার ইচ্ছেদের ঘরভর্তি জিনিসপত্রও তো কম না। ওই ডাক্তার বুদ্ধি করে সবটাই গুপ্তাই নিল। বিনামূল্যে অন্যের বাচ্চাকে পালার যুগ আর নাই দাদী।” রনিতের আম্মু কথাটা শুনে ভ্রু কুঁচকে বললেন,”পলক মরার দিন ডাক্তারের স্ব-পরিবারকে দেখালাম। দেখে তো উনাদের এমন মনে হল না। পোশাক- আশাক আর দামী গাড়ি দেখে মনে হল টাকা পয়সা ওয়ালা। ওরা এসব নিবে কেন?” শাশুড়িকে অন্য সুরে কথা বলতে দেখে দিশা মুখ বাঁকিয়ে বলল,”যার যত বেশি থাকে সেই তত লোভী হয় আম্মা। তাছাড়া ইচ্ছে কি ডাক্তারের রক্তের কেউ যে সারাজীবন বিনাস্বার্থে পালবে?”

দাদী পুরো পান মুখে পুরে সুর টেনে বললেন,” হ লো বইন ঠিকই কইছোস। এই যুগে মা মরলে বাপ তালোই হয়। আর ডাক্তার তো ছেড়িডার বংশের আনাকোণারও কেউ না।”

প্রত্যয় আজকে সকাল থেকে ইচ্ছেকে সময় দিয়েছে। চাঁদ তুয়া দু’জনেরই পরীক্ষা। তাই ওরা মনোযোগ দিয়ে পড়ছে। ইচ্ছে ঘুম থেকে উঠে ওর আব্বু আম্মুর জন্য কাঁদছিল। প্রত্যয় প্রিয়ম আর ওদের আম্মু মিলে অনেক কষ্ট থামিয়েছে।
প্রত্যয়ের আব্বু ইচ্ছেকে নতুন পোশাক এবং খেলনা এনে দিয়েছে। ওগুলো পেয়ে ইচ্ছে খুব খুশি।

দুপুরে প্রত্যয়রা সবাই একসঙ্গে খেতে বসেছে। ইচ্ছে চেয়ারে বসে টেবিলে হাত পাচ্ছে না। তাই ওকে টেবিলের উপর বসানো হয়েছে। সেও বাবু হয়ে চুপটি করে টেবিলের উপর বসে আছে। প্রত্যয়ের আব্বু ইচ্ছের প্লেটে ঝোল ছাড়া মুরগির রান তুলে দিলেন। ইচ্ছে তখন ওর দুই পাটি দাঁত এক করে শরীর ঝাঁকিয়ে হাসল। ওর হাসি দেখে সবাই হেসে উঠল। কেউ তখনও খাওয়া শুরু করেনি। প্রত্যয়ের আব্বু তখন ‘বিসমিল্লাহ্’ শব্দ করে উচ্চারণ করে মুখে ভাত পুরে প্রত্যয়ের আম্মুর দিকে তাকালেন। প্রত্যয়ের আম্মুও একই কাজ করে প্রত্যয়ের দিকে তাকালেন। প্রত্যয় করে তুয়ার দিকে তাকাল। তুয়া প্রিয়মের দিকে আর প্রিয়ম চাঁদের দিকে। আর চাঁদ ইচ্ছের দিকে। ইচ্ছের আগে কোনোদিন এমন কিছু বলেনি। তাই সে ততক্ষণে রানে এক কামড় বসিয়ে দিয়েছে। সবার বিসমিল্লাহ বলা দেখে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে রানটা রেখে দিল। তারপর সবার মতো সেও বলল,”মিছমিন্না।” প্রত্যয়ের আব্বু মৃদু হেসে বললেন,
-” আমার সাথে সাথে বলো তো ইচ্ছেমণি, বিসমিল্লাহ্।”
-“বিছনিন্নাহ্।”
-বিসমিল্লাহ্।”
-“বিছমিন্নাহ্।”
-“বাহ! অনেক সুন্দর হয়েছে এবার খাও।”

তারপর সবার দেখে ইচ্ছে খাওয়া শুরু করল। বাচ্চারা আগে পরিবারের থেকে শিক্ষা রপ্ত করে। তারপর বাইরে থেকে। পরিবার যদি ভাল অভ্যাসে অভ্যাস্ত হয়। তাহলে ছোট্ট শিশুটাও সহজেই ভাল অভ্যাসগুলো নিজের মধ্যে ধাতস্থ করতে পারে। কেউ যদি বাচ্চার সামনে খাবার খেয়ে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে আল্লাহর শুকরিয়া না জানায়। বার বার আল্লাহ শব্দটা উচ্চারণ না করে। তাহলে সে বাচ্চাটাও শুকরিয়া করতে শিখবেনা, সাথে আল্লাহ শব্দটার সাথেও পরিচিত হবেনা।

ইচ্ছে খুশি মনে ভাত বাদে মুরগির রানে কামড় দিচ্ছে। আর প্রত্যয়ের পাবদা মাছ খুব পছন্দ। সে একমণে মাছ দিয়ে ভাত খাচ্ছে। ইচ্ছে তখন ওর আধ খাওয়া এঁটো মুরগির রান প্রত্যয়ের দিকে বাড়িয়ে বলল,”প্রত্তুয় মুগলিল লান কাও।” প্রত্যয় হেসে এক কামড় নিল। ইচ্ছে ভুবন ভুলানো হাসি দিয়ে প্রিয়মের দিকে রানটা এগিয়ে দিল। প্রিয়ম এমনভাবে কামড় দিল, হাঁড় ছাড়া রাণে মাংস অবশিষ্ট থাকল না। ইচ্ছে হাঁড়টার দিকে করুণ চোখে তাকিয়ে প্রত্যয়ের আব্বু দিকে তাকালেন।
যার অর্থ প্রিয়মকে কিছু বলা হোক। প্রত্যয়ের আব্বু গলা পরিষ্কার করে বললেন, “প্রিয়ম এটা তো ঠিক নয়। ইচ্ছেকে সরি বলে ইচ্ছের প্লেটের ভাতটুকুও খেয়ে নাও।” ইচ্ছে ওর প্লেট কোলের উপর তুলে প্রত্যয়ের দিকে তাকাল। কারন প্রত্যয়ই ওর শেষ ভরসা। প্রত্যয় হেসে আরেক পিস রান ইচ্ছের প্লেটে দিয়ে বলল, “এটা তাড়াতারি খাও! নাহলে প্রিয়ম আবার খেয়ে নিবে।” ইচ্ছে আদুরে সুরে বলল,”তুমি তালাতালি থাওয়ায় দাও প্রত্তুয়।”

প্রত্যয় হাত ধুয়ে ইচ্ছেকে যত্ন করে খাওয়াতে লাগাল। প্রত্যয়ের আম্মু হেসে দুই ছেলের দিকে তাকালেন। প্রিয়ম অনায়াসে ওর ভাগের মুরগির রান দু’টো ছেড়ে দিল। অথচ অন্য কাউকে দিলে এতোক্ষণে তুলকালাম বাঁধিয়ে দিত। আর প্রত্যয় ওর কথা নাই বা বললেন। এমন সোনার টুকরো ছেলেদের মা হয়ে উনি খুব গর্ববোধ করেন।

আজকে রনিতকে খুব হেনোস্তা হতে হয়েছে। এই অফিসের এমডি অজানা কারণে বাঙালীদের পছন্দ করেন না। বাঙালীদের হেনোস্তা করা উনার নিত্য দিনের কাজ। আর
উনারা ব্যবহারে বোঝা যায়, বাঙালীরা তার চোখের বিষ।
আজকে সামান্য একটা ভুলের জন্য উনি রনিতকে জনসম্মুক্ষে অপমান করেছেন। রনিত সরি বলাতে উনি রেগে ইংলিশেতে বললেন, “গেঁয়ো অশিক্ষিত! এখানে রং তামাশা করতে আসেন? কাজে মন না বসলে বেরিয়ে যান, স্টুপিড!”

কথাটা বলে এমডি ফাইলটা ছুঁড়ে মারলেন। রনিত মাথা নিচু করে ফাইলের কাগজ গুলো তুলে বেরিয়ে গেল। তারপর ওর ডেস্কে গিয়ে ঠোঁট কামড়ে নিজেকে কনট্রোল করল। রনিত খুব কষ্ট পেয়েছে। কারন এর আগে সে এমন ব্যবহার কোথাও পায়নি। আর পরের অধিনে চাকরি করলে কথা হজম করতে হবে। স্যালারি টাকাটা নিতে খুব মিষ্টি লাগে। কিন্তু পুরোটা মাস যে কষ্ট করে সে বুঝে। চাকরি মানে সুখকর কাজ নয়। কারো কারো কাছে হাসির আড়ালে অপমান লুকানোর গল্পও থাকে।

দুপুরে খাওয়ার পর্ব চুকিয়ে ইচ্ছে প্রিয়মের সঙ্গে খেলছে। আর তুয়া প্রত্যয়ের কাছে পড়তে বসেছে। কঠিন পড়া গুলো বুঝে নিচ্ছিল। পড়ার সঙ্গে দু’জনের খুনশুটিও চলছে। তুয়া মনোযোগ দিয়ে একমনে পড়ছে। প্রত্যয় আচানক তুয়ার গাল চেপে ধরে পরপর দু’টো আদর দিয়ে বলল,” উহুম একটা কথাও না। পড়ার সময় কথা বললে মনোযোগ নষ্ট হয়।” তুয়া হেসে প্রত্যয়ের বুকে হেলান দিয়ে পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে গেল। প্রত্যয় বইটা রেখে তুয়াকে সুন্দর করে শুইয়ে দিল। নিজেও এক ঘন্টা ঘুমিয়ে ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িংরুমে গেল।

ইচ্ছে তখন প্রিয়মের ফোনে কার্টুন দেখছিল। প্রত্যয় গিয়ে সোফাতে বসল। চাঁদ আমতা আমতা করে প্রত্যয়ের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,”ভ ভাই ভাইয়া ছাদে যাবেন?” প্রিয়ম কথাটা শুনেও না শোনার ভাণ করল। প্রত্যয় কিছু ভেবে হেসে বলল, “হুম চলো।” চাঁদ জোরপূর্বক হেসে আড়চোখে প্রিয়মের দিকে তাকাল। প্রিয়ম উঠে বাইরের চাবি এনে ইচ্ছেকে নিয়ে বেরিয়ে গেল। ওরা এখন অনেকটা সময় বাইকে করে ঘুরবে। প্রত্যয় চাঁদকে নিয়ে ছাদে গেল। ছাদে বসার জন্য দোলনা ছাড়াও চেয়ার পাতা আছে। প্রত্যয় চাঁদের মুখোমুখি বসে বলল,”যা বলার র্নিভয়ে বলতে পারো। আগেও বলেছি আমাকে ভাসুর নয় ভাইয়া ভাববে।” চাঁদ ঢোক গিলে মুচকি হাসল। প্রত্যয় স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে চাঁদের চোখে পানি ছলছল করছে। প্রত্যয় চাঁদকে সময় দিল। একটুপরে, চাঁদ মাথা নিচু করে বলতে লাগল,

” আমার আর প্রিয়মের বিয়েটা জোর করে দেওয়া হয়েছে। আমরা আগে কেউ কাউকে চিনতাম না। ভাইয়া, আমি খালার কাছে বড় হয়েছি। একদিন খালা হঠাৎ করে মারা যায়। খালাদের ইতালিতে নিজস্ব ব্যবসা ছিল। আমার খালাতো ভাই সেখানে স্ব-পরিবারে চলে যাওয়া সিধান্ত নেয়। কিন্তু আমি তাদের গলার কাঁটা হয়ে গিয়েছিলাম। তার কিছুদিন পর, ইতালি যাওয়ার আগে ভাবি দেশেই ঘুরতে যেতে চাচ্ছিল।

ভাইয়া আমাদের সবাইকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিল। এবং সেখানেই প্রিয়মের সযত্নে আমাদের দেখা হয়। ভাবির পূর্ব পরিচিত ছিল প্রিয়ম। কিন্তু প্রিয়ম ভাবিকে চিনত না। ভাইয়া ভাবির থেকে প্রিয়মের খবর নিয়ে ওকে কিডন্যাপ করায়। তারপর ভ ভা ভাবির ছবির সঙ্গে প্রিয়মের ছবি ইডিট করে জোড়া লাগিয়ে প্রিয়মের নুড পিক বানায়। ভাইয়া প্রিয়মকে নুড পিক গুলো দেখায়। আর প্রিয়মকে বলে আমাকে বিয়ে করতে। প্রিয়ম কিছুতেই রাজি হচ্ছিল না। ওর কথা ছিল পিক ভাইরাল করুক! তাও বিয়ে করবেনা। ভাইয়া রেগে ওকে মেরেছিলও। তাতেও প্রিয়ম রাজি হচ্ছিল না।

ভাইয়া কিছু একটা ভেবে প্রিয়মের ফোন কেড়ে নিয়ে গ্যালারি থেকে ঢুকে। সেখানে ‘আমার ভাইয়া’ নামে ফাইলে আপনার অনেক গুলো ছবি ছিল। সেখান থেকে আপনার ছবি নিয়ে ভাইয়া নুড করতে চাচ্ছিল। প্রিয়মের কথা ছিল সে মরে গেলেও বিয়ে করবেনা। কিন্তু আপনার কথা বলাতে সে থম মেরে গেল। বার বার নিষেধ করতে লাগাল। তখন ভাইয়া বুঝে গেল, আপনি প্রিয়মের দূর্বল পয়েন্ট। বিয়েতে একটা মেয়ে কাঁদতে কাঁদতে কবুল বলে জানতাম। কিন্তু সেদিন দেখেছিলাম, প্রিয়মকে কাঁদতে কাঁদতে কবুল বলতে। আর আমার হাতেও কিছু করার ছিল না। তাই মনের অমিলে দু’জন বিয়ের বন্ধণে আবদ্ধ হয়েছিলাম। সেই সাথে প্রিয়ম ওর ইচ্ছে, আকাঙ্খা, ভালবাসা, শখ আহ্লাদ সব বিসর্জন দিয়েছিল।”

প্রত্যয় শেষ কাহিনীটুকু জানত না। কারন প্রিয়ম সেদিন এতটুকু ঘটনা আড়াল করেছিল। প্রত্যয় সবটা শুনে কষ্ট পেলেও কিছু বলল না। তবে আবার প্রমাণ হল প্রিয়মই প্রত্যয়ের প্রাণ নয়! প্রত্যয়ও প্রিয়মের প্রাণ। আর চাঁদ প্রিয়ম দু’জনেই পরিস্থিতির স্বীকার। এজন্য প্রত্যয় এতদিন জেনেও কিছু বলতে পারেনি। একদিকে ভাই! অন্য দিকে অসহায় মেয়েটা। প্রত্যয়ের বিবেক চাঁদকে বাসা থেকে বের করতে পারেনি। সে বলতেও পারেনি সব দোষ চাঁদের। জীবনের অদ্ভুত গোলক ধাঁধায় এসে পড়েছে সে। না পারছে ভাইটার জীবন গুছিয়ে দিতে। আর না পারছে মেয়েটার আশ্রয়টুকু কেড়ে নিতে।

চাঁদ কথাগুলো বলে হেঁচকি তুলে কাঁদছে। ওর ও সব ধৈর্য্য শেষ। প্রিয়মের সামনে দাঁড়লে ওর দোষী মনে হয়। সে তো চাইলেও প্রিয়মের ভালবাসা পাচ্ছে না। বরং প্রিয়মের কাছে আরো খারাপ হয়ে হচ্ছে। চাঁদ এটাও বুঝে, প্রিয়ম আঘাত পেয়ে ওর হৃদয়ের দ্বার বন্ধ করে ফেলেছে। সে দ্বারে আর কাউকে প্রবেশ করানো সম্ভব নয়। চাঁদকে এভাবে কাঁদতে দেখে প্রত্যয় চাঁদের মাথায় হাত রেখে নরম সুরে বলল,”এখন তুমি কি চাচ্ছো?”

চাঁদ নিষ্প্রাণ কন্ঠে বলল, “পাপীর শাস্তি! আর প্রিয়মের মুক্তি।”

To be continue…!!

গল্প নিয়ে আলোচনা করতে জয়েন করুন।
📚 Nurzahan’s Family 📚 (আড্ডাঘর)
(আজকে অন্তত গল্প নিয়ে কেউ কিছু বলুন! আজকে আপনাদের রেসপন্সের উপর পরবর্তী পার্ট নির্ভর করছে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here