#নীলচে_তারার_আলো
#নবনী_নীলা
#পর্ব_২৭
হিয়া কুকুর ছানার নাম দিয়েছে ইউভি। ম্যারির জন্যে এখনো খারাপ লাগছে তার। ম্যারিকে চাইলেও ভুলতে পারবে না সে। ইউভি এতটাই ছোটো তাকে একটা পকেটে ভরে রাখা যাবে। এই পামেরিয়ান কুকুরগুলো এমন হয়। হিয়ার ভাবতেই অবাক লাগছে এইটা শুভ্র তার জন্যে এনেছে। তারমানে রাতে শুভ্র তার রুমে এসেছে আর পায়ে নূপুরটাও পরিয়ে দিয়েছে। ভাবতেই এক রাশ ভালোলাগা তাকে ঘিরে ধরেছে। এই গোমড়ামুখো ডাক্তারটা মাঝে মাঝে এমন সব কাজ করে যে হিয়া পারে না প্রেমেই পরে যায়। হিয়া এইবার বুঝতে পেরেছে শুভ্র তার জন্যে কতটা ভাবে।
শুভ্রের তার প্রতি ছোটো ছোট এই খেয়াল গুলো বড্ড ভালোবাসে হিয়া। লোকটা সবসময় এমন থাকতে পারে না। খালি সবসময় প্রিন্সিপাল সেজে বসে থাকা। শুভ্রকে খুব জ্বালাতে ইচ্ছে করছে। হিয়া ইউভিকে কোলে তুলে নিলো। তারপর শুভ্রের ঘরের সামনে এলো। দরজাটা হাল্কা ঠেলে দিতেই দেখলো শুভ্র তোয়ালে দিয়ে মাথার পানি নিচ্ছে। গায়ে শুধু একটা ট্রাউজার। হিয়া সঙ্গে সঙ্গে চোখ বন্ধ করে দেওয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দাড়ালো। উফ লোকটা এমন অর্ধনগ্ন হয়ে ঘুরে বেড়ায় কেনো? তাও ভালো প্রথমবারের মতন তোয়ালে পড়ে নেই। এমনেই এমন সুন্দর তার উপর বডি দেখিয়ে বেড়ায়। দরজাটা ঠেলে ভিতরে ঢুকে গেলো ভালো হয়।
কি হবে? বলেছে না হাসব্যান্ড মনে রাখতে। হাসব্যান্ড এর ঘরে তো আর নক করে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
হিয়া বেশ সাহস দেখিয়ে শুভ্রের ঘরে ঢুকলো। শুভ্র সবে সাদা একটা শার্ট গায়ে পড়েছে, বোতাম সব খোলা। হটাৎ সকাল সকাল হিয়ার এমন আগমনের কারণ সে খুঁজে পাচ্ছে না। হিয়া ঘরে ঢুকেই প্রথমে বললো,” শার্টের বোতাম সব খুলে রেখেছেন কেনো?”
শুভ্র ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,” কি চাই তোমার?”
” আমার আপনার সাথে কথা আছে।”, আড় চোখে শুভ্রের দিকে তাকিয়ে বললো হিয়া।
শুভ্র বিস্ময় নিয়ে হিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। সকাল সকাল তার ঘরে হানা দিয়ে কি করতে চাইছে হিয়া। শুভ্র কোমরে হাত দিয়ে বললো,” যা বলার জলদি শেষ করো।”
হিয়া আবারো আড় চোখে শুভ্রের দিকে তাকালো। ঠিক মতন তাকানো যাচ্ছে না বার বার খোলা শার্টের দিকে চোখ যাচ্ছে। এইভাবে সে কথা গুলো বলবে কিভাবে ? কিছুক্ষণ যেতেই শুভ্র শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে বললো,” তোমাকে কি আমি সাড়া দিন সময় দিয়েছি? এইভাবে স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?”
হিয়া শুভ্রের দিকে তাকিয়ে সস্থির নিশ্বাস ফেললো। তারপর পা টিপে টিপে এগিয়ে এসে বললো,” আপনি কাল রাতে আমার ঘরে গেছিলেন কেনো?”
শুভ্র ভীষণ অপ্রস্তুত হয়ে তাকালো হিয়ার দিকে। এই বাঁদরটা টের পেলো কি করে? শুভ্র সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,” তোমার ঘরে গিয়েছিলাম মানে?”
” আপনি আমার ঘরে গিয়েছেন। আর আমি সিউর এই কুকুর ছানাও আপনি রেখেছেন আমার ঘরে।”, বলেই ইউভিকে বের করলো। শুভ্র ভ্রু কুঁচকে ইউভির দিকে তাকালো তারপর এদিক সেদিক তাকিয়ে বললো,” মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে তোমার?”
” নাহ্ আমার মাথা মোটেও খারাপ হয়নি। আচ্ছা আপনি বলুন। আমার পায়ে আপনি নূপুর পড়াননি? নূপুরটা তো আপনার হাতেই দেখেছিলাম আমি।”, তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো হিয়া।
শুভ্র ভেবে পাচ্ছে না হটাৎ হিয়ার এতো সাহস এলো কোথা থেকে। আগে তো কথা বলতে গেলেই কাপতে লাগলো। শুভ্র প্রসঙ্গ ঘুরাতে বললো,” তুমি মেবি ভুলে গেছো আমি কে?”
হিয়া পায়ের পাতায় ভর দিয়ে একটু উচু হয়ে শুভ্রের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,” নাহ্ ভুলিনি। শুভ্রনীল আহমেদ, আমার বর। আমার এই উপহার অনেক পছন্দ হয়েছে। আমি ওর একটা নামও দিয়েছি ইউভি। সুন্দর না নামটা।”,বলেই লজ্জা পেয়ে হাসলো।
কথাটা শুনে শুভ্রের ঠোঁটের কোণেও হাসি চলে এলো তবে শুভ্র সেটা প্রকাশ না করে বললো,” তোমার সব ভয় উড়ে গেছে, তাই না?”
হিয়া আড় চোখে শুভ্রের দিকে তাকিয়ে নিজের হাসি কন্ট্রোল করলো। হিয়া প্রশ্নটা না শুনার ভান করেই ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। বদমাইস ডাক্তার একটা। শুভ্র ঠোঁট প্রসারিত করে হাসলো। বাঁদরটা অনেক চালাক।
✨ ইউভি সারা বাড়ি তার ছোট ছোট পা ফেলে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সবাই ভীষন অবাক। এই কুকুরছানা এলো কোথা থেকে। শুভ্র চুপচাপ ডায়নিং টেবিলে বসে জুস হাতে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। ইউভি শুভ্রের পায়ের কাছে বসে এক দৃষ্টিতে শুভ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। শুভ্র সেটা খেয়াল করলো, এটাও দেখি এক দিনে মালিকের মতন হয়ে গেছে।
হিয়া নিচে নামতেই ইউভি হিয়ার কাছে চলে গেলো। হিয়া রান্না ঘরে আসতেই, ইউভি লেজ নাড়তে নাড়তে তার পিছু পিছু এলো। সাহারা খাতুন ভ্রু কুঁচকে ইউভির দিকে তাকিয়ে আছে। এইটা আবার কোথা থেকে এলো?
সাহারা খাতুন হিয়াকে প্রশ্ন করেই ফেললেন,” এইটা পেলে কোথায়?”
হিয়া একবার চোখ পিট পিট করে তাকালো। শাশুড়ির কি পছন্দ হয়নি। না হলেও ভয় নেই, ইউভিকে তো তার ছেলেই এনেছে। বকা এই লোকটাই খাবে। হিয়া একটা ঢোক গিলে শুভ্রের দিকে আঙুল দেখিয়ে বললো,” উনি।” এতটুকু বলেই হিয়া থামলো। সাহারা খাতুন অবাক হয়ে ছেলের দিকে তাকিয়ে আছেন।
শুভ্র সেই মুহুর্তে কিচেনে তাকাতেই দেখলো হিয়া তার দিকে আঙুল করে দেখিয়ে দিচ্ছে। শুভ্রের বুঝতে বাকি রইলো না হিয়া তার দিকে আঙুল দেখিয়ে ঠিক কি বলতে চাইছে। রবিউল সাহেব পত্রিকা হাতে শুভ্রের বরাবর টেবিলে বসে আছে। কিছুক্ষণ পর পর পত্রিকা সরিয়ে ইউভির দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছেন।
হিয়া নাস্তা নিয়ে টেবিল পাশ কাটিয়ে চলে যেতেই রবীউল সাহেব হিয়াকে ডাকলেন। হিয়া থমকে দাড়িয়ে পিছনে ফিরলো। রবীউল সাহেব তার বউয়ের মতন একই প্রস্ন করলেন। উত্তরে হিয়া আবারো শুভ্রের দিকে আঙুল করতেই শুভ্র আড় চোখে তাকালো। সারা বাড়ি বলে বেড়াচ্ছে এই মেয়েটা। শুভ্র সরু চোখে তাকাতেই হিয়া ফিক করে হেসে ফেললো। বলেই উপরে চলে গেলো।
রবিউল সাহেব পত্রিকা সরিয়ে শুভ্রের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। বাহ্ ছেলে তো তার ভালোই লাইনে এসেছে। রবিউল সাহেবের এমন দৃষ্টিতে, শুভ্র বেশ অপ্রস্তুত হয়ে জুসটা রেখেই উঠে পড়লো। সে কি চুরি করেছে? এভাবে তাকিয়ে আছে কেনো সবাই।
হিয়া সিড়িতে দাড়িয়ে সবটা দেখলো। আহ্ লোকটাকে জ্বালাতে কি যে মজা লাগছে। বেচারা কিছু বলতে পারছে না। শুভ্র নিজের মনের কথা না বললেও হিয়া ঠিকই বুঝে নিয়েছে। কিন্তু এই বদমেজাজি লোকটা কখনো কি মুখে বলবে না?
✨ শুভ্র প্রতিদিন এই সময়ে বাড়িতে আসে কিন্তু আজ এতো দেরি কেনো? হিয়া দোতলার করিডোরে পায়চারি করছে। সঙ্গে ইউভিও আছে, সে বেচারিও পায়চারি করছে হিয়ার সাথে সাথে। ইউভির উপর মায়া লাগলো হিয়ার। এমনিতেই ছোট্ট একটা বলের মতন তার উপর হিয়ার পিছু পিছু পায়চারি করছে। হিয়া হাঁটু ভাজ করে ইউভিকে কোলে তুলে নিলো। হাপিয়ে গেছে বেচারি।
হিয়া হাঁটতে হাঁটতে শুভ্রের রুমে এলো। কেনো জানি সে অকারনেই এখন শুভ্রের রুমে আসে। শুভ্রের রূমের একপাশে কিছু শোপিস আছে। দেখতে বড়ই অদ্ভূত। কাঁচের একটা পুতুলের দিকে হিয়ার নজর আটকে গেলো। সাদা এপ্রন পড়া একজন ডাক্তার, একটু কাছে এনেই দেখলো নিচে খুব সুন্দর করে ইংরেজি শব্দে লেখা ডাক্তার শুভ্রনীল আহমেদ। রহিমা খালা রুমে এলো সব শুভ্রের রূমের সব জানালা সন্ধার পর বন্ধ করার নিয়ম তাই। এসে হিয়ার হাতে পুতুলটা দেখে বললো,” এইটা কিন্তু দাদাবাবুর অনেক পছন্দের।” বলেই জানালা সব আটকে বেড়িয়ে গেলেন।
হিয়া খুব সাবধানে পুতুলটা আগের জায়গায় রাখতে গেলো। কিন্তু ইউভি হটাৎ কেমন ছটফট করে লাফিয়ে নেমে পড়তেই হিয়ার হাত থেকে পুতুলটা পরে গেলো।
মুহূর্তেই চুর্ন বিচূর্ণ হয়ে গেলো পুতুলটা। হিয়া থমকে দাড়িয়ে আছে। কি হলো এইটা! হৃদ স্পন্দন মুহূর্তেই দ্বিগুণ হয়ে গেলো। এটা তো শুভ্রের অনেক পছন্দের, কি হবে এইবার? শুভ্রের নেম প্লেটটা ছাড়া আর কিছুই নেই। হিয়ার নিজেকে দোষী মনে হচ্ছে। চোখ দুটো ছল ছল করে উঠলো। শুভ্রের পছন্দের পুতুলটা সে ভেঙে ফেললো। হিয়া সামনে এগিয়ে এসে নেমপ্লেটটা হাতে নিতেই কাচের একটা টুকরা হিয়ার হাতে বিধলো। সেদিকে হিয়ার খেয়াল নেই। ইউভি ভয়ে এক পাশে চুপ করে বসে আছে।
শুভ্র ঘরে এসে দেখলো হিয়ার হাত থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। শুভ্র সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে এলো। এগিয়ে আসতেই দেখলো চারিপাশে কাচের টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। শুভ্র হিয়াকে কোলে তুলে নিয়ে খাটে বসালো। শুভ্রকে দেখে হিয়া কেদেই ফেললো। সে কান্না আর থামছে না। শুভ্র হিয়ার হাত থেকে নেমপ্লেট টা নিয়ে ফেলে দিতেই দেখলো হাতে ভালোই ক্ষত হয়েছে। শুভ্র ভীষণ রেগে গিয়ে বললো,” আর ইউ আউট অফ ইউর মাইন্ড? কাচের টুকরো হাতে নিয়ে বসে আছো কেনো?”
শুভ্রের ধমকে হিয়া চুপ করে রইলো। চোখ দিয়ে শুধু পানি পড়ছে। শুভ্র নিজের এপ্রনটা একপাশে রেখে শার্টের হাতা ভাজ করে ড্রয়ার থেকে ফাস্ট এইড বক্সটা নিয়ে হিয়ার সামনে বসে হাতটা ভালো করে দেখলো। শুভ্রের মাথায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। রুমটার দিকে তাকিয়ে রহিমা খালাকে ডেকে রুমটা পরিষ্কার করতে বললেন। রূমে হাঁটতে গেলেই এখন কাচের টুকরো বিধবে। হিয়া নিশ্চুপে কেঁদেই যাচ্ছে, শুভ্রের ধারণা হিয়া হয়তো ব্যথায় কাদঁছে। শুভ্র অনেকটা সময় নিয়ে হাতের ব্যান্ডেজটা করলো। ব্যান্ডেজ শেষ হতে হতে রুমটাও খালা পরিষ্কার করে ফেলেছে। শুভ্র ফাস্ট এইড বক্স রেখে এসে দেখলো হিয়া এখনো কাদছে।
শুভ্র চিন্তিত হয়ে হিয়ার পাশে এসে বসলো। হিয়ার দুই গাল স্পর্শ করে মুখটা উপরে তুলতেই দেখলো। হিয়া কেদে কেঁদে গঙ্গা যমুনা এক করেছে। শুভ্র খুব কোমল গলায় জিজ্ঞেস করলো,” হাতে কি বেশি ব্যাথা করছে ?” হিয়া না সূচক মাথা নাড়তে। শুভ্র একটু ভ্রু কুচকে শান্ত গলায় বললো,” তাহলে তুমি কাদঁছো কেনো স্টুপিড?”
” আমি ওই পুতুলটা ভেঙে ফেলেছি।”, বলেই ফুপিয়ে উঠলো হিয়া।
পুতুলটা শুভ্রের পছন্দের ছিলো ঠিকই কিন্তু এতটা না যে তার মূল্য হিয়ার চোখের জলে ফেলতে হবে। শুভ্র একটা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেললো।
” আমার হাত থেকে পড়েগেছে। সরি……”, আর বলার আগেই শুভ্র হিয়ার ঠোঁটের সামনে আঙ্গুল ধরে বললো,” একদম চুপ। আর কাদবে না তুমি।”
[ #চলবে]
কালকে বেড়াতে যাবো। আমার ফ্যামিলি এমনই অদ্ভূত, এরা ডিসেম্বরের শেষে বেড়াতে যায়।😑 আমি আবার বাসে ঘুমাতে পারি না। সাড়া রাত হয়তো জেগেই থাকবো। কালকে সেখানে গিয়ে গল্পটা দিতে পারবো কিনা জানি না। রাত আটটার পর কেউ অপেক্ষা করবেন না।