#নিবিদ্রিতা_কাহন—-১৯
®মেহরুমা নূর
★কৃষ্ণচূড়া গাছটাতে দুটো কাঠবিড়ালির দূরন্তপনা দেখছে আদ্রিতা। ক্লাসের জানালা দিয়ে উদাসীন ভাবে বাইরে তাকিয়ে আছে সে।বাদামী ডোরাকাটা কাঠবিড়ালি দুটো তুলোর মতো পশমে ভরা ছোট্ট শরীরে ডাল জুড়ে ছুটোছুটি করছে। অন্য দিন হলে হয়তো আদ্রিতা এক দৌড়ে ছুটতো ওই কাঠবিড়ালি গুলোকে ধরার জন্য।ছোট থেকেই কাঠবিড়ালি তার খুব পছন্দ।যেখানেই দেখবে, ছুটে যাবে ধরতে। চাচ্চুকে কতবার যে এই কাঠবিড়ালি ধরার জন্য হয়রান করেছে তার ইয়ত্তা নেই। একবারতো আবির চাচ্চু, গাছের ডাল ভেঙে পড়েই গিয়েছিল শুধু আদ্রিতার জন্য কাঠবিড়ালি ধরতে গিয়ে। কপাল ভালো গাছটা বেশি উঁচু ছিলোনা৷ তাই খুব একটা আঘাত পায়নি। কিন্তু আজ কোনো মোহয় যেন আদ্রিতাকে আকৃষ্ট করতে অক্ষম হচ্ছে। কাল থেকে নিবিড় ভাইয়ার ওর প্রতি অমন রুষ্টতা আদ্রিতাকে বিষন্নতায় ডুবিয়ে দিচ্ছে। কোন কিছুতে তার মন খুশি খুঁজে পাচ্ছে না। তার আশেপাশে সবই আছে তবুও যেন সর্বত্র শূন্যতার বিস্তার। ভেবেছিল কলেজে আসলে হয়তো মুড একটু ফ্রেশ হবে। কিন্তু তাও কাজে দিচ্ছে না৷ মনটা যেন করল্লা খেতে বনবাসে গেছে।
আদ্রিতার অন্যমনস্কতার মাঝে হঠাৎ পাশ থেকে বান্ধবী ইভা, কনুই দিয়ে আদ্রিতাকে খোঁচা মেরে বলল,
“ওই ছেমরি, কি হইছে? কোন পাট খেতে আকাম কইরা আইছস?”
আদ্রিতা একটু বিরক্ত হলো। মেয়েটার মুখ যেন রাস্তার খোলা ম্যানহোলের মতো। অশালীন কথা ছাড়া কিচ্ছু আসেনা মুখে। আদ্রিতা জানালা থেকে নজর ফিরিয়ে বলল,
“কি বলিস এসব!”
“তো কি বলবো! কখন থেকে দেখছি জামাই মরা বিধবাগো মতোন জনমদুখিনী ভাব ধরে বসে আছিস।এদিকে হ্যান্ডসাম ইংলিশ প্রফেসরকে দেখে ক্লাসের মাইয়ারা ক্রাশ খাইতে খাইতে বমি কইরা ফেলালো আর তোর কোনো হদিসই নাই।”
আদ্রিতা বিরক্তির সুরে বলল,
“তো তুইও বমি অভিযানে নিজেকে শহীদ করে ফেল। আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই।”
“হ্যাঁ হ্যাঁ তা থাকবে কেন! যখন ঘরেই শাহী বিরিয়ানি আছে তখন বাইরের সাদামাটা চিকেন পোলাও-এ কি আর ইন্টারেস্ট আসবে? তোর ঘরে যেই আগুনের গোলার লাহান একখান পোলা আছে! অমন পোলা ঘরে থাকলে আর খাবার খাওয়ারও দরকার হয়না৷ তিনবেলা দেখলেই পেট ভরে যায়। এহন আমগো তো আর ওমন শাহী বিরিয়ানির কপাল নাই৷ তাই এই ডালভাত দিয়েই পেট ভরতে হচ্ছে।”
আদ্রিতার বিরক্ত বাড়লো আরও। আবারও ওই লোকটার কথা! অসহ্য লাগছে আদ্রিতার কাছে৷ আদ্রিতা দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
“এই তুই অফ যাবি এখন! তোর এই পুরুষ বিশারদ বন্ধ কর এখন দয়া করে। এমনিতেই মুড ঠিক নেই। তুই আরও মুডের মা বোইন করিস না।”
“আরে রাগছিস কেন? আমিতো তোর মুড ঠিক করার জন্যই এসব বলছিলাম। আচ্ছা রাগ করিসনা। চল একটু বাইরে দিয়ে ঘুরে আসি। ”
“ঠিক আছে, চল।”
বাইরে হাঁটতে হাঁটতে ইভা বলল,
“হালার এতো পোলা, মাছির মতো ভনভন করছে চারিদিকে। একটাও লাইন ফাইন মারলোনা। পোলাগুলার চোখে নির্ঘাত ছানি পড়ছে। এতো সুন্দর রুপসী মেয়েটাকে চোখেই পড়ছেনা। আরে আমার কথা নাহয় বাদই দিলাম৷ কিন্তু তোর মতো একটা আগুন সুন্দরীর দিকেও কেউ তাকাচ্ছে না! পোলাগুলার নাট বল্টু ঢিলা হয়ে গেছে। তোর মতো টুকটুকে বারবিডলের মতো মেয়েকে দেখে আমি মেয়ে হয়েই ক্রাশ খাই।মনডায় চায় টিফিনবক্সে ভরে বাড়ি নিয়ে যাই। আর এই ছেলেগুলো দেখেই না! কি হবে এই আবাল জেনারেশনের!”
ইভার কথায় আদ্রিতার মাঝে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা গেল না। আদ্রিতাকে এই বিষয়টা এখন আর ভাবায়না। কারণ এটা তার সাথে ছোট থেকেই হয়ে দেখেছে সে। স্কুলে থাকতেও কখনো কোনো ছেলে আদ্রিতাকে প্রপোজ তো দূরের কথা কখনো একসাথে বসে কথাও বলেনি। সবসময়ই সে খেয়াল করতো স্কুলের ছেলেগুলো কেমন ওর থেকে সবসময় দূরত্ব বজায় রাখত। ওর সব ক্লাসমেট গুলো প্রেম করতো। ছেলেদের কাছ থেকে কতরকম লাভ লেটার পেত। কিন্তু আদ্রিতাকে দেখলেই ছেলেগুলো কেমন পাশ কেটে সরে যেত সবাই। এখন কলেজে আসার পরও এমনই হচ্ছে। যদিও এতে আদ্রিতার কোনো আপসোস নেই। বরং এসব উটকো ঝামেলা যত দূরে থাকে ততই ভালো। তবে বিষয় টা অনেক বার ভাবাতো আদ্রিতাকে। এখন আর সেসব ভাবাও ছেড়ে দিয়েছে সে।”
মাঠের এক পাশে ফুচকাওয়ালাকে দেখে ইভা বলে উঠলো,
“ফুচকা খাইগা চল।”
আদ্রিতা নিরস মুখে বলল,
“না, আমার খেতে ইচ্ছে করছেনা। তোর ইচ্ছে হলে গিয়ে খা।”
“আরে এমন করতাছস ক্যান? কি হইছে?”
“কিছুই না।”
“আচ্ছা শোন তোর পচাগলা মুডটাকে টাটকা করার একটা সুপার প্ল্যান আছে আমার কাছে। এখান থেকে একটু দূরে একটা মেলা হচ্ছে। চল যাই। অনেক মজা হবে। তোর মুডটাও ফ্রেশ হয়ে যাবে।”
মেলার কথা শুনতেই আদ্রিতার সেই ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল। এই মেলায় যাওয়া নিয়েই নিবিড় ভাইয়া ওকে শাস্তি হিসেবে অন্ধকার রুমে বন্ধ করে রেখেছিল। আজ আবার জানতে পারলে কি করবে কে জানে! এমনিতেই তেনার মেজাজ আজকাল হাই ভোল্টেজে চলছে। এক মিনিট! উনার রাগ দেখে আমি কেন ভয় পাব! ওই দৈত্য দানব যা খুশি তাই করুক। আমি মোটেও ভয় পাইনা তাকে। এখনতো আমি যাবোই মেলায়। আমার যা মন চায় তাই করবো। মনে মনে দৃঢ় প্রতিবদ্ধ হয়ে আদ্রিতা বলল,
“ঠিক আছে চল।”
নিবিড়ের উপর জমা অভিমান থেকে একপ্রকার জেদের বশবর্তী হয়েই আদ্রিতা ইভার সাথে মেলায় রওয়ানা হলো।
___
অফিস থেকে আজ একটু জলদিই ফিরেছে নিবিড়। রান্নাঘরে কফি বানাতে বানাতে সোফায় বসা ছেলের দিকে বারবার তাকাচ্ছে তানি। ছেলেটা যে অস্থিরতায় ভুগছে তা একটু হলেও টের পাচ্ছেন তিনি। তানা হলে এতো তাড়াতাড়ি রোজ ফেরেনা সে। আর তার অস্থিরতার কারণও তানির অজানা না। এই যে তার অশান্ত চোখের নজর ঘুরেফিরে কোনো কাঙ্খিত ব্যাক্তিকে খুঁজছে তা মায়ের চোখে ঠিকই পড়ছে। ছেলেটা তার ভয়ংকর ক্রোধের অনলে অন্যকে যেমন পোড়ায় তার চেয়ে হাজার গুণ বেশি নিজেকেই পোড়ায়। কবে যে ছেলেটার এই ক্রোধ কমবে কে জানে! এখনতো তানির আরও বেশি ভয় হয়। আগে তাও ওর মতিগতি বোঝা যেত। রাগলেও তা চিল্লাপাল্লা, ভাংচুর করে শান্ত হতো। কিন্তু এখনতো ওকে বোঝাই কঠিন হয়ে গেছে। গম্ভীর ছেলেটার ভেতরে কখন কি চলে তা বোঝা অসম্ভব প্রায়। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কফির কাপটা নিয়ে ছেলের সামনে টি টেবিলে রেখে নিজের কাজে আবার ফিরতে নিলেই নিবিড় পেছন থেকে ডাকলো,
“মা..”
তানি ঘুরে তাকিয়ে বলল,
“হুম বল,আর কিছু লাগবে?”
নিবিড় গলা খাঁকারি দিয়ে চোখের নজর এদিক ওদিক লুকিয়ে কিছু টা অপ্রস্তুত ভাবে বলতে নিলো,
“না, আর কিছু লাগবেনা৷ বলছিলাম তানু,নীড় ওরা কলেজ থেকে ফেরেনি?”
তানি জানে তার ছেলে আসলে কার কথা জানতে চাইছে। সে স্বাভাবিক সুরে বলল,
“তানু তো আজ যায়নি কলেজে। ওর কলেজ নাকি আজ বন্ধ। আর নীড়তো বাসায় নেই। কোথায় যেন পেইন্টিং এক্সিবিশন হচ্ছে, সেখানে গেছে। বলে গেছে আসতে নাকি অনেক রাত হবে।”
“ও আচ্ছা। ”
কাঁধে হাত ঘষতে ঘষতে মাথা এদিক ওদিক মোড়াতে লাগলো নিবিড়। যেন আরও কিছু জানতে চাইছে সে। তানি তা বুঝতে পেরেও কিছু বললো না৷ নিজের কাজে ফিরে গেল সে। নিবিড় পেছন দিকে মাথা এলিয়ে দিয়ে চোখ বুজে নিলো।
হঠাৎ কোথাথেকে ছুটে এসে তার কোলে ধুম করে উঠে বসলো, তিন্নি। আবির মাথা সোজা করে তাকালো তিন্নির দিকে। মুচকি হেঁসে তিন্নিকে কোলের মাঝে আগলে নিয়ে বলল,
“কি করছে মামুনিটা!”
ছোট্ট তিন্নি খুব খুশি মনে বলল,
“আম্মুল ফোনে ছবি দেখছি। তুমি দেখবে?”
“না, তুমিই দেখ।”
“আলে দেখোনা, এইযে দেখ এই ছবিটা। ”
তিন্নির জোরাজুরিতে নিবিড় এক নজর তাকালো ফোনের দিকে। আনমনে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে ফেলতে নিয়েই হঠাৎ আবার তাকালো ফোনের দিকে।তাকাতেই ভ্রু কুঁচকে এলো নিবিড়ের। তিন্নির হাত থেকে ফোনটা ভালো করে তাকিয়ে দেখলো ছবিটা কালকের সেই জোভানের পোস্ট করা ছবিটা। তবে সেখানে শুধু আদ্রিতা আর জোভানকে দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু এটাতে তো ওদের সবাইকে দেখা যাচ্ছে।নিবিড় কিছু একটা ভেবে তিন্নিকে জিজ্ঞেস করলো,
“তিন্নি সোনা,এত্তো সুন্দর ছবি কে তুলেছে?
তিন্নি উৎসাহিত হয়ে জবাব দিলো,
” আমি তুলেছি চাচ্চু। সুন্দল হয়েছে না! ”
“হ্যাঁ, অনেক সুন্দর হয়েছে? আচ্ছা কাল কি শুধু তুমিই ছবি তুলেছিলে? আর কেউ তোলেনি? ”
“নাতো। শুধু আমিই তুলেছি।”
নিবিড় যা বোঝার বুঝে গেল। তারমানে জোভান যে এই ছবিটাই কাট, এডিট করে নিজের মতো করে পোস্ট করেছে৷ তিন্নিকে তার মা জুহি ডাক দিলে সে নিবিড়ের কোল থেকে নেমে আবার ছুট দিলো। নিবিড় উঠে দাঁড়িয়ে নিজের রুমের দিকে এগিয়ে যেতে নিলেই বোয়ালখালীতে তানহার সাথে ধাক্কা লেগে গেল হালকা। যার দরুন তানহার হাতের জিনিস গুলো মেঝেতে পড়ে গেল। নিবিড় হালকা উদ্বিগ্ন স্বরে বোনের উদ্দেশ্যে বলল,
“লাগেনিতো তোর? ”
“না ভাইয়া, আমি ঠিক আছি।”
তানহা নিচে পড়া জিনিস গুলো আবার তুলতে লাগলো। নিবিড় সেগুলো দেখে ভ্রু কুঁচকে বলল,
“কিরে, এতো জামাকাপড় নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস? তাও আবার সব একেবারে নতুন মনে হচ্ছে। ”
তানহা প্যাকেট গুলো দ্রুত তুলে নিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে ভাইয়ের উদ্দেশ্যে ফিসফিসানি সুরে বলল,
“কাউকে বলোনা ভাইয়া। স্পেশালী জুহি ভাবিকে। আসলে এগুলো অরির কাপড়চোপড়। কাল জোভান ভাইয়া নাকি অরিকে জোর করে এগুলো কিনে দিয়েছে। অরি কতো মানা করেছে তাও শোনেনি। অরি বেচারি জুহি ভাবির মন রাখতে নিতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু এগুলো নাকি ও রাখবেনা৷ আমাকে দিয়ে বলল আমি যেন এগুলো কাউকে দিয়ে দেই। তাই আমার পরিচিত এক এনিজিওতে এগুলো দিতে যাচ্ছি।”
নিবিড় তাচ্ছিল্যের সুরে বলল,
“এখন এতো ঢং করতে হবে কেন? তার সাথে যাওয়ার সময় একথা মনে ছিলোনা? ”
“অরি কি জানতো নাকি! জুহি ভাবিইতো রিকুয়েষ্ট করে অরিকে নিয়ে গিয়েছিল। তখন তো জোভানের যাওয়ার কোনো কথা ছিলোনা। মার্কেটে গিয়ে নাকি হঠাৎ ওদের দেখা হয়ে যায়। তারপর অরি আর কি করতো! জুহি ভাবির মন রাখতে ওদের সাথেই থাকতে হয়। তুমিতো জানোই মাকে। তার কড়া আদেশ, জুহি ভাবি আর ফিরোজ ভাইয়া এই বাড়িতে নিজেদের কখনো পর না ভাবে, এমন কোনো কাজই যেন আমরা কখনো না করি। নাহলে বড় দাদু নিজেকে অপরাধী ভাববেন। তিনি বড় মুখ করে ভাইয়া ভাবিকে এবাড়িতে থাকতে বলেছেন। আমাদের কোনো আচরণে যদি তারা নিজেদের এপরিবারে পর ভাবেন তাহলে দাদু অনেক কষ্ট পাবেন। তাইতো অরি কাল অনিচ্ছা সত্ত্বেও এগুলো নিয়েছিল।”
কথা শেষ করে তানহা বেড়িয়ে গেল। নিবিড় চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইলো কতক্ষণ। তার মুখয়বে যেন অপরাধবোধ প্রতীয়মান হচ্ছে।
__
রুমে এসেছে ঘন্টা দুই হলো বোধহয়। মাইন্ড ডাইভার্ট করার জন্য ল্যাপটপে ডুবে ছিলো। যদিও তা খুব একটা কাজে দেয়নি। অস্থির, অশান্ত পরিস্থিতি কেবল কাঙ্খিত ব্যাক্তির দর্শনেই মিলবে তা খুব করে জানে নিবিড়। তবে গম্ভীর নিবিড়, সে কথা কাউকে বলবে সেটাও তো অসম্ভব কাজ। গুমোট অবস্থায় আর যেন মস্তিষ্ক চলছে না। শেষমেশ আবারও ফোন বের করলো নিবিড়। গত সময়টুকুর মাঝে, এ কাজটা এই নিয়ে শতবার হবে হয়তো। ফোন বের করছে আবার ছুড়ে দিচ্ছে দূরে। তবে এবার ফোনটা করেই বসলো। কিন্তু ওপাশ থেকে খুবই নমনীয় কন্ঠে এক নারীর কন্ঠ ভেষে এলো, “দুঃখিত, আপনার কাঙ্ক্ষিত নাম্বারে এমুহূর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অনুগ্রহ করে কিছুক্ষণ পর চেষ্টা করুন।” নিবিড় ভ্রু কুঁচকে তার ফোনটার দিকে তাকালো। এমুহূর্তে এই কন্ঠ টা তার কাছে বিশ্বের সবচেয়ে তিক্ত ধ্বনি মনে হচ্ছে।যেন হাতের সামনে থাকলে এই কন্ঠটার অধিকারী ব্যাক্তির গলা টিপে ধরতো এক্ষুনি । মুখয়ব আবারও তার শক্ত হয়ে উঠছে। শক্ত চোয়াল কটমট করে সে আবারও আদ্রিতার নাম্বারে ডায়াল করলো। এবং দ্বিতীয়বারও সেই অসহ্যকর কন্ঠটাই ভেষে এলো। এবার মুখমন্ডল আবারও কঠিন হয়ে উঠছে। রাগে হাতের ফোনটা আছাড় মারার উদ্দেশ্যে উপরে উঠেয়েছে। ঠিক তখনই বাইরে থেকে কেমন হালকা শোরগোলের আওয়াজ শোনা গেল। নিবিড় কপাল কুঁচকে বাইরে বেড়িয়ে এলো। নিচে সবাই জড়ো হয়ে কেমন চিন্তিত ভঙ্গিতে কথাবার্তা বলছে। নিবিড়কে আসতে দেখে সবাই চুপ হয়ে গেল। নিবিড় সবার মুখের ভাবভঙ্গি দেখে সরু চোখে তাকিয়ে তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলল,
“কেউ কি কিছু বলবে! হয়েছে টা কি?”
সবাই কেমন একজন আরেকজনের মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলো। যেন সবার ভাষা হারিয়ে গেছে। নিবিড় অসহ্য ভঙ্গিতে বলল,
“তানু,তুই বল কি হয়েছে? ”
নিবিড়ের ধমকে তানহা ভয়ে ঝট করে এক নিঃশ্বাসে বলে দিলে,
“অরি কলেজ থেকে ফেরেনি এখনো। আর ওর ফোনও বন্ধ আসছে।”
নিবিড় কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলো। যেন তানহার কথাটা তার বুঝে উঠতে দুর্বোধ্য হচ্ছে। ক্ষণিক মুহূর্ত পরই সে চোখ বন্ধ করে কাঁধে হাত ঘষতে লাগলো। গমগমে গলায় বলল,
“ড্রাইভারকে ফোন করেনি কেউ?”
আবির বলে উঠলো,
“করেছিলাম আমি, কিন্তু ড্রাইভার বলল, ” ছুটির পর নাকি অরি গাড়ির কাছে আসেইনি। ড্রাইভার নাকি এখনো সেখানে অরির জন্য ওয়েট করছে। আমারতো ভীষণ চিন্তা হচ্ছে। কই গেল মেয়েটা।”
আবিরসহ বাকিরা আরও অনেক কথা বলছে। কিন্তু নিবিড়ের কানে সেসব কিছুই যেন আর প্রবেশ করছেনা। সে হঠাৎ এক ছুটে নিজের রুমে গিয়ে গাড়ির চাবি নিয়ে আবারও দৌড়ে এসে বাহিরে বেড়িয়ে গেল।
__
রাত আটটার দিকে আদ্রিতা বাড়ি ফিরলো। তাকে দেখে যেন সবার কলিজায় পানি এলো। আবির দৌড়ে গিয়ে ভাতিজির মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে মায়া ভরা কন্ঠে বলল,
“কোথায় গিয়েছিলি মামুনি? জানিস আরেকটু হলে তোর ইয়াং চাচ্চুটার চুল সব ঝড়ে পড়ার অবস্থা হয়ে গিয়েছিল। এভাবে না বলে কোথায় যায় কেউ?”
আদ্রিতা সবার সামনে এসে অপরাধী সুরে বলল,
“সরি চাচ্চু, আসলে আমি আজ আমার বান্ধবীদের সাথে মেলায় গিয়েছিলাম। আমি যখন বের হই তখন ড্রাইভার আঙ্কেল আসেনি। তাই আমরা টেক্সিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ফেরার পথে রাস্তায় কি যেন গন্ডগোলের কারণে অনেকক্ষণ জ্যাম বেঁধে ছিলো। তাই আসতে দেরি হয়ে যায়। আর আমার ফোনেরও চার্জ ছিলোনা তাই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।”
তানি এগিয়ে এসে একটু শাসনের সুরে বলল,
“এটা একদম ঠিক করিসনি অরি। জানিস আমাদের সবার কি অবস্থা হয়েছিল চিন্তায়! আল্লাহ না করুক, তোর কিছু হয়ে গেলে তোর মা বাবাকে কি জবাব দিবো আমরা! ”
আদ্রিতা দুই কানের লতি ধরে ঘাড় কাত করে অপরাধী মুখ করে বলল,
“সরি সোনা মা, এই কান ধরছি। আর কখনো এমন হবে না। প্লিজ এবারের মতো মাফ করে দাও। তুমি না আমার লক্ষী সোনা মা, আমার কিউটি টা…”
এই মেয়ের উপর তানি কীভাবে রাগ করে থাকবে। তানি কিছু বলতে যাবে তখনই দরজার দিকে চোখ পড়তেই চমকে উঠলো সে। এই দুটো ঘন্টার ব্যবধানে তার ছেলের একি অবস্থা হয়েছে! তানির তাকানো দেখে আদ্রিতাও পাশে ফিরে তাকালো। বিধ্বস্ত নিবিড়কে দেখে সেও যেন থমকে গেল। এলোমেলো চুল,ঘামে ভেজা শার্টটা কুঁচকে লেপ্টে আছে শরীরের সাথে। মুখমন্ডলে রক্তিম আভা বিদ্যমান।চোখ দুটো অসম্ভব লাল হয়ে আছে। নিবিড়ের এই বিধ্বস্ত অবস্থা দেখে হঠাৎই যেন ভয়ে কলিজা শুঁকিয়ে আসছে আদ্রিতার। নিবিড়ের অগ্নি চোখের ক্রোধে ভরা ভয়ানক চাহুনি দেখে আদ্রিতার বুঝতে পারছে যে, তার এই অবস্থা কোথাও না কোথাও হয়তো আদ্রিতার কারণেই হয়েছে। নিবিড়ের এই চাহুনি আদ্রিতার জন্য মোটেও সুখকর মনে হচ্ছে না।
নিবিড় ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে আদ্রিতার সামনে।আদ্রিতার সামনে এসে চোখ মুখ শক্ত করে ক্রুদ্ধ নজরে তাকিয়ে রইলো তার দিকে। তা দেখে আদ্রিতার এবার ভয়ে কলিজা লাফ দিয়ে হাতে চলে আসার যো। চোখের নজর এদিক ওদিক চোরের মতো লুকাতে লাগলো। ভাবটা এমন যেন ফাঁক পেলেই এক ছুটে গায়েব। তানি বুঝতে পারছে ছেলের মনোভাব এখন ভয়ানক বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে। তাই সে নিবিড়ের উদ্দেশ্যে বলতে চাইলো,
“নিবিড়, ও আসলে ইচ্ছে করে এমনটা…….
আর বলতে পারলোনা তানি। ততক্ষণে তীর কামান থেকে বেড়িয়ে গেছে। আদ্রিতার গালে সজোরে ঠাসস করে চড় পড়ার শব্দে তানিসহ সবাই হতবাক হয়ে গেল। নিবিড়ের হাতের চড় খেয়ে আদ্রিতা টাল সামলাতে না পেরে ঘুরে গিয়ে সোফার উপর পড়লো। সবাই যেন বোবা বনে গেল। মুহুর্তের ব্যাবধানে আরও একটা চড় পড়লো। তবে এবার নিবিড়ের গালে। ছেলের গালে সজোরে থাপ্পড় মেরে তানি রাগী সুরে বলে উঠলো,
” নিবিড়!!! তোর সাহস কি করে হলো বাড়ির মেয়ের গায়ে হাত তোলার! মানলাম মেয়েটা ভুল করেছে। তাই বলে ওর গায়ে হাত তোলার স্পর্ধা কে দিলো তোকে! পড়াশোনা করে এই শিখেছ বুঝি! যা সরে যা, আমার চোখের সামনে থেকে।”
নিবিড় সামনের টি টেবিলে সজোরে একটা লাথি মেরে হনহনিয়ে উপরে চলে গেল।
চলবে……..
(মনে হচ্ছে গল্প আপনাদের মনে ধরছে না।তাইতো কমেন্টে শব্দ এত কম থাকে আপনাদের।গল্প না হলে তাহলে আর দিয়ে কি হবে! কারণ আপনাদের শব্দভান্ডারের এত কৃপণতা দেখে মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে আমার।)
আরও পড়ু,,
প্রকৃতির ন্যায় সরল,নিষ্পাপ মেয়ে, উষসী।মাত্র সপ্তাদশে পা দেওয়া উষসী, রুপে অপরুপা কন্যা। গ্রামে বড়ো হওয়া উষসী, সদ্য বিবাহিত স্বামীর হাত হাত ধরে বিয়ের রাতেই পাড়ি দেয় স্বপ্নের শহর ঢাকায়। উষসী দুচোখ ভর্তি স্বপ্ন আর সুখী জীবনের আশা নিয়ে পা রাখে এই শহরে। কি হয় তার! সে’কি পারে তার স্বামীকে নিয়ে সুখের সংসার গড়তে। নাকি আসে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঝড়! সে’কি পারে সব সব বাঁধা পেরিয়ে নিজের সুখের রাজ্য গড়ে তুলতে!
জানতে পড়ুন আমার ইবুক “উষসী”। দাম ৩০ টাকা। আজই বইটই এ্যাপ থেকে কিনে ফেলুন।
আমার ইবুক “উষসী” কিনতে এই লিংকে যান।
https://link.boitoi.com.bd/PDVx