#নিবিদ্রিতা_কাহন—১৮
®মেহরুমা নূর
★বিছানায় এক গাদা শপিং ব্যাগ গুলোর দিকে তাকিয়ে অসহায় স্বরুপ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ছে আদ্রিতা। এগুলোর এখন কী করবে সেটাই ভেবে পাচ্ছে না সে। তখন জুহির সাথে শপিং যাওয়ার পর হঠাৎই সেখানে জোভান কোথাথেকে যেন এসে হাজির হয়। জিজ্ঞেস করলে বলে,সে নাকি ওখানে নিজের জন্য কিছু কিনতে এসেছিল। আর তখনই সে ওদের দেখে ফেলে। ব্যাস তারপর আর কি! তিন্নিতো মামা , মামা করে তার কোলে চড়ে বসে। জোভানও শপিংয়ে ওদের সাথেই থাকে। যদিও আদ্রিতার তাতে কোনো অসুবিধা নেই। তিন্নির মামা যেহেতু তাই থাকতেই পারে। আর জোভান লোক হিসেবেও খারাপ না। সবার সাথে হাসিখুশি ভাবে মিশে। তবে অসুবিধা বোধ হয় যখন জোভান অযথাই আদ্রিতাকে একগাদা শপিং করে দেয়৷ আদ্রিতা হাজার বার মানা করার পরেও জোর করে অনেক কিছু কিনে দিয়েছে। এতে কিছুটা বিরক্তও হয়েছে মনে মনে সে। কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে কিছু বলতে পারেনি। যতই হোক তিন্নির মামা সে। তাকে কড়া কথা শোনালে জুহি ভাবির মন খারাপ হতো। তাই অগত্যা না চাইতেও এগুলো নিয়ে আসতে হয়েছে ওকে। আবার শপিং শেষে ফুড কর্নারে নিয়ে গিয়ে একগাদা খাবারের দিয়ে বসেছিল। তিন্নি আর জুহি ভাবির মন রাখতে আদ্রিতাকেও অনিচ্ছা সত্ত্বেও ওদের কোম্পানি দিতে হয়েছে। আগে জানলে সে যেতোই না।
আপাতত শপিং ব্যাগ গুলো এক সাইড করে রাখলো। নিজের হ্যান্ডব্যাগের চেন খুলে একটা ছোট্ট বক্স বের করলো। বক্সের ঢাকনা খুলতেই চকচকে একটা ব্রুস বেরিয়ে এলো। জুহি ভাবি ফিরোজ ভাইয়ার জন্য ব্রেসলেট কিনছিল। তখন এটা চোখে পড়ে আদ্রিতার। তার খুব পছন্দ হয়েছে । ব্রুসটা দেখেই যেন নিবিড় ভাইয়ার চেহারা ভেসে উঠেছিল তার সামনে। নিবিড় ভাইয়ার ব্লেজারের সাথে এটা লাগালে কত্তো সুন্দর লাগবে তাকে। সেতো এমনিতেও সুন্দরের একমাত্র কপিরাইট। যা পড়ে তাতেই যেন মনে হয় এটা তার জন্যই তৈরি হয়েছে। তবে এই ব্রুসটা তার কাপড়ে শোভা পেলে তাকে আরও সুদর্শন লাগবে। তাইতো আদ্রিতা এটা কেনা থেকে নিজেকে আটকাতে পারেনি। কিন্তু এটা এখন নিবিড় ভাইয়াকে দেওয়াটাই দুনিয়ার সবচেয়ে বড়ো কঠিন কাজ বলে মনে হচ্ছে আদ্রিতার কাছে। উনি যে দৈত্য দানব! দেখা গেল এটার জন্য আমাকে পিচপিচ করে কেটে বারবিকিউ বানিয়ে খেয়ে ফেলল! আর তাছাড়া এটা দিবেই বা কি বলে! লজ্জা নামক দস্যুটাও তো কম না। নিবিড় ভাইয়ার সামনে এটা দেওয়ার কথা বলতে গেলেই তো ওই দস্যুটা ওর গলা চিপে ধরবে। কিন্তু দিতেতো হবেই! মুখে বৃদ্ধাঙ্গুলের নখ দাঁত দিয়ে কাটতে কাটতে সে ভাবনায় ডুবলো কীভাবে কি করবে!
ভাবনার মাঝেই বাসার কলিং বেলের আওয়াজ শুনতে পেল আদ্রিতা। নিশ্চয় নিবিড় ভাইয়া এসেছে। আদ্রিতা প্রফুল্লিত মনে উঠে দাঁড়িয়ে দৌড়ে নিচে নেমে এলো। নিচে এসে দেখলো বাসার সার্ভেন্ট দরজা খুলে দিচ্ছে। আদ্রিতা উচ্ছ্বসিত মনে দরজার পানে তাকিয়ে রইলো কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির আশায়। এবং এলোও সে। মেরুন রঙের শার্ট আর ব্লাক প্যান্ট পরিহিত সুদর্শন যুবকটাকে দেখে আদ্রিতার মনে সেই একই প্রশ্ন আবারও উঁকি দিলো। সোনা মায়ের কাছে শুনেছিল নিবিড় ভাইয়া তার বন্ধুর বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছে। ভেবেছিল আসতে হয়তো অনেক দেরি হবে। তবে এতো তাড়াতাড়ি আসতে দেখে মনে মনে খুশিই লাগছে আদ্রিতার। ব্রুস টা আজই সাহস করে দিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও চালাতে পারবে।
দরজা খুলে দিলে ভেতরে এলো নিবিড়। চোখ মুখ তার কঠিনতর হয়ে আছে। যেন এই মুহুর্তে সে নিজের ক্রোধের অনলে সবকিছু ভস্ম করে দিতে প্রস্তুত। সামনে এগিয়ে আসতেই আদ্রিতাকে সম্মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নিবিড়ের মুখমণ্ডল আরও শক্ত হয়ে গেল যেন। চোয়াল শক্ত লৌহের ন্যায়। আদ্রিতার সামনে এসে কিছু বলতে নিবে তখনই তানি নিবিড়কে দেখে বলে উঠলো,
“কিরে নিবিড়! এতো জলদিই চলে এলি যে! অনুষ্ঠান শেষ?”
নিবিড় মায়ের দিকে না তাকিয়েই থমথমে সুরে শুধু বলল,
“হুম।”
“ও আচ্ছা, তুই তো তাহলে খেয়ে এসেছিস নিশ্চয়। যা, রুমে গিয়ে আরাম কর। আর অরি, আয় খেয়ে নে।”
আদ্রিতা তানির কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল,
“আমার খেতে ইচ্ছে করছেনা সোনা মা। আমি আজ খাবোনা কিছু।”
“সে আবার কেমন কথা! খাবিনা মানে কি! দেখ অরি, না খেয়ে থাকা চলবেনা একদম।”
পাশ থেকে জুহি তখন বলে উঠলো,
“থাক চাচী, আজ আর জোর করেন না। বেচারি আর খাবেই বা কি করে! শপিংয়ে জোভান এত্তো এত্তো খাবার অর্ডার করেছিল। এত্তো করে মানা করলাম শুনলই না ছেলেটা। খাবার খাইয়ে আমাদের সবার পেট ফুল করে দিয়েছে। অরি বেচারি আজ আর কিছু খেতে পারবেনা।”
“জোভান! তোমাদের সাথে জোভানও ছিলো নাকি!”
“হ্যাঁ, ওই…..
জুহির বাকি কথা পুরো হওয়ার আগেই হঠাৎ বিকট শব্দে পাশে ফিরে তাকালো সবাই। নিবিড় সামনের টি টেবিল টাতে সজোরে লাথি মেরে ধুপধাপ পা ফেলে উপরে উঠে গেছে ততক্ষণে। জুহি আর তানি ঘটনার আকস্মিকতায় কিছু বুঝতে না পারলেও, তানি ছেলের মনোভাব ঠিকই আচ করতে পেরেছে।
রাত তখন দশটা পেরিয়ে গেছে। ডিনার শেষে নিজ নিজ রুমে অবস্থান করছে এখন সবাই। এটাই মুখ্যম সময় মনে হলো আদ্রিতার জন্য।নিজের রুমের দরজা খুলে মাথাটা হালকা বের করে উঁকি দিয়ে অবস্থান পর্যবেক্ষণ করলো প্রথমে। তারপর মনে দেড় ছটাক সাহস যুগিয়ে ধীরে ধীরে বেড়িয়ে এলো। মনে মনে আওড়াতে লাগলো,”গো ফর ইট অরি, ইউ ক্যান ডু ইট। অরি তুমি এগিয়ে যাও, আমরা আছি তোমার সাথে।” হেঃ! কিন্তু কে সাথে আমার সাথে! ধুরর, কিসব বলছি!
আদ্রিতা ধীরে ধীরে নিবিড়ের রুমের সামনে আসলো। দরজায় তর্জনী আঙুল ভাজ করে ঠকঠক করে কয়েকবার টোকা দিলো। কিন্তু ভেতর থেকে কোনো আওয়াজ এলো না। এতো তাড়াতাড়ি যে নিবিড় ঘুমানোর লোক না তা জানা আছে আদ্রিতার। তাই সে নক করার সাথে আস্তে করে এবার ডাকলো,
“নিবিড় ভাইয়া!!”
নাহ তবুও কোনো সারা এলোনা। আদ্রিতা দরজা হালকা ঠেলা দিতেই দেখলো দরজা খোলাই আছে। তাই আর নক না করে সোজা দরজা ঠেলেই ভেতরে ঢুকে গেল। কিন্তু রুম কেমন ঘুটঘুটে অন্ধকারে ডুবে আছে। আদ্রিতা কিছুটা ঘাবড়ে গেল। অন্ধকারে ভয় পায় সে। ঘাবড়ানো কন্ঠে সে নিবিড়কে ডাকতে লাগলো।
“নিবিড় ভাইয়া! রুমের লাইট বন্ধ কেন? আপনি কি শুয়ে পড়েছেন? নিবিড় ভাইয়া!”
জানালা দিয়ে আসা বাইরের আলোয় নিবিড়কে জানালার সামনে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পেল আদ্রিতা। এবার একটু সাহস পেল সে। নিবিড়ের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলল,
“নিবিড় ভাইয়া,কখন থেকে ডাকছি কথা বলছেন না কেন? আর ঘর এভাবে অন্ধকার করে রেখেছেন কেন? লাইট জ্বালান না!”
নিবিড় পেছনে না ঘুরেই গুমোট থমথমে গলায় বলল,
“অরি যা এখান থেকে।”
আদ্রিতা পরিস্থিতির গম্ভীরতা একটুও আচ না করে নিজের মতোই বলতে লাগলো,
“আরে যাবোতো। আমি কি এখানে থাকতে এসেছি! আগে লাইট জ্বালান তো।আপনার রুমের সুইচ কোথায়? লাইট জ্বালান তারপর বলছি কেন এসেছি। আসলে শপিংয়ে গিয়েছিলাম তো। সেখান থেকে আপনা…….
আদ্রিতা তার বাক্য সম্পূর্ণ করতে পারলোনা। তার আগেই আচমকা নিবিড় ঝট করে আদ্রিতার হাত টেনে ধরে দেয়ালের সাথে আটকে ধরলো। আচমকা আক্রমণে আদ্রিতা ভীষণ ঘাবড়ে গেল। জানালা দিয়ে আসা সোডিয়াম লাইটের আলোয় স্পষ্ট দেখা গেল নিবিড়ের রক্তিম চক্ষু আর ক্রুর হয়ে উঠা মুখখানি। হঠাৎ নিবিড়ের এমন ভয়ংকর বীভৎস চেহারা দেখে আদ্রিতার অন্তর আত্মা ঝংকার দিয়ে কেঁপে উঠলো। নিবিড় এক হাতে আদ্রিতার হাত দেয়ালের সাথে চেপে ধরে আছে। অন্য হাতে আদ্রিতার চোয়াল সজোরে চেপে ধরলো। কপালের রগ ফুলিয়ে ক্রুদ্ধ কন্ঠে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
“বলেছি না তোকে চলে যেতে! কথা একবারে কানে যায়না তোর! জ্বালানোর জন্য আমি কি কম পড়েছি যে লাইট জ্বালাতে হবে! আমাকে জ্বালিয়ে ছারখার করেও স্বাদ মিটেনা তোর! কেন এসেছিস এখানে! তোর শপিংয়ের গল্প শোনাতে! শপিংয়ে তোর ডাই হার্ড ফ্যানের সাথে কত্তো মজা করেছিস সেটা শোনাতে চাস! বাট আম নট ইন্টারেস্টেড এট অল। কথাতো দূরের কথা, তোর এই মুখটাও এখন রাগ বাড়াচ্ছে শুধু। তাই দূরে থাক আমার কাছ থেকে। জাস্ট গেট লস্ট এন্ড ডোন্ট শো মি ইউর ফেস অ্যাগেইন! ”
নিবিড়ের এভাবে জোরে চোয়াল চেপে ধরায় এমনিতেই আদ্রিতার ব্যাথায় জান বেড়িয়ে যাবার জোগাড়।মনে হচ্ছে চোয়াল অবশ হয়ে খসে পড়বে।তারওপর নিবিড়ের এমন কঠোর কথার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছে না আদ্রিতা। শরীর মন দুটোতেই ব্যাথা দিচ্ছে নিবিড় ভাইয়া। কিন্তু আদ্রিতার অপরাধ টা কি! কেন করছে নিবিড় ভাইয়া তার সাথে এমন! ব্যাথা আর আতঙ্কে আদ্রিতার চোখে জমলো নোনাজল। দেখতে দেখতে তা চোখের নদী হতে উপচে গাল বেয়ে বাহিত হয়ে নিচে পড়তে লাগলো। হালকা ফোঁপানোর আওয়াজও বের হলো। ক্রোধে উন্মাদ নিবিড়ের যেন এবার হুঁশ এলো। হাতের শক্ত বাঁধন কিছুটা ঢিলা হতে দেখা গেল। অন্য দিকে মাথা ঘুরিয়ে দু চোখ বন্ধ করে লম্বা লম্বা নিঃশ্বাস টেনে নিজেকে একটু ধাতস্থ করার চেষ্টা চালালো। তবে তার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে কাজটা তার দ্বারা এমুহূর্তে অসম্ভব প্রায়। চোখ খুলে আবারও আদ্রিতার দিকে নজর গাঁথল। পরপরই আদ্রিতার হাত ধরে তাকে টেনে নিয়ে দরজার বাইরে একপ্রকার ছুড়ে মারল। বের করে দিয়ে ঠাস করে দরজাটা আটকে দিলো বিকট শব্দে। সেই শব্দে আদ্রিতার শঙ্কিত হৃদয় টা ঝনঝনিয়ে উঠল যেন। দৈহিক আর অভ্যন্তরীণ দুই পীড়া একসাথে আদ্রিতাকে যাতনা দিতে লাগলো ভীষণ ভাবে। কোমল আদ্রিতার পক্ষে এই যাতনা সহনীয় হচ্ছে না। শ্রাবণের বৃষ্টি ঝরতে আরম্ভ করলো তার চক্ষুদ্বয়ে। এক আকাশ সমান অভিমানের পাহাড় মনে জমিয়ে মুখ চেপে ধরে নিজের রুমে ছুটলো সে।
রুমে এসে বিছানায় উপুড় হয়ে পড়ে কান্নার বহর ছুটালো। কাঁদতে কাঁদতে নাকের পানি, চোখের পানি মিলেমিশে একাকার। দুধে আলতার মতো ফর্সা মুখখানি টুকটুকে লাল হয়ে উঠলো। যেন এখুনি চামড়ার পাতলা আবরণ ভেদ করে র,ক্ত বেড়িয়ে আসবে। নিবিড়ের এমন ব্যবহারে তার কোমল মনটা প্রচন্ড ব্যাথিত হয়েছে। মনে শুধু একটাই প্রশ্ন। কি করেছি আমি? কি অপরাধে নিবিড় ভাইয়া আমার সাথে এমন রুঢ় আচরণ করলো? আমি কি তার গরম ভাতে পানি ঢেলে দিয়েছি? নাকি তার ব্লাক কফিতে দুধ মিশিয়ে দিয়েছি? তার কোন কলিজায় মরিচ বেটেছি আমি? পঁচা লোক। পঁচা শব্দটাও উনার থেকে ভালো আছে। উনিতো ঢাকার সুয়ারেজ লাইনের পানির চেয়েও পঁচা। দৈত্য দানব একটা! অভিমানী আদ্রিতা মনে মনে পণ করে নিলো, ওই পঁচা লোকটার সাথে আর কোনো কথাই বলবেনা সে। উনার সামনেও যাবেনা৷ অভিমানী মনে কাঁদতে কাঁদতে একসময় ঘুমিয়ে গেল আদ্রিতা।
সকালে ঘুম থেকে দেরি দিয়ে উঠলো আদ্রিতা। ভাবলো নিবিড় অফিস যাবার পরই সে নাস্তার টেবিলে যাবে। যদিও খাবার খাওয়ার তার মোটেও কোনো মন নেই। কিন্তু খেতে না গেলে আরেক ভূমিকম্প শুরু করে দিবে এবাড়ির লোক। যা এমুহূর্তে আদ্রিতার জন্য হেবি লোড হয়ে যাবে। ভাবতে ভাবতেই ডাক পড়লো। আবির ডাকছে আদ্রিতাকে খাবার খেতে। এখন না গেলেই সবগুলো ওর রুমে চলে আসবে। তাই আর উপায় না পেয়ে বাইরে বেড়িয়ে এলো আদ্রিতা। সংকীর্ণ মনে নিচে এসে এদিকওদিক কোথাও নিবিড়কে বা দেখতে পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল। নিবিড় ভাইয়া হয়তো অফিসে চলে গেছে ভেবে সে নিশ্চিন্ত মনে ডাইনিং টেবিলের চেয়ার টেনে বসলো। কিন্তু আদ্রিতার ধারণায় জল ঢেলে পড়লো যখন,ঠিক ওই সময়ই নিবিড়ও সিড়ি বেয়ে নেমে এসে ঠিক ওর পাশেই বসলো। অভিমানী আদ্রিতা তার পণ বজায় রাখতে নিবিড়ের পানে তাকাবেনা বলে শপথ নিলো। কিন্তু পাঁচ সেকেন্ড পরই সেই পণকে উষ্টা মেরে ছিটকে সরিয়ে দিলো ওর বেয়াদব মনটা। যে নিবিড় ভাইয়াকে দেখবে বলে রুখে দাঁড়াল। আদ্রিতা কত করে ধমক দিয়ে বসে আনতে চাইলো। কিন্তু বখাটে মনটা শুনলে তো। উল্টো সে আদ্রিতার গালেই থাপ্পড় মেরে নিবিড়ের দিকে ঘুরিয়ে দিলো। অসহায় আদ্রিতা বেহায়া মনের হাতের থাপ্পড় খেয়ে আরচোখে তাকালো নিবিড়ের পানে। কিন্তু তাকে দেখে আদ্রিতার অভিমান বাড়লো বৈ কমলো না। তার অবচেতন মন আশা করেছিল হয়তো এতক্ষণে নিবিড় ভাইয়ার মনে আদ্রিতার সাথে অমন ব্যবহার করার জন্য অপরাধবোধ জাগবে।সে হয়তো অপরাধী চোখে তাকিয়ে থাকবে আদ্রিতার দিকে। কিন্তু না,সেতো দিব্যি তার প্লেটে স্যালাড আর লেটুস পাতা তুলতে মহাব্যস্ত। যেন এই মুহূর্তে এই পুরো বিশ্বলোকে শুধু উনি আর উনার লেটুস পাতারই অস্তিত্ব অবশিষ্ট আছে। বাকি সবকিছুতো আইলা ঘূর্ণিঝড়ে উড়িয়ে নিয়ে গেছে। আদ্রিতার অভিমান এবার রাগে পরিণত হচ্ছে। মনতো চাচ্ছে এই দৈত্য দানবটাকে লেটুস খেতেই ছুড়ে মারতে।
হঠাৎ আরমান সাহেব আদ্রিতার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,
“গিন্নি, তোমার চেহারা এমন দেখাচ্ছে কেন? শরীর খারাপ নাকি?”
আদ্রিতা জোরপূর্বক হেঁসে বলল,
“না না দাদু, কিছু হয়নি। ওই এমনি, রাতে ঠিকমতো ঘুম হয়নিতো তাই হয়তো এমন দেখাচ্ছে।”
“ঠিক বলছ তো! আর তোমার গালে কেমন লাল দাগের মতো দেখাচ্ছে। এটা কীভাবে হলো?”
দাদার প্রশ্নে আদ্রিতা এবার একটু থতমত খেয়ে গেল। কি বলবে সেটাই ভাবছে। আরচোখে একবার পাশে তাকিয়ে দেখলো নিবিড় ভাইয়া প্লেটের দিকে নজর গেঁড়ে, কাটা চামচ দিয়ে লেটুস পাতায় খচখচ করে গাঁথার চেষ্টা করছে।যেন লেটুস পাতার ওপেন হার্ট করছেন উনি। হুঁহ্, মনতো চাচ্ছে এখুনি দাদুকে সত্যি কথা টা বলে দিতে। তারপর সবাই আচ্ছা মতো শায়েস্তা করুক উনাককে। আহা! কি পৈশাচিক আনন্দ হবে তখন আমার। কিন্তু তা করবোনা আমি। আমিতো আর ওই দৈত্য দানবের মতো অসামাজিক ব্যক্তি না। আমি আবার অনেক ভদ্র মেয়ে কিনা। ছেলের কুকীর্তির কথা শুনলে সোনা মা ছোট হবে। তাই সত্যি টা লুকিয়ে আদ্রিতা বলল,
“তে…তেমন কিছু না দাদু। এলার্জির কারণে একটু র্র্যাশ হয়েছে আর কিছু না।”
তখনই আবার জুহি পাশ থেকে বলে উঠলো,
“অরি, কালকের ড্রেস গুলো ট্রাই করেছ? জোভানের দেওয়া ড্রেসগুলো গায়ে ফিট হয়েছে তোমার? ফিট নাহলে বোলো, আমরা আবার চেঞ্জ করে আনবো। বেশিদিন হলে আবার দোকানদারেরা তালবাহানা করে।”
আদ্রিতা জুহির মন রাখতে মিথ্যে বলল,
“না না তার কোনে দরকার নেই। আমি পড়ে দেখেছি সব ঠিকই আছে”
জুহি হাসিমুখে বলল,
“আচ্ছা, তাহলে তো ভালোই। বাইদাওয়ে জোভানের চয়েস আছে বলতে পারো। তোমার জন্য কেনা জিনিস গুলো কত সুন্দর হয়েছে তাইনা!”
আদ্রিতা আবারও জোরপূর্বক হাসলো শুধু। আরমান সাহেব বলে উঠলেন,
“জোভানও তোমাদের সাথে গিয়েছিল নাকি কাল?”
জুহি কিছু বলতে যাবে তার আগেই তিন্নি অতি উৎসাহিত হয়ে বলল,
“হ্যাঁ গিয়েছিল তো। মামা আমাদের সাথে গিয়েছিল কাল। আমাদের এত্তো এত্তো গিফট কিনে দিছে। অলি পিপিকেও এত্তগুলা গিফট দিছে।”
এই পর্যায়ে ঝন করে কিছু পড়ার শব্দ হলো। আদ্রিতা পাশে তাকিয়ে দেখলো নিবিড় হাতের কাটা চামচ টা প্লেটের উপর এক প্রকার আছাড় মারার মতো ছুড়ে ফেলে ঠাস করে উঠে দাঁড়াল সে। উঠে দাঁড়িয়ে পা দিয়ে চেয়ারের পায়ায় লাথি মেরে চেয়ার ফেলে দিয়ে ধুপধাপ পা ফেলে মেইন দরজা দিয়ে বেড়িয়ে গেল। আদ্রিতা হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো সেপানে। মনটা আবারও পীড়া দিচ্ছে তাকে। নিবিড় ভাইয়া কেন এমন করছে সেটা কে বলে দিবে তাকে! কেন নিবিড় ভাইয়া এতো রুষ্ট হলো! তাকে এভাবে দেখে যে আদ্রিতার কষ্ট হচ্ছে। নিবিড় ভাইয়া কি তার কষ্ট বুঝতে পারছে না।
চলবে….
(রোজ পাঁচটার পর গল্প দেওয়া হবে। সবাই একটু বেশি বেশি রেসপন্স করবেন। নাহলে গল্প দিয়ে মজা পাওয়া যায় না।)
আরও পড়ু,,
প্রকৃতির ন্যায় সরল,নিষ্পাপ মেয়ে, উষসী।মাত্র সপ্তাদশে পা দেওয়া উষসী, রুপে অপরুপা কন্যা। গ্রামে বড়ো হওয়া উষসী, সদ্য বিবাহিত স্বামীর হাত হাত ধরে বিয়ের রাতেই পাড়ি দেয় স্বপ্নের শহর ঢাকায়। উষসী দুচোখ ভর্তি স্বপ্ন আর সুখী জীবনের আশা নিয়ে পা রাখে এই শহরে। কি হয় তার! সে’কি পারে তার স্বামীকে নিয়ে সুখের সংসার গড়তে। নাকি আসে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঝড়! সে’কি পারে সব সব বাঁধা পেরিয়ে নিজের সুখের রাজ্য গড়ে তুলতে!
জানতে পড়ুন আমার ইবুক “উষসী”। দাম ৩০ টাকা। আজই বইটই এ্যাপ থেকে কিনে ফেলুন।
আমার ইবুক “উষসী” কিনতে এই লিংকে যান।
https://link.boitoi.com.bd/PDVx