নিবিদ্রিতা_কাহন—-২৩ ®মেহরুমা নূর

0
5

#নিবিদ্রিতা_কাহন—-২৩
®মেহরুমা নূর

★খুশি খুশি মনে বাসায় ফিরলো আদ্রিতা। বাসায় ফিরে আরও একটা সারপ্রাইজ পেল সে।বাসায় গ্রাম থেকে ফিরোজের ছোট বোন ফাইজা এসেছে।ফিরোজের ছোট ফাইজা, এবার গ্রাজুয়েশন শেষ করেছে। তাকে দেখে খুশি হয়ে গেল আদ্রিতা। ফাইজাকে খুব পছন্দ তার।ফাইজা আদ্রিতাকে ছোট বোনের মতোই স্নেহ করে। আদ্রিতা দৌড়ে গিয়ে ফাইজাকে জড়িয়ে ধরে উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলল,
“ফাইজা আপু………. কতদিন পর এলে তুমি! কেমন আছ আপু?”
ফাইজা মুচকি হেঁসে বলল,
“আমি ভালো আছি। তুই কেমন আছিস অরি সোনা?”
“আমিও ভালো। তোমাকে দেখে আরও ভালো হয়ে গেছি।এবার কিন্তু আর সহজে যেতে দিবোনা তোমাকে। অনেক দিন থাকতে হবে।”
ওদের কথা বলার মাঝেই নিবিড়ও এসে উপস্থিত হলো। গাড়ি পার্ক করে আসায় সে পরে আসলো। ফাইজা নিবিড়কে দেখে বলল,
“আরে নিবিড় ভাইয়া যে, দেশে ফিরেছেন তাহলে! ”
নিবিড় সৌজন্যমূলক মুচকি হেঁসে বলল,
“আরে ফাইজা তুই! তুইতো দেখি বকরি থেকে ছুকড়ি হয়ে গেছিস। বিয়ে দিয়ে দিতে হবে মনে হচ্ছে।”
তখনই জুহি,নাস্তার ট্রে হাতে নিয়ে ওদের মাঝে আসতে আসতে বলল,
“ঠিকই বলেছ নিবিড়। বিয়ে দেওয়ার জন্যইতো আনা হয়েছে ওকে। তোমার ভাইয়ার অফিসের এক কলিগ ফাইজার ছবি ফিরোজের মোবাইলে দেখে পছন্দ করে ফেলেছে। বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছে। এজন্যইতো ফাইজাকে আসতে বলা হয়েছে। কাল ছেলে পক্ষ দেখতে আসবে ওকে। বিয়ে ঠিক হলে কালই এঙ্গেজমেন্ট হবে।”
আদ্রিতা খুশিতে লাফিয়ে উঠে বলল,
“ইয়েএএএএ….বিয়ে হবে! কতদিন পর আমাদের বাড়িতে বিয়ে হবে! কত্তো মজা হবে।”
নিবিড় বলে উঠলো,
“তোর মজার পঁচা আলুর বস্তা নদীতে ভাসিয়ে দে। কদিন পর যে তোর এক্সাম আছে তা ভুলে গেছিস! গত তিনদিনতো পড়তেও আসিসনি। সোজা গিয়ে পড়তে বোস। গত তিনদিনের সব পড়া কাল আমাকে দিবি তুই। এর হেরফের হলে একদম তুলে আছাড় পাক্কা।”
বলেই গটগট করে উপরে চলে গেল জনাব। আদ্রিতার সব উচ্ছাস মুহুর্তেই ধূলিসাৎ হয়ে গেল। আত্মাটা গলায় এসে আটকে গেল বেচারির। গত তিনদিনের পড়া একসাথে দিতে হবে! এরচেয়ে তো বনবাসেই দিয়ে দিতো! এই লোকটাকে কিউট বলছিলাম তখন! এই দৈত্য দানব কখনো কিউট হতেই পারে না। কদাপি নহে।
__

আরমান সাহেবকে বাইরে যেতে দেখে তানি জিজ্ঞেস করলো,
“কোথায় যাচ্ছেন, বাবা?”
আরমান সাহেব বলল,
“একটু তোমার ডাক্তার আঙ্কেলকে দেখতে যাচ্ছি। অনেকদিন হলো অসুস্থ নাকি। ভাবলাম একটু দেখে আসি।”
“কিন্তু একা কীভাবে যাবেন? আপনারও তো শরীর ঠিক থাকে না। এভাবে একা যাওয়া ঠিক হবে না। কাউকে সাথে নিয়ে যান। আর হ্যাঁ আমি পাটিসাপটা পিঠা বানিয়েছিলাম। আঙ্কেলের জন্য প্যাক করে দেই নিয়ে যান।”
“আচ্ছা ঠিক আছে দাও।”
তানি একটা হটপটে পিঠা ভরে তানাহকে ডাকলো। তানহা আসলে তানি ওকে বলল,
“তানু মা,তোর দাদুর সাথে যাতো একটু। তোট দাদু ডাক্তার আঙ্কেল কে দেখতে যাবে। তুই সাথে যা। আর এই পিঠাগুলোও সাথে নিয়ে যা।”
“আচ্ছা আম্মু।”

অপরাহ্নদের বাসায় পৌঁছালে অপরাহ্নের মা খুব খুশি মনে তাদের ভেতরে নিয়ে বসতে দিলো। তানহা আর আরমান সাহেব ভেতরে এসে বসলেন। আরমান সাহেব এসেই অপরাহ্নের বাবার কাছে গেলেন তার কুশলাদি জানতে। তানহা পিঠার বক্সটা অপরাহ্নের মায়ের হাতে দিয়ে সোফায় বসে বসে আশেপাশে নজর বোলালো। খুব বেশি লোকজন নেই এবাড়িতে। শুধু অপরাহ্ন আর তার মা বাবা ছাড়া অন্য কোনো সদস্য নেই। সিমসাম গোছানো একটা পরিবেশ। তানহার বেশ ভালোই লাগে এমন সিমসাম পরিবেশ। অপরাহ্নের মা ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লেন মেহমানদের খাবারের আয়োজন করতে। কাজের মাঝেই তিনি তানহাকে একা একা বসে থাকতে দেখে এগিয়ে এসে বললেন,
“এই দেখ, তুমি নিশ্চয় একা একা বসে বোর হয়ে যাচ্ছ! তুমি এক কাজ করোনা। অপুর রুমে যাও। ওর রুমে বুকশেলফ আছে।যেটা ভালো লাগে নিয়ে পড়তে পারো তোমার ভালো লাগবে। আচ্ছা দাঁড়াও আমিই অপুকে ডেকে দিচ্ছি।”
তানহা বেচারি অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো খানিকটা। তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই অপরাহ্নের মা ছেলের নাম ধরে ডাকা শুরু করলো। খানিক বাদেই অপরাহ্নের কন্ঠ শোনা গেল।
“আসছি মা…”
বলতে বলতেই নিজের রুম থেকে বেড়িয়ে এলো অপরাহ্ন। মাথায় গামছা বাঁধা, হাতে ঝাড়ু আর পড়নে লুঙ্গি আর স্যান্ডু গেঞ্জি। সেই অবস্থায় বাইরে আসতে আসতে বলল,
“কি হয়েছে মা, ডাকলে কে…….
আর বলতে পারলোনা বেচারা। সামনে সোফায় বসা তানহাকে দেখে তব্দা খেয়ে গেল। তানহাও ডক্টর অপরাহ্নের এমন কাজের বেটি রহিমা থুক্কু, কাজের বেটা রহিমের রুপ দেখে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। অপরাহ্ন একবার তানহাকে দেখলো আর একবার নিজের দিকে তাকালো। এমন অবস্থায় তানহার সামনে এসেছে, এটা ভাবতেই লজ্জায় মাথা কাটা যাওয়ার অবস্থা তার। আর এক সেকেন্ডও দেরি না করে অপরাহ্ন নিজের বাদবাকি ইজ্জত বাঁচাতে লুঙ্গি ধরে উঁচু করে পড়িমরি করে নিজের রুমে ঢুকলো। ঢুকতে নিয়ে দরজার সাথে একবার গুতাও লাগলো তার। তা দেখে তানহা অনেক কষ্টে নিজের হাসি চেপে রাখার চেষ্টা করছে। মুখে হাত চেপে ধরে লুকিয়ে একটু হেসেও নিলো। নাহলে বেচারির দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। অপরাহ্নের মা ফিচেল হেঁসে বলল,
” আসলে, অপু নিজের রুমের সাফসাফাই করছিল। ও আবার নিজের কাজ নিজেই করে। কাউকে হাত দিতে দেয়না।”
একটু পর অপরাহ্ন নিজের পরিধান পরিবর্তন করে বাইরে আসলো। তানহার দিকে তাকাতেও লজ্জা করছে এখন তার। মেয়েটা এখনো মুখ টিপে হাসছে। যতোটা সরল দেখা যায় ততটাও সরল না। কেমন মজা নিচ্ছে পাজি মেয়েটা। অপরাহ্নের মা বলে উঠলো,
“অপু,তানহা ওর দাদুর সাথে এসেছে। মেয়েটা একা একা বসে আছে। ওকে তোর বুকশেলফ দেখা একটু, সময় কাটবে।”
“ওকে মা।”
তানহাকে অপরাহ্নের সাথে যেতে বললো ওর মা। তানহা তার কথা রাখতে মাথা নেড়ে উঠে অপরাহ্নের সাথে। অপরাহ্ন তানহাকে সাথে করে ওর রুমে নিয়ে এলো। আসতে আসতে বলল,
“কেমন আছ তানহা? পড়ালেখা কেমন চলছে তোমার?”
“এইতো সবই ভালো চলছে। আপনি কেমন আছেন? ”
অপরাহ্ন বিড়বিড় করে বলল,
“ভালো নেই একদম। ভালো না থাকার কারণ তুমি কবে বুঝবে মেয়ে!”
“জি কিছু বললেন! ”
“না কিছু না। এইযে বুকশেলফ। দেখ কোনটা পছন্দ হয় তোমার। যদিও বেশিরভাগ সব ডাক্তারি আর জেনারেল নলেজের বুক। এগুলো পড়ে তোমার বোরিংনেস বাড়বে বৈ কমবে না।”
তানহা নিচু স্বরে বলল,
“বোরিংনেস তো আপনার হাই লেভেলের এন্টারটেইনিং লুক দেখেই চলে গেছে।”
আস্তে করে বললেও অপরাহ্ন ঠিকই শুনতে পেল। সে গলা খাঁকারি দিয়ে তানহার দিকে হালকা ঝুঁকে ধীর গলায় বলল,
“সুন্দরী মেয়ের মুখে হাসি ফোটাতে পারাও এক পরম সার্থকতা। তুমি বুঝবেনা শ্যামকন্যা।”
বুকের মাঝে বিদ্যুৎ চমকানোর মতো কেঁপে উঠলো তানহার। চকিত নজরে তাকালো সে অপরাহ্নের পানে। তার চোখে যেন দেখতে পেল অন্যরকম এক মায়ার খেলা। যে মায়া তানহাকে গ্রাস করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে। তানহা কেমন বিবশ হয়ে পড়ছে ওই ষড়যন্ত্রে। নিজেকে সেই ষড়যন্ত্রের হাত থেকে বাঁচাতে ওখান থেকে সরে যেতে চাইলো তানহা। কিন্তু পরিস্থিতি তার অনুকূল হলো না।বোয়ালখালীতে নিচের পাপসের সাথে পা বেঝে পড়ে যেতে নিলো তানহা। তৎক্ষণাৎ অপরাহ্ন তানহার কোমড়ে হাত রেখে তাকে পড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করলো। সিনেমার মতো তানহা কাত হয়ে অপরাহ্নের বাহুতে আঁটকে রইলো। অপরাহ্নের চোখে ঘোর। মুগ্ধ হাসি তার ঠোঁটের কোণে। সেই হাসি বজায় রেখে অপরাহ্ন বলে উঠলো,
“শুনো মেয়ে,
তুমি অমত্ত সিন্ধুতে তুলেছ উত্তাল তরঙ্গ
ওই উপনেত্রের অভ্যন্তরীণ গুপ্ত রাখা আঁখি যুগল
সেতো ভীষণ ক্রূরমতি আঁধি হানা অঙ্গ।”
__

সন্ধ্যার দিকে ছেলেপক্ষ আসলো ফাইজাকে দেখতে। নিচে দেখাদেখি পর্ব চলছে। অথচ এমন এক্সাইটেড একটা প্রোগ্রাম আদ্রিতা দেখতে পারছেনা। আর এই অবিচার সংঘটিত হচ্ছে নিবিড় দ্য গ্রেট দৈত্য দানবের জন্য। যে দৈত্য দানবের একমাত্র শিকারী শুধু এই মাছুম, অসহায়, জনমদুখিনী আদ্রিতাই হয়। এইযে এখন বইয়ের স্তুপ মুখের উপর ছুঁড়ে দিয়ে তিনদিনের পড়া কমপ্লিট করতে বলে গেছে। এমন অত্যাচার কি কোনো সহৃদয়বান ব্যক্তি করতে পারে! এমন নির্মম অজাচার তো শুধু তেনার মতো হৃদয়হীন দৈত্য দানবই করতে পারে। বলি, আমি কি আলাদীনের জিন নাকি! তিনদিনের পড়া কমপ্লিট করতে অন্তত তিনমাস সময়তো দেওয়াই উচিত একজন ব্যক্তিকে। নিচে কত মজার প্রোগ্রাম চলছে আর আমাকে কিনা বইয়ের তলদেশে ডুবিয়ে দিয়ে রুমের মাঝে আঁটকে রেখে গেছে। এগুলো যে গত তিনদিন কথা না বলার প্রতিশোধ নিচ্ছে তা ভালোই বুঝতে পারছে আদ্রিতা।

নিচে কি চলছে তা জানতে উৎসুক আদ্রিতা বই রেখে পা টিপে টিপে উঠে দরজার কাছে এলো।দরজা আস্তে করে খুলে চোরের মতো মাথা হালকা করে বের করে নিচে উঁকি দিয়ে কি চলছে তা দেখার চেষ্টা করলো। নিচে ফাইজা আপুকে শাড়ি পরিয়ে বসিয়ে রেখেছে। কত সুন্দর লাগছে আপুকে। পাত্রপক্ষও এসেছে। দুজন মধ্যে বয়স্ক ভদ্রলোক আর ভদ্রমহিলা। আর ইয়াং তিনটে ছেলে বসা। এরমাঝে কোনটা বিয়ের পাত্র তা বোঝার চেষ্টা করছে আদ্রিতা। তিনজনের মাঝে যে একটু চুপচাপ শান্ত লাজুক ভঙ্গিতে বসে আছে সেই পাত্র হবে ধারণা করে নিজে নিজে বলতে লাগলো,
“বাহ! পাত্রটা তো ভারী হ্যান্ডসাম! অনেক সুদর্শন দেখতে! ”
সামনে থেকে হঠাৎ পুরুষালী কন্ঠে কেউ বলে উঠলো,
“আচ্ছা! তাই নাকি!”
আদ্রিতা নিজ ধ্যানেই বলতে লাগলো,
“হ্যাঁ একদম! কত্তো হ্যান্ডসাম দেখ…..
মাঝপথে হুঁশ এলো আদ্রিতার। ঝট করে মাথা তুলে তাকালো সে। স্বয়ং সম্মুখে নিবিড়কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হাতেনাতে চোর ধরা খাওয়ার মতো থতমত খেয়ে গেল সে। নিবিড় সরু চোখে তাকিয়ে আছে আদ্রিতার দিকে। আদ্রিতা মাথা তুলে ফিচেল হেঁসে দুনিয়ার সবচেয়ে ইনোসেন্ট লুকটা দেওয়ার প্রচেষ্টা চালালো।তা খুব একটা ইফেক্টিভ হলো বলে দেখা গেল না। নিবিড় দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
” বলদি তো তুই জন্মে থেকেই ছিলি। কিন্তু বলদির সাথে সাথে টপ লেভেলের বেশরমও হয়ে গেছিস তা জানা ছিলোনা আমার। তোকে না পড়তে দিয়ে গেছি! পড়া বাদ দিয়ে এখানে বেশরমের মতো পুরুষদের স্ক্যান করা হচ্ছে! এমনভাবে দেখছিস যেন এখুনি গিলে খেয়ে ফেলবি বিনা ঢেকুর তুলে। দেখতে দেখতে বেচারাদের ভেতর ছিদ্র করে ফেলছিস একেবারে। মনে হচ্ছে ফাইজার জায়গায় তুইই এক্ষুনি লাফ দিয়ে ছেলেগুলোর গলায় ঝুলে পড়বি। বলবো বাকি মাকে, তার মেয়ে বিয়ের জন্য পাগল হয়ে গেছে। পুরুষ দেখলেই হামলে পড়ার মতো অবস্থা।”

আদ্রিতা বেচারি টাস্কি খেয়ে গেল। সামান্য একটা কথাটাকে কোথা থেকে কোথায় নিয়ে গেল লোকটা! লোক তিলকে তাল বানায় আর উনিতো তিলকে সোজা তারা বানিয়ে দেয়। আদ্রিতা গোমড়া মুখে বলল,
“দেখুন একদম বাজে কথা বলবেন না। আমি কি তাই বলেছি নাকি! আমিতো এমনি একটু দেখছিলাম কি হচ্ছে।”
“কেন দেখতে হবে? নিচে নতুন মুভি রিলিজ হয়েছে! আর তোকে যে পড়তে দিয়ে গেলাম তার কি!”
আদ্রিতা অসহায় মাছুম চেহারা বানিয়ে বলল,
“এমন করছেন কেন! আজই গ্রাজুয়েশন করিয়ে ফেলবেন নাকি! একটু যাইনা নিচে প্লিজ! একটু গেলে কী হবে নাজানি!”
“কী হবে মানে! বিরাট অঘটন হয়ে যাবে। নিচে কতগুলো ছেলে এসেছে দেখেছিস। তোর মতো পেত্নীকে দেখো যদি সেগুলো হার্ট অ্যাটাক করে মারা যায় তাহলে ফাইজার কি হবে! শুধুমাত্র তোর মতো পেত্নী বোন থাকার দায়ে ওর বিয়ে ভেঙে যাবে। আর আমি থাকতে এমন অঘটন কিছুতেই হতে দেবোনা। একজন দায়িত্ববান ভাই হিসেবে আমার বোনের বিয়েতে কোনো বাঁধা বিপত্তি আসতে দেবোনা আমি। কিছুতেই না। যা ফুট। ভেতরে গিয়ে পড়া কমপ্লিট কর। বাইরে আসার চেষ্টা করলে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না।”
আদ্রিতা বিড়বিড় করে বলল,
“সেতো কেউ চাইলেও হতে পারবেনা। দৈত্য দানব তো আর রোজ রোজ পয়দা হয়না।”
নিবিড় ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
“কি বললি! জোরে বল।”
আদ্রিতা হকচকিয়ে উঠে ফিচেল হেঁসে আমতাআমতা করে বলল,
“ক…..কই কি বললাম! আমি আবার কিছু বলতে পারি নাকি! কথা বলা কাকে বলে তাইতো জানিনা আমি। আমি বরং গিয়ে পড়তে বসি।”
বলেই দরজা চাপিয়ে দিয়ে মনে মনে হাজার খানেক গালি দিলো নিবিড়কে। সাথে আদ্রিতা স্পেশাল অভিশাপ গুলোতো আছেই। এই যেমন, ‘উনি যখন মিটিংয়ে ভাষণ দিতে যান তখন যেন তার প্যান্ট ফেটে যায়। শীতের রাতে তাকে যেন ভূতে তুলে নিয়ে গিয়ে পুকুরের ঠান্ডা পানিতে সারারাত চুবিয়ে রাখে। উনি যখনই টিভি দেখতে যায় তখনই যেন টিভিতে বিটিভি ছাড়া আর কোনো চ্যানেল না থাকে। বিরিয়ানি খেতে নিলে সব এলাচ,লবঙ্গ গুলো যেন তার দাঁতের নিচে চলে আসে। যতবার প্যান্টের চেন লাগাতে যাবে উনার মেইন পয়েন্ট যেন চেনে আঁটকে যায়।’ আজকের জন্য এতটুকুই। পরবর্তীতে মনে পড়লে আবার দিবো।

কিছুক্ষণ পর সানভি আর তানহাও এলো আদ্রিতার রুমে। দুজন এসে বেডের উপর বসলো ধপাস করে। আদ্রিতা তাদের দেখে বলল,
“কিরে তোরা এখানে! তোদেরও কি তাড়িয়ে দিয়েছে নাকি?”
সানভি ভাব নিয়ে বলল,
“সানভিকে কেউ তাড়াতে পারে না। ওটাতো নানুমনি বলল,কোনো মেয়েকে দেখতে আসলে নাকি তাদের সামনে সুন্দরী কুমারী কন্যাদের থাকতে নেই। আর তোরাতো জানিসই আমি একটু আকর্ষণীয় কিনা। আমি থাকতে ফাইজা আপুর দিকে কেউ তাকাতোও না। তাই ফাইজা আপুর ভালোর কথা ভেবে চলে এলাম। আমার সাথে তানুও চলে এলো। যদিও ও না আসলেও ক্ষতি হতোনা৷ ওতো আর আমার মতো এতো সুন্দর না। ও থাকলেও কি আর না থাকলেও কি!”
সানভির কথাটা আদ্রিতার মোটেও পছন্দ হলোনা। যদিও তানহা ওর কথায় কিছু মনে করে না।কারণ সানভির স্বভাবই এমন। তবুও সানভির এভাবে বলাটা ভালো লাগলোনা তার। আদ্রিতা কিছু একটা ভেবে বলে উঠলো,
“হ্যাঁরে সানভি, ঠিকই বলেছিস। তোর মতো কি আর সবাই হতে পারবে! যতোই হোক, দিনরাত মেকাপের বালতী মুখে নিয়ে ঘোরাতো আর চারটে খানি কথা না। ইটস রিয়েলি টাফ ইয়ার। তানুর আর কি, সামান্য ন্যাচারাল বিউটিইতো আছে ওর। এর আর এমন কি তাইনা!”
আদ্রিতার কথায় তানহা মুখ টিপে হাসলো। সানভি মুখ ভেংচি কেটে দিয়ে কথাটা গায়ে মাখলোনা। এসব ওদের মাঝে সবসময়ই চলে।

পাত্রপক্ষ ফাইজাকে পছন্দ করেছে। আজই ঘরোয়া ভাবে এঙ্গেজমেন্ট হবে। এই পর্যায়ে আর আদ্রিতাকে রুমে বদ্ধ থাকতে হলোনা। এঙ্গেজমেন্টের জন্য সবাই নিচে এসেছে। আর সবার সাথে সেও লাফিয়ে চলে এসেছে। এসেই আবিরের কাছে বসে পড়েছে যাতে কেউ সরাতে না পারে। আংটি বদল শুরু হয়ে গেছে। ছেলেপক্ষ আগে থেকেই আংটি নিয়েই এসেছিল। আর পাত্রের জন্য ফিরোজ বাহিরে গিয়ে দ্রুত আংটি নিয়ে এসেছে।আদ্রিতা খুব খুশি। কতদিন পর বাড়িতে বিয়ে হতে চলেছে। আংটি বদল শেষে কেকও কাটা হলো। তাসান এক পিচ কেক নিয়ে ফাইজার হবু বর জহিরকে খাওয়াতে নিলে সে একটু খেয়ে সৌজন্যতা রক্ষা করে আর খেতে চাইলোনা। তাসান বলে উঠলো,
“আরে দুলাগাই, খান।”
জহির একটু থতমত চেহারা করে বলল,
“দুলাগাই!”
“হ্যাঁ দুলাগাইতো। আপনি হলেন এখন কুরবানির গরু। কদিন পরই আপনার কুরবানী হবে। তাই বলির পাঠাকে কুরবানী দেওয়ার আগে একটু বেশি বেশি মিষ্টি মুখ করাতে হয়।আপনিও খান বেশি করে। আর কবে এই সৌভাগ্য হবে কে যানে!”
সবাই উচ্চশব্দে হেঁসে উঠলো। সবশেষে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করা হলো। পনের দিন পরের তারিখ ঠিক করা হলো। বিয়ে আদিত্যদের গ্রামের বাড়ি হবে এমনটাই সিদ্ধান্ত হলো। সামনে শুক্রবারে সবাই গ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে।তা শুনে আদ্রিতা আরও খুশি হয়ে গেল। গ্রামে যাবে শুনে উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলল,
“ইয়েএএএ….গ্রামে বিয়ে, কত্তো মজা হবে। আমি প্রথম গ্রামে যাবো।”
আদ্রিতার এই খুশির বেলুন ফটাস করে ফাটিয়ে দিয়ে নিবিড় বলে উঠলো,
“তুই গ্রামে যেতে পারবি এমন কোনো কথা হয়েছে নাকি! সামনে তোর পরিক্ষা। গ্রামে, ফ্রামে কোথাও হচ্ছে না তোর। যা গিয়ে পড়তে বয়।”
বলেই সোজা নিজের রুমের দিকে যেতে নিলো নিবিড়। আদ্রিতার মাথায় বাজসহ পুরো মহাকাশ ভেঙে পড়লো। বলে কি! আমাকে গ্রামে যেতে দিবেনা! না…………এ হতে পারে না। কিছুতেই না। এতবড় অবিচার আদ্রিতা সইবেনা কিছুতেই। আদ্রিতা বুঝতে পারলো রাগলে কাজ হবে না। এতে আরও বেগতিক অবস্থা হবে। তাই আপাতত অন্য পন্থা খুঁজতে হবে। সময় খারাপ হলে গাধাকেউ ঘোড়া বানাতে হয়। আমাকেউ এখন তাই করতে হবে।

আদ্রিতা প্রিচে এক পিস কেক নিয়ে দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে গিয়ে করিডরে নিবিড়ের সামনে দাঁড়াল। দুনিয়ার সবচেয়ে ইনোসেন্ট চেহারা বানিয়ে নিবিড়ের দিকে তাকালো। যেন সে ইনোসেন্টের সব কপিরাইট নিজের নামে লিখে নিয়েছে।এমুহূর্তে দুনিয়াতে ইনোসেন্ট বলতে শুধু সে ছাড়া আর কোনো বস্তুই অবশিষ্ট নেই। যেন সে ইনোসেন্টের প্রতিমা। তাকে ছুঁয়ে সবার ইনোসেন্সি-এর কসম খাওয়া উচিত। কেকের প্রিচ নিবিড়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে চোখ পিটপিট করে সর্বোচ্চ করুন সুরে বলল,
“যেতে দিন না প্লিজ……। আই প্রমিজ, আমি সব পড়া কমপ্লিট করে ফেলবো। পড়তে পড়তে শহীদ হয়ে যাবো। তাও প্লিজ আমাকে যেতে দিন প্লিজ..!”
বলতে বলতে মাথা কাত করে আরও এক লেভেল বাড়িয়ে ইনোসেন্টের সস লাগালো মুখে। নিবিড় তীক্ষ্ণ একাগ্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদ্রিতার ইনোসেন্টের রসের বালতিতে ডোবানো মুখের দিকে। আদ্রিতার হাতে রাখা কেক টুকু হাতে নিলো নিবিড়। তারপর একহাতে আদ্রিতার চোয়াল ধরে তার মুখ খুলে কেকের পিসটা সোজা আদ্রিতার মুখে ঢুকিয়ে দিলো। কেক ঢুকিয়ে দিয়ে বলল,
“এমন পেত্নীর নানী পিশাচিনীর মতো লুক আর কখনো দিবিনা খবরদার! তোকে খেয়ে ফেলার দায়ে তোর সোনা মায়ের হাতে জেলে যাওয়ার শখ নেই আমার।”
বলেই গটগট করে নিজের রুমে ঢুকে গেল নিবিড়। আর আদ্রিতা বেচারি মুখে কেক ভরা অবস্থায়ই স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে রইলো। তার মস্তিষ্কের প্রতিটা নিউরন খাতা কলম নিয়ে বসে পড়লো নিবিড়ের বলা কথার মর্ম উদ্ধার করতে। লোকটা এমন কেন! সবসময় আদ্রিতাকে কনফিউজড করে চলে যায়।

চলবে……

আড়ও পড়ুন,,,
রাত বাড়তেই উষসীর ভয়ও বাড়তে লাগলো। রুমে যাওয়ার কথা ভাবতেই তার হাত পা থরথর করে কাঁপছে। গলা শুকিয়ে হচ্ছে মরুভূমি। কাল রাতটা তো গাড়িতে কেটে গেছে। কিন্তু আজ! বিয়ের পর আজই ওদের প্রথম রাত হবে। আর এটাই ভয়ের মুল কারণ। গ্রামে বড় হওয়ায় উষসী এসবের ব্যাপারে কিছুটা ধারণা আছে। সে গতবছর তার বান্ধবীর কাছ থেকে শুনেছিল। ওর স্বামী নাকি ওকে অনেক কষ্ট দিয়েছিল। খুবই পাশবিক ভাবে তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেছিলো। মেয়েটা সেসব বলে কান্নায় ভেঙে পড়েছিল। সেই কথা মনে আসতেই উষসীর অন্তর আত্মা আতঙ্কের বশিভূত হয়ে উঠলো। উনিও কি আজ আমার সাথে এমন করবেন! ভয়ে শরীর ঘেমে নেয়ে উঠেছে উষসীর। রান্নাঘরেই এখনো দাঁড়িয়ে আছে সে। এটা ওটা গোছানোর বাহানায় রুমে যাওয়া এড়িয়ে যাচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ রুম থেকে সায়াহ্নের ডাক এলো। ডাকছে উষসীকে। হাত পায়ের কাঁপুনি আরও বেড়ে গেল উষসীর। এখন কী করবে!

ইবুক–উষসী
দাম-৩০ টাকা

বই কিনতে প্রথমে বইটই এ্যাপ ইনস্টল করুন। বইটই অ্যাপ ইন্সটল করার লিংক : https://link.boitoi.com.bd/app

তারপর এই লিংকে গিয়ে আমার বই কিনুন।
https://link.boitoi.com.bd/PDVx

কিভাবে বইটই থেকে বই কিনবেন, তা জানতে দেখুন এই ভিডিওটি:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here