নীলচে_তারার_আলো #নবনী_নীলা #পর্ব_৩৬

0
125

#নীলচে_তারার_আলো
#নবনী_নীলা
#পর্ব_৩৬

শুভ্র হিয়ার মুখের সামনে এসে ফিসফিসিয়ে বললো,” আই থিঙ্ক আজকের দিনটা বড্ড বেশামাল, সব কিছু তো দেখছি আমারই ফেবারে। ইভেন তোমার পড়ে থাকা আমার এই শার্টটাও।”

হিয়ার গায়ে এক হিম শীতল স্রোত বয়ে গেলো। দুজনের মাঝে দূরত্ব খুব অল্প। এমনভাবে শুভ্রের এতটা কাছে আসায় হিয়ার অস্থিরতা বেড়েই চলেছে। লোকটার গায়ে শার্ট পর্যন্ত নেই। তাই শুভ্রের দিকে তাকাতেও লজ্জা লাগছে। কি অদ্ভূত এক নিরবতা…! শুভ্র দূরত্ব কিছুটা কমিয়ে আনতেই দরজার শব্দ হিয়া ছিটকে সরে দাঁড়ালো। তার আত্মাটা এক্ষুনি বেড়িয়ে আসবে। কেউ কি তাদের এইভাবে দেখে নিয়েছে!

শুভ্র আড় চোখে হিয়ার দিকে তাকালো। তারপর তপ্ত নিশ্বাস ফেলে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো। এক হাত দেওয়ালে রেখে দরজাটা ধরে দাড়ালো শুভ্র। নিধি এসেছে, হিয়ার খোঁজে। শুভ্র মিথ্যে বলাটা একদমই পছন্দ করে না কিন্তু আজ বাধ্য হয়েই বললো,” হিয়ার মাথা ব্যাথা করছে।” কথাটা বলতেও সে বেশ অসস্তি বোধ করলো।

নিধি ঠোঁট চেপে বললো,” ও আচ্ছা। তুমি তাহলে, কি ভাবির সেবা করছো?” বলেই শুভ্রের এমন খালি গায়ের দিকে তাকালো।

শুভ্র কঠিন চোখে তাকাতেই নিধি হেসে উঠে বললো,” আচ্ছা আমি। গেলাম।” বলেই দৌড় দিলো।

⭐হিয়া বিছানার একপাশে বসে আছে। সে বুঝতে পারছে না শুভ্র তার সাথে এই ঘরে বসে আছে কেনো? হিয়া কিছুতেই নিজেকে শান্ত করতে পারছে না। তার বুকের ধুকপুকানি তো বেড়েই চলেছে। হিয়া একটু কেশে বললো,” আপনি এই ঘরে বসে আছেন কেনো?”

শুভ্র আড় চোখে তাকিয়ে উঠে দাড়ালো। তারপর হিয়ার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। হিয়া জড়সড় হয়ে বসে রইলো। এখন মনে হচ্ছে,কথাটা বলেই ভুল করেছে। হিয়া আমতা আমতা করে বলল,” আসলে আমি বলতে চাচ্ছিলাম, এইভাবে খালি গায়ে আছেন কেনো? শীত করছে না।”

” এতো চিন্তা আমার জন্যে? তাহলে শার্টটা আমাকে খুলে দিলেই পারো।”, শুভ্রের কথাটা শুনে হিয়ার বুকের ভিতরে ধুক করে উঠলো। হিয়া সঙ্গে সঙ্গে শার্টের কলার চেপে ধরে বিস্ফোরিত চোখে তাকালো তারপর ভয়ার্ত গলায় বলল,” থাক, থাক আপনি এইভাবেই থাকুন। ঠাণ্ডা লাগলেও এইভাবে থাকুন।”

শুভ্র বিরক্তির নিশ্বাস ফেললো। এইভাবে সে বের হতেও পারছে না। বাড়ির যা অবস্থা, বের হলেই অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। শুভ্র হিয়ার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে বললো,” তোমার এই শাড়ী শুকাতে আর কতক্ষন লাগবে?”

হিয়া ভ্রু কুঁচকে বললো,” আমি কি করে জানবো? এক দুই ঘণ্টা তো লাগবেই।”

শুভ্র বিছানার একপাশে রাখা বালিশটা নিয়ে শুয়ে পড়লো। ফোন আর চশমাটা একপাশে রাখতে রাখতে বললো,” তোমার শাড়ী শুকিয়ে গেলে আমাকে ডাকবে, বুঝতে পেরেছো?” বলেই দৃষ্টি সামনে রেখে শুয়ে পড়লো।

হিয়া ভ্রু কুঁচকে বললো,” আপনি এখন ঘুমাবেন?”

” হ্যা,” বলেই হিয়ার দিকে তাকালো তারপর বললো,” কেনো তোমার কি কিছু করতে ইচ্ছে করছে?” হিয়া আড় চোখে তাকিয়ে রইলো।

অসভ্য ডাক্তার মনে মনে বললো হিয়া।বলেই মুখ ঘুরিয়ে নিলো। শুভ্র পুনরায় দৃষ্টি সামনে রেখে চোখ বন্ধ করলো।

হিয়া আস্তে করে বিছানায় থেকে নেমে পড়লো। শাড়িটা যে কখন শুকাবে? লোকটা এতো খারাপ কাউকে ডেকেও দিচ্ছে না আরেকটা আনার শাড়ির জন্যে। অবশ্য ডাকলেও সমস্যা, বাড়িভর্তি লোক। সবাই গুরুজন আর বাকিরা তাদের দুজনকে এইভাবে দেখলে রসিকতা করবে। ভয়াবহ রকমের রসিকতা। সেইসব রসিকতা শোনার চেয়ে এই বদমাশ ডাক্তারের সাথে এক ঘরে থাকাও ভালো। শাড়িটা হালকা হালকা শুকিয়ে গেছে তবুও মনে হচ্ছে ঘণ্টাখানেক লাগবে।

হিয়া বারান্দার একপাশে নিজেকে আড়াল করে দাড়ালো। ইস নিচে সবাই কি মজাই না করছে? বাবা পিয়াজ কাটছে…! বড় চাচা কিছুক্ষণ পর পর টিসু দিয়ে বাবার চোখের পানি মুছে দিচ্ছেন। মা বেশ বিরক্তি নিয়ে বাবার এই কাদুনে চেহারার দিকে তাকিয়ে আছেন। বাকিদের কি নাজেহাল!

আচ্ছা এই ডাক্তার সাহেব কি রান্না করতে পারে? রান্না না করতে পারলেও ডাক্তার সাহেব কাটাকুটি তো ঠিক পারবে। মনে মনে ভেবেই হিয়া মজা পাচ্ছে।

শুভ্রের এই শার্ট গায়ে দিয়ে অদ্ভূত এক অনুভূতি হচ্ছে তার। মনে হচ্ছে শুভ্র যেনো তাকে নিজের সাথে আস্টে পিষ্টে জড়িয়ে রেখেছে। অসভ্য ডাক্তার কিভাবে মুখের উপর তখন বললো তুমি কি কিছু করতে চাও? মুখে কোনো লাগাম নেই।

হিয়া কিছুক্ষণ পর বারান্দা থেকে রুমে এলো। শুভ্রর দিকে তাকাতেই মনে হলে সে ঘুমিয়ে পড়েছে। হিয়া আবার বারান্দায় ফিরে এসেছে। শুভ্রের ঘুম ভাঙ্গানোর কোনো ইচ্ছে নেই তার। হিয়া পুরো সময়টা বারান্দার মিষ্টি রোদে কাটিয়ে দিলো।

শাড়িটা শুকোতেই হিয়া শাড়ী হাতে নিশব্দে পা ফেলে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। তারপর একদম ঠিক মতন শাড়িটা পড়ে শুভ্রের শার্টটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে এলো।

হিয়া খুব আস্তে আস্তে পা ফেলে এগিয়ে এসে শুভ্রের মাথার পাশে বসলো। উদ্দেশ্য ছিলো শুভ্রকে একটু জ্বালাতন করবে কিন্তু তারপর মুগ্ধতা ভরা চোখে তাকিয়ে রইলো ঘুমন্ত শুভ্রনীল আহমেদের দিকে।

কত পার্থক্য এই ঘুমন্ত আর জাগ্রত শুভ্রের মাঝে। বসন্তের এই মিষ্টি রোদের আলোয় কতটা সুন্দর লাগছে তার এই মুখটা। ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলতে ইচ্ছে করছে না তার। হিয়ার মনের কোন সুপ্ত এক বাসনা জাগলো। হিয়া কিছু না ভেবেই আস্তে আস্তে মুখটা এগিয়ে আনলো ঘুমন্ত শুভ্রের দিকে। খুব কাছে এসে পড়তেই এক মুহূর্তের জন্যে থমকালো। সে এটা কি করতে যাচ্ছে? এই হনুমানটার এইভাবে কাছে চলে আসাটা কি ঠিক হচ্ছে? লোকটা যদি জেগে যায়? কিন্তু বদমাশ মনটা যে মানছে না। আচ্ছা একবার দেখে নিলেই তো হয় বিপদ কতটা আছে?

হিয়া ফিসফিসিয়ে শুভ্রের কানের কাছে বললো,” এই যে বদমাশ ডাক্তার? আপনি কি ঘুমিয়ে…..আছেন?” বলেই মুখটা উপরে তুলে শুভ্রের দিকে তাকালো। খুব হাসি পাচ্ছে হিয়ার তাও হাসিটা থামিয়ে শুভ্রের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো। হিয়ার ইচ্ছে করছে টুপ করে লোকটার গালে একটা কিস বসিয়ে দেয়। থাক পরে হিতে বিপরীত হয়ে যাবে। হিয়া শুভ্রের কপালের সামনের চুলগুলো ফু দিয়ে উড়িয়ে দিয়ে সরে যাবে। সঙ্গে সঙ্গে শুভ্র চোখ মেলে তাকালো। শুভ্রকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে হিয়ার বুকের ভিতরটা ধুক করে উঠলো।

শুভ্র তাহলে এতক্ষণ ঘুমের ভান ধরে ছিলো। হায় আল্লাহ, শুভ্র সবটা শুনেছে তাহলে? হিয়া একটা ঢোক গিলে কোনো ভাবে উঠে যেতে চাইলো কিন্তু শুভ্র শক্ত করে হিয়ার হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে এলো। হিয়া বিস্ফোরিত চোখে তাকাতেই শুভ্র বললো,” তুমি ঠিক কি করতে চাইছিলে আমার সাথে? আর কে বদমাশ ডাক্তার?”, বলেই শুভ্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। হিয়ার ঘাম ছুটছে রীতিমত। নাউজবিল্লাহ সব শুনে ফেলেছে। হিয়া অনেক সাহস জুগিয়ে বললো,” আসলে আমি চেক করছিলাম আপনি ঘুমিয়ে আছেন কিনা ?”

” এইভাবে আমার মুখের উপর ফু দিয়ে চেক করছিলে?”, পাল্টা প্রশ্ন করলো শুভ্র। শুভ্রের এই প্রশ্নে হিয়া চোখ পিট পিট করে তাকালো। কি বলবে এইবার সে? নিচের ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে একটা ঢোক গিললো তারপর এলোমেলো দৃষ্টিতে বললো,” আমি ভেবেছিলাম আপনার গরম লাগছে, তাই।”

“কিন্তু,গরম তো আমার এখন লাগছে।”, শুভ্রের গলায় অন্য সুর শুনতেই হিয়া শুভ্রের দিকে একবার তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিলো। শুভ্র এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে হিয়ার দিকে তারপর হালকা হেসে উঠে হিয়ার হাত ছেড়ে দিয়ে বললো,” আমি ভীতু দেখেছি কিন্তু তোমার মত ভীতু দেখিনি।”

হিয়া ছাড়া পেয়ে হুড়মুড়িয়ে উঠে আড় চোখে শুভ্রের দিকে তাকালো। শুভ্র উঠে বসে হাত বাড়িয়ে খাটের পাশ থেকে শার্টটা হাতে নিলো। হিয়া ভ্রু কুঁচকে বললো,” আমি ভীতু মানে?”

” এইযে আমি ঘুমিয়ে ছিলাম দেখে আমার কাছে আসার চেষ্টা করলে। তাও আবার ব্যার্থ চেষ্টা। আর ধরা পরার পর ভুলভাল কিছু মিথ্যে কথা।”, বলেই তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো শুভ্র। ব্যাপারটায় সে বেশ মজা পেয়েছে বোঝাই যাচ্ছে।

হিয়া মুখ বাঁকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো। তাকে ভীতু বলেছে..! ভয় পাওয়ার কি আছে? নিজের বরের কাছে যেতে আবার কিসের ভয়? সে মোটেও এতটা ভীতু না। শুধু ওই লোকটার কাছে একবার ধরা পড়লে যে সে আর ছাড়া পাবে না সেটা সে জানে। সেই ভয়েই ধারে কাছে ঘেঁষে না সে। কিন্তু লোকটা হাসলো কেনো তার উপর? ভেবেই রাগ লাগছে।

শুভ্র শার্টটা গায়ে দিয়ে সবে উঠে দাঁড়িয়েছে। হিয়াকে দরজার ওপাশ থেকে শুধু মুখ বের করে থাকতে দেখে বললো,” কি ব্যাপার! নিজের সাহসের পরিচয় দিতে ফিরে এসেছ?”

হিয়া এসেছিলো অন্য কারণে কিন্তু এইবার সত্যি ভীষন রাগ লাগছে লোকটা তাকে এতো ভীতু মনে করে? হিয়া আড় চোখে তাকিয়ে বললো,” একটু এইদিকে আসুন তো।”

শুভ্র ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে এলো। হিয়ার সামনে আসতেই হিয়া চোখ দিয়ে ঈশারা দিয়ে বললো,” একটু ঝুঁকে আসুন।”

” কেনো?” অবাক হয়ে প্রশ্ন করতেই হিয়া কড়া গলায় বললো,” কথা আছে।”

” ওকে।”,বলে শুভ্র ঝুকে আসতেই শুভ্রকে অবাক করে হিয়া শুভ্রের গলায় কামড় বসিয়ে দিয়ে বললো,” এইবার বুঝলেন? আমার কতো সাহস।” বলেই ঝড়ের গতিতে দরজার ওপাশ থেকে মুখ বের করে দৌড়ে পালিয়ে গেলো। শুভ্র চোখ বন্ধ করে ব্যাথা সহ্য করলো কিন্তু চোখ মেলতেই সাহসী হিয়া উধাও। হুঁ, খুব সাহস। বাঁদর থেকে আবার বিড়ালে প্রমোশন হয়েছে।

[ #চলবে ]

আজকে সময় ছিলো না। তবুও চেষ্টা করেছি।😐

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here