#প্রেমসুধা
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৩৩
[পর্বটা রোম্যান্সধর্মী]
একদম সঙ সেজে গাড়িতে বসে রইলো তৌসিফ। সেই যে চুপ করেছে আর কথা নেই। এদিকে গাড়ির এক কোণায় সেটিয়ে বসা পৌষ। ওর মন মেজাজ খারাপ হয়ে আছে। এই লোক গলা অবদি মদ গিলে এখন বলছে সে বাকি ওসব খায় না। তাহলে গন্ধ আসে কোথা থেকে? এখন আবার ঢং দেখিয়ে চুপ করে আছে। এসব দেখে পৌষ অবশ্য একটু ভয়েও আছে। এসব মাতাল আতাল তার ভয় লাগে। এদের হুশ জ্ঞান থাকে না। বলা তো যায় না কখন কি করে বসে।
আচমকাই তৌসিফ ধপ করে মাথা রাখলো পৌষ’র কোলে। ভয়ে “ওমাগো” বলে উঠলেও সত্যি বলতে পৌষ ব্যথা ও পেয়েছে। এভাবে এতবড় ভারী মাথার ভারটা পুরো হুট করে কোলে রাখাতে এই ব্যথাটা পেয়েছে ও। তৌসিফ ওর কোলে মুখ গুজে দিয়েই বলে উঠলো,
— চুল টেনে দাও হানিইই।
নাহ্। কণ্ঠ বান্দার একদম ই স্বাভাবিক না৷ ভয়ে ভয়ে পৌষ ওর চুলে হাত রাখতেই খপ করে হাত ধরে আটকালো তৌসিফ। হঠাৎ এহেন কান্ডে পৌষ’র বুকটা ধরাস করে উঠে। তৌসিফ দুই পাটি দাঁত বের করে হেসে জিজ্ঞেস করলো,
— তোমার চোখ, মুখ এমন দেখায় কেন হানি? আর ইউ ড্রাঙ্ক?
হায় কপাল! কই যাবে এখন পৌষ? ও কি চলতি গাড়ি থেকে ঝাঁপ দিবে নাকি মাটি ফাঁক করে ঢুকে যাবে? একূল ওকূল দুই কূল হাতরিয়ে উত্তর পায় না পৌষ। গলা পর্যন্ত নিজে গিলে সেই বান্দা এখন পৌষ’কে জিজ্ঞেস করে পৌষ গিলেছে কি না? এ ও হওয়ার ছিলো?
হাত দিয়ে ঠেলে সরালে চাইলো ওকে পৌষ তবে সম্ভব হলো না। এত বড় দামড়া লোকটাকে কিছুতেই সরানো গেলো না। পৌষ হতাশ! বড়ই হতাশ।
তৌসিফ কোলের মধ্যে ই মাথা দিয়ে গুতাগুতি শুরু করলো। এই জ্বালা কোথায় রাখা যায়? মূলত সে ঘুমাতে চাইছে এখানে কিন্তু জায়গা হচ্ছে না। পৌষ অল্প সল্প ব্যথা পেয়ে বলে উঠলো,
— আমি ব্যথা পাচ্ছি তো।
তৌসিফ ফটাক করে মাথা তুললো। বড় করে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— আমি কখন ব্যথা দিলাম? অ’শ্লীল হচ্ছো দিন দিন।
আকাশ থেকে যেন টুপ করে মাটিতে পরলো পৌষ। লজ্জায় ওর জান যায় যায় অবস্থা। ড্রাইভার যদিও সামনে তাকিয়ে কিন্তু কান তো গাড়ির ভেতরেই। এই লোক এমন ভাবে কথা বলবে কে বুঝেছে? পৌষ চুপ করে থাকাতে তৌসিফ ওর হাত ধরে টেনে নিজের কোলে তুলে ফেললো। পৌষ চমকালো। তাকে এই মাতাল লোক গাড়ি থেকেই না ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।
কপাল ভালো বলে তা হলো না বরং পৌষ’কে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরলো তৌসিফ। কানে ফিসফিস করে বললো,
— নৌকা চলছে হানি। নড়াচড়া করো না৷ পরে যাবে পানিতে।
তখনই গাড়িটা এক ঝাঁকি খেলো। সাথে সাথে হৈ হৈ করে উঠলো তৌসিফ। ভয়ে এবার পৌষ কেঁদে ফেলার উপক্রম যা তৌসিফে’র দ্বিতীয় কাজে পৌষ বাঁধ ধরে রাখতে পারলো না। গাড়ির সিটে দুই পা তুলে তাতে এখন বসিয়ে রেখেছে ওকে তৌসিফ। তার কথা এক, দাবি এক। বউ ডুবে যাবে। সিটের নিচে সব পানি। ড্রাইভারকে ধমক দিলো তৌসিফ,
— আস্তে নৌকা টানো মাঝি। বউ সহ এসেছি। ডুবে যাব তো।
ড্রাইভার পুরাতন লোক। ক থেকে চন্দ্রবিন্দু চাঁদ সবটাই তার জানা। তাই তো ততটা রিএক্ট সে দেখাচ্ছে না। আচমকাই পৌষ’র বোবাকান্না হু হু আঁকারে রুপ নিলো যখনই গলা ছেড়ে গান ধরলো তৌসিফ,
“বন্ধু তিনদিন তোর বাড়িত গেলাম দেখা পাইলাম না
বন্ধু তিনদিন!
গাঙ পাড় হইতে দুই আনা
ফিরা আইতে এক আনা
আইতে যাইতে তিন আনা
উসুল হইলো না
বন্ধু তিনদিন।
উহু বন্ধু দুই দিন
আহা বন্ধু একদিন”
আর গাইতে পারলো না বেচারা। নেশার তালে গাড়িকে নৌকা ভাবলেও বউকে কিন্তু সে ফুপাতো বোন ভাবতে পারে নি। বউকে বউ ই ভাবছে সে। কথায় বলে,”পা’গলের বুঝ ষোল আনা”। পৌষ’র বলতে মন চাইলো,”মাতালের বুঝ একশত আনা”।
বউয়ের কান্না দেখেই তৌসিফ তালুকদারের গলার সুর বদলে গেলো। পায়ের উপর বসিয়ে রাখা বউকে সে টেনে টুনে কোলের উপর নিলো। দুই চোখ মুছে দিতে দিতে বলে উঠলো আদুরে গলায়,
— আহা আহা আমার বউ কাঁদে কেন?
তৌসিফ’কে এত মাসের বিবাহিত জীবনে এহেন রুপে পৌষ দেখে নি। ভয়ে ওর আত্মা গলায় আটকে আসছে। কোনমতে শুধু বললো,
— আমি যাব না আপনার সাথে।
পৌষ ভাবলো ক্ষেপেই না যায় এই লোক কিন্তু কই ক্ষেপলো তো না উল্টো খিটখিট করে হাসতে লাগলো। পৌষ’র ভয় বাড়লো। ও কাঁদো কাঁদো গলায় ই ড্রাইভার’কে বলে উঠলো,
— ভাই আমাকে আমার বাসায় দিয়ে আসুন। আমি যাব না মাতাল খোড়ের সাথে।
হঠাৎ গাড়ি কাঁপিয়ে ধমক দিলো তৌসিফ। ছিটকে গেলো পৌষ। তৌসিফ দাঁত চেপে ধরে বললো,
— বেয়াদপ হচ্ছো দিন দিন তুমি। জামাই’কে মাতাল ডাকে কেউ? কে মাতাল? আমি কি মদ খেয়েছি যে মাতাল হব?
পৌষ থম ধরে গেলো। তৌসিফ রুপ বদলালো গিরগিটির মতো। সুর বদলে বউ’কে ধরে নরম হয়ে বললো,
— হানিই, ক্যান আই হ্যাব এ উম্মা?
পৌষ’র হঠাৎ ই যেন রাগ উঠে গেলো। তড়াক করে সরে গিয়ে বললো,
— নো উম্মা। সরুন সামনে থেকে। মুখে গন্ধ আপনার। খাচ্চড় লোক!
বাড়িতে চলে আসায় ডোর খুলে বেরিয়ে এলো পৌষ। পেছন থেকে সমান তালে তৌসিফ চিল্লিয়ে যাচ্ছে,
— বউ গেলো। আমার বউ গেলো পানিতে। বউ ডুবে গেলো আমার।
পৌষ পেছনে তাকালো না আর। সোজা সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে গেলো। ড্রাইভার ধরে ধরে তৌসিফ’কে বের করতেই তৌসিফ গমগমে স্বরে বললো,
— আমি পানিতেও হাটি, মাটিতে হাটি আমি কিন্তু বাতাসেও হাটি।
— জ্বি মামা।
— তোর মামি কই?
— ভেতরে গিয়েছেন।
— দেখলি আমাকে রেখে চলে গেলো।
পৌষ রুমে ঢুকার আগেই দেখলো সোহা বসা সোফায়। ওর দিকে না তাকিয়েই পৌষ রুমে ঢুকে জুতা আর হিজাব খুললো। হাতের চুড়ি গুলো খুলতেই পেট মুচড়ে উঠলো ওর। ওয়াশরুমে ঢুকে গলগলিয়ে বমি করে দিলো পৌষ। গাড়িতে এতক্ষণ যাবৎ বিশ্রি গন্ধের মধ্যে ছিলো ও। কতবার মুখের সামনে এসে কথা বলেছে তৌসিফ। এই গন্ধে নাড়ি ভুঁড়ি উল্টে আসছে যেন।
তৌসিফ’কে ড্রাইভার রুমে নিতে নিলেই সোহা আটকে দিলো। থমথমে গলায় বললো,
— সোফায় রেখে যান।
ড্রাইভার বলতে গিয়েও কিছু বললো না। সামান্য কর্মী সে। তৌসিফ’কে সোফায় রেখে যেতেই সোহা মেইন ডোর লক করে দিলো। তৌসিফে’র কাছে এসে গায়ে হাত দিতে নিলেই তৌসিফ সরিয়ে দিলো। নিভু নিভু চোখে বলে উঠলো,
— উপফ সোহা, রুমে যাও।
সোহা মুচকি হাসলো। সে বুঝে গেলো তৌসিফ তালুকদার নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছে না তাই তাকে যেতে বলছে। এরমানে সে আজ ভালোই গিলেছে কারণ এক দুই বোতল দিয়ে তো গলা ভেজায় তৌসিফ। আজ যেহেতু টলছে এর মানে গিলেছে ভালোই। সোহা ওর পাশে বসতে বসতে বললো,
— তোমার বউ রুমে। দিয়ে আসব?
— আই উইল ম্যানেজ।
— সে তোমাকে ধোঁকা দিলো অথচ তুুমি তার কাছেই যাবে?
“ধোঁকা” শব্দটা কানে বিঁধলো যেন তৌসিফে’র। মাথা তুলে জিজ্ঞেস করলো,
— পিয়ু?
সোহা মুচকি হাসলো। মাথা নেড়ে বলে উঠলো,
— তোমার পিয়ু তোমার রুমে।
— কখন এসেছে?
— জানি না তো। তোমার অপেক্ষা করছে। যাও।
তৌসিফে’র চোখ দুটো জ্বলে উঠলো। রাগে দপদপয়িয়ে উঠলো মস্তিষ্ক। উঠে যেতে লাগলো টলমলে পায়ে। এদিকে সোহা হাটা দিলো নিজের রুমে। তার কাজ শেষ। আজ ঐ মেয়ে বুঝবে তৌসিফ কে।
রুমে ঢুকতেই তৌসিফ দেখলো কালো শাড়ী পরা কেউ ওর বিছানায় উল্টো দিকে ফিরে আছে। তৌসিফে’র কানে বাজছে “পিয়ু”। বিকৃত মস্তিষ্ক তখন ততসব বুঝে না। আচমকা গিয়ে পেছন থেকে চুলের মুঠি চেপে ধরতেই পৌষ চিৎকার করে উঠলো। তৌসিফ ছাড়লো না। চুল ছেড়ে গলায় চেপে ধরে বলে উঠলো,
— কেন এসেছিস এখানে?
পৌষ’র চোখ দুটো বড় বড় হয়ে এলো। মনে হচ্ছে শ্বাসরোধ হয়ে মা’রা যাবে এখনই। তৌফিক আরেকটু চেপে ধরে বলে উঠলো,
— ***** কেন এসেছিস এতবছর পর? আমার পৌষরাত কোথায়? ওকে কি করেছিস? আমার সুন্দর সংসার ভাঙতে এসেছিস তুই? জানে মে’রে ফেলব!
পৌষে’র মুখ লাল হয়ে এলো। তৌসিফের হাতের উপর দিয়ে হাত দিয়ে সরাতে চাইলো। পুরুষ শক্তির সাথে পারলো না। কোনমতে শুরু বললো,
— আআআমি প..পৌষরাত।
তৌসিফে’র চাপ বাড়লো। ছটফটিয়ে উঠলো পৌষরাত। চাপা স্বরে গুঙিয়ে উঠে পৌষ। তৌসিফে’র হাত ঢিল ছাড়তেই পৌষ হাঁপাতে হাঁপাতে বলে উঠলো,
— আমি আমি আপ..নার পৌষরাত। এ..
এই যে আমি।
তৌসিফ পুণরায় একবার গলা চেপে ধরেই ছেড়ে দিলো। ছাড়া পেতেই এই রুম থেকে দৌড়ে যেতে নিলো পৌষ। শাড়ীতে পা বেঝে একদম ড্রেসিং টেবিলের কোণায় লাগলো কপালটা। জান বাঁচাতে উঠেই দৌড়ে পাশের রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিলো পৌষ। লক করে ই বিছানার পাশে থাকা পানি খেয়ে নিলো। গা এলিয়ে দিলো বিছানায়। এখনও তার দম আটকে আসছে।
_____________________
প্রায় দুই ঘন্টা পার হলো। রাত গভীর থেকেও গভীর হচ্ছে। বিছানায় এলোমেলো ভাবে শুয়ে আছে তৌসিফ। তার পরণের জুতাটা অব্দি খোলা হয় নি। ধীরে ধীরে তার চোখের পাপড়ি নড়াচড়া শুরু করলো। চোখ খুলেই তৌসিফ নিজের অবস্থান বুঝার চেষ্টা করলো। আস্তে ধীরে মনে পরলো কিছু। উঠে দাঁড়ালো ও রয়ে সয়ে। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো রুম ফাঁকা। পৌষ নেই। তৌসিফ চালাক মানুষ। ও সহজেই বুঝে গেলো ওর ড্রিঙ্ক স্পয়েল করা হয়েছে। উঠে সোজা ফ্রিজের কাছে গিয়ে দুটো লেবু নিলো ও৷ কিচেন ঢুকে কেটে নিলো গোল গোল করে। পা দুটো তখনও টলছে যেন। মুখে লেবু দিয়েই কপাল কুঁচকে নিলো তৌসিফ। শক্ত চোয়ালে চিরবির করে উঠে ওর মস্তিষ্ক। ওর ড্রিঙ্ক স্পাইক করার সাহস কার আছে তা দেখে নিবে তৌসিফ। এক বোতলে ওর নেশা হয় না কখনো।
লেবু খেয়ে ভালো মতো কুলি করলো ও। মুখে আরেক স্লাইস লেবু দিয়ে পাশের রুমে গেলো ও। জানা কথা এখানেই আছে পৌষ। বউ’কে যে ও আঘাত করেছে তা কিন্তু তার মনে নেই। তৌসিফ অবশ্য কিছুটা বিরক্ত ও। ওর মনে হচ্ছে আবছা আবছা ও স্বপ্নে পিয়াসী’কে দেখেছে। আঘাত ও করেছে এমন মনে হচ্ছে। প্রাক্তন মনে রাখার মানুষ ও তৌসিফ না।
দরজা লক দেখে অবলীলায় চাবি দিয়ে খুলে নিলো তৌসিফ। পায়ের জুতা, মুজা খুলে সোজা বিছানায় গেলো ও। কাঁদতে কাঁদতে যে তার বউ ঘুমিয়েছে তা অজানা তার কাছে। আবছা আলো রুমে আসছে বারান্দা থেকে। এলোমেলো শাড়ীতে তার শয্যায় তার একান্ত নারী। তৌসিফ ঝুঁকল। চুমু দিলো কপালে। এক গালে হাত রেখে গলায় চুমু দিতেই পৌষ নড়েচড়ে উঠলো। তৌসিফ আজ যেন পুণরায় একবার পৌষ’কে চাইলো। ওর দেহ, মন খুব করে টানছে। চোখ বুজে শ্বাস নিলো তৌসিফ। এক হাত শাড়ীতে দিতেই ঘুমের মধ্যে লাফিয়ে উঠে পৌষ। তৌসিফ’কে দেখেই ওর ভয় বেড়ো গেলো। বড়বড় চোখে তাকিয়ে পৌষ বলে উঠলো ভীতু করে,
— আ..আমি পৌষরাত। পৌষ আমি। আমি পিয়ু না।
তৌসিফে’র ভ্রূদ্বয় কুঁচকে গেলো সহসা। গম্ভীর কণ্ঠে ডাকলো,
— হানিই?
এই একটা ডাক। একটা ডাক পৌষে’র কলিজা ঠান্ডা করে দিলো। হাউমাউ করে কেঁদে এতক্ষণ ভয় পাওয়া তৌসিফ’কেই জড়িয়ে ধরলো পৌষ। তৌসিফ ভরকে গেলো। দুই হাতে বুকে জড়িয়ে ধরলো পৌষ’কে। অবাক কণ্ঠে বলে উঠলো,
— কি হয়েছে আমার তোতাপাখির?
পৌষ কথা বলতে পারলো না। তৌসিফ ওর মাথায় হাত বুলালো। শাড়ীর আঁচল তখন অবহেলায় পরে। পৌষ তৌসিফে’র গলায় মুখ গুজে কেঁদে উঠলো শব্দ করে। তৌসিফ বুঝলো হয়তো পৌষ এই প্রথম ওকে এমন দেখে ভয় পেয়েছে। আদুরে গলায় তৌসিফ বলে উঠলো,
— হানি, আ’ম সরি। আমার ড্রিঙ্ক কেউ স্পাইক করেছে। আ’ম সরি জান।
পৌষ তৌসিফে’র গালে হাত রাখলো। পাশের গালটা ভরে আদরের সহিত এলোমেলো চুমু দিতে দিতে বললো,
— আমাকে ভুলে গেলেন কিভাবে আপনি? কিভাবে ভুলে গেলেন? বলুন৷ কথা বলুন।
তৌসিফ বুঝলো না। হঠাৎ ওর হাতে চিটচিট করতেই লাইট অন করে ও। ওমনিই আঁতকে উঠে তৌসিফ। পৌষ’র কপাল কেটে সাইড থেকে র’ক্ত বের হচ্ছে। এবার পায় কে তৌসিফ’কে। “আলু ঝালু ব্যাঙের খালু” তার মাথা গেলো খারাপ হয়ে। এন্টিসেপ্টিক দিয়ে কপালে ছোট্ট পট্টি লাগিয়ে ব্যস্ত গলায় জিজ্ঞেস করলো,
— কাটলো কিভাবে?
পৌষ চুপ করে রইলো। তৌসিফ ওকে কাছে টানলো। কপালে চুমু দিয়ে বললো,
— কথা বলো পৌষরাত।
চোখ দিয়ে দুই ফোঁটা পানি পরতেই তৌসিফ এবার ওর থুতনিতে চুমু দিলো। গালে হাত রাখতেই পৌষ বলে উঠলো,
— আমাকে কিভাবে ভুলে গেলেন আপনি?
তৌসিফ বুঝলো না কিছুই। ওর অবুঝ চাহনি দেখে পৌষ নরম স্বরে বললো,
— আমাকে পিয়ু পিয়ু বলে গলায় চেপে ধরেছিলেন আপনি।
তৌসিফে’র টনক নড়লো হঠাৎ। গলায় তাকাতেই দেখলো স্পষ্ট লাল আঙুলের ছাপ। ফাঁকা ঢোক গিললো তৌসিফ। কি বলবে ও? যেটা স্বপ্ন ভেবেছিলো সেটা ও বাস্তবে করেছে তা ও কি না ওর কলিজার টুকরোটার সাথে?
পৌষ বেহায়ার মতো তৌসিফে’র গলা জড়িয়ে ধরলো। ভালোবাসা না পাওয়া এতিম মেয়েটা আজ আত্মসম্মান ভুলে গেলো। অনুনয় করে বললো,
— আমাকে আর ভুলবেন না হ্যাঁ? আমি কোথায় যাব? আপনি না বলেছিলেন আমাকে ভালোবাসেন? বলুন?
পৌষ চুমু দিলো তৌসিফে’র হাতের উল্টো পিঠে। পুণরায় বললো,
— যে জিনিস আমাকে ভুলিয়ে দেয় সে জিনিস না খেলে কি খুব ক্ষতি হবে?
তৌসিফ কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেললো। কপালে কপাল ঠেকিয়ে বসে রইলো ওভাবেই। সময় অতিক্রম হতেই শুনা গেলো এক তৃষ্ণার্ত প্রেমিক কণ্ঠ,
— পৌষরাত।
অন্তঃপুরে তখন ধকধক শব্দ। পৌষ উত্তর করে,
— হু।
— আমাকে মাফ করে দাও।
— আচ্ছা।
ওকে বুকে জড়িয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো তৌসিফ। সারামুখে চুমু দিয়ে বলে,
— আজ তোমাকে পেতে মন চাইছে হানি।
— আজ না৷
— তুমি বলেছিলো যেদিন চাইব সেদিন ই…
— বলেছিলাম৷ আপনি সম্পূর্ণ সুস্থ হন।
— আমি সুস্থ আছি তো।
বলেই তৌসিফ দু’জনে কথা আটকে দিলো নিজ উপায়ে। পৌষ ছটফট করতেই ছাড়া হলো। তৌসিফ হাজার অনুনয় করেও কাজ হলো না আজ। পৌষ অনুমতি দিলো না। হতাশার শ্বাস ফেলে তৌসিফ বললো,
— ক্ষুধা লেগেছে তোমার নিশ্চিত?
— হু।
— চলো।
পৌষ উঠতেই ওর শাড়ীর আঁচলটা কাঁধে তুলে দিলো তৌসিফ। কিচেনে ঢুকতেই দেখলো চিকেন বলের প্যাকেট টা রাখা। তৌফিক সেগুলো প্লেটে তুলে ওভেনে দিলো। গরম করে পৌষ’র সামনে এনে রেখে বললো,
— কাল আবার আনিয়ে দিব নে। সবগুলো খেয়ে নাও।
পৌষ ক্ষুধার চোটে মুখে দিলো। রাতেই ওর ক্ষুধা পায় শুধু। পৌষ তৌসিফে’র মুখে ও দিলো অবশ্য। এতগুলো খাওয়া সম্ভব না৷ দু’জন খেতেই আচমকা পৌষ’কে পাজা কোলে তুলে তৌসিফ। পৌষ গলা জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রাখলো৷ দু’জনের মাঝে আর কথা হলো না। অতি যত্নে ওকে ওদের রুমের বিছানায় রাখলো তৌসিফ। দরজা লক করে এসির টেমপারেচার কমিয়ে গায়ে থাকা সাদা শার্টটা খুলে ছুঁড়ে মা’রলো অজানা উদ্দেশ্যে। পৌষ’র কাছে আসতেই পৌষ’র বুকটা টিপটিপ করতে লাগলো।
সময়টা বর্ষাকাল। বাইরে হঠাৎ ই বৃষ্টি শুরু হলো। উত্থাল পাত্থাল আবহাওয়ায় বদ্ধ ঘরে সূচনা হলো এক নতুন অধ্যায়ের। পৌষ’র শাড়ীর আঁচলটা স্থানচ্যুত হলো সেই কখন। গভীর রাতে আশপাশ একদম ই নীরব। তপ্ত শ্বাস ফেলে অস্থির তৌসিফ। পৌষ’র কপালের ছোট্ট পট্টিটা খুলে পরতেই কপাল থেকে র’ক্ত গড়িয়ে পরলো। পৌষ পাশ থেকে হাতড়ে বালিশ পেয়ে তাতেই কপাল মুছলো ও। এদিকে তৌসিফ হুশ হারা। ওর উন্মাদনায় পৌষ যেন মা’রা যাচ্ছে। পৌষ নিজের সবটা উজার করে দিলো। ওর প্রেমে হাবুডুবু খেলো তৌসিফ। পৌষ’র সেই প্রেমসুধা পানে অস্থির তৌসিফ। এদিকে তৌসিফে’র উৎপীড়নে পৌষ হারিয়ে গেলো যেন গহীনে। সেখানে তার নিস্তার নেই। তৌসিফ ছাড়া তার কোন গন্তব্য নেই। পৌষ’র শুরু এবং সমাপ্তি দুটোই যেন তৌসিফ যার আদরে সোহাগে ভেসে যায় পৌষ অতলে গহ্বরে। রাত যেন শেষ হয় না সেই সাথে শেষ হয় না তৌসিফে’র ভালোবাসা। দুটো দেহ এক আজ এই গভীর রাতে তাদের প্রেমের সাক্ষী রাইলো ঠান্ডা বিন্দু বিন্দু বৃষ্টি।
শেষ রাতে তৌসিফ ক্লান্ত হলো বটে। পৌষ’কে টেনে বুকে জড়িয়ে নিতেই পৌষ ভাঙা গলায় নাক টেনে বললো,
— এএএই মামাতো ভাই……
বাকিটা বলার আগেই ওর মুখ বন্ধ করে তৌসিফ। ভারী শ্বাস ফেলতে ফেলতে বললো,
— এর জন্য তুমি দায়ী হানি।
#চলবে…….