প্রেমসুধা #সাইয়্যারা_খান #পর্বঃ৩৬

0
1

#প্রেমসুধা
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৩৬

শশুর বাড়ী তৌসিফ এসেছে। শুধু শশুর বাড়ী বললেও যেন অপরাধ বনে যাচ্ছে। তার ফুপির বাড়ী এটা। সেই ফুপির একমাত্র মেয়েকে বউ করেছে তৌসিফ এই এক কারণ দেখিয়ে বউ তাকে প্রায় সময়ই মামাতো ভাই বলে উত্ত্যক্ত করে। তৌসিফে’র তখন মনটা চায় বউ’কে কামড়ে দিতে। দুষ্ট বউ!
আপাতত তৌসিফে’র অবস্থান খাওয়ার টেবিলে। কান্ড কারখানার শেষ নেই এদের। বলা বাহুল্য হালের প্রথম লাঙ্গল যেদিক যাবে পরেরটাও সেদিকেই যাবে। এই যেমন তৌসিফে’র বউ পাঁজি তার ভাই-বোনগুলো পাঁজির পা ঝাড়া। আসছে পর থেকে টৈ টৈ করেই যাচ্ছে। এদিকে তৌসিফে’র আশেপাশে তীর সীমানায় তার বউ নেই।
এতক্ষণ জৈষ্ঠ্য আর চৈত্র তৌসিফ থেকে বেশ দূরত্ব বজায় রেখে চলছিলো। তাদের পছন্দ নয় এই দুলাভাই। গম্ভীর মুখ ওয়ালা এক বিরাট পুরুষ। তার নামে কম কথাও তো শুনে নি তারা। তাই তো না জানা, না শুনা এক মানুষের উপরেও মানুষের বিরক্তি অথবা রাগ জন্মায়। শুনা কথায় কান না দেয়াই বোধহয় উচিত। জৈষ্ঠ্য আর চৈত্র দুই ভাই যখন তাদের আপার মুখ ভরা হাসি দেখলো। তার পূর্বের উচ্ছাস দেখলো তখনই বুঝে গেলো তাদের পৌষ আপা ভালো আছে। মানুষকে দেখলেই বুঝা যায় সে আসলে মিথ্যা হাসছে নাকি মন থেকে হাসছে। পৌষ মন থেকেই হাসি খুশি। এটা কারোই বুঝতে বাকি নেই। এটা দেখেই যেন বড় চাচা শ্বাস ত্যাগ করলেন। বুকে পাথর চাপা দিয়ে মেয়েটাকে তৌসিফে’র হাতে তুলে দিয়েছিলেন। তৌসিফ যখন প্রথম প্রস্তাব পাঠালো তখন মোটেও তিনি রাজি হতে পারেন নি কিন্তু আদিত্য’র ব্যাপারটা সামনে আসতেই সব কেমন ঘোলাটে হয়ে গেলো। তৌফিক তালুকদার সাক্ষাৎ করতে ডাকলো অতঃপর ই কলিজার টুকরো ভাতিজিতে তিনি হাত ছাড়া করলেন। আজ যদি পৌষ’র মুখে এই হাসি না থাকতো তাহলে কোনদিনও নিজেকে মাফ করতে পারতেন না তিনি। কতজন তো এখনো বলে সে নাকি মা-বাবাহীন এতিম মেয়েটার প্রতি জুলুম করেছে। কথা শুনে আগেপাছে কিন্তু বুকে তখন তীব্র ঝর উঠে তার যা আজ থেকে হয়তো আর উঠবে না।

ইনি,মিনির দুলাভাই পছন্দ হয়েছে। মিশতে তাদের খুব বেশি একটা সময় লাগে নি। এই তো দুই মিনিট লাগলো। আপাতত তারা দুলাভাইয়ের কোলে দুই পাশে বসে আছে। পিহা হাতে একটা বোল নিয়ে এগিয়ে এলো। দেনামোনা করতে করতে বললো,

— দুলাভাই হাত ধুঁবেন না?

তৌসিফ সম্মুখে তাকালো। সুপ্রসন্ন কপাল তার। কুট্টিকুট্টি সব শালী। শালা গুলো তবুও মানানসই। পিহা দাঁত বের করে হাসলো৷ তৌসিফ হাত বাড়িয়ে দিলো। পিহা পানি ঢালতেই জৈষ্ঠ্যও এগিয়ে এলো। চৈত্র বরাবরই ভাইকে অনুসরণ করে। সেও বসে রইলো না। এগিয়ে এসে ধরাধরি করে হাত ধোঁয়ালো ওরা। বড় আর ছোট চাচি একে একে খাবার টেবিলে পরিবেশন করলো। চাচারাও এগিয়ে এলো ততক্ষণে। ইনি,মিনিকে কোল থেকে সরানো গেলো না। ওর মা চোখ গরম দেখালো তবুও দুটো নড়লো না কারণ তাদের আস্কারা দিয়েছে খোদ তৌসিফ। বাচ্চাকাচ্চা তার খুবই প্রিয়। এভাবে কোলে দুটো নিয়ে বসে থাকতে ভালোই লাগছে। কিউট কিউট সফট টির মতো বাচ্চা দুটো। কথাও বলে মুখে মুখে। ভালোই লাগে। পৌষ ওদের আশেপাশেও নেই। কোথায় যে আছে আল্লাহ মালুম। এক মুহূর্তের জন্যও তার বউ ছাড়া চলছে না আর। খেতে বসতেও যেন মুসিবত। একের পর এক খাবার দেয়া হচ্ছে তাকে।

হেমন্ত এতক্ষণে বাসায় ফিরলো। কুমিল্লা থেকে রসমালাই আনিয়েছে। সেটাই আনতে গিয়েছিলো ও। হেমন্তকে দেখে শ্রেয়া উঠে গিয়ে পানি দিলো। হেমন্ত মিষ্টি হেসে পানি খেলো। টেবিলে বসতেই চোখ জুড়ানো দৃশ্য চোখে পরলো। তৌসিফ ইনি, মিনিকে মুখে তুলে খাওয়াচ্ছে। পিহা, জৈষ্ঠ্য আর চৈত্র তাকে ঘিরে বসা। সবগুলোই খাচ্ছে। পৌষ এদিকে নেই। হেমন্ত এদিক ওদিক তাকালো তবে দেখা মিললো না। শ্রেয়া ওর দৃষ্টি বুঝে বললো,

— কি? পৌষ? আছে রুমে। সেই গিয়ে ঢুকলো আর বের হয় নি।

— খাবে না?

— কিছু তো বললো না।

— আচ্ছা তুমি বসো। নড়বে না। আসছি আমি।

হেমন্ত উঠে গেলো। পৌষ’র রুমে ঢুকার আগে আজ নক করলো। পৌষ উঁকি দিলো। বারান্দায় ছিলো সে। ভাইকে দেখেই ডাকলো,

— হেমু ভাই?

হেমন্ত পা বাড়ালো। রুমে ঢুকে বললো,

— নিচে চল।

— নক করলে যে?

— বড় হয়েছে না আমার বোন?

— হু।

— চল।

— যাব না।

— কেন?

— কেউ পাত্তা দেয় না।

— এত সাহস! কার?

— সবার।

বলেই আঙুল গুনে গুনে অভিযোগ করলো। আসছে থেকে তৌসিফ তৌসিফ করে একেকজনের জান গলায় আটকে যাচ্ছে। কই এতদিন পরে পৌষ এসেছে তাকে কোলে তুলে নাচবে কিন্তু না তারা ব্যস্ত জামাই নিয়ে। থাক তাহলে সবাই!

হেমন্ত চুপচাপ অভিযোগ শুনলো। বোনের হাত ধরে বললো,

— এই যে ভাই পাত্তা দিচ্ছি। চল।

পৌষ হাটা দিলো ভাইয়ের পিছনে। টেবিলে যেতেই ওকে নিয়ে বসলো। তৌসিফ তখনও খায় নি। শালীদের খাওয়ালো এতক্ষণ। ইনি,মিনি আর খাবে না তাই চুপচাপ করে মুচড়ে নেমে গেলো। পিহাও আর খাবে না। হেমন্ত পৌষ’কে নিয়ে বসতেই চাচি নতুন প্লেট দিতে চাইলো তৌসিফ’কে। তৌসিফ হাসলো অল্প। বললো,

— এটাতেই খাচ্ছি। সমস্যা নেই।

চাচিরা অবাকই হলেন। পৌষ ফিসফিস করে শ্রেয়ার কানে বললো,

— দেখলে আমার জামাই কত ভালো।

শ্রেয়া চাপা হেসে বললো,

— দেখলাম।

পৌষ খাওয়া শুরু করলো। তৌসিফ দেখলো ওদের ভাই বোনদের খাওয়া ভিন্ন। একেকজন একেকজনের প্লেটে এটা ওটা পাস করে। ভালোবাসা তাদের ভিন্ন। বউকে আজ তৌসিফে’র জোড় করতে হলো না হেমন্ত সহ বাকিরা ঠেলে খাওয়াচ্ছে। চাচি মাঝ থেকেই এক প্লেট খাবার ফ্রিজে রেখে বললো,

— রাতে খেয়ে নিস।

পৌষ মাথা নাড়লো। তৌসিফ নিজের প্লেটে আধ খাওয়া কাবাব পৌষ’র মুখে দিলো। পৌষ খেতে খেতে বললো,

— আপনার আর কিছু লাগবে?

তৌসিফ না করলো। হেমন্ত উঠতে উঠতে বললো,

— দই দাও আম্মু।

দইয়ের নাম করে পদে পদে মিষ্টির আইটেম সাজানো টেবিলে বসলো ওরা। তৌসিফ এসব খুবই কম খায়। সুগার সে এভয়েড করে তবুও রসমালাই খেলো দুটো। ইনি, মিনি তখন আবার কোল জুড়ে বসেছে। চৈত্র মাঝে বললো,

— দুলাভাই চলুন বাড়ী ঘুরে দেখাই।

তৌসিফ দুই হাতে দুই শালী কোলে তুলে নিলো। তার এখন হাটা দরকার।
ওরা যেতেই চাচি চেপে ধরলো পৌষ’কে। পৌষ অবাক চোখে তাকিয়ে বললো,

— কি?

শ্রেয়া গলা খেঁকিয়ে আস্তে করে বললো,

— তোরা ঠিকঠাক আছিস?

পৌষ অবুঝ ভাবে বললো,

— মানে?

— মানে জামাই ঠিক?

— আবার জিগায়? জামাই আমার এক নাম্বার। নাম্বার ওয়ান শাকিব খান।

শ্রেয়া ওর মাথায় গাট্টা মা’রলো। চিমটি কেটে বললো,

— মানে তোরা কিছুমিছু করেছিস?

পৌষ বুঝলো। লজ্জাও পেলো। উঠে দাঁড়িয়ে বললো,

— হু।

শ্রেয়া সহ চাচিদের মুখে হাসি দেখা মিললো। শ্রেয়া হাসিমুখেই বললো,

— তৌসিফ ভাই বাচ্চা পছন্দ করে অনেক। সময় ভালো নিয়ে নে একটা।

পৌষ’র হঠাৎ ই মনে পরলো তায়েফা আপার কথা। সেই বিয়ের প্রথম দিন শুনেছিলো সে এটা।

#চলবে…

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here