প্রেমসুধা #সাইয়্যারা_খান #পর্বঃ৩৪

0
3

#প্রেমসুধা
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৩৪

ভোর কেটেছে সেই কখন অথচ ঘুম ভাঙে নি চড়ুই যুগলের। বাইরের চড়ুই গুলো কিন্তু বারান্দায় হাজির। তারা নিজেদের শব্দে কিচিরমিচির করছে। এক ফালি রোদ পর্দা ভেদ করে রুমে উঁকি দিলো। রুমের ভেতরটা একদম ঠান্ডা। কনকনে ঠান্ডা বললেও ভুল হবে না বোধহয়। তৌসিফ তালুকদার এভাবেই ঘুমায়।রুম সাইবেরিয়া বানিয়ে সে গায়ে কম্ফোটার নিয়ে ঘুমায়। মাঝে মধ্যে খালি গায়েই শুয়ে থাকে। আজকের বিছানার দৃশ্যটা অবশ্য ভিন্ন। দুটো কম্ফোটার দিয়ে ঢাকা দু’জন। আপাত মস্তক ঢাকা পৌষ’র। তার অস্তিত্ব বুঝা দায়। সে যেন এখানে নেই। তৌসিফে’র মাথাটা শুধু দেখা যাচ্ছে। তার বুকের একদম মধ্যিখানে পৌষ’র মাথাটা নেয়া। কোনমতে ফাঁকফোকর দিয়ে শ্বাস নিচ্ছে ও। তৌসিফে’র ঘুমের মাঝে পরন্ত নিঃশ্বাস গুলো উষ্ণতা ছড়াচ্ছে রৌদ্রোজ্জ্বল বেলায় পৌষ’র মুখে। আদরে পৌষ গুটিয়ে যায়। তার ক্লান্ত দেহে ঘুম আজ খুব করে হানা দিয়েছে। সবার আগে অবশ্য ঘুম তৌসিফে’র ই ভাঙলো। মর্নিং ওয়াকে যাওয়াটা তার স্বভাব। জিম মিস দেয়া হয় না সচরাচর। একটা লাইফ স্টাইল আছে তৌসিফ তালুকদারের। এখন তো দায়িত্ব যেন আরো বাড়লো। গতরাতে চড়ুই পাখি আটকেছে সে খাঁচায়। তার হৃদ কুঠুরিতে করা ছোট্ট এক সোনার খাঁচা যাতে ধরে বেঁধে সে বন্দী করেছে এক পাখি। সেই পাখি বড়ই রঙিন। প্রতিনিয়ত তৌসিফ’কে কাল সাত রঙের দেখা দিয়েছে। জমিয়ে রাখা সকল ভালোবাসা এলোমেলো ভাবে বিলিয়ে দিতে উৎসাহিত করেছে। তৌসিফ পা’গল বনে গিয়েছিলো। উন্মাদের মতো আচরণ করেছে সে। পৌষ আস্কারা দিয়েছে অবশ্য।
তৌসিফ কিন্তু অবাক ও হয়েছে। তার বউটা এতটা সাপোর্ট তাকে দিবে তা ইহকালে সে ভাবে নি কিন্তু সে এটাও মানে তার বউটা ঠিক নেই। রাত থেকেই কিছুটা অসুস্থ বটে। এমন তাগড়া জোয়ান পুরুষ সামলানো তার জন্য কষ্টসাধ্য। তৌসিফ সেটা জানে এবং বুঝে তবুও কিভাবে জানি অবুঝ বনে গেলো। এতদিনের জমিয়ে রাখা প্রেম সে উথলে দিয়েছিলো। পৌষ একেবারে জন্য ও বাঁধা দেয় নি। তৌসিফের ভাবতেই অবাক লাগে যেন।

চোখ খুললো তৌসিফ পুরোপুরি ভাবে। অনুভব হচ্ছে বুকের মধ্যে থাকা ঘুমন্ত পাখিটাকে। সে একদম গুটিয়ে আছে। সকালেই তো ঘুমালো পাখিটা। তৌসিফ ছাড় দেয়ার মানুষ না৷ সে ছাড় দেয় ও নি। সবটুকু প্রেমসুধা সে পান করেছে। চোখ খুলেই মুচকি হাসলো তৌসিফ। হাজার হোক জোয়ান পুরুষ সে। তার চাহিদা ছিলো। পৌষ’কে পেতে কতবার যে মরিয়া হয়ে উঠতো কিন্তু পাওয়া হতো না। আজ যেন সে তার সবটুকু সুখ পেলো। মাথাটা ভেতরে ঢুকিয়ে পৌষ’র কপালে চুমু দিলো একটা। বউ তার গভীর ঘুমে মগ্ন। তৌসিফ গভীর ভাবে নিজের মাঝে লেপ্টে নিলো ওকে। হঠাৎ ই খেয়াল বউটার শরীর গরম। হাত বাড়িয়ে এসির রিমোট নিয়ে টেমপার বাড়িয়ে দিলো ও। গায়ে হাতড়ে দেখলো শরীরটাও অল্প গরম। ভোরে গোসল করাতেই কি এমন হলো? তৌসিফে’র মাথায় কিন্তু চিন্তা ঢুকে গেলো। বউয়ের শরীর খারাপ থাকা যাবে না। বউ থাকবে ফিটফাট। ল্যাদানো বউ হলে তো হবে না।
তৌসিফ আস্তে করে ডাকলো,

— পৌষরাত?

উত্তর এলো না। আসবে কিভাবে তৌসিফ ডেকেছেই অনেক ধীরে। ঠোঁট কামড়ে আবার ডাকলো ও,

— হানিই। ওয়েক আপ না প্লিজ। খেতে হবে তো। মেডিসিন নিতে হবে। জ্বর আসছে।

পৌষ বুকে ঘাঁটি বেঁধে মুখ দিয়ে ঘঁষে সেখানেই সেটিয়ে রইলো। তৌসিফে’র মায়া হলো বটে কিন্তু তুলতে তো হবে তাই আস্তে করে মুখটা নামিয়ে গলায় ছোট্ট একটা কামড় বসালো। ঘুমের মাঝেই কেঁদে উঠলো পৌষ। তার চোখ খুলছে না। টেনে চোখ মেলার আগেই গলায় অজস্র চুমু বসলো। কানে শব্দ এলো,

— সরি সরি হানি।

চোখের কার্নিশ বেয়ে পানি গড়ালো। পৌষ চোখ খুলতেই দেখা মিললো তৌসিফের। একদম কাছাকাছি তার। হঠাৎ ই লজ্জা এসে ভীর জমালো ওর মাঝে। গত রাতের কথা স্মরণে আসতেই যেন লজ্জায় ম’রে যেতে মন চাইলো পৌষ’র। বালিশে মুখ গুজে দিতেই ওর পিঠে মাথা রাখলো তৌসিফ। ঘাড়ে হাত বুলিয়ে নরম স্বরে বললো,

— উঠবে না হানি? খাওয়া দরকার তোমার।

পৌষ মুখে শব্দ করে,

— উহুম।

— কোন উহুম না পৌষরাত। উঠো। কাম ফাস্ট।

বলেই দুই হাতে টেনে তুললো ওকে। পৌষ’র পরণে তৌসিফের ই এক শার্ট। তখন তারাহুরোয় তৌসিফ ই পরিয়েছিলো। শীতে কাঁপছিলো পৌষ। তাই তো বউকে এত উষ্ণতায় বুকে পুরে রেখেছিলো ও।
গলার দিকে দুটো বোতাম খোলা। একদম পাক্কা ছ্যাঁচড়ার ন্যায় উঁকি দিলো তৌসিফ। পৌষ দুই হাতে চেপে ধরলো সেখানে। তৌসিফ হাত টেনে সরাতে চাইলেও পৌষ দিবে না। তৌসিফ বারবার বলছে,

— হানি দেখাও। আমি ই তো। আহ্হা তোতা পাখি না তুমি আমার?

পৌষ কথা না বলে তৌসিফ’কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে উঠতে নিলেই ধপ করে বসে পরলো। পেছন থেকে তৌসিফ ধরে উষ্ণ গলায় বলে উঠলো,

— ঠিক আছো?

পৌষ কথা বলে না। সেই গতরাত থেকে চলছে এটা। কথা সে বলছেই না। তৌসিফ পেছন থেকে ওকে আলিঙ্গন করলো। মাথায় চুমু দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

— খারাপ লাগছে?

পৌষ মাথা নামালো। তার খারাপ লাগছে না কিন্তু কেমন লাগছে তাও জানা নেই ওর। এলোমেলো এক অনুভূতি। মা নেই। কোন কাছের বান্ধবী নেই। না আছে বড় কোন বোন। অনেক কিছুই তার অজানা যার সরাসরি দেখা সে গতরাত পেয়েছে। তৌসিফ তাকে যথাযথ সাপোর্ট দিয়ে সামলেছে কিন্তু পরিস্থিতির চাপে পরে বুঝা আর পূর্ব জ্ঞান থাকা দুটোই ভিন্ন জিনিস।
পৌষ শ্বাস ফেললো। তৌসিফ ওকে ছেড়ে সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। পৌষ’র মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত স্বরে বললো,

— তাকাও আমার দিকে।

নজর তুলেও নামিয়ে ফেলা হলো। তৌসিফ বললো আদর লাগিয়ে,

— কি সমস্যা হচ্ছে আমাকে বলো পৌষরাত।

পৌষ’র চোখ ভিজে গেলো। তৌসিফ বুঝে। পৌষ’র মাথায় হাত রেখেই বলে,

— যাকে ভালোবাসি তার সবটা আমার নখদর্পনে পৌষরাত। আমার জানা আছে তোমার কি সমস্যা হতে পারে। সে অনুযায়ী সবটা সামলেছি। এখন কথা বলো তুমি। আমাকে জানাও কি সমস্যা হচ্ছে এখন? নাকি আমার ভালোবাসা সেই বিশ্বাসটুকু অর্জন করতে ব্যর্থ?

পৌষ আচমকাই তৌসিফে’র কোমড় জড়িয়ে ধরে। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে মিনমিন করে জানায়,

— ব্যথা হচ্ছে।

তৌসিফ ঢোক গিললো। পৌষ’র মাথাটা জড়িয়ে রাখলো কিছুক্ষণ অতঃপর মাথা তুলে চোখ মুছে পাজা কোলে তুলে ওয়াশরুমে নিতে নিতে বললো,

— আজই ঠিক হয়ে যাবে। আগে ফ্রেশ হও।
.
আজ বুয়াদের হাতের নাস্তাই কপালে জুটলো। তৌসিফে’র বউ রান্নার সময় পায় নি। না সে পারতো। রুমে নাস্তা এলো দুজনের। তৌসিফ মুখে তুলে খাওয়ালো পৌষ’কে। সমস্যা একটাই রাত ভরে যার ক্ষুদ্র লাগে দিন ভর তার খাওয়া নিয়ে সমস্যা।

পৌষ’কে খায়িয়ে মেডিসিন দিলো তৌসিফ। কফি হাতে বারান্দায় দাঁড়াতেই পুকুরে নজর গেল। কচুরিপানা জমেছে অনেক। পানি দেখা যাচ্ছে না। পরিষ্কার করাতে হবে। পৌষ’র অনেক ইচ্ছে এখানে থাকা নৌকায় এই ছোট্ট পুকুর ঘুরবে ও। বউয়ের কোন ইচ্ছে অবশ্য তৌসিফ অপূর্ণ রাখবে না। ফোন হাতে তুলেই আগে পুকুর পরিষ্কারের আদেশ দিল ও।
পরবর্তী কলটা করলো রুমে ঢুকে।
পৌষ তৌসিফে’র আরেকটা ফোন ঘাটছিলো। হঠাৎ কথায় চমকালো ও। তৌসিফ গম্ভীর কণ্ঠে কাউকে বলছে,

— ওকে যেভাবেই হোক রাজি করাও। প্রয়োজনে কপালে পি*স্তল ধরো। সোহার বিয়ে এই মাসেই হবে। আমার সংসারে অশান্তি লাগানো ছুটাচ্ছি আমি। শুধু মাত্র কাল ভালো কিছু হয়েছে নাহয় আমি দেখতাম তৌসিফ তালুকদার কি জিনিস।

#চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here