“ভাবি আমার সময় লাগবে।এসবের জন্যে আমি মোটেও প্রস্তুত নই”
“আর কতো সময়?তোমাদের বিয়ের অলরেডি ৭ দিন পার হয়ে গেছে পাখি।তোমার কি মনে হয় না এবার একটু বেশীই করে ফেলছো?কোন ছেলে বিয়ের ৭ দিন পর্যন্ত এই গ্যাপটা মেনে নিবে না।”
“ভাবি আমার ভয় করে,ভীষণ ভয় করে”-বলেই ডুকরে কেঁদে উঠলো পাখি।।ভীতরে অজানা ভয়ের আতঙ্কে বুক বার বার কেঁপে উঠছে তার
“ভাবি আমার এখন মনে হচ্ছে ও ওর ভার্জিনিটি নষ্ট করে ফেলেছে “-রাগে চোয়াল শক্ত করে চোখ মুখে খিচে কথাটা উগড়ে দেয় শান।সাথে সাথে দু হাতে কান চেপে ধরে জোড়ে কেঁদে ওঠে পাখি।
“শান,এসব কি ধরনের কথাবার্তা!তুমি না শিক্ষিত একজন ছেলে তারউপর ডাক্তার!তোমার মুখে এসব কথা মানায় না “-মুখ ঘুরিয়ে কথাটা বলে শানের ভাবি।
“এই মাঝরাত্রে আর সিন ক্রিয়েট করো না। ওকে ওর মতো ছেড়ে দাও।”
“ভাবি ও সকলের চোখে আমায় কি প্রমান করলো আজ?নিজেকে কি মনে করে ও?স্বাভাবিক কথাও তার সাথে আমি বলতে পারি না।ও সিটকে সরে যায়।কি মনে করে নিজেকে ও?আয়নায় কখনো দেখেছে নিজেকে?ও কি জানে এই ফয়সাল শানের এক রাতের সঙ্গী হবার জন্যে কতো মেয়ে চাতক পাখির ন্যায় চেয়ে আছে!ভেবেছিলাম এরেঞ্জ ম্যারেজ তাই সবটা মানতে ওর সময় লাগবে,তাই বলে ও এভাবে রিএ্যাক্ট করবে!”-
শানের এমন রাগ আগে কখনোই কেউ দেখে নি।ভাবতেও পারছে না শান এসব ভাষায় কথায় বলছে।যে ছেলে শব্দ গুনে বাক্য ব্যয় করত সে কিনা গড়গড় করে এভাবে কথা বলছে!রুমের বাহিরে দাড়িয়ে প্রত্যেকটা মানুষ যেন স্তম্ভিত আজ।
রাগে গজগজ করে রুম থেকে চলে গেল সামিহা।দাদি, বোন বা ভাবি সম্পর্কীয় প্রত্যেকটা মানুষই রেগে আছে পাখির উপর।রাগবে না ই বা কেন!অনেকবার অনেকভাবে বুঝানোর পরও বিয়ের ৭ দিন হলো অথচ পাখি এখনো তার বরকে কাছে ঘেঁষতেই দিচ্ছে না।এটা কেমন কথা?
সবাই এখন সন্দেহের চোখে দেখছে পাখির আচার আচরন।প্রত্যেকটা সদস্যের মুখ যেন থমথমে।শুধু একজন মাত্র ব্যক্তিছাড়া।পাখির শ্বাশুরি মা।
নীরবে চোখের অশ্রু বিষর্জন দিচ্ছে মেয়েটা একটু আগে ঘটা কাহিনী ভেবে।দুই বাহুতে চেপে ধরাতে ব্যথায় কাবু হয়ে গেছে পাখি।যেন হাতে কেউ বিশাল বড় হাতুরি দিয়ে মেরেছে।কাঁদতে কাদতে ফ্লোরেই ঘুমিয়ে পরেছে রাতে।আর শান রক্তচক্ষু নিয়ে বাড়ি ছেড়েছে আর ফেরে নি।
🌸🌸
খুব একটা ঘটা করে তাদের বিয়েটা হয় নি।পেন্ডেমিকের কারনে স্বল্প পরিসরে যতোটুকু পারিবারিক ভাবে পারা যায় বিয়েটা সেরে নিতে হয়েছে।না হলে দেশের প্রথম সারির হার্ট সার্জন ফয়সাল আহমেদ শানের বিয়ে এভাবে কখনোই হতো না।দেশে বেশ নাম ডাক তার।তার নিজ শহর রংপুরে তো বেশ চড়াও ভাবে নিজেকে দাড় করাতে সক্ষম হয়েছে সে।দেখতে যেমন সুদর্শন তার ব্যক্তিত্বও তেমনি নজরকাড়া।ছেলেদের কাছে সে একজন আইডল।অথচ তার বিয়েটা হলো একদম তারই বিপরীত একজন মানুষের সাথে।যার না আছে কোন রূপ সৌন্দর্য না আছে শানের পাশে দাঁড়াবার কোন যোগ্যতা।
বিয়েটা হয়েছে শানের মায়ের পছন্দে।গ্রাম থেকে তিনি নাকি খাঁটি রত্ন ছেলেকে বউ হিসেবে উপহার দেবেন।সে উদ্দেশ্যেই গ্রামের আত্নীয়দের মেয়ে দেখার তারা দিয়েছিলেন।শানেরও সে ব্যপারে কোন দ্বিমত নেই। মায়ের বাধ্য ছেলে কিনা!
🌸🌸🌸
*ফিরে দেখা*
ভ্যাপসা গরম তার সাথে কাঠফাটা রোদ পড়ছে ইদানিং। এমনি এক সকাল বেলা বোন হামিদার বাড়ি উঠেছেন শানের মা শর্মিলা বেগম।তার উদ্দেশ্য বোনকে সাথে নিয়ে হুটহাট করে মেয়ে দেখে বেড়ানো যাতে ক্যামিকেলের এ যুগে মেকাপের সাদা আস্তরনে মেয়েরা নিজেকে ঢাকার সুযোগ না পায়।শহরের ছাপ ইদানিং গ্রামে পরেছে কিনা!তাই তার এমন ধ্যানধারণা।
“আস্সলামু আলাইকুম চাচি, “-গেইট খুলে ঠোঁটে অমায়িক হাসি রেখে সালাম জানায় পাখি।
“ওয়া আলাইকুমুস সালাম মা, এক গ্লাস পানি দে মা”-হাহুতাশের স্বরে পানি আনতে বললেন হামিদা বেগম।বলেই পাখিদের বারান্দায় একপ্রকার ঠেস মরে বসে পরেন তিনি।
পাখির গ্রামসম্পর্কীয় চাচি হোন হামিদা বেগম। কুশল বিনিময়ের এক পর্যায়ে পাখি জানতে চায় তার পাশের ভদ্র মহিলা কে?
হামিদা বেগম চট জলদি উত্তর দেন যে, উনি তার বড় বোন রংপুরে বাড়ি।আর হার্ট সার্জেন্ট ফয়সাল আহমেদ শানের মা।
“ওহহহ আচ্ছা”-অবাক হয়েই মুখের অমায়িক হাসি এলিয়ে জবাব দেয় পাখি।
শানকে চেনে না এমন মানুষ মনে হয় রংপুরে একটাও নেই।তার সুনামের সুবাদেই সবাই তাকে জানে।পাখিরও ব্যতিক্রম হলো না।
তাদের বসতে বলে নাস্তার আয়জন করে ফেলে মেয়েটা।পাখির স্বভাবসুলভ আচরনে কোন কথা না বলে প্রথম থেকেই বিমুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে ছিলেন শর্মিলা বেগম।বেশ মনে ধরেছে মেয়েটাকে।আড়চোখে বোনের দিকে তাকিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন শর্মিলা বেগম।হামিদা বেগমের বুঝতে বাকি রইলো না পাখিকে তার বোনের বড্ডো মনে ধরেছে।গোল গোল চোখ করে অবাক প্রশ্ন মাখা চোখে চেয়ে আছেন বোনের দিকে।
“পাখিরে তোর মা কই, একটু ডাক না মা।আমার বোনটা বেড়াতে এসেছে তোর মায়ের সাথে একটু দেখা করিয়ে চলে যাই”-হাসফাস করে পাখিকে সেখান থেকে একপ্রকার ভাগিয়েই দিলেন হামিদা।কারন তাকে জানতেই হবে এতো এতো মেয়ে দেখার পর কেন তার বোনের নজর পাখির উপর আটকে গেলো।আটকাবার তো কথা নয়।পাখিকে শ্যামলা বলা যায় না। খাঁটি বাংলায় যাকে কালো বলে।তার উপরই কিনা তার বোনের নজর আটকালো!
পাখি হন্তদন্ত বের হলো রুম থেকে তার মা কে ডাকতে। বেশদূর যেতে হয় নি।পাশের বাড়িতেই গেছিলেন পাখির মা রাশিদা বেগম।
“আপা এসবের মানে কি? তোমাকে এতো এতো মেয়ে দেখালাম আর তুমি কিনা পাখির উপরই থমকে গেলে?তোমার মাথা টাথা ঠিক আছে তো?-চাপা চাপা গলায় হামিদা বোনকে প্রশ্ন করলো।
শরবতের গ্লাসে এক চুমুক দিয়েই চোখ বন্ধ করে ফেলেন শর্মিলা।এটা তো শরবত নয় যেন তাকে জাদুকরী পানীয় দেয়া হলো।যে কেউ দেখে বলতে পারবে কয়েক বছরের দূঃচিন্তার পর্দা যেন সরে হালকা হলো তার চেহারা থেকে।
“আপা কিছু বলবি, চুপ করে আছিস কেন”-এক প্রকার ঝাকিয়েই প্রশ্ন করে হামিদা।
“হামিদা আমি আমার শানের জন্যে উপযুক্ত জীবন সঙ্গিনী পেয়ে গেছি রে।সাথে সাথে আমার ঘরকে মুষ্ঠিবদ্ধ রাখার চাবিকাঠিও পেয়েছি”-বিস্কুটের এক কোনা মুখে দিয়ে বলে উঠলেন শর্মিলা।
হামিদার যেন এসব কিছু ঠিক হজম হচ্ছিলো না।মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে রেখে বিড়বিড় করেই চলছে সে।
এর মাঝেই পাখি ওর মাকে নিয়ে বাড়িতে ঢোকে।হামিদাকে দেখে যেন চোক্ষু চড়কগাছ রাশিদার।পাখি তাদের গল্পের মাঝেই চুপ করে মনোযোগ দিয়ে পুরনো দিনের গল্প শুনছিলেন।আর তার দিকে অপলক ভাবে চেয়ে রয়েছেন শর্মিলা।
“ভাবি আজ তাহলে আসি, অনেক গল্প হলো।পুরনো অনেক কথাই উঠলো”-হকচকিয়ে কথা গুলো বলে বোনের হাত টেনে নিলেন হামিদা।বোনের হাবভাবে তার এ বাড়িতে দুদন্ড থাকার ইচ্ছে নেই।
“আপা আমরা আজ আপনার বাড়িতে দুপুরে খাবো।খাওয়াবেন না?আর পাখি মা রান্নাটা তুমিই করবা,পারবা না?”
শর্মিলার কথায় পুরো ঘর যেন নীরবতায় ছেঁয়ে গেলো।
হামিদা যেন আকাশ থেকে পরলো।মূলত পাখির রান্না খাবেন আর তার আচরন আরো গভীর ভাবে পরোখ করতেই শর্মিলার এ আবদার।
“কেন নয় আন্টি?আপনি আমায় ২ টা ঘন্টা সময় দিন আমি আমাদের সাধ্যমতো আপনাকে দুপুরে খাওয়াবো”-উৎফুল্ল কন্ঠে বলে উঠলো পাখি
দিনের বেশির ভাগ সময় পাখিদের বাড়িতে থেকে দুপুর গড়িয়ে বিকেলে বাড়ির পথে পা বাড়ালেন শানের মা।তিনি এখন নিশ্চিন্ত।বোন হামিদার বাড়িতে রাত কাটাবার কথা থাকলেও তিনি আর দুদণ্ড থাকলেন না সেখানে।ড্রাইভারকে তাড়া দিলেন গাড়ি স্টার্ট করতে।কারণ তাকে খুব তারাতারি বিয়েটা সেরে নিতে হবে।পাখির মতো মেয়েকে কিছুতেই হাত ছাড়া করা যাবে না।
এদিকে রাত গড়িয়ে সকাল হলো হামিদা বেগমের কোনকিছুই মাথায় ঢুকছে না। কি করে তার বোন তার ওমন সোনার টুকরো ছেলের জন্যে পাখিকে পছন্দ করলো!মানছি পাখি উচ্চশিক্ষিতা,ভদ্র, নম্র,অমায়িক একটা মেয়ে তাই বলে তার ওমন সুন্দর ভাগ্নের সাথে কিনা পাখি!পাখির চামড়াটা যে শানের সাথে বড্ডো বেমানান।আর শানের ব্যক্তিত্বের সাথেও পাখির কোন মিল নেই।না না এ সম্পর্ক কিছুতেই মানতে রাজি না তিনি।কিন্তু তার বোনের জেদ সম্পর্কেও তিনি অবগত।যা সে ভাবে তা সে করেই ছাড়ে।ফোনের রিংটোনের কড়া আওয়াজে ভাবনায় ছেঁদ পরে হামিদার।
শানের মা শর্মিলা ফোন করেছে।দ্বিধাদ্বন্দ্ব একপাশে রেখেই কল রিসিভ করে হামিদা এক শ্বাসেই সাফ সাফ জানিয়ে দেয়ে পাখির সাথে শানের কোন সম্পর্কই সম্ভব নয়।অন্তত হামিদা এ ঘটকালি করবে না।
কিন্তু কয়েক মূহূর্তের মাঝে অবাকের চরম সীমা পৌঁছে যায় হামিদার মুখের রং চোখের ভাষা…..
[আস্সলামু আলাইকুম। আমি জানি না গল্পটা আপনাদের কেমন লেগেছে।লেখালেখির জগতে খুব একটা অভিজ্ঞতা অামার নেই।বলতে গেলে নতুনই।ভুল ভ্রান্তি ক্ষমা করবেন।জানাবেন কেমন লাগলো]
চলবে….
#আসক্তি
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম