প্রণয়ের_সুর #পর্ব১০ #মহুয়া_আমরিন_বিন্দু

0
18

#প্রণয়ের_সুর
#পর্ব১০
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
গাড়িতে আজ ভরপুর রাস্তা,ট্রাফিকের অবস্থা বরাবরের মতোই বিদঘুটে। দলে দলে ছুটে চলেছে শিক্ষার্থীরা, পাশাপাশি তাল মিলিয়ে হাঁটছে তাদের বাবা, মা,ভাই, বোন,কিংবা পছন্দের মানুষ। মনোযোগ দিয়ে এসব দেখতে ব্যস্ত নেহা,বৃষ্টি কিছুটা চিন্তিত, পরীক্ষার আগে একটু বিচলিত হওয়াটা স্বাভাবিক তাদের সাথে যাচ্ছে সাব্বির,জেরিন।বড়রা সবাই আসতে চাইলেও ওদের মানা করে দিয়েছে ওরা অযথা ভিড় করে কি লাভ। এমন তো নয় পরীক্ষা তাদের উপর নির্ভর করে এতোদিন যা পড়েছে তার উপর ভিত্তি করেই সব হবে।নেহার একটু মন খারাপ জানে সে পাষা”ণ হৃদয়ের মানুষটি তার কথা ভাবে না তার পর ও মন কেনো যেনো বার বার ওই মানুষটিকেই চায়।
পরীক্ষা নিয়ে একটুও দুশ্চিন্তা নেই নেহার,সে ভীষণ উদাসিনী আনমনা,রাস্তার ট্রাফিক লাইট দেখছে চুপচাপ। সাব্বির ওদের কে সাহস দিতে নানান কথা বলছে।
নেহা নিজ মনেই বলে উঠে–,,যদি বাজবেই না প্রণয় বীণা তবে কেনো সুর তুলো ও বেহায়া মন!

গাড়ি এসে থামলো কলেজ গেইটে,নেহা,বৃষ্টির সিট এক সাথে পড়েছে বলে দুজন বেজায় খুশি।
গেইট পেরিয়ে ঢুকছে অনেকে সময় বাকি আরো কিছুটা,ট্রাফিকের কথা চিন্তা করে সময়ের আগেই বেরিয়েছে ওরা।
নেহা গেইটের এক পাশে তাকিয়ে দেখলো মিহির দাঁড়িয়ে বৃষ্টি এখনো তাকে দেখতে পায়নি।নেহা বৃষ্টি কে খোঁচা মেরে বললো–,,দেখো দেখো বৃষ্টি তোমার প্রেমিক সাহেব চলে এসেছে,তোমার পরীক্ষা তো এবার ঝাক্কাস হবে!

বৃষ্টি মুখ ভোঁতা করে বললো–,,ভাইয়াও আস,,,
বৃষ্টির মুখ থেকে কথা কেঁড়ে নিয়ে নেহা বললো

,,মিহির ভাইয়ের তো প্রেমিকা আছে তাই সে এসেছে,তোর ভাইয়ের এখানে কে আছে যার জন্য সে আসবে!

নেহা বৃষ্টি কে মিহিরের সাথে কথা বলার জন্য ছেড়ে সামনে যাবে ভাবে তখন শক্তপোক্ত কিছু একটার সাথে গিয়ে ধাক্কা খায়,নেহা নিজের নাক ঘঁষে অনবরত, কোন খাম্বা চলে আসলো সামনে,পরীক্ষার আগে মেজাজ টাই দিলো খারাপ করে।নাক টা মনে হয় ভেঙ্গে গেছে এবারে।
নেহার বিরক্ত তে কুঁচকে যাওয়া মুখশ্রী একবার দেখলো কেউ খুব মনোযোগ দিয়ে।নেহা নাক ঘঁষা বাদ দিয়ে সামনে থাকা মানুষটাকে দু চার কথা বলার জন্য মুখ খুললো,নেহা হা হয়ে তাকিয়ে আছে কিছু বলতে যেনো ভুলে বসেছে

নিখিল পকেটে দুহাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে।নেহার দিকে তাকিয়ে চমৎকার হাসলো
,,বৃষ্টি কে করা তোর প্রশ্নটার উত্তর আমি দিয়ে দিচ্ছি তোকে নেহা!
মিহিরের এখানে প্রেমিকা আছে আর আমার আছে বউ!

নেহা চমকালো থমকালো নিখিল তাকে বউ বলে সম্বোধন করলো!
নেহা ভেবেই নিয়েছে নিখিল তাকে এতোদিন ইগনোর করেছে,এখন সে আর এই ছেলেকে এতো সহজে পাত্তা দিবে না।নেহা ওসব কথা ভুলে চট করে বললো

,,আপনার বউয়ের কাছে আসেন না হয় পর নারীর কাছে আসেন তাতে আমার কোনো মাথা ব্যাথা নেই।আপনি বার বার আমার নাকের উপর হাম’লা চালাচ্ছেন কেনো ওইটা আগে বলুন!

সাব্বির সরু চোখে তাকালো এতোক্ষণ প্রেমিক যুগল দের প্রাইভেসি দিতে কিছুটা দূরে দাড়িয়ে ছিলো ওরা।
সাব্বির জেরিনের হাত টেনে এনে বললো
,,জেরিন বইন জলদি চল রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি!

জেরিনের মতামত নেওয়ার প্রয়োজন সাব্বিরের কোনো কালেই পড়ে না সে টেনে হিঁচড়ে নিয়েই আছে, মুখে বলে এটা নাকি ফর্মালিটি তাই একবার বলেছে!

মিহিরের সাথে কথা রেখে বৃষ্টি এদিকে তাকালো মিহিরও,সবার উৎসুক দৃষ্টির তোপের মুখে নিখিল।

মিহির সন্দিহান কন্ঠে প্রশ্ন করলো–,,কি করেছে এই গা’দা টা?

নেহার সোজাসাপটা জবাব–,, আর বলবেন না মিহির ভাইয়া,উনি একটা ডাকা’ত!রাত দুপুরে রুমে ঢুকে আমার নাকে হাম’লা চালিয়েছিলো তার উপর আবার এখন পারলে আমার নাকটা ভেঙ্গে হাতে ধরিয়ে দেয়।এতো কিসের শত্রুতা আমার নাকের উপর উনার?

নিখিল ভরকালো তার মানে নেহা তখন সজাগ ছিলো!
নিখিল সরু চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো
,,তার মানে তুই রাতের বেলা সজাগ ছিলি ওইদিন?

,,না!কিন্তু একটা আলুর বস্তা যদি কোনো মানুষের উপর এসে পড়ে তো সজাগ হওয়াটা স্বাভাবিক!

নিখিল চোখ রাঙানি দিয়ে বললো–,,তুই আমাকে আলুর বস্তা বলছিস, নেহা তোকে আমি,,,!

নিখিল ধরার আগে নেহা কেটে পড়েছে,সাথে বৃষ্টি ও গেলো গেইট পেরিয়ে ভিতরে ঢুকে গেলো ওরা।মিহির চেপে ধরেছে নিখিল কে,,শা’লা ডুবে ডুবে জল খাচ্ছে তাকে কিছু জানাবে না!
নিখিল ভাবলেশহীন ভাবে চুপ রইলো এদিকে সাব্বির, জেরিন,মিহির মিলে বকবক করছে।
———-
নেহার পরীক্ষা শেষ হয়েছে দীর্ঘ দেঢ় মাস পর!এর মধ্যে পড়াশোনা আর প্র্যক্টিক্যাল খাতা লিখতে লিখতে জীবনের বারোটা বেজে গেছে দুই জনের।আজ থেকে শান্তি বলে শান্তি, নেহা তো খুশিতে দু চারটা লাফ দিয়ে নিয়েছে।প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষা আজ শেষ,কেন্দ্র টা ওদের কলেজের পরের কলেজে পড়েছে,বাড়ি থেকেও কাছে।তাই কেউ নিতে আসার কথা না,নেহা বৃষ্টি তাই কথা বলতে বলতে আসছে।
নেহা কৌতুক সুরে বলছে —,, কি বলবো তোকে ওই ছেলেটা তো পুরো কার্টুনের মতো দেখতে,কি যেনো বলছিলো বার বার আমার বাবা কিন্তু শহরের মেয়র আমার সাথে ভাব নিয়ো না!শা’লা ব্যাঙের মাথা তোর দিক তাকাইবো কোন মাইয়া,যেই না আমার চেহারা নাম রাখছে পাবেল,থুরি থুরি পেয়ারা!

নেহা খিলখিলিয়ে হাসছে,বৃষ্টি ও তার সাথে তাল মিলিয়েছে।বৃষ্টি এবার হাসতে হাসতে বললো
,,ভাইয়া যদি জানে এই ছেলে তোকে প্রোপোজ করেছে,ভাব তখন কি হবে!

,,তোর ভাইয়ের আবার কি হবে,আমি তো রাজি হয়ে যাইনি।আর তোর ভাই নিজস্ব প্রেমিকা রেখে আমার ব্যপারে এতো নাক গলাতে যাবে কেনো?

,,আই থিংক ভাইয়া তোকে ভালোবাসে!

,,মাথা খারাপ তোর,অতিরিক্ত গরমে তুই পা’গলের প্রলাপ বকছিস বইন।দুনিয়া উল্টাইয়া পাল্টাইয়া যাইবো,আচ্ছা ধরলাম তোর কথা সত্যি কিন্তু কোন ভিত্তিতে এ কথা বলছিস তুই?

,,ওইদিন তুই অসুস্থ হওয়ার পর ভাইয়া প্রায় উন্মা’দ হয়ে গেছিলো,ভাইয়ার কি বেহাল দশা হয়েছে তা শুধু আমরা জানি।টয়া কে এমন মার মেরেছে ওই মেয়ে যাওয়ার আগে মায়ের পা ধরে বসে ছিলো কতোক্ষণ!দাদীর সাথেও তো কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে,হসপিটালে তোর জ্ঞান ফিরছে না দেখে ডাক্তার কে পিটা’তে গিয়েছিলো।আর টয়া কে বার বার চিৎকার করে বলছিলো তুই ভাইয়ার জীবনের প্রথম ও শেষ নারী,আর কেউ কোনো দিন আসবে না আসতে পারে না।নিখিল শুধু নেহার!

নেহা হাঁটা বন্ধ করে রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়েছে,ওর মনে হলো শুনতে কোথাও ভুল হচ্ছে।নিখিল ভাই এসব বলেছে!ওর জন্য এতো উতলা তাহলে সুস্থ হওয়ার পর একদিনও সামনে আসলো না কেন?এতো দূরত্ব কেনো রেখেছে?
নেহা চেঁচিয়ে বলে উঠলো–,, কি বললি তুই!!

বৃষ্টি জানে নেহার এমন করাটা স্বাভাবিক। মেয়েটা চার বছর ধরে ভালোবাসে তার ভাইকে,জীবনের প্রথম বসন্তই এসেছিলো নিখিলের অদৃশ্য হাত ধরে।তার পর থেকে একটু একটু করে ভালোবাসা জমিয়েছে,অনেক অনেক রঙিন স্বপ্ন জমিয়েছে,ভালোবাসা কতো সুন্দর নেহার থেকে শিখেছে বৃষ্টি, মেয়েটার গোপন করার অগাধ ক্ষমতা আছে,না হয় তার এতো বুঝদার ভাই এই নিখুঁত ভালোবাসা টের পেয়ে যেতো খুব সহজে।নেহার প্রতিটা অনুভূতির সাক্ষী বৃষ্টি, ভালোবাসার মানুষটা যখন নিজেকে ভালোবাসে এটা জানার পর কোনো সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ তো স্থির থাকতে পারে না।

নেহা তব্দা খেয়ে গেছে,তার মুখ দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না।মনে হচ্ছে অধিক সুখে, আনন্দে আজ সে পা’গল হয়ে যাবে।প্রজাপতির মতো নেচে উঠলো তনু মন।মেয়েটা খুশিতে কেঁদে দিয়েছে!বৃষ্টি আজ তাকে থামালো না,সুখের যন্ত্র’ণা মানুষের জীবনে কম আসে,সে যন্ত্র’ণায় নিজেকে পু’ড়িয়েও যেনো তীব্র সুখ পাওয়া যায়।মন গালিচায় কেউ উড়ে উড়ে বলে বেড়ায় তারা পেয়েছে খুঁজে পেয়েছে কোনো স্বর্গ সুখ!

নেহা চোখের জল মুছে নিয়ে বললো–,,আমি কেনো বিশ্বাস করবো,তোর ভাইয়ের মুখ নেই নিজে একবার এসে বলতে পারলো না আমাকে?সবার সামনে নেচে-কুঁদে বলার কি দরকার!যাকে বলা দরকার তাকে তো বলেনি।ভালোবাসা নিয়ে বসে থাকুক তোর ভাইয়ের সাথে আমার আর কিছু নাই,ডিভোর্স দিয়ে দিবো শয়’তানটা কে অসভ্য লোক।এতো যখন ভালোবাসা মুখে বলতে পারে না।উনার মুখে কি কেউ কস্টিপ আঁটকে দিয়েছে নাকি।যত্তসব!

নেহা খুশি ভীষণ খুশি তার পর নিখিল না বলা পর্যন্ত নিখিল কে নিজে থেকে কিছু বলবে না ব্যাটাকে এমন প্যাচে ফেলবে না বলে কোথায় যায় তা দেখে নিবে নেহা।
নেহা হন হন করে হাঁটতে লাগালো,কোথা থেকে উড়ে এসে এক ছেলে ওদের দুজনের সামনে দাঁড়ালো।

এতো সে মেয়র ফেয়রের ছেলে পাবেল,তারা প্রায় বাড়ির সামনে চলে এসেছে,এলাকার মানুষ জন দেখলে কি ভাববে!বৃষ্টি নেহা দুজন মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো।উটাকো ঝামে’লা টা আসলো কেনো হঠাৎ। পাবেল তার উসকোখুসকো চুল গুলাতে হাত চালালো

বাইকের পাশে দাড়িয়ে তার আরেক বন্ধু।নেহার সামনে এগিয়ে দিলো একগুচ্ছ লাল গোলাপ!
নেহার নাকের ডগায় তে*জ বিরক্তির সীমা আকাশ ছুঁই ছুঁই।

,,এই ছেলে নির্লজ্জের মতো বার বার সামনে চলে আসো কেনো, তোমাকে না করেছি না আমি একবার।কথা কানে ঢুকে না!

ছেলেটা নেহার হাত চেপে ধরলো আচমকা এরকম হওয়াতে বৃষ্টি নিজেও কিছুটা ভয় পেলো,আশেপাশে সবাই তাকিয়ে আছে।কিন্তু কেউ এগিয়ে আসছে না,আজকাল এসব অহরহ হচ্ছে লোকগুলো ভেবেই নিয়েছে প্রেমিক প্রেমিকার মামলা!

,,আমার বাবা মেয়র চাইলে তোকে তুলে নিয়ে যেতে পারি তুই তা জানিস?আমার ক্ষমতা সম্পর্কে কোনো আইডিয়া আছে তোর?
নেহা বিদ্রুপের সহিত হাসলো রিনিঝিনি কন্ঠে ঝংকার তুলে বললো
,,তোর বাপ মেয়র কিন্তু তুই ভাব খানা এমন দেখাচ্ছিস তুই নিজে মেয়ের।শা’লা চুনোপুঁটি কচু করবি তুই আমার!

বৃষ্টি চেঁচিয়ে বললো —,, নেহা থাম তুই,এই পাবেল ওর হাত ছাড়ো,না হয় বলে দিচ্ছি তোমায় এই হাত আর পরের দিন খুঁজে পাবে না!

নেহা একটা ঝাড়া মেরে পাবেলের থেকে হাত ছাড়িয়ে নিলো,হাত উঁচিয়ে চ*ড় মারতে গিয়েও নামিয়ে ফেললো।হঠাৎ করেই গদগদ সুরে বললো

,,আরে পাবেল কি করি বলো তো ভাই কিছু মনে করো না আমার কথায়।তোমার দেওয়া ফুল গুলো তো কোনো দোষ করেনি এগুলো আমি নিতেই পারি।তবে একটা কথা তুমি ভাবো,জোর করে কি কিছু হয়!তুমি আমাকে পছন্দ করতে পারো আমি তো করি না।

,,তুমি কি অন্য কাউকে পছন্দ করো?

নেহা যেনো প্রশ্নটার অপেক্ষাতেই ছিলো,আহা এখন তো এই পাবেল নামক শ’ত্রুটাকেও বাসায় দাওয়াত করে খাওয়াতে ইচ্ছে করছে তার!
নেহার কন্ঠ স্বর কিছুটা বাড়লো,,লাজুক লাজুক ভাব ফুটিয়ে তুললো মুখে সাবলীল সহজ স্বীকারোক্তি

,,আমি কাউকে পছন্দ করি বললে ভুল হবে,আমি একজনকে ভালোবাসি,ভীষণ রকম ভালোবাসি!

বৃষ্টি ঠ্যাটার মতো দাঁড়িয়ে দেখছে সব নেহা এই ছা’গল টার সাথে ভালো করে কথা কেনো বলছে হঠাৎ বুঝে আসছে না তার।

নেহার কথা শেষ হতেই গম্ভীর কন্ঠটা শোনা যায়

,,কা,,কে ভালোবাসিস তুই!

নিখিলের কপালে ভাজ, কপালের দু’পাশের রগ ফুলে ফেঁপে উঠেছে। শার্টের হাতা গোটানো,মুখের হাবভাব বলে দিচ্ছে রাগে টইটম্বুর অবস্থা। কালো রঙের শার্ট পড়িহিত রাগান্বিত যুবকটির উপর আবারও প্রেমে পড়লো নেহা,চোখ বন্ধ করে একবার নিজের হার্টবিট শুনে নিলো!
,,মনে মনে একবার বলে নিলো আপনি এতো গুড লুকিং কেনো নিখিল ভাই।এই রূপের জালে আমাকে ফাঁসিয়ে দেন কেনো বার বার!মন চায় তো টুপ করে গিলে ফেলি।আপনাকে রাগিয়ে দেওয়া তো আজকে থেকে কেবল শুরু!
ঠোঁট কামড়ে একবার হাসলো নেহা।নেহার হাসি দেখে নিখিলের মেজাজ বিগড়ে গেলো এগিয়ে আসলো আরো দুকদম।

,,বল কাকে ভালোবাসিস?
নেহা ভাবলেশহীন কন্ঠে বললো –,,আপনি কাকে ভালোবাসেন ওটা কখনো জানতে চেয়েছি আমি?আমার টাও বলবো না আমি।

নিখিল দাঁতে দাঁত চেপে বললো–,,ফুল গুলো হাত থেকে ফেল বলছি!

,,না, আপনার কথা কেনো শুনবো আমি কে হন আপনি আমার!

,,বাড়ি এসে জানাচ্ছি!এখন এখান থেকে যা।

নিখিলের কন্ঠে আগু’ন ঝরছে যেনো।নিখিল দ্বিগুণ চেঁচিয়ে বললো–,,বৃষ্টি বাড়ি যা বলছি!

বৃষ্টি নেহার হাতে ধরে এক প্রকার দৌড় লাগালো,নেহা তো হাসতেছে মিটি মিটি হেসেই চলেছে সে,ইশ মুখ্যম একটা কাজ করেছে আজ।

নেহাকে এতো টেনশনে হাসতে দেখে বৃষ্টি বিরক্ত,বাড়িতে এসে ভাইয়া যে কি করবে কে জানে!
,,তুই থামবি, ভাইয়ার সামনে এতো কিছু কেন বললি কি পরিমাণ রেগেছে।

,,রাগাতেই বলেছি।তোর কি মনে হয় হঠাৎ করে ওই পাবনা ফেরত রোগীটার সাথে আমি এমনি এমনি ভালো করে কথা বলেছি?মোটেও না তোর ভাই কে দেখেই তো করেছি।এবার বুঝুক কেমন লাগে।

ইশ্! ভেবেই ভালো লাগছে,আমি কাকে ভালোবাসি এটা জানতে তোর ভাই একদম চিঁড়ে চেপ্টা হয়ে যাবে,
আমিও বলবো না।দেখি কতো ভালোবাসা তোমার ভাইয়ের!

,,ভাবছি ভাইয়া পাবেল টাকে কি করে।

,,যা খুশি করুক। পরীক্ষা শেষ এবার চিল কর, তোর ভাইয়ের কথা একদম বলবি না।একটা যা তা!

———-
সাব্বির, জেরিন,রৌফ মনোযোগ দিয়ে পরীক্ষার হলে কোথায় কি ঘটেছে,কোন স্যার সুন্দর, কোন ছেলে কোন মেয়েকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে এসব শুনছে,নেহা হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে সব ব্যাখ্যা করছে,মাঝেমধ্যে বৃষ্টি ও তার সাথে তাল মিলাচ্ছে!
রৌফ বলে উঠলো–,,তোমরা পরীক্ষার খাতায় লিখা বাদ দিয়ো সুন্দর স্যার খুঁজে বের করেছো?পাশ করতে পারবে তো নাকি?আমি তো খাতা ছাড়া কিছু চোখে দেখি না পরীক্ষার সময়!

নেহা নাক ছিটকালো–,,রৌফ তুই এতো বিল্ডিং কেন হইলি আমার ভাই, এতো এতো ভালো কথায় তুই আবার পড়াশোনা পাশ ফেইল ঢুকালি কেনো,তোকে না আলোচনায় আনাই উচিত না।তুই একটা লস্ট প্রজেক্ট তোর দ্বারা কোনো প্রেম টেম হবে না জীবনে!

সাব্বির ভাব নিয়ে বললো–,, রৌফ বড় ভাইয়ের থেকে কিছু শিখ, বাইশ বছর জীবনে পঁচিশ টা প্রেম আমার!

জেরিন নাকচ করে বললো–,,ভুল কইছছ তুই, কালকে না একটা বাড়লো মোট ছাব্বিশ টা!শা’লা তুই একটা হারা’মি,এমনে কতো লাগে তোর?আবার ভালা ভোলা রৌফটাকে নষ্ট বানাতে চাচ্ছিস!

নেহা থামিয়ে দিয়ে বললো,আহ থামো তো আসল টপিক টা তো এখনো বলিই নাই।

,,ম্যাজিস্ট্রেট টা কি জোস ছিলো কি বলবো।বৃষ্টি আপাও বলেছে হ্যান্ডাম ছিলো!

সাব্বির ছি!ছি! করে উঠলো–,,তরা দুইটায় না বিবাহিত, আমার এমন সুন্দর সুদর্শন ভাই গুলারে রাইখা বুইড়া ম্যাজিস্ট্রেটের দিক নজর কেমনে দিলি!

রৌফ চোখ ছোট ছোট করে বললো–,,বিবাহিত তো শুধু নেহা আপু,বৃষ্টি আপুর জামাই কই পাইলা!

নেহা কথা ঘুরাতে চট করে বললো—,,বড় মা তুমি কি আমাদের কে নাস্তা দিবে না, পপকন টা ভেজে দাও রৌফ কে পাঠাচ্ছি ওর কাছে দিও!

রৌফা ভাই যা না নিয়ে আয় সোনা ভাই আমার তোকে চকলেট কিনে দিবো!

রৌফ বললো–,না না চকলেটে কাজ হবে না,জল রঙ কিনে দিতে হবে।

,,ওকে ওকে ডান!

রৌফ উঠে যেতেই নেহা সাব্বিরের উদ্দেশ্য বললো
,,দিয়েছিলে তো ফাঁসিয়ে!

বৃষ্টি হাস্যউজ্জ্বল কন্ঠে বললো–,,আরে তোমরা তো জানোই না নেহাকে একজন পছন্দ করে সয়ং মেয়রের ছেলে, বাবা কি প্রেম লাল গোলাপ সহিত হাজির।দু দুবার প্রস্তাব দিয়েছে!

সাব্বির আহাজারি করে বললো–,,না না এটা হতে পারে না!নেহা বইন তুই রাজি হয়ে যাস নি তো আবার?আমার একটা মাত্র বড় ভাইয়ের কি হবে এবার।

নেহা মুখ বাঁকালো,জেরিন সাব্বিরের সাথে তাল মিলালো!

নেহা বলে উঠলো —,,এমন ভাব করছো যেনো তোমার ভাই আমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে আমাকে না পেলে ইহজগৎ ত্যাগ করবে,সে তো দু চক্ষে দেখতে পারে না আমাকে!দেখলে না অসুস্থ হয়ে ম’রে যাচ্ছিলাম তবুও একবার কথা বলতে আসেনি।

সাব্বির কপাল চাপড়ালো হতাশ কন্ঠে বললো

,,তোর দুঃখ টা বুঝতে পারতাছি আমি নেহা বইন।কিন্তু বিশ্বাস কর ভাইয়া তোর সামনে আসলে কিছু বলে না।তুই যেদিন হাত কেটেছিলি সে দিন যা করেছিলো, কি বলবো।কি সুন্দর প্রেম নিবেদন করছিলো!

নেহা চোখ বড় বড় করে তাকালো,জেরিন ও মাথা ঝাঁকালো যার মানে সত্যি এসব!

নেহা মন খারাপ করে বললো–,,তোমরা বললে আর কি হবে।কোনো দিন তো মনে হয় না স্বীকার করবে!

জেরিন বললো–,,আমার কাছে একটা প্ল্যান আছে।

তিন জন উৎসুক হলো শোনার জন্য

,,নেহা তুই বলবি তুই ভাইয়াকে ছেড়ে দিতে চাস,বা বিদেশ গিয়ে পড়াশোনা করতে চাস!ভাইয়া যেহেতু তোকে ভালোবাসে তোকে কোনো মতেই যেতে দিবে না,আর এ কয়দিন তুই ভাইয়াকে এরিয়ে চলবি,এমন ভাব তার প্রতি তোর কোনো ফিলিংস নাই।কিন্তু একটা সমস্যা আছে,আমাদের একজন অন্তত বড়দের সাহায্য নিতে হবে!

,,তোমার প্ল্যান শুনে এখনই কোমায় চলে যাচ্ছি আমি,তোমার ভাই যদি টের পায় না, সব গুলা চ*ড় আমার বেচারা গালে মারবে!
সাব্বির সাহস জুগিয়ে বললো
,,,আরে নেহা বইন আমি আছি না সব দোষ নিজের ঘাড়ে নিয়ে নিবো,আমরা তো ভাইয়াকেই হেল্প করছি নাকি।এখন বড়দের মধ্যে বড়আব্বু আমাদের সাহায্য করতে পারে!

জেরিন বৃষ্টি সমানে চেঁচিয়ে বলে–,,কিহ্!আব্বু আর মানুষ পেলে না?

,,তো কি আমার বাপের কথা কইতাম?শুধু বড়আব্বু ছাড়া বাকি সব তো ভাইয়ার ভক্ত,বাকিরা বললে মানবেও না।

,,যা তুই গিয়ে তাহলে আব্বুকে বল!

,,আমি না নেহা বইন বলবে!

নেহার করুন কন্ঠ,, আমাকে কেনো ফাঁসাও এসবে!

চল চল এখনই ভাইয়া আসার আগে শুভ কাজ সেরে ফেলি!
——-
সবাই মিলে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো শেষে নেহা।
নিখিল জোরে নেহার নাম ধরে ডেকে উঠলো
,,নেহার অন্তত আত্মা টু টু করা শুরু করেছে,যা করার তে রাস্তায় করে এসেছে,যত সাহসীই হোক কথা বলার সময় মুখ চালালেও এখন ভয় হচ্ছে,নিখিল যা রেগেছে!

নেহা দাঁত বের করে মেকি হাসলো,নিখিলের পেছনে মিহিরও এসেছে আজ।
সাব্বির ডেকে বললো মিহির ভাই আসো জলদি কথা আছে!

নেহা বললো আমিও যাবো তোমাদের সাথে!

নিখিল হাত থেকে ঘড়ি খুললো, নেহাকে শান্ত কন্ঠে বললো–,,রুমে আয় তোর সাথে কথা আছে আমার!

নেহা জিব দিয়ে ঠোঁট ভেজালো কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো–,কি,,কি কথা!এখানেই বলুন।

সাব্বির বললো নেহ তুই কথা শেষ করে আয় আমরা যাচ্ছি।
সবাই সিঁড়ি থেকে এক প্রকার উবে গেলো।নেহা অসহায় দৃষ্টি তে তাকালো,নিখিল এগিয়ে এসে নেহার হাত চেপে ধরলো

,,কি যেনো বলছিলি তুই?ম্যাজিস্ট্রেট সুন্দর,পাবেল তোমার দেওয়া ফুল গুলো সুন্দর! চল আজ তোকে আমি এর থেকেও বেশি সুন্দর জিনিস দেখাচ্ছি!

,,না,,,!আমি দেখতে চাই না হাত ছাড়ুন আমার।

নিখিল নিজের সাথে নেহাকে রুমে নিয়ে ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দিলো।

নেহা ভয় পাচ্ছে কিন্তু ভাব নিয়ে বললো
,,দরজা বন্ধ করেছেন কেনো?আমাকে টেনেটুনে আনার কি মতলব?

নিখিল শার্টের বোতাম দুইটা খুললো,ওয়ালেট বের করে টেবিলের উপর রাখলো।নিখিল এবার সরু দৃষ্টিতে নেহার দিকে তাকালো,নেহাকে পুরোপুরি একবার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখলো।
নেহার অস্বস্তি হচ্ছে, নিখিল এবার নেহার দিকে এগোতে থাকে, নেহার ছুঁক ছুঁক মন কিভাবে পালাবে ওটা ভাবতে ব্যস্ত।
নিখিল কে এভাবে নিজের দিকে অগ্রসর হতে দেখে নিজ থেকেই তার পা পেছাতে থাকলো, আশ্চর্য তো!
নেহা আবার ও চোরা চোখে তাকাচ্ছে নিখিল একমনে নেহার দিকে তাকিয়ে।

নেহা ব্যতিব্যস্ত কন্ঠে বললো—,,নিখিল ভাই কি দেখাবেন দেখিয়ে দিন আমি চলে যাবো এখান থেকে!

নেহার পিঠ ঠেকলো দেয়ালে পেছানোর আর জায়গা নেই,নেহার ভিতরে ভিতরে প্রচুর ভয়, বার বার হাত কচলাচ্ছে।নিখিল নেহার সামনে এসে দাড়ালো, দেয়ালে দু হাত রেখে নেহার দিকে ঝুঁকে বললো

,,এবার বল,,কি যেনো বলছিলি তুই?তুই আমার কথা কেনো শুনবি?আমি কে হই তোর?

নেহা এদিক ওদিক তাকালো,হার্টের অবস্থা বেজায় খারাপ বেচারা লাফাতে লাফাতে কখন জানি টুপ করে বেরিয়ে আসে।নেহা মনে মনে বললো আল্লাহ এবারের মতো বাঁচিয়ে দাও।

নিখিলের গম্ভীর কন্ঠ—,,আমি তোর কে তুই সত্যি জানিস না?কথার থেকে কাজে বুঝিয়ে দেওয়াটা মনে হয় বেশি কার্যকর তাই না নেহা।

নেহা নিখিলের দিকে তাকালো,নিখিল নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরে আছে,ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি।চোখ দুটিও হাসছে তার।ভীষণ রকম সুন্দর লাগছে দেখতে!
শার্টের বোতাম খোলা যেনো কারো তিজোরির দরজা হাট করে খুলে রেখেছে কেউ।বেহায়ার মতো ওদিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো নেহা।নিখিলের হাসি ঠোঁটে প্রসারিত হলো।

নিখিল নেহার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো–,,তুই দেখতে এতো মারা’ত্মক কেনো?পিউর হোয়াইট চকলেটের মতো,একটু টেস্ট করতে দিবি!

নেহা চোখ খুলে ফেললো সাথে সাথে,নিশ্বাস দ্রুত পড়া শুরু হয়েছে এবার,জামার দুই অংশ চেপে ধরে রেখেছে।এখান থেকে না পালালে তার মৃ’ত্যু নিশ্চিত!নিখিল ভাই এমন লাগামহীন কথা বলবে কে জানতো?তাহলে আসার আগেই পালিয়ে যেতো!
নেহার কোনো সাড়াশব্দ নেই,নিখিল নেহার মুখের খুব কাছে চোখের পলক পড়ছে ঘনঘন,নিখিলের দিকে তাকাতেও পারছে না নেহা,নিখিল এক হাত নেহার মাথা গলিয়ে রাখতেই নেহা এবার কেঁদে দিবে এমন অবস্থা।
কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো
,,প্লি,,জ নিখিল ভা,,ই দূরে সরুন!

নিখিল দূরে সরা তো দূর আরো কাছে আসলো,তার দৃষ্টি নেহার পাতলা গড়নের মোহনীয় ঠোঁটে,নেহা পর পর দুইবার ঢোক গিললো,নিখিল ঠোঁট এগিয়ে দিতেই নেহা চোখ বন্ধ করে ফেললো,নেহার মনে হলো ওর সব শক্তি লোপ পেয়েছে,নিখিল কে সরানোর জন্য হাত উঠানোর মতো শক্তি খুঁজে পাচ্ছে না।
নিখিল নেহা তিড়বিড় করে কাঁপতে থাকা ঠোঁট ছুঁয়ে না দিতে পারার আফসোস হলো,ঠোঁট ছেড়ে মুখ গুঁজে দিলো গলায়।

নেহার শরীর মুহুর্তেই কেঁপে উঠলো,ইলেকট্রিক শ’ক খাওয়ার মতো অবস্থা। নিখিল মুখ গুঁজে দিয়ে ক্ষান্ত হয়নি একটা ছোট খাটো কামড় বসিয়েছে নেহার গলায়।
নেহা ঠোঁট কামড়ে ধরেছে নিজের,ব্যাথা পেলেও আওয়াজ করলো না একদম।

নিখিলের অশান্ত কন্ঠ —,এটা তোর তখনকার করা প্রশ্নের উত্তর। বুঝতে পেরেছিস আমি তোর কে?

নেহা যেনো সাহস পেয়ে বসলো হঠাৎ
,,না বুঝিনি,মুখ নেই আপনার মুখ দিয়ে বলুন!

নিখিল পর পর কয়েকটা চুমু বসিয়েছে নেহার ঘাড়ে গলায়!
নেহার বেহাল অবস্থা তবুও একবারের জন্য নিখিল কে আঁকড়ে ধরছে না সে, আর না ছাড়িয়ে নিচ্ছে নিজেকে!

নিখিল নেহাকে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো এবার কানের কাছে মুখ ঠেকিয়ে ফিসফিস নেশা ভরা কন্ঠে বললো
,,একটা মেয়ে নিজেকে ছোঁয়ার অধিকার স্বেচ্ছায় শুধু তার স্বামীকেই দেয়!
আমি যদি তোর কিছু নাই হতাম তুই নিজে আমাকে দূরে সরিয়ে দিতি,কষে দু চারটা চ’ড় লাগাতি,কিন্তু তুই করিসনি,তুই নিজেকে ছাড়িয়ে ও নিতে চাসনি,তার মানে তুই নিজেও জানিস আমি কে তোর!
চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here