রিদ মায়ার প্রেমগাঁথা #লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া ৩৩

0
17

রিদ মায়ার প্রেমগাঁথা
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া

৩৩
সকাল ৯ঃ৪৫ মিনিট। তপ্ত রোদে উজ্জ্বল ধরনী। এই সাতসকালে রিদের কাজে থাকার কথা। অথচ সে কাজ ফেলে এই সাতসকালে ড্রাইভিং সিটে বসে। পাশেই রাদিফ চকচক মুখে বসে। মায়া দুই ভাইয়ের মাঝে পিছনের সিটে কাচুমাচু করে বসে। আপাতত সে হলো একজন আসামির নেয়। ওকে রিদ যেতাই নিয়ে যাচ্ছে মায়াও সেথায় সেথায় যাচ্ছে। এই সকালের নাস্তা টেবিলে কতো কিছুই না হলো। মায়া লজ্জা আর অস্থিরতায় ভুলবাল কাজ পযন্ত করলো। অথচ এখন মায়ার ফাহাদদের বাসায় মুক্তা আর জুইয়ের সাথে থাকার কথা। কাল রাত থেকে মায়া ঐ বাড়ি থেকে নিখোঁজ, নিশ্চয়ই সবাই টেনশন করছে মায়ার জন্য। কিন্তু রিদ মায়াকে না ঐ বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে, আর না ঐ বাড়ি সম্পর্কে কিছু বলছে। মায়া টেনশনে নিজের বোনের শশুর বাড়িতে যাবে বলে এই নিয়ে বেশ কয়েকবার আরজি জানিয়ে ছিল রিদকে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হলো না। রিদ মায়ার কথা কানে তো তুললোই না উল্টো মায়াকে বগলথাবা করে কোথায় যেন নিয়ে যাচ্ছে এই সকাল বেলা। মায়া রিদকে কিছু বলতে পারছে না বলে চোখ ফেটে কান্না আসছে ওর টেনশনে। মন চাচ্ছে হাউমাউ করে কাঁদতে। কিন্তু মায়া তাও করতে পারছে না রাদিফের জন্য। সকাল থেকে অলরেডি মায়া অদ্ভুত সব কাজ কান্ড করে ফেলেছে। এখন নতুন করে আর কিছু ঘটাতে চাই না। নয়তো দেখা গেল রাদিফ মায়ার হাউমাউ চিৎকারের কান্না দেখে বলে বসল ‘ভাবি কষ্ট আমার কষ্ট। আমিও তোমার মতোন কান্না করতে চাই। তখন বিষয়টা আরও লজ্জাজনক হয়ে যাবে মায়ার জন্য। এমনিতে রাদিফ সকাল থেকে শুধু মায়াকে দেখে যাচ্ছে। রাদিফের ড্যাবড্যাব করে তাকানোতে মনে হচ্ছে মায়া কোনো মানুষ হতেই পারে না। মায়া হলো দুনিয়ার অষ্টম কোনো আশ্চর্য পদার্থ। যেটা রাদিফ খান জীবনের প্রথম দেখে ভিষণ বিস্মিত হয়ে আছে। তার থেকে সবচেয়ে ইতস্তত ব্যাপার হলো মায়া কালরাত থেকে একই ড্রেস পড়ে আছে। গায়ের জামাটাও এখন নোংরা নোংরা লাগছে মায়া কাছে। অথচ এই দুই ভাই কেমন টিপটাপ সেজেগুজে আছে। যেন নতুন জামাই সেজে মায়াকে নিয়ে কোথাও একটা যাচ্ছে তাঁরা। আল্লাহ জানে মায়াকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তারা। এদিকে মায়ার বাড়ির জন্য টেনশন হচ্ছে। মায়াকে ফাহাদদের বাড়িতে না পেয়ে নিশ্চয়ই ঐ বাড়িতে হাঙ্গামা লেগে গেছে। রিদের সাথে মায়ার অবাধে চলাফেরাটা যদি কারও কানে যায় তাহলে বিশ্রী একটা কান্ড ঘটে যাবে বোনের শশুর বাড়িতে। মায়ার মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাধারা মধ্যেই রাদিফ সামনের সিট থেকে পিছন ঘুরে মায়াকে দেখলো টেনশন করতে। দুষ্টু রাদিফ মায়ার ভয় আরও বাড়িয়ে দিতে দিতে বলল…

‘ ভাবি তুমি আমাদের আম্মুকে চিনো? দেখছো কখনো সরাসরি?

রাদিফের কথায় মায়া ভয়ে কাচুমাচু মুখটা তুলে তাকাল রাদিফের দিকে। সঙ্গে সঙ্গে চোখাচোখি হলো দুজনের। মায়া ভয়ে মাথা নাড়িয়ে অসম্মতি জানাল রাদিফকে। যে সে কখনো সরাসরি দেখেনি। মায়ার কথায় বেশ সিরিয়াস হলো রাদিফ। যেন সে মায়ার এই উত্তরটা পাওয়ার আশায় ছিল। মায়া রাদিফের হঠাৎ পরবর্তীত মনোভাব দেখেই বুঝলো যে রাদিফ মায়াকে এই মূহুর্তে বেশ সিরিয়াস কিছু বলতে চাই। রিদ সামনের ড্রাইভিং সিটে থেকে স্টিয়ারিং ঘুরাতে ঘুরাতে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তুলে রাদিফকে এক পলক দেখে তাকাল মিররে দিকে। সেদিকে মায়ার ভয়ার্ত মুখটা দেখা গেল। রাদিফ তক্ষুনি সিরিয়াস গলায় বলল…

‘ ভাবি শুনো আমাদের আম্মু কিন্তু অনেক রাগি মানুষ বুঝলে। রিদ ভাইয়ের থেকেও রাগি। এতোটা রাগী যে আমাদের আম্মু যখন রেগেমেগে আগুন হয়ে যায় তখন আম্মুর কপাল দিয়ে দুটো আগুন শিং বের হয়। তুমি সাবধান থেকো ভাবি! আমাদের আম্মু নতুন মানুষ দেখলেই শিং দিয়ে গুতো মারে। তবে তুমি তো তার বড়ো ছেলের বউ সেই সুবাদে তোমাকে ছাড় দিলেও দিতে পারে আই ডোন্ট নো। আসলে আমার তোমাকে নিয়ে অনেক চিন্তা হচ্ছে বুঝলে। এই অল্প সময়ের মধ্যে আমার তোমাকে অনেক মনে ধরেছে, তোমাকে বড়ো ভাবির চোখে দেখি। এখন তুমি যদি আম্মুর শিংয়ের গুতো খেয়ে হসপিটালের পড়ে থাকো তাহলে আমি ভিষণ দুঃখ পাবো। এজন্য আমি তোমাকে সাবধান করতে চাইছিলাম ভাবি, তুমি আম্মুকে রাগ দিয়ে কোনো কাজ করো না কেমন। আম্মু সাথে দেখা হলেই তুমি সোজা আম্মুর পা ধরে শুয়ে পরবে। আসলে আমাদের আম্মুর লম্বা লম্বা সালাম পছন্দ তো তাই। ছোট ছোট সালাম করলেই আম্মু কেমন রেগে যায়। আমি আর রিদ ভাই তো আম্মুকে সবসময় লম্বা লম্বা সালাম করেই আসছি। তুমি এখন নতুন মানুষ তাই তুমিও আমাদের মতোন লম্বা লম্বা সালাম করবে কেমন?

রাদিফের কথায় ভয়ে মায়ার চোখ মুখ অন্ধকারে ছেয়ে গেল। এতক্ষণ মায়া জানতো রিদ ওকে কোথাও একটা নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখন রাদিফের কথায় সিউর হলো আসলে রিদ মায়াকে ওদের মা সাথে দেখা করাতে নিয়ে যাচ্ছে। মায়া ভয়, জড়তা, আতঙ্কে, গাড়ির এসির মধ্যেও ঘামতে লাগলো। রিদ আয়না দিয়ে মায়াকে দেখলো খুব অসহায় মুখে বসে থাকতে। হয়তো যেকোনো সময় অতিরিক্ত ভয়ে কেঁদেও ফেলবে। রিদ স্টিয়ারিং ঘুরাতে ঘুরাতে রাদিফকে ধমক দিতে চাইলো মায়াকে উল্টা-পাল্টা না বুঝাতে। কিন্তু রিদের ধমকের আগেই রাদিফ মায়াকে সান্ত্বনা দেওয়ার মতোন করে বলল…

‘ আহা, ভয় পেওনা ভাবি। আমি আছি তো তোমার সাথে। তোমার ভয়, আমার কষ্ট। আমি তোমাকে এক্ষুনি একটা সুবুদ্ধি দিচ্ছি, শাশুড়ী পটানোর রেসিপি। আমার কথা শুনলে তোমার সব ভয় সুমন্ত্রার সু হয়ে যাবে দেখো।

‘ সেটআপ ইডিয়ট। ভয় পাচ্ছে ওহ।

রিদের হঠাৎ ধমকে মায়া ভয়ার্ত মুখে চমকে উঠলো। রাদিফ মায়াকে ভয় পেতে দেখে বিরক্ত চোখে ঘাড় ঘুরিয়ে রিদের দিকে তাকিয়ে বলল…

‘ দিলে তো ভাবিকে ভয় পাইয়ে ভাই। এমনই ভাবি আম্মুকে নিয়ে টেনশনে আছে। কই তুমি ভাবিকে একটু সাহস দিবে তা না করে উল্টো ধমকে দিচ্ছো। ভাবি যদি এখন ভয়ে কাঁদে তাহলে দোষটা কার হবে বলো? তুমি জানো না আম্মু কাউকে কাঁদতে দেখলে রেগে যায়। ভাবিতো তোমার জন্য এখন আম্মুর শিংয়ের গুতো খাবে ভাই।

রাদিফের কথায় রিদ বিরক্তি চোখে তাকাল। মিরর দিয়ে মায়াকে আবারও এক পলক দেখে ডাইভিংয়ে মনোযোগ হলো। রাদিফ রিদকে চুপ করে যেতে দেখে পুনরায় মায়ার দিকে ফিরলো। মায়াকে সান্ত্বনা দেওয়ার নাম করে আরও উল্টা পাল্টা বুঝাতে লাগলো। রিদ গাড়ি চালাতে চালাতে গম্ভীর মুখে দুজনকেই দেখল। স্বভাবে রাদিফ রিদ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। রিদ যতোটা গম্ভীর স্বভাবের রাদিফ ততটাই প্রাণচাঞ্চল্য আর উৎফুল্লর ছেলে। স্বভাবে দুই ভাই ভিন্ন হলেও কেউ কাউকে মানিয়ে নিতে সমস্যা হয়না। রিদ কখনো রাদিফের স্বভাবের জন্য ওকে কোনো কিছুতে বাধ্য করেনি। বরং ছাড় দিয়ে চলে এসেছে এতদিন, আগামীতেও এমনটা করবে। রাদিফের বকবক আর মায়ার ভয়ের মধ্যে রিদের গাড়িটা থামে বারো তলা ভবনের সামনে। দারোয়ান রিদের গাড়িটা দেখেই সালাম দিয়ে গেইট টেনে ধরতেই রিদ গাড়িটা ঢুকলো ভিতরে। মায়া তখনো ভয়ে কাচুমাচুম করে বসে। রিদ গাড়িটা পাকিং করে সিট বেল খোলে নামতে নামতে ততক্ষণে রাদিফ গাড়ি থেকে লাফিয়ে নেমে মায়ার পাশের দরজা খোলে দেয় মায়াকে নামতে। অপরিচিত পরিবেশে মায়া বেশ ভয়ার্ত মুখে গাড়ি থেকে নামলো। আশেপাশে তাকাতে দেখলো বিশাল বড়ো বড়ো দালানকোঠা মাথা উপর দাঁড়িয়ে থাকতে। ঢাকা শহরের অলিগলি সম্পর্কে মায়ার তেমন ধারণা না থাকায় বুঝতে পারলো না সে এই মূহুর্তে কোথায় আছে। রিদ ওকে কোথায় নিয়ে এসেছে। তবে আগ বাড়িয়ে রিদ বা রাদিফকে যে জিগ্যেসা করবে সেই সাহসটা পযন্ত পাচ্ছে না ওহ। ভয়ে মায়ার কলিজা শুকিয়ে একটুখানি হয়ে আছে। রিদ মায়াকে গাড়ি থেকে নামতে দেখে নিজের হাতের কোটটা মায়ার দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বলল…

‘ আমরা এখন গুলশান একে আছি। এই বিল্ডিংয়ের সিক্স ফ্লোরে আমার মা থাকেন। তোমাকে উনার সাথে দেখা করাতে নিয়ে আসলাম চলো।

রিদের গায়ের কালো কোটটা মায়া নিজের হাতে নিলো ভয়ে কাচুমাচুম করতে করতে। রিদ মায়া ভয় বুঝেও না বুঝার মতোন করে সামনে হাটলো। রাদিফ মায়ার পাশে দাঁড়াতে দাঁড়াতে ফিসফিস গলায় বলল…

‘ ভাবি সাবধানে থেকো আমার কিন্তু ভয় হচ্ছে তোমাকে নিয়ে।

মায়া এবার সত্যি সত্যি ভয়ে কলিজা কাঁপছে। রাদিফ সেই কখন থেকে নিজের মায়ের নামে উল্টা পাল্টা মায়াকে বুঝাতে বুঝাতে আনলো। ভয়ে যখন মায়ার পা চললো না তক্ষুনি রাদিফ মায়াকে তাড়া দিয়ে বলল..

‘ আরে ভাবি চলো চলো। আমাদের দেরি হলে আবার আম্মু রেগে যেতে পারেন। চলো চলো তাড়াতাড়ি চলো।

তাড়া দেখিয়েই রাদিফ সাইটে দাঁড়াল মায়াকে সামনে যেতে বলে। মায়া ভয়ার্ত মুখে রাদিফকে এক পলক দেখে শুকনো ঢুক গিলে রিদের কোটটা নিজের হাতের ভাজে নিয়ে ধীর পায়ে হাঁটল রিদকে অনুসরণ করে। নিচ তলায় লিফ্টের সামনে আসতে রিদকে লিফ্টে ঢুকতে দেখে মায়াও সেদিকে এগোল। মায়া পিছন পিছন রাদিফও লিফ্টে ঢুকতেই রিদ টপ বাটন চেপে সিক্স ফ্লোরে চাপলো। ভয়ার্ত মায়া যখন কাচুমাচুম করে কাঁপছিল তক্ষুনি রিদ পাশ থেকে মায়ার একটা হাত চেপে নিজের পাশে দাঁড় করাল। মায়ার ছোট হাতটি তার শক্তপোক্ত পুরুষালি হাতের ভাজে নিতেই মায়া চোখ তুলে তাকাল রিদের দিকে। রিদ যেন মায়াকে গম্ভীরে সাহস দিল ভয় না পেতে। কিন্তু মায়ার তাকানোতেও রিদ তাকাল না মায়ার দিকে। বরং রিদ অপর হাতটা পকেটে ঢুকিয়ে স্টংলি দাঁড়িয়ে রইল লিফ্টে। সিক্স ফ্লোরে আসতেই মায়ার হাতটা সেইভাবেই চেপে ধরে এগিয়ে গেল নিদিষ্ট ফ্ল্যাটের দিকে। রিদের কলিংবেল চাপার আগেই রাদিফ ফটাফট অধৈর্য্যের হাতে কলিংবেল বাজাল। মিনিটে মাথা দরজা খোলে দাঁড়াল বাইশ-তেইশ বছরের যৌবতী কাজের মেয়ে তনি। কালো গঠনের মেয়েটা দেখতে চমৎকার। দরজা ধরে দাঁড়িয়ে রিদ আর রাদিফের সঙ্গে মায়াকে দেখেই তৎক্ষনাৎ গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে ছুটলো ফ্ল্যাটের ভিতরের দিকে….

‘ ম্যাডাম গো বড়ো ভাইজান ভাবিরে লইয়া আইছে দেইখা যান।

তনির চিৎকারে রাদিফ মজা পেলেও রিদ চরম বিরক্ত হলো। সেইভাবেই মায়ার ভয়ার্ত মুখটার দিকে এক পলক তাকিয়ে ঢুকলো ভিতরে। রাদিফ রিদ মায়ার আগেই দরজা ঠেলে ড্রয়িংরুমে সোফায় গা এগিয়ে চিৎ করে শুয়ে পড়লো ক্লান্তিতে। মায়া ভয়ে কাচুমাচুম করে রিদের পাশে দাঁড়িয়ে সুন্দর ফ্ল্যাটের বিলাসিতা দেখতে লাগলো আড়েআড়ে। ফ্ল্যাটের চারপাশের পরিবেশটা বেশ সুন্দর আর পরিপাটি গুছানো টাইপ। যেকেউ দেখলে বলবে এখানে রুচিশীল মানুষের বসবাস আছে। তবে মায়া বুঝতে পারছে না হুট করেই কেন রিদ মায়াকে ধরে বেঁধে নিজের মা সাথে দেখা করাতে নিয়ে আসলো। মায়া রিদের স্বামী হওয়া সত্যিটা জানতে পেরেছে আজ মাত্র দুইদিন হলো এর মধ্যে রিদ নিজের পরিবারকে জানিয়ে দিল মায়ার সম্পর্কে? আচ্ছা এই লোক কি মায়ার সবকিছু জানার অপেক্ষাতে ছিল এতদিন? কখন মায়া নিজের স্বামীকে চিনতে পারবে আর কখন সে নিজের পরিবারকে জানাবে মায়ার সম্পর্কে এমন কিছু? মায়ার তো এখন তাই মনে হচ্ছে। মায়া নিজের স্বামীকে চিনলো না দুদিন হলো এর মাঝেই রিদ নিজের অধিকার খাটাচ্ছে মায়ার উপর। এমনকি রিদ দায়িত্ব নিয়ে প্রথমে নিজের মায়ের সাথে মায়াকে বউ হিসাবে পরিচয় পযন্ত করিয়ে দিচ্ছে। আচ্ছা মায়া কি দুনিয়ার সবচেয়ে ভাগ্যবতী নারী না?
অবশ্যই সে ভাগ্যবতী নারী। মায়া না চাইতেও সবকিছু পেয়ে যাচ্ছে। লোকটা কখনো মায়াকে মুখে বলেনি সে মায়াকে পছন্দ করে বা ভালোবাসে। অথচ তার কাজ কর্মে মনে হয় মানুষটার ভালোবাসার দুনিয়ার বলতে শুধু মায়া একাই আছে। মায়ার আজ নিজেকে সত্যি ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে। মায়ার মনস্তাত্ত্বিক ভাবনার মাঝেই কারও পায়ের শব্দ পেতেই মায়ার ধ্যান ভাঙ্গে। চোখ তুলে উপরে তাকাতে চোখে পড়লো চমৎকার সুন্দরী এক নারীকে৷ যার রুপ লাবণ্য চোখে লাগার মতোন সুন্দর। মায়া কিছুক্ষণের জন্য নিজের ভয় ভুলে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো সেই মধ্য বয়স্কর সুন্দরী নারীর দিকে। সাদা ধবধবে গায়ে কালো মসলিন শাড়ি জড়িয়ে। চোখ দুটো রিদের মতোই তীক্ষ আর গাঢ় বাদামি। সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হলো মহিলাটির হাইট আর ওয়েট দেখে। মায়া মনে হলো ওর শাশুড়ী হাইট রাদিফের প্রায় সমান সমান হবে। কম হলেও লম্বায়ে মহিলাটি ৫’৭ কি ৮ হবেই। তাছাড়া এই যৌবতী মহিলাকে দেখলে প্রথম দেখায় কেউ বলতে পারবে না এই মহিলার দুটো দামড়া দামড়া ছেলে আছে। বাপরে কি ভয়ংকর ব্যাপার বাপরে। মায়াকে হা হয়ে রিদের মা মিসেস সুফিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে আসলো সুফিয়া বেগম। গুছানো শাড়ির সাথে বামহাত ঘড়ি পড়া উনার। ডানহাতে চিকন একটা ডায়মন্ডের চুড়ি। বামহাতের ঘড়িতে সময় দেখতে দেখতে সুফিয়া বেগম তীক্ষ্ণ গলায় বলল…

‘ তোদের আসার কথা নয়টায়। এখন বাজে দশটা। একঘন্টা লেট হওয়ার কারণ?

শক্ত গলায়, শক্ত পারসোনালিটি দেখে মায়ার মনো হলো সে যেন রিদের কার্বন কপি দেখছে শাশুড়ীকে। বাপরে! কথা আর দৃষ্টি দুটোই কি তেজ তাদের। রিদ কিছু বলবে তার আগেই সোফায় শুয়ে থাকা রাদিফ উঠে বসতে বসতে বলল…

‘ ভাবির হাতের ইউনিক নাস্তা খেতে খেতেই আমাদের একঘন্টা দেরি হয়ে গেল মা। কি মজার মজার নাস্তা ছিল সেই গুলো আহা। আপেল ফ্লেভারের চা। কলা ফ্লেভারের কফি। কাপ ফ্লেভারের রুটি। আরও কতো কি ছিল।

রাদিফের কথায় সুফিয়া বেগম দৃষ্টি ঘুরিয়ে তাকাল রিদের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছোট মায়ার দিকে। রাদিফের মুখে ভাবি ডাক শুনে উনার মনে হলো ছেলের বউয়ের কথা। সুফিয়া বেগম বেশ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মায়ার পা থেকে মাথা অবধি পরখ করলো একবার। দৃষ্টিতে তীক্ষ্ণতা বজায় রেখে সেই দৃষ্টি ঘুরিয়ে তাকাল আবার রিদের দিকে। আগের নেয় গম্ভীর গলায় বলল…

‘ খেয়ে এসেছিস কেন? না করেছিলাম না? বলেছিলাম না সকালের নাস্তা এখানে এসে করবি। আমি যে সকাল থেকে না খেয়ে অপেক্ষা করবো সেটা মনে ছিল না?

সুফিয়া বেগমের গম্ভীর গলার কথায় মায়া কেঁপে ওঠে রিদের দিকে আরও চেপে গেল। রিদের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পিছনে লুকাতে চাইলে রিদ মায়ার হাতটা শক্ত করে ধরে রেখে বলল…

‘ টেবিলে নাস্তা দিতে বলো মা। আমরা তেমন কিছু খেয়ে আসিনি। শুধু একটু কফি খেয়ে এসেছিলাম।

রিদের বলা শেষ করতে না করতেই তনি দৌড়ে কিচেনে গেল টেবিলে নাস্তা দিতে। সুফিয়া বেগমের কিছু বলার অপেক্ষা করলো না। কারণ সুফিয়া বেগম অনেক শক্ত ধাঁচের মানুষ। কথা কম বলে কাজ বেশি চাই উনার। অথযা ভারতি কিছুই পছন্দ না উনার। সুফিয়া বেগম রিদ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সম্পূর্ণ রুপে তাকাল ভয়ার্ত মায়ার দিকে। সে আপাতত রিদের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বারবার আঁড়চোখে সুফিয়া বেগমকে দেখার চেষ্টা করছে। সুফিয়া বেগম মায়ার মনোভাব বুঝতে পেরেই গম্ভীর গলায় ডাকল মায়াকে নিজের কাছে…

‘ এই মেয়ে এদিকে আসো।

সুফিয়া বেগমের গম্ভীর ডাকে মায়া সারা শরীর শিহরিত হলো ভয়ে। আতঙ্কের নেয় খামচে ধরলো রিদের কোমরের পাশে শার্টের কিছু অংশ। রিদ দৃষ্টি নত করে মায়ার দিকে তাকাল। মায়াকে ভিষণ অসহায় আর ভয়ার্ত দেখাল। অতিরিক্ত নার্ভাসনেসে মায়াকে ঘামতে দেখে মনে হলো যেকোনো সময় কেঁদে ফেলবে মায়া ভয়ে। রিদ ছোট করে বলল…

‘ যাও।

মায়া নড়লো না। বরং রিদের পিছনে দাঁড়িয়ে নিজেকে আড়াল করলো। সুফিয়া বেগম হঠাৎ মায়ার ভয় পাওয়ার কারণটা বুঝতে না পেরে অনেক ধমক সুরে ডাকল মায়াকে নিজের কাছে….

‘ এই মেয়ে শুনতে পারছো না ডাকছি তোমায়? এদিকে আসো। কাম।

সুফিয়া বেগমের ধমকের মায়া কেঁপে উঠে সত্যি সত্যি কেঁদে ফেললো। রিদের শার্ট আঁকড়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠতেই সুফিয়া বেগম তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল রিদের দিকে। বলল…

‘ কি হয়েছে? কাঁদছে কেন ওহ?

রিদ রাদিফের দিকে বিরক্তি চোখে তাকাল। মায়াকে কাঁদতে দেখে রাদিফ দুষ্টু হাসছে নিজের কাজে সফল হতে পেরে। রিদ সেদিকে তাকিয়ে মিসেস সুফিয়া বেগমকে বলল….

‘ তোমার ছেলেকে জিজ্ঞেসা করো মা। রাদিফ ওকে উল্টাপাল্টা বুঝিয়েছে তোমার নামে। সেজন্য তোমাকে ভয় পাচ্ছে ওহ।

রিদের কথায় শক্ত চোখে তাকাল সুফিয়া বেগম রাদিফের দিকে। রাদিফকে চোখ রাঙ্গিয়ে এগিয়ে আসলো রিদের দিকে। রিদের পিছন থেকে মায়ার হাত টেনে নিয়ে বসাল সোফার উপর। টি-টেবিলে উপর থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে মায়ার দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বলল…

‘ পানিটা খাও। আমাকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। নাও।

মায়া ভয়ে ভয়ে পানিটা নিলো। ফুপাতে ফুপাতে গ্লাসে চুমুক দিতেই রিদ এসে রাদিফের পাশে বসলো। মায়া গ্লাসের পানিটুকু শেষ করতেই সুফিয়া বেগম হাত বাড়িয়ে মায়ার থেকে গ্লাসটা নিয়ে পুনরায় জায়গায় রাখতে রাখতে বলল…

‘ আমার ছেলেকে কি দেখে পছন্দ করলে তুমি? ঐ চেহারাটা ছাড়া আর কিছুই তো নেই ওর পছন্দ করার মতোন। তাহলে তুমি কি দেখে বিয়ে করলে ওকে? আমার ছেলের সুন্দর চেহারার প্রেমে পড়লে নাকি?

সুফিয়া বেগমের সরাসরি সোজাসাপ্টা কথায় মায়া ভয় আরও বাড়লো। মা ছেলের দুটোই এক। কথার তেজ আর আরচণের মানুষকে ঘায়েল করতে সক্ষম। মায়া কোনো রকমের মাথা নাড়িয়ে অসম্মতি দিতে দিতে বলল…

‘ না।

‘ চেহারার প্রেমে পড়োনি বলছো?
‘ হুমম।
‘ তাহলে কিসের জন্য বিয়ে করলে আমার ছেলেকে? ওহ তো সুবিধার মানুষ নয়।

#চলিত…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here