#প্রণয়ের_সুর
#পর্ব১৮
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
রাতের আকাশ জুড়ে কালো মেঘের আনাগোনা, তপ্ত পরিবেশ, অভুক্ত মাটি,গাছের পাতা কে প্রশান্তি দিতে যেন তার ভীষণ তাড়া!গমগমে শব্দে আকাশ কেঁপে উঠলো, বিদ্যুৎ চমকালো থেমে থেমে,উড়ে গেলো অবাধ্য জানালার পর্দা। টুপটাপ শব্দে মিষ্টি রোমাঞ্চকর কিছুর স্বাক্ষী হতে ধরণীর বুকে নেমে পড়লো মুক্তোর মতো বৃষ্টির দানা!
বদ্ধ ঘরে ছড়িয়েছে বৃষ্টি সুভাস,সুখের আভাস!মনের সাথে মনের মিল হওয়ার এক অদম্য প্রয়াস। চুপিচুপি এসে কেউ জেনো বলে যাচ্ছে এ লগ্নে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাবে প্রণয়ের বারিধারা।
ঠান্ডা গা শিরশিরে পরিবেশে, বৃষ্টির অশান্ত বিচরণের শব্দের মাঝেও শোনা যাচ্ছে কারো অশান্ত মনের আকুতি। কারো নিশ্বাসের তুমুল গতিতে ছুটে চলার আওয়াজ।
নিখিলের দৃষ্টি নেহার ঠিক গলার উপর তিলটায়,মেয়েটা অনবরত কাঁপছে, তিড়বিড় করে ঘামছে নাকের ডগা।মৃদু কেঁপে উঠছে নাক,চোখ,ঠোঁটের পাতা!নিখিল কে খুব করে টেনে নিচ্ছে অদৃশ্য ভাবে।নিখিল হাত রাখলো নেহার কানে থাকা দুলে,খুলে ফেললো একে একে সব চকচকে গহনা!চুড়ি গুলো টুংটাং শব্দ তুলে পড়ে গেলো মেঝেতে।নিখিল তখনও অনিমেষ চেয়ে,যেনো তার তৃষ্ণা মিটছে না চোখ ভরছে না মেয়েটাকে দেখে যত দেখছে তত দেখার ইচ্ছা তীব্র ভাবে গ্রা’স করছে তাকে।
নিখিল চুলে থাকা গোলাপ দুটিতে টান দিতেই কাটায় লেগে হাত কে’টে গেলো খানিকটা।নেহা চোখ খুলে ফেললো ততক্ষণাৎ নিখিল হাত ঝাড়া দিয়ে আবারও হাত রাখলো নেহার পাতলা গড়নের সরু আকষর্ণীয় ওষ্ঠে। আঙুল দিয়ে ছুঁয়ে দিলো ঠোঁট জোড়া,আঙুল ছুঁইয়ে এনে রাখলো গলায়, গলা পেরিয়ে চুলের ভাঁজে হাত রাখলো টেনে নিলো নিজের দিকে নিজের সবচেয়ে প্রতিক্ষার বস্তুটিকে। নেহা এসে পড়লো ঠিক নিখিলের বুকে।লম্বা চওড়া মানুষটার কাছে তার পাঁচ ফিট চার ইঞ্চি উচ্চতাটাও ভীষণ বেমানান!নেহা আবেশে চোখ বুঁজে ফেললো,টাল সামলাতে না পেরে চেপে ধরলো নিখিলের শার্ট।নিখিল কানের কাছে মুখ নিলো খুব আলতো সুরে ফিসফিস করে বললো
,,এরকম ভাবে আমাকে না ফাঁ”সালেও পারতি নেহা!তুই কি দেখছিস আজ আকাশ জুড়ে অবাধ্য বর্ষণ।অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে না জানিয়ে এসেছে।যেমন এসেছিস তুই।তোকে বলেছিলাম নক্ষত্রের রাত উপহার দিতে।তুই বৃষ্টি মুখরিত রাতে উষ্ণতার চাদর হয়ে, আদুরে অমাবস্যার চাঁদ হয়ে এসেছিস!আমি কি করে না ছুঁয়ে থাকতে পারি বল।এতোটা আবেদনময়ী হয়ে আসতে নেই জানিস না!এতো সাজ আমার জন্য? নষ্ট করার অধিকার ও তো আমিই রাখি জান।
নেহার ঘন ঘন নিশ্বাস পড়ছে কাঁপা কন্ঠে বললো–,,
ভুল করে হয়ে গেছে!
নিখিল ঠোঁট কামড়ে হাসলো কানের উপর ঠোঁট ছুঁয়ে বললো–,,এবার ভুলের মাশুল দে!
নেহা তড়িঘড়ি করে বলে উঠলো—,,আজকে না প্লিজ!
নিখিল চমৎকার হাসলো,হাত গলিয়ে দিলো নেহা শাড়ির ভাঁজে উন্মুক্ত কোমড়ে।নেহার হৃদপিণ্ডের গতি বাড়লো,খামচে ধরলো নিখিলের শার্ট,চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে বললো–,,নিখিল ভাই আসলে,,,,,,!
নিখিল নেহার ঠোঁট চেপে ধরে বলে–,,আর এক দিন যদি ভাই বলেছিস তো টুপ করে গি’লে ফেলবো তোকে।
নেহার দৃষ্টি এলোমেলো, নিখিল মুগ্ধ চোখে দেখলো চঞ্চল হরিণীকে!
নিখিল গভীর চুম্বন আঁকলো নেহার কপালে।ছুঁয়ে দিলো চোখের পাতা,গাল,থুতনি!অসংখ্য চুমুতে ভরিয়ে দিলো নেহার গোলসাইজের ছোট্ট মুখশ্রী।মেয়েটি কাঁপলো বার বার অনুভূতির তীব্রতায়।
নিখিল নেহাকে ডাকলো–,,তাকা আমার দিকে!
নেহা তাকালো না উল্টো খিঁচে বন্ধ করে ফেললো।নিখিল জানে কি করে এই পোষা পাখিকে ব’শ করতে হয়।ঠোঁটের ছোঁয়া দিলো নেহা ঠোঁটের ঠিক পাশে।
নিখিল কন্ঠে আদর মিশিয়ে ডাকলো
,,তাকাও না বউজান!
নেহার হৃদপিণ্ড লাফিয়ে উঠলো যেনো,লোকটা এমন কেন?নেহা পিটপিট করে তাকালো।
নিখিল নাকে নাক ঘঁষে বললো–,,জানি তো তুই কি বলতে চাস আমায়!বেশি জ্বালা’বো না লিমিট ও ক্রস করবো না তবে আজকে ছাঁড় ও দিতে পারবো না!
নেহা লজ্জায় চোখ নামিয়ে ফেললো–,,একটাই প্রশ্ন তার মনে নিখিল কি করে জানলো!
নিখিল আবারো ও ডাকলো–,,জান এভাবে লজ্জা পেয়ো না প্লিজ!ঠিক এখানটায় একদম হৃদয়ে গিয়ে লাগে যে।তোমার লজ্জা মাখা মুখ কতোটা টানে আমাকে জানো তুমি?
নেহার কম্পিত ঠোঁট জোড়া দখল করে নিলো নিখিলের নির্লিপ্ত ঠোঁট! সময় যেনো বয়ে চলছে আপন গতিতে,কেউ কোথাও নেই, শুধু আজ প্রেম,মোহ, মা’দকতা,ভালোবাসায় মুড়িয়ে নিয়েছে সময়টাকে!
নিখিলের অবাধ্য বিচরণে নেহা কেঁপে কেঁপে উঠছে।
বিছানায় বসে পড়লো এবার নেহা।নিখিল পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বললো–,,একটা চুমুই তো দিলাম এতেই তোর এ অবস্থা নেহা পরবর্তীতে তোর কি হবে ভেবেছিস একবার!
নেহা নাকের ডগায় রাগ নিয়ে বললো–,,অসভ্য পুরুষ!
লজ্জা টজ্জা খানিকের জন্য উবে গেছে ওর।রাগ হলে কথা শোনানো টা আগে পরে লজ্জা পাওয়ার অনেক টাইম পাওয়া যাবে।
নিখিল নেহার পাশে বসলো নেহা সরে পড়লো গাল ফুলিয়ে।নিখিল নেহা কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে তিলটা আলতো হাতে ছুঁয়ে দিলো।নেহা নিখিলের হাত ধরে ফেললো ঠোঁট উল্টে বললো–,,আমার গলার তিলটা কি সরকারি?লুচু লোক সব সময় তিলটার দিক নজর দেন কেনো আপনি?
,,তিল কেনো পুরো তুমিটাই তো আমার!শুধুই আমার।ছুঁয়ে দেওয়ার অধিকারও আমার যা খুশি করবো তুমি বলার কে?আমার বউ আমার সব কিছু!
নেহা চোখ ছোট ছোট করে তাকালো।নিখিল হুট করে কামড় বসালো গলায়,ছেলেটা উদভ্রা’ন্তের মতো ছোট ছোট কামড় দিলো।নেহার সহ্য হচ্ছে না এই সুখময় যন্ত্র”ণা! নড়াচড়া করা শুরু করে দিলো,নিখিল নেহার হাত দুটি চেপে ধরে নেশা”তুর কন্ঠে বললো
,,এতো নড়াচড়া করো না লক্ষ্মীটি!
নেহা থেমে গেলো ততক্ষণাৎ,কামড় বাদ দিয়ে ওষ্ঠের বিচরণ চললো এবার।আদরে আদরে মুড়িয়ে নিতে চাইলো নেহাকে।
এ যেনো অনুভূতির তীব্র ঝ’ড়!সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে দুজন মানুষ।
বেশ খানিক পর নিখিল থামলো, নেহাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো–,,তুই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া!আমাকে পূর্ণ করার একমাত্র বস্তু তুই!তুই ছাড়া আমি এলোমেলো, ছন্নছাড়া।তুই না থাকলে আমার জীবনের গতি থেমে যাবে।সবার কাছে সেরা নিখিল মেহমেত চৌধুরী তুই ছাড়া নিঃস্ব!তুই না থাকলে আমাকে সামলানোর মতো কেউ নেই,তুই আছিস তো আমি আছি!ভালোবাসি ভীষণ, বিশ্বাস কর অনেক অনেক বেশি ভালোবাসি।তোকে হারাতে পারবো না জান।বলনা তুই আমার!
নেহা হাত উঁচিয়ে নিখিল কে জড়িয়ে ধরলো,নিখিলের বুকের উপর গুটিয়ে থেকেই বললো–,,বিশ্বাস করি তো ভালোবাসেন।আর আর,,,!
নিখিল অধৈর্য কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো–,,কি?
,,আমি আপনার!
নিখিল চোখ বুঁজে ফেললো, নিজেকে এতোটা খুশি কখনো লাগেনি তার,হৃদয়ে কেমন আনন্দে মো মো করে উঠলো। প্রতিধ্বনিত হলো একটি শব্দ আমি আপনার!
নিখিল এতোটাই শক্ত করে ধরেছে যেনো নেহা হারিয়ে যাচ্ছে কোথাও।
,,ছাড়ুন এবার আর কতো জড়িয়ে ধরে থাকবেন,এবার আমার হাড়গোড় ভেঙ্গে দিবেন নাকি?
,,ছাড়বো না,তুই হারিয়ে যাবি!পালিয়ে যেতে চাস সব সময়!
,,পাগ’ল আপনি!কথা দিচ্ছি তো হারাবো না।
,,ছাড়বো না আমি, আমার বউ আমার ভালোবাসার মানুষ।আমার কলিজাকে আমি জড়িয়ে ধরে রাখবো তাতে তোর কি চুপচাপ বসে থাক।
,,এভাবে থাকলে ঘুম চলে আসবে!
,,খবরদার নেহা ঘুমাবি না!বারান্দা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে আসবো তোকে।
নেহা নিখিলের বুকে নাক ঘষে বললো-,,এই আপনি আমাকে ভালোবাসেন।উপর থেকে ফেলে দিতে চাচ্ছেন।ছাড়ুন আমাকে লাগবে না আপনার
ভালোবাসা!
নিখিল চুমু দিলো নেহার থুতনিতে–,,অভিমান করছেন কেনো আমার লজ্জাবতী লতা।অভিমান করার পিছনে কিন্তু একটা রহস্য আছে জানিস সেটা কি?
,,জানতে চাই না,সরুন!
,,তুই শুনতে না চাইলেও বলবো আমি। আমার বউয়ের যখন আদর পেতে মন চায় তখন সে অভিমান করে!
,,নিখিল ভা,,,
,,কিহ?শুধু নিখিল বল না হয়,,,!
,,নি,,,খিল! আপনি একটা যা তা।
নিখিল হাসলো,বললো–,,জানি, নতুন কিছু বল!
এখন আমি আদর করবো,ভালোবাসবো তুই চুপ থাকবি বুঝলি!যদিও এতে আমার মন ভরবে না,তবুও তোর জন্য শুধু এতেই মন কে বুঝ দিচ্ছি!
নেহা ফিক করে হেসে দিলো,মিটি মিটি হেসে বললো
,,মামা বাড়ি আবদার নাকি, আদর করবো সরেন আমি অনুমতি দিবো না!
,,তোর অনুমতি চেয়েছে কে?মামা বাড়ি আবদার না তো জান,ভালোবাসার আবদার!ফিরিয়ে দিবি বল?
নেহা চুপ রইলো,, ভালোবাসার স্বীকারোক্তিতে মৌনতা কেই সম্মতির লক্ষ্মণ মানা হয়!
অনুভূতি তে ভরে উঠুক মন,কেটে যাক সময়,থেমে যাক সব কিছু শুধু বেঁচে থাকুক ভালোবাসা!
——————
মাঝরাত বৃষ্টি থেমেছে,ঝিঁঝি পোকারা ডেকে চলেছে সমান তালে।
নেহার কপালে কপাল ঠেকিয়ে নিখিল জিজ্ঞেস করলো
,,,যদি লিমিট ক্রস করতাম?তুই বাঁধা দিলি না কেনো আমায়?
নেহা রয়েসয়ে উত্তর দিলো–,,বিশ্বাস করি আপনাকে তাই!
,,আমাকে তো ভালোবাসিস না তাহলে এতো বিশ্বাস করিস কেন?
নেহা মৃদু হেসে বললো–,,বলবো না!
নিখিল বাচ্চামো করে বললো –,,বল না আমি শুনতে চাই!
–,,আপনি এতো অসহ্য কেনো বলুন তো?জ্বালি”য়ে মন ভরেনি নাকি।সরুন ঘুমাতে দিন।
নিখিল নেহার কোলের উপর মাথা রেখে শুয়ে পড়লো
,,ঘুমাতে পারবি না তুই,এখন আমার চুলে হাত বুলাবি আর গল্প করবি।সারারাত গল্প করবো আমরা!
,,পারবো না!উঠুন বলছি।
নিখিল নেহার কোমড় জড়িয়ে পেটে মুখ গুঁজে শুয়ে পড়ে।আমি পুরোপুরি এখনো তোকে পাইনি এটার শাস্তি স্বরুপ সারারাত তুই আমার চুল টেনে দিবি।আমি ঘুমাবো!
,,নিখিল আপনি বেশি লোভী!এতো কিছু করেও এখন ঘুমাতে দিচ্ছেন না কেনো।
,,এই এই মুখটা ছুটাবি না আমার নেহা,রাতের বেলা তুই ঝগ”ড়া করার তাল খুঁজবি না বলে দিলাম।কামড়ে দিবো তোকে,তুই আসলেই একটা মাথা মোটা,বউয়ের উপর লোভ করলে তাকে লো’ভী বলে না।এটা কে ভালোবাসা বলে।
নেহা নিখিলের চুলে টান দিয়ে বলে–,,আমি মাথা মোটা?আবার যদি বলেছেন তো,,,,!
নেহা কপট রাগ দেখিয়ে আবার বললো–,,এই এই ঘুমাবেন ভালো কথা পেটে সুরসুরি দিচ্ছেন কেনো?
,,আমার ইচ্ছা!চুপ থাক নেহা না হয় তোর ঠোঁটে বিশাল একটা চুমু খাবো আমি,পরে দোষ দিতে পারবি না!
,,একটা অসভ্য ঠোঁট কা’টা নির্লজ্জ লোক।আল্লাহ আমার কপালে দিছে!
——————
সকালে ঘুম থেকে আগে উঠলো নিখিল,নেহার এক হাত এখনো ওর চুলে, মাথা গিয়ে ঠেকেছে নিখিলের বুকে।ঘুমন্ত নেহা কে নিজের বুকে দেখে নিখিল তৃপ্তির হাসি হাসলো!
অবশেষে নেহা তার,মেয়েটা নিজে বলেছে সে শুধু নিখিলের!আর কি চাই জীবনে?নিখিল এখন পরিপূর্ণ মানুষ,ভালোবাসায় পূর্ণতা পাওয়া প্রতিটা হৃদয়ে বহমান সুখের অনুভূতির কাছে সব কিছুই ফিকে পড়ে যায়!
নিখিল নেহার কানের কাছে ফিসফিস করে বললো
,,সুপ্রভাত,মিসেস চৌধুরী!
নেহা নড়েচড়ে উঠলো,মুচকি হাসিটা নিখিলকে পা’গল করতে যথেষ্ট!
নিখিল নেহার পেটে নাক ঘঁষে বললো–,,বউ!
,,হুম!
,,ভালোবাসি!
নেহা হেসে উঠলো এবার।নিখিল টেনে উঠিয়ে দিয়ে বিছানা ছেড়ে নেমে গেলো,নিখিল উঠে দাঁড়িয়ে বললো
,,এই এদিকে আয় একটা মর্নিং কিস নিয়ে যা!
নেহা কোমরে হাত দিয়ে বললো,,দেখুন সারারাত আপনার হাতির মতো মাথাটা কোলের উপর রেখেছেন, সোজা হয়ে না ঘুমাতে পেরে এখন আমার কোমড় ব্যাথা করতেছে।আপনি আছেন ঢং করা নিয়ে,বিরক্ত করবেন না একদম,সবার কাছে গিয়ে বলবো আপনি আমার কোমড়ের বেহাল দশা করে দিয়েছেন!
নিখিল ঠোঁট টিপে হাসলো,এই বোকাটা কবে বুঝদার হবে!
,,সত্যি এটা বলবি তুই?
,,হ্যাঁ!সত্যি কথা বলতে কি সমস্যা?
নিখিল এবার হু হা করে হেসে উঠলো–,,তোর কথা কেউ বিশ্বাস করবে না পরে যদি উল্টো পাল্টা তোকে ওরা কিছু বলে তখন আমাকে কিছু বলতে পারবি না!
নেহা বিরক্তি নিয়ে বললো–,,সবাই আপনার মতো নাকি?
নেহা ঠাস করে ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ করে দিলো।
নিখিল কে রুমে রেখেই ফুরফুরে মেজাজে নেহা সবার কাছে গেলো।রিসোর্ট সংলগ্ন রেস্টুরেন্টে খেতে বসেছে সব গুলা।সকাল নয়টা বাজছে ঘড়িতে,আজ সূর্যি মামা দেখা দেয় নি,আকাশ এখনো মেঘলা!
নেহা কে দেখে সবাই হাসলো,নেহা ও হাসি দিয়ে গিয়ে বসলো–,,তোমরা তো আমাকে রেখেই খেতে বসে গেলে দেখছি!
নেহার কথায় সাব্বির বলে উঠে–,,তোদের ঘুমের ডিস্টার্ব করতে চাইনি তাই!ভেবেছি বেলা করে ঘুমাবি,আমার তো পেটে ইঁদুর দৌড়াচ্ছিলো তাই খেতে বসে গেছি!
নেহা বিরস মুখে প্লেট উল্টালো–,,বিরবির করে বললো আর ঘুম!
জেরিন বলে উঠলো–,,মুখ ফুলিয়ে রেখেছিস কেনো?তোর তো এখন খুশি থাকা উচিত!
নেহা মুখ বাঁকিয়ে বলে উঠলো–,,কেনো খুশি হবো বলো তো,আমার কোমর টা একদম ব্যাথা হয়ে গেছে তোমাদের ভাইয়ের জন্য,,,,
নেহার কথা পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগেই সমান তালে কাশি দিয়ে উঠলো মিহির,সাব্বির আর জেরিন!
বৃষ্টি গুঁতো মেরে বললো–,,কি বলছিস?
নেহা বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলো–,,বলার আগেই তো সবাই কাশি দিয়ে উঠলো,বুঝলাম না একসাথে সবার গলায় খাবার কেনো আটকালো!
নিখিল তখনই হেঁটে এসে বসলো নেহার পাশের চেয়ারে।মিহিরের দিক পানি এগিয়ে দিয়ে বললো–,,নে পানি খা!আগে পুরো কথা শোনা উচিত ছিলো তোদের।
নেহা বিরক্তি নিয়ে বললো আপনি আর কথা বলবেন না,বিরক্তকর সারারাত বসিয়ে রেখে কোলের মাথা দিয়ে ঘুমিয়েছেন বালিশের কি অভাব পড়েছিলো নাকি!
চারজন চোখ বড় বড় করে তাকালো,যা ভেবে পাঠিয়েছে তা কি তবে হয়নি!
সাব্বির পরোটা মুখে পুরে বললো–,,আই হেইট মাই মাইন্ড!
নেহা বোকা বনে গেলো পুরো,পরক্ষণেই নিজে নিজে ভাবলো কি ভেবে এভাবে রিয়েক্ট করলো ওরা? নেহা কোমর কোমর দুইবার ভেবেই দাঁত দিয়ে জিব কাটলো,লজ্জায় এখন মাটি ফাঁক করে ঢুকে পড়তে মন চাচ্ছে!ছি!ছি! সবাই এখন কি ভাবছে,লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেলেছে পুরো।নিখিল এবার নেহার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো
—,,,আগেই না করেছিলাম, এখন লজ্জা পেয়ে কি লাভ পেটে তো কোনো কথা থাকে না তোর।সমস্যা নেই এটা তো পরের বার হবেই!
নেহা অন্য দিক মুখ ফিরিয়ে ফেললো,নিখিল কে টেনে মিহির বললো–,,কিরে শা’লা তুই কি আদো ছেলে এতো সুন্দর বউ রেখেও তুই এখনো কুমার!তোর পুরু’ষত্ব নিয়ে এখন আমার প্রশ্ন তুলতে মন চাচ্ছে।
,,তুই আমাকে কি মনে করিস হ্যাঁ।অন্যের ঘরের কাহিনি এতো শুনতে চাস কেন?যা হওয়ার হয়েছে তোদের এতো জানতে হবে না।
খাওয়া শেষ হতেই নেহা কে এক প্রকার টেনে নিয়ে গেলো বৃষ্টি। মুখ ফুলিয়ে বললো–,,তোর আর ভাইয়ার মাঝে কিছু হয়নি?
নেহা থতমত খেয়ে গেলো–,,তোকে বলবো কেনো?
আর তোর আর আপুর সাথে আমার কোনো কথা নাই,তোরা আমাকে রাতে মিথ্যা বলেছিস।
,,তোর ভালোর জন্যই তো এতো কিছু করলাম,ভাইয়া আর তুই দুজনই কাছাকাছি আসতে পারতি।
নেহা দাঁতে দাঁত চেপে বললো
,,আমাকে একবার বলবি না?আমি কি তোদের কথায় না করতাম নাকি।তাই বলে এমন একটা সময় এমন একটা কাজ করবি তুই তোর কি মনে নাই?
,,কি মনে থাকবে?
,,আজ কয় তারিখ?
বৃষ্টি তারিখ মনে করে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো,মিন মিন করে বললো–,,সরি ইয়ার! খুশি তে সব ভুলে গেছিলাম।তোর পিরি’য়ড চলছে ভুলেই গেছিলাম!
,,এখন সরি বলে কি লাভ!তোর ভাইয়ার কি অবস্থা হয়েছিলো জানিস।
বলেই নেহা হাসতে শুরু করলো।
বৃষ্টি বললো–,,মজা নিচ্ছিস!
,,আমি কেনো নিবো তোরা যা করেছিস ওইটা কি ছিলো?নিখিল ভাই জানতো আগে থেকেই, রুম থেকে চলে যেতেও চেয়েছে,কিন্তু তোরা বাহির থেকে লক করে দিলি,যার ফল ভোগ করতে হলো আমাকে!অস’হ্যকর।
বৃষ্টি কাচুমাচু হয়ে বললো
,,ভাইয়া জানতো মানে তুই বলেছিস?
,,না আমি বলিনি,তোর ভাইয়া নিজে থেকেই সব বুঝে গেছিলো,আমার জামাই টা কতো ভালো দেখ আর তরা সব মীরজাফরের সহকর্মী!এতো ভালো একটা জামাই আমার,না হলে কি হতো ভাবতে পারছিস।
জেরিন ধম’ক দিয়ে বললো–,,তোরা দুইটায় কি ফুসুরফাসুর করস আমার মতো একটা মানুষ কে কি তোদের চোখে পড়ে না?
আজ রাতের ট্রেনে ফিরে যাবো আমরা এখন থেকে বিকাল পর্যন্ত ঘুরবো সবাই,যা গিয়ে তৈরি হয়ে আয়!
————–
ঘুরতে বেরিয়েছে সবাই আগে যাচ্ছে জেরিন, সাব্বির,রৌফ।মাঝে নেহা,নিখিল,পেছনে বৃষ্টি আর মিহির।
নেহা ছুটোছুটি করে আগে যেতে চাইছে।নিখিল হাত চেপে ধরে বলে–,,এই ব্যাঙের মতো লাফাবি না আঁকাবাকা রাস্তা পড়লে হাত পা কে’টে যাবে!
নেহা ঠোঁট উল্টে ফেলে,আজ বেশি দূর যায়নি ওরা একটা ঝর্ণা দেখা বাকি রয়ে গেছিলো ওটাই দেখতে যাচ্ছে আজ!
পাহাড়ের খাঁজে উঁচু নিচু পাথরের উপরের পথ কিছুদূর আসার পর নিখিলের ফোন আসায় সে থামে।নেহা কে বলেছে কড়া করে নড়বি না এক পা। মেয়েটা কি কথা শোনার মতো,সেই ছুট লাগালো সামনে।
দু চার কদম যাওয়ার পরই ধাপ করে পরে গেলো নেহা,এর পাশেই বেশ বড় খা’দের মতো জায়গা!
নেহা ব্যাথা পেয়ে মৃদু শব্দ করে উঠলো।নিখিল ঘুরতেই নেহাকে বড় গ’র্ত টার পাশে ঝুঁকে থাকতে দেখে আঁতকে উঠে, যদি নেহা পড়ে যেত তো?নিখিল তড়িঘড়ি করে আগায়।
নেহার হাত ধরে রাখা কালো জিন্স,পিংক টি-শার্ট পড়া মেয়েটা জিজ্ঞেস করে–,,ম্যাম আপনি ঠিক আছেন?কোথাও লাগেনি তো!
আরো একটি মেয়েও এগিয়ে আসলো,নেহা কে যত্ন সহকারে উঠিয়ে বললো–,,ম্যাম যদি কিছু হয়ে যেতো?আপনি এই জায়গায় একা কেনো আসলেন?স্যার ভীষণ রাগ করেছেন আপনার উপর!
নেহা অস্পষ্ট সুরে বলে–,,স্যার?
পাশে থাকা অন্য মেয়েটি বলে উঠে—,,ও কিছু না।
নিখিল এসে নেহার হাত ধরে পকেট থেকে রুমাল বের করে বেঁধে দেয়।তার মুখ থমথমে নেহা বুঝতে পারছে নিখিল বেশ রেগেছে!এ জন্য এতো চুপচাপ। নেহা ছলছল চোখে তাকালো,নিখিল একবারের জন্য ও তাকায়নি।
নিখিল মেয়েগুলোর দিকে তাকিয়ে বললো–,,থ্যাংস!আপনারা না থাকলে যে কি হতো।
মেয়ে গুলো বিনয়ের সাথে বললো–,,এটা তো আমাদের দায়িত্ব স্যার!
নিখিল নেহার হাত জোরে চেপে ধরে সামনে হাঁটা দিলো।
ওরা চলে যেতেই মেয়েগুলার মধ্যে একজনের মোবাইল বেজে উঠলো
–,,স্যার! ম্যাম ঠিক আছে।
সাহিলের রাগী কন্ঠ—,,তা তো দেখতেই পাচ্ছি!ঘুরা শেষ না হওয়া অব্দি ওদের আশেপাশেই থাকবে।চঞ্চল প্রচুর আবার যে কোনো মুহুর্তে পড়তে পারে!
———–
–,,নিখিল!
নেহার ডাকে একবারও সাড়া দেয়নি নিখিল।নেহার এবার কান্না পেয়ে যাচ্ছে।
জেরিন, বৃষ্টি, সাব্বির, রৌফ দাড়িয়ে ছিলো ঝর্না থেকে কিছুটা দূরে ওদের কে যেতে দেখেই মিহির জিজ্ঞেস করলো–,,কিরে তোদের দেরি হলো কেনো?
নিখিল শুধু বললো–,,পিছিয়ে পড়েছিলাম তাই!
দেখা শেষ কর তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে।
বৃষ্টি বললো–,,নেহা তোর হাতে কি?
নিখিলের ত্যাড়া জবাব—,,ওর আমার রুমাল গুলা নাকি হাতে পেঁচিয়ে হাঁটতে ভালো লাগে তাই লাগিয়েছে!
ওরা কিছুটা নিচে নামলো ঝর্ণা দেখার জন্য। জেরিন ডাকলো ওই নেহা আয়!
নেহা মাথা নাড়িয়ে না করলো।
নিখিল দাঁতে দাঁত চেপে বললো–,,এখন কেনো যাবি না,যা একটু আগেও তো একাই গিয়েছিলি,তোর তো সাহস আবার রন্ধ্রে রন্ধ্রে!
নেহা নিখিলের বাহু চেপে ধরে বললো–,,রাগ করেছেন?স্যরি আর কখনো একা একা যাবো না, আপনার কথা শুনবো!
,,হাত ছাড় আমার! আমার কথা শুনতে হবে না তোর,আমি কে আমার কথা কেনো শুনবি তুই? যা খুশি কর তোর কিছু হলে তো আমার কিছু যায় আসে না।
নেহার হাত ছাড়িয়ে অন্য পাশে গিয়ে দাঁড়ালো নিখিল।
নেহা গিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো নিখিল কে, নিখিল ঠোঁট কামড়ে হাসলো, একটু তো শা’স্তি দিতেই হবে,তখন যদি পড়ে যেতো ভেবেই নিখিলের রু’হ কেঁপে উঠে!একদম গলা যাবে না।
নিখিল নিজের থেকে সরিয়ে কঠিন রাশভারী কন্ঠে বললো–,, সবার সামনে একদম এসব ন্যাকামো করবি না।চুপচাপ দূরে দাড়িয়ে থাক।
নেহার চোখ মুখ অন্ধ হয়ে আসলো,মন খারাপ হতে আর কি লাগে!নেহা চুপচাপ দাড়িয়ে থাকলো,সবাই ফিরে এসে দেখলো দুইজন দুদিকে দাড়িয়ে নেহাও বেশি কথা বলছে না!বুঝলো কিছু তো হয়েছে।
রিসোর্টে ফিরে যাওয়ার সময় পাথরে আঁটকে ফের নেহা হোঁচট খেলো,পা কে’টে গেছে বুঝেও দাঁড়ায়নি,গটগট করে হাঁটতে থাকলো।নিখিল দেখে ডাকলো
,,নেহা দাঁড়া বলছি!
নেহা শুনলো না। রিসোর্টে গিয়ে আগে ভাগেই লাগেজ হাতে বাহিরে এসে দাঁড়ালো বিকাল হয়ে এসেছে।এবার ফেরার পালা।
রেল স্টেশন পর্যন্ত কোনো কথা বলেনি নেহা!নিখিল কতোবার বলেছে পা টা দেখা নেহা জে’দ করবি না।শুনেনি এতো তে’জ শা’স্তি দিতে গিয়ে এখন নিখিলই শা’স্তি পাচ্ছে!
ট্রেন যাত্রাটা সব সময় রোমাঞ্চকর! আড্ডা দিচ্ছে বৃষ্টি, জেরিন,সাব্বির,রৌফ।
অন্য কেবিনে বসে আছে মুখ ফুলানো এক দম্পতি!
গাড়িতে উঠার আধঘন্টার মধ্যেই নেহা ঘুমিয়ে গেলো।নিখিল তপ্ত শ্বাস ছাড়লো,মিনিটে মিনিটে অভিমান করার মতো একটা বউ পেয়েছে!
উঠে গেয়ে শুভ্র পা টা হাতে নিলো,একঅংশে রক্ত জমাট বেঁধেছে।নিখিল পকেট থেকে বেন্ডেজ টা বের করলো,ট্রেনে উঠার আগেই ফার্মেসি থেকে নিয়ে এসেছিলো।
আলতো হাতে লাগিয়ে দিলো বেন্ডেজ, মাথাটা তুলে নিলো নিজের কোলে।হাত থেকে রুমাল টা খুলে সেখানেও বেন্ডেজ করে দিলো।
নেহার কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো।মাথাটা বুকের সাথে আলতো চেপে ধরে বললো–,,তুমি এমন অবুঝ কেনো বলোতো?তোমার কিছু হলে আমার কি হবে একবার ভেবেছো!পারো তো শুধু বাচ্চামো করতে।
বেশ অনেক সময় আড্ডা দিয়েছে,অপর পাশে দুজনের কি খবর জানার জন্য দল বেঁধে চলে আসলো,রৌফ ঘুমিয়ে পড়েছে।
দরজায় সবাই মিলে উঁকি দিয়েছে।মুগ্ধ হয়ে দেখলো দুজনকে,নেহা নিখিলের পেটের কাছে শার্ট আঁকড়ে ধরে ঘুমাচ্ছে নিখিল সিটে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে,হাত দুটি আগলে ধরে আছে নেহাকে!
এদের রাগ,অভিমান,ঝগড়ার আঁড়ালে ভালোবাসাটা খুব সুন্দর ভাবে লুকানো।দুজনই সমান সমান কেউ কারো থেকে কম না,শুধু ভালোবাসাটা প্রকাশ করতে চায় না সহজে,এদের কাজেই ভালোবাসা ফুটে উঠে,একে অপরের খেয়াল রাখার মাঝে গভীর মায়া জড়িয়ে যা নিজেরা ঠিকই বুঝে তবুও বলতে নারাজ!
এতো সুন্দর দুষ্টু মিষ্টি একটা সম্পর্কে কারো যেনো নজর না লাগে।সব ভাই বোনরা যেনো মনে মনে একই দোয়া করলো ওদের জন্য।
চলবে?