#প্রণয়ের_সুর
#পর্ব২০
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
এই তুই কি একটা কুম্ভ’কর্ণ নেহা?এতো কতো ঘুম আসে তোর।রাতে এতো ঘন্টা ঘুমাইলি সকালে,এখন সারা দুপুর ঘুমিয়ে সন্ধ্যায় ও চোখ খুলতে পারছিস না!
নেহার ঘুম জড়ানো কন্ঠ–,,ছা..ড়ুন! ঘুমাবো আমি সবাই যাও রুম থেকে।
নিখিল ব্যস্ত হাতে নেহার গালে হাত রাখলো–,,অসুস্থ তুই, কি হয়েছে বল এতো ঘুম তো স্বাভাবিক না!
নেহা বুঁজে আসা চোখ খোলার চেষ্টা করে বললো–,,ঘুমের ঔষধ খেয়েছি!
বিছানায় বসে থাকা সাব্বির,জেরিন,বৃষ্টি একত্রে বলে উঠলো –,,কেনো?তুই কি আত্নহ”ত্যা করতে চাইছিলি নেহা!
নিখিল একটা জোরে ধম’ক দিলো তিনজন আশপাশ দেখলো ভয় নিয়ে।
নেহা বিরক্তি নিয়ে বললো–,,ঘুম আসছিলো না তাই খেয়েছি, ম’রতে যাবো কোন সুখে? উফ!যাও তো তোমরা সত্যি আমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে।
নিখিল এবার নেহার চোয়াল আলতো হাতে চেপে ধরে বললো–,,ঘুমের জন্য কি অন্য কোনো উপায় ছিলো না।রাগ করে ঘুমানোর জন্য ঔষধ খেতে হবে কেনো তোকে?
নেহা নিখিলের হাত ঝাপটা মেরে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো
—,,আমি কারো প্রতি রাগ দেখাই না।যত রাগ আছে সব নিজের উপর, আমার জীবন যা খুশি করবো,আপনি এখান থেকে যান।ঘুমাবো!
নিখিল দাঁতে দাঁত চেপে বলে–,,তোরা রুম থেকে বের হ তো এর ডো’জ নেওয়ার সময় হয়েছে।
তিন জন সুর সুর করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
নেহা টলমল পায়ে গিয়ে বিছানার মাঝ বরাবর শুয়ে পড়লো।নিখিলের প্রতি এতো রাগ হয়েছিলো সকালে, ঘুমানোর কতো চেষ্টা করলো কিন্তু কোনো উপায় দেখতে না পেয়ে দাদীর রুম থেকে চুপিচুপি ঔষধ নিয়ে খেতেই ঘুম পেলো দুপুরের দিক।
নিখিল এগিয়ে গিয়ে পাশে বসলো,নেহা মুহুর্তেই ঘুমে বিভোর! নেহার চুলে হাত বুলিয়ে হাত সরাতে নিলেই নেহা নিখিলের হাত আঁকড়ে ধরলো।দু হাতে জড়িয়ে কানের পাশে রেখে নিজের গাল রাখলো হাতে,যেনো আরামের বালিশ টা খুঁজে পেয়েছে।
নিখিল হাসলো,নেহা ঘুমের মাঝেই চোখ মুখ কুঁচকে ফেলতে চাইলো।যেনো খুব বা’জে কোনো স্বপ্ন দেখছে!
নেহার ঠোঁট নড়ে উঠলো বির বির করে কি যেনো বলছে।নিখিল মুখ এগিয়ে নিয়ে গেলো শুনার জন্য!
–,,তু….ই অনেক খা,,রাপ নিখিল!
এতটুকু কথা স্পষ্ট শুনলো নিখিল,স্বপ্নে তার সাথেই কথা বলছে!
নিখিলের পকেটে থাকা মোবাইল টা বেজে উঠলো, নেহা র মাথার কাছ থেকে হাত সরিয়ে নিতেই নেহা আবার আঁকড়ে ধরলো, এবার নেহা টি-শার্টের হাতায় খামচে ধরেছে,আধশোয়া থেকে এবার ব্যালেন্স হারিয়ে নিখিল শুয়ে পড়লো বিছানায়!নিখিল মোবাইল টা এক পাশে রেখে দিলো।
নেহা উষ্ণতা খুঁজে এসে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো নিখিল কে।
নিখিল হেসে ফেললো এবার জেগে থাকলে এই মেয়ে কোনো দিন এভাবে ধরতো?উল্টো নিখিল ধরলেই বলে উঠতো সরুন সরুন!
নিখিল নেহার কপালে ওষ্ঠ ছোঁয়ালো।
নিখিলের সম্পূর্ণ নজর নেহার মুখের উপর ক্ষণে ক্ষণে ঠোঁট উল্টাচ্ছে নিখিল দেখলো আগ্রহ নিয়ে।
কিছু সময় কাটলো এভাবে,,নিখিল তাকিয়ে দেখলো অনিমেষ!
মেয়েটা বিরবির করে আবার বললো–,,কেনো চলে যাবেন, ভালোবাসি তো খা,রু,,,,,,!
নিখিলের যেনো পিলে চমকে উঠলো,নেহা কাকে ভালোবাসি বললো?নিখিলের নাম তো ন দিয়ে শুরু খা দিয়ে কার নাম!
এই অস্পষ্ট সামান্য তম কথাটিই নিখিল কে এলোমেলো করতে যথেষ্ট। নিখিল এবার হিসাব মিলাতে বসলো!
নেহা বিয়ে করতে চায়নি পালিয়ে ছিলো,বিয়ের প্রথম রাতেও নেহা কে জিজ্ঞেস করেছিলো কাকে ভালোবাসে বলেনি! কয়েকবার বৃষ্টি আর ওর মুখে শুনেছে কাউকে নেহা ভালোবাসে, ওইদিন ও বললো নেহা নিখিল কে ভালোবাসে না অন্য কাউকে ভালোবাসে।কে সে যাকে নেহা ভালোবাসে, বার বার একই ঘটনা কখনো কাকতালীয় হতে পারে না।নিখিলের বুকে তীব্র ব্যাথার সৃষ্টি হচ্ছে তার অবুঝ পাখিটা তাহলে অন্য কাউকে ভালোবাসে!নেহা কি ওর সাথে থাকতে এই কারনেই না করেছে,বিদেশ কি ওই ছেলেটার কাছে যেতে চায়?
নিখিল ঘুমন্ত নেহার তুলতুলে শরীর টা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে
–,,কোথাও যাস না তুই প্লিজ!কথা দিয়েছিলি নেহা,কেনো অন্য কাউকে ভালোবাসতে হবে তোর?আমাকে ভালোবাসা যায় না!জানি একটু বেশিই রাগ দেখাই তাই বলে চলে যাবি।কোথাও যেতে দিবো না আমি দরকার পরলে ওই ছেলেকে নিজ হাতে খু’ন করবো তাও তুই আমার ছাড়া অন্য কারো হতে পারবি না!
—————
রাতে খাবার টেবিলেও নেহার দেখা নেই।শাহআলম চৌধুরী ছেলের উদ্দেশ্য বললো–,,তুমি কাল ভোরে সিলেট যাচ্ছো অফিসের কাজে!কাজ এক সপ্তাহের মতো লাগবে শেষ হতে।
শহিদুল চৌধুরী চমকালেন বড় ভাই আবার কোন কাজে পাঠাচ্ছেন নিখিল কে?তারা তো কিছু জানে না!
মাহফুজ চৌধুরী বললেন–,,ভাইজান কোন কাজ আবার সিলেটে পড়লো?আমরা তো কিছু জানি না!
–,,নিখিল বর্তমানে তো মেইন অফিসে চাকরিই করে না সামান্য একজন এমপ্লয়ি ও আমাদের দ্বিতীয় ব্রান্চের ওখানটায় একটা কাজ আছে নতুন ডিল হবে, যেহেতু ওর অভিজ্ঞতা ভালো তাই কাজটা ওকেই দিতে চাচ্ছি!
নিখিল গমগমে কন্ঠে বললো—,,আমার থেকে আরো উচ্চপর্যায়ের কর্মী আছে আপনার অফিসে তাদের না দিয়ে আমাকে দিয়ে কাজ করালে অন্যা”য় হবে তাদের প্রতি।
–,,তোমার থেকে সাজেশন চাইনি আমি,চাকরি করতে হলে আমার নিয়ম মেনেই করতে হবে।যতই জেদ ধরে বসে থাকো না কেনো ভুলে যাবে না আমাদের পরে এই অফিসের দায়িত্ব তোমাকে আর সাব্বির কেই নিতে হবে,রৌফ বড় হলে ও নিজেও যোগ দিবে!
–,,আমি যাবো না!
–,,যেতে তোমাকেই হবেই!
কথা টা বলে রেগে টেবিল ছেড়ে উঠে গেলেন শাহআলম চৌধুরী!
হামিদা বেগম তপ্ত শ্বাস ছাড়লেন,বাপ ছেলের এই ঠুকা’ঠোকি কবে যে শেষ হবে কে জানে।
নিখিলের মেজাজ এমনিতেই খারাপ, তার উপর এখন এই কথা শুনে আরো বিগড়ে গেলো মাথা।
নেহার থেকে ও ওর জবাব চাই, এতো কেনো লুকোচুরি, ও তো বলেছে নিজের মনের কথা নেহাকেও আজ বলতেই হবে!
ঘড়িতে রাত এগারোটা, তাহমিদা বেগম কিছুক্ষণ আগে এসেই নেহা কে ধরে বেঁধে খাইয়ে গেলেন।নেহার মাথা ভার হয়ে আছে তাই চোখ বন্ধ করেই শুয়ে আছে।
আর কোনো দিন এই ছাতার ঔষধ ছুঁয়েও দেখবে না কেমন মাতা’লের মতো ঘুম আসে, যেনো দুনিয়া ঘুরতেছে!
নেহার শীত লাগা শুরু হয়েছে ইতিমধ্যে পায়ের সাথে এবার কোমর ব্যাথাটাও বেড়েছে।ব্যাথাটা সত্যি বলতে বেশি,তাহমিদা জোর করেছিলের জ্বরের ঔষধ খেতে, রাতে ব্যাথা বাড়তে পারে জ্বর ও আসতে পারে কিন্তু নেহা বললো লাগবে না।
এখন নেহার মনে হচ্ছে খেয়ে নিলেই হয়তো ভালো হতো।
মধ্যরাত নেহার রুমে আসলো নিখিল।নেহার চোখটা লেগেছে একটু।নিখিল এগিয়ে গিয়ে দেখলো কাঁথা জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে নেহা,এসি বন্ধ করা!গরমে মেয়েটা সব কিছু বন্ধ করে কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছে কেনো,নিখিল নেহা কপালে হাত রেখে চমকালো।জ্বর এসেছে!
নিখিল কাঁথা সরিয়ে দিলো কিছুটা নেহার হাতের দিক নজর গেলো, একটা হাত কোমরে চেপে ধরে রেখেছে!
নিখিল অনুসূচনায় কাতর হলো, এভাবে কষ্ট দিয়ে ফেললো মেয়েটাকে!
নিখিল পুরোপুরি সরালো কাঁথা টা রুমের লাইট বন্ধ। নেহার হাত সরিয়ে দিলো,কামিজ গলিয়ে নিজের শীতল হাতটা রাখলো নেহার কোমরে।
ঠান্ডা স্পর্শে নেহা কেঁপে উঠলো, নিখিল আলতো স্লাইড করতেই নেহা মৃদু চেঁচিয়ে বলে উঠলো–,,আহ!ব্যাথা।
নিখিল ফোনের লাইট টা জ্বালাতেই নেহার চোখ পিট পিট করে উঠলো।ঘুম হালকা হয়েছে ওর।
কামিজ কিছুটা সরাতেই উন্মুক্ত হলো কোমর!ততক্ষণাৎ উঠে বসে পড়লো নেহা নিখিলের হাত ধরে বলে উঠলো
–,, কি করছেন আপনি?
–,,দেখতে দে।
—,,না!
–,,অনুমতি চাইনি।আমার কাজ আমাকে করতে দে না হয় পরিনাম ভালো হবে না!
নেহার অভিমানী মন এবার অনুরাগী হলো,বিছানার চাদর খামচে ধরে মুখ ঘুরিয়ে বসে রইলো।
লাইটের আলো পড়তেই দেখতে পেলো ফর্সা কোমরে নীল বর্ণের দাগটা চকচক করছে।আবার ছুঁয়ে দিলো নিখিল।ঠোঁট বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিলো কোমর।তিড়বিড় করে কাঁপলো নেহার নাকের পাটা,অভিমান রাগ এক সাথে বাড়লো,কষ্ট দিয়ে এসে আবার আদিখ্যেতা।
নিখিল উঠে গিয়ে ব্যাথার মলম আনলো,নেহা কাঁথা আবার জড়িয়ে পিছিয়ে গেলো।
নিখিল খাটের উপর উঠে বসলো।রাশভারি কন্ঠে বললো–,,আপোষে দিবি নাকি জোর করবো আমি!
–,,আমাকে দিন আমি লাগিয়ে নিবো আপনি এখান থেকে যান!
–,,লাগানোর হলে এতোক্ষণ লাগিয়েই ফেলতি।আমার ছোঁয়াতে তোর অস্বস্তি তো হবেই।মনে মনে তো নিজের ভালোবাসার মানুষের ছোঁয়া আশা করিস তুই! ওই ছেলে এসে ছুঁয়ে দিলে তো এখন নাচতে নাচতে কাছে চলে যেতি!
নেহা চোখ বড় বড় করে তাকালো।অবাকের রেশ এখনো কাটাতে পারছে না, নিখিল ভাই তাকে এমন মনে করে,কোনো ছেলে চাইলেই তাকে ছুঁতে দিবে!
–,, আপনি আমাকে এতোটা নিচ মনে করেন নিখিল?
নেহার কম্পিত কন্ঠ,নিখিল নেহার কোমরে মলম লাগিয়ে উঠে দেখলো নেহাকে,নেহার চোখে মুখে অবাক হওয়ার রেশ!যেনো কথাটি মোটেও আশা করেনি এখন।
–,,ভুল কি বললাম!তুই যাকে ভালোবাসিস তাকে তো স্বপ্নেও দেখিস ছেড়ে যাবেন না বলে আটকাতে চাস ভালোবাসি বলে বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলিস।ওই কাঙ্ক্ষিত মানুষটার ছোঁয়া আশা করতেই পারিস!
নেহা রাগে চেঁচিয়ে বলে উঠলো–,,চুপ করুন বলছি।আপনি যদি এতোই খারা’প ভাবেন আমাকে, যদি মনে করেন অন্য পুরুষের ছোঁয়া আমি আশা করি! ঘুরিয়ে ফিরিয়ে না বলে বললেই তো পারেন নেহা তুই চরিত্র’হীন!
নেহার কথা শুনে নিখিল রাগে নিজের হাত দিয়ে চেপে ধরলো নেহার কোমর,ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলো নেহা।
নিখিল দাঁত কিড়মিড় করে বললো
–,,লিমিট ক্রস করবি না নেহা । সব কিছু বলার অধিকার আছে মানেই এই না যা মুখে আসবে তাই বলে দিবি!বেশি বাড় বাড়বি না তাহলে প্রথমে তোকে মা’রবো পরে নিজেকে।
অন্য কাউকে ভালোবাসিস তুই?এই তোর সাহস তো কম না নিখিল মেহমেত চৌধুরীর বউ হয়ে অন্য কাউকে ভালোবাসার কথা মুখে আনিস!
নিখিলের ধমকে কেঁপে উঠলো নেহা,রাগে অভিমানে এবার চোখ ভরে আসলো,টপটপ করে গড়িয়ে পড়লো নোনাজল।
কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি তুলে ফেলেছে, কাঁপা ভাঙ্গা কন্ঠে বলে উঠলো–,,কেনো মুখে যা আসবে তা শুধু আপনিই বলতে পারেবেন নাকি?না জেনে শুনে সব সময় রাগ দেখান।বার বার কষ্ট দেন,কিছু বলতে গেলেই তো ধম’ক দেন।দুইদিন তো এরিয়ে চললেন সন্ধ্যায় এসে লোক দেখানো ভালোবাসা দেখালেন।সবার সামনে মহান সাজতে গিয়ে আমার মন নিয়ে কেনো খেলেন আপনি?
চলে যান সামনে থেকে আমি আপনাকে দেখতে চাই না আর চোখের সামনে!যে মানুষ টা আমার সম্পর্কে এই রকম ধারনা রাখতে পারে তাকে চাই না আমি!
–,,আমি লোক দেখানো ভালোবাসা দেখাই?আমার ভালোবাসা কে এই মনে হয়েছে তোর?চলে গেলে শান্তিতে থাকবি?তাহলে আর আসবো না তোর সামনে!
নেহা নিঃশব্দে চোখের জল ফেললো!নিখিল কাঁচের গ্লাস টা হাতের মুঠোয় রেখে ভেঙ্গে ফেললো।আঁতকে উঠলো নেহা, গড়গড় করে পড়তে থাকলো লাল রঙা তরল।নেহা দ্রুত এসে হাত ধরতে চাইলো, নিখিল হাত সরিয়ে গটগট পায়ে সেখান থেকে চলে গেলো!
তা দেখে নেহা আবারও ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো।কেনো এতো দুরত্ব চলে আসে তাদের মাঝে,একদিনের ভিতর আবার নিখিল তার থেকে দূরে চলে গেলো,আর নিজের মুখটাও কি একটু বন্ধ রাখতে পারলো না!দূরে চলে যান বলেছে তো ঠিকই কিন্তু আদো কি চায় দূরত্ব, নিখিল কে না দেখে নেহা কি করে থাকবে।
নেহা ঠিক করে নেয় সকালে গিয়ে রাগ ভাঙ্গাবে, যেভাবেই হোক নিখিল কে বুঝাবে সে শুধু নিখিলকেই ভালোবাসে অন্য কাউকে না!
——————
সকাল সাতটায় তড়িঘড়ি করে ঘুম থেকে উঠলো নেহা।ফ্রেশ হয়ে দৌড় লাগালো নিখিলের রুমের দিক,পা ব্যাথা যেনো উবে গেছে!
নেহা বার কয়েক ডাকলো–,,নিখিল নিখিল আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন?রুমে গেলো না নেহা,যতই রাগ ভুলে আসুক নিখিল ওকে যতক্ষণ না রুমে যেতে বলবে ততক্ষণ যাবে না!
নিখিলের সাড়াশব্দ না পেয়ে নেহা নিচে নামলো, ইতিমধ্যে অনেকেই খাবার টেবিলে শুধু বাড়ির পুরুষরা নেই!নেহা গিয়ে বসলো বৃষ্টির পাশে
নেহা কন্ঠ খাদে নামিয়ে জিজ্ঞেস করলো
–,, তোর ভাই কই রে?
–,,কেনো তুই জানিস না!তোকে বলে যায়নি?সিলেট গেছে অফিসের কাজে,রাতে বললো যাবে না।কিন্তু ভোর হওয়ার আগেই বেরিয়ে গেলো!
নেহা চোখ বড় বড় করে তাকালো,নেহার চাহনি দেখে বৃষ্টি বুঝলো নেহা কিছুই জানে না।নেহার হাস্য উজ্জ্বল মুখে মুহুর্তেই ঘন অন্ধকার নেমে আসলো!
হামিদা বেগম এসে বললো–,,কিরে নেহা নিখিল তোকে না বলেই চলে গেছে মানে?আবার ঝ’গড়া করেছিস দুজন!
নেহা ঝটপট মাথা নাড়িয়ে না করলো–,,না না বড় মা ঘুমাচ্ছিলাম তো তাই ডাকেনি তুমি চিন্তা করো না সব ঠিক আছে,সময় হলে ফোন দিবে!
তাহমিদা বেগম মেয়ের মিথ্যা ধরে ফেললো তবুও কিছু বললো না।সম্পর্কে কথা কাটা’কাটি হবে মনমালিন্য হবে এসব আবার মিটেও যাবে,কিছু দূরত্বে ভালোবাসা বাড়বে, মায়া বাড়বে।দুজন দুজনের জন্য টান অনুভব করবে,থাকুক কিছু বিষাদ প্রহর,মিষ্টি পূর্ণতার অপেক্ষায়!
——
সকাল গড়িয়ে রাত হলো নিখিল একটা বারের জন্য ও ফোন দেয় নি একটা ছোট মেসেজ ও দেয় নি।এতো রাগ মানুষটার?নিজের কি দো’ষ নেই নাকি সব দোষ শুধু একা নেহার?দূরে যেতে বলেছে তাই বলে সত্যি সত্যি চলে যাবে!
নেহার মন আকাশে মেঘ জমলো,বারান্দার গ্রিল জড়িয়ে দাড়িয়ে রইলো গেইটের দিক তাকিয়ে, রোজ সে এমন টা করে নিখিলের আসার অপেক্ষায়,তবে আজ মানুষটি আসেনি, কাল কি আসবে নেহা কি অপেক্ষা করবে তার জন্য?
নেহা মোবাইল উঁচিয়ে খারুস নামে সেইভ করা নাম্বারটায় ফোন দিলো, রিসিভ করেনি কেউ নেহা পর পর ত্রিশটা কল দিয়েছে,প্রথমে রিসিভ না করলেও এবার মোবাইল বন্ধ বলছে!
নেহা রাগে নিজের মোবাইলটা বিছানায় ছুঁড়ে মারলো।এই ভালোবাসা মানুষ কে এতো পুড়া’য় কেন?
ভালোবাসা শুধু উপহার দেয় নির্ঘুম রাত,বিষন্নতা,বুক ভিজিয়ে ফেলার মতো অশ্রু বারিধারা!
রাগ সহ্য করতে না পেরে শেষে নেহা হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলো।নিখিল আসলে চায় ই না নেহার সাথে কথা বলতে, নেহার কথা তো তার নিকট ফ্যাচ ফ্যাচানি লাগে,বিরক্তি আসে তাই চলে গেছে ভালো থাকার জন্য।
নেহা ও আর বিরক্ত করবে না। থাকুক নিজের মতো!
নেহাও থাকবে আগের মতো, আসলে নিখিল নামক মোহমায়া তার জীবনে আসে ধোঁয়াসার মতো, ভালোবাসি বলেও ছেড়ে যায়, বুকে টেনে নিয়েও তীব্র বিরহে পো”ড়ায়!
কাটলো আরো দুই দিন,নেহা চুপচাপ থাকলো একদম, তিন বেলা খাওয়ার সময় ছাড়া তাকে পাওয়া যায় না দরজা আটকে বসে থাকে না হয় ছাদে উদাস হয়ে বসে থাকে।সাব্বির, জেরিন,বৃষ্টি মিলেও আড্ডা দিতে আনতে পারেনি তাকে।
তিন জনের মন খারাপ ভীষণ, তাদের দলের প্রাণবন্ত মানুষ টি আজ নিশ্চুপ! ভালোবাসায় বুঝি মানুষ এতোও পরীক্ষা ও দেয়!
শরৎ এর আকাশে আজ গুরম গুরুম শব্দ করে বৃষ্টি নামলো,বৃষ্টির উত্তাপে কাটবে কিছু মানুষের বিষন্নতা।নেহা এক মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে ভিজলো।
গেয়ে উঠলো
আকাশ পানে ওই অনেক দূরে
যেমন করে মেঘ যায় গো উড়ে
কই তাহার মতো তুমি আমার
কাছে কবু আসো না তো!
———–
সকালে সবাই কে এক প্রকার চমকে দিয়ে বাড়িতে আসলো সেতারা বেগমের এক মাত্ররো মেয়ে, মেয়ের জামাই আর নাতি নাতনি!
বাড়ি মেতে উঠলো খুশিতে,জ্বলমলে হয়ে উঠলো বাড়ির প্রতি টি মানুষের মুখ।
নেহা একদম হাসি খুশি হয়ে নিচে নামলো অন্যের সামনে নিজের দুঃখ প্রকাশ করার মতো বোকামি আর কিছু হয় না।
নেহা কে জড়িয়ে ধরলো তার ফুপ্পি নাহার বেগম।ছোট ভাইয়ের মেয়েকে তিনি বরাবরই একটু বেশি ভালোবাসেন।
জেবা,ফারহান ও মিশে গেছে সবার সাথে,শেষ বার এসেছিলো পাঁচ বছর আগে।
মেহমানের আগমনে কাজ বাড়লো গৃহিণীদের সেতারা বেগমও গেছেন আজ রান্না ঘরে।
তিন বউ মিলে তাকে ঠেলে বের করলো।সেতারা এসে বসলেন সোফায়।
নাহার বেগম সবার উদ্দেশ্য বললো–,,আমার বড় ছেলেটা কই নিখিল কে দেখছি না কেনো?ভাই গুলা তো কাজে চলে গেলো,আমার ছেলেটা কেও কি তাদের মতো বানিয়ে ফেলেছে নাকি।
সেতারা বেগম বললেন–,,কাজে গেছে সিলেটে।আহ আমার নাতিটার কি কষ্ট শুধু কাজ আর কাজ!
সেতারা বেগম নেহাকে জিজ্ঞেস করলো–,, কিরে তোকে নিখিল ফোন করে তো নাকি?বউ রেখে তো থাকতে পারে না একদিন তিন দিন হতে চললো দূরে থাকছে কি জানি অবস্থা আমার নাতিটার!
নাহার বেগম সহ অবাক হলো জেবা,ফারহান!
জেবা বলে উঠলো–,,ভাইয়া বিয়ে করেছে কবে?বউ কোথায়!কি বলছো নানু?
সেতারা বেগম হেসে বলে উঠলো–,,আর বলিস না নিখিল টা এতো পাগ’ল একদিন হুট করে এসে বললো নেহাকে সে ভালোবাসে বিয়ে করবে।সেদিনই বিয়ে পড়াতে হলো কাউকে কিছু না জানিয়ে!
নাহার বেগম বললেন–,,তাই বলে একমাত্র ফুফু কে ও বলবে না!
সেতারা বেগম মেয়েকে বুঝিয়ে বললেন।জেবা তো খুশিতে লাফিয়ে গিয়ে নেহা কে জড়িয়ে ধরলো
–,,নেহা বেবি তুই আমার ভাবি হয়ে গেলি রে!
সাব্বির মুখ তেঁতো করে বললো–,,ধীরে বৎস ধীরে নিখিল ভাই যদি জানে তার বউ কে তুই এভাবে চেপে ধরেছিস তো তোকে কিক মেরে দুনিয়া ছাড়া করে দিবে!
ফারহান বলে উঠলো–,,বাহ নিখিলের তো দেখি বেশ উন্নতি হয়েছে,এর মতো তিতা করলা যে ভালোবেসে বিয়ে করবে এটা তো অবিশ্বাস্য কাহিনি!
নেহা চুপচাপ সবার কথা শুনলো শুধু।নাহার বেগম হেসে বললো–,,কিরে নেহা বাড়ির বউ হয়েছিস,এবার তো একটু ফুফু শাশুড়ির সেবা যত্ন কর।সাব্বির,জেরিন,বৃষ্টি, জেবা বলে উঠলো–,,হ্যাঁ হ্যাঁ ভাবি যাও না রান্না করো! দেবর ননদদের একটু সেবা যত্ন করো!
নেহা চেঁচিয়ে বলে উঠলো–,,ফুপ্পি তুমিও!এসব কাজ করতে পারবো না আমি!
নাহার বেগম মজা করে বললো–,,ছি! ছি! ছেলের বউ সম্মান দিচ্ছে না গো!
নেহা রেগে চলে গেলো,বসার ঘরে হাসির রোল পড়লো যেনো!
নাহার বেগম বললেন এই ফারহান নিখিল কে ফোন দে আজকে তো হচ্ছে ওর।আমাকে না জানিয়ে বিয়ে করা একবার আসুক কান মলে দিবো। নেহার ফুফা মোস্তফা রহমান রেস্ট করছেন জার্নি করে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন।
———
নিখিল ব্রেকফাস্ট করছিলো সকাল সকাল ফারহানের কল পেয়ে রিসিভ করলো। ভিডিও কলে নাহার বেগম নিখিলকে প্রথমেই এক ধম’ক দিলো!
–,,ফুপ্পি তুমি, বাড়ি এসেছো?আমাকে জানাবে না!
–,,কেনো রে তোকে জানাবো কেনো?নিজে বিয়ে করে তো জানাসনি এই মাকে!
ফুপ্পির অভিমান দেখে হালকা হাসলো নিখিল!মোবাইল কেড়ে নিয়ে সেতারা বেগম বললো–,,দাদু ভাই শরীল ভালো নি তোমার?খাওয়া দাওয়া করেছো তো?
নিখিল দাদীর সাথে কথা বলা শেষ করলো।জেবা মোবাইল নিয়ে ফারহান, বৃষ্টি, জেরিন,সাব্বিরের দিক ঘুরালো!
সবাই একে একে হায় দেওয়ার কথা হলেও সবাই মুখ ঘুরিয়ে নিলো নিখিলের থেকে,শুধু ফারহান হাত নাড়লো!
নিখিল থমথমে মুখে জিজ্ঞেস করলো–,,কিরে তোরা মুখ ফুলিয়ে রেখেছিস কেনো?
তখনই নেহা সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসলো,জেবা হাসি মুখ করে বললো–,, দেখো ভাইয়া তোমার বউ চলে এসেছে!
নেহা থমকে গেলো সেখানে,নিখিল এক মনে দেখলো,বিধ্বস্ত প্রিয়তমা কে।তবে কি যে দহ’নে সে পুড়’ছে!সে একই দহ’ন পুড়া”চ্ছে নেহাকে!
নেহা মাথা উঠালো না একবার ও উল্টো চলে গেলো রান্না ঘরে।পর পর উঠে গেলো সাব্বির, জেরিন,বৃষ্টি
জেবা বিরস মুখে বললো–,,আচ্ছা ভাইয়া রাখি বুঝলাম না এদের আবার কি হলো সবাই মুখ ফুলিয়ে চলে গেলো!
নিখিল জানে এর কারন, নেহার মন খারাপ তাই এদেরও!এটাও জানে নেহার মন খারাপ নিখিলের কারনে তাই ভাই বোন গুলোও মুখ ফিরিয়ে নিলো!
———-
রাত তখন একটা বা তার বেশি
নেহার সবে চোখ টা লেগেছে মোবাইলটা বেজে উঠলো তখন!বিরক্ত হলো বটে।এতো রাতে কার এমন সখ জাগলো ফোন করার?
নেহা দেখলো স্ক্রিনে আননোন নাম্বার!
রিসিভ করলো না,মিনিট দুইয়েক পর আবার বাজলো
নেহা রিসিভ করে কানে ধরলো রাগে গজগজ করতে করতে বললো–,,কি সমস্যা রাত বিরাতে ফোন দেন কেনো?অন্যের ঘুম কি সহ্য হয় না? এতো দরকার পড়লে দিনের বেলা ফোন দিতে পারেন না,রাতের বেলা কেনো দেন!
আরেকবার বার ফোন দিলে বেশি ভালো হবে না বলে রাখলাম!
নেহার ঘুম জড়ানো কন্ঠে রাগ মিশ্রিত কথা গুলো শুনে হেসে দিলো নিখিল!তিন টা দিন, কতো কতো ঘন্টা মিনিট সেকেন্ড পর কন্ঠটা শুনলো মেয়েটার!
একদিন কল রিসিভ করেনি তাই পরের দিন থেকে দেয়নি!বউটাও হয়েছে তার মতো একশো তে একশো নো ছাড়াছাড়ি!
নিখিল মনে মনে বললো–,,হ্যাঁ তোর ঘুম আমার সহ্য হয় না!আমি যে ঘুমাতে পারি না নিশ্বাস নিতে পারি না সব কিছুতে শুধু তোকে দেখতে পাই,এই যে কাজে মন বসে না।তবুও তো তুই একবার ডাকিস না,বলতে পারিস না চলে আসেন নিখিল আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না!
নেহা বিরক্তি নিয়ে আবার হ্যালো বলে উঠলো কি আশ্চর্য কল দিয়ে কথা বলছে না কেন?
–,, কে বলছেন?কথা না বললে ফোন দেওয়ার কি দরকার রাতদুপুরে ফাই’জলামি!
বলেই ফট করে ফোন কেটে দিলো নেহা।ফোনটা বন্ধ করে রেখে দিয়ে বললো–,,যার ফোন দেওয়ার কথা সে তো দেয় না, রাতের বেলা এসে উটকো পা’গল ছা’গল ফোন দেয়!
চলবে?