#যাতনা_আমার (পর্ব – ২১)
#সানজিদা_ইসলাম_সূচনা
রাত বাজে আটটা, নাভান ছাদে বেতের সোফায় বসে আছে। হাতে হুইস্কির বোতল। মাথাটা ধরে এসেছে কিছুটা। চোখ বন্ধ করে ভাবে বিকালের কথা। নাভান বাড়িতে ঢুকতেই সবার থমথমে চেহারা লক্ষ্য করেছিল। কেউ কোনো টু শব্দও করেনি। নাভান পরিস্থিতি বুঝতে পেরেছিল। সে নিঃশব্দে নিজের ঘরে চলে গিয়েছিল। কোনো কিছুই যেন ঠিক হচ্ছে না। এতো কিছুর মধ্যে হঠাৎ জায়ানের কথা মনে পরে নাভানের। তার ব্যবহার মোটেও ভালো লাগেনি নাভানের কাছে। প্রথম বার দেখায় জায়ানকে নাভানের কাছে খুবই সন্দেহ হচ্ছে। কিসের প্রতিদ্বন্দ্বীর কথা বলছিল জায়ান? কিছু তো একটা আছেই। ব্যস্ত হাতে ফোন টিপে নাভান। কানে ধরে শান্ত গলায় বলে,
-” হোয়াটসঅ্যাপে সমস্ত ডিটেইলস পাঠিয়েছি। আমার সাথে কিসের দ্বন্দ্ব তা খুঁজে বের করো এক্ষুনি। ”
অপর পাশের ব্যাক্তির কথা বুঝা গেলো না। নাভান কথায় থাকতেই লক্ষ্য করে তার পাশে এসে কেউ দাঁড়িয়েছে। নাভান ফোন রেখে দেখে নিধি।
-” কিরে কিছু বলবি? ”
-” হুম, বাবা মা তোমাকে নিচে যেতে বলেছে। ”
নাভান চুপ করে থেকে শান্ত স্বরে বলে,
-” যা তুই আসছি আমি। ”
নিধি নড়ে না আমতা আমতা করতে থাকে। নাভান ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,
-” যাচ্ছিস না যে? বলবি কিছু? ”
নিধি মাধা ঝাকিয়ে ঝটপট নাভানের পাশে বসে পরে। তারপর মিনমিন কন্ঠে নাভান কে সুধায়,
-” তুমি কি সারাজীবন এমনই থাকবে ভাইয়া? ”
-” কেমন? ”
নাভান গম্ভীর গলায় বলে। নিধি মুখটা করুন করে ভাইয়ের উদ্দেশ্যে বলে,
-” মানুষ কতোদিনই আর বাঁচে বলো। এই ষাট নাহয় সত্তর বছর। হয়তো আরো কম। তাইতো? ”
-” মূল কথায় আয়। ”
হুইস্কির বোতলে মুখ লাগিয়ে ঝিম ধরা গলায় বলে নাভান। নিধি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
-” তুমি আর কতো একাকিত্ব জীবন কাটাবে? কি চাইছো তুমি। মায়ের উপর রাগ করে নিজেই তো অনেক শাস্তি উপভোগ করলে। এখন তো এইসব থেকে বের হও। মানুষ কতোদিন একই জিনিস মাথায় রাখে? ”
নাভান ম্লান হাসলো। তার ভেতরের দহনটা বোধহয় নিধি বুঝলো না। সে মলিন চোখে তার এই রহস্যময় ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে।
-” একটা কথা কি জানিস? আমি সারাজীবন আপন মানুষের কোলাহল, আদর ভালোবাসায় সিক্ত হতে চেয়েছিলাম। সবাই আমাকে অসম্ভব ভালোবাসতো। মায়ের মৃত্যুর পর যেন সেটা অধিক হয়ে গেছিল। সবার চোখের মনি ছিলাম। আমি নিজেও এই আদর ভালোবাসায় এতো সিক্ত হয়েছিলাম যে, কে আজকে কতোবার আমায় ডেকেছে তাও কাউন্ট করতাম। ”
কথাটা বলে নাভান নিজেই হেঁসে ওঠে। তারপর নিধির দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলে,
-” মা-ই আমাকে এমন বানাতে চেয়েছিল। আমি তা হয়েছি। আর দেখ, আমিই এখন তার দুঃখের মূল কারণ। ”
কথাটা বলে নিশ্চুপ হয়ে যায় নাভান। নিধি তার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। হয়তো এই নিঝুম রাতের মতোই, নাভানের ভিতরটা সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত হয়ে এসেছে। যা একদিনে হয়নি। নিধি নাভানের কাছে গিয়ে হাত ধরে মিষ্টি হেসে বলে,
-” তুমি আর মা একই রকম। জানোতো? তোমরা অতিত ঘেটে বর্তমান নষ্ট করার জন্য ওস্তাদ। সব ভুলে যাও। নতুন করে জীবনটা কে ভালোবাসো। মেনে না ও ভাবি কে। ”
নাভানের মুখটা রাতের আঁধারের মতোই অন্ধকার করে নেয়। ইনায়ার কথা মাথায় আসতেই, ঘাড় বাঁকা করে নিধির দিকে তাকায়।
-” জানো ভাইয়া, ভাবি বড্ড ভালো। ও সবসময় একবুক যাতনা নিয়েও হাসতে পারে। এতটুকু জীবনে তার কষ্ট নেহাত কম নয়। তারপরও তোমার যাতনা নিয়ে সে দিব্যি চলে যাচ্ছে। মায়ের সাথে পাল্লা দিতে গিয়ে তুমি এক নিষ্পাপ মেয়েকে অনেক কষ্ট দিয়েছ। যেটা তুমি মোটেও ভালো করোনি। নয়টা মাস লেগেছিল ভাবির ঠিক হতে। সে কয়েকবার সুইসাইড করতে গিয়েও নিজেকে দমিয়েছে। তোমার ভাবি কে পছন্দ না হলেও তো মাকে বলতে পারতে। বিয়ে করে চলে যাওয়াটা কি খুব দরকার ছিল? ”
নিশ্চুপ নাভান শাহরিয়ারের মুখ যেন অতল গহ্বরে হারিয়েছে। কোনো জবাব সে তৎক্ষনাৎ মুখ ফুটে দিতে পারলো না। নিধির থেকে চোখ সড়িয়ে ছাঁদের নীলচে আলোক শিখাতে তা নিবন্ধ করে। নিধি নাভানের হাত ছেড়ে দাঁড়িয়ে থাকে কয়েক মুহূর্ত নিরবতায় কেটে যায়। আর কোনো কথাই কেউ বলে না। হঠাৎ সেই নিরবতা কাটিয়ে নাভান বলে উঠলো,
-” প্রথমবার কানাডায় নিজের জীবনের প্রতি তিক্ততা এসেগেছিল আমার। আমার মন তখনই অনেক অসুস্থ হয়ে পরেছিল। আমি চাইতাম স্কুলে যাওয়ার আগে মায়ের হাতের ব্রেকফাস্ট। দুপুরের টিফিন। সন্ধার স্ন্যাকস রাতের ডিনারটাও। চাইতাম স্কুল থেকে ফিরে পরিবারের সাথে আড্ডা দিতে। কিন্তু আমার স্বপ্নগুলোর থেকে তখন বাস্তবতাটা খুব নিষ্ঠুরতম হয়েছিল। যান্ত্রিক রোবটের মতো রুটিনমাফিক জীবন হয়েছিল আমার। একা একা যখন থাকতাম। মাকেই বেশী দোষারোপ করতাম। তখন নিজেকে মায়ের কাছে রিমোট কন্ট্রোল মেশিন মনে হতো। খুব রাগ হতো। সে বাংলাদেশে থেকেও আমাকে উপদেশ দিতো। এভাবে চলো না ওটা করো না। সব মিলিয়ে আমার জীবনের সুখটাই আমি খুজে পাইনি। অনেক বছর পর যখন অদিতি আমার জীবনে এসেছিল তখন নিজেকে অনেক রিলাক্স মুডে ফিল করেছিলাম। আমি ভেবে নিয়েছিলাম এটাই হয়তো আমার হ্যাপিনেস হবে। তাতেও মায়ের অনিচ্ছায় আমার ভালো লাগেনি। মাকে বুঝিয়ে কোনো লাভ হয়নি। সে অদিতি কে মানবে না। আমার তখন মনে হয়েছে মা আবার আমার জীবন টা অন্ধকার করে দিবে। কিন্তু মাতৃত্বের দোহাই দিয়ে যখন ইনায়া কে মা বিয়ে করতে বলে। তখন আমি আর নিজের মধ্যে ছিলাম না। নিজের পছন্দ মতো কি আমি লাইফ পার্টনারও সিলেক্ট করতে পারবোনা? মা তো ছেলের বউ চেয়েছে? তাই পরের কাজ গুলো মায়ের সাথে রাগ দেখিয়ে করা। এর মাঝে আমি যে ইনায়ার সাথে ভুল করছি? তা বেমালুম ভুলে গিয়েছিলাম। ”
নাভান নিশ্চুপ হয়ে যায়। নিধিও চুপ করে থাকে। খানিকক্ষণ বাদে পিঠে কারো হাত পরতে চমকে উঠে পিছনে ফিরে নাভান। সোহানা কে দেখতে পেয়ে চোখ দুটো শীতল হয়ে আসে নাভানের। পিছনে তার পুরো পরিবার দাঁড়িয়ে আছে। সোহানা নাভানের হাত নিজের হাতের মুঠোয় পুরে তার পাশে বসে। তারপর নরম গলায় বলে ওঠে,
-” আমি আসলেই তোমার সৎ মা। আমি তোমার মা হতে পারিনি। পারলে বোধহয় তোমার চোখের ভাষা বুঝতে পারতাম। কিন্তু? ট্রাস্ট মি বেটা! আমি তোমার জীবনে কখনো দুঃখ দেখতে চাইনি। আমার সবসময় মনে হয়েছে তুমি আমার কাছে সেই ছোট নাবালক নাভান রয়েছো। যে পৃথিবীর গোলকধাঁধা পার করতে পারবে না। তোমাকে আমি স্ট্রং সুশিক্ষিত করতে চেয়েছিলাম। ভেঙে দিতে চাইনি। কিন্তু নিজের অজান্তেই আমি তা করে ফেলেছি। তার জন্য স্যরি। কিন্তু নাভান তুমি যতই বড় হওনা কেনো। যতই নিজের বুঝকে বাহবা দাওনা কেনো। আমি একটা কথাই বলবো, অদিতি তোমার যোগ্য ছিলো না কখনো। সে তোমাকে কখনোই বুঝতে চেষ্টা করতো না। তাই তোমার ভালোর জন্যই আমি ইনায়া কে তোমার জীবনে এনেছিলাম। যে তোমাকে ভালো রাখবে এবং ভালোবাসবে। ”
কথাগুলো বলে দম ফেলে সোহানা। বাড়ির প্রতিটি সদস্যের চোখে পানি। নাহিদ মির্জার ভেতরে একটু ভালো লাগছে। হয়তো মা ছেলের ভুল-বোঝাবুঝি ভেঙে সব কিছু ঠিক হবে। আয়েশা মির্জার এবার যেন চিন্তা কমলো। তার পরিবারের সুখ হয়তো আসবে সামনে। নওয়াজ মির্জা আর নিপারও তাই। তারাও যানে নাভানকে কতো ভালোবাসে সোহানা। নাভানের কঠিন পাথরের পুরুষ হৃদয় টা, মায়ের সামনে গলে পানি হয়ে গিয়েছে। তার চোখেও পানি চিকচিক করছে। তার মা ঠিক! অদিতি তার জন্য ভালো হতে পারতো না। সোহানা এইবার ডিভোর্স পেপারটা নাভানের হাতে দিয়ে মলিন কন্ঠে বলে,
-” আমি তোমার জীবন অশান্তিতে ভরিয়ে দিয়েছিলাম? এই নাও সুখের চাবিকাঠি। এটা দিয়েই প্রথম সুখ খুজে নাও। আমি আর তোমার জীবনে কোনো কিছুতে ইন্টারফেয়ার করবো না। ”
নাভান ভেজা নেত্রপল্লব ঝাপটায়। ভেজা সিক্ত চোখে তাকিয়ে থাকে ডিভোর্স পেপারের দিকে। এটার মাধ্যমেই সে ইনায়া কে মুক্তি দিতে পারবে। মায়ের পানে এক নজর তাকিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে নাভান। অতঃপর বিড়বিড় করে একবার নয় অসংখ্য বার বলে ওঠে,
-” ভুল হয়েছে মা। আমি বড়ো একটা ভুল করেছি। আমাকে তোমরা মাফ করে দাও। ”
সোহানা ছেলেকে বুকে নিয়ে কেঁদে উঠলেন। বহুবছর পর এমন হয়েছে। যে, নাভান তাকে মা বলে বুকে ঝাপিয়ে পরেছে। তার জন্য দায়ী সে নিজেই। সোহানার মনে পরছে না কবে নাভান তাকে এইভাবে জড়িয়ে ধরেছিল। সবকিছু ভুলে মায়ের স্নেহময় হাত পড়ে নাভানের মাথায়। যে তার অবুঝ সন্তানকে বোঝানোর জন্য তড়িঘড়ি করে বুলি আওরায়,
-” সব ঠিক হবে বেটা! সব ঠিক হবে। তুমি তা ঠিক করে নিও। ”
বাড়ির প্রতিটি সদস্য প্রশান্তির দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকায়। এইতো, এইতো যেন শান্তি নীড়ের শান্তি ফিরে এসেছে। তার বাহক যেন মির্জারা সবাই।
প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসের জন্য মার্কেটে এসেছে ইনায়া। তিথিকে বললেও আসেনি। কি জানি হঠাৎ করে কি হলো। রাত হলেও প্রচুর ভিড় এখানে। মহিলারাই বেশি ভিড় করে আছে। ইনায়া ভেবে পায়না। বাচ্চা কাচ্চা ফেলে এরা রাতে কেনো শপিং করতে আসে। কাপড়ের দোকান ডিঙিয়ে সামনে হাটতে থাকে ইনায়া। হটাৎ একটা চুড়ির দোকানে চোখ যায় ইনায়ার। সে সেদিকেই যায়। নানা রঙের চুড়ি সেখানে আছে। পাথরের, কাচের ভিন্ন ভিন্ন রং। ছোট থেকেই ইনায়ার চুড়ি পরার শখ। ছোট বেলায় বাবা যখন নানা রকমের কাচের চুড়ি আনতো, তখন ইনায়ার দাদি রসিকতা করে বলতো,’ এখন চুড়ি পরে কি করবি? বিয়ে হলে স্বামীর জন্য পরিস। ‘ স্বামী তো হলো। কিন্তু তার জন্য চুরি পরা আর হলো না। ইনায়া সাজানো চুড়ি গুলোতে আলতো ভাবে হাত বুলালো। সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো ঝনঝন শব্দে মুখরিত হলো। ফিক করে হেঁসে দেয় ইনায়া। দোকানে ছোট একটা ছেলে বসা। বয়স দশ এগারো হবে। সে ইনায়ার কাছে এসে মিষ্টি হেঁসে বলে,
-” কোনগুলো পছন্দ হয়েছে আপু? ”
ইনায়া ছেলেটার দিকে তাকিয়ে রসিকতা করে বলে,
-” তোমার দোকানের সবগুলোই! দাম কতো দেবো বলতো? ”
ছেলেটা হতভম্ব হয় ইনায়ার কথায়। সবগুলোই নেবে নাকি? অবাক হয়ে ইনায়ার দিকে তাকিয়ে থাকে ছেলেটা। ইনায়া মুচকি হেঁসে সামনে ফিরতেই চমকে উঠে। কারণ সামনে তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে জায়ান। ইনায়া হকচকায়। এই লোক কখন কোথা থেকে টপকায়? তা বোঝা মুশকিল।
-” তোমার কাজ কি এটাই বোকা হরিণী? সবাই কে কনফিউজড করার? ”
গম্ভীর মুখে প্রশ্ন করে জায়ান। ইনায়া পিছনে তাকিয়ে দেখে, নিত্যদিনের মতো জায়ানের ছেলেপুলে দাঁড়িয়ে আছে। ইনায়া আওয়াজ করে নিচু মিনমিনে স্বরে জিজ্ঞেস করে,
-” আর আপনার কাজ কি এটাই? সবসময় সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে আমার সামনে উদয় হন। ”
জায়ান বাঁকা হেঁসে চুড়ি গুলো দেখতে থাকে। তারপর ইনায়ার দিকে এক সেকেন্ড তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলে,
-” আমি যে কেনো এমন করি, তা তোমার বোঝার ক্ষমতা বোধহয় আর হবেনা বোকা হরিণী। বড্ড অবুঝ তুমি। ”
ইনায়া শান্ত চোখে জায়ানের দিকে তাকায়। সে এতোটাও অবুঝ নয়। যে জায়ানের কথার মিনিং বুঝতে পারবে না। তবুও সে বরাবর বুঝেও না বুঝার ভান করবেই। ইনায়া কিছু না বলে সামনে হাটে। মার্কেট পেরিয়ে রাস্তায় ল্যাম্পপোস্টের নিয়ন বাতির নিচে দাঁড়াতেই আবার জায়ান এসে সামনে দাঁড়ায়। কান খাড়া করে তাড়াতাড়ি করে জায়ান বলে,
-” শুনছো? শুনছো তো মেঘের গুড়ুম গুড়ুম ডাক? এক্ষুনি আমার গাড়িতে গিয়ে বসো। তোমাকে ড্রপ করে দিচ্ছি। না হলে বৃষ্টিতে ভেজার সম্ভাবনা রয়েছে তোমার। ”
ইনায়া লক্ষ্য করে, সত্যিই হিম শীতল বাতাস আর মেঘেদের গর্জন শোনা যাচ্ছে। আসেপাশে লোকজন গুলো কিছুটা তাড়াহুড়ো করছে এখন। ইনায়া কাজল যুগোল আখি দিয়ে, সামনে দাঁড়ানো কালো পাঞ্জাবী পরা জায়ান কে পরোক্ষ করে। তারপর বাঁকা হেঁসে বলে ওঠে,
-” বন্যা কে বৃষ্টির পানির ভয় দেখাচ্ছেন? সে তো কবেই বন্যার পানিতে ভাসতে ভাসতে নিজেকে সয়ে নিয়েছে। বৃষ্টিতে এখন তার কোনো ভয় হয়না।”
জায়ান গভীর দৃষ্টিতে ইনায়ার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে মিটিমিটি হেসে বলে,
– ” খুব কঠিন করে কথা বলতে শিখেছো হরিণী? কিন্তু আমার সহজ মনের ভাষা তোমার অগোচরে? তা মানতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে যে। ”
ইনায়া কিছু বলে না। কিছু সময় অতিবাহিত হয় এমনিতেই। দুজন দিজনের দিকে তাকিয়ে থাকলেও কথার বিনিময় আর হয় না। চারপাশের হিম শীতল বাতাসের বেগ যেন বাড়ছে। রাস্তার পাশেই কতোগুলো ফার্মেসির দোকান। ইনায়া মাথায় ভালো করে ওড়না দিয়ে এক পা সামনে এগুতে এগুতে ব’লে,
-” আপনার সাঙ্গপাঙ্গদের তো দেখা যাচ্ছে না। এক্ষুনি বাড়ি যান তাদের সাথে। নাহলে বিরোধী দলের লোকের হাতে আবার গুলি খেতে হবে। তখন কিন্তু আমি আর হেল্প করবো না। ”
জায়ান ঠোঁট কামড়ে হেঁসে উঠলো। অতঃপর আবার ইনায়ার সামনে দাঁড়িয়ে শান্ত স্বরে বলে,
-” আমাকে নিয়ে ভেবেছো, এতেই আমি বিন্দাস থাকবো। এখন তুমি আমার সাথে চলো। কোনো ঘাউড়ামি চলবে না এখন। ”
-” আমার প্রয়োজনীয় জিনিস কেনা বাকি আছে। আপনি যান আমি পরে ঠিক চলে যাব। ”
-” লিস্ট দাও আমি এনে দিচ্ছি। ”
ইনায়া বিরক্ত হয়ে জায়ানের পানে তাকায়। তারপর গমগমে গলায় বলল,
-” আমিই পারবো, আপনার আনতে হবে না। ”
-” তাহলে কালকে কিনো। এখন চলো। ”
এতো নাছোড়বান্দা। ইনায়ার বিরক্তি এখন রাগে প্রকাশ পায়। সে কিড়মিড় করে বলে ওঠে,
-” আমার আজকেই লাগবে। বুঝেছেন? যান এখন সামনে থেকে। ”
জায়ান এবার ডানে-বামে তাকিয়ে ইনায়ার হাত শক্ত করে ধরে। ইনায়া হকচকিয়ে যায়। এই লোক পাবলিক প্লেসে কি করছে? জায়ান ইনায়ার হাত ধরে টেনে তার গাড়ির ভেতরে নিয়ে বসায়। ইনায়া জোড়াজুড়ি করলেও কোনো কাজ হয় না। ইনায়াকে সিটে বসিয়ে, সিট বেল লাগিয়ে গাড়ি লক করে জায়ান কোথায় যেন যায়। ইনায়ার রাগে কান্না পায়। এই লোকের কবলে কেনো তাকে আজকে পরতে হলো? আদেও জায়ান যেটা চাইছে সেটা কি সম্ভব? ভাবে ইনায়া। একটু পরেই জায়ান এসে গাড়িতে বসে হাতে একটা প্যাকেট। স্টিয়ারিং ঘোরাতে ঘোরাতে ইনায়ার দিকে তাকিয়ে প্যাকেটটা বাড়িয়ে দেয় জায়ান। ইনায়া আমতা আমতা করে সেটা হাতে নিয়ে সুধায়,
-” কি এটা? ”
-” তোমার প্রয়োজনীয় জিনিস। ”
গমগমে গলায় বলে উঠে জায়ান।
কিছুদূর গাড়ি চলতেই ইনায়া প্যাকেটের ভেতরের জিনিসটা একটু বের করে। জিনিসটা দেখেই ইনায়ার মুখ থ হয়ে যায়। লজ্জায় চোখ বুজে নেয়।
স্যানিটারি ন্যাপকিন? এই লোক বুঝলো কি করে? ইনায়া আর জায়ানের পানে তাকায় না। লজ্জায় জমে বরফ হয়ে রয়েছে সে। জায়ান কি করে বুঝলো মাথায় আসেনা তার। ইনায়া চোরা চোখে জায়ান কে দেখতেই বুঝে সে নির্বিকারে গাড়ি চালানো তে ব্যস্ত। বিরবির করে বকে জায়ান কে সে। এই লোক শুধু গুন্ডা নাহ, নির্লজ্জ ও বটে।
চলবে………..