#যাতনা_আমার (পর্ব -২২)
#সানজিদা_ইসলাম_সূচনা
আজ মির্জা বাড়িতে যেন একটা খুশির আমেজ বিরাজ করছে। পরিবারের সবাই খুব হাসিখুশি। এতোদিনে সুখ যেন পা রাখলো এই বাড়িতে। আয়েশা মির্জা মন ভরে দোয়া করে নাভান কে। ঠিক মায়ের সাথে সব ঠিক হতেই ছেলেটা প্রায় আহ্লাদী হয়ে গিয়েছে। সোহানা আজ নিজ হাতে সব রান্না করেছে। নিপা খাবার টেবিলে সুন্দর করে তা পরিবেশন করছে। নওয়াজ আর নাহিদ মির্জা অফিসের একটা বিষয় নিয়ে ব্যস্ত। আয়েশা মির্জা তার ডানে তাকিয়ে দেখে। নিধি ঝিমানো মুরগীর মতো ঝিমাচ্ছে। অনেক রুষ্ট হয়ে যায় তিনি। এই মেয়ের ঘুম কই থেকে আসে? তিনি বুঝে পাননা। ভার্সিটির জন্য রেডি হয়েও এমন? সকাল নয়টা বেজেছে। তারপরও এ ঝিমাচ্ছে? আয়েশা মির্জা এবার বাজখাঁই গলায় বলে ওঠে,
-” এই মেয়ে? সারারাত কি করেছিস? এখনো ঝিমতে হবে? যা ভাইদের গিয়ে ডেকে আন। নাস্তা করতে হবে। ”
আয়েশা মির্জার কথায় নিধির ঝিমানো বন্ধ হয়। চোখ খুলে তাকায় তার পানে। তারপর গাল ফুলিয়ে গম্ভীর মুখে বলে,
-” আজকের কথাটা ভুল বললে দাদি। ”
আয়েশা মির্জা পান চিবানো বাদ দিয়ে নিধির দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। নিধি তার দিকে বিজ্ঞ মানুষের মতো তাকিয়ে রয়েছে। তিনি বিরক্তি নিয়ে নিধিকে বলে,
-” ভুল বললাম মানে? ঘুমের জন্য কি উলটা পালটা বিক্ষোভ করছিস আমার প্রতি? ”
নিধি এবার মুচকি হেসে উঠে। তারপর বাবা চাচা আর মা চাচি কে লক্ষ্য করে মিনমিনে স্বরে বলে,
-” একজন তো ভাইয়া! আর অন্যজন হলো সাইয়া।”
বলেই লজ্জা পাওয়ার ভান করে নিধি। আয়েশা মির্জা চোখ গোলগোল করে নিধি দিকে তাকায়। তিনি অবাক স্বরে জিজ্ঞেস করে,
-” ওমা! তুই কি করে জানলি? এটাতো আমাদের সিক্রেট মিটিং ছিল। এর ডিল তো গোপনে করেছি। তোর তো জানার কথা না? ”
নিধি মুখ ভেঙচিয়ে উঠলো। তারপর আয়েশা মির্জার কানে কানে মৃদু স্বরে বলে ওঠে,
-” সিক্রেট মিটিং যে ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে করতে হয়, তা কি তুমি জানো না। ”
-” তারমানে চুরি করে শুনেছিস? ”
নিধি ডানে-বামে মাথা নাড়িয়ে, উঁচু গলায় জবাব দেয়,
-” চুরি করে শুনিনি! তোমার রুমে ঢুকতে গিয়ে শুনে ফেলেছি। ”
আয়াশে মির্জা ভাবে দু’টোর মধ্যে পার্থক্য কি? তিনি নিধিকে তিক্ত গলায় বলে,
-” যা বলেছি তা এক্ষুনি কর। না হলে ডিল ক্যান্সেল করে দিবো। ”
নিধি মুখ বাঁকায়। নিপা এসে সবাইকে খাবার টেবিলে ডাকে। নিধি উপরে উঠতে গেলে সোহানা বলে ওঠে,
-” নাভান নেই। সকালেই বেরিয়ে গেছে। কি যেন একটা জরুরি কাজ আছে। ”
আয়েশা মির্জা পান চিবোতে চিবোতে বললেন,
-” তাই বলো, এজন্যই তো ছেলেটার কোনো হদিস পাইনি সকালে। ”
নিধি এবার ইশানের রুমে যায় ডাকতে। নিধির পরনে ইশানের কালো একটা টিশার্ট আর কালো জিন্স। কোমড়ের কাছে টিশার্টে একটা গিট দেওয়া। দুইবার নক করার পর ঘুমন্ত চোখমুখ নিয়ে দরজা খুলে ইশান। নিধি চমৎকার একটা হাসি দিয়ে বলে ওঠে,
-” নিচে নাস্তার টেবিলে ডাকছে তোমাকে। জলদি চলে এসো। ”
আজ আর নিধির কথার প্রেক্ষিতে হাসলো না ইশান। উলটো চোখ-মুখ বিরক্তি ভাব করে ইশান। নিধি কিছুটা অবাক হয় ইশানের মুখের এমন অভিব্যক্তি দেখে। সে কিছু বলতে যাবে তার আগেই খেঁকিয়ে উঠে ইশান।
-” তুই আবার আমার টিশার্ট পরেছিস? খোল বলছি এখনি খোল। ”
চমকে উঠে নিধি। ইশানের এমন কর্কশ কন্ঠ শুনে চমকে যায় পুরো। চোখের কোনে পানি ভিড় করে। সবসময় আহ্লাদী করে কথা বলা ইশানের হঠাৎ এমন রুড বিহেভ সহ্য হচ্ছে না নিধির। কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করে,
-” কেনো? আমি তো প্রায়ই পড়ি। তখন তো কিছুই বলোনি? ”
ইশানের রাগ যেন আরো বৃদ্ধি পায়। হুংকার ছেড়ে দিয়ে আবার বলে ওঠে,
-” তুই কি এখনো ছোট আছিস? সবসময় আমার জিনিস তোর নিতে হবে? এক্ষুনি গিয়ে খোল এটা। ”
ইশানের চিৎকারে নিপা দৌড়ে আসেন। নিধি ঠোঁট উলটে কেঁদে দিয়েছে। তিনি এসে দেখেন নিধি কাঁদছে। আর ইশান রাগান্বিত হয়ে তাকিয়ে আছে নিধির পানে। নিপা অবাকের সুরে বলে উঠেন,
-” কিরে? সকাল সকাল কি শুরু করলি? মেয়টাকে বকছিস কেনো? ”
-” তোমাদের আহ্লাদী মেনার বুঝে না। আর যেনো ও আমার জিনিসে হাত না দেয়। আমি যাকে তাকে আমার জিনিস ধরার অধিকার দেই না। ”
নিপার মুখে বিস্ময়। তিনি আজ পর্যন্ত ইশান কে নিধির সাথে এমন স্বরে কথা বলতে দেখেনি। তিনি ধমক দিয়ে ইশানকে বললেন,
-” মারব একটা! তারাতাড়ি নিচে আয়। আর নিধি চল আমার সাথে। ”
নিধি অশ্রুসিক্ত চোখে ইশানকে একবার দেখে নিপার সাথে চলে যায়। আজ সে প্রচুর শকে আছে। খাবার টেবিলে ইশানের মুখ থমথমে ছিল। আগের মতো কোনো কিছুই বলল না। নিধিও চুপচাপ হয়ে গেছে। খাবার পর নিধি উঠতে নিলেই ইশান সবার উদ্দেশ্য ব’লে,
-” তোমরা নাকি আমার আর নিধির বিয়ে ঠিক করেছো? ”
সবাই হতভম্ব হয়ে যায়। একে অন্যের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। আয়েশা মির্জা শান্ত স্বরে জবাব দেয়,
-” হুম, আমিই ঠিক করেছি। কিন্তু তুই কি করে জানলি। ”
-” সত্য কতোদিন লুকানো থাকে বলো? আর আমি একটা জিনিস ভেবে পাচ্ছি না। তোমরা কি করে এই চিন্তাভাবনা মাথায় আনতে পারো? যেখানে আমি নিধি কে নিজের বোনের মতো দেখি। সেখানে বিয়ে? ভাবতেই পারছিনা আমি। ”
রাগী গলায় বলে ইশান। নিধির বুকটা ধক করে উঠলো। নেত্রপল্লব ঝাপটিয়ে ইশানের দিকে দৃষ্টি স্থির করে রাখলো। আয়েশা মির্জা রুষ্ট হয়ে নিধির দিকে তাকায়। তিনি ভাবে,নিধিই হয়তো ইশানকে জানিয়েছে। নওয়াজ মির্জা ইশানের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করে,
-” আমরা বড়রা মিলে চিন্তাভাবনা করেই এই ডিসিশন নিয়েছি। আমাদের মনে হয়েছে তোমরা ভালো থাকবে। এতে আমাদের সবারই মত আছে। ”
-” আমার মত নেই। তোমাদের উচিত ছিল আমাকে এই বিষয়ে জানানোর। তোমরা কাজটা ঠিক করোনি। ”
ঠাস ঠাস করে বলে উঠে ইশান। বাড়ির সবাই আরোও অবাক হয়। সবসময় শান্তশিষ্ট থাকা ইশানের এরূপ ব্যবহার তাদের বোধগম্য হচ্ছে না। নাহিদ মির্জা এবার নিরবতা থেকে বেরিয়ে এসে ইশান কে জিজ্ঞেস করে,
-” আসলেই বিষয়টা তোমাকে জানানোর দরকার ছিল। তুমি শান্ত হও ইশান। তোমার মতের বিরুদ্ধে কিছুই করবো না। ”
নাহিদ মির্জার কথাটা আয়েশা মির্জার পছন্দ হয় না। তিনি গম্ভীর গলায় ইশান কে বলে উঠলেন,
-” আমি যা বলেছি তাই হবে। বিয়ে তোর নিধির সাথেই হবে। বাড়ির মেয়ে বাড়ি থাকবে, এটা ভালো নয় কি? ”
তার সাথে তাল মেলায় নিপাও। তিনি ইশানের কাধে হাত বুলাতে বুলাতে বলে,
-” মেয়েতো খুঁজতেই হবে। তাহলে ঘরের মেয়ে কেনো নয়? তুই একবার ভেবে দেখনা। ”
ইশান কোনো উত্তর দেয়না। চুপ করে থাকে। এদিকে নিধি যেনো নিজের মধ্যে নেই। সুখ সুখ অনুভব হওয়া মনটা আচমকাই কষ্টে ভরে যাচ্ছে। সোহানা এতোক্ষণ চুপ করে থাকলেও, দীর্ঘশ্বাস ফেলে ইশান কে জিজ্ঞেস করে উঠে,
-” তুমি কি কাউকে ভালোবাসো ইশান? বলতে পারো। ”
সোহানার কথায় সবাই এবার চুপ হয়ে যায়। এটা কারো মাথায় আসেইনি। সকলেই ইশানের দিকে জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকায়। ইশান চুপ করে থাকে কিছুক্ষণ। কলকেই সে বাড়িতে এসে ভেবেছিল বিষয় টা নিয়ে কথা বলবে। কিন্তু রাতে নাভানের সাথে পুরো পরিবারের হাসিখুশি মুহূর্ত নষ্ট করার মন চাইছিল না তার। এদিকে নিধির মন টা বিষাদে ছেয়ে যায়। সে প্রাণ পনে দোয়া করে। ইশানের জীবনে যেন কেউ না থাকে। নিরবতা কাটিয়ে ইশান গমগমে গলায় বলল,
-” আমি তিথিকে ভালোবাসি। ”
কথাটা প্রতিধ্বনি হতেই নিধির কানটা ঝা ঝা করে উঠলো। সে কি ভুল শুনছে? নাতো? হলরুমে পিনপিনে নিরবতা চলছে। সবার মনে একই প্রশ্ন তিথি কে? নাহিদ মির্জা কিছুটা ভেবে বলে উঠলেন,
-” মিজানুল করিমের মেয়ে তিথি?
ইশান মাথা ঝাকায়। আয়েশা মির্জার মুখ কালো মেঘে ঢেকে যায়। নিধির থেকে শুনেছিলেন। ইনায়া যার সাথে থাকে তার নাম তিথি। ইনায়ার মামাতো বোন। সে নাকি প্রচুর ঝাঁজালো। সহজেই মানুষকে নাকানিচোবানি খাওয়াতে পারবে এই মেয়ে। নাহিদ মির্জার কথায় তিনি বুঝতে পেরেছেন। এটা সে মেয়ে। না কখনো নাহ। তিনি অত্যন্ত বেচে থাকতে ওই মেয়েকে বাড়ির বউ বানাবেন না। তিনি নিপার দিকে চোখ রাঙিয়ে কিছু একটা বলতে বলে।
ইশান নাহিদ মির্জার দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বলে,
-” আমি তিথিকে আমার অর্ধাঙ্গিনী করতে চাই। ”
-” পাগল হয়েছিস নাকি তুই। কিছুতেই মানবো না আমি। ”
রাগ দেখিয়ে বললেন নিপা। নাহিদ মির্জা নিপাকে থামিয়ে শান্ত স্বরে বললেন,
-” দেখো ইশান যা চাইবে, তাই হবে। কেউ আর কোনো কথা বলবেনা। ”
সবাই দমে যায়।।সোহানা আর নওয়াজ মির্জা ও নাহিদ মির্জার হ্যা তে হ্যা মেলায়। শুধু মুখ গম্ভীর করে রাখে নিপা আর আয়েশা। ধীর গতিতে নিজের রুমে এগিয়ে যায় নিধি। পা যেন চলছে না। ঘরে এসে কোনোরকমে দরজা লাগিয়ে খাটে শুয়ে পরে সে। অতঃপর চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠে নিধি। কি করবে এখন সে। বুকটা জ্বলে যাচ্ছে তার। সে তো ইনায়ার মতো, এতো যাতনা সহ্য করে বাচতে পারবেনা। কি করবে এখন নিধি। একপাক্ষিক প্রেমে কাঁদলেও তো বোকামি। নিধি এবার চোখ বুঝে আল্লাহ কে ডাকে। তাতে যদি একটু শান্ত হয় মন।
দোকানে বিকাশ থেকে টাকা তুলতে এসেছে ইনায়া। মিজানুল করিম পাঠিয়েছেন। সামনে প্রথম সেমিস্টারের পরিক্ষা। কলেজ ফি বাবদ অনেক টাকা জমেছে। মিজানুল করিম নিজে থেকেই টাকা পাঠিয়েছেন। ইনায়া প্রথমে না করলেও পরে মেনে নেয়। টিউশনি করছে একমাসও হয়নি। এখন টাকা পাবে কোথায় সে? টাকা তুলে ফুটপাতের রাস্তা ধরে হাঁটতে থাকে। সামনে আইসক্রিম ভ্যান দেখে সেখানে এগিয়ে যায়। একটা আইসক্রিম কিনে পিছনে ফিরতেই কারো সাথে ধাক্কা লেগে সেটা পরে যায়। হাহ্ কপাল, মুখেও লাগাতে পারলো না? কিঞ্চিৎ বিরক্তি নিয়ে সামনে তাকাতেই চমকে উঠে ইনায়া। কারণ তার সামনে সয়ং নাভান দাঁড়ানো। যে ইনায়া দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। ইনায়ার চোখ জোরা বেহায়ার মতো নাভান দিকে তাকিয়ে থাকে। লোকটা তার স্বামী? সবচেয়ে আপন তার পরও কতো পর। হঠাৎ অদিতির কথা মাথায় আসতেই ইনায়া মুখ কঠিন করে। ইনায়া খেয়াল করে নাভানের হাতে একটু আইসক্রিম লেগে গেছে। ইনায়া মিনমিন করে বলে ওঠে,
-” স্যরি আমি খেয়াল করিনি। ”
নাভান রা করে না। তার দৃষ্টি আগের মতোই ইনায়ার পানে পরে আছে। সামনে দাঁড়ানো লোকটা ইনায়ার স্বামী। যাকে এই নিয়ে দুবার সামনাসামনি দেখেছে ইনায়া। মুখটা কঠিন করে, সামনের দিকে ইনায়া পা চালিয়ে কিছু দূর যেতেই, হাঁক ছেড়ে ডাকে নাভান।
-” দাঁড়ান ইনায়া। ”
পা দুটো আটকে যায় ইনায়ার। কিন্তু পিছনে ফিরে না। নাভান ধির পায়ে ইনায়ার সামনে এসে দাঁড়ায়। থমথমে চেহারা দু’জনেরই। ইনায়া প্রচুর অসস্থি ভোগ করে। নাভান গম্ভীর শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করে,
-” কেমন আছেন? ”
-” জি ভালো। ”
মৃদু স্বরে জবাব দেয় ইনায়া। নাভান দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঠান্ডা স্বরে সুধায়,
-” আমাকে দেখে পালাচ্ছিলেন মনে হয়? ”
ইনায়া শান্ত চোখে তাকায়। কালো শার্ট আর জিন্স পরহিত নাভান। চুল গুলো ব্যাক ব্রাশ করা। শীতল শান্ত কুটকুটে কালো চোখের মনি জোড়া দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে নিষ্পলকে। ইনায়া চোখ নামিয়ে নেয়। অতঃপর বলে ওঠে,
-” আপনাকে দেখে অযথা পালাবো কেনো? আপনার সাথে তো একদিনের দেখা মাত্র। আমার একটু তারাহুরো ছিল। ”
নাভান তাকিয়ে থাকে মিষ্টি মুখখানার পানে। গাঢ় কালো চোখ জোড়ায় কিছু লুকানোর প্রয়াস। নাভান এসেছিল তার একটা ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে। জায়ানের বিষয়ে কথা বলছিল তারা। রেস্টুরেন্টে থেকে বেরিয়েই ইনায়া কে দেখেছিল নাভান। তখনই তার পিছু নেয় সে। গাড়ির হন মানুষের কোলাহলে বিরক্ত বোধ করে নাভান।
-” চলুন আমি ড্রপ করে দিচ্ছি। ”
-” দরকার নেই আমি নিজেই যেতে পারবো। ”
বলেই ইনায়া নাভান কে ডিঙিয়ে সামনের দিকে যায়। নাভান বাঁকা হাসে। পিছন না ফিরেই জোরে বলে ওঠে,
-” অন্য কেউ এসে নিয়ে যাবে নাকি মিসেস ইনায়া? আমার সাহায্য ভালো লাগেনি? ”
থমকায় ইনায়া। মুখটাকে শক্ত করে তৎক্ষনাৎ। নাভান কি তাকে চিনতে পেরেছে? হবে হয়তো। সে ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকায়। নাভান উলটো পিঠ করেই দাঁড়িয়ে আছে। ইনায়া সহসাই জোরে বলে ওঠে,
-” এতিম, অনাথ ডিভোর্সি যে কেউ হোক। আমাদের অন্য কারো দরকার নিতেই হয়। আসলে জানেন কি? কেউ মুখ থুবড়ে ফেলে দিলে অন্য জন হাত বাড়িয়ে ঠিকই তুলে নেয়। তাই অনুদান সাহায্য যেটাই বলেন। আমাদের তা নিতেই হবে। ওইযে, কিছু একটায় ভর করে সিধে হয়ে দাঁড়ানোর জন্য। ”
নাভান পিছন ফিরে ইনায়ার দিকে তাকিয়ে হাসলো। ধক কে উঠলো ইনায়ার বুকটা। হাসিটা যেন কলিজায় বিধে। ঘুরেফিরে একটা কথা মাথায় আসে লোকটা তার স্বামী। যাকে ফিরে পাবার জন্য নামাজে বসে কতো মোনাজাতে কেঁদে ছিলো ইনায়া। নয়টা মাস যেনো নিঃশ্বাস ফেললেও কষ্ট হতো। তার এই যাতনা বাড়িয়ে দিতো অদিতির মেসেজ। নাভান আস্তে করে হেটে ইনায়ার সামনে আসে। মুখটা খুবই শান্ত নিশ্চল হয়ে আছে। ইনায়া চোখ হালকা ভিজে আসে। নাভান আলতো হাতে ইনায়ার গালে হাত রাখে। চোখ বন্ধ করেও চমকে উঠে ইনায়া। আলতো হাতেই হাতটা সরিয়ে দেয়। নাভান মুচকি হেসে বলে,
-” ভালোই তো মেয়ে, দরকার ছিল এই রাগটা আমার প্রতি। ”
ইনায়া নাভানের দিকে ভেঁজা সিক্ত চোখে তাকিয়ে, ঘুরে চলতে থাকে আর পিছন ফিরে না। নাভানের চোখ জোড়া এবার অশান্ত হয়। ইনায়া ফুটপাতের রাস্তা ধরে শেষ মাথায় আসতেই আবার ধাক্কা খায় একজনের সাথে। কান্নারত হিচকি খাওয়া মুখটা আলতো হাতে তুলে একজন। ইনায়া ঝাপসা চোখের পলক ফেলে তাকায় মানুষটার দিকে। যে নিষ্পাপ হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। কালো পাঞ্জাবি পরহিত সুঠাম দেহের লোকটা এবার উচ্চ হেসে বলে ওঠে,
-” ধোঁকা, ধোঁকা। সব ধোঁকা। তারপরও মন তাদের দিকে টানে কেনো হরিণী? বলতে পারবে তুমি? কি এক নিদারুণ যন্ত্রণা, বলোতো? ”
চলবে……………
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)