#যাতনা_আমার (পর্ব -২৪)
#সানজিদা_ইসলাম_সূচনা
নাভানের মনে যেন অশান্তিরা বাসা বেঁধেছে। নিজেকে কিছুতেই ঠিক রাখতে পারছেনা সে। সেদিন জায়ানের কথার মানে সে বুঝতে পেরেছে। তাহলে কি ইনায়াও কি তাকে পছন্দ করে? এইসব কথা ভেবে ভেবে কোনো রকম বাড়িতে এসে পৌছায় নাভান। হলরুমে আসতেই কিছুটা অবাক হয় নাভান। বাবা-মা চাচা সবাই বাড়িতে। হাতের ওয়াচের দিকে তাকিয়ে সময় দেখে নেয় নাভান। এতো তারাতাড়ি অফিস থেকে চলে এসেছে তারা? আয়েশা মির্জা গম্ভীর মুখে বসে আছেন। তার পাশেই কেঁদে চলছে নিপা। নিজের মনের অশান্তি দূরে রেখে সোহানার কাছে জানতে চায় নাভান। একে একে সব কথা নাভানকে বলেন সোহানা। সব শুনে নাভানের গম্ভীর মুখটা আরো গম্ভীর হয়ে যায়। সে তো জানে। ইশান কে নিধি কতোটা পছন্দ করে। এখন সামনে কি পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে তাদের জন্য? নিপার গুনগুন বেড়েই চলছে। নাভান দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিপা কে জিজ্ঞেস করে,
-” এমন বাচ্চাদের মতো কাঁদছো কেনো বলতো। ”
নিপা ভাঙা গলায় বললেন,
-” দেখনা বাবা, ঘরের মেয়ে। বাড়ির সবাই রাজি। এর মধ্যে তোর ভাইয়ের একার অমত কি সহ্য হয়? সে নিজেই তো এখনো নিজেকে বুঝতে শিখেনি। আর সেখানে, তার জীবনের এতো বড়ো একটা ডিসিশন। আমি বাপু বেঁচে থাকতে ওই মেয়েকে ঘরে তুলবো না। ”
নাভান হেসে উঠে। বিদ্রুপের হাসি সেটা। মুখটা শান্ত তারপরও অস্থির অবিচল। নিপার দিকে তাকিয়ে নাভান শান্ত স্বরে বলে,
-” ইশান ভালোবাসে তিথিকে। এই সত্য তুমি লুকাতে পারবেনা। সংসারটা ইশান করবে। তোমরা কতোদিন আর বাঁচবে বলো? যার যার লাইফের ডিসিশন তাকেই নিতে দাও। না হলে আমার আর ইনায়ার মতো সম্পর্ক টা ক্রিটিকেল হয়ে যাবে। হয়তো মানতে পারবেনা নিধিকে ইশান। ”
নিপা চোখমুখ মুছে শান্ত গলায় বলে,
-” তুই নিজেও তো ভুল ছিলি নাভান। অদিতি তোর জন্য সঠিক ছিলো কি? ইশানের বেলায়ও যে তা হবে না। তার গ্যারান্টি কি?
সোহানা এবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিপার পাশে গিয়ে বসে। তারপর ধির সুস্থে বোঝানোর স্বরে বলে,
-” যেখানে, ইশানের মনে অন্য কেউ। সেখানে, নিধি ভালো থাকতে পারবে না। সে নিধিকে হয়তো স্ত্রী হিসাবে প্রাপ্য সম্মান টুকুও দিতে পারবেনা। আজকে নিধির উপর ইশান যে ভাবে ক্ষেপেছিলো। তাতেই বিষয় টা আমি আরো ভলো ভাবে উপলব্ধি করেছি। নিধিতো এই ব্যপারে কিছু জানতো না। বিয়ের পর যে ইশান নিধিকে মেনে নিবে বা সংসার করবে তার গ্যারান্টি কি? আর তিথি যে ইশানের জন্য ভালো না, তার কোনো প্রমান আমরা কেউ দিতে পারবো না। আর নাভান ভুল ছিলো বলে, ইশানও ভুল। এটা নেহাৎ বাচ্চাদের মতো না-বুঝ কথা। ”
-” মা ঠিক বলছে ছোট মা। ইশান আর তিথি দুজনেই এডাল্ট ছেলেমেয়ে। তারা দুজনেই নিজেদের জীবনের ভালোমন্দ বুঝে। সেখানে তুমি জোর করে নিধিকে তাদের মাঝে ঢোকাবে। তা তো হবে না।তোমার কথা গুলো আসলেই বাচ্চাদের মতো লাগছে। ”
সোহানার সাথে তাল মিলিয়ে বলে নাভান। নিপা আর কোনো কথা বলে না। আসলেই জিনিসটা ভাবার বিষয়। আয়েশা মির্জা কোনো কথা আর বললেন না। নাভানের সাথে তর্কে তিনি পেরে উঠবেনা জানেন। সোহানা এবার আয়েশা মির্জার গম্ভীর মুখে তাকিয়ে করুন কন্ঠে বললেন,
-” মা আমি নিধিকে ইনায়ার জায়গায় দেখতে চাই না। জোর করে কারো মনে ঢুকা সম্ভব নয়। আমাদের এমন সিদ্ধান্তের রাগ ইশান নিধির উপর ঝাড়াবে। এমনটাই হবে? ইনায়ার বিষয় থেকে শিক্ষা হয়ে গেছে আমার। আপনি নিজেই তো ইনায়া কে এই বাড়ি সম্পর্ক থেকে বেরুনোর জন্য কতো বুদ্ধি
দিতেন। নিধির সাথে এমনটা হলে, আপনার জবান টাই থাকবে তো? থাকবেনা। তখন আপনি নিধি যেনো সংসার করতে পারে সেই চিন্তা করবেন। কারণ নিধির পরিবার আছে। তাকে নিয়ে তার পুরো পরিবার ভাববে। কিন্তু ইনায়ার সেটা ছিলো না। আর ইনায়ার জিবন দেখে আমি শিক্ষা পেয়েছে। নিজের মেয়েকেও আমি ওই জায়গায় দাঁড় করাতে চাই না। নাভান ভুল মানুষকে চেয়েছিল। তা বলে যে ইশানের মানুষটাও ভুল এমনটা নয়। আপনি কি চান নিধিও ডিভোর্সী হোক? ”
আয়েশা কোনো কথা বললেন না। চুপটি করে রইলেন। নিপারো একই অবস্থা। নাহিদ মির্জা এবার নওয়াজ মির্জার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
-” তাহলে সিদ্ধান্ত এটাই রইলো। সময় করে মিজানুল করিমের সাথে আমি ইশান আর তিথির বিয়ের কথা তুলবো। ”
নওয়াজ মির্জা সায় জানান। তার ছেলের যাকে পছন্দ তাকেই তিনি মেনে নিবেন। নাহিদ মির্জা আর নওয়াজ মির্জা এবার উঠে কথা বলতে বলতে নিজেদের ঘরের দিকে এগোলেন। বসে থাকা চারজনের মধ্যে তখনও পিনপিনে নিরবতা চলছে। নাভান সেখান থেকে উঠে সিড়ির কাছে আসতেই নিপা সোহানার উদ্দেশ্যে বলে ওঠে,
-” তুমি বলছো ইশানের পছন্দ মেনে নিতে। তিথি খারাপ না। নাভানও তো অদিতিকে পছন্দ করেছিলো। তুমি মেনে নাও নি। যদি অদিতি এখন নাভানের বউ হতো তাহলে? ”
সোহানা মুচকি হাসলো। নাভানের পা থেমে গেলো প্রথম সিড়ি তে। কিন্তু পিছন ফিরলো না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে সোহানা বললো,
-” তখন হয়তো নাভানের একার অন্ধকার ভবিষ্যৎ হতো। একটা নরম নিষ্পাপ মেয়ের জীবন বেচে যেতো। কোনো পাপ না করেও তার জীবন এখন অন্ধকারে। সেখানে নিধিও একই পরিস্থিতিতে পরুক তাই আমি চাইবোনা আর। ”
নিপা আর কিছু বলে না। নাভার ধীরগতিতে হেটে উপরে চলে আসে। দোতলার করিডোর দাঁড়িয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তার মা আসলেই ঠিক বলেছে। আসলেই সে সুন্দর মেয়েটার জীবনটা নষ্ট করে ফেলেছে। মুহূর্তেই নাভানের সামনে ভেসে উঠে ইনায়া কান্নারত মুখটা। এটাই তার তিন কবুল করা বউ। যাকে সে মুখটা না দেখেই দেশ ছেড়েছিলো। পাষন্ড মনে তখনো কি একটু তার কথা ভেবেছিলো? নাহ্ , মায়ের প্রতি জেধ রাগ তখন তার মাথায় খারাপ ভালো ঢোকায়নি। যা এখন ভাবলে, বুকের পাঁজর থেকে দীর্ঘশ্বাস ব্যাতিত কিছুই মনে হয় না। ডিভোর্স পেপার তার হাতে। কি করবে এখন? অন্যথা মাথায় আর চাপ না দিয়ে নিধির রুমে ঢোকে নাভান। দরজা টা ভিড়ানো ছিলো। রুমের পর্দা গুলো সব টাঙানো। দিনের বেলায়ও ঘর অন্ধকার হয়ে আছে। নাভান দক্ষিণ দিকে জানালা টা গিয়ে খুলে দিলো। সঙ্গে সঙ্গে অন্ধকার ঘর আলোকময় হয়ে যায়। নাভান লক্ষ্য করে নিধি কাউচে শুয়ে মুখটা কুশনে গুজে রয়েছে। নাভান আস্তে করে হেঁটে নিধির সামনে এসে বসে। তারপর দুই থেকে তিনবার নরম গলায় ডাকে। নিধি কোনো সাড়াশব্দ করে না। নাভান এবার হতাশ হয়ে বলে,
-” তোর থেকে এটা আশা করিনি নিধি। বোকার মতো অযথা কেঁদে যাচ্ছিস। যার মূল্য কারো কাছেই নেই। সবটাই বুঝিস, ভালোবাসা জোর করে পাওয়া সম্ভব না। ”
নিধি এবার মুখ তুলে তাকায়। পানপাতার মতো মুখ টা টুকটুকে লাল হয়ে আছে। চোখগুলোর একই অবস্থা। নাভানের বুকটা ধুক করে উঠে। নিধি তার বড্ড আদরের আহ্লাদী বোন।
-” ভাইয়া আমার বিবেক মানলেও মনের সাথে আমি পেরে উঠছি না। মানতে বড়ো কষ্ট হচ্ছে। যে মানুষ টা আমার ছিলো সে হুট করে অন্য কারোর হয়ে গেলো? দুদিন আগেও মনে হয়েছে, আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ। যে না চাইতে মনের মানুষটাকে পেয়েগেছি। কিন্তু, আমার সুখে যে দহন পরবে তা আমার জানা ছিলো না। ”
নিধির কথায় নাভানের মুখটা ম্লান হয়। সে তো জানে নিধি কতোটা অবুঝ। সহ্য ক্ষমতা কতো কম। নাভান হাত বাড়িয়ে নিধিকে কাছে ডাকে। হামলে পড়ে ভাইয়ের বুকে চুপটি করে থাকে নিধি। ক্ষনে ক্ষনে কেঁপে উঠে বহুবার। নাভান নিধিকে জড়িয়ে ধরে শান্ত স্বরে বলে,
-” এই অনুভূতি গুলো এখনি মাটি চাপা দে। এ্যানি হাউ! আমি চাইনা তোর অনুভূতিটা ইশানের বা বাড়ির কারো কাছে সেটা প্রকাশ পাক। বাড়ির সবাই সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে তোর বিষয়টা জানাজানি হলে তাদের সবার মন অশান্ত হবে নিশ্চিত। যা তিথি আর ইশানের বিয়ের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। তোর আর ইশানের মধ্যে কোনো কন্ট্রাডিক্টরি সম্পর্ক হোক সেটা আমি চাই না। ”
এই বলে থামে নাভান। নিধি এখনো নাভানের বুকের সাথে মিশে রইলো। নাভান খানিকক্ষণ চুপ আলতো করে সুধায়,
-” বুঝতে পেরেছিস? ”
– ” হুম ”
পোষ মানা পাখির মতো বলে উঠে নিধি। নাভান দীর্ঘশ্বাস ফেলে জানলার সাথে লাগো বড়ো শিউলি ফুলের গাছটাকে দেখতে থাকে। যেটা নিধির খুব পছন্দের গাছ। গাছের ডালে নিধির একটা বড়ো ছবি ঝুলছে। তার নিচে লেখা ‘ এটা নিধির গাছ, কেউ যদি এর দিকে তাকায় বা ফুল কুড়িয়ে রাখে। তাঁদেরকে জেলে ভড়ে দিবো। ‘ নাভানের ভিতর থেকে আরো বড়ো দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে। তার বোন যেন একটু বেশীই বাচ্চা স্বভাবের। এর জন্য না জানি কতো বিপদে পরতে হয় ওকে। ফাহাদের ছবি ভাইরালের কথা জিজ্ঞেস করতে গিয়েও করেনি নাভান। ফাহাদ জানিয়েছে বিষয়টা হ্যান্ডেল করে নিবে।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। এখন পাল্লা দিয়ে রাতের আধার ঘনিয়ে আসার পালা। একটু আগেই হোস্টেলে ফিরেছে ইনায়া। আজ আর টিউশনে যেতে পারেনি। নামাজ শেষে বই নিয়ে বসেছে। সামনেই সেমিস্টার ফাইনাল। পড়ায় মন দিলেও মন যেন বসছে না। এতো জটিল জীবনের সমীকরণ। সব যেনো ধোঁয়াশা। কেমন যেন হতাশ হতাশ লাগছে তার কাছে। ফোন হাতে নিয়ে নিধিকে কল লাগায় ইনায়া। কিন্তু কই? রিং হয়ে কেটে গেলো কয়েকবার। কিন্তু নিধির পিক করলো না। এই মেয়ের হুট করে কি হলো বুঝে না ইনায়া। তিথি উপর দিকে ফোনে ইশানের সাথে কথা বলছিলো। মির্জা বাড়ির সবাই যেহেতু মেনেছে বিষয়টা। তাই দ্রুত বাড়ির সবাইকে তার জানাতে হবে। তিথি ভাবে কালই বাড়িতে যাবে সে। ফোনটা কেটে একটা প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস ফেলে তিথি। গত দুইটা দিন তার অনেক কষ্টে কেটেছে। টেনশনে তার মাথা ঘেঁটে ফেলেছিলো প্রায়। তিথি অন্যমনষ্ক হয়ে থাকা ইনায়ার দিকে তাকায়। তারপর উঠে ইনায়ার পাশে বসে। ইনায়া সচকিত হয়ে তিথির দিকে তাকায়। তিথি মলিন মুখে জিজ্ঞেস করে,
-” মন খারাপ? কি হয়েছে? কখন থেকে থেকে অস্থির অস্থির লাগছে তোমাকে। ”
ইনায়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তার চিন্তিত মুখে বলে ওঠে,
-” দুটো দিন ধরে নিধির কোনো খোঁজ নেই। মেয়েটা কলও ধরছে না। কি জানি? কোনো সমস্যা হলো নাতো?
নাকি, ফাহাদের ভয়ে এমনটা করছে? মনেমনে ভাবে ইনায়া। তিথি এবার জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজায়। অতঃপর মিনমিন কন্ঠে বলে ওঠে,
-” তোমাকে কিছু বলার ছিলো ইনায়া। ”
তিথির দিকে পূর্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ইনায়া। মেয়েটা কেমন যেন উসখুস করছে। ইনায়া শান্ত স্বরে বলে,
-” কি বলবে? বলে ফেলো। ”
তিথি দীর্ঘশ্বাস ফেলে ইনায়াকে সব কিছু বলতে শুরু করে। তার আর ইশানের সম্পর্কের শুরু থেকে বর্তমান পর্যন্ত। সব শুনে ইনায়া থ হয়ে রইলো। এরজন্য তিথি কথাটা শুনে এমন হকচকিয়ে গেছেলে? আর নিধি? এ কোন ত্রিকোণ প্রেম এসে মিলিত হয়েছে? তিথি ভেজা ভেজা গলায় বলে,
-” স্যরি ইনায়া তোমাকে সেদিন কিছুই জানাতে পারিনি। আসলে খবরটা শুনে আমার নিজেকে পাগল পাগল মনে হচ্ছিলো। কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। তাই বিষয়টা ইশান কে জানিয়ে ছিলাম। ইশান বাড়িতে সবটা মেনেজ করে নিয়েছে। তারা আমাদের বিয়ের কথা শীগ্রই পাকা করবেন। ”
নিধির হঠাৎ এমন নির্জীব হয়ে যাওয়ার কারণ টা মনে হয় বুঝতে পারলো ইনায়া। সেদিন নিধির মুখে খুশি উপচে পরছিলো। সে দেখতে পেয়েছিলো নিধির চোখে ইশানের জন্য প্রচুর ভালোবাসা। নিধি কি ইনায়াকে দোষারোপ করবে? তিথিকে বলেছে বলে। পরক্ষণেই নিজের মনকে বুঝ দেয় ইনায়া। সে না বললেও দুইদিন পর ঠিক বিষয়টা জানাজানি হতো। নিধির সাথে শীগ্রই দেখা করবে ইনায়া। তিথি এবার মলিন কন্ঠে সুধালো,
-” আমার জন্য মনে হয় নিধি ও তার পরিবার প্রচুর কষ্ট পেয়েছে। এতো গুলো মানুষের স্বপ্ন নষ্ট হলো। নিধি মনে হয় ইশান কে পছন্দ করতো। ”
ইনায়া মিষ্টি হেসে তিথির উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,
-” আসলে একদিক দিয়ে এটাই ঠিক হয়েছে। পরিবারের লোকজন কয়দিন থাকবে বলো? তোমরা দুজন সারাজীবন সংসার করবে। সবচেয়ে বড়ো সত্যি তোমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসো। এটাকে কেউ বদলাতে পারবে না। তোমাদের ভালোবাসা সত্য। নিধিরও ভালোবাসাটা পবিত্র কিন্তু একপাক্ষিক। সেটা মনে না রাখাই ভালো। নিধি শিক্ষিত মেয়ে। সে নিশ্চয়ই ভুঝবে সব। টেনশন করো না। ”
তিথি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। ইনায়াও মনে হাজার চিন্তা নিয়ে চুপ করে বসে থাকে। প্রহর কাটতে থাকে দুজনেই দুই ভাবনায় মগ্ন হয়ে। হঠাৎ ফোন বেজে উঠায় দুজনের ভাবনার সমাপ্তি ঘটে। ইনায়া তাকিয়ে দেখে তার ফোন বেজে চলছে। আনোন নাম্বার হলেও কেনো যানি ফোনের মালিকটা কে চিনে নেয় ইনায়া। তিথি সামান্য হেসে নিজের বিছানায় চলে যায়। ইনায়া ফোনটা রিসিভ করে শান্ত কন্ঠে বলে ওঠে,
-” বলুন ”
ফোনের অপর পাশে জায়ান গুমরে হেসে উঠে। সে যেন খুব আনন্দিত হয়েছে। ইনায়া চুপচাপ শুনে জায়ানের উচ্ছ্বসিত কন্ঠ।
-” কি ব্যাপার হরিণী? কন্ঠ শোনার আগেই ধরে ফেললে? মন দিয়ে দাওনি তো আমার প্রতি? ”
ইনায়া নিশ্চুপ থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। জায়ানের ছোট ছোট এই কথাগুলো প্রথমে বেশি পাত্তা না দিলেও, আজকাল তাকে অনেক ভাবায়। প্রথম প্রথম জায়ান কে তার ভিষন ভয় লাগলেও, জায়ানের তার প্রতি শান্ত ব্যবহারে ইনায়া ভয়টা ভুলেছে। যেটা হবার নয়, তা বাড়তে না দেওয়াই ভালো। অবশেষে মুখ খুলে ইনায়া। শান্ত মিষ্টি স্বরে বলে ওঠে,
-” মন কি এমনিই? সহজেই কাওকে বের করে আরেক জনকে ধরা যায়? আমার মনের উপর জোর আছে। এটা কখনো সম্ভব নয়। ”
-” হলে দোষ কি হরিণী? একজনের যাতনা নিয়ে সারা জীবন বাঁচতে পারবে কি? তাকে ভুলতে পাশে কাউকে দরকার। ”
মুহূর্তেই পিনপিন নিরবতা। উচ্ছ্বসিত কন্ঠের স্বর বদলে গেছে গম্ভীর স্বরে। ইনায়া সল্প হেসে মিনমিন করে বলে ওঠে,
-” আমি একা বাঁচতে চাই। নিজেকে নিজের জন্য গড়ে তুলতে চাই। সেখানে অন্য কেউ দখলনামা করুক সেটা আমি চাই না। ”
ফোনের অপর পাশে জায়ান উচ্চ স্বরে হেঁসে উঠলো। ইনায়া অবাক হয়। এইলোকের মুড যখন তখন চেঞ্জ হয়ে যায়। বহু কষ্টে জায়ান নিজের হাসি থামিয়ে বলে উঠে,
-” ডিভোর্স পেপারে এখনো সই করোনি? এতো কেন মনের সংকোচ হরিণী? তা এতই যখন পারবেনা, তাহলে তার মত থাকলে এক হয়ে যাও। ”
-” এতোই সহজ সব? আমার তো মনে হয় না। ”
দুজনেই চুপ হয়ে যায়। কথা নেই আর কারো মুখে। আসলেই কি সব ভুলে এক হওয়া যায়? হয়তো যায় আবার না। সব যেন মন আর বিধাতার খেলা। ভাবে ইনায়া। জায়ান হঠাৎ কোমল স্ফুট কন্ঠে বলে ওঠে,
-” দেখা করবে হরিণী? এমুহূর্তে একটা শেষ সিদ্ধান্ত বড্ড প্রয়োজন। ”
চলবে…………..