রিদ_মায়ার প্রেমগাঁথা #লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া ৪২

0
135

রিদ_মায়ার প্রেমগাঁথা
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া

৪২
তপ্ত রোদে অতিষ্ঠ জন-নগরী । কাঠফাটা রোদের হিটে গা জ্বলা ভাব। মাথার উপর সূর্যটা যেন দাঁড়িয়ে। সময় ঠিক তখন দুপুরের ঘরে। ঘড়ির কাঁটায় ১ঃ১৩। মাত্র ক্লাস শেষ করে কলেজে মাঠে নামল পঞ্চম বান্ধবী। রোদের প্রহরতায় মুখ কুঁচকে বিরক্তি প্রকাশ করছে একেক জন। ইতিমধ্যে দরদর ঘামে ভিজে উঠেছে জামাসহ সবার গায়ের এপ্রোনটাও। কিন্তু এরমাঝে দল ছেড়ে রাফাকে কোথাও দৌড়ে চলে যেতে দেখে আচানক চমকে উঠলো সবাই। মূহুর্তে হাঁটা থামিয়ে পিছন ফিরে রাফাকে উঁচু গলায় ডাকল মায়া…

‘ রাফা কই যাচ্ছিস তুই?

মায়ার কথায় তৎক্ষনাৎ উত্তর আসলো রাফা…

‘ জানু দুই মিনিট অপেক্ষা করো, আমি পাঁচ মিনিটে আসতেছি।

রাফাকে দৌড়াতে দেখে পাশ থেকে বিরক্তিতে চেঁচাল শ্রেয়া। রাফাকে উদ্দেশ্য করে বলল….

‘ তোকে রেখে চলে যাব কিন্তু আমরা।

‘ তোকে দাঁড়াতে কে বলছে? তুই চলা যা। আমার জানু থাকলেই হবে।

এরমাঝে মায়াকে উদ্দেশ্য করে পুনরায় চেঁচাল রাফা, ভুলবাল ইংলিশ বলে বলল…

‘ জানু ইউ ওয়েটিং। আই এম কামিং দুই মিনিট।

চঞ্চল রাফা চঞ্চলতা নিয়ে সবার ধারণা বিগত দিনে ভালো করেই হয়েছে সবার। সবার থেকে মায়ার ধারণাটা বেশি হয়েছে রাফাকে নিয়ে। সেদিন মায়ার রাফার জীবন বাঁচানোর পর থেকে যেন রাফার জন্য মায়া আরেকটা বিশ্বাসযোগ্য স্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাফার জন্য সবাই একদিকে কিন্তু মায়া অন্য দিকে। মায়া এই কাঠফাটা রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে হতাশার নিশ্বাস ফেলল রাফাকে দৌড়ে ক্যান্টিনের দিকে চলে যেতে দেখে। শ্রেয়া রাফাকে চলে যেতে দেখে সেও এই রোদেই দাঁড়াল। রাফার অতিরিক্ত চঞ্চলতা তাদের সবাইকে দারুণ আনন্দ দেয়। কিন্তু অতিরিক্ত রোদের জন্য সবাই ক্যাম্পাসের করিডোরে দাঁড়াতেই মিনিট খানিকের ভিতর রাফাকে দেখা গেল দুহাতে কোণ আইসক্রিম নিয়ে দৌড়ে আসতে। মায়ার বরাবর থেমে হাঁপাতে হাঁপাতে মায়ার দিকে একটা আইসক্রিম বাড়িয়ে দিতেই, মায়া সেটা হাতে নিতে নিতে কপাল কুঁচকে রাফার দিকে তাকিয়ে বলল…

‘ তুই আইসক্রিমের জন্য তখন এইভাবে দৌড়াচ্ছিলি?

‘ তো কি করবো? আমার জানুর গরম লাগছে তাই ওকে একটা আইসক্রিম খাওয়াব না?

‘ তাই বলে এতো মানুষের সামনে দৌড়াতে গিলি কেন? হেঁটে যেতি।

‘ আরে চিল। আইসক্রিম খাও তো জানু।

রাফা হাতের অপর একটা আইসক্রিমটা জুই দিকে বাড়িয়ে দিয়ে সে অবশিষ্ট আইসক্রিমটা নিজে খেতে লাগল। শ্রেয়া, নাদিয়া কারও জন্য আইসক্রিম আনতে না দেখে চেতে উঠে শ্রেয়া।

‘ তুই আমাদের জন্য আইসক্রিম আনলি না কেন? আমাদের গরম লাগছে না?

রাফার দায়সারা উত্তরে বলল…

‘ গরম লাগলে কিনে খা। আমি কেন তোকে নিজের টাকায় আইসক্রিম খাওয়াতে যাব? আমি কি তোর বয়ফ্রেন্ড লাগি আজব।

‘ তাহলে মায়া, জুইকে যে খাওয়ালি?

‘ দেখ শ্রেয়া! জানু(মায়া) আমার জানু লাগে। আর জানুর বোন(জুই) আমার বোন হয়। সেজন্য দু’জনকে খাওয়ালাম। এখন তোরা আমার কি লাগুস? যে খাওয়াব?

পাশ থেকে নাদিয়া অবাক সুরে বলল…

‘ মানে আমরা তোর বান্ধবী না?

আইসক্রিমের কাগজটা ছাড়াতে ছাড়াতে নাদিয়া কথার উত্তরের বলল রাফা..

‘ সেটা আবার কখন হলাম? জীবনে কখনো স্বীকার করেছিস বা কাউকে বলেছিস যে তোরা আমার বান্ধবী হোস সেটা?

নাদিয়া খানিকটা দমে গিয়ে বলল…
‘ বলতে হবে কেন? দু’মাস ধরে আমরা একত্রে আছি তাহলে হলাম না বান্ধবী?

তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নাদিয়া দিকে রাফা তাকিয়ে বলল….

‘ দু’মাস ধরে কি তোরা আমার সাথে আছিস নাকি আমি জানুর সাথে আছি বলে তোদের সাথে দেখা হচ্ছে কোনটা? দেখ! আমার থেকে আইসক্রিম খেতে হলে আগে আমার বান্ধবী হতে হবে নয়তো আমি কাউকে ফ্রীতে সুতার দেওয়ারও মানুষ না।

নাদিয়ার কিছু বলার আগেই শ্রেয়া রাফাকে জড়িয়ে ধরে বন্ধুত্ব করার আবদার জানাতেই রাফা সেটা বেশ ভাব নিয়ে এক্সেপ্ট করে। শ্রেয়া সঙ্গে সঙ্গে নাদিয়াও তাই করলো। মূহুর্তের মাঝে তিনজনের মধ্যেই বেশ বন্ধুত্ব বন্ধুত্ব একটা ভাব তৈরি হতেই শ্রেয়া রাফাকে আইসক্রিম খাওয়ানোর আবদার করগেই সেটা পুনরায় না করে বসলো রাফা। বলল…

‘ আমি কেন খাওয়াব?

‘ মানে এখন আমরা বন্ধু না?

‘ তাহলে তুই আমাকে খাওয়া আগে।

‘ আমি না সকালে তোকে দশ টাকা আমড়া খাওয়ালাম। ভুলে গেছিস?

শ্রেয়ার কথায় রাফা মনে পরলো সত্যি সত্যিই শ্রেয়া সকালে সবাইকে আমড়া খাইয়েছিল। সেখানে রাফাও ছিল। তাই এখন রাফারও উচিত শ্রেয়ার সাথে নিজের আইসক্রিম শেয়ার করার। রাফা আইসক্রিমের প্যাকেট ছাড়াতে ছাড়াতে শ্রেয়ার দিকে নিজের আইসক্রিমটা বাড়িয়ে দিতে দিতে বললে….

‘ ঠিক আছে তাহলে তুই আমার আইসক্রিম থেকে পাঁচ টাকার, পাঁচ টাকার করে দশ টাকার কামড় দিবি ছোট করে কেমন?

‘ আচ্ছা দে!

শ্রেয়া মাথা কাত করে সম্মতি দিয়ে হা করতেই রাফা নিজের আইসক্রিমটা এগিয়ে দিল। চোখে পলকে রাফার অধেক আইসক্রিমটা চলে গেল শ্রেয়ার মুখে। শ্রেয়ার হঠাৎ কান্ডে রাফা বোকার মতো তাকিয়ে রইল শ্রেয়ার মুখের দিকে । মায়া, জুই, নাদিয়া উচ্চ স্বরে হেসে উঠতে রাফা রেগেমেগে নাদিয়া হাতে নিজের বাকি অধেক আইসক্রিম ধরিয়ে দিতে দিতে বলল…

‘ নাদিয়া তুই আমার আইসক্রিমটা ধর। আজকে ওর পেট থেকে বের করবই আমার আইসক্রিম। নে ধর।

শেয়ালের কাছে মুরগী জমা দেওয়ার মতোন নাদিয়া কাছে রাফা আইসক্রিমটা জমা দেওয়ার কাজটা হলো। রাফা যখন শ্রেয়ার মুখ খোলার চেষ্টা করছিল সেই ফাঁকে নাদিয়া রাফার বাকি অধেকটা আইসক্রিম মুখে ফুরে গাল ফুলিয়ে চিবুতে লাগলে মায়া, জুই মধ্যে পুনরায় হাসির রোল পরলো একই কান্ড নিয়ে। মায়া হেঁসে রাফাকে নিজের কাছে টেনে হাতের আইসক্রিমটা এগিয়ে দিতে দিতে বলল…

‘ আয় এটা আমরা দুজন ভাগ করে খাই।

মায়ার কথায় রাফা নাদিয়া দিকে তাকাতে দেখল সে মুখ ভরে ওর আইসক্রিম চিবুচ্ছে। রাফার নিজের বোকামি বুঝতে পেরে গাল ফুলিয়ে মায়ার আইসক্রিম ফিরিয়ে দিতে দিতে বলল…

‘ খাব না আমি।
‘ আরে আয় তো জানু। ভাগাভাগি করে কিছু খেলে ভালোবাসা বাড়ে বুঝলি।

মন খারাপের রাফা মায়ার পাশাপাশি হেঁটে মায়ার আইসক্রিমে কামড় বসাতে চাইলে শ্রেয়া দৌড়ে এসে রাফার গলা জড়িয়ে ধরতেই একই ভাবে নাদিয়াও এসে রাফাকে জড়িত ধরলো সরি বলল। দুষ্টমীতে মেতে থাকা পঞ্চ বান্ধবীর বেনি সুতার সম্পর্কটা যেন চোখে লাগার মতোন শক্ত হলো। শ্রেয়া নাদিয়াকে বিদায় জানিয়ে বাকি তিনজন রাস্তার পাশে দাঁড়াল রিক্সার জন্য। যদিও রাফা উল্টো পথে যাবে রিক্সা নিয়ে তারপরও সে রিক্সার জন্য একই মোড়ে মায়াদের সাথে দাঁড়াল। মিনিট দুইয়ের ব্যবধানে কোথা থেকে রাহাত দৌড়ে এসে দাঁড়াল মায়ার সম্মুখে। রাহাতের হঠাৎ উপস্থিতিতে চমকে উঠার মতোন তিনজনই তাকাল সেদিকে। রাহাত হাঁপাতে হাঁপাতে খুবই বিনয়ের সঙ্গে মায়াকে উদ্দেশ্য করে বলল…

‘ ভাবি আমার সাথে চলুন। রিদ ভাইয়ের আব্বা আসছেন আপনার সঙ্গে দেখা করতে। চলুন ভাবি!

রিদ আব্বা মানে মায়ার শশুর। আর তিনি রিদের সঙ্গে মায়ার বৈবাহিক সম্পর্কটা সম্পর্কে অবগত আছেন এতোদিনে মায়া যতটুকু জেনেছে। এখন হঠাৎ সবার অগোচরে উনার আগমন আর মায়াকে ডেকে পাঠানো উনার সঙ্গে দেখা করতে। সবকিছু মায়ার মনে ভয়ভীতি সৃষ্টি করলো। মায়ার মনে হলো তিনি নিশ্চয়ই মায়াকে বলবে যেন সে রিদের জীবন থেকে দূরে চলে যায়। তারা বড়োলোক আর মায়ারা গরীব এজন্য রিদের সঙ্গে মায়াকে মানাবে না এমন কিছু বলবে। হয়তো তিনি এটাও বলতে পারে মায়া যেন রিদের সঙ্গে সব সম্পর্ক নষ্ট করে ফেলে। এলোমেলো চিন্তা ভাবনায় মায়ার মন অস্থির হলো অজানা ভয়ে। সত্যি রিদের বাবা এসেছে কিনা সেটা শিওর হতে মায়া পুনরায় বলল…

‘ সত্যি আপনার ভাইয়ের আব্বু এসেছেন? মানে আমার শশুর?

আতঙ্কে মায়া তাড়াহুড়ো কি থেকে বলে ফেলল। কিন্তু রাহাত তাতে বিন্দুমাত্র মাইন্ড করলো না। বরং আগের নেয় নম্রতায় সম্মতি দিয়ে বলল…

‘ জ্বি ভাবি, চলুন।

মায়া ভয়ে আমতাআমতা করলো। হুট করে রিদের বাবার সঙ্গে দেখা করাটা মায়ার মনে ভীতিকর লাগল। এমনিতে রিদ মায়ার সঙ্গে কথা বলছে না তারপর আবার রিদের বাবা? ভয়ার্ত মায়া মাথা নাড়িয়ে হাঁটল রাহাতের পিছন পিছন। ধীর পায়ের গতি আর মায়ার হাসফাস ভঙ্গি বলছে মায়া এই মূহুর্তে কতোটা সিটিয়ে আছে রিদের বাবার উপস্থিতি নিয়ে। রাস্তা অপর পাশে একটা সাদা মার্সিডিস দেখা গেল দাঁড়িয়ে। রাহাত মায়াকে নিয়ে সেখানে যেতেই পিছনে দরজা খোলে বেড়িয়ে আসলো মধ্যে বয়স্ক নিহাল খান। রোজকার মতোই গায়ে সাদা পাঞ্জাবি পায়জামা জড়িয়ে। মুখে ওয়ানটাইম মাক্স। হয়তো বর্তমান মন্ত্রী হওয়ায় জনমুখী হতে বাঁচতে মুখে মাক্স পড়া। মায়া উনার সামনে যেতেই মাথা তুলে তাকাল উপরের দিকে। লম্বা চওড়া এক বলিষ্ঠবান পুরুষ নিহাল খান। দেখেই বুঝায় যায় রিদ তার বাবার হাইট পেয়েছে। গায়ের রঙটাও দুধ সাদা। রোদের তাপের চামড়া লাল হয়ে আছে। মায়ার এক মূহুর্তে জন্য মনে হলো সকল সুন্দর সুন্দর প্রোডাক্ট আল্লাহ তাআলা ওর শশুর বাড়িতে টান্সফার করে দিয়েছে। বাকি ওরাতো প্লাস্টিকের। সবাই বলে মায়া সুন্দর। অথচ এই শশুর বাড়ির পাবলিকের সামনে দাঁড়ালে মায়ার মনে হয় ওহ বড়সড় ডিম পেয়ে ফেল করে প্রতিবার। এদের সামনে নিজেকে সুন্দর দাবি করে পাস করাই যাবে না ইহজীবনে। মায়া সুন্দর সুদর্শন শশুর দিকে তাকিয়ে নম্রতায় মিহি স্বরে সালাম দিল….

‘ আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল।

মাক্সের ভিতর থেকেই নিহাল খানের অল্প হাসির শব্দ কানে আসলো মায়ার। তিনি মায়া মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে সালামের উত্তর দিয়ে বলল…

‘ ওয়ালাইকুম সালাম আম্মু। কেমন আছেন আপনি?

মায়া চমকানো মতো আবাক চোখে তাকাল নিহাল খানের দিকে। মায়া ঘুনাক্ষরেও ভাবিনি ওর শশুর এতোটা ভালো ব্যবহার করবে ওর সাথে। মায়ার সাথে আজ প্রথমবার নিহাল খানের কথা হচ্ছে। এর আগে বেশ কয়েক দুজনের দেখাদেখি হলেও কখনো কথা হয়নি কারও। কিন্তু আজ সরাসরি মায়াকে আম্মু বলে সম্মোধন করাতে মায়া জড়তা কমে আসলো কিছুটা। মায়া জানতো নেতারা খুবই ভয়ংকর আর চতুর্মুখী মানুষ হয়। ক্ষমতার গরমে মানুষকে মানুষ মনে করে না নেতারা অথচ মায়ার সঙ্গে কি নম্রতা ব্যবহার করছে ওর শশুর। নিহাল খানকে নিয়ে মায়ার এতক্ষণ পাওয়া অজানা ভয়গুলো যেন হঠাৎই কমে আসলো ভিতরে। খানিকটা সহজ হয়ে জড়তার মিহি গলায় উত্তর করলো মায়া।

‘ জ্বি আলহামদুলিল্লাহ। আপনি কেমন আছেন আঙ্কেল?

খুব গোছানো আর আন্তরিকতা সঙ্গে হাসি মুখে কথা বলল নিহাল খান।

‘ বাবাকে আঙ্কেল বললে হবে আম্মু? বাবাকে বাবাই ডাকতে হয় বোকা মেয়ে। এরপর থেকে বাবা ডাকবে কেমন? রিদ আমার ছেলে হলে তুমি আমার ছেলের বউ। আমার একটা মেয়ে। আর মেয়ের মুখে আঙ্কেল ডাক শুনতে ভালো দেখায় না। বাবা, বাবাই হয়। মনে থাকবে?

মাথা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিতে দিতে বলল…

‘ জ্বি আব্বু!

‘ দ্যাটস এ গুড গার্ল! কলেজ শেষ আম্মু?

মায়া আবারও মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে ধীর গলায় বলল…

‘ জ্বি!

‘ তাড়াহুড়ো আছে আপনার?
‘ না আব্বু।
‘ দুপুরে খেয়েছেন কিছু?
‘ না কলেজ মাত্র ছুটি হলো। বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খাব। আপনি খেয়েছেন?
‘ না আম্মু আপনার মতোই বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খাব। তার আগে একটা মিটিংয়ে যেতে হবে। আসলে সামনে নিবার্চন তাই এখন একটু ব্যস্ততা বেশি, নয়তো বাবা-মেয়ে মিলে লাঞ্চটা শেষ করে যেতাম। আচ্ছা যাই হোক! আপনি এটা নিন আম্মু, আমি খুশি হবো।

নিহাল খানের হাতে একটা মোটাসোটা চিঠির খাম ছিল। এতক্ষণ মায়া লক্ষ করেনি সেটা। মনে করেছিল হয়তো নিহাল খানের জরুরি কিছু হবে এই খামটাতে। কিন্তু মায়ার দিকে খাম এগিয়ে দিতেই মায়া আমতাআমতা করলো খামটি নিতে। মায়াকে দ্বিধাবোধ করতে দেখে তিনি পুনরায় মায়াকে বললো খামটা নিতে। মায়া জড়তার হাতে খামটি নিতেই বুঝতে পারলো বেশ ভারি এই খামটি। এতে কি আছে মায়া জানে না। জানার চেষ্টা করতে হলেও না তার আগেই নিহাল খান নিজেই বলতে লাগল…

‘ সরি আম্মু আপনাকে উপহারের বদলে টাকা দিচ্ছি বলে। আসলে আপনার এই বুড়ো বাবার মেয়েলি কেনাকাটা সম্পর্কে বুঝে না। বলতে পারেন আমার পূর্বে যতটুকু অভিজ্ঞতা ছিল এখন সেটা ভুলে গেছি অনেক বছর হলো। এই টাকা গুলো দিয়ে আপনি আপনার পছন্দ মতো কিছু কিনে নিবেন তাহলে আমি খুশি হবে। আসলে আপনাদের বিয়ের খবরটা আমি আরও আগে পেয়েছিলাম কিন্তু তারপরও এতোদিন ব্যস্ততার জন্য আপনার সাথে দেখা করতে আসতে পারিনি। সামনে নিবার্চন! তারপর রিদটা কেন জানি এখনো চট্টগ্রামে আসছে না আমাকে হেল্প করতে। আসলে রিদ নেই বলে আমাকেই সকল কাজের জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে হচ্ছে। আচ্ছা যায় হোক! পরশু বাড়িতে মেজবান রাখা হয়েছে। আপনাকে দাওয়াত করতে আসলাম আম্মু।
আপনি অবশ্যই আপনার শশুর বাড়িতে উপস্থিত থাকবেন সপরিবারে। আমি আরিফকে বলে রাখবো আপনাদের নিয়ে যেতে কেমন।

মায়া মাথা কাত করে আবারও সম্মতি দিয়ে বলল..

‘ জ্বি আচ্ছা!

‘ আচ্ছা আম্মু তাহলে আজ আসি। আপনি একটু রিদকে বলে দিবেন যেন কালকের মধ্যে চট্টগ্রামে চলে আসে। আসলে রিদ নেই তাই একা হাতে আমি সবটা সামলাতে হিমসিম খাচ্ছি। আপনি বললে হয়তো ওহ চলে আসবে।

মায়া বলতে পারলো না রিদ মায়ার সঙ্গে রাগ করে চট্টগ্রামে আসে না। কিন্তু নিহাল খানের ব্যস্ততা দেখে মায়ার সত্যি খারাপ হলো। অপরাধ বোধে জড়িয়ে মায়া সত্যিটা গোপন করে বলল…

‘ জ্বি আচ্ছা! আমি উনাকে বলবো আব্বু।

মায়ার কথার সাথে সাথে নিহাল খানের আদুরের হাত উঠে যায় মায়ার মাথার উপর। স্নেহময় হাতে হিজাবের উপর দিয়ে বুলিয়ে বলল….

‘ আজ আসি তাহলে আম্মু! আপনি ভালো থাকবেন কেমন।

‘ জ্বি আচ্ছা! আসসালামু আলাইকুম।

‘ ওয়ালাইকুম সালাম।

গাড়িতে উঠতে উঠতে মায়ার সালামের উত্তর করলো নিহাল খান। রাহাতও গিয়ে বসল গাড়ির সামনের সিটে ডাইভারের সঙ্গে। কয়েক সেকেন্ড ব্যবধানে গাড়িটিকে চলে যেতে দেখে রাস্তা অপর পাশ থেকে তাড়াহুড়ো এগিয়ে আসলো জুই আর রাফা। দুজন মায়াকে ঘিরে নানান কথা জানতে চাইল। জুই মায়াকে প্রশ্ন করে বলল…

‘ কেন এসেছিল আঙ্কেল?

‘আমার সাথে দেখা করতে।

‘ কেন?

‘ উনারদের বাসায় নাকি মেজবান রাখা হয়েছে সেজন্য আমাকে ছেলের বউ হয়ে সেখানে উপস্থিত থাকতে বললো।

পাশ থেকে জুইয়ের কথার ফোঁড়ন কেটে রাফা বলল…

‘ জানু তোর হাতে ঐটা কি?

রাফার কথায় মায়া, জুই সকলের দৃষ্টি মায়ার হাতের খামটার উপর পড়লো। মায়া ঠোঁট উল্টে খামটা ঘুরিয়ে এপিঠ-ওপিঠ দেখে বলল…

‘ মনে হয় টাকা আছে। উনার(রিদ) আব্বু খামটা দিয়ে বলল আমার পছন্দে মতে কিছু কিনে নিতে। উনি নাকি মেয়েলি উপহার বুঝে না। তাই আমাকে টাকা দিতে বাধ্য হলো।

রাফা হাত বাড়িয়ে বলল…

‘ প্যাকেটটা দে তো আমাকে! দেখি কতো আছে?

মায়া রাফার দিকে প্যাকেটটি এগিয়ে দিতে রাফা সেটা হাতে নিয়ে প্যাকেট ছিঁড়তে বেড়িয়ে আসলো পাঁচশ টাকা একটা মোটা বান্ডিল। টাকার উপর ব্যাংকিং সিলসহ টাকার পিন আটকানো। রাফা মোটা টাকার বান্ডিল হাতে নিতেই চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেল সবার। মায়া নিজেও ভাবিনি এতো টাকার বান্ডিল ওর শশুর ওকে ধরিয়ে দিবে তাহলে সে কখনোই এটা গ্রহণ করতো না। রাফা টাকার বান্ডিলটা হাতে নিয়ে বলল…

‘ বাপরে বড়োলোক শশুর হলে এমনই হয়। প্রথমবার ছেলের বউয়ের মুখ দেখেই ডিরেক্ট পঞ্চাশ হাজার টাকার বান্ডিল ধরিয়ে দিল? আহা কি ভালো মানুষ তারা! আচ্ছা জানু! রিদ জিজু আসবে পরশু?

এতক্ষণ মুখে আবাকতা থাকলেও হুট করেই যেন অন্ধকার ছেয়ে যায় মায়ার মুখে রাফার শেষ কথাটা শুনে। রিদ আসবে কিনা মায়া নিজেও জানে না। বরং মায়া অপেক্ষা আছে রিদের। সে কখন আসবে আর কখন মায়া রিদের অভিমান ভাঙ্গাবে। অনেক তো হলো এই মান অভিমান পাল্লা। আজ তিনমাসের উপর হয়েছে রিদের সঙ্গে মায়ার দেখা নেই। ঠিকঠাক কথা হয়না। এই তিনমাসে লাস্ট দুইমাস মায়া কতো চেষ্টা করছে রিদকে বুঝাতে কিন্তু রিদতো মায়ার কোনো কথার পাত্তায় দিচ্ছে না। মায়ার এখন মনে হচ্ছে মায়া ব্যর্থ হয়ে পরছে রিদের অভিমান ভাঙ্গাতে গিয়ে। কোনো ছেলে মানুষকে এতো রাগ করতে দেখেনি মায়া। মায়াকে কিছু বলার সুযোগই দিচ্ছে না সে। এর মধ্যে মায়ার শশুর ওকে দায়িত্ব দিয়ে গেল ওর অভদ্র জামাইকে চট্টগ্রামে ফেরাতে। মায়া কিভাবে এই অসম্ভব কাজটা সম্ভব করবে সেটাই চিন্তার বিষয়। মায়াতো এখন কোনো রাস্তায় দেখছে না।

মায়া মন খারাপ করতে দেখে রাফা বুঝল রিদ আসবে না পরশু। সেজন্য জুইয়ের কাছে ওদের ফোন চেয়ে রাফা বলল…

‘ জুই তোদের ফোনটা দে তো একটু।

‘ কেন?
‘ আরে এতো প্রশ্ন করছিস কেন? ফোনটা দিলেই তো দেখতে পারবি কেন চাইছি। দে না বোন।

জুই কথা না বাড়িয়ে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে রাফার হাতে তুলে দিতেই রাফা মেসেজ বক্সে গিয়ে উচ্চ স্বরে বলে বলে লেখতে লাগল….

‘ জান আই এম ভেরি লংলি লংলি। ইফ ইউ কাম টু মি, আই উইল গিভিং ইউ টেস্টি টেস্টি হানি।

রাফার মুখে ভুলবাল ইংলিশ আর অদ্ভুত কথাবার্তা শুনে নাক মুখ ছিটকালো মায়া। রাফার হাতের ফোনটা টানাটানি করে বলল…

‘ ছিঃ কিসব বাজে মেসেজ করছিস তুই? উনি এসব দেখলে আমাকে মেরে ফেলবে। ফোন দে তুই।

রাফাও ফোনটা নিজের কাছে টেনে বলল…

‘ আরে জানু চিল! প্যারা নিস না। বেডা মানুষ এসব মেসেজেই আটকায়। তোকে মারবে না বরং টান খেয়ে চলে আসবে।

মায়া আগের নেয় নাক মুখ ছিটকিয়ে বলল…

‘ ছিঃ কি নোংরা মাইন্ড তোর রাফা। দে আমার ফোন দে! তোর আর মেসেজ করা লাগবে না। ফোন ছাড়!

‘ আরে জান প্রমিজ করছি। আর দুষ্টু কিছু লেখব না। শুধু ভাইয়াকে বলবো কাল চলে আসতে। সত্যি!

মায়া থামল। সন্দেহ নিয়েও হাত ছেড়ে দিল। মনে করলো সত্যি বুঝি এবার রাফা ভালো কিছু মেসেজ করবে রিদকে। কিন্তু মায়ার আশায় রাফা পানি ঢালল বালতি ভরে ভরে। বেশ সময় নিয়ে কিছু টাইপিং করল ফোনে, রিদকে মেসেজ পাঠিয়ে দুষ্টু হাসল রাফা। জুই, মায়া রাফার মুখের দিকেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল তখনো। রাফা ধরা পরে যাওয়ার ভয়ে রিদকে মেসেজ সেন্ট করে সেটা আবার ডিলিট করে দিল যাতে মায়া সেটা পড়তে না পারে। রাফাকে দুষ্টু হাসতে দেখে পাশ থেকে সন্দেহ পোষণ করে জুই বলল…

‘ তুই হাসছিস কেন এইভাবে?

রাফা হেয়ালি করে উত্তর দিয়ে বলল…

‘ মাশাল্লাহ আমার মুখটাই হাসি হাসি তো। সেজন্য তোর মনে হচ্ছে আমি হাসছি। আসলে আমি কিন্তু হাসছি না বুঝলি?

‘ তুই আমার ফোন দে!

পুনরায় থাবা মেরে ছিনিয়ে নেওয়ার মতো রাফার থেকে ফোন নিল মায়া। মেসেজ বক্স চেক করতে সেখানে তেমন কিছু পেল না শুধু মায়ার পূর্বের করা মেসেজ গুলো ছাড়া। মায়া কপাট রাগ দেখিয়ে রাফাকে বলল..

‘ সবকিছু ডিলিট করলি কেন? উনাকে(রিদ) কি মেসেজ করেছিস তুই?

রাফা এগিয়ে এসে মায়ার কাঁধ জড়িয়ে ধরতে ধরতে শতঃস্ফুতার সঙ্গে বলল।

‘ করেছি কিছু একটা। তবে তুই শিওর থাকল জানু, ভাইয়া মেসেজটা দেখা মাত্রই চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরবে। আসলে বেডা মানুষ নরীতেই আটকায় বুঝলি।

রাফার কথায় মায়া যেন খুশি হয়ে গেল। অবিশ্বাস্য গলায় বলল….

‘ সত্যিই আসবেন উনি?
‘ দুই কোটি % শিওর থাকো। ভাইয়া অবশ্যই আসবেন। এখন তুমি আমাদের লাঞ্চ করাও তো জানু। তারপর তোমার জন্য স্পেশাল শপিংয়ে যাব আমরা।

রাফার কথায় মায়া কিছু বলবে তার আগেই জুই প্রশ্ন করে বলল…
‘ শপিংয়ে কেন?
‘ আরে শাড়ী কিনতে হবে না?
‘ হঠাৎ শাড়ি কেন?
‘ আরে পরশু জানু ওর শশুর বাড়িতে যাবে না? তখন কি সাধারণ ড্রেস পরে যেতে পারবে? বউ বলে কথা অবশ্যই শাড়ী পড়তে হবে জানুর। নয়তো জানুর শশুর বাড়ির মানুষ কি ভাববে বল?

রাফা কথা আপত্তি জানিয়ে জুই বলল…
‘ তাই বলে এখন কেন শাড়ি কিনতে যেতে হবে? প্রোগ্রাম তো পরশু। কাল শপিংয়ে গেলেও তো হয়।

রাফা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলল…

‘ কাল জানু জিজুকে নিয়ে অনেক ব্যস্ত থাকবে। কাল সময় পাবে না। তাই আজই চল।

জুই এবার সন্দেহ করে বলল…
‘ তুই কিভাবে এতো শিওর হচ্ছিস রিদ ভাইয়া কালই চলে আসবে? তিনমাস ধরে ভাইয়াকে মানাতে পারছে না মায়া আর তোর একটা মেসেজে ভাইয়া কাল চলে আসবে?

রাফা ভাব নিয়ে বলল…
‘ আসলে এতোদিন ঔষধ জায়গা মতো পরেনি সেজন্য ব্যথা ভালো হচ্ছিল না। এখন ঠিক জায়গায় মলম লাগিয়েছি, ব্যথা ভালো না হওয়ার চান্সই নাই বুঝলি।

‘ মানে?

রাফা খানিকটা বিরক্ত হয়ে বলল…

‘ আরে চলতো। মানেটা কালই ঠের পাবি। এখন চল!

রাফা রিদকে কি মেসেজ করলো যার জন্য রিদ সবকিছু ভুলে চট্টগ্রামে চলে আসবে মায়ার জন্য তা মায়া জানে না। আর না জানতে চাই। রাফা যায়ই মেসেজে লেখুক তাতে মায়ার কোনো আপত্তি থাকবে না যদি রিদ সত্যি সত্যি চট্টগ্রামে চলে আসে তাহলে। মায়া শুধু এই মূহুর্তে রিদকে চাই। সেটা যেভাবেই হোক। এতো অপেক্ষা এবার মায়াও বিষাক্ত লাগছে।

.
[ সমস্যা নিয়ে কথা বলতে আমার পছন্দ না। সেজন্য আমি পেইজে কখনো কোনো কিছু নিয়ে উল্লেখ করি না। আমার পারিবারিক শিক্ষা বলে, তোমার সমস্যা একান্তই তোমার। সেটা সবাইকে বলে বেড়ালে সমাধান হবে না। বরং তুমি মানুষের চোখে নিজের অবস্থান হারাবে। আমি গল্প দেরিতে দেওয়া নিয়ে অনেক কথা শুনি। এখনো শুনছি! এতোকিছু শুনে যদি চুপ থাকতে পারি, ধৈর্য ধরে লেখতে পারি তাহলে আপনাদের উচিত আমার সাথে বাজে ব্যবহার না করার। এরপরও যদি আপনারা আমার ভদ্রতাকে আমার দূর্বলতা মনে করেন তাহলে সেটা আপনাদের ব্যর্থতা। আমি ভদ্র হতে পারি কিন্তু দূর্বল নয়। ]

[ কেউ মন খারাপ করবেম না আজকের পার্টটা নিয়ে। হুট করে রিদের এন্ট্রিটা করাতে পারছিলাম না। গল্পটা গুছিয়ে আনতে হবে ধারাবাহিক ভাবে। তবে নেক্সট পার্ট থেকে রিদের উপস্থিতি থাকবে রোমাঞ্চকর! ধন্যবাদ সবাইকে]

#চলিত….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here