রিদ_মায়ার প্রেমগাঁথা
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
৩৮
‘ আই লাভ হার বাবা। এন্ড আই ওয়েন্ট হার। প্লিজ বাবা যেকোনো মূল্যে মেয়েটিকে এনে দাও আমায়। আমার বুক কাঁপছে, ভিষণ কলিজা পুরছে, মনে হচ্ছে নিশ্বাস আঁটকে মরা যাব ওকে ছাড়া। প্লিজ বাবা আমার আবদারটা রাখো। এনে দাও আমার বউকে। নয়তো আমি পাগল হয়ে যাব বাবা। নিশ্বাস আঁটকে মরে যাব। প্লিজ বাবা সেইভ হার। প্লিজ।
নিরুপায় নিহাল খান রিদের পিঠে আশ্বস্তের হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল…
‘ আমরা খুব শীঘ্রই মেয়ে দুটোকে পেয়ে যাব বাবা। ইউ আর মাই ব্রেব বয়। ধৈর্য রাখো।
রিদের ঝিমিয়ে পড়া মস্তিষ্ক তড়াক করে জ্বলে উঠলো নিহাল খানের কথায়। মেয়ে দুটোকে খুব শীঘ্রই পেয়ে যাব মানে তার বউ এখনো নিখোঁজ। মাত্র দূর্বলতা প্রকাশ করা রিদ হয়ে উঠলো কঠিন। গুরুগম্ভীর মুখে বাবাকে ছেড়ে আশপাশটা তাকাল তীক্ষ্ণ নজরে। আশেপাশে হাজার হাজার মানুষের গমগমে ভিড়। অথচ তার বউ এখনো নিখোঁজ। গোটা রাত গড়িয়ে সকাল হলো অথচ দুটো নিখোঁজ মেয়ের সন্ধ্যা এতো এতো মানুষ মিলেও রিদকে দিতে পারলো না। শক্তপোক্ত রিদ ঘায়েল বাঘের নেয় হিংস্রত্বে প্রকাশের আগে শান্ত থাকল। কখন গর্জে উঠবে বা কখন হিংস্রত্বে থাবা বসাবে কার উপর কেউ জানে না। নিহাল খান ছেলের গম্ভীর ঘায়েল মুখটা দেখল। রিদকে কি বলে সান্ত্বনা দিবে সেই ভাষা উনারও জানা নেই। হাজার হাজার মানুষের বাইরে, আর্মি, রেব ফোর্স লাগানোর পরও যখন মেয়ে দুটোর সন্ধ্যা পাওয়া যাচ্ছে না তখন আশা করা যায় মেয়ে দুটো হয়তো আর বেঁচে নেয়। পাহাড়ি জঙ্গির হাতে পরে তাদের মাটি চাপা হয়েছে এতক্ষণে। আর এই কথাটি উপস্থিত সবার ধারণা করছে। এমনকি তিনি আর্মি কমান্ডার সাথে মেয়ে দুটোর ব্যাপারে কথা বলতে, কমান্ডার উনাকে এমনটায় জানায়। কিন্তু এই কথাটা তিনি বাবা হয়ে রিদকে কিভাবে জানাবে? ছেলের দূর্বলতা এই প্রথম কোনো কিছু নিয়ে দেখেছেন তিনি। বুঝ হবার পর এই প্রথম উনার ছেলে, উনার কাছে কোনো কিছু নিয়ে আবদার করলো, তাও নিজের বউকে সেইফ করতে। অথচ চারপাশে হুলুস্থুল অভিযান সে নিজেই চালিয়ে রেখেছে। বাবা হয়ে উনার কিছু করার সুযোগ পযন্ত পাচ্ছেন না তিনি। ছেলের দূর্বলতার সামনে তিনি কিভাবে বাবা হয়ে ছেলেকে নিরাশ করে বলবে মেয়ে দুটো হয়তো আর বেঁচে নেই। মন্ত্রী হয়েও তিনি অসহায় বোধ করলো পরিস্থিতির কাছে। ছেলের পছন্দের মানুষকে খোঁজে না পেয়ে কিভাবে সামলাবে রিদকে সেই চিন্তা উনাকেও ত্রাস করলো। উনার বউটা এমনই যে রগচটে। যদি রিদের কিছু হয় তাহলে এই দ্বায়বার নিশ্চয়ই উনার উপর ঢালবে রিদের মা। দীর্ঘ ভারি নিশ্বাস গোপন করে তিনি এগিয়ে আসল রিদকে কিছু বলবে কিন্তু তার আগেই রিদ নিজের ক্রিমিনাল মাইন্ড চালাল। নিহাল খানকে উদ্দেশ্য করে ব্রেইন চালাতে চালাতে বলল…
‘ কমান্ডারদের দিগুণ ফোর্স বাড়াতে বলো বাবা। রেব বাহিনীর সাথে ট্রেকিং কুকুর পাহাড়ের বুকে নামাতে বলো জায়গায় জায়গায়। সন্দেহজনক যা পাবে সেটাই যেন সংগ্রহ করে। দরকার পরলে আমি নিজের ভিজিট করবো সেই সব জায়গা। দ্রুত ফোর্স বাড়াতে বলো। কুইক!
রিদের ট্রেকিং কুকুরের বিষয়টা নিহাল খানের দারুণ লাগল। এই কুকুর গুলো পাহাড়ের বুকে নামালে অবশ্যই মেয়ে দুটোর সন্ধান পাওয়া যেতে পারে দ্রুত। কিন্তু এতো এতো আর্মি, রেব ফোর্সের সাথে রিদের হাজার হাজার ছেলেপেলে থাকতে আরও মানুষের কি দরকার? নিহাল খান আমতাআমতা করে রিদকে আপত্তি জানাতে চেয়ে বলতে চাইল…
‘ কমান্ডারদের বলে দিচ্ছি ট্রেকিং কুকুরের বিষয়টা। কিন্তু এতো মানুষ থাকতে আরও ফোর্সের কি প্রয়ো….
নিহাল খানের কথা শেষ করার আগেই কোমরে দু’হাত রেখে পাহাড়ের শেষ সীমানায় তাকাল রিদ। দৃষ্টিতে সেকি তেজ। কোনো কিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ফেলার মতোন ভয়ংকর তপ্ত চোখে। সকালের পরিবেশটা বেশ সুন্দর। কিন্তু চারপাশের মানুষের হৈ-হুল্লোড় চিৎকারে পরিবেশটা আর সুন্দর দেখাচ্ছে না। যেন মনে হচ্ছে কোলাহলের কোনো রর্ণক্ষেত্র এটি। যেখানে সবাই যুদ্ধের প্রস্তুতিতে দাঁড়িয়ে। রিদ পাহাড়ের চূড়ায় তাকিয়ে নিহাল খানের কথা কেটে শক্ত গলা বলল…
‘ প্রয়োজন আছে বাবা। খুব প্রয়োজন আছে। শুধু আর্মি বা রেব ফোর্স নয় এই এলাকার পাহাড়য়ান লোক লাগাও আমার বউকে খোঁজতে। আমার এতো এতো ক্ষমতা আজ কোনো কাজে দিচ্ছে না বাবা। আমি আমার বউকে এখনো খোঁজে পাচ্ছি না। আমার জায়গাটা তোমাকে ব্যাখা দিতে পারব না। তুমি শুধু ফোর্স বাড়াও বাবা।
নিহাল খান আর আপত্তি করলো না। রিদের কথা মতো কাজ করলো। পিছন থেকে রিদের কাঁধ চেপে এগোল কমান্ডারদের দিকে। সেখানে কথা বলে ফোর্স বাড়াবে। সেই সাথে ট্রেকিং কুকুর পাহাড়ের বুকে নামাতে বলবে। নিহাল খান যেতেই আসিফ দৌড়ে এইদিকটায় এগিয়ে আসল রিদের দিকে। রিদকে জেগে উঠতে দেখে মূলত ওর কথা বলতে আসা। আসিফের দৌড়ে আসার মধ্যেই আকাশের বুকে দেখা গেল আরও একটি হেলিকপ্টারের চক্কর। দৌড়ে আসা আসিফ মাথা তুলে আকাশের দিকে তাকাল। এই হেলিকপ্টার নিশ্চয়ই খান পরিবারের সদস্যদের থাকার কথা। আসিফকে রাতে আয়ন কল দিয়েছিল মায়ার খোঁজ নিতে। হয়তো আয়ন হতে পারে এই হেলিকপ্টারে। আসিফ আকাশের দিকে তাকাতে তাকাতে দৌড়ে গতি কমিয়ে দিল। হেলিকপ্টারের পাখা ধীর কমে এসে আসিফকে পার হয়ে রিদের মাথা উপর দিয়ে গিয়ে নামল বাকি হেলিকপ্টারের সঙ্গে। রিদ চোখ উঁচিয়ে তাকাল না পযন্ত উড়ন্ত হেলিকপ্টারের দিকে। কে বা কারা এসেছে তার দেখার দরকার পযন্ত পরলো না। রিদ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সেই পাহাড়ের চূড়ায়। আসিফ দৌড়ে রিদের কাছাকাছি আসতেই ডাকাল রিদকে…
‘ ভাই!
‘ আকাশের বুকে হেলিকপ্টার গুলো উড়া আসিফ। সবগুলো নিষিদ্ধ জায়গায় হেলিকপ্টারের খোজ লাগা কুইক! আমি নিজে যাব সেইসব নিষিদ্ধ জায়গা গুলোতে। চল।
রিদ শুধুই তার ব্রেইন চালাচ্ছে এই মূহুর্তে। কিভাবে বউকে খোঁজে পাওয়া যাবে এই প্রদক্ষেপ গ্রহণ করছে। বাকি সবাই শুধু রিদের কথা অনুযায়ী কাজ করছে। যেকোনো পরিস্থিতি রিদের তীক্ষ্ণ মাইন্ড দ্রুত চলে সেটা পূর্ব থেকেই অবগত আসিফ। তাই নতুন করে আবাক হলো না রিদের চালচলনে। আসিফ রিদের কথা শুনলো। এবং কিছু বলতে চাওয়ার আগেই রিদ নিজের কথা শেষ করতে করতে হাঁটে হেলিকপ্টার গুলোর দিকে। আসিফ বুঝল রিদকে এই মূহুর্তে কিছু বলার চেয়ে চুপচাপ সে কাজ করাটায় শ্রেয়। নয়তো যে আগুনে রিদের ভিতর জ্বলছে সেই আগুনে সর্বপ্রথম আসিফকেই পুড়াবে রিদ। আসিফ তৎক্ষনাৎ রিদের পিছন থেকে দৌড়ে সামনে এগোল ক্যাপ্টেনদের বলতে হেলিকপ্টার গুলো আকাশের উড়াতে। আসিফ ক্যাপ্টেনদের তাদের কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার মধ্যেই দেখল মাত্র আগত হেলিকপ্টার থেকে আয়ন আর রাদিফ দুজনই অস্থির, উত্তেজিত অবস্থায় নামতে। দুজনের হাঁটার গতিপথ ছিল রিদ। কিন্তু অশান্ত, অস্থির রিদ চোখ আওড়িয়ে তাদের দুজনকে দেখলো কি দেখলো না। কোমরের ইন করার শার্টে ভাজ খুলতে খুলতে গিয়ে বসল হেলিকপ্টারের ভিতর। আয়ন-রাদিফ রিদকে হেলিকপ্টারের ভিতর বসতে দেখে নিজের হাঁটার গতি বাড়িয়ে দৌড়াতে চাইল, কিন্তু ততক্ষণে দুজন বডিগার্ড দুইদিক থেকে উড়ন্ত যন্ত্রটির দরজা আটকে দিতে দিতেই ক্যাপ্টেন হেলিকপ্টারটি উড়াল আকাশে। আয়ন বা রাদিফ কারও সুযোগ হয়নি রিদের সঙ্গে যাওয়ার। আসিফ অপর হেলিকপ্টার উঠতে উঠতে চেঁচাল রাদিফ আর আয়নের উদ্দেশ্যে, তাড়াহুড়োয় বলল…
‘ আয়ন ভাই, আপনি আর রাদিফ ভাই দুজন দুটো হেলিকপ্টার উঠে পড়ুন। আমরা পাহাড়ি নিষিদ্ধ জায়গা গুলোতে যাব ভাইয়ের পিছন পিছন। আপনারা দুজন দুটো আলাদা আলাদা হেলিকপ্টারে, আলাদা দিশায় যান, ক্যাপ্টেনদের লোকেশন বলা আছে। সঙ্গে একজন করে বডিগার্ড নিয়ে যান।
আসিফ কথা মতো আয়ন রাদিফ দুজনই দৌড়াল দুই পথে। রিদের পিছন পিছন তাঁরাও একটি করে হেলিকপ্টার উড়িয়ে গেল ভিন্ন ভিন্ন দিশায়। আসিফ চলে যেতে গিয়েও একটু থামল। বাকি হেলিকপ্টারের ক্যাপ্টেন গুলোকে আবারও একবার করে লোকেশন বুঝিয়ে দিয়ে সে পুনরায় তার বরাদ্দকৃত হেলিকপ্টারে চড়তে চড়তে দেখল অস্থির উত্তেজিত আরিফ দৌড়ে এইদিকটাই আসছে। হয়তো আসিফকে কিছু বলতে চাই। আসিফ কি মনে করে পুনরায় নেমে গেল। কিছুদূর এগিয়ে এসে আরিফকে আশ্বস্ত করে বলল ওদের সাথে যেতে। মায়াদের খোঁজে পাহাড়ের বুকে হেলিকপ্টার নিয়ে চড়তে। আসিফের কথায় উত্তেজিত আরিফ তৎক্ষনাৎ রাজি হয়ে গেল। মূহুর্তের মাঝে দশটি হেলিকপ্টারের পাখা উড়িয়ে চলল পাহাড়ের বুকে। অল্প দূরত্বে পাহাড়ের বুক ঘেঁষে হেলিকপ্টার থেকে খোঁজ চলল মায়াদের। এতো এতো মানুষ শুধু অবাক চোখে তাকিয়ে রইল রিদের খানের ক্ষমতার দিকে। তাদের দেখা কখনো এমন হয়নি কারও জন্য কেউ এতো অস্থির, পাগল পাগল হয়ে এতো মানুষ জড়ো করে ফেলতে মূহুর্তের মাঝে। হাজার হাজার মানুষকে বিরতিহীন ভাবে লাগাতার এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ের বুকে দৌড় করাচ্ছে শুধু দুটো মেয়ের জন্য। সেই সাথে এতো গুলো মানুষের খাওয়া, দাওয়া পানির, ডাক্তারের ব্যবস্থা পযন্ত করে রিদ খানের পক্ষে থেকে। তারপরও মেয়ে দুটো রিদ খানের চাই মানে চাই-ই। এখনো তো উপস্থিত মানুষের মধ্যে একটা তীব্র কৌতূহল জেগে উঠেছে কে সেই নারী যার খোঁজে রিদ খান আকাশ পাতাল এক করে দিচ্ছে অনুসন্ধানে। রিদ খানের শখের নারীকে সবাই এক পলক হলেও দেখতে চাই। কিন্তু আপসোস! সেটা আদৌও সম্ভব হবে কিনা কে জানে? সবার ধারণা মেয়ে দুটো হয়তো জীবিত নেই। কারণ জীবিত মানুষের সন্ধান এতক্ষণে পেয়ে যেত তাঁরা। কিন্তু মৃত মানুষের সন্ধান পাওয়া এই পাহাড়ের বুকে অনেকটায় দ্বায়। কারণ মৃত মানুষ বন্যপশুর শিকার হয়। যদি মেয়েদুটো মৃত হয় তাহলে এতক্ষণে নিশ্চয়ই পাহাড়ি বর্নপশুর আহার হয়ে গেছে। সেখানে একরাত কেন? একযুগ খোঁজলেও মেয়ে দুটোর সন্ধান পাওয়া যাবে না। দেখতে দেখতে আর্মি, রেব ফোর্স আর দ্বিগুণ বাড়াল হলো। সারি সারি গাড়ির ভিড় পরলো রাস্তায়। দুপাশে পাহাড়ি রাস্তায়, দুই কিলোমিটার পযন্ত শুধু গাড়ির ভিড়ই পরলো। আগত রেব বাহিনীর সাথে স্পেশালিষ্ট ট্রেকিং কুকুরের নামাল হলো পাহাড়ের বুকে। আর সেটা কাজেও দিল। কুকুর গুলোর ঘ্রাণ শক্তি তীব্র হয়। কোনো জিনিসের ঘ্রাণে চিহ্নিত করতে পারে মানুষের অবস্থান। রেব বাহিনী হাতে হাতে সেই কুকুর গুলো নিয়ে জায়গায় জায়গায় চড়িয়ে পরতেই মায়াদের চিহ্নর খোঁজ বের হতে শুরু করলো। প্রথমে রাস্তা রক্তের দাগ পেল। রাতে আধারে জঙ্গি ছেলেগুলোর হাতে মায়া পা কেটে উল্টে পড়ার সেই রক্তের দাগ গুলো কুকুর দিয়ে সনাক্তকরণ করতেই সেখানে রেব বাহিনী দাগ টেনে সিস করলো। পাহাড়ে উঠতে উঠতে আরও কয়েক জায়গায় অল্প অল্প রক্তের দাগ পেল বিভিন্ন জায়গায়। তদন্ত অনুযায়ী রেব ফোর্স ধারণা করছে মেয়ে গুলো রাতের আধারে হয়তো এই পথেই দৌড়ে পালিয়ে ছিল। এই সনাক্ত করা জায়গাগুলো রিদের কাছে পৌঁছাতে বার্তা পাঠানো হলো রিদের ক্যাপ্টেনের কাছে। সাতটা থেকে নয়টা পযন্ত প্রায় দু’ঘন্টা যাবত শুধু পাহাড়ের নিষিদ্ধ জায়গা গুলোতে হেলিকপ্টারে চড়ে বেড়িয়েও মায়াদের অনুসন্ধানের খোঁজ পেল না রিদ বা অন্য কেউ। তারপরও ক্লান্তিতে কেউ থেমে নেই। বিরতিহীন ভাবে একজায়গায় বারবার রাউন্ড দিয়ে খোঁজে বেড়াচ্ছে মায়াদের। অশান্ত রিদ দাঁত কিরমির করে বসে। তখনই ক্যাপ্টেন খবর দিল মায়াদের কিছু চিহ্নের সনাক্তকরণের বিষয়টি। অল্প আশার আলো দেখতে পেতেই রিদ তৎক্ষনাৎ উড়ন্ত যন্ত্রটি নামাতে বলল নিচে। দক্ষ ক্যাপ্টেন তাই করলো। পাহাড়ের শেষ চূড়ায় পাখার রাউন্ড রাউন্ড ঘুরিয়ে নামল নিচে। উড়ন্ত যন্ত্রটি নামতে দেরি কিন্তু রিদের লাফিয়ে বের হতে দেরি হলো না। রিদকে বের হতে দেখেই কালো পোষাক দ্বারি কিছু রেব ফোর্স এগিয়ে আসল। তাদের মধ্যে একজন কমান্ডারও ছিল। তিনি হাতে একটা ট্যাবে রিদকে তখনকার সনাক্তকরণের জায়গায় গুলো ছবিতে দেখাতে দেখাতে হাঁটল সামনে। রিদ ট্যাব হাতে চলল নিচে। যেদিকে ট্রেকিং কুকুর গুলো দিশা দিচ্ছিল। পাহাড়ের উঁচু হতে নিচে নামার মাঝ পথে আবারও হৈচৈ করলো কুকুর গুলো। গ্যাউ গ্যাউ শব্দে পা দিয়ে আশেপাশের বালুমাটি সরাতে লাগল কোনো কিছুর আভাস পেয়ে। রিদ থামে। সে থামে নয় তাঁকে থামতে হয় কুকুর গুলোর হৈচৈ দেখে। সেই সাথে থামলো পুরো বের ফোর্স। কুকুর গুলোর দেখানো জায়গায় অনুসন্ধান করে আশেপাশে খোঁজতে লাগল কি আছে সেখানে। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে কুকুর গুলো নিজেই পাহাড়ি লাল বালুর মাটি খুড়ে বের করলো ছোট একটি যান্ত্রিক ফোন। একজন রেব সদস্য গ্লাভস হাতে সেই ফোন তুলে কমান্ডারের হাতে দিতেই তিনি সেটা রিদের হাতে দিল। অস্থির, অশান্ত রিদ কম্পিত হাতে সেই ফোনটি হাতে তুলল। নিশ্চুপ ভঙ্গিতে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সেই ফোনের দিকে। তখনই পাশ থেকে কমান্ডার রিদের উদ্দেশ্য বলল…
‘ এটা হচ্ছে আপনার পাঠানোকৃত নাম্বারের ফোনটি। যেটা আমরা রাতে লোকেশন ট্রেক করেছিলাম সেটি। ধারণা করা যায় এটি মেয়ে দুটো মধ্যে একজনের ফোন হবে। ওদের হয়তো সন্ত্রাসী গুলো এই রাস্তা দিয়েই ধরে কোথাও নিয়ে গেছে মিস্টার খান।
অশান্ত রিদের মন, মস্তিষ্ক দুটোই দপদপ করছে আগুনের লাভার নেয়। এই মূহুর্তে সবকিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে ফেলতে পারলেও তার মন শান্ত হবে না। রিদ এই মূহুর্তে ভয়ংকর ভাবে ঘায়েল হচ্ছে একের পর এক বউয়ের নিখোঁজ হওয়ার চিহ্ন পেয়ে। রিদ অনুভব করতে পারছে তার বউয়ের তীব্র আকুতি, আর ছটফটের লড়াই। নিশ্চয়ই তার বউ শেষ পযন্ত অনেক লড়াই করেছিল বেঁচে ফেরার। সেজন্য তো জায়গায় জায়গায় নিজের লড়াইয়ের চিহ্ন রেখে গেল। রিদ শক্ত হাতে মুঠোয় পিষল ফোনটিকে। চোয়াল শক্ত করে আশেপাশে তাকাল অশান্ত দৃষ্টিতে। বালুর মাটির উপর কয়েকজন মানুষ ধস্তাধস্তি করলে যেমন গর্তে উঁচু নিচু হয়ে থাকে বর্তমান তেমন অবস্থায় হয়ে আছে গুহার সামনে। হিংস্রত্ব রিদের চোখের পাটা ক্রমশ আবারও লাল হতে লাগল। অথচ তার বাচন ভঙ্গি ততই শান্ত দেখাল। রিদের শান্ত ভঙ্গি দেখে বুঝার উপায় নেই সে এই মূহুর্তে কতোটা হিংস্রত্বের ঘায়েল শিকারী হয়ে আছে শিকারের অপেক্ষায়। আশেপাশে সিল মেরে জায়গাটা সিস করে দিল কমান্ডার। তিনি প্রথম অবস্থায় রিদের মনোভাব ধরতে না পেরে পুনরায় বলল…
‘ মিস্টার খান এটা হচ্ছে একটা গুহা। ফোনটা যেহেতু এখানে পেয়েছি তাই আশা করা যায় মেয়ে দুটো হয়তো রাতে এই গুহার ভিতরেই ছিল। আমরা লোক পাঠাচ্ছি এর ভিতরে।
রিদ গুহার সামনে হাঁটু মুড়ে বসল ভিতরে দিকে তাকিয়ে। কি জানি সে কি দেখল গুহার ভিতরে? তার পরপরই শুনা গেল রিদের শান্ত কন্ঠ….
‘ এটা গুহা নয়। সুরঙ্গ পথ! এই সুরঙ্গের দ্বিতীয় রাস্তাটা খুঁজুন কমান্ডার। আশেপাশে কোথাও থাকতে পারে।
রিদের কথায় কমান্ডার একই ভাবে রিদের সাথে বসে।গুহার ভিতরে উঁকি মারতে মারতে বলল…
‘ এটা কোনো সুরঙ্গ নয় মিস্টার খান। দেখতে সুরঙ্গ মতো মনে হলেও আসলে এটা একটা গুহা। আমি আমার পনেরো বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এসব পাহাড়ি গুহায় সন্ত্রাসীরা আশ্রয় নেওয়ার জন্য খনন করে। এসব গুহার দ্বিতীয় কোনো পথ থাকে না।
তীব্র মেজাজে হাতের মুঠোয় মায়ার ফোনটি পিষে তৎক্ষনাৎ জায়গা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল রিদ। এই মূহুর্তে কমান্ডার রিদের পাশে বসে থাকা মানেই পরিস্থিতি বিগড়ে যাওয়া। এমনই রিদের মেজাজ হিংস্রত্বে হায়নারের হয়ে আছে। কখন থাবা বসাবে ঠিক নেই। মন মস্তিষ্ক জ্বলছে তপ্ত আগুনে। সেজন্য রিদ নতুন করে আর আগুন জ্বালাতে চাই না। কামান্ডার রেখেই রিদ এগিয়ে গেল সামনে। উপস্থিত বাকি রেব বাহিনীরও ট্রেকিং কুকুর নিয়ে দৌড়াল রিদের আগে আগে। পাহাড়ের উঁচু স্থান হতে অনেকটায় নিচে নামল সুরঙ্গ পথের খোঁজে। একটা সময় রিদের কথা মতো পেয়েও গেল। সুরঙ্গ মুখের খোঁজ পেতে কুকুর গুলো আবারও হৈচৈয়ে গ্যাউ গ্যাউ শব্দ করে চেঁচাতেই, থামল সবাই। পুনরায় সনাক্ত হলো মায়াদের ফেলে যাওয়া কিছু জিনিস। গুহার ভিতরে রেব ফোর্সের প্রবেশ ঘটতেই সেখানে থেকে উদ্ধার হলো রাফার ফেলে যাওয়া ছোট ব্যাগটি আর মায়ার রক্তাক্ত সাদা হিজাবটি। দুটো জিনিস সংগ্রহ করে রিদের হাতে তুলে দিতে রিদ প্রথমে ব্যাগটা হাতে নিল। অস্থির, অশান্ত মনে সেটি নাকে বাজাতে অপরিচিত ঘ্রাণ আসল ব্যাগ থেকে। রিদ তৎক্ষনাৎ বুঝতে পারলো ব্যাগটা তার বউয়ের নয়। পুনরায় ব্যাগটি ফেরত দিতে দিতে মায়ার হিজাবটি তুলে নিল হাতে। আগের নেয় হিজাবটি আর নাকে বাজাতে হয়নি রিদের, তার আগেই পরিচিত সুবাস বাজল নাকে। রিদ থমকে যাওয়ার মতোন হিজাবটি দিকে তাকিয়ে রইল গুটি কয়েক সেকেন্ড। পরিচিত সুভাসটা বলছে এই হিজাবটি তার বউয়ের।
হিজাবের রক্তের ছিটা দাগ আর পাহাড়ী লাল মাটি ময়লা বর্ণনা করছে তার বউ রাতে এখানেই ছিল। না জানি কতোটা আতঙ্কে আর কতোটা অসহায়ত্বে আহত অবস্থায় এখানে আশ্রয় নিয়ে ছিল সে। আচ্ছা ফোনে যে রিদকে গুহার কথা বলেছিল সেটি কি এই গুহার কথায় বলেছিল তার বউ? নাহ! রিদ আর ভাবতে পারলো না। ছটফট, অস্থির মনে বলিষ্ঠ হাতে হিজাবটি পিষে হাঁটু ভেঙ্গে বসল সুরঙ্গ মুখে সম্মুখে। অন্ধকার সুরঙ্গে ভিতরে দিনের আলোয় এতোটা অন্ধকার দেখালে তাহলে রাতে হয়তো আরও ভয়ংকর অন্ধকার দেখায়। তার বউ নিশ্চয়ই ভয় পেয়ে আহাজারি করেছিল অল্প আলোর জন্য? রিদের পাশাপাশি তখনকার কমান্ডারটিও বসল হাতে ফোনের আলো জ্বালিয়ে। সুরঙ্গের ভিতরে আলো ফেলতে দেখল ছোটখাটো গুহার মতোন বেশ বড়ো সুরঙ্গ পথ ভিতরের দিকে চলে গেছে। কমান্ডার সেটি দেখে রিদের দিকে তাকাল আঁড়চোখে। তখন রিদকে জোড় গলায় বলেছিল এসব পাহাড়ী গুহার দ্বিতীয় রাস্তা থাকে না। অথচ উনার পনেরো বছরের অভিজ্ঞতা ভুল করে রিদ খানের ধারণা ঠিক হলো। দেখা মাত্র কিভাবে বলে দিতে পারলো এটা গুহার নয় সুরঙ্গ পথ ছিল? তিনি তো জানেন এসব গর্তের মতোন দেখতে গুহার পাহাড় কেটে বানানো হয় শুধু পাহাড়ি জঙ্গিদের আশ্রয় নেওয়ার জন্য। যেমনটা মানুষ ঘর বানায় তেমন পাহাড় কেটে জঙ্গিরা গুহা বানায় তাদের নিরাপত্তার জন্য। কিন্তু রিদ খানের ধারণা উনার অভিজ্ঞতা থেকে এতোটা প্রহর কিভাবে হয় এসব বিষয়ে? এতো সহজভাষায় কিভাবে সবকিছু আগে আগে বলে দেওয়া সম্ভব? কমান্ডারের চিন্তা ভাবনার মাঝেই রিদ সুরঙ্গে ভিতরের হাত ঢুকিয়ে একটা মচমচে শুকনো পাতা হাতে নিলো। রিদকে গভীর মনোযোগ সহকারে পাতাটি দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে তিনিও তাকাল সেদিকে। দেখল শুকানো পাতাটি রক্তের কালসিটে দাগে দুমড়ে মুচড়ে আছে। পাতাটি দেখে বুঝা যাচ্ছে কেউ একজন হয়তো এই পাতার সাহায্য নিজের রক্তাক্ত স্থান পরিষ্কার করার চেষ্টা করেছিল। রিদ পাতাটি হাতে নিয়েই আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে থাকা আরও কিছু পাতা দিকে তাকাল। বেশ কিছু পাতাই একই ভাবে রক্তের দাগে দুমড়ে মুচড়ে পরে আছে। রিদ বুঝতে পারলো মায়া বা রাফার মধ্যে কেউ একজনের রক্ত পরিষ্কার করতে চেয়েছিল এই পাতার সাহায্যে। শ্বাস আটকে আসার মতোন কষ্টে রিদ বুক ফুলিয়ে শ্বাস টানল কয়েক বারবার। শেষবার সুরঙ্গের ভিতর তাকিয়ে পুনরায় সে উঠে দাঁড়াল। যে পথে এসেছিল সেই পথে হাঁটল পাহাড়ের চূড়ায়। রিদকে পাহাড়ের উঁচুতে উঠতে দেখে কমান্ডার উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে তাড়াহুড়ো করে বলল…
‘ মিস্টার খান কোথায় যাচ্ছেন আপনি? আমরা তো যাব নিচে? আপনি উপরে দিকে যাচ্ছে কেন?
শক্ত রিদ উত্তর করলো না কমান্ডারের কথায়। সে এতক্ষণে বুঝতে পেরে গেছে তার গন্তব্য এখন কোথায়? বউ তার এই সুরঙ্গ পথ ধরেই পাহাড়ের উপরে উঠেছিল রাতে। কিন্তু এরপর কোথায় গিয়েছে সেটাই রিদকে জানতে হবে। রাফাকে নিয়ে মায়ার দৌড়ে যাওয়া একই পথে হাঁটল রিদ। হাঁটতে হাঁটতে সেই একই পথে উঠে দাঁড়াল পাহাড়ের শেষ পিষ্টে। রিদ আশেপাশে তাকাল। নিজের ক্রিমিনাল মাইন্ড আর বিচক্ষণতা কাজে লাগিয়ে মায়াদের রাতের পরিস্থিতি বর্ণনা করতে চাইল নিজে নিজে। বাজপাখির দৃষ্টি আর প্রহর ব্রেইন চালিয়ে আশেপাশে পর্যবেক্ষণ করতে করতে বর্ণনা করলো।
পাহাড়ের শেষ পিষ্টে চূড়ায় দাঁড়িয়ে এখান থেকে ফিরে যাওয়ার পথ বন্ধ। সামনে গহীন গভীর খাদ। আর পিছনে ছিল জঙ্গি ছেলেগুলো। এখান থেকে ঘুরে পুনরায় দৌড়ানোর সুযোগ পাবে না তার বউ, কারণ এতে অনেক সময় লাগবে ততক্ষণে ছেলেগুলোর হাতে ধরা পরা সম্ভবনা বেশি। যদি তার বউ ধরা পরতো তাহলে এতক্ষণ তার মৃত দেহটা হলেও রিদ পেয়ে যেত। কারণ পাহাড়ের বুকে থাকা, চোর, ডাকাত, জঙ্গি, সন্ত্রাসী, একটা মানুষকেও রিদ ছাড় দেয়নি বন্দী করার থেকে। এরমানে তার বউকে রাতে কিডন্যাপ করা জঙ্গি ছেলেগুলোও রিদের হাতে বন্দী এই মূহুর্তে। হয়তো তার বউয়ের সন্ধান পেলে ছেলেগুলোকেও সনাক্ত করা যাবে। তাই রিদের বিচক্ষণতা বলছে তার বউ রাতে জঙ্গিদের হাতে পরেনি। হয়তো প্রাণ বাঁচাতে কিছু একটা করেছে? কিন্তু কি? পিছনে জঙ্গি ছেলেগুলো থাকলে মানুষ ইজ্জত বাঁচাতে অসহায় অবস্থায় কি করতে পারে? পাহাড় থেকে লাফ দিতে পারে? রিদের হিসাব বরাবর মিলে যেতেই রিদের বুক আতঙ্কে কাঁপল। কম্পিত বুকে তাকাল নিচে। দিনের আলোয় উপর থেকে নিচে তাকালে মানুষের শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যাওয়ার মতোন ভয়ংকর গহীনতা দেখা যায়। রিদ মায়ার লাফিয়ে পড়া একই স্থানে দাঁড়িয়ে নিচে তাকাল। একহাতে মায়ার হিজাব চেপে তো অন্য হাতে মুঠোফোনটি ধরা। অনর দৃষ্টিতে পাহাড়ের উঁচু হতে তলদেশে তাকিয়ে। রিদের আশেপাশে অসংখ্য মানুষের ভিড়। সবাই মায়াকে খোঁজে বেড়াচ্ছে। অথচ রিদের বুক কাঁপছে এটা মানতে তার বউ হয়তো রাতে এইদিকটায় এসেছিল। জেনে-বুঝে নয়তো অসাবধানতায় এই পাহাড়ের চূড়ায় হতে নিচে পরে গিয়েছে। রিদ শূন্য চোখে নিচে একদমে তাকিয়ে রইল। রিদের হেলিকপ্টার ছাড়া বাকি নয়টি হেলিকপ্টার দেখা গেল এই পাহাড়ের তলদেশেই উড়ে বেড়াচ্ছে মায়াদের খোঁজে। রিদ নিজেও এতক্ষণ এই নিষিদ্ধ জায়গা গুলোতে মায়ার খোঁজ করেছিল। কিন্তু কোথায় পায়নি। রিদ বুঝতে পারছে না যদি মেয়ে দু’টোর এইদিকটায় লাফিয়ে থাকে তাহলে এতক্ষণ পযন্ত তাদের একটার চিহ্ন পযন্ত কেউ পাচ্ছে না কেন? রাত থেকে এই পযন্ত সবাই খোঁজে খোঁজে ক্লান্ত। এখন সময় দশটার ঘরে। তাঁর বউ যাবে তো যাবে কোথায়? মাটি খুঁড়ে হলেও পাহাড়ের তলদেশ থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার কথা অথচ বিগত বারো ঘন্টা ধরে খোজাখুজি পরও কোনো হুদিস পাচ্ছে না কেউ। চারপাশে চাপা গুঞ্জন চলছে মায়া জীবিত নেই। অথচ রিদের মন মস্তিষ্ক মানতে নারাজ তার বউ জীবিত নেই। রিদ বুঝতে পারছে সে অনেকটা দেরি করে ফেলেছে তার বউয়ের কাছে পৌঁছাতে। কিন্তু না জানি কতোটা দেরি করে ফেলেছে সেই ভয়ে আকাশের দিকে তাকাল রিদ। বেশ সময় নিয়ে শূন্য আকাশে তাকিয়ে রইল অনুভূতিহীন ভাবে। তার কঠিন ব্যক্তিত্ব নড়ে উঠছে বউয়ের দহনে। চোখের সামনে দুনিয়াটা ঘুরছে হারানো ব্যথায়। রিদ তপ্ত দহনে ব্যথা সয্য করতে না পেরে হঠাৎ বুকফাটা আর্তনাদে চিৎকার করে উঠলো গলা ফাটিয়ে। রিদের
চিৎকারে আশপাশটা ভয়াবহ হয়ে উঠলো থমথমে। আকাশের দিকে তাকিয়ে রিদের চিৎকারের ধ্বনি বলতে শুনা গেল….
‘ রিততততত! আই হেট ইউ! আই জাস্ট হেট ইউ। তোর মতোন অবাধ্য নারীর প্রয়োজন এই রিদ খানের পরে না। শুনেছিস তুই? তোকে ছাড়াও আমি ভালো থাকব। খুব ভালো থাকব।
রিদের হঠাৎ চিৎকারে আশেপাশে সবাই থমথমে খেয়ে আবাক চোখে তাকাল রিদের দিকে। একটা মানুষ কতোটা ভিতর থেকে ভেঙ্গে পরলে এভাবে চেঁচাতে পারে পাহাড়ের বুকে। রিদের প্রতিটা আর্তচিৎকার ধ্বনি যেন পাহাড়ে বুকে প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরত আসছে বারেবার। উপস্থিত শতশত মানুষ নিজেদের খোঁজা খুঁজি ছেড়ে শুধু রিদের দিকে তাকিয়ে। রিদের না বলা কথা গুলো যেন সবাই পড়তে পারছে। বউ হারিয়ে পাগলপারা রিদের বুকফাটা আর্তনাদ সবাই দেখতে পারছে। কিন্তু আফসোস তাদের কারও ক্ষমতা নেই রিদের বউকে সুস্থসবল অবস্থায় ফিরত দিতে। কারণ তাদের সবার ধারণা মেয়েটি হয়তো রাতে জঙ্গিদের হাতে পরে পাহাড়ের বুকে কোথাও মাটি চাপা হয়ে গেছে যার জন্য এখনো তারা মেয়েটির সন্ধান খোঁজে পাচ্ছে না। ক্লান্ত রিদ আকাশের বুকে তাকিয়ে রইল তখনো। কয়েক সেকেন্ড সময়ের ব্যবধানে ক্রমশ চোখের পাতা বন্ধ করতে করতে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় রিদ বিরবির করে আওড়াল।
‘ আমি ভালো নেই জান। তোকে ছাড়া নিশ্বাস আঁটকে আসার মতোন কষ্ট আমি পাচ্ছি। প্লিজ জান কাম ব্যাক। আই কান্ড লিভ উইথ আউট ইউ। আই কান্ড। প্লিজ কাম ব্যাক। প্লিজ!
.
[ চেয়েছিলাম আরও একটু বড়ো করতে। কিন্তু অনেক রাত হয়ে যাবে বলে করিনি। তবে মায়ার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টা দ্রুত আসবে সামনে, কেউ অধৈর্য্য হবে না দয়া করে। ভালো কিছুই থাকবে সামনে। ধন্যবাদ সবাইকে। ছোট হওয়ার জন্য দুঃখিত ]
গল্পের পেইজ লিংক….
https://www.facebook.com/profile.php?id=61559012739304&mibextid=ZbWKwL
[এই গ্রুপে গল্প সম্পর্কিত আপডেট দেওয়া হয়। আড্ডা হয়। চাইলে জয়েন হয়ে থাকতে পারেন। বা গল্প নিয়ে কোনো সমস্যা হলে মডারেটস আপুদের বললে সমাধান করে দিবে।
ধন্যবাদ সবাইকে। ]
গল্প সম্পর্কিত আলোচনা সমালোচনার গ্রুপ https://www.facebook.com/groups/565066277893177/?ref=shaমায়ার~গল্পবিলাস
.
#চলিত….