রিদ_মায়ার প্রেমগাঁথা #লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া ৪০

0
11

#রিদ_মায়ার প্রেমগাঁথা
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া

৪০
অটো ভাড়া মিটিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল হসপিটালের সামনে নামল আরিফ। গেইটে সামনে দাঁড়িয়ে জ্বীর্ণ শরীর আর ক্লান্ত চোখ তুলে তাকাল মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা উঁচু হসপিটালটির দিকে। আসিফের তথ্য অনুযায়ী মায়াকে এই হসপিটালেই রেখেছে রিদ খান। আরিফ এই মূহুর্তে বড্ড ক্লান্ত! তারপরও বোনের খোঁজে ছুটে এসেছে সেই রাঙ্গা মাটি থেকে চট্টগ্রাম শহরে। গায়ে এখনো তার কাল রাতের সেই জ্বীর্ণঝির ময়লা পোষাক গুলো পড়া। মায়াকে হারিয়ে সারারাত পাহাড়ের বুকে দৌড়াদৌড়ি করে শরীর দূর্বলতায় ছেড়ে দিচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে। এখন আর শরীরটা চলছে না আরিফের। চলার কথাও না। শরীরের ব্যথায় টনটন করছে মস্তিষ্ক। একটু রেস্ট না নিলেই নয়। কিন্তু মায়ার সন্ধান না পাওয়া পযন্ত আরাম করতে পারছে না সে। মন ছটফট করছে আদরের ছোট বোনকে একটু দেখতে। মায়ার সেই হোটেল থেকে হারিয়ে যাওয়া পর থেকেই আরিফ মায়াকে আর দেখতে পাইনি। এমনকি মায়াকে খোঁজে পাওয়া পরও আরিফ এখনো পযন্ত তার বোনকে কাছে পাইনি। আর এই কাছে না পাওয়ার কারণ রিদ খান নিজেই। মায়াকে খোঁজে পাওয়ার সময়টা বিগত তিনঘন্টা থেকে চার ঘন্টায় পৌঁছাল ঘড়ির কাঁটা অথচ আরিফ একই পরিবারের সদস্য হয়েও এখনো পযন্ত নিজের বোনের সঙ্গে দেখা করতে পারছে না। রাঙ্গামাটিতে মায়াকে খোঁজে পাওয়ার পর আরিফ ছুটে গিয়েছিল সেখানে কিন্তু আরিফের ক্যাম্পে পৌঁছাতে পৌঁছাতে ততক্ষণে নাকি রিদ খান মায়াকে নিয়ে প্রস্থান করেছিল সেখান থেকে। আরিফ ভারি আশ্চর্য হয়েছিল! সেই সাথে সন্দেহ হলো তখন যখন জানতে পারলো, রিদ খান রাফাকে ক্যাম্পের ডক্টরদের তথ্যবধানে রেখে মায়াকে একা নিয়েই চলে এসেছিল চট্টগ্রাম শহরে ডাক্তার দেখাতে। অথচ রিদ খানের বাবা নিহাল খান, আয়ন চৌধুরী, ছোটভাই রাফিদ খান, এমনকি আসিফকেও ক্যাম্পে ফেলে এসেছিল রিদ খান। আরিফের ভুল ধারণা ভাঙ্গল তখন, যখন দেখল বাবা হয়ে নিহাল খানও রিদের মায়াকে একা নিয়ে চলে যাওয়ার বিষয়টি সমথর্ন করছিল আরিফের সামনে। আসিফ তো রিদ খানের হয়ে আরিফকেও বুঝ দিচ্ছিল তার রিদ ভাই আছে তার বোনের পাশে। কেন তার বোনের পাশে রিদ খান কেন থাকবে? পরিবার হিসাবে, বড় ভাই হিসাবে আরিফ থাকবে মায়ার পাশে। রিদ খান কেন থাকবে? প্রশ্ন থাকলো অনেক কিন্তু পরিস্থিতি হিতকর হওয়ায় আরিফ চুপ রইল। তবে আরিফের মনের সমস্ত ভুল ধারণা কাঁচের আয়নার নেয় ঝরঝর করে ভেঙ্গে গেল যখন বুঝতে পারল রিদ খানের এতো এতো ক্ষমতা প্রয়োগের অভিযান ছিল শুধু তার বোনকে খোঁজে পাওয়ার উদ্দেশ্যে। মূলত রাফা ছিল এখানে তৃতীয় পক্ষ। রিদের হঠাৎ ঐভাবে আরিফকে আঘাত করাটাও ছিল মায়াকে হারিয়ে দিশেহারা অবস্থায়। এর-মানে দাঁড়ায় হয়তো রিদ খান তার বোন মায়াকে পছন্দ করে। বিষয়টি হয়তো হবে না নিশ্চিত রিদ খান আরিফের বোনকে ভালোবাসে বলেই এতোটা অস্থির উত্তেজনা প্রকাশ করেছে মায়াকে খোঁজতে। সামান্য পছন্দ থেকে কেউ এতোটা পাগল পাগল হয়ে পুরো পাহাড়ি বুকে এতবড় অভিযান চালাত না। তাই আরিফের ধারণা মতে বলে যায় পরিমাণের চেয়ে অধিক বেশি রিদ খানের পছন্দের তালিকা তার বোন আছে বলেই আজ এতো কিছু ঘটেছে। কিন্তু এই মূহুর্তে আরিফ বা তার পরিবারের রিদ খানের পছন্দ অপছন্দ নিয়ে কিছু করার নেই। মায়া অলরেডি কারও বাগদত্তা। চেয়ারম্যান পরিবারের সঙ্গে আরিফরা ওয়াদাবন্ধ মায়াকে বিয়ে দেওয়া নিয়ে। জান দিবে তারপরও ওয়াদার খেলাপ করবে না আরিফের পরিবারের কেউ এটা নিশ্চিত। মায়ার বিয়ে যখন চেয়ারম্যান ছেলে নাদিমের সঙ্গে ঠিক হয়েছে তারমানে দুনিয়া উল্টে গেলেও মায়ার বিয়ে বাপ-চাচার ওয়াদা অনুযায়ী নাদিমের সঙ্গেই হবে। কোনো প্রভাবশালী রিদ কেন? আরও কেউ সামনে আসলেও এই বিয়ে কোনো পরিস্থিতিতে পিছাবে না। অন্তত আরিফের বাপ-চাচা তাদের জবানের খেলাপ করবে না। হ্যাঁ আরিফ ও তার পরিবার সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবে রিদ খানের কাছে মায়াকে খোঁজে দেওয়ার জন্য। হয়তো রিদ খানের জন্য আজ মায়া সুস্থ সবল অবস্থায় বেঁচে আছে। এজন্য চাইলে আরিফ সারাজীবন চাকরে কাজ করে যাবে রিদ খানের তারপরও মায়াকে রিদ খানের সঙ্গে মেনে নেওয়ার মতো পরিস্থিতি এখন আর নেই। আর এই বিষয়টা নিয়ে আরিফ রিদ খানের সঙ্গে ঠান্ডা মাথায় কথা বলতে চাই। আরিফ বুঝাবে উনি(রিদ) যা চাচ্ছেন সেটা কোনো কালেই আর সম্ভব না। মায়াকে নিয়ে রিদ খান যেন আর সামনে না আগায়। এমনি আজকের পর রিদ খানের পুরো ছেলেপেলে মধ্যে একটা মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে পরেছে আরিফের বোন রিদ খানের বউ এমনটা। যেটা মায়ার জন্য বদনাম স্বরুপ। এমন হলে মায়াকে আর চট্টগ্রামেই রাখা যাবে না। মায়া রিদ খানের বউ হয় কিভাবে আবার? রিদ খানের একভাইয়ের সঙ্গে নতুন বিয়ে দিল আরিফের একবোনকে। এরমাঝে যদি রিদ খানের পছন্দের বিষয়টা দুই পরিবারের মধ্যে জানাজানি হয় তাহলে নিশ্চিত মুক্তা শশুর বাড়িতে এই নিয়ে ঝামেলা হবে। কারণ আরিফের জানা মতে ফাহাদের কাজিন বোনের সাথে রিদ খানের প্রেম জনিত সম্পর্ক। তারা নাকি খুব শীঘ্রই বিয়েও করবে। এখন এসবের মাঝে যদি কোনো ভাবে মায়াকে এসবে টানে রিদ খান তাহলে দুই পরিবারের সম্পর্ক নষ্ট হবে। তাছাড়া বিষয়টা যদি এমন হতো রিদ খান বা মায়া দুজনের বিয়ে অন্য কোথাও ঠিক করা নেই তাহলে হয়তো ভাবা যেত। কিন্তু এই মূহুর্তে মায়াকে জড়িয়ে রিদ খানকে নিয়ে ভাবা কোনো প্রশ্নই উঠে না।
আর এই বিষয়টি আরিফকে যেভাবে হোক রিদকে বুঝাতে হবে রিদ যেটা চাচ্ছে সেটা আরিফের পরিবার দ্বারা কখনো সম্ভব নয়। মায়াকে নিয়ে ভাবা যেন এখানে থেমে যায় তিনি। অন্তত দুই পরিবারের যে আত্মীয় সম্পর্কটা আছে সেটা যেন নষ্ট না হয় কোনো ভাবে। চিন্তিত আরিফ মনস্তাত্ত্বিক ভাবনায় ধীর পায়ে এগোল হসপিটালের তৃতীয় তলার দিকে। আসিফ জানিয়ে ছিল রিদ মায়াকে নিয়ে এই হসপিটালেরই তৃতীয় তলার ২১২ নম্বর কেবিনে আছে। মায়াকে নিয়ে রিদ খান নিখোঁজ দীর্ঘ পাঁচঘন্টা অতিবাহিত হলো। আরিফ আরও আগেই বোনের খোঁজে চলে আসতে চেয়েছিল কিন্তু আয়ন, রাদিফ, আর আসিফের জন্য আসতে পারেনি। তাঁরা অভিযানে সকল মানুষকে যার যার মতো বিদায় করে মাত্র আরিফকে নিয়ে পৌঁছাল চট্টগ্রাম শহরে। এতক্ষণ আরিফ সবার সাথেই ছিল। কিন্তু মাঝে একবার জুইয়ের খোঁজে কলেজ ম্যাডামের বাসায় নেমেছিল আরিফ! সেজন্য আসিফ, আয়নদের সঙ্গ থেকে আলাদা হয়ে পরেছে। আরিফের ধারণা মতে এই মূহুর্তে সবাই হসপিটালেই থাকার কথা। হয়তো আশেপাশে আছে কোথাও। ক্লান্ত আরিফ সিঁড়ি বেয়ে তৃতীয় তলায় উঠে আশেপাশে একবার চোখ বুলাল, আপাতত করিডোরের আশেপাশে পরিচিত তেমন কাউকে দেখল না। জনপ্রিয় হসপিটালের অপরিচিত মানুষের আনাগোনার শেষ নেই। কিন্তু আসিফ বা অন্যান্য পরিচিত কাউকে আশেপাশে দেখতে না পেয়ে আরিফ সামনে হাটতে হাঁটতে বামহাতের ঘড়িটাতে সময়টা দেখে নিলো। সময় ৪ঃ৩৯। অনেকটা সময় হয়েছে সবাইকে চট্টগ্রাম শহরে পৌঁছাতে। এতক্ষণ সময়ে অন্তত আসিফকে এই হসপিটালের দেখার কথা রিদ খানের পাশে। সবাই জানে আসিফ রিদ খানের ডানহাত। সেই সুবাধে আসিফের আশেপাশেই কোথাও একটা হওয়ার কথা। নিদিষ্ট কেবিন দরজা ঠেলে আরিফ ভিতরে প্রবেশ করতেই মায়া আর রিদকে পেল এক আপত্তিকর অবস্থায়। আরিফ হতভম্ব হয়ে বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতিতে পরে স্তব্ধ নেয় জায়গায় দাঁড়িয়ে পরল। দরজার শব্দ পেয়ে মায়ার উপর ঝুঁকে থাকা রিদ অল্প ঘাড় বেঁকে তাকাল দরজা দিকে। আরিফকে থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রিদ পুনরায় একই ভাবে মায়ার গলায় হাত দিয়ে সেখানকার ব্যাডেজটি ঠিক করে দিতে দিতে আরিফের উদ্দেশ্য বলল…

‘ দূর থেকে না দেখে কাছ থেকে দেখলে বোধহয় পরিষ্কার দেখা যাবে।

রিদের কথার মানে বুঝতে পেরে আরিফ অনেক লজ্জিত বোধ করলো। রিদ খানের সাথে নিজের বোনকে জড়িয়ে এমন বাজে চিন্তা করাটা একটা বড়ো ভাইয়ের জন্য খুবই লজ্জাজনক। মায়া বেডে শুয়ে। রিদ মায়ার মুখের উপর ঝুকে গলার ব্যাডেজ ঠিক করা দৃশ্যটা যেকেউ দরজা দিয়ে প্রবেশ করলে আরিফের মতোই একই চিন্তা ভাবনা করতো। দূর থেকে দুজনকে ওষ্ঠমিলনে মন্ত এমনটাই দেখা যায়। আরিফ নিজের ভাবনার চিত্রে লজ্জিত হয়ে গম্ভীর গলা কাশল। মায়ার বেডে দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলল…

‘ আপনি আমার বোনের জন্য অনেক করেছেন ভাই।
আমরা আপনার কাছে ঋণী হয়ে গেলাম।

আরিফের কথায় রিদ
মায়ার গলার ব্যাডেজ ঠিক করে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে আরিফের উদ্দেশ্যে সরাসরি বলল রিদ…

‘ তোমার ঋণ হয়ে থাকার জন্য তো কিছু করিনি আমি। যা করেছি আমি আমার জন্য করেছি ব্রো।

রিদের সোজাসাপ্টা কথাটা বুঝেও না বুঝার মতো রইল আরিফ। আপাতত রিদ মায়াকে পছন্দ করে এমন সে বুঝতে চাই না। এসব বিষয়ে পরে কথা বলবে রিদের সাথে। কিন্তু মায়া বিছানায় শুয়ে ভয়ার্ত মুখে তাকাল রিদ ও আরিফের দিকে। সঙ্গে ওরাও তাকাল মায়ার ভয়ার্ত মুখের দিকে। চোখাচোখি হলো তিনজনেরই। মায়ার ভয়ার্ত মুখটার সঠিক কারণ আপাতত আরিফ বা রিদ দুজনই জানে না। আরিফের ধারণা মায়া হয়তো রাতে ওর হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টা নিয়ে আরিফকে ভয় পাচ্ছে। আর রিদের ধারণা রিদ হয়তো আরিফকে ওদের দুজনের মধ্যকার বৈবাহিক সম্পর্কের কথাটা বলে দিবে সেটার জন্য ভয় পাচ্ছে। যেটা অলরেডি আরিফ অবগত। এখন আরিফ এই কথাটা কতোটা বিশ্বাস করেছে সেটা আরিফের সঙ্গে কথা বললেই বুঝতে পারবে রিদ। অথচ মায়াকে নিয়ে আরিফ ও রিদের দুজনেরই ভ্রান্তি ভুল ধারণা ছিল। মূলত মায়া রিদকে নিয়ে ভয় পাচ্ছিল। আরিফ কথা মাঝে রিদকে এটা না বলে দেয় যে, মায়া অন্য কারও সাথে এঙ্গেস্ট। তাহলে সবশেষে! রিদ মায়াকে আস্ত রাখবে না। যে যত্ন মায়ার এখন করছে ওর স্বামী। যদি জানতে পারে মায়া রিদের অগোচরে অন্যের নামে রিং পরেছে তাহলে কি করবে আল্লাহ জানে। মায়া ভয়ে ভয়ে বামহাতের অনামিকা আঙ্গুলের রিংটার দিকে তাকাল। মায়ার তাকানোতে রিদও সেই দিকে তাকাল। মায়াকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে হাতের গোল্ডের রিংটার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে রিদের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ হয়। এই রিংটা মায়ার হাতে দেখি না রিদ! হয়তো নতুন পরেছে। এতো ঝামেলা মাঝে এতক্ষণ রিদ এই রিংটা লক্ষ করেনি। কিন্তু এখন মায়াকে এই রিংটা নিয়ে ভয়ার্ত হতে দেখে রিদের দৃষ্টি ঘাড় হচ্ছে মায়ার উপর। মায়া ভয়ভয় দৃষ্টি হাতের রিংটা থেকে চোখ সরিয়ে উপর তাকাতে চোখাচোখি হয় রিদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টির সঙ্গে। ভয়ার্ত মায়ার কলিজা শুকিয়ে এলো রিদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে। মায়া বুঝল পরিস্থিতি এখন মায়ার বিরুদ্ধে যেতে চলেছে। সেজন্য মায়া পূর্ব প্রস্তুতি নিতে শুয়া থেকে উঠে বসতে চাইলে অসাবধানতায় মায়ার হাতে ক্যানুলায় টান লাগতেই স্যালাইনের নলে রক্ত উঠে পাইব বেয়ে। রিদ বিরক্ত চোখে মায়াকে দেখে স্যালাইনের নল ঠিক করতে করতে বলল…

‘ কি সমস্যা? উঠছো কে? কি চাই বললেই তো হয়।

মায়া ভয়ে ভয়ে মিথ্যা পানি তৃষ্ণার আর্জি জানিয়ে বলল…

‘ পানি খাব। একটু পানি দিবেন।

রিদের বিরক্তি যেন দ্বিগুণ হলো। মায়ার দিকে তাকিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে বলল…

‘ স্যালাইন চলছে না? আবার পানি কিসের? পানি লাগবে না। চুপচাপ শুয়ে থাকো।

কথায় সত্যি সত্যি মায়া চুপ মেরে গেল ভয়ে। রিদের মায়ার প্রতি অধিকার বোধের জায়গাটা আরিফের ভালো লাগল না। কেমন একটা বেঈমানান লাগল। বোন তার অথচ সে তার বোনের সঙ্গে দেখা করতে পুরো পাঁচ ঘন্টা সময় লাগল। এখন আবার নামহীন রিদের অহেতুক অধিকার বোধেতা অবৈধ সম্পর্ক ঘোষণা করে। আরিফ নিজের বোনকে কোনো অবৈধ সম্পর্কে জড়াতে দেখতে চাই না। মায়া ছোট মানুষ, সবকিছু বুঝ এখনো হয়নি ওর। কিন্তু রিদ খান বয়সে এতো বড়ো মানুষ হয়ে কিভাবে তার ছোট বোনের দিকে নজর দেয়। রিদের মায়াকে ধমকানো নিয়ে আরিফ অনেকটা অসন্তুষ্টি গলায় বলল…

‘ আপনি আমার বোনের জন্য অনেক করেছেন ভাই। আমি সত্যি আপনার ঋণী হয়ে থাকব সারাজীবন। কিন্তু এবার আমার বোনের দেখাশুনা আমাকে করতে দিন। আপনি বরং বাসায় যান। আপনার রেস্ট করা প্রয়োজন। বাকিটা না-হয় আমি দেখে নিলাম ভাই।

আরিফের অসন্তুষ্টির ঠের শুধু রিদ নয় মায়াও বুঝতে পারলো। কিন্তু রিদ সেদিকে বেশ একটা মনোযোগ না হয়ে মায়া স্যালাইনের নল ঠিক করতে করতে আরিফের উদ্দেশ্য সোজাসাপ্টা গলায় বলল…

‘ আমার প্রয়োজনটা তোমার অজানা নয় আরিফ। তাই আমাকে রেখে আগে নিজেকে সুস্থ করো। আই থিঙ্ক ইউ নিড রেস্ট!

বরাবরই রিদের কথায় অসন্তুষ্টি হচ্ছে আরিফ। রিদ তার কথায় পরিষ্কার জানাচ্ছে সে তার বোনকে পছন্দ করে। আর এই বিষয়টা আপাতত আরিফ এরিয়ে যেতে চাচ্ছিল। কিন্তু রিদের সরাসরি বলাতে এবার আরিফও অনেকটা সরাসরি বলল…

‘ আপনি একজন সম্মানিত মানুষ। আমি আপনাকে অনেক সম্মান করি ভাই। তাই আপনি এমন কোনো কথা বা আবদার করবেন না যেটা আমি বা আমার পরিবারের দ্বারা রাখা সম্ভব নয়। আশা করছি আপনি বুঝতে পারছেন আমি কি বুঝতে চাইছি। আমার বোন মায়া অলরেডি এঙ্গেস্ট। বিশ্বাস করার জন্য চাইলে আপনি ওর বামহাতের অনামিকা আঙ্গুলে এনগেজমেন্ট রিংটা ও দেখতে পারেন। আমরা ওর বিয়ে ইতিমধ্যে ঠিক করে রেখেছি। আর কিছু দিন বাদেই ওর বিয়ে হ…

আরিফের বাকি কথা শেষ করার আগেই রিদ যে হাতে মায়ার স্যালাইনের নল ঠিক করছিল সেই একই হাতে স্যালাইনসহ পাইব টেনে ছিঁড়ে উল্টে ফেললো ফ্লোরে। কয়েক সেকেন্ড ব্যবধানে রিদের আকস্মিক কান্ডে মায়া আরিফ দুজনই আতংকে চেঁচিয়ে উঠল ভয়ে। আরিফ চেঁচায় মায়ার হাতের ক্যানুলা ছিড়ে সেখানে থেকে ফিরকি দিয়ে রক্ত বের হতে দেখে। মায়া সেই রক্ত বন্ধ করতে অপর হাতে রক্তাক্ত হাতটি চেপে চিৎকার করতেই আরিফ রিদকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে রিদের জায়গায় দাঁড়িয়ে মায়াকে দু’হাতে ঝাপটে ধরলো উত্তেজিত ভঙ্গিতে। কিন্তু ততক্ষণে মায়ার হাতে উল্টো পিঠে থাকা ক্যানুলার সুইয়ে মায়ার হাত ছিঁড়ে সাদা বেড অনেকটা রক্তাক্ত হলো। আরিফ অস্থির ভঙ্গিতে মায়ার সেই রক্তাক্ত হাত চেপে ধরতেই কক্ষে আরও একটা ভয়ংকর শব্দে ভাংচুর হলো। ভাইবোন দুজনই চমকে উঠার মতোন পিছনে তাকাতে দেখল কেবিনে থাকা পানির ফিল্টারটি রিদ ততক্ষণে উল্টে ফেলেছে ফ্লোরে। ভয়ার্ত মায়া রিদের টগবগ করার রাগে তোপে নিজের কান্না ভুলে থরথর করে কেঁপে উঠলো আরিফের বাহুতে সিঁটিয়ে। আরিফ এক হাতে মায়াকে জড়িয়ে অনেকটা রাগ ক্ষোভ প্রকাশ করে রিদের উদ্দেশ্যে চেঁচিয়ে বলল…

‘ টাকার গরমে ভদ্রতা ভুলে গেছেন আপনি। এবার যদি আমিও আপনার মতো অভদ্র হয়ে যায় তাহলে কিন্তু খুবই খারাপ হবে রিদ ভাই! আমার বোনকে আঘাত করার রাইট আপনাকে কে দিলো? কে আপনি হ্যাঁ? বাবার টাকা থাকলে সেই গরম নিজের বাসায় গিয়ে দেখাবেন আমাদের সামনে নয়। আমরা আপনার টাকায় চলি না যে আমার বোনকে আঘাত করবেন। আপনি বের হোন কেবিন ছেড়ে এক্ষুনি, নয়তো আমি ভুলে যাব আপনি কে? আমাকে বাধ্য করবেন না আপনার গায়ে হাত তুলতে ভাই। আপনি বেড়িয়ে যান প্লিজ।

আরিফের চিৎকার! রাগে টগবগ করা রিদের মস্তিষ্ক আরও জ্বলে উঠলো আরিফের কথায়। অগ্নি শেখার মতোন কাপালে রগ, হাতে উল্টো পিঠে রগ পযন্ত ফুলে উঠলো তৎক্ষনাৎ। মায়া আরিফকে থামাতে চাইল রিদকে অপমান করা থেকে কিন্তু রাগান্বিত রিদ আরও হিংস্র প্রকাশ করলো। এগিয়ে এসে এক থামায় আরিফের বাহু হতে মায়াকে টানল। মায়ার শরীরের কম্পন তখন আরও বাড়লো রিদের শক্ত হাতের থাবার টানে। রিদ মায়ার হাত টেনে রাগে রি রি করে বলল…

‘ তোকে বলেছিলাম আমার সাথে বেঈমানী না করতে তারপরও করলি! শশী আর তুই একই। সব-কয়টা বেঈমান! কয়টা পুরুষ লাগে তোদের?

রিদের কথায় রাগান্বিত আরিফ আরও ক্ষিপ্ত হলো। কথা নেই বার্তা নেই হঠাৎ কি এমন হলো যে রিদ খান ওর বোনকে বারবার আঘাত করতে চাইছে। চোখের সামনে নিজের বোনকে কেউ আঘাত করতে চাইবে আর সেটা কোনো ভাই-ই চুপ করে বসে থাকবে না। আরিফের বোন এমনই অসুস্থ। রিদের করা আঘাত গুলো মায়াকে নতুন করে আবারও জখম করছে। তাছাড়া কিসের বেঈমানী কথা বলছে রিদ খান? কি এমন সম্পর্ক মায়ার সাথে তার? প্রেমের সম্পর্ক ভেঙ্গেও তো মানুষ অন্য জায়গায় বিয়ে করে। এমনটা তো না যে মায়া উনার বিয়ে করা বউ হয়। তার জন্য মায়াকে অন্য কোথাও বিয়ে দেওয়া যাবে না। বিয়ে দিলে সেটা বেঈমানী হবে। এমন কিছুই তো না তাহলে কিসের এতো রাগ ক্ষোভ রিদ খানের মায়ার উপর। বড় ভাই হিসাবে আরিফ মায়ার উপর করা রিদের আঘাত গুলো কক্ষনো মেনে নিবে না। রিদের থাবার সঙ্গে সঙ্গে আরিফও মায়াকে বাহুতে জড়িয়ে উঠে দাঁড়াল সঙ্গে সঙ্গেই। রিদের মুখোমুখি হয়ে মায়াকে প্রটেক্ট করতে চেয়ে রাগান্বিত ভঙ্গিতে মায়ার হাতটা রিদ থেকে ছাড়াতে চাইলে রিদের শক্তির সঙ্গে আরিফ পেরে উঠতে না পেরে ঐহাতেই সে তৎক্ষনাৎ রিদের শার্টের কলার চেপে ধরে চিৎকার করে বলে উঠলো…

‘ আমার বোনকে ছাড়। নয়তো আজ আমি তোকে ছাড়বো না। আমার বোনের গায়ে হাত তুলার সাহস কিভাবে পেলি কাপুরষের দল। আমার সাথে আয়, নিজের পুরুষত্ব দেখা দেখি। তোর তো বাপ-মা ঠিক নেই। সেজন্য একটা কাপুরষ হয়েছিস। মেয়েদের গায়ে হাত তুলতে নেই সেটা পরিবার শিক্ষা দেয়। কিন্তু তোর তো পরিবারই নেই। যার পরিবারের বাপ-মা ডিভোর্সি হয় তার ছেলেগুলো এমন বেজন্মা আর কাপুরষ…

আরিফ থামে। সে থামে নয় তাঁকে থামতে বাধ্য করে রিদ। হঠাৎ বিকট শব্দে আতঙ্কিত মায়া চিৎকার করে সেও চুপ মেরে থরথর করে কেঁপে। অশ্রু সিক্ত আতঙ্কিত চোখে তাকিয়ে রইল, হঠাৎ মন্ত হয়ে যাওয়া আরিফের দিকে। ঝিম ধরে দাঁড়িয়ে থাকা আরিফ কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে হঠাৎই কপালের দু-কানিশ বেয়ে তাজা রক্ত গড়িয়ে কাঁধের উপর পরতেই মায়া পুনরায় আতঙ্কিত ভঙ্গিতে ভাই! ভাই! চিৎকার করে উঠলো আরিফকে জড়িয়ে ধরে পরে যাওয়া থেকে বাঁচাতে। কিন্তু অসুস্থ মায়া বিছানায় হাঁটু ভেঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে আরিফের বলিষ্ঠ শরীরের ভার নিতে না পেরে আরিফসহ মায়াও পরতে নিলে কোথা থেকে আসিফ হঠাৎ দৌড়ে এসে আরিফ কে ঝাপটে ধরল পড়া থেকে বাঁচাতে। আতঙ্কিত দৃষ্টিতে সামনে তাকাতেই দেখল রিদকে রাগান্বিত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকতে। হঠাৎ পরিস্থিতি কি হলো সেটা বুঝতে আসিফ চোখ আওড়িয়ে তাকাল ফ্লোরে ভেঙ্গে পরে থাকা কাঁচের টুকরো গুলোর দিকে। পরিবেশ দেখে যথটা বুঝতে পারলো আসিফ সেটা হলো রিদ ভাই নিজেই আরিফের মাথায় এই গ্লাসটা ভেঙ্গেছে হয়তো। কিন্তু কেন? সেটা জানে না আসিফ। কারণ আসিফ রিদের জন্য খাবার আনতে গিয়েছিল রেস্টুরেন্টে। কাল রাত থেকে মায়ার জন্য দৌড়াদৌড়ি করায় রিদ না খেয়ে ছিল। সকাল থেকেও কিছুই খাইনি। সেজন্য রিদের সুগারফল করেছে বলে আসিফ হসপিটালের পৌঁছিয়েই রিদের জন্য খাবার আনতে যাই। কিন্তু ফিরে আসতে আসতে এতবড় ঝামেলা হয়ে যাবে বুঝতে পারিনি আসিফ। আরিফের মতো শান্ত ছেলেকে রিদ কেন মারবে তাও বুঝতে পারছে না। যেখানে মায়ার বড় ভাই আরিফ সেখানে রিদের আরিফকে আঘাত করা প্রশ্নই উঠে না। তবে আসিফ বিশ্বাস করে নিশ্চয়ই এখানে এমন কিছু একটা হয়েছে যার জন্য রিদ মেজাজ হারিয়ে আরিফকে আঘাত করেছে। আসিফ এই মূহুর্তে কিছু জানতে চাই না। কারণ এখন এই নিয়ে কাউকে প্রশ্ন করার মতো পরিস্থিতিও নেই। বরং আসিফের প্রয়োজন এই মূহুর্তে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া। রিদ-মায়া আরিফ তিনজনই অসুস্থ। রিদকে হাইপার করাও এই মূহুর্তে ঠিক হবে না বলেই আসিফ আরিফকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে সোজা হয়ে দাঁড়াতে দাঁড়াতে মায়ার উদ্দেশ্যে বলল…

‘ ভাবি আপনি শান্ত হোন। আরিফ ঠিক আছে। আমি দেখছি আরিফকে।

উত্তেজিত, আতঙ্কিত মায়া অস্থির ভঙ্গিতে আরিফের জন্য কাঁদতে লাগল। মায়া চাইনি আজ এমন কিছু হোক। মায়া এমনই সবকিছু আজরাতে বলে দিতো রিদকে। কিন্তু এরমধ্যে এসব হয়ে গেলো। একদিকে ভাই অন্যদিকে স্বামী। কারও পক্ষ নিতে পারবে না ওহ। একজনের পক্ষ নিয়ে কথা বললে অপরজনকে অসম্মান অপমান করা হবে। অসহায় মায়া নিরুপায় হয়ে অঝোরে কাঁদতে লাগল। সে কোনো কালেই ভাবেনি এমন পরিস্থিতি হবে। মায়ার জানে আজকের মতো অপমান রিদলে কেউ করেনি হয়তো। কেউ রিদকে কখনো আরিফের মতো করে সরাসরি এতোটা গালি দিয়ে অসম্মান করেনি। মা-বাপ তুলে তো নয়ই। জীবনে কেউ কখনো রিদের শার্টের কলার চেপে ধরার সাহস পেয়েছে কিনা সন্দেহ। অথচ আজ মায়ার জন্য মায়ার দুটো ভালোবাসার মানুষই অসম্মানিত হলো। মায়া আরিফকে ছেড়ে রিদের দিকে তাকাতে চোখাচোখি হলো রিদের হিংস্রত্ব রক্তিম চোখ দুটোর সাথে। অপরাধ বোধে মায়ার চোখ মেনে আসল রিদের ডানহাতের দিকে, যেখান দিয়ে ফোটা ফোটা রক্ত গড়িয়ে পরছে হাতের পিষ্টদেশ ছিঁড়ে মধ্যমা আঙ্গুল বেয়ে ফ্লোরে। তখন ঐভাবে হঠাৎ কাঁচের গ্লাসটি আরিফের মাথায় ভাঙ্গার কারণে রিদের হাতও কেটেছে কাঁচে টুকরো গেঁথে। আতঙ্কিত মায়া রিদকে আহত হতে দেখে উত্তেজিত ভঙ্গিতে রিদের হাত ধরতে চাইলে তৎক্ষনাৎ মায়া গাল চেপে ধরে সেই রক্তাক্ত হাতে রিদ। অসুস্থ মায়ার গালের মারি ছিঁড়ে যাওয়ার উপক্রম হলো রিদের শক্ত হাতের থাবায়। হিংস্রত্ব রিদ রাগে হিসহিসিয়ে মায়ার চোখে চোখ রেখে বলল…

‘ দরদ দেখাস আমাকে? তোর দরদের কাঙ্গাল আমি? আমাকে বেজন্মা কাপুরুষ মনে হয়? আমার বাপ-মাকে তুলে আজ পযন্ত কেউ কিছু বলার সাহস পাইনি। কি ভেবেছিস? বউ বলে তোকে আর তোর ভাইকে ছাড় দিয়ে দিব আমি? আমার বউ হয়ে, আমাকে জীবিত রেখে অন্যের সাথে এঙ্গেস্ট হলে আমি কেন সেই বউকে ছেড়ে দিব? তুই বেঈমানী করবি, আর আমি সেটা সহ্য করবো ভেবেছিস? আমাকে সস্তা মনে হয় না?

রিদের আঘাতে ঝিমিয়ে পড়া আরিফ স্বস্তির হতে হতে পুনরায় রিদকে মায়ার গাল চেপে ধরতে দেখে সেও একই ভাবে এগিয়ে এসে রিদকে ধাক্কা মারতে চাইলে রিদ মায়ার গাল ছেড়ে তৎক্ষনাৎ আরিফের শার্টের কলার একহাতে চেপে নিজের মুখোমুখি করে, আঙ্গুল তুলে রক্তিম চোখে রাগে দাঁতে দাঁত পিষে বলল…

‘ একই ভুল বারবার নয়। এবার আর ক্ষমা করবো না। সম্পর্ক ভুলে যাব সোজা উপরের টিকেট হাতে ধরিয়ে দিব। জানে ভয় কর আমি ভালো মানুষ না।

রিদের হুমকিতে আরিফ দমে যাওয়ার মতো ছেলে না। মূলত আরিফ বড়ভাই হিসাবে মায়াকে প্রটেক্ট করতে চাইছে রিদের থেকে। কিন্তু আরিফ এটা জানতো না মায়া রিদের বউ হয়। আর এজন্যই রিদ মূলত এতোটা ক্ষিপ্ত হচ্ছে রিদের সাথে মায়ার বেঈমানী করা নিয়ে। রিদের ধারণা মায়া রিদের অগোচরে অন্য কারও সাথে এঙ্গেস্ট হয়েছে তারমানে সুযোগ মতো বিয়েটাও করে নিতো রিদকে অন্ধকারে রেখে। স্বাভাবিক ক্ষেত্রে সকল ছেলেই রিদের মতো এতটা রিয়েক্ট না করলেও স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ রিয়েক্ট করতো নিজের ভালোবাসার বউয়ের দ্বিতীয় পুরুষের জন্য বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নিতে দেখলে। অক্ষত আরিফ রিদের হুমকিতে দমে না গিয়ে পুনরায় রিদের শার্টের কলার চেপে ধরতে চাইলে রিদ রাগে মেজাজ হারিয়ে মুষ্টিবদ্ধ হাত উঠিয়ে আরিফকে আঘাত করতে চাইলে বাঁধা দেয় মায়া। তৎক্ষনাৎ রিদকে ঝাপটে ধরে আকুতি স্বরে কেঁদে উঠে বলল….

‘ প্লিজ আমার ভাইকে আর আঘাত করবেন না আপনি। আমার জন্য অনেক অসম্মান হয়েছে ভাই। আরিফ ভাই আমাদের বিয়ের সম্পর্কে কিছু জানেন না। প্লিজ ভাইয়াকে ছেড়ে দিন। আসিফ ভাইয়া প্লিজ আপনি আরিফ ভাইয়াকে একটু ধরুন। প্লিজ ।

মায়া কান্না আকুতি আরিফ হাত থেমে যায়। আরিফের মনে হলো সে মায়ার মুখে কিছু ভুল শুনেছে। এতক্ষণ আরিফের মনে হয়েছিল রিদ খান বাড়াবাড়ি করছে মায়াকে পছন্দ করা নিয়ে। কিন্তু এখন মায়ার স্বীকারোক্তিতে মনে হচ্ছে রিদ নিজের জায়গায় হয়তো ঠিক। বউ বেঈমানী করলে সব পুরুষ পাগল হবে। রাগারাগিটা তো স্বাভাবিক। কিন্তু তার বোন রিদ খানের সত্যি বউ? আরিফ হাত ঢিলে হয়ে আসল রিদের কলারে। মায়ার দিকে অবিশ্বাস্য নজরে চাইতেই আসিফ পিছন থেকে তৎক্ষনাৎ আরিফকে ঝাপটে জড়িয়ে রিদের থেকে ছাড়িয়ে পিছনে গেল। আরিফ সরে যেতে রিদও মায়াকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে দিতে দিতে হিসহিসিয়ে বলল….

‘ তোর ভাইকে অসম্মান করবো না? ভাইয়ের জন্য খুব জ্বলে না? তুই যে আমাকে,আমার বিয়েটাকে অসম্মান করলি সেটা? এজন্য তুই আমার কাছ থেকে সময় চেয়েছিলি? নিজের পরিবার থেকে সত্যিটা লুকিয়ে অন্য কারও বউ হওয়ার জন্য?

মায়া বেড থেকে অপর পাশে দাঁড়াল মাথা নিচু করে। তীব্র অপরাধ বোধে আছড়ে কাঁদতে লাগল অঝোরে। মায়ার দিকটা কেউ শুনতে চাইছে না। মায়ার খুব ভালোবাসে নিজের স্বামী রিদ খানকে। মায়া নিজের জান দিতো তারপরও এই বিয়েটা কখনোই করতো না। সেখানে আজ মায়াই দোষী হয়ে গেল রিদের চোখে। মায়া প্রথম থেকেই জানতো এই বিয়েটার সত্যিটা শুনে যেভাবে আরিফ অবিশ্বাস করছে মায়াকে ঠিক তার থেকে দ্বিগুণ রিয়েক্ট করতো যদি সেদিন মায়া নিজের পরিবারকে এই সত্যিটা বলে দিতো। তখন ঐ অবস্থায় যদি মায়া কোনো ভাবে রিদকে বা অন্যকাউকে এই বিয়েটা সম্পর্কে বলতো তাহলে মায়াকে ঘরবন্দী করে চেয়ারম্যানের ছেলের সাথে বিয়েটা দিয়ে দিতো মায়ার বাপ-চাচা। তখন রিদের সঙ্গে যোগাযোগ করার সুযোগ পেত না সে। তবে মায়া চট্টগ্রাম এসেও রিদকে সত্যিটা জানাই নি কারণ রিদকে সত্যিটা বলা মতো উত্তম সময় তখনো ছিল না। রিদকে কিছু বলা মানে ওদের দুজনের বিয়েটা দুই পরিবারের মাঝে জানাজানি হয়ে যাওয়া একই কথা ছিল আর গোপন থাকতো না বিষয়টি। মাত্র মায়ার বোনের বিয়েটা হয়েছে ঐ পরিবারের। এর মধ্যে মাসখানেক সময় না গড়ালে ছোট বোনের বিয়েটা প্রকাশ পেলে দুই পরিবারের ঝামেলা সৃষ্টি হবে ভেবে মায়া চাচ্ছিল অন্তত ওর বোনের বিয়েটা মাসখানেক মতো সময় পার হোক তারপরও না-হয় দুই পরিবারের মায়াদের বিয়েটা জানাজানি হোক। রিদ শান্ত মস্তিষ্কের মানুষ নয়। মায়াকে বিয়ে দিতে চাইছে এই বিষয়টা শুনলে সে মায়াকে নিজের কাছে রাখতে চাইতো। এরমধ্যে যদি দুই পরিবারের কেউ বাঁধা দিতো তাহলে তার পরোয়া না করেই মায়াকে নিয়ে যেতো নিজের সঙ্গে। মায়া এমনটা চাই না। মায়া চাই দুই পরিবারের সবাইকে পাশে নিয়ে রিদের সাথে বিয়ে আগাতে। মায়া অঝোরে কাঁদা মধ্যে শুনা গেল আসিফের গলা স্বর। আরিফকে বলছে সে…

‘ তুমি আমার সাথে আসো আরিফ। ভাই ভাবি উনারা দুজন বিবাহিত। তাদের মধ্যে আপাতত আমাদের না দাঁড়ানো উচিত। তোমার সকল প্রশ্নের উত্তর আমি দিব। চলো!

প্রথমের মায়ার মুখে, এখন আসিফের মুখে একই কথা শুনে স্তব্ধতার নিশ্চুপ মেরে গেল আরিফ। তীব্র অবিশ্বাস্যে হঠাৎ কেমন মাথা ঘুরিয়ে উঠতেই আসিফ
আহত আরিফকে টেনে কেবিন থেকে বেড়িয়ে গেল যাতে আবারও রিদের মুখোমুখি হয়ে আহত না হয়। রক্তাক্ত আরিফ, রিদের আঘাতে কপাল ফেটে রক্তে ছুপছুপ হলো কপাল, গলা, আর সাদা শার্টের বুকের কাছটার কিছু অংশ। আহত রিদও হয়েছে তবে সেটা আরিফকে আঘাত করতে গিয়ে হাতে কেটেছে। মায়া রিদের ভয়ে পিছাতে পিছাতে কেবিনে এক কোণে গিয়ে দাঁড়াল। পরিস্থিতি এমন ভয়াবহ আর ভয়ংকর রুপ নিবে সেটা কেউ বুঝতে পারিনি। রিদের চোখে মুখে মায়াকে ঘিরে শুধু অবিশ্বাস্য আর বেঈমানীর প্রহরতা খেলা করছিল। রিদকে মায়া এতো ভালোবাসে সেটা প্রকাশ করার পরও কিভাবে সেই নারী তার সেই ভালোবাসার পুরুষটির সাথে বেঈমানী করতে পারে সেটা জানা নেই রিদের। মায়া সবসময় বলে সে রিদকে অনেক ভালোবাসে তাহলে রিদের সাথে বেঈমানীটা করলো কেন? কিসের জন্য? রিদ মনস্তাত্ত্বিক ভাবনায় আবারও মেজাজ হারিয়ে ভয়ংকর রাগে শরীরের সাথে রক্তাক্ত হাত গুলোও কাঁপতে শুরু করলো পুনরায়। রিদের হাত দুটো রাগ কন্ট্রোলে করতে তখনো মুষ্টিবদ্ধ ছিল। অথচ রাগে তোপে রিদের হাতসহ গলার অ্যাডাম কাঁপছে ক্ষণে ক্ষণে। মায়ার আর রিদের দিকে তাকানোর সাহস করতে না পেরে মাথা নিচু করেই রাখল। হিংস্রত্ব রিদ আবারও রাগে মেজাজ হারিয়ে কক্ষে বেডসহ বিছানা উল্টে ফেলতে ফেলতে ফের চিৎকার করলো মায়ার উদ্দেশ্য। মেজাজ হারিয়ে বলল…

‘ আমি জীবিত কিন্তু তুই অন্য কারও। আমি মরে গেলে কি করবি? আমাকে ভুলে সংসার করবি? কিভাবে পারলি আমার সাথে বেঈমানী করতে? তোর বুক কাঁপলো না? জীবনের সব চলবে। তোকে হারিয়ে একা থাকা চলবে কিন্তু বেঈমানী? উহুম! নট এলাউ।

রিদের কথায় মায়া দু’হাতে মুখ চেপে কাঁদতে লাগল অপরাধ বোধে। রিদ কথা গুলো শেষ করে রাগে কিরমির করে তৎক্ষনাৎ কক্ষ ছেড়ে বেড়িয়ে গেল। যাওয়ার সময় দরজার কর্ড়া আঘাত দেয়ালসহ দরজাটি কেঁপে উঠলো দেয়ালের সঙ্গে ভারি লেগে। এই মূহুর্তে রিদ এখান থেকে চলে না গেলে রাগের বশে মায়াকে আরও আঘাত করতে দ্বিধা করবে না বলেই রিদ বেড়িয়ে গেল। মায়া রিদের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আরও কান্নায় ভেঙ্গে পরলো। আজ মায়া রিদের চোখে বেঈমান বউ হয়ে গেল। অথচ মায়া নিজের স্বামীকে কতোটা ভালোবাসে সেটা কিভাবে বুঝাবে? আজকে পর আর বিশ্বাস করতে চাইবে মায়ার ভালোবাসাকে ওর স্বামী? মায়াতো বেঈমান বউ হয়ে গেল ওর স্বামীর। মায়ার কান্নার মধ্যেই হঠাৎ আরিফের কথা মাথায় আসতেই দূর্বল শরীরের মায়া তৎক্ষনাৎ রিদের পিছন পিছন সেও দৌড়ে বের হতে দেখল আরিফ হসপিটালের করিডোরে মাথা ঝুঁকে মন্ত হয়ে বসে। ঝুকে থাকা কপাল থেকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে রক্ত পরছে দু’পায়ের মাঝের ফ্লোরে। ব্যস্ত আসিফ কিছু একটা বুঝাচ্ছিল আরিফকে হয়তো নিজের ট্রিটমেন্ট করাতে। কিন্তু নিস্তব্ধ আরিফ তখনো মন্ত হয়েই নিশ্চুপ বসে। মায়া বুঝতে পারলো আজ মায়ার জন্য আরিফের আত্মসম্মানে আঘাত লেগেছে অনেক। যেমনটা রিদ অসম্মানিত হয়েছে ঠিক তেমনটা আরিফ হয়েছে। মায়ার অপরাধ বোধে এগোল আরিফের দিকে। রিদকে দেখা গেল আসিফ আরিফের সামনে দিয়ে রাগান্বিত ভঙ্গিতে চলে যেতে। রিদকে চলে যেতে দেখে আসিফ এক পলক পিছন থেকে আসা মায়ার দিকে তাকিয়ে রিদকে ভাই! ভাই করে উঁচু স্বরে ডেকে রিদের পিছনে দৌড়াতে চাইলে আবারও থেমে যায় মায়া ও আরিফকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে। এই মূহুর্তে ভাই-বোন দুজনের ট্রিটমেন্ট দরকার। সেই সাথে রিদও দূর্বল। সুগারফল করেছে এই অবস্থায় রিদের হুশ কম থাকে। জেদের বশে রিদ একা ড্রাইভ করতে গেলে নিশ্চিত কোনো বড়ো ধরনের একটা এক্সিডেন্ট ঘটাতে পারে। অস্থির, চিন্তিত আসিফ পুনরায় আরিফের পাশে দাঁড়ালেও রিদের জন্য ছটফট করতে লাগল ক্ষণে ক্ষণে। বারবার রিদের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আরও চিন্তিত হতে লাগল। আসিফের ছটফট করার মধ্যেই মায়া এসে আরিফের পায়ের কাছটায় বসল দু’হাতে আরিফে পা জড়িয়ে। আরিফের কাছে ক্ষমা চেয়ে অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে বলল…

‘ ভাই আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি তোমাকে অসম্মান করতে চাইনি। পরিস্থিতি এমন হবে আমি কখনো বুঝতে পারিনি। আমি তোমাদের দুজনের অপরাধী ভাই। আমার জন্য আজ তোমাদের দুজনের অসম্মান হলো। আমি সত্যি এমনটা চাইনি। আমার ভুল হয়েছে ভাই। আমাকে ক্ষমা করো।

মন্ত আরিফ তখনো নিশ্চুপ হয়ে বসে। হুম হ্যাঁ একটা শব্দ পযন্ত করলো না। মায়ার প্রতি বিশ্বাসটা আজ রিদের মতো আরিফও হারিয়ে ফেলল। আজ আরিফের আত্মসম্মানের আঘাত পেয়েছে খুব। আরিফ মাথা তুলে মায়ার দিকে না তাকিয়ে ঐ অবস্থায় ব্যর্থ গলায় বলল…

‘ আমাকে এতোদিন সত্যিটা বললি না কেন?

আরিফের ভাঙ্গা গলার মায়ার আরও কেঁদে উঠলো। মায়া বুঝতে পারছে আরিফ কতোটা কষ্ট পেয়েছে মায়ার ধারা। মায়া একই ভঙ্গিতে আরিফের পা জড়িয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে বলল…

‘ আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম ভাই। সত্যিটা জানলে তোমরা কিভাবে নিবে সেই ভয়ে কখনো বলতে পারি। আমার ক্ষমা করে দাও ভাই। আমি এসবের কিছুই চাইনি। কিছুই না।

মায়ার কথায় আরিফ তেমন কিছুই আর বলল না। বুক ভারির দীর্ঘশ্বাস গোপন করে আবারও নত মস্তিষ্কের বলল…

‘ হাতের রিংটা দে।

মায়া তৎক্ষনাৎ নিজের অনামিকা আঙ্গুলে থাকা এনগেজমেন্ট রিংটা খুলে আরিফ দিকে বাড়িয়ে দিতেই সেটা হাতে নিল আরিফ। মায়ার দিকে না তাকিয়ে শুধু উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে মায়ার উদ্দেশ্যে একটু করে বলল আরিফ…

‘ আয়!

আরিফ করিডোর ধরে সামনে হাঁটতে চাইলে বাঁধা দেয় আসিফ, বলে…

‘ তুমি অসুস্থ আরিফ! তোমার ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন। কপালের রক্ত পড়া বন্ধ না করলে তুমি সমস্যা পড়বে।

আসিফের কথায় আরিফ ক্লান্তিতে হেঁসে বলল…

‘ হৃদয়ের অনেক রক্ত হরণ হচ্ছে আসিফ ভাই। খুব বুক ব্যথা করছে। কপালটা তো সামন্য কেটেছে মাত্র। আপনার কাছে বুক ব্যথার ঔষধ থাকলে একটা দিন, খুব অসহনীয় জ্বলছে বুকটা।

মায়া কান্না আর আরিফের ভাঙ্গা স্বরের গভীর কথা গুলো মানে বুঝতে দেরি হলো না আসিফের। পরিস্থিতি এমন অসম্মানজনক হবে সেটা আসিফও কল্পনা করেনি। কিন্তু যা হবার তা হয়ে গেছে সেটা বদলানোর যাবে না। কিন্তু তাই বলে আরিফ ট্রিটমেন্ট নিবে না সেটা তো নয়। আরিফ আসিফকে পিছনে ফেলে টলমল পায়ে কয়েক কদম হাঁটতেই তীব্র দূর্বলতা বেহুশ হয়ে পরতে নিলে আসিফ পুনরায় ঝাপটে ধরলো আরিফকে। আরিফের পরপর মায়াও একই ভাবে পিছন থেকে বেহুশ হয়ে পরলো দূর্বলতায়। কাল রাত থেকে মায়া অসুস্থ ছিল এখন আবার রিদের তান্ডবে মায়া আরও দূর্বল হয়ে পরলে আরিফের সঙ্গে সঙ্গে সেও জ্ঞান হারালো। হসপিটালের করিডোরে দাঁড়িয়ে থাকা এতো মানুষ ভিড় লেগে শুরু মায়াদের কাহিনি দেখছিল এতক্ষণ। কি হয়েছে সেটা সঠিল কারও জানা না থাকলেও সবাই বুঝতে পারছে মায়াদের মাঝে কোনো বড়ো ধরনের ঝামেলা হয়েছে। প্রথমে আরিফ তারপর মায়াকে বেহুশ হয়ে পরে যেতে দেখে বিপদে পরলো আসিফ, কাকে রেখে কাকে ধরবে সেটা বুঝতে না পেরে তৎক্ষনাৎ চেঁচিয়ে ডাকল হসপিটালের নার্সদের মায়াকে কেবিনে নিতে। নার্স আসাতে একটু দেরি হলেও করিডোরে থাকা অন্যান রোগীদের সাথে আসা কয়েকজন মহিলা এগিয়ে আসল মায়াকে ধরতে। সবাই যখন আরিফ আর মায়াকে ধরাধরি করে কেবিনে নিতে ব্যস্ত তখনই দেখা গেল লিফ্ট হতে আয়ন আর রাদিফকে বেড়িয়ে আসতে। রিদ সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমেছে বলে হয়তো আয়নদের সঙ্গে রিদের দেখা হয়নি। নয়তো দুজনের একজন নিশ্চয়ই রিদের সঙ্গে যেত। লিফট হতে পরিচিত দুটো মুখ বের হতে দেখেই অস্থির আসিফ তৎক্ষনাৎ উত্তেজিত ভঙ্গিতে চেঁচাল রাদিফের উদ্দেশ্য। বলল…

‘ রাদিফ ভাই দ্রুত রিদ ভাইয়ের পিছনে যান। ভাই অনেক অসুস্থ যেকোনো সময় বড়ো কোনো এক্সিডেন করতে পারে। কাল রাত থেকে না খাওয়া ফলে রিদ ভাইয়ের সুগার ফল করেছে। প্লিজ ভাই আপনি দ্রুত যান। নয়তো অনেক দেরি হয়ে যাবে।

রাদিফ যেভাবে বের হয়েছিল ঠিক সেইভাবেই দৌড়ল রিদের উদ্দেশ্যে সিঁড়ি বেয়ে নিচের দিকে। আয়ন রাদিফের পিছনে যেতে চাইলে আসিফ বাঁধা দিয়ে একই ভঙ্গিতে আয়নকে ডেকে বলে…

‘ আয়ন ভাই আপনি প্লিজ আমার সাথে আসুন। ভাবি অসুস্থ। আরিফেরও ট্রিটমেন্টের প্রয়োজন। আপনি একটু আরিফকে ট্রিটমেন্ট করুন প্লিজ।

#চলিত…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here