#বাদশাহ_নামা
#পর্বসংখ্যা_৮
#আ_মি_না
ব্রায়ানের এই হঠাৎ প্রশ্নে অ্যানা মাথা তুলে তাকালো ব্রায়ানের দিকে। আনমনা হয়ে থাকা শার্লটও ব্রায়ানের প্রশ্ন শুনে চমকে উঠে চেয়ারের ওপর ঠিক ঠাক ভাবে গুছিয়ে বসে নিজেও উত্তরের অপেক্ষায় অ্যানার দিকে তাকিয়ে রইলো। অ্যানা এদের দুজনের এমন উৎসুক চাহনি দেখে মজা পেলো, হাসি এলো ওর খুব, কিন্তু অনেক কষ্টে সেটা চাপা দিয়ে মুখ খানা স্বাভাবিক করে রাখলো ও। তারপর মাথা নাড়িয়ে সায় জানিয়ে বলল,
— হ্যা, আসে এখনো, রোজ।
বলেই আবার বই এর দিকে তাকালো ও। শার্লট চমকে উঠে উত্তেজিত কন্ঠে মনে পড়ার ভঙ্গিতে বলে উঠলো,
— ওহ্, জেইসাস! আমি তো ব্যাপার টা পুরোপুরি ভুলেই গেছিলাম।!
তারপর নিজের চেয়ার টা টেনে টেবিলের দিকে আরও একটু এগিয়ে নিয়ে এসে বসে বলল,
— আচ্ছা, আমরা একদিন ওই মেসেজের রিপ্লাই দিয়েই দেখিনা কি হয়!
অ্যানা হাতের বই টা বন্ধ করতে করতে শার্লটের দিকে এক পলক তাকিয়ে যথাসম্ভব গম্ভীর গলায় বলল,
— এই কথা চিন্তাও করবি না। এরকম কোনো কাজ আমি করতে পারবো না।
কিন্তু শার্লট শুনলো না অ্যানার কথা, ও পিড়াপিড়ি করতে লাগলো অ্যানা কে, রাজি হওয়ার জন্য। ব্রায়ান নিজেও শার্লটের কথায় সায় দিয়ে বলল,
— হ্যা, একদিন রিপ্লাই দিয়ে দেখাই যাক না আসলেই কিছু হয় কি! ফ্রড হলে হবে, সমস্যা কি? নিজেদের কৌতুহল তো মিটবে!
কিন্তু অ্যানা শুনলো না ওদের কারো কথা। হুট করেই কোলে থাকা লিন্ডা কে হাতে নিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে হাতের বই খানা লাইব্রেরির নির্দিষ্ট তাকে রেখে দিয়ে কিচেনের দিকে এগোনোর জন্য পা বাড়ালো ও৷ ঘুমন্ত লিন্ডাকে এমন হঠাৎ করে জাগিয়ে দেওয়ায় লিন্ডা প্রথমে কোথায় আছে কিছুই বুঝতে পেরে তারস্বরে ম্যাও ম্যাও করা শুরু করলো৷
কিন্তু শার্লট অ্যানা কে যেতে দিলো না৷ তাড়াতাড়ি বসা থেকে উঠে দৌড়ে গিয়ে ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে টানাটানি করে টেনে নিয়ে এসে আবারও চেয়ারে এনে বসালো। আর লিন্ডাও নিজের মালিকের কাছেই আছে জেনে নিজের চিৎকার বন্ধ করে আবারও অ্যনার কোলের ওপর আরাম করে ঘুমানোর বন্দোবস্ত করতে শুরু করলো।
অ্যানাকে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে শার্লট নিজেও নিজের চেয়ারে গিয়ে সুন্দর করে বসে ভ্রু জোড়া তুলে অনুনয়ের সুরে বলল,
— প্লিজ অ্যানা! একটা বার ম্যাসেজ এর রিপ্লাই দিয়েই দ্যাখ না! তোর আর কোনো দিন দেওয়া লাগবে না। তোর কাছে কখনোই কোনো আবদার করিনি! আজকে করছি, রাখ না প্লিজ! আমি একা বলছিনা, ব্রায়ান ও বলছে! তাইনা?
‘তাইনা’ কথা টা ব্রায়ানের দিকে তাকিয়ে ইশারা দিয়ে বলল শার্লট, তারপর তাড়াতাড়ি করে ব্রায়ানের পেটে নিজের কনুই দিয়ে গুতা দিলো। শার্লটের গুতা খেয়ে ব্রায়ান ও সাথে সাথেই বলে উঠলো,
— হ্যা হ্যা, আমিও বলছি। একটা দিনই তো! একবার দিয়েই দেখা যাক না কি হয়! আর কখনো তোমাকে রিপ্লাই দিতে বলবো না সত্যি! তবে যদি তোমার উইশ গ্রান্ট হয় তবে নেক্সট টাইম আবারও বলতে পারি।
ব্রায়ানের শেষের কথা শুনে অ্যানা আবার ও উঠে যেতে নিলো৷ কিন্তু শার্লট তাড়াতাড়ি ওকে আটকে বলল,
— আচ্ছা, আচ্ছা! যদি উইশ গ্রান্ট হয়ও তারপরও তোকে আর রিপ্লাই দিতে বলবো না! প্রমিস! এখন বস! কথায় কথায় উঠে দৌড় মারে শুধু!
অ্যানা ফোস করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে আবারও বসলো চেয়ারে। তারপর কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে শার্লট আর ব্রায়ানের দিকে একবার করে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,
— কি উইস করবো?
শার্লট কিছুক্ষণ ভেবে বলল,
— তোর মন এখন এই মুহুর্তে কি চাইছে? মাথায় যেটা প্রথমেই আসবে সেটাই বলবি। দু সেকেন্ডের ভেতর উত্তর দিবি।
শার্লটের কথা শেষ না হতেই অ্যানা খলবলিয়ে উত্তর দিলো,
— আকাশ জুড়ে ফায়ারওয়ার্কস৷
শার্লট আর ব্রায়ান দুজনেই নিজেদের দুইহাত দিয়ে ইশারা করলো অ্যানার রিস্টওয়াচের দিকে, যে এইতো উইস, করে ফেলো!
অ্যানা আবার একবার ব্রায়ান আর একবার শার্লটের মুখের দিকে তাকিয়ে ফোস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো আবারও, তারপর বাম হাতের কবজি টা নুজের মুখের সামনে উচু করে ধরে রিস্টওয়াচ টা অন করে মেসেজ অপশনে গেলো। সেখানে সেই চিরপরিচিত আননোন আইডি থেকে রোজকার মতো একটা মেসেজ,
‘মেইক অ্যা উইশ’।
অ্যানা ম্যাসেজ অপশন অন করতেই শার্লট আর ব্রায়ান দুজনেই হুড়মুড় করে নিজেদের জায়গা থেকে উঠে এসে অ্যানার পাশে দাড়ালো, তারপর নিজেদের মাথা ঝুকিয়ে দেখতে থাকলো অ্যানা কি রিপ্লাই দেয়। কিন্তু ওদের মাথার জন্য অ্যানা নিজেই কিছু দেখতে পারলো না। কিছুক্ষণ দেখার চেষ্টা করেও যখন ও ভালো ভাবে দেখতে পেলো না তখন তেজী গলায় ও বলে উঠলো,
— তোরা মাথা সরাবি, নাকি আমি চলে যাবো?
অ্যানার এ কড়কড়া গলা শোনার সাথে সাথে দুজনেই রিস্ট ওয়াচের ওপর থেকে তড়িৎ গতিতে মাথা সরিয়ে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। ওরা মাথা সরালে অ্যানা মেসেজের ক্যি প্যাড টা ওপেন করে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলো। তারপর ধীরে ধীরে টাইপ করলো,
“ আই উইশ ট্যু স্যি অ্যা স্কাই ফ্যুল অব ফায়ারওয়ার্কস”
মেসেজ টি লিখে অ্যানা বসে রইলো। হঠাৎ করেই বুকের ভেতর টা ঢিব ঢিব করতে শুরু করলো ওর! সারা শরীরে অদ্ভুত এক শিহরণ বয়ে যাচ্ছে, কান মাথা গরম হতে শুরু করেছে অজানা এক উত্তেজনায়!
প্রেরণ করবে কি করবে না ভাবতে ভাবতেই পেছন থেকে শার্লটের আঙুলের খোচা এসে ওকে তাগাদা দিলো মেসেজ সেন্ড করার। আর শার্লটের খোচা খেয়ে নিজের চোখ জোড়া খিচে বন্ধ করে মেসেজের সেন্ড বাটনে টাচ করে দিলো অ্যানা। আর মেসেজটি সেন্ড হতেই শার্লট আর ব্রায়ান দুজনেই মাথা উঁচু করে আকাশের দিকে তাকালো।
কিছুক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকার পরও যখন কোনো সাড়া শব্দ পাওয়া গেলো না তখন ব্রায়ান আবার মাথা নামিয়ে ফিক করে হেসে উঠলো, তারপর শার্লটের পিঠে একটা চাপড় মেরে বলল,
— ধুর, কিছুই না! সব ফ্রড লোকজন! আর আমরাও হলাম আর এক গাধা, মাঝরাতে ফায়ারওয়ার্কস দেখার আশায় কোথাকার কোন মদন কে মেসেজ করে আবার আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি!
ব্রায়ানের কথাতে শার্লট ও এবার আকাশের দিকে থেকে মাথা নামালো, তারপর দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে নিজেদের গাধামির কথা ভেবে শব্দ করে হেসে উঠলো, আর ওদের সে হাসি শেষ হতে না হতেই ওদের পেছন দিকে, জঙ্গলের গভীর থেকে হঠাৎ করেই শো শো শব্দ শুরু হলো, আর এরপর সে শব্দের উৎস থেকে ঝাকে ঝাকে কিছু একটা যেন উড়ে গেলো আকাশের দিকে।
হঠাৎ এমন অদ্ভুত শব্দ শুনে তিনজনেই চমকে তাকালো নিজেদের পেছন দিকে, আর ওরা তাকানোর কয়েক সেকেন্ডের ভেতরেই সমস্ত আকাশ কে আলোকিত করে, বনের পাখি গুলোকে চমকে দিয়ে, আকাশে অসাধারণ নকশা করে ফুটে উঠলো অগণিত আতসবাজি! সে আতসবাজি গুলোর লাল নীল সবুজ সোনালি রঙা আভাতে রঙিন হয়ে উঠলো শিরো মিদোরির আকাশ, আর সেই হরেকরঙা আতসবাজির নিচে অবাকের চরম সীমায় পৌঁছে আকাশের দিকে হা হয়ে তাকিয়ে রইলো দু জোড়া চোখ, আর অন্য চোখ জোড়া ছিলো নির্বিকার, যেন এমন টাই হওয়ার কথা ছিলো!
|
|
|
|
|
১৩. বেলা দশ টা। সকাল আর দুপুরের রান্নার মাঝের বিরতিতে লাইব্রেরীর পাশের ছোট ছোট টেবিলের একটিতে বসে আছে অ্যানা৷ দুপুরের রান্নার ম্যেনু দেখছে ও। কোলে ওর লিন্ডা; চিত হয়ে শুয়ে, হাত পা গুলো আকাশে তুলে ঘুমাচ্ছে সে। অ্যানার অ্যাসিস্ট্যান্ট দুজন দুপুর থেকে আবার কাজে জয়েন করবে। কিন্তু ওর কাছে একা একা কাজ করাটাই বেশি শান্তির। আশেপাশে স্বল্প চেনা লোকজন থাকলে তার খুবই অস্বস্তি হয়।
অ্যানার পাশের চেয়ারে বসে অ্যানার দিকে সরু চোখে তাকিয়ে আছে শার্লট৷ কাল রাতের ব্যাপার টা ও এখনো হজম করে পারেনি৷ ব্যাপার টা কি হলো সেটাই ও এখনো বুঝে উঠতে পারছে না৷
অনেক্ষণ ধরে শার্লট কে একইভাবে ওর তাকিয়ে থাকতে দেখে অ্যানা মেন্যুর দিকে দৃষ্টি রেখেই বলে উঠলো,
— কি বলতে চাস? তাড়াতাড়ি বল, আমি উঠবো এখনি।
শার্লট আগের মতো করে সরু চোখে তাকিয়েই জিজ্ঞেস করলো,
— তুই ওই আননোন পারসন টাকে চিনিস? তোর জন্য সে অতো রাতে আউট অব নো হয়্যার ফায়ারওয়ার্কস করলো কিভাবে, আর কেন? আর সে তোর এই অদ্ভুত আর অসম্ভব উইশ গ্রান্ট করেছে মানে তোর সব উইশই গ্রান্ট করবে, কিন্তু কেন করবে? এই লোকের তোর সাথে কি?
অ্যানা মেন্যুর দিক থেকে চোখ সরিয়ে শার্লটের দিকে তাকালো, তারপর বলল,
— তুইও যেখানে আমিও সেখানে। তোরা যেমন অবাক হয়েছিস, আমিও তেমনি অবাক হয়েছি। এই বিষয়ে আমার অতিরিক্ত কোনো ধারণা নেই৷
অ্যানার থেকে উত্তর পাওয়ার পরও শার্লট আগের মতো করেই তাকিয়ে রইলো। এমন সময় ব্রায়ান কোত্থেকে দ্রুত পায়ে হেটে এলো ওদের কাছে, এসেই একটা চেয়ার টেনে শার্লটের পাশে বসে পড়লো, তারপর ওদের দুজনের উদ্দেশ্যে বলল,
— আমি ড্যানিয়েলের কাছে গেছিলাম, এই আইডি টা কার সেটা দেখার জন্য। কিন্তু এই আইডি টার মালিক আমাদের ওয়ার্কার্স দের কেউই নয়, এটা আমাদের বাইরের কেউ। আইডির নম্বরের প্যাটার্ন টাও আমাদের আইডি নম্বরের প্যাটার্ন থেকে আলাদা! কিন্তু সে কে? আর অ্যানার সাথে তার কি? আর তার এই ম্যাসেজের উদ্দেশ্যই বা কি?
শেষোক্ত প্রশ্ন টা করে ব্রায়ান অ্যানার দিকে তাকিয়ে রইলো। অ্যানা মেন্যু থেকে চোখ সরিয়ে নিজের রিস্ট ওয়াচে সময় দেখতে দেখতে বলল
— এই মেসেজ এবং এই মেসেজ সেন্ড করা ব্যাক্তি; কোনো টার সম্পর্কেই আমার কোনো ধারণা নেই। আর এসব নিয়ে আমার মাথা ব্যাথাও নেই। এখন আমাকে উঠতে হবে, দুপুরের রান্নার বন্দোবস্ত করতে হবে।
কথাটা বলেই অ্যানা চেয়ার ছেড়ে উঠে যেতে নিলো। কিন্তু তার আগেই ব্রায়ান গম্ভীর গলায়, আদেশের সুরে বলে উঠলো,
— ওই আইডি টা ব্লক করে দাও অ্যানা!
অ্যানা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে ব্রায়ানের দিকে পূর্ণ চোখে তাকালো। কয়েক সেকেন্ড সেভাবে তাকিয়ে থেকে তারপর শান্ত কন্ঠে বলল,
— আমি চেষ্টা করেছি ব্রায়ান, কিন্তু আইডি টা ব্লক হয়নি।
অ্যানার এ কথা শেষ হতে না হতেই মিটিং জোনের কাছে, মাটি থেকে দশ পনেরো ফিট ওপরে অদ্ভুত মেটালিক শব্দ করে ভেসে উঠলো একটা স্বচ্ছ কম্পিউটার স্ক্রিন, আর তারপরই সেখান থেকে একটা আর্টিফিশিয়াল ফিমেইল ভয়েস ভেসে এলো,
— অ্যাটেনশন!
সমস্ত ওয়ার্কার্স এবং আউটসাইডার্স রা শুনতে পেলো সে আদেশ। ওয়ার্কার্স রা যে যেখানে যে অবস্থায় ছিলো সেখান থেকেই যে যার কাজ ফেলে ছুটে এলো মিটিং জোনে৷ আউটসাইডার্স রাও নিজেদের তাবু থেকে হুড়মুড়িয়ে ছুটে এলো ওয়ার্কার্স দের মিটিং জোনে৷
সবাই মিটিং জোনে জড় হয়ে যেতেই কম্পিউটার স্ক্রিন টিতে ভেসে উঠলো দুইটা ইমেজ, একটা থিয়োডরের, অন্যটা ব্রায়ানের৷
আর এরপর সেই ফিমেইল ভয়েস টা থিয়োডরের ইমেজ টি হাইলাইট করে বলে উঠলো,
— ফ্রম ন্যাও অন, থিয়োডর ব্রাউন উয়্যিল ব্যি দ্যা নিয়্যু লিডার অব দ্যা আউটসাইডার্স।
আর এরপরই হাইলাইটেড হলো ব্রায়ানের ইমেজটি, এবং সেই ফিমেইল ভয়েস টি এবার বলে উঠলো,
— অ্যান্ড, ব্রায়ান উইলসন উয়্যিল ব্যি দ্যা নিয়্যু লিডার অব দ্যা ওয়ার্কার্স। ইটস অ্যান অর্ডার ফ্রম দ্যা কিং, নামীর আসওয়াদ দেমিয়ান।
ফিমেইল ভয়েসের কথা গুলো শেষ হয়ে যেতেই ব্রায়ান অবাক চোখে তাকালো শার্লটের দিকে৷ সে এখন থেকে ওয়ার্কার্স দের লিডার! এখনো কথাটা বিশ্বাস হচ্ছে না ওর! শার্লটের দিকে ও এখনো বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে! আর শার্লটের তো খুশিতে চোখে পানি চলে এসেছে। সে নিজের পাশে দাঁড়ানো ব্রায়ানের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে ওকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কান্না করে উঠলো! ব্রায়ান যে কখনো ওয়ার্কার্স দের লিডার হয়ে উঠতে পারবে সেটা সে কখনো স্বপ্নেও ভাবেনি। শিরো মিদোরিতে আসার পর এই প্রথম হয়তো এতটা খুশি হলো ও!
থিয়োডর এখনো কুরো আহমার থেকে ফেরেনি, এই নিউজ কানে যাওয়ার পর সে কি করবে সেটা ভেবেই উদ্বিগ্ন হচ্ছে অনেকে৷ তবে লিডার হিসেবে ব্রায়ান যে থিয়োডরের থেকে কোনো অংশে কম হবে না সেটাও সকলেই জানে, এমন মেধাবী আর যোগ্য কাউকে যে কেউই নিজেদের লিডার হিসেবে চাইবে৷
ওয়ার্কার্স এবং আউটসাইডার্স রা ব্রায়ান কে একে একে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। ব্রায়ানের এখনো যেন বিশ্বাস হচ্ছে না! ও এখনো অবিশ্বাসের চোখে সবার দিকে তাকাচ্ছে! যেন ও কোনো স্বপ্নের ভেতরে ডুবে আছে।
অ্যানা এখনো চেয়ারের কাছ টাতেই দাঁড়িয়ে আছে। ব্রায়ান আর শার্লটের এই টইটম্বুর হওয়া খুশির মুহুর্ত টা উপভোগ করছে ও।
শার্লট এখনো ভাইকে ছাড়েনি। সে এখনো বাচ্চাদের মতো করে কেদে চলেছে। ব্রায়ান মনে মনে নিজেকে নতুন লিডার হিসেবে ধাতস্থ করে নিয়ে মৃদু হেসে নিজের বুকের ওপর থাকা শার্লটের মাথায় একটা চুমু দিয়ে চুলের ওপর দিয়ে হাত বুলিয়ে দিলো, এরপর তার থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকা অ্যানার দিকে তাকালো ও। অ্যনার ওই কঠিন চোখ জোড়া চকচক করছে! সে চোখ জোড়ার দিকে তাকালেই বোঝা যাচ্ছে যে সেও খুশি হয়েছে অনেক।
অ্যানার দিকে তাকিয়েই ব্রায়ানের চোখের সামনে ভেসে উঠলো সুন্দর এক ভবিষ্যৎ! যেখানে আছে সে, অ্যানা, শার্লট, এবং তার আর অ্যানার ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চারা।
বাচ্চা গুলো ছোটাছুটি করে খেলে বেড়াচ্ছে, আর অ্যানা তার চিরাচরিত স্বভাব অনুযায়ী বাচ্চাদের কে চোখ গরম দিচ্ছে, নয়তো ধমকাচ্ছে; আর শার্লট অতি আদুরে ফুপ্পির মতো বাচ্চাদেরকে আগলে নিচ্ছে! দৃশ্য গুলো কতই না মধুর!
সে এখন এখানের লিডার, তার সামনে আর কোনো বাধা নেই। সে এখন অ্যানার যোগ্য! এখন নির্দ্বিধায় সে অ্যানা কে তার মনের ভেতরের সুপ্ত কথা গুলো বলে দিতে পারবে! ওই কঠিন মন টাকে নিজের আয়ত্তে এনে নরম করার জন্য ওর যে আর তর সইছে না!
কিন্তু এসবের মাঝেই ঘটলো আরও একটি ঘটনা। ভেসে ওঠা কম্পিউটার স্ক্রিন টাতে সে ফিমেইল ভয়েস টি আবার ও বলে উঠলো,
— অ্যাটেনশন!
ফিমেইল ভয়েস টি শোনা মাত্রই সমস্ত আউটসাইডার্স এবং ওয়ার্কার্স রা পুরোপুরি চুপ হয়ে গেলো আবারও। নিজেদের নিঃশ্বাসের শব্দ টাও অতি সন্তর্পণে নিতে লাগলো তারা৷ আর সকলে চুপ হওয়া মাত্রই কম্পিউটার স্ক্রিনে ভেসে উঠলো রুথের চেহারা টা।
রুথ কে কম্পিউটার স্ক্রিনে দেখা মাত্রই সবার ভেতর চাপা গুঞ্জন শুরু হলো। রুথ মেয়েটা দাঁড়িয়ে ছিলো মিটিং জোনের এক কোণায়, কম্পিউটার স্ক্রিনে নিজের চেহারা টা দেখার সাথে সাথে পিলে চমকে উঠলো ওর৷ ওর দ্বারা কোনো অপরাধ হয়ে গেলো কিনা ভুলবসত সেই আতঙ্কে হৃদযন্ত্রের গতি বেড়ে গেলো ওর। থতমত খেয়ে নিজের আশে পাশে এলোমেলো চোখে তাকাতে শুরু করলো ও, দেখলো সবাই আগের থেকেই ওর দিকে তাকিয়ে আছে৷ ঠিক সে সময়েই ফিমেল ভয়েস টি বলে উঠলো,
— রুথ টিনস্লেই, ফ্রম নাও অন উয়্যিল ব্যি অ্যা কনকিউবাইন অব দ্যা কিং, নামীর আসওয়াদ দেমিয়ান অ্যান্ড উয়্যিল স্ট্যেই ইন দ্যা প্যালেস; কংগ্রাটস।
কথা টা বলেই কম্পিউটার স্ক্রিন টা যেভাবে দৃশ্যমান হয়েছিলো ঠিক সেভাবেই অদৃশ্য হয়ে গেলো। আর সেটা অদৃশ্য হতেই আউটসাইডার্স আর ওয়ার্কার্স দের ভেতর হৈচৈ পড়ে গেলো পুরোদমে! রুথ এখন থেকে রাজপ্রাসাদে থাকবে! বাদশাহর খাস বাদী হবে সে! এর চেয়ে সৌভাগ্যের আর কি হতে পারে!
রুথ বাদশাহর খাস বাদী হবে জানা মাত্রই অন্যান্য মেয়েরা এসে এক প্রকার হুমড়ি খেয়ে পড়লো রুথের সামনে, চোখের পলকে জীবনের মোড় ঘুরে যাওয়ায় রুথের ভাগ্যের তারিফ করলো তারা৷ এমন একটা দিন দেখার জন্য কত মেয়েই না মুখিয়ে আছে! ওই শ্বেত পাথরের প্রাসাদের মেঝেতে পা রাখতে পারাটাও যে বিশাল সৌভাগ্যের ব্যাপার! রুথ যে এখন তাদের ধরা ছোয়ার বাইরে চলে যাবে! প্রাসাদে গিয়ে তো তার ভাগ্যই পরিবর্তন হয়ে যাবে! এমন ভাগ্য কজনের হয়!
রুথ কে অভিনন্দন জানাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো সবাই! আর বেচারি রুথের ব্যাপার টা বুঝে উঠতেই সময় লেগে গেলো! কিন্তু যখন তাকে অন্য মেয়েরা ভালো ভাবে বুঝিয়ে বলল, যে এখন থেকে সে রাজপ্রাসাদে থাকবে, এবং স্বয়ং বাদশাহর সাথে রাত কাটাবে, তার সুখ সমৃদ্ধির আর কোনো কমতি থাকবে না, আর কতশত মেয়ে তার এই অবস্থানে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে; তখন রুথের নিজের ভাগ্যের ওপর সত্যিই ভরসা হলো! সুন্দরী হওয়াটা যে তাকে এই রকম সৌভাগ্য এনে দিবে সেটা সে কল্পনাও করেনি কখনো!
ও প্রাসাদে দিয়ে বাদশাহর খাস দাসী হবে ভেবেই চোখে মুখে এক অদ্ভুত ঝিলিক ফুটে উঠলো ওর। মুহুর্তেই গর্বে বুক টা ভরে উঠলো! এখানে অবস্থিত সমস্ত নারী পুরুষের ভেতর সে এখন সেরা! তাকে বাদশাহ পছন্দ করেছেন! তার সম্মান এখানের অন্য সবার থেকে এখন অনেক অনেক গুন ওপরে! কিন্তু বাদশাহ তাকে পছন্দ করলেন কিভাবে! তাকে দেখলেনই বা কখন?
অ্যানা ভিড়ের ভেতর থেকে সরে গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো দূরে। পর পর দুইটা ব্লাস্টিং খবর শুনে সে মৃদু হাসলো, তারপর ধীর পায়ে মিটিং জোন থেকে বেরিয়ে কিচেনের দিকে যেতে যেতে নিজের রিস্ট ওয়াচটা অন করে সেখানের নোট প্যাডে ঢুকলো, তারপর একটা ফোল্ডারে গিয়ে টাইপ করলো,
— 06. Ruth Tinsley
আর নামটা টাইপ করেই নোট প্যাড থেকে বেরিয়ে এসে, রিস্ট ওয়াস টার স্ক্রিন অফ করে দ্রুত পায়ে কিচেনের দিকে চলে গেলো।
|
|
|
|
১৪. শিরো মিদোরি থেকে কুরো আহমারে যাওয়ার জন্য তৈরি পানি পথের প্রবেশ দ্বারে দাঁড়িয়ে আছে থিয়োডর৷ এই পানি পথ দিয়ে একবার গেলে বার বার যেতে ইচ্ছা করে৷ পানি পথের পুরোটাই পুরু, স্বচ্ছ কাঁচের তৈরি হওয়ায় পুরো রাস্তা টাই যেন মনে হয় কোনো সি ক্রিয়েচারের মিউজিয়াম৷ সে পথের চারপাশ দিয়ে, সমুদ্রের স্বচ্ছ, নীল পানির ভেতরে সাঁতরে বেড়ায় অসংখ্য প্রকারের, অসম্ভব রকমের সুন্দর আর অদ্ভুত সামুদ্রিক মাছের ঝাক এবং অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণী, সে যেন কোনো এক স্বপ্নের জগৎ!
পুরোটা রাস্তা থিয়োডর এইসব দেখতে দেখতেই এসেছে। কাছে তার স্টেলার পোস্টমর্টেম রিপোর্ট। এই রিপোর্টের জন্যই এইখানে তার দাঁড়ানো। চারপাশে গা ছমছমে ঘন জঙ্গল, জঙ্গলের ভেতর দিয়ে মাঝারি সাইজের গাড়ি যাওয়ার জন্য সরু রাস্তা। সে রাস্তার এক পাশের স্বল্প খোলা জায়গাতে দাঁড়িয়ে আছে থিয়োডর
পোস্টমর্টেম রিপোর্টে কি আছে সেটা সে এখনো জানে না। প্রধান রয়াল ইনভেস্টিগেটর হামজা আনাসের আদেশে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট টি কুরো আহমারের পোস্টমর্টেম রিপোর্টকারী ডাক্তার সিল গালা করে দিয়েছেন৷ হামজা আনাসের আগে যেন রিপোর্ট টি কেউ দেখতে না পারে তার জন্যই এই ব্যাবস্থা৷
কিছুক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করার পর অবশেষে হামজা আনাস আসলেন। তাদের জন্য আগে থেকেই সেখানে বসার ব্যাবস্থা করা হয়েছে, কিন্তু থিয়োডর এতক্ষন সম্মান প্রদর্শন পূর্বক হামজা আনাসের জন্য অপেক্ষা করছিল দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে।
হামজা আনাস এসেই সেখানে রাখা গোল টেবিলের একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লেন। থিয়োডরকেও ইশারা করলেন বসতে৷ ভদ্রলোকের বয়স পঞ্চাশের কোঠায়, কিন্তু কঠোর পরিশ্রম করার কারণে শরীরে মেদ জমতে পারেনি। এই বয়সেও খুব চমক দিচ্ছেন তিনি। তার ওপর রাজকীয় পোশাক আশাকের কারণে জেল্লা টা বেড়ে গেছে বহুগুণে।
বুদ্ধিদীপ্ত চোখ জোড়া দিয়ে তাকালেন তিনি থিয়োডরের দিকে৷ থিয়োডর হামজা আনাসের দৃষ্টি বুঝে পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট টা আনুগত্যের সাথে তার হাতে তুলে দিলো। হামজা আনাস চাইলেই রিপোর্ট টি অনলাইনে নিতে পারতেন। কিন্তু সাইবার নিরাপত্তার কারণে কাগজ কেই প্রেফার করেছেন তিনি। এখানের কোনো খবর কোনোভাবে বাইরে চলে গেলে সবার আগে তাকেই সমস্যায় পড়তে হবে৷
পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট টি হাতে নিয়ে তার সিল খুলে কাগজ টি বের করলেন হামজা আনাস। তারপর গভীর মনোযোগ দিয়ে রিপোর্ট টি দেখতে লেগে গেলেন তিনি। থিয়োডর অপেক্ষা করতে লাগলো তার রিপোর্ট টা পড়া শেষ হওয়ার আর হামজা আনাসের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো রিপোর্ট টা পড়ে তার মুখের অভিব্যক্তি দেখে কিছুটা হলেও রিপোর্টে কি লেখা আছে সেটা আন্দাজ করার জন্য।
হামজা আনাস বেশ সময় নিয়েই রিপোর্ট টি পড়লেন। মাঝে মাঝে নিজে নিজে রিপোর্ট টির বিভিন্ন তথ্য বুঝে মাথা নাড়লেন৷ এরপর রিপোর্ট টা পুরোপুরি পড়া শেষ করেই কাগজ টা একটানে ছিড়ে ফেললেন তিনি, তারপর থিয়োডর কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই নিজের পকেট থেকে লাইটার বের করে সে টুকরো করা কাগজ টা পুড়িয়ে দিলেন।
হামজা আনাসের এমন কান্ডে হতবাক হলো থিয়োডর! এইভাবে পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট টি নষ্ট করে ফেলার কারণ টা কোনো ভাবেই বোধগম্য হলো না তার৷ কাগজ টা পুড়ে পুরোপুরি নিঃশেষ হওয়ার পর হামজা আনাস এবার থিয়োডরের দিকে তাকালেন৷
— স্টেলা নামক মেয়েটার শরীরে এমন এক ধরনের ড্রাগস পাওয়া গেছে যেটা ধীরে ধীরে মানুষের হৃৎপিণ্ড আর মস্তিষ্ক আর পাকস্থলী কে বিকল করে দেয়। এমন ভাবে দেয় যে সেটা ভিকটিমের কাছে মৃত্যু যন্ত্রণার সমতুল্য মনে হয়। আর এই ড্রাগসের কারণে হৃৎপিন্ডের রক্ত সরবরাহ ক্ষমতা অর্ধেকে নেমে আসে, আর এরপর সেটা আরও কমতে কমতে ভিকটিম একসময় মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে৷
ওই হিসেবে স্টেলার মৃত্যু আরও কয়েক সপ্তাহ পরে হওয়ার কথা ছিলো, কিন্তু স্টেলার মৃত্যু হৃৎপিণ্ডের গতি কমে যাওয়ার কারণে হয়নি, হয়েছে ওর ফুসফুস বিকল হওয়ার কারণে৷ কিছু একটার কারণে ওর ফুসফুস টা কুচকে গিয়েছে, যেন কেউ একজন ফুসফুসটাকে নিজের হাতের মুঠির ভেতরে নিয়ে চেপে ধরেছে! যার কারণেই এত দ্রুত মারা গেছে সে, নইলে আরও কিছুদিন বেচে থাকতো বেচারি!
গম্ভীর, শান্ত কন্ঠে কথা গুলো বললেন হামজা আনাস৷ তার কথা শুনে চোখ কপালে উঠলো থিয়োডরের! স্টেলা কে ওই ড্রাগস কে দিবে, আর কেনই বা দিবে! আর ফুসফুস চেপে ধরেছে এর মানে কি! এটা আবার কিরকম রোগ? থিয়োডর কিছুক্ষণ চুপ থেকে এসব ভাবনা চিন্তা করে হামজা আনাস কে প্রশ্ন করলো,
— স্টেলা কে ওই ড্রাগস কে বা কারা দিয়েছে? আর এই ফুসফুসের ব্যাপার টাও কি ওই ড্রাগসের কারণে হয়েছে?
— না, ওই ড্রাগসের সাথে ফুসফুসের কোনো সম্পর্ক নেই। সেটা অন্য কোনো ভাবে হয়েছে।
হামজা আনাস থিয়োডরের প্রথম প্রশ্ন টাকে সম্পুর্ন উপেক্ষা করলেন, যেন তিনি শুনতেই পাননি। থিয়োডর এবার ভ্রু জোড়া কিঞ্চিৎ কুচকে জিজ্ঞেস করলো,
— কিন্তু আপনি রিপোর্ট টা পুড়িয়ে দিলেন কেন?
— এইটা যে একটা মার্ডার সেই ব্যাপার টা যেন কারো কানে না যায়! এবং আরও কিছু গুরুতর, গোপনীয় ব্যাপার আছে যেগুলো শুধুমাত্র আমাদের ভেতরেই সীমাবদ্ধ।
— তাহলে আমাকে বলে দিলেন যে!
হামজা আনাস নিজের চেয়ার টাতে নড়ে চড়ে বসলেন, তারপর বললেন,
— তুমি ওয়ার্কার্স দের লিডার ছিলে, তাই সাধারণ মানুষকে সতর্ক করার জন্য তোমাকে যতটুকু জানানোর প্রয়োজোন ছিলো জানিয়েছি। এটাকে তুমি নিছক অসুস্থতা বলে চালিয়ে দিবে। এখন তুমি আসতে পারো৷
থিয়োডর কিছুক্ষণ চুপ করে থম মেরে বসে থাকলো, ব্যাপার টা ওর কাছে সম্পুর্ন ঘোলাটে। কিন্তু তার কিছুই করার নেই। এনারা প্রাসাদের লোক, তাদের কে জেরা করতে যাওয়া মানে পানিতে থেকে কুমিরের সাথে যুদ্ধ করা! এর চেয়ে ভালো যা যেভাবে চলছে চলুক। এসব ভাবনা চিন্তা করতে করতে চেয়ার ছেড়ে উঠে যেতে গিয়েও আবার বসে পড়লো থিয়োডর, তারপর ভ্রু জোড়া কিঞ্চিৎ কুচকে জিজ্ঞেস করলো,
— লিডার ছিলাম বলতে! আমি এখনো ওয়ার্কার্স দের লিডার!
হামিজা আনাস হাসলেন মৃদু, তার সে হাসিতে কোনো শব্দ হলো না৷ তারপর চেয়ার ছেড়ে উঠে যেতে যেতে বললেন,
— ছিলে! এখন আর নেই। তোমাকে এখন আউটসাইডার্স দের লিডার বানানো হয়েছে।
— তাহলে ওয়ার্কার্স দের লিডার কাকে বানানো হয়েছে?
হামজা আনাসের দিকে অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকিয়ে কিছুটা উত্তেজিত সুরে প্রশ্ন টা করলো থিয়োডর। হামজা আনাস উঠে দাঁড়িয়ে নিজের পোশাক ঠিক করতে করতে বললেন,
— সেটা তুমি সেখানে গেলেই টের পাবে
কথা টা বলেই তিনি তার থেকে কিছুটা দুরত্বে থাকা গার্ড গুলোকে ইশারা করলেন৷ সাথে সাথেই তারা এসে একটা কালো, মোটা কাপড় দিয়ে থিয়োডরের চোখ বেধে দিলো৷ পানি পথ টা শিরো মিদোরির ঠিক কোথায় সেটা যেন শুধুমাত্র রয়াল পিপলস আর রাজকীয় কর্মচারী রা ছাড়া অন্য কোনো সাধারণ মানুষ কোনোভাবেই জানতে না পারে তার জন্যই এই ব্যাবস্থা৷
থিয়োডরের চোখ বাধা হয়ে গেলে তাকে নিয়ে গাড়িতে তুলে ওয়ার্কিং জোনে পৌছে দিয়ে আসার প্রস্তুতি চলতে লাগলো। থিয়োডর চোখ বাধা অবস্থায় গাড়িতে উঠে বসার পর হামজা আনাস এগিয়ে এলেন তার দিকে। তারপর গাড়ির প্রবেশ দ্বারে দাঁড়িয়ে, থিয়োডরের কাছাকাছি এসে তিনি বললেন,
— তোমাদের ওয়ার্কার্স দের ভেতরে একটা মেয়ে আছে, অ্যানা নাম তার। তার থেকে সাবধানে থেকো, আর অন্যদের কেও সাবধানে রেখো। আর হ্যা, তাকে কেউ কোনোভাবেই রাগাতে যেও না।
কথাটা বলেই হামজা আনাস ধীর পায়ে সেখান থেকে প্রস্থান করলেন। আর থিয়োডর চোখ বাধা অবস্থাতে গাড়ির ভেতর বসে হামজা আনাসের বলা শেষের কথা গুলো নিয়ে মাথার ভেতরে নাড়াচাড়া করতে শুরু করলো! উনি হঠাৎ অ্যানার কথা বললেন কেন? অ্যানাকে উনি কিভাবে চিনেন, আর এসবের সাথে অ্যানারই বা কি সম্পর্ক! তাহলে কি এই কাজগুলো অ্যানাই করেছে!?
গাড়ি ছেড়ে দিলো, আর থিয়োডরের মাথার ভেতর ঘুরপাক খেতে লাগলো হাজার খানেক প্রশ্ন!
চলবে……..
( আমার পাঠক রা মন্তব্য করতে চায় না, কষ্টে বুক টা ফেটে যায়! 🥹)