বাদশাহ_নামা #পর্বসংখ্যা_৬ #আ_মি_না

0
3

#বাদশাহ_নামা
#পর্বসংখ্যা_৬
#আ_মি_না

পরতে পরতে অবাক হতে লাগলো রুথ! এইখানে আসার আগেও সে শুনলো এই মেয়েটা নাকি ভাব ওয়ালি, তাকে নিয়ে কতজন কত কথা বলল! তারা যদি এই মেয়েটির এই রূপ একটাবারের জন্যও দেখতো তাহলে হয়তো অমন কথা কখনোই বলতো না!

সমুদ্রের কিনারে দাঁড়িয়ে নিজের ট্রাউজারের শেষের দিক টা কয়েকটা ভাজ করে হাটু অব্দি উঠালো অ্যানা, রুথ কেও ইশারায় এরকমটাই করতে বলল ও৷ ওর দেখেদেখি রুথও নিজের প্যান্টের শেষের দিক টা গুটিয়ে হাটুর উপরে উঠিয়ে ফেললো। রুথের প্যান্ট গুটানো শেষ হতেই আবারও ওর হাত ধরলো অ্যানা, তারপর ওর হাত ধরেই এক প্রকার টানতে টানতে সমুদ্রের ভেতরের দিকে নিয়ে যেতে লাগলো ও। যেতে যেতে সমুদ্রের পানি যখন প্যান্টের ভাজ ছুই ছুই হলো তখন থামলো৷ এরপর রুথের হাত ছেড়ে দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে অ্যানা বলল,

— রুথ, তুমি এখন যেখানে দাঁড়িয়ে আছো সেখান থেকে সব গুলো দ্বীপ কেই তুমি দেখতে পাবে৷ তবে একসাথে নয়, একটা একটা করে।

অ্যানার কথা টা রুথ ভালো ভাবে বুঝলো না, তারপরও পানির ভেতর দাঁড়িয়ে সমুদ্রের চারদিকে একবার চোখ বুলালো ও, কিন্তু ওর চোখে কিছুই বাধলো না। যতদূর চোখ যায় শুধু সমুদ্রের নীল আর নীল! চারদিক একবার চোখ বুলানো শেষে কিছুই দেখতে না পেয়ে প্রশ্ন পূর্ন চাহনি নিয়ে তাকালো রুথ অ্যানার পানে৷ অ্যানা তখন রুথের দিকে তাকিয়ে, রহস্যময় হাসি দিয়ে নিজের বাম হাতে রুথের ডান হাত টা ধরলো আবারও, তারপর বলল,

— এবার তাকাও।

অ্যানার কথা মতো রুথ আবারও তাকালো সামনের দিকে আর তাকাতেই হতভম্ব হয়ে গেলো ও৷ ওদের ডান দিকে, ওদের থেকে অনেক খানি দূরে, সমুদ্রের ভেতরে, সুউচ্চ বহুতল ভবনে পরিপূর্ণ একটি দ্বিপ দৃশ্যমান হয়ে আছে, যেটার বহুতল ভবন গুলোর আভিজাত্য এই দূর থেকেই টের পাওয়া যাচ্ছে। দূর থেকে সেটাকে কোনো অতিউন্নত নগরীর ন্যায় দেখাচ্ছে। বহুতল ভবন গুলোর গ্লাসি শরীরে সূর্যের আলো পড়ে চকচক করছে, চোখ ধাধিয়ে যাচ্ছে সেদিকে তাকালে। রুথ কে এইভাবে হতবাক দৃষ্টিতে সে চোখ ধাধানো দ্বীপের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে অ্যানা সামান্য ঝুকে রুথের কানের কাছাকাছি মুখ নিয়ে মৃদুস্বরে বলল,

— ওইটা হলো কুরো আহমার, শিরো মিদোরির পরেই সবচেয়ে উন্নত দ্বীপ ওইটি। ওইখানে পুরোটাই বিজনেস প্লাটফর্ম বলতে পারো, সবচেয়ে উন্নত স্কুল, কলেজ ভার্সিটি গুলোও ওখানেই। সব বড় বড় হসপিটাল, বড় বড় ইন্ডাস্ট্রি, কল কারখানা, ক্যামিক্যাল ল্যাব এভ্রিথিং সেখানে।

কথা টা শেষ করেই রুথের মাথা টা নিজের হাতের সাহায্যে ধরে ডান দিক থেকে সামান্য সামনের দিকে ঘুরিয়ে দিলো অ্যানা, আর রুথ কে অবাক করে দিয়ে কুরো আহমার নামক দ্বীপ টা চোখের সামনে থেকে নিমিষেই অদৃশ্য হয়ে গেলো, যেন এতক্ষণ সে কোনো হলোগ্রাম দেখছিলো! আর কুরো আহমার টা চোখের সামনে থেকে হারিয়ে যেতেই সে দ্বীপের অবস্থান থেকে বেশ কিছুটা দুরত্বে, রুথের চোখের সামনে ভেসে উঠলো অন্য একটা দ্বীপ। আর এমন অতিপ্রাকৃতিক ব্যাপার নিজের চোখের সামনে ঘটতে দেখে হতভম্ব চোখে সমুদ্রের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে অ্যানার মুখের দিকে তাকালো রুথ। আর রুথের এমন অবাক চেহারা দেখে অ্যানা মজা পেলো অনেক, মুখ টিপে হাসলো ও। তারপর মুখে বলল,

— আমাকে দেখার অনেক সময় পাবে, কিন্তু এই সুযোগ চলে গেলে আর কখনোই পাবে না, এখন সামনে তাকাও।

অ্যানার কথাতে সম্মোহীতের মতো আবারও সামনে তাকালো রুথ। এই দ্বীপ টিতে বড়ো বড়ো দালান কোঠার কোনো চিহ্ন নেই পুরোটাই মাঠের মতো সমতল, শুধু কিছু কিছু জায়গায় সুউচ্চ কিছু পাহাড়ের চুড়া দেখা যাচ্ছে৷ সে পাহাড় গুলো সবুজ রঙা গাছ পালায় পরিপূর্ণ, দূর থেকে মনে হচ্ছে সেখানের মাঠ ভর্তি ফসল, সে সোনালী ফসলের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে ঝড়ো বাতাস, আর সে বাতাসের প্রভাবে ঢেউ খেলে যাচ্ছে সোনা রঙের শস্যের ক্ষেতের ওপর দিয়ে। মুগ্ধ চোখে সে দ্বীপের দিকে তাকিয়ে রইলো রুথ। রুথের দিকে তাকিয়ে অ্যানা আবারও রুথের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,

— ওই দ্বীপ টির নাম হলো ওয়ারদিচা, পঞ্চদ্বীপের যাবতীয় খাদ্যসামগ্রীর কাচামাল ওইখানে উৎপাদিত হয়, আর এরপর সেগুলো সাপ্লাই হয় কুরো আহমারে। আর সেইখান থেকেই প্রক্রিয়াজাত কৃত খাবার গুলো বাকি সমস্ত দ্বীপে আবার বন্টন করা হয়। এই দ্বীপে যারা আছেন তাদের আশি শতাংশই কৃষক, আর বাকি বিশ শতাংশ এগ্রিকালচারে এক্সপার্ট ব্যাক্তিবর্গ এবিং অন্যান্য পেশার মানুষ জন।

অ্যানার কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই সে দ্বীপ টাও মুহুর্তেই চোখের সামনে থেকে অদৃশ্য হয়ে হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো, আর পরমুহুর্তেই অ্যানা রুথ কে এক টানে নিজের বাম পাশে নিয়ে এসে বলল,

— এইবার বামে তাকাও।

রুথের মুখ থেকে কোনো কথা বের হচ্ছে না, সে শুধু এই ভোজবাজি দেখেই যাচ্ছে। এখনো নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না ও! কিন্তু দ্বীপ গুলো তো হলোগ্রাম ও নয়! পুরোপুরি সত্যিকারের দ্বীপের মতোই তো দেখা গেলো, তাহলে সেগুলো চোখের পলকে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে কিভাবে? আর আবার সামনেই বা কিভাবে আসছে!

মাথার ভেতর এক ঝাক প্রশ্ন নিয়ে নিজের বাম দিকে তাকালো রুথ, আর তাকিয়েই ওয়ারদিচার মতোই আরও একটি দ্বীপ দেখতে পেলো ও, কিন্তু এটাতে পাহাড়ের সংখ্যা ওয়ারদিচার চাইতেও অনেক অনেক বেশি। সুউচ্চ সে পাহাড়ের চুড়া গুলোর ওপরে সাদা সাদা তুলোর পেজার মতো মেঘ জমে আছে, জমতে জমতে এক সময় সেগুলো বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়বে সমতলে। পাহাড় গুলোর শরীর অসংখ্য গাছপালা আর ঝোপঝাড়ে ঢাকা।
মেঘ ফুড়ে আকাশের দিকে উঠে যাওয়া সে অনিন্দ্য সুন্দর পাহাড় গুলো যেন দূর থেকেই হাতছানি দিয়ে ডাকছে ওদের, নিজের অপরূপ সৌন্দর্য দেখানোর জন্য৷ রুথ হা হয়ে তাকিয়ে রইলো সে মেঘ জমা পাহাড়ের চুড়ার দিকে। এইখানে আসলেই কি হচ্ছে সেটা ও এখনো বুঝে উঠতে পারছে না, ওর কাছে সবকিছুই কেমন যেন স্বপ্নের মতো লাগছে। যেন হুট করেই ঘুম টা ভেঙে যাবে তার, উঠে দেখবে সে তার নিজের তাবুর নরম বিছানায় শুয়ে আছে, আর এ সব কিছুই মিথ্যা ছিলো!

রুথ কে এমন পাথরের ন্যায় নিশ্চুপ হয়ে যেতে দেখে অ্যানা রুথের দিকে তাকালো এক পলক, তারপর আবারও রুথের দিকে ঝুকে এসে রুথ কে বলল,

— ওই যে দ্বীপ টি দেখছো, ওইটার নাম কিমালেব। পঞ্চদ্বীপের সমস্ত পোশাকের কাচামালের জোগান আসে ওই দ্বীপ থেকে। যদিও বেশ কিছু কলকারখানাও আছে সেখানে, স্থানীয়দের সুবিধার্থে। আর বাকি সমস্ত টুকুই পাহাড় আর পাহাড়! আর পঞ্চদ্বীপের এই পাহাড় গুলোই আমার আমার সবচেয়ে বেশি পছন্দের! সুযোগ থাকলে নিজের সারা টা জীবন ওই পাহাড়ের বুকেই আমি কাটিয়ে দিতে পারতাম, কিন্তু সেটা কখনোই সম্ভব নয়!

শেষের কথা গুলো বলতে গিয়ে অ্যানার চোখ জোড়া ঝিলিক দিয়ে উঠলো যেন! রুথ এতক্ষন অ্যানার দিকে তাকিয়ে ওর বলা কথা গুলো যেন গিলছিলো, অ্যনার চোখের ওই চমক খেয়াল করলো ও। অ্যানা ওই পাহাড়ের দিকে তাকিয়েই যেন হারিয়ে গেলো কোথাও, আনমনা হয়ে কোনো এক স্মৃতির পাতায় ডুব দিলো ও। অ্যানা কে এমন আনমনা দেখে রুথ নিজেও কিছুক্ষন কিমালেবের দিকে তাকিয়ে থেকে তারপর অ্যানার দিকে ফিরে, কিছুক্ষণ ইতস্তত করে, মনে সাহস সঞ্চয় করে জিজ্ঞেস করলো,

— চতুর্থ দ্বীপটা কিসের অ্যনা?

কিন্তু সে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগেই সমুদ্র পাড় থেকে কেউ উচ্চস্বরে অ্যানা” বলে ডেকে উঠলো। রুথ আর অ্যানা দুজনেই চমকে পেছন ফিরে তাকালো, আর সেই সাথে সাথে রুথের হাত টাও দ্রুততার সাথে ছেড়ে দিলো অ্যানা।

সাগর পাড়ে পিটার দাঁড়িয়ে আছে। অ্যানারা তাকাতেই সে আগের মতোই উচ্চস্বরে বলে উঠলো,

— অ্যানা! মিস্টার ব্রাউন তোমাকে ডেকেছেন! এখনি যেতে বলেছেন!

পিটারের কথার প্রতিউত্তরে অ্যানা নিজেও উচ্চস্বরে উত্তর দিলো,

— ঠিক আছে, আমি আসছি এখনি, তুমি ফিরে যাও৷

পিটার কে কথা টা বলেই অ্যানা রুথের হাত ধরে সাগর তীরের দিকে এগোতে এগোতে বলল,

— শিরো মিদোরির সবচেয়ে স্পেশাল দ্বীপ টি সম্পর্কে তোমাকে পরে একদিন বলবো, আবার যেদিন এমন সুযোগ হবে সেদিন৷ কিন্তু সেদিন তোমাকে আবারও সব গুলো দ্বীপকে প্রথম থেকেই দেখাতে হবে, কারণ এই তীরে ওঠার সাথে সাথেই এতক্ষণ যা যা দেখেছো তার সবই ভুলে যাবে তুমি।

অ্যানার এমন হেয়ালি কথার অর্থ না বুঝতে পেরে রুথ অবুঝের মতো তাকিয়ে রইলো অ্যানার পানে৷ সে কেন ভুলে যাবে এসব? তার যে অ্যানা কে অনেক অনেক প্রশ্ন করার আছে!
এই দ্বীপ গুলোকে সে কিভাবে দেখালো, সেগুলো কিভাবে মুহুর্তেই অদৃশ্য হয়ে আবার মুহুর্তেই দৃশ্যমান হলো, এ সব কিছুর কারণ জানার জন্য তো তার মনের ভেতর টা আকুপাকু করছে। সব কিছু তো তার চোখের সামনেই ঘটলো, তাহলে সে এসব কিভাবে ভুলে যাবে? কখনোই ভুলবে না!

কিন্তু রুথের এসব ভাবনা চিন্তার মাঝেই অ্যানার হাত ধরে সমুদ্রের ওই তীরে পা রাখার সাথে সাথেই রুথ ভুলে গেলো এতক্ষণের সব কিছু। নিজেকে পাথরের ওপরে বসা থেকে হঠাৎ করেই সাগরের পানির কিনারায় আবিষ্কার করে চমকালো রুথ, আর তার চাইতেও বেশি চমকালো অ্যানার হাতের ভেতরে নিজের হাত টা বন্দি থাকতে দেখে৷ ওই কঠোর চোখের দীর্ঘকায় মেয়েটি যে তার হাত ধরে আছে ব্যাপার টা ভাবতেই অবাকের চরম সীমায় পৌছে গেলো ও। এসব কখন হলো!

রুথের ওই ভীতসন্ত্রস্ত, অবাক চোখের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো অ্যানা, তারপর রুথের হাত টা ছেড়ে দিয়ে, ওকে সামনে এগিয়ে যেতে বলে, সমুদ্রের পানির ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে বালিয়াড়ির ভেতর পৌছে, ওয়ার্কিং জোনের উদ্দ্যেশ্যে পা বাড়াতেই নিজের ডান দিকের দূর সমুদ্রের কীনারা থেকে একটা ক্ষীন ম্যাও” ধ্বনি শুনলো অ্যানা ৷

চকিতে সেদিকে তাকালো ও। রুথ তাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছে কিছুটা। নিজের পেছনের ভারী ভারী পা ফেলার শব্দটা বন্ধ হয়ে যেতেই রুথ পেছন ফিরে তাকালো। অ্যানা কে তার ডান দিকের কোনো এক বস্তুর দিকে এক নাগাড়ে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সে নিজেও তাকালো অ্যানার ডান দিকে, আর সেদিকে তাকিয়েই শব্দ করে আঁতকে উঠলো রুথ।

পেটের বাম দিক টা খুবলে খাওয়া একটা মা বনবিড়াল নিজের ছোট্ট দুধের বাচ্চা কে মুখে করে, নিজের দুর্বল পা ফেলে ফেলে এগিয়ে আসছে অ্যানার দিকে৷ পেটের মারাত্মক জখম প্রাপ্ত স্থান টি থেকে সমুদ্র তীরের বালির ওপর রক্ত পড়ছে চুইয়ে চুইয়ে। ক্লান্ত অবসন্ন দেহ টা টেনে নিয়ে আসতে বিড়াল টা নিজের শরীরের বেচে থাকা সর্বশেষ শক্তি টুকুও ভেতর থেকে যেন নিংড়ে নিয়ে আসছে৷
বিড়াল টির এমন অবস্থা করুণ অবস্থা দেখে হতভম্ব হয়ে গেলো রুথ! নিশ্চই বনের কোনো হিংস্র প্রাণী এই বিড়াল টার ওপর হামলা করেছে!

অ্যানা বনবিড়াল টার এই জখম খেয়াল করতেই ছুটে চলে গেলো সেটার কাছে। আর অ্যানা কে এইভাবে নিজের দিকে আসতে দেখে বনবিড়াল টি দাঁড়িয়ে গিয়ে নিজের মুখ থেকে ছোট্ট বাচ্চা টিকে তীরের নরম বালিতে ফেলে দিলো, তারপর নিজের ক্লান্ত অবসন্ন দেহ টা এলিয়ে দিলো তীরের বালুরাশির ওপর। কন্ঠ থেকে এখনো তার ক্ষীন ম্যাও স্বর ভেসে আসছে৷
অ্যানা দৌড়ে গিয়ে ধপাস করে বসে পড়লো বিড়ালটির পাশে৷ বিড়াল টির এমন করুণ অবস্থা দেখে কান্না পেলো ওর ভিষণ! মৃতপ্রায় বিড়াল টি নিজের মুখের অগ্রভাগ দিয়ে বাচ্চা টিকে ঠেলে দিলো অ্যানার দিকে, যেন নিজের সন্তানের বাকি জীবনের দায়িত্ব টা সে তার এই চিরপরিচিত অ্যানা নামক মানবী টার নিকট সমর্পণ করে দিয়ে যেতে চাইছে!

অ্যানা মৃতপ্রায় বনবিড়াল টির দিকে আর একটু এগিয়ে গিয়ে নিজের বাম হাত টা ছুইয়ে দিলো বিড়ালটির মাথার ওপর, ছুইয়ে দিতেই বিড়ালটি পরম আবেশে নিজের চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলো, মুখ থেকে তার বেরিয়ে এলো একটি ক্ষীণ ম্যাও স্বর, আর সাথে সাথেই বাতাসের সাথে মিলিয়ে গেলো সে ক্ষীণ শব্দ টি। নিভু নিভু চোখ জোড়া চিরকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেলো, আর খুললো না। অ্যানা তখনও বিড়াল টিকে ধরে রইলো, বনবিড়াল টির এই নির্মম মৃত্যুতে চোখ থেকে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো ওর শুকনো বালির ওপর৷

আকাশে মেঘ জমতে শুরু করলো আস্তে আস্তে। অ্যানা মৃত বিড়াল টির মাথায় আর একবার হাত বুলিয়ে দিয়ে, বিড়াল টির গা ঘেঁষে কুটি কুটি পায়ে হেটে বেড়ানো, মিউ মিউ ধ্বনির উদ্রেক কারী তুলতুলে প্রানী টাকে নিজের কোলে তুলে নিলো। তারপর মৃত বিড়াল টার বুকের কাছের পা দুটির নিচে এক হাত দিয়ে, বিড়াল টিকে উচু করে উঠিয়ে নিলো বালি থেকে, আর এরপর হেটে হেটে সমুদ্রের কিছুটা ভেতরে গিয়ে সমুদ্রের নীল রঙা পানিতে ভাসিয়ে দিলো তাকে। সমুদ্রের উথাল-পাতাল ঢেউয়ের সাথে সাথে সমুদ্রের অতলে হারিয়ে হারিয়ে গেলো সে মৃত বনবিড়াল টির দেহাবশেষ।

বন বিড়াল টি পুরোপুরি চোখের আড়াল না হওয়া পর্যন্ত বেদনা পূর্ণ দৃষ্টিতে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে রইলো অ্যানা, আর বিড়াল টি চোখের আড়াল হতেই আবারও নিজের গন্তব্যের দিকে পা বাড়ালো ও। রুথ গেলো ওর পেছন পেছন।

অ্যানার কোলে থাকা তুলা বাচ্চা টি সদ্য মা হারিয়ে মিউ মিউ করে ডাকতে থাকলো। আর প্রতি টা কদম সামনে যেতে যেতে অ্যানার এতক্ষনের আলগা হয়ে থাকা চোয়াল টা আবারও শক্ত হতে শুরু করলো; মায়া ভরা সে সম্মোহনী দৃষ্টি জোড়া আবারও কঠিন থেকে কঠিনতর হতে শুরু করলো।

আকাশের মেঘ ঘনীভূত হতে হতে একসময় কালো বর্ণ ধারণ করলো নিমিষেই। আর অ্যানা ও রুথ জঙ্গল পার হয়ে টেন্টের কাছে পৌছাতে না পৌছাতেই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি শুরু হলো শিরো মিদোরিতে।
আর অ্যানার সমুদ্র তীরে আসার পর থেকে ঘটা সমস্ত ঘটনা গুলো দূরের কোনো এক অজানা অচেনা নির্রজনতা থেকে অবলোকন করলো জ্বলজ্বলে আগুন চোখের সেই রহস্যমানব টি।
|
|
|
|
|
৯. ঝুম বৃষ্টি শেষ হয়ে এখন ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে। আকাশে হঠাৎ করে তৈরি হওয়া ঘন কালো রঙা মেঘ এখন হালকা হতে শুরু করেছে। এক পশলা হঠাৎ বৃষ্টিতে শিরোমিদোরির হরেক রঙা পাতা ওয়ালা গাছ গুলোর রঙে যেন উজ্জলতা ফিরে এসেছে। ভেজা মাটির সেঁদো গন্ধে প্রাণ জুড়িয়ে যাচ্ছে।

শার্লট, ব্রায়ান সহ অন্যান্য ওয়ার্কার্স রা আউটসাইডার্স দের ডাইনিং এরিয়া ক্লিন করার কাজে ব্যাস্ত, হঠাৎ বৃষ্টি তাদের সব কাজে ব্যাঘাত ঘটিয়ে ফেলেছে। থিয়োডর বসে আছে ওয়ার্কার্স দের ডাইনিং এরিয়ার পাশে মিটিং জোনের কাঠের গুড়ির আসনে। অ্যানার অপেক্ষায় বেশ অনেক ক্ষণ ধরেই বসে আছে সে, বৃষ্টি নামার পরেও সেখান থেকে সে ওঠেনি, ঝুম বৃষ্টি তে ভিজেছে। তার ভেজা চুল গুলো বেয়ে থেকে থেকে টুপ টুপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে।

ব্রায়ান কাজের ফাকে ফাকে দূর থেকেই থিয়োডর কে তীক্ষ্ণ চোখে পর্যবেক্ষন করছে। সকাল থেকে এই নিয়ে তিনবার থিয়োডর তাদের কাছে অ্যানার খোজ করে গেছে। ওর কি এমন কাজ পড়েছে অ্যানার কাছে সেটাই এখন ব্রায়ানের ভাবনার প্রধান বিষয়।
শার্লটের কাছে ও একবার জিজ্ঞাসাও করেছে যে থিয়োডর কেন অ্যানার খোজ করেছে, কিন্তু শার্লট বলেছে যে সে নিজেও কিছু জানে না৷ ব্রায়ানের মনের ভেতর টা খচখচ করছে। ওই থিয়োডর কি মতলব নিয়ে যে সারাক্ষণ ঘুরে সেটা ও ঠাহর করার চেষ্টা করে সারাক্ষণ, কিন্তু এই থিয়োডর ঠাণ্ডা মাথার শয়তান, এর চোখ মুখ দেখে কিছুই বোঝার উপায় নেই৷

থিয়োডর মিটিং জোনে বসে বসে ব্রায়ানের চোখের দৃষ্টি খেয়াল কিরছে। কাজ বাদ দিয়ে ছেলেটা বার বার অমন কড়া চোখে তাকে কেন দেখে প্রায়ই সেটা সে কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারে৷ কিন্তু তাতে থিয়োডরের কিছুই যায় আসে না। সে এখানের লিডার, তাকে কড়া দৃষ্টি দিয়ে কোনো লাভ হবে না৷ সে তার কাজ করেই যাবে।

ব্রায়ান পরেরবার থিয়োডরের দিকে তাকাতেই থিয়োডর নিজেও ব্রায়ানের দিকে সোজাসুজি তাকালো। চোখাচোখি হলো দুজনেরই। কিন্তু কোনো এক নিরব আক্রোশের কারণে দুজনের কেউই একে অপরের চোখ থেকে দৃষ্টি সরালো না, একজন অপরজনের চোখের দিকে কঠিন চোখে তাকিয়ে রইলো। আর থিয়োডর কে দৃষ্টি সরাতে না দেখে ব্রায়ান নিজেও এবার কাজ বাদ দিয়ে, পুরোপুরি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থিয়োডরের দিকে তাকালো।

শার্লট নিজের ভাইকে হঠাৎ কাজ বাদ দিয়ে স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে যেতে দেখে ফিরে তাকালো৷ আর ফিরে তাকিয়েই ব্রায়ান কে থিয়োডরের দিকে এমন প্রতিদ্বন্দ্বিতার দৃষ্টিতে তাকাতে দেখেই অজানা এক শঙ্কায় বুকের ভেতর টা ধক করে উঠলো ওর৷ শুকনো ঢোক গিললো ও একটা।

থিয়োডর ওইভাবে তাকিয়ে থেকেই ব্রায়ান কে নিজের ডান হাতের দুই আঙুলের ইশারায়, নিঃশব্দে নিজের কাছে ডাকলো। ব্রায়ান নিজেও থিয়োডরের ওপর থেকে চোখ না সরিয়েই নিজের হাতের ভেজা কাপড় টি ডাইনিং টেবিলের চেয়ারের পিঠের ওপর রেখে সামনে এগিয়ে গেলো। থিয়োডরের দিকে যেতে যেতে নিজের দাঁতে দাঁত পিশলো ব্রায়ান, আর শার্লট সেটা স্পষ্ট দেখলো তার ভাইয়ের ওই শক্ত চোয়ালের ওপর দিয়ে।

লম্বায় থিয়োডরের থেকে ইঞ্চি দুয়েক বেশি ব্রায়ান, আর অ্যানার হাইটের সমান সে৷ থিয়োডরের শরীর টা পাতলা হলেও ব্রায়ানের সেটা নয়৷ মেদহীন শক্ত পোক্ত মজবুত শরীর ওর, থিয়োডরের গলা ধরে ধাক্কা দিলে থিয়োডর উড়ে গিয়ে পড়বে! কিন্তু থিয়োডর ওয়ার্কার্স দের লিডার, ক্ষমতার দিক থেকে ব্রায়ানের থেকে এক ধাপ ওপরে সে, তাই ব্রায়ানের এই মজবুত দেহ কে সে ভয় পায় না৷

ভারী ভারী পা ফেলে থিয়োডরের দিকে এগিয়ে চলল ব্রায়ান। তারপর থিয়োডরের একেবারে সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে, কঠিন চোখে তাকিয়ে গম্ভীর সুরে ও বলে উঠলো,

— জ্বি বলুন, মিস্টার ব্রাউন! আমি শুনছি।

ব্রায়ানের এমন অ্যাটিচিউড আর কথায় থিয়োডর কিছুক্ষণ শান্ত দৃষ্টিতে চুপ চাপ তাকিয়ে থাকলো ব্রায়ানের দিকে। তারপর ধীর, শান্ত কন্ঠে বলল,

— নিজের কাজে মন দাও ব্রায়ান। অন্যের কাজ কর্মের প্রতি মনোযোগ দিয়ে নিজের ভবিষ্যৎ নষ্ট করো না। তোমার একটা বোন আছে, তার দায়িত্ব পুরোটাই তোমার ওপর। তাই এমন কোনো কিছুতে নিজেকে ইনভলভ করো না যেটা ইন ফিউচারে তোমাকে পীড়া দিবে৷ নিজের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হওয়ার পরিবর্তে যেন অন্ধকারে নিমজ্জিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখো৷ এখন যেতে পারো।

ব্রায়ান কিছুই বলল না৷ চোয়াল শক্ত করে শুধু কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে রইলো থিয়োডরের দিকে, তারপর ঘুরে দাঁড়িয়ে আবার নিজের আগের জায়গায় যেতে নিলো, তখনই থিয়োডর পেছন থেকে ব্রায়ান কে নাম ধরে ডেকে আবারও বলে উঠলো

— আর শুনো! আমি এইখানের ওয়ার্কার্স দের লিডার, এইখানে সবকিছু আমার কথাতে চলে, এই কথাটা ভুলে যেয়োনা কখনোই, নইলে বিপদটা তোমারই হবে।

ব্রায়ান ঘাড় ঘুরিয়ে তীক্ষ্ণ চোখে থিয়োডর কে দেখলো কিছুক্ষণ। থিয়োডর এখনো তার দিকে শান্ত দৃষ্টিতেই তাকিয়ে আছে। শক্ত দৃষ্টি ফেলে আবার ও ব্রায়ান নিজের জায়গায় ফিরে যেতে পা বাড়ালো৷ নিজের অবস্থান পাকা পোক্ত করে একদিন এই থিয়োডর কে তার উপযুক্ত জায়গা ও দেখিয়ে দিবে, ততদিন পর্যন্ত ধৈর্য ধরে নিজেকে প্রচন্ড ভালোভাবে প্রস্তুত করা টাই এখন হবে ওর একমাত্র লক্ষ্য।

.

কোলের ভেতর তুলতুলে বিড়াল ছানাটা নিয়ে অ্যানা যখন মিটিং জোনে এসে পৌছালো ততক্ষণে ইলশে গুড়িও থেমে গেছে। থিয়োডর এখনো আগের জায়গাতেই বসে আছে। পরনের হাফ হাতা ভেজা টি শার্ট টা খুলে রেখে দিয়েছে এক পাশে। ওয়ার্কার্স দের ডাইনিং এরিয়া পার হয়ে হেটে এসে অ্যানা দাড়ালো থিয়োডরের সামনে। থিয়োডর ওকে দেখেই নিজের বিপরীতে বসতে বলল। অ্যানা বসার পর থিয়োডর মৃদু কন্ঠে বলল,

— ফাতমার থেকে শুনেছি যে তোমার ক্ষত গুলো পুরোপুরি সেরে উঠেছে। ব্যাপার টা শুনে আমি খুবই অবাক হয়েছি। তবে যেভাবেই হোক, তোমার ক্ষত গুলো যে সেরে উঠেছে তাতেই আমি খুশি। তারপর শুনলাম সকালের রান্না টাও তুমি একা হাতেই করে ফেলেছো। এতটা চাপ নিয়ো না। আমি তোমার জন্য আর ও দুজন সহোযোগির ব্যাবস্থা করতে শুরু করেছি। রান্না বান্নায় বা এ সম্পর্কিত কাজ গুলোতে পারদর্শী কয়েক জনকে আমি ইতোমধ্যে খুজে ফেলেছি, কাল অথবা পরশুর ভেতরে তারা তোমার সাথে যোগ দিবে। আজকের দিন টা একটু কষ্ট করো শুধু!

অ্যানা মাথা নাড়িয়ে শান্ত কিন্তু দৃঢ় গলায় বলল,

— আপনি চিন্তা করবেন না মিস্টার ব্রাউন। আমি সব কিছু সামলে নিবো। অতিরিক্ত সহোযোগীর কোনো প্রয়োজন হবে না।

অ্যানার কথাটা শুনলো থিয়োডর, তারপর অ্যানার কোলে থাকা বিড়ালের বাচ্চাটার দিকে ইশারা করে থিয়োডর জিজ্ঞেস করলো,

— কোথায় পেলে ওকে?

অ্যানা থিয়োডরের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বাচ্চাটির দিকে চোখ নামিয়ে একপলক তাকিয়ে আবার থিয়োডরের দিকে তাকিয়ে বলল,

— সমুদ্রের পাড়ে পেয়েছি ওকে, মা মারা গেছে ওর!

অ্যানার কথার উত্তরে থিয়োডর আর কিছুই বলল না, পরম মমতার সাথে চেয়ে রইলো অ্যানার চোখ জোড়ার দিকে। এই মেয়েটিকে দেখে বাইরে থেকে যতোটা কঠিন মনে হয় তার কিছুই সে নয়! থিয়োডর দেখেছে অনেক বার, অ্যানার সেই কঠিন চোখের আড়ালে থাকা মায়া ভরা দৃষ্টি। আর তারপর থেকেই সে বিশ্বাস করে অ্যানার এই শক্ত ব্যাক্তিত্ব একটা খোলশ মাত্র! আদতে সে মায়া মমতা দ্বারা পরিপূর্ণ এক রমণী।

অ্যানা এক পলক থিয়োডরের দিকে তাকালো, কিন্তু থিয়োডরের অমন দৃষ্টি দেখে চোখ ফিরিয়ে নিলো সাথে সাথেই। এই লোকটা এমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে সবসময় কেন তাকিয়ে থাকে মাথায় আসেনা ওর৷ প্রচুর বিরক্ত লাগলো অ্যানার। ভ্রু জোড়া কুচকে নিয়ে সে মাটির দিকে দৃষ্টি দিয়ে বসা থেকে উঠে দাড়াতে দাড়াতে বলল,

— অনুমতি দিলে আমি যেতে চাই মাস্টার ব্রাউন, আমাকে দুপুরের খাবার রান্নার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।

মোহাবিষ্ট হয়ে থাকা থিয়োডর যেন সম্বিত ফিরে পেলো অ্যানার কথায়। দ্রুত গতিতে মাথা নাড়িয়ে বলল,

— হ্যা হ্যা, ঠিক আছে, যাও, রান্নার প্রস্তুতি নাও।

অ্যানা আর কোনো কিছুর অপেক্ষা না করেই নিজের চোখ জোড়াতে বিরক্তি ফুটিয়ে বিড়ালের বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে চলে গেলো কিচেনের দিকে।

আর অ্যানার থিয়োডরের ওই দৃষ্টি কে এইভাবে উপেক্ষা করার ব্যাপার টা দূর থেকেই প্রচন্ড রকম উপভোগ করলো ব্রায়ান। ঠোটের কোণে বিজয়ীর হাসি ফুটে উঠলো ওর। মনে মনে ও বলে উঠলো,

— দ্যাট’স মায় গার্ল!

১০. গভীর নিশুতি রাত। সমগ্র পঞ্চদ্বীপ বাসি গভীর ঘুমে নিমগ্ন। আকাশে থালার মতো বড় চকচকা চাঁদ, তার উজ্জ্বল আলোয় চমক খেলে যাচ্ছে সাগরের নীলচে ঢেউয়ে। রাতের নিস্তব্ধতাকে ছাড়িয়ে ভেসে আসছে বিশাল সমুদ্রের সে গুরুগম্ভীর গর্জন।

মৃদু মন্দ বাতাস বইছে চারদিকে। শিরো মিদোরির জঙ্গলের গাছ গুলোর রঙিন পাতার আড়ালে উড়ে উড়ে খেলে বেড়াচ্ছে শয়ে শয়ে উজ্জ্বল জোনাকি পোকা। থেকে থেকে শেয়াল আর নেকড়ের ক্ষুধার্ত চিৎকার ভেসে আসছে দূরের জঙ্গলের গভীর থেকে৷ স্টেলার শরীর টা মোটেও ভালো লাগছে না।
অ্যানা কে ক্রিস্টিনার সাথে মিলে মারার পর দিন রাতে, আধো ঘুমে আধো জাগরনে নিজের কামরায় কাকে যেন দেখেছিলো ও। মুখোশ ধারী কেউ এসে তার ডান হাতের কনুইয়ের সম্মুখভাগের শিরাতে ইঞ্জেকশনের সাহায্যে কিছু একটা পুশ করে দিয়েছিলো। সকালে ঘুম ভাঙার পর সেটাকে নিছক স্বপ্ন মনে করে স্টেলা, কিন্তু গোসলের সময়ে নিজের কনুইতে সুক্ষ্ম একটা ছিদ্র দেখতে পায় সে, আর তার পর থেকেই তার শরীর টা খারাপ হতে শুরু করেছে।
প্রথম দিন কয়েক বার বমি করার পর হঠাৎ করেই রক্তবমি শুরু হয় তার! আর তারপর থেকে রক্তবমি হয়েই চলেছে দিনে কয়েকবার করে৷ হেকিম ফাতমা এসে তাকে দেখে গেছে, কিন্তু ফাতমা কিছুই বুঝতে পারছে না আসলেই কি হচ্ছে স্টেলার! তাই স্টেলা কে আজকের রাত টা পোহালেই থিয়োডর কুরো আহমারে নিয়ে যাবে। রাজ প্রাসাদে সব চেয়ে অভিজ্ঞ আর দক্ষ হেকিম থাকলেও তাদের মতো সাধারণের চিকিৎসা তো আর সেখানে হবে না!

স্টেলার ঘুম আসছে না! সমস্ত শরীরে অসম্ভব রকম যন্ত্রনা করছে, মনে হচ্ছে যেন সমস্ত শরীরে কেউ একশো ধারালো সূচের অগ্রভাগ দিয়ে প্রতিনিয়ত আঘাত করে চলেছে। প্রচন্ড পানি পিপাসা পাচ্ছে তার, কিন্তু সে পানি খেতে পারছে না! কিছু খেলেই তার রক্তবমি হচ্ছে। পাকস্থলি থেকে গলা পর্যন্ত সবকিছু যেন আগুনে ঝলসে যাচ্ছে তার! বিছানায় কিছুক্ষণ ছটফট করে স্টেলা অনেক কষ্টে উঠে বসলো৷ কয়েকদিন ধরে রক্ত বমি করে তার শরীর টা পুরোপুরি ফ্যাকাসে বর্ণ ধারণ করেছে৷ গায়ে সামান্য শক্তিও আর অনুভব করছে না স্টেলা।

অনেক কষ্টের পর নিজেকে ধাতস্থ করে নিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠলো ও৷ তারপর বিছানার নিকট থেকে দুর্বল পায়ে হেটে টেবিলের কাছে গিয়ে, টেবিলের ওপর রাখা পানির পাত্র থেকে পাশে থাকা গ্লাসে কিছুটা পানি ঢাললো, কিন্তু পানি টা তুলে মুখে দিতে যাবে তার আগেই তার মাঞ্জারের দরজার ঠিক বাইরে থেকে কেউ একজন হাড়হিম করা ফিসফিসে গলায় ডেকে উঠলো,

— স্টেলা!

( বেশি বেশি কমেন্ট করবেন, নইলে কিন্তু আর লিখবো না 🥹)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here