বাদশাহ_নামা #পর্বসংখ্যা_১৭ #আ_মি_না

0
3

#বাদশাহ_নামা
#পর্বসংখ্যা_১৭
#আ_মি_না

(গল্পের প্রয়োজনে কিছু ইনঅ্যাপ্রোপ্রিয়েট ওয়ার্ডস আর সিন রাখা হয়েছে, যাদের অস্বস্তি হয় তারা এই পর্ব টা স্কিপ করতে পারেন)

নিজের চিরচেনা ডাকনাম টা শুনে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো অ্যানা৷ তারপর নিজের পেছনে, লাইফ ট্রি এর সাথে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা সুঠাম দেহের অধিকারী ব্যাক্তিটির উদ্দ্যেশ্যে তার দিকে না তাকিয়েই কঠিন গলায় প্রশ্ন করলো,

— কেন এসেছেন আপনি?

লাইফ ট্রির নিকট থেকে সরে, ধীর অথচ ভারী পায়ে হেটে, ডোবার পাশে অ্যানার বিপরীত দিকে এসে দাড়ালো নামীর। তারপর নিজের পূর্ণ দৃষ্টি ফেললো অ্যানার মুখের ওপর। অ্যানার শক্ত হয়ে থাকা চোয়ালদ্বয় আর তির্যক চোখের চাহনি দেখে মিষ্টি করে হাসলো নামীর। তারপর নিজের গায়ের সাদা ফিনফিনা বাটনলেস পাতলা শার্ট টা খুলে ছুড়ে ফেলে দিলো এক পাশে, দৃষ্টি গোচর হলো ওর পেশিবহুল, ইস্পাত-দৃঢ় দেহ টা, আর সেই সাথে বেরিয়ে এলো ওর দুই হাতের কব্জির ওপর থেকে কনুই পর্যন্ত থাকা দুইটি কালো রঙা বাঘের আকৃতির প্রতিচ্ছবি, যেন কেউ সেটা ওর দুহাতের চামড়ার সাথে সিল করে দিয়েছে!

নিজের দৃষ্টি অ্যানার দিকে রেখেই নিজের পরণের ছাই রঙা প্যান্ট টা খুলে শার্টের কাছাকাছি ছুড়ে ফেললো নামীর, তারপর পুরোপুরি অনাবৃত হয়ে, ডোবার পাড়ে দুই হাত ঠেকিয়ে বাকি শরীর টা পানির ভেতরে ডুবিয়ে রাখা অ্যানার বিপরীত দিকের ডোবার পানিতে নেমে পড়লো সে। আর তারপর নিজেও ডোবার পাড়ের মাটিতে দুই হাত ঠেকিয়ে বুকের নিম্নভাগের শরীর টা পানিতে ডুবিয়ে ধীর, গমগমে কন্ঠে বলে উঠলো,

— তোমাকে দেখতে এসেছি, জানোই তো কিছুদিন পর পর তোমাকে না দেখলে আমার ঘুম আসে না!

অ্যানা নিজের ডান ভ্রু টা সামান্য উচু করে তাচ্ছিল্যভরে প্রশ্ন করলো,

— স্বার্থ?

— যদি ভাবো তাই, তবে তাই!

আগের মতো করেই মিষ্টি হেসে উত্তর করলো নামীর। অ্যানা ভ্রু জোড়া কিঞ্চিৎ কুঞ্চিত করে কড়া গলায় বলে উঠলো,

— আমার সামনে এমন অসভ্যের মতো পোশাক আশাক খুলে আসার মানে কি?

অ্যানার প্রশ্নে শব্দ করে হেসে উঠলো নামীর, তারপর বলল,

— ফিফটি স্যাভেন ইয়ারস এর বৈবাহিক সম্পর্কের পর নিজের বউ এর সামনে পোশাক আশাক খুলে দাঁড়ানোয় আমি অসভ্য হয়ে গেলাম! ইন্টরেস্টিং…..

কথা গুলো বলেই নামীর ডোবার কিনারা থেকে এগিয়ে আসতে গেলো অ্যানার দিকে, কিন্তু অ্যানা সাথে সাথেই তার লম্বা পা জোড়ার একটা উচু করে তার দিকে সাতরে আসা নামীরের দিকে এগিয়ে দিয়ে গর্জে উঠে বলল,

— ভুলেও আমার কাছে আসার চেষ্টা করবে না, নইলে কিন্তু তোমাকে আমি খুন করবো!

অ্যানার নরম পায়ের দ্বারা বুকের মাঝখানটায় বাধা প্রাপ্ত হয়ে, স্মিত হেসে নামীর বলল,

— এতটুকু এসেই আপনি থেকে তুমি তে প্রোমোশন করিয়ে ফেলেছি, ভালো লাগছে!

আর এ কথা টা বলেই নিজের ডান হাত টা দিয়ে ডোবার পানিটা সজোরে একবার নাড়িয়ে দিলো নামীর; ওর সে হাতের আঘাতে বিশাল ঢেউ খেলে গেলো ডোবার পানিতে৷ আর সে ঢেউ গিয়ে অ্যানার শরীরে আছড়ে পড়ে অ্যানা কে নিজের সাথে বয়ে নিয়ে এসে সজোরে আছড়ে পড়লো নামীরের বুকে৷ নামীর তড়িৎ গতিতে দুহাতে আগলে নিলো অ্যানাকে, তারপর মুখে দুষ্টু হাসি ফুটিয়ে বলে উঠলো,

— আমি কিন্তু তোমার কাছে যাওয়ার একদমই চেষ্টা করিনি, তুমিই নিজেই এসেছো। তাই এখানে আমার কোনো দোষ নেই!

অ্যানা নামীরের বাহুবন্ধনী থেকে নিজেকে মুক্ত করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করতে করতে দাঁতে দাঁত পিষে বলল,

— মীর, আমাকে ছেড়ে দাও! মোটেই আমাকে স্পর্শ করার চেষ্টা করবে না তুমি! নইলে কিন্তু আমি নিজেকে শেষ করে দেবো!

কিন্তু প্রাণপণ চেষ্টা করা সত্বেও নামীরের একটা আঙুলও নিজের থেকে ছাড়াতে পারলো না অ্যানা৷ নামীর অ্যানাকে নিজের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে শান্ত কন্ঠে বলে উঠলো,

— আমার কথা শোনো শিনজো!

— আমি তোমার কোনো কথাই শুনতে চাই না!

আগের মতো করেই নামীরের হাত দুখানা ছাড়ানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে করতে উত্তর দিলো অ্যানা। নামীর অ্যানা কে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নরম গলায় বলে উঠলো,

— সব কিছু জেনে শুনেও এমন করার অর্থ কি শিনজো! তুমি আমার কাছে আসা সব গুলো দাসী কে একে একে খুন করেছো! আমি তোমাকে তারজন্য কোনোদিন কিছুই বলিনি, ইভেন তোমাকে এতটুকু প্রশ্নও করিনি যে তুমি তাদেরকে কেন খুন করেছো! কিন্তু শেষ বার তুমি যাকে খুন করেছো তার গর্ভে আমার অংশ ছিলো, রাজপরিবারের সন্তান ছিলো তার গর্ভে। তুমি সবই জানতে তারপরও তুমি তাকে খুন করেছো! রাজপরিবারের আগত, অনাগত যে কাউকে খুন করার কথা কল্পনা করলেও সেই অপরাধের শাস্তি একমাত্র মৃত্যুদণ্ড। কিন্তু তোমাকে আমি ক্ষমা করে দিয়েছিলাম, কিছুদিনের জন্য শুধু ঘরবন্দী করে রেখেছিলাম তোমাকে! কিন্তু তুমি শান্ত হওয়ার পরিবর্তে হয়ে উঠলে আরও হিংস্র! আমার হেরেমের নিরাপরাধ দাসীদের কয়েকজন কে খুন করলে, যারা কখনো আমাকে চোখেও দেখেনি তাদের কে! আর এরপর কোনো উপায় না পেয়ে তোমাকে আমি এখানে পাঠিয়ে দিলাম! কিন্তু এখনো তুমি শান্ত হওনি! দয়া করে আমার কথা শোনো শিনজো! এরকম কোরো না!

নিজের কোমরে জড়ানো নামীরের হাত জোড়া ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালাতে চালাতে অ্যানা বাঘিনীর ন্যায় গর্জে উঠে বলল,

— শান্ত হবো না আমি! আর না তোমার কোনো কথা শুনবো! আমি ছাড়া অন্য কারো গর্ভে তোমার সন্তান আসবে না! তোমার ধারে কাছে যেই আসবে তাকেই আমি শেষ করে দেবো! তুমি আমাকে ছেড়ে দাও, এখনি, এই মুহুর্তে!

নামীর ধীর গতিতে আলগা করে দিলো নিজের বাহুবন্ধনী, আর নামীরের বন্ধন আলগা হতেই অ্যানা ঝড়ের গতিতে নামীরের থেকে দূরে সরে গিয়ে ক্রোধের দাপটে কেঁপে উঠতে থাকলো ক্ষণে ক্ষণে! ওর ক্রোধান্বিত সে চেহারায় নির্মল দৃষ্টি ফেলে নামীর বলে উঠলো,

— ঠিক আছে, পুরোনো দিনে ফেরা যাক! লেটস ফাইট। যে উইনার হবে, সে যা চাইবে তাই হবে! যদি আমি উইনার হই তবে আমি যা বলবো তুমি তাই শুনবে, আর যদি তুমি উইনার হও তবে তুমি যা চাইবে আমি তাই করবো। ডিল?

শেষোক্ত কথা টা বলে নিজের হাত খানা অ্যানার দিকে বাড়িয়ে দিলো নামীর। কিন্তু অ্যানা নামীরের হাতের সাথে হাত মেলালো না, এক পলক ওর হাতের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ তুলে নামীরের চোখের দিকে তাকিয়ে উত্তর করল,

— ডিল।

— ওখেই দ্যেন, লেটস ড্যু ইট!

কথা টা বলে নিজের হাত দুখানা দুপাশে মেলে ধরলো নামীর, আর হাত মেলে ধরতেই পানির ভেতর থেকে শরীরটা সোজা হয়েই বাতাসে ভেসে উঠলো ওর! আর এরপর নিজের হাতের থাবা জোড়া তড়িৎ গতিতে মুষ্টিবদ্ধ করতেই ওর হাতের কব্জির উপরিভাগে থাকা কালো রঙা বাঘের অবয়ব জোড়া দপ করে জ্বলে উঠলো, আর পরমুহূর্তেই সে কালো রঙ টা স্বর্ণালি আভা ছড়িয়ে বিদ্যুৎ বেগে ছড়িতে পড়লো ওর সমস্ত শরীরে, আর সেটা পরিণত হলো কালো আর সোনালি রঙের মিশেলের এক অসম্ভব সুন্দর নকশাদারা মেটালের আর্মরে, যেটা ঢেকে দিলো নামীরের মুখমণ্ডল সহ ওর সমস্ত শরীর টাকে। শুধু অনাবৃত হয়ে রইলো ওর আগুনের লেলিহান শিখার ন্যায় চোখ জোড়া!

আর এরপর শুণ্যে ভাসা অবস্থাতেই নিজের তর্জনী আর মধ্যমা দারা অ্যানাকে ইশারায় নিজের দিকে ডেকে ফাইটে অংশ নিতে বলল নামীর। নামীরের ইশারায় তীর্যক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বাকা হাসলো অ্যানা। এরপর ধীর গতিতে ডোবার পানির ভেতরে নিজের শরীরের বাকি অংশ টাও ডুবিয়ে দিলো। আর কয়েক সেকেন্ডের ভেতরেই সে ডোবার ঠিক মাঝাখানের পানি ঘুল্লি খেতে খেতে তৈরি করে ফেললো একটি ওয়াটার হোল, আর পরমুহূর্তেই সে ওয়াটার হোলের ভেতর থেকে ঝড় উঠিয়ে বিদ্যুৎ বেগে শুণ্যে উঠে এলো অ্যানা।

ওর সাদা রঙা লম্বা চুল গুলো তড়িৎ গতির প্রভাবে টান টান হয়ে উড়তে লাগলো বাতাসে। আর সেই মুহুর্তেই নিজের ডান হাত টা মুষ্টিবদ্ধ করে নিজের বুকে একটা আঘাত করলো অ্যানা৷ আর আঘাত করতেই সে বুকের কাছ থেকে বেরিয়ে এলো একটা ছোট্ট সাদা রঙা মেটালিক বল। সে বলটা বের হয়েই ওর অর্ধনগ্ন দেহের সমস্ত পরতে পরতে প্রসারিত হতে হতে ওকে আবৃত করে দিতে থাকলো সাদা আর সোনালি রঙা এক নকশাদার মেটালের আর্মরে! সেটা অ্যানার সুডৌল বুক থেকে শুরু করে ওর দুই হাতের অগ্রভাগ পর্যন্ত প্রসারিত হয়ে, ওর লম্বা লম্বা পা জোড়ার অগ্রভাগ থেকে আবৃত হতে হতে এসে ঠেকলো ওর হাই হিপে। মেদহীন সরু কোমর আর পেট টা উন্মুক্ত রইলো শুধু।

আর আর্মর টা ওর শরীরে পুরোপুরি সেট হওয়া মাত্রই আর্মরের কোমর আর পিঠের নিকট থেকে বেরিয়ে এলো সাদা রঙা জমিনের ওপর সোনালি নকশার, চিকন সোনালি পাড়ের, চওড়া ফিনফিনা এক ফাইবারের আবরণ। যেটা অ্যানার পায়ের নিম্নভাগ পর্যন্ত গিয়ে চারপাশ থেকে আবৃত করে দিলো ওর লম্বা, সুন্দর, আর্মরে ডাকা পা দুখানা৷

পুরোপুরি প্রস্তুত হওয়ার পর যুদ্ধের আহবান জানিয়ে নামীরের চোখে সরাসরি চোখ রাখলো অ্যানা৷ আর অ্যানার চোখে চোখ পড়া মাত্রই এতক্ষণ শূণ্যে দাঁড়িয়ে নিজের প্রিয়তমা কে প্রস্তুত হতে দেখা নামীর নেশালো কন্ঠে বলে উঠলো,

— স্যো স্যেক্সি!

কিন্তু নামীর দ্বিতীয় কোনো কথা বলার আগেই তড়িৎ গতিতে নিজের দুইহাত প্রসারিত করলো অ্যানা, আর মুহুর্তেই ওর দু হাতের আর্মরের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো দুইটা ধারালো, চকচকা, সোনালি নকশার হাতলের সৌর্ড। আর এরপর নামীর কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঝড়ের গতিতে নামীর কে আক্রমণ করতে ছুটে গেলো ও৷ আর অ্যানার সে ধারালো সৌর্ডের তীক্ষ্ণ অগ্রভাগ নামীরের শরীর স্পর্শ করার ঠিক আগ মুহুর্তেই নিজের জায়গা থেকে বিদ্যুৎ বেগে সরে গেলো নামীর। অ্যাটাক টা মিস হওয়ায় নামীর কে পার হয়ে নামীরের পেছনে চলে গেলো অ্যানা৷

আর অ্যানা পেছনে চলে যাওয়ার পরপরই নামীর নিজেও প্রাসারিত করে দিলো ওর হাত দুখানা, আর সাথে সাথেই ওর দুই হাতের আর্মরের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো দুইটা কালো রঙা অস্বাভাবিক ধারালো সৌর্ড।
অ্যানা ঘুরে দাঁড়িয়ে আবারও ঝড়ের বেগে ছুটে এলো নামীরের দিকে, আর নামীর অ্যানা কে এভাবে এগিয়ে আসতে দেখেই নিজের দুহাতের সৌর্ড দুখানা শূণ্যে ঘুরিয়ে ছুড়ে মেরে সাথে সাথেই দক্ষ হাতে ধরে ফেললো আবার!

আর অ্যানা এসে নিজের সৌর্ড জোড়া দিয়ে নামীর কে আঘাত করতেই নিজের সৌর্ড জোড়া দিয়ে সে আক্রমণ ঠেকিয়ে দিলো নামীর৷ অ্যানা এবার তড়িৎ গতিতে একের পর এক শক্তিশালি আঘাতে জর্জরিত করে দিতে থাকলো নামীর কে! কিন্তু নামীরের কোনো হেল দোল হলো না তাতে নিজের জায়গায় স্থীর হয়ে দাঁড়িয়ে চারপাশ থেকে আসা অ্যানার সৌর্ডের উপর্যুপরি আঘাত গুলো নিজের সৌর্ড দুইটা দিয়ে অসম্ভব রকম দক্ষ হাতে ঠেকাতে ঠেকাতে শান্ত কন্ঠে অ্যানার উদ্দ্যেশ্যে ও বলে উঠলো,

— আমি যদি উইনার হই, তবে তুমি আর কাউকে খুন করতে পারবে না, আমি যেটা বলব সেটা মেনে নিবে৷ আমার সাথে থাকবে, ভালো ভাবে! তাহলে তোমার পূর্বে করা কোনো অপরাধই আমি মনে রাখবো না। ওরা সাধারণ দাসী, ওরা বাচবেই বা কয়দিন, আমার শুধু আমার বংশ কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য একজন সন্তান চাই। যেটা তোমার থেকে নেওয়া মানে তোমাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া, আর এইটা আমি কখনোই পারবো না। আমার একটা সুস্থসবল সন্তান হলেই চলবে শিনজো! সেই পর্যন্ত তুমি একটু শান্ত থাকো প্লিজ!

অ্যানা ক্ষিপ্রগতিতে নামীরের ওপর আঘাতের ঝড় বইয়ে দিতে দিতে উচ্চস্বরে গর্জে উঠে বলল,

— যদি আমার মৃত্যুর আশংকা থাকতই তবে লাইফ ট্রি আমাকে তোমার করতো না কখনই! কত হাজার বছর আগে কার কি হয়েছে সেটা ধরে বসে থেকে আমাকে তুমি এইভাবে ট্রিট করতে পারো না মীর! কোনোভাবেই পারো না!

নামীর অ্যানার একের পর এক বজ্রকঠিন আঘাত থেকে বাচতে তড়িৎ গতিতে নিজের শরীর টা একেবেকে নিতে নিতে আগের মতোই শান্ত কন্ঠে বলে উঠলো,

— যদি এটা কোনো গুরুতর কিছু না হতো তবে আমাদের পূর্বপুরুষেরা এতবার করে দেমিয়ান বংশের রুলস অ্যান্ড রেগুলেশন্সে নিজেদের বংশের মেয়েকে বিয়ে করা নিষিদ্ধ করতেন না, এবং স্পষ্ট ভাবে বলে দিতেন না, যে মা এবং গর্ভের সন্তান দুজনেই নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে পড়বে! তারা অবশ্যই সাফার করেছেন, এবং খুব খারাপ ভাবেই সাফার করেছেন!

কথা টা শেষ করেই নিজের দিকে বিদ্যুৎ বেগে ধেয়ে আসা অ্যানার ধারালো সৌর্ডের আঘাত টাকে নিজের সৌর্ড টা দিয়ে আটকে দিয়ে, সৌর্ড টা দিয়েই অ্যানার সৌর্ডে ধাক্কা দিলো নামীর। আর ধাক্কা দিতেই অ্যানা ছিটকে পড়লো নিজের পেছন দিকে, বিশ পঁচিশ হাত দুরের মাটিতে৷ কিন্তু মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ার সাথে সাথেই আবার ঝড়ের বেগে উঠে দাড়ালো অ্যানা৷ আর এরপর নিজের হাতের সৌর্ড দুখানার ধারালো অগ্রভাগ মাটিতে স্পর্শ করে টানতে টানতে দ্রুত পায়ে নামীরের দিকে এগোতে এগোতে ও গর্জে উঠে বলল,

— টেকনোলজি এখন সেই হাজার বছর আগের থেকে হাজার গুনে ডেভেলপড হয়েছে! তুমি সমস্যা টার সমাধানের চেষ্টা না করে সেই হাজার বছর আগেকার ধ্যান ধারণাই যদি পুষে রাখবে তবে আমাকে নিজের সাথে জড়ালে কেন? তুমি কি জানতে না?

শেষোক্ত প্রশ্ন টা নামীরের দিকে ছুড়ে দিয়ে আবারও মাটি থেকে শুণ্যে উঠে গিয়ে নিজের সৌর্ড টা দিয়ে ঝড়ের বেগে আঘাত করলো অ্যানা৷ কিন্তু বরাবরের মতোই নামীর কে আঘাত করতে ব্যর্থ হলো ও, একদম সঠিক সময়ে অ্যানার সৌর্ডের সে আঘাত টা নিজের সৌর্ড দিয়ে ঠেকিয়ে নিলো নামীর। আর এরপর তড়িৎ গতিতে নিজের হাতের সৌর্ড দুখানা নিজের আর্মরের ভেতরে আবার মিশিয়ে নিয়ে, অ্যানার সৌর্ড ধরা হাত দুখানা ধরে ফেললো ও, তারপর অ্যানাকে ঘুরিয়ে অ্যানার পিঠের দিক টা নিজের সামনে নিয়ে এসে অ্যানাকে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরলো নামীর। তারপর অ্যানার ঘাড়ে থুতনি ঠেকিয়ে অ্যানার কানের কাছে মুখ নিয়ে নরম গলায় বলে উঠলো,

— সবই জানতাম! কিন্তু তোমাকে নিজের করে নেওয়ার ব্যাপারে আমার কোনো হাত ছিলো না৷ ছিলো লাইফ ট্রির ইশারা! তোমাকে যে এত্তটা ভালোবাসি সেটাও হয়তো লাইফ ট্রির ইশারাতেই! আমার মনে পড়ে না আমি মায়ের পরে আর কাউকে এতটা ভালোবেসেছি কিনা! হয়তো তার থেকেও তোমাকে বেশি ভালোবাসি! মাকে পেয়েছি মাত্র বিশ টা বছর! আর তোমাকে পেয়েছি সাতাত্তর টা বছর! নিজের প্রাণের একটা অংশের মতো করে তোমাকে আগলে রেখেছি, বড় করেছি, ভালোবেসেছি! লাইফ ট্রির ইশারা না থাকলে তুমি হতে আমার মেয়ের মতো! তখন হয়তো তোমাকে আরও ভালোবাসতাম, আমার শিনজোর থেকেও বেশি!

নামীরের এমন নরম কন্ঠে আলগা হয়ে এলো অ্যানার সৌর্ড ধরে রাখা হাতের মুঠি, স্তিমিত হয়ে এলো ওর রাগ আর তেজ! কিন্তু পরমুহূর্তেই পুরোনো ক্ষতগুলো মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো অ্যানার, আর সাথে সাথে আবারও মুষ্টিবদ্ধ হয়ে উঠলো ওর হাত জোড়া৷ তড়িৎ গতিতে নামীর কে কনুই দ্বারা ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে দিয়ে আবার নতুন উদ্যমে লড়াই করতে প্রস্তুত হলো ও। আর গর্জে বলে উঠলো,

— আমি কোনো এক্সপ্লানেশন শুনতে চাই না! আমি ছাড়া অন্য কেউ কেন তোমার সাথে ঘনিষ্ঠ হবে? কেন তোমার সন্তানের মা হবে? তোমার সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়া কাউকেই আমি জীবিত রাখবো না! ওই রুথকেও আমি শেষ করে দেবো! আর সেটাও খুব শীঘ্রই!

বলেই হাতের সৌর্ড দুখানা শূণ্যে ঘুরিয়ে নামীরের দিকে ঝড়ের বেগে এগোলো ও। কিন্তু এতক্ষণ শান্ত থাকা নামীরের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। তার দিকে এগিয়া আসা অ্যানার উদ্দেশ্য সে হুংকার দিয়ে বলে উঠলো,

— তুমি এরকম কিছুই করবে না। আমার শুধু একটা সন্তান চাই, আর কিছুই না! আর সে সন্তানটাও তোমারই হবে! সে তোমাকে মা বলে জানবে! আর বাকি রইলো রুথের কথা। তুমি যদি তোমার এরকম হিংস্র আচরণ পরিহার না করো তবে সন্তান না হওয়া পর্যন্ত রুথ কে আমি তোমার থেকেও বেশি গুরুত্ব দিবো। তাই নিজের সীমা অতিক্রম করো না! নইলে আমি তোমার প্রতি কঠোর হতে বাধ্য হবো!

নামীরের এ কথা গুলো যেন অ্যনার বক্ষভেদ করে গেলো! নামীরের মুখনিঃসৃত সে কথা গুলো ওর মাথার ভেতর গিয়ে বাড়ি খেতে লাগলো বারংবার! মুহুর্তেই কি যেন হয়ে গেলো ওর! বিদ্যুৎ বেগে এগিয়ে আসার মাঝপথেই আকস্মিক ভাবে থেমে গেলো ও! এরপর পুরোপুরি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো ও শূণ্যের ওপর৷

কিছুক্ষণ স্থির হয়ে নামীরের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে ধীরে ধীরে শূন্যের ওপর থেকে মাটিতে নেমে এলো ও। তারপর নিজের দুহাতে ধরা সৌর্ড দুখানা শান্ত ভঙ্গিতে হাতের আর্মরের ভেতর মিশিয়ে নিয়ে নামীরের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো অ্যানা৷ এরপর মুখে কিঞ্চিৎ হাসি ফুটিয়ে ও শান্ত কন্ঠে বলে উঠলো,

— আমি এই ফাইট আর কন্টিনিউ করতে চাই না! আজ থেকে তুমি রুথের, বা তুমি যার হতে পছন্দ করবে তার। এখন থেকে তোমার আর আমার সম্পর্ক শুধুমাত্র কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ থাকবে৷ এই মুহুর্ত থেকে আমি আমার রাস্তা আলাদা করে নিলাম, তোমার রাস্তায় আমাকে আর তুমি পাবে না! আজ থেকে আমি আমার মতো, তুমি তোমার মতো। তোমার কোনো কাজে আমি আর বাগড়া দিতে যাবো না৷ তোমার যেভাবে ইচ্ছা হয় লাইফ লিড করো, শুধুমাত্র আমাকে আর নিজের কোথাও টেনো না। তোমার কোনো কিছুতেই আমি আর থাকতে চাই না। আজ থেকে আমার ওপর আর নজরদারি না করলে খুশি হবো। স্ট্যেই হ্যাপি!

কথা গুলো বলে নিজের শরীরের আর্মর আবার নিজের ভেতরে নিয়ে নিলো অ্যানা। আর অ্যানার এমন অস্বাভাবিক রকম শান্ত চেহারা দেখে চমকালো নামীর। অ্যানার এমন শান্ত চেহারা, শান্ত কন্ঠ ওর পুরোপুরি অচেনা। এই চেহারা আগে কখনোই দেখেনি ও! অ্যানার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে নামীর কড়া গলায় বলে উঠলো,

— এটা কোনো সমাধান নয় শিনজো!

অ্যানা নামীরের সে কথার কোনো উত্তর দিলো না। ধীর পায়ে ডোবার ধারে হেটে গিয়ে নিজের খুলে রাখা হুডি আর ট্রাউজার পরে নিলো ও। তারপর মাটিতে বড়বড় চোখ করে শক খেয়ে বসে থাকা লিন্ডা কে কোলে তুলে নিয়ে ধীর, শান্ত পায়ে ও কদম বাড়ালো মাঞ্জারে যাওয়ার রাস্তার দিকে।
আর ওকে চলে যেতে দেখেই শূণ্য থেকে তড়িৎ গতিতে মাটিতে নেমে এলো নামীর। নিজের মুখের ওপর থেকে আর্মরের অংশ টা সরিয়ে মুখ খানা অনাবৃত করে ঝড়ের গতিতে অ্যানার সামনে গিয়ে অ্যানার পথ আগলে দাড়ালো ও। তারপর শান্ত কন্ঠে বলল,

— শিনজো, তুমি কি বাড়াবাড়ি করছো না?

কিন্তু অ্যানা নামীরের দিকে তাকালো না। অন্যদিকে তাকিয়ে নামীর কে পাশ কাটিয়ে ও চলে গেলো মাঞ্জারের দিকে যাওয়ার রাস্তায়। আর নামীর অ্যানার যাওয়ার পানে তাকিয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো। অ্যানা ওর চোখের আড়াল হওয়া অবধি ওইভাবেই দাঁড়িয়ে তাকিয়ে রইলো ও৷ আর অ্যানা ওর দৃষ্টি সীমার বাইরে যাওয়ার পরপরই ফোস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে, নিজের গুরুগম্ভীর স্বরে ডাক পাড়লো,

— ফ্যালকন!

নামীরের সে ডাকের সাথে সাথেই আশেপাশে থাকা সুউচ্চ গাছ গুলোর একটির সূদুর অগ্রভাগ থেকে তীক্ষ্ণ আওয়াজে ডেকে উঠে নিচে নেমে এলো একটি বড়সড় বাজপাখি। আর মাটির কাছাকাছি এসেই সেটা পরিণত হলো একজন ছিপছিপে গড়নের পেশিবহুল যুবকে৷ আর এর পরই নামীরের থেকে একটা নির্দিষ্ট দুরত্ব বজায় রেখে দাঁড়িয়ে মাথা টা যথাসম্ভব নত করে সে আনুগত্যের সাথে বলে উঠলো,

— আদেশ করুন বাদশাহ!

নামীর কিছুক্ষণ চুপ থেকে গমগমে কন্ঠে বলে উঠলো,

— তোমাকে তোমার আগের চাকরিতেই আবার বহাল করা হলো। চব্বিশ ঘন্টা আমার শিনজোর ওপর নজর রাখবে। ও কখন কোথায় যাচ্ছে, কি করছে, কার সাথে কথা বলছে, এভরিথিং। আর সন্দেহজনক কিছু দেখলেই আমাকে ইনফর্ম করবে। আর খেয়াল রাখবে আমার শিনজো যেন কোনো অবস্থাতেই শিরো মিদোরির বাইরে পা না রাখে।

নামীরের কথা শেষ হতেই ফ্যালকন আনুগত্যের সাথে বলল,

— জ্বি বাদশাহ, আপনার আদেশ শিরোধার্য!

আর এরপর নামীর ইশারা করতেই যে যুবকটি আবারও বাজপাখির রূপ নিয়ে উড়াল দিলো আকাশে, আর তারপর মাঞ্জারের দিক টাতে উড়ে যেতে যেতে তীক্ষ্ণ কন্ঠে সচকিত করে দিলো জঙ্গলের সমস্ত প্রাণীকে৷

চলবে……

(সারাদিন কোনো কাজ কর্ম না করে আপনাদের জন্য গল্প লিখেছি, সুন্দর সুন্দর কমেন্ট না করলে….. 🔪)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here