#বাদশাহ_নামা
#পর্বসংখ্যা_২০
#আ_মি_না
বন্ধ জানালার ধারে উদাস মুখে বসে আছে রুথ। খুব ইচ্ছা করছে ওর এই জানালা টা খুলতে, খুলে বাইরের হাওয়া বাতাস খেতে, ওই অসম্ভব সুন্দর জঙ্গল টা এক নজর দেখতে। কিন্তু আফিয়ার কড়া বারণ, কোনোভাবেই জানালা খোলা যাবে না, আর রাতের বেলা তো কোনোমতেই না৷
কাল সকালে বেলা সে সেই অতি সুদর্শন পুরুষ টার মুখদর্শন করতে পারবে এটা ভেবেই সে প্রচন্ড খুশি। আপাতত একটু সুস্থ লাগছে, সেই সুঠামদেহী পুরুষ টার অবয়ব আর তার সামনে এসে হানা দিচ্ছে না। এটা হয়তো সাময়িক সময়ের বিরতি! আবার কখন এসে হানা দিবে কে জানে!
রুথ জোরে সোরে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো, তারপর জানালার থেকে সরে এসে ঘুমানোর প্রস্ততি নিতে বিছানায় উঠে বসলো। ঠিক এমন সময়ে রুথের অগোচরে সে বদ্ধ জানালার গ্লাসের ফ্রেমের এক পাশের সুক্ষ্ম ছিদ্র দিয়ে ক্রমে ক্রমে ভেতরে ঢুকতে লাগলো একটা সরু, সুক্ষ্ম অথচ কঠিন গাছের লতা। আর সেটা ভেতরে ঢুকে একে বেকে হাতড়ে হাতড়ে খুজতে লাগলো কিছু একটা, আর তারপরই সে লতা টা খুজে পেলো তার কাঙ্খিত সেই জানালার লক। আর এরপর খট করে খুলে ফেললো সে জানালার লক টা৷ আর জানালা খোলার এ শব্দ পেয়েই চমকে উঠে সেদিকে তাকালো বিছনায় বসে থাকা রুথ!
কামরার ভেতরে আবছা আলো, স্পষ্ট অস্পষ্ট মিলিয়ে কোনোরকমে দেখা যাচ্ছে চারপাশ টা! আর তার ভেতরে একাকী বিছানায় বসে এই মাত্র শব্দ করে লক খুকে যাওয়া জানালা টার দিকে বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে রুথ। বুকের ভেতরে তার দুরুদুরু করছে। শুকনো ঢোক গিললো ও একটা, তারপর অনেক কষ্টে মনে সাহস সঞ্চয় করে কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলো,
— কে?
কিন্তু ওপাশ থেকে কোনো উত্তর এলো না৷ আর তার পরমুহূর্তেই জানলার একটা পার্ট শব্দ করে খুলে গেলো। ঘটনার আকস্মিকতায় ভয় পেয়ে রুথ তড়িঘড়ি করে বিছানার এক কোণায় সরে গিয়ে বসলো। পর্দার আড়াল থাকার কারণে জানালার ওপাশের ব্যাক্তি টাকে দেখতে সক্ষম হলো না ও৷ যার জন্য ভয় টা আরও গাঢ় হলো ওর৷ সাহস নিয়ে কামরার দরজার বাইরে থাকা দাসীদের কে উচ্চস্বরে রুথ ডাকতে যাবে ঠিক তখনই জানালার ওপাশ থেকে ভেসে এলো অ্যানার কন্ঠস্বর,
— ভয় পেয়ো না রুথ, আমি অ্যানা।
আর অ্যানার কন্ঠস্বর শোনা মাত্রই রুথের মনে পড়ে গেলো আফিয়ার বলা কথা, পরিচিত কারো ডাক শুনলে যেন ও ভুলেও দরজা জানালা না খোলে। আর তাছাড়া এত রাতে অ্যানা আসবেই বা কই থেকে! ও তো এখন হয়তো ওর মাঞ্জারের বিছানার নরম বালিশে মুখ ডুবিয়ে গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে! রুথ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে ভয়ে ভয়ে, কাঁপা কাঁপা গলায় উত্তর দিলো,
— তুমি যে-ই হও, দয়া করে চলে যাও! অ্যানা এত রাতে এখানে কখনোই আসবে না সেটা আমি জানি! চলে যাও তুমি এখান থেকে!
আর রুথের এ কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই অ্যানা সে জানালার পর্দা টা বেশ খানিক টা উঁচু করে উকি দিলো রুথের কামরায়। তারপর রুথের দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে বলে উঠলো,
— আমি সত্যি সত্যিই অ্যানা।
আর সে আবছা আলোতে অ্যানার অবয়ব টা দৃষ্টি গোচর হতেই রুথের ভীতসন্ত্রস্ত, ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া চেহারা টা নিমিষেই খুশিতে ঝলমলিয়ে উঠলো, উচ্ছাসের সাথে সে বিছানার ওপর থেকে লাফিয়ে নেমে এসে দাড়ালো জানালার কাছে, তারপর জানালার পর্দা টা পুরোপুরি সরিয়ে দিয়ে দুচোখ ভরে অ্যানাকে দেখতে লেগে গেলো, আর তার পরমুহূর্তেই উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলে উঠলো,
— ভেতরে এসো অ্যানা! তোমাকেএকটু জড়িয়ে ধরি!
রুথের এমন ছেলেমানুষী আবদারে অ্যানা শব্দ করে হেসে উঠলো, তারপর নিজের শরীর টা টেনে ওপরে উঠিয়ে জানালা দিয়ে রুথের কামরায় ঢুকে পড়লো ও৷ আর ও ঢুকতেই রুথ খুশিতে ওর ওপর ঝাপিয়ে পড়ে জড়িয়ে ধরলো ওকে। অ্যানা নিজের ডান হাতের থাবা দ্বারা রুথের পিঠে দুইটা চাপড় দিয়ে বলল,
— হয়েছে হয়েছে, ছাড়ো এবার৷
রুথ ছেড়ে দিলো ওকে, তারপর নিজের দুই হাত দ্বারা অ্যানার বাহু জোড়া ধরে মাথা উচু করে অ্যানার চোখের দিকে তাকিয়ে হাসি হাসি মুখ করে উচ্ছসিত কন্ঠে বলল,
— তুমি এখানে কিভাবে এসেছো? কেমন আছো তুমি অ্যানা? তোমাদের কে কতদিন দেখিনা! খুব ইচ্ছা করে তোমাদের সাথে দেখা করতে, আগের মতো গল্প করতে, ঘুরতে! কিন্তু তা তো আর কখনোই সম্ভব না! বসো তো এখানে।
রুথ অ্যানার বাহু জোড়া ধরে ওকে বিছানার ওপর বসিয়ে দিতে গেলো, কিন্তু অ্যানা বসলো না৷ রুথ কে থামিয়ে দিয়ে রুথের হাত জোড়া নিজের বাহুর ওপর থেকে নুজের হাতের সাহায্যে সরিয়ে দিয়ে কিঞ্চিৎ গাম্ভীর্যের সাথে বলল,
— আমি বসবো না রুথ! আমাকে যেতে হবে। তুমি কেমন আছো? ভালো আছো নিশ্চয়ই!
রুথের উচ্ছসিত চেহারা টা স্তিমিত হলো কিছুটা ও বলল,
— হ্যা, ভালো আছি আমি। শুধু, তোমাদের কথা মনে পড়ে মাঝে মাঝে, তখন একটুও ভালো লাগে না৷ মনে হয় তোমাদের কাছে ছুটে চলে যাই! কিন্তু তুমি যে এখানে আমার সাথে দেখা করতে এসেছো এতে আমি অনেএক খুশি হয়েছি অ্যানা!
কথা টা বলেই রুথ আবারও জড়িয়ে ধরলো অ্যানাকে। অ্যানা স্মিত হেসে নিজের ডান হাত টা দিয়ে রুথ কে সামান্য আলিঙ্গনাবদ্ধ করে বলে উঠলো,
— আমাকে এখন ফিরতে হবে রুথ। প্রাসাদের কেউ দেখে ফেললে তোমার আমার, দুজনকেই সমস্যায় পড়তে হবে।
অ্যানা রুথ কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে দিলো আবারও, তারপর রুথের উদ্দ্যেশ্যে নরম গলায় বলল,
— আমি একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য এখানে এসেছি। তুমি প্রাসাদে আসার সময়ে তোমাকে যে খঞ্জর টা দিয়েছিলাম ওটাই ফেরত নিতে এসেছি আমি, কারণ ওটা আর তোমার কোনো কাজে লাগবে না রুথ। তোমার প্রাণের আর কোনো সংশয় নেই। তুমি এখন থেকে এই প্রাসাদে নিশ্চিন্তে থাকতে পারো।
রুথ কিঞ্চিৎ অবাক হয়ে বলে উঠলো,
— সত্যি বলছো? কিন্তু তুমি কিভাবে জানো!
অ্যানা সামান্য শব্দ করে হেসে উঠলো, তারপর হাসি থামিয়ে শান্ত কন্ঠে বলল,
— আমি সব জানি, এক্কেবারে সব! এখন খঞ্জর টা দাও, আমাকে এখনি এখান থেকে যেতে হবে। ইতোমধ্যেই সবাই হয়তো টের পেয়ে গেছে, আর তারা আসছেও। দ্রুত করো, আমি চলে যাই৷
রুথ তড়িৎ গতিতে ওপরে নিচে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে দ্রুত পায়ে হেটে গেলো ওর কামরার বাদিকের দেয়ালে রাখা ওয়াল আলমিরার কাছে। তারপর সেখানের একটা তাক থেকে বের করলো একটা ছোটখাটো, নকশাদার বাক্স। আর এরপর সেটার তালা ঘুরিয়ে খুলে খঞ্জর টা বের করে অ্যানার হাতে দিলো রুথ, তারপর বলল,
— আজকাল আমি ভুল করে যেখানে সেখানে এটা সেটা ফেলে রেখে আসছিলাম, তাই খঞ্জর টা যেন কোথাও ভুলবশত হারিয়ে না যায় তার জন্য তালাবদ্ধ করে রেখে দিয়েছি।
অ্যানা রুথের কথার প্রতিউত্তরে মিষ্টি করে হেসে বলে উঠলো,
— ধন্যবাদ রুথ, আমার জিনিস টা যত্নে রাখার জন্য। আমার বাকি সমস্ত জিনিস গুলোকেও তুমি যত্নে রেখো।
অ্যানার কথা শেষ হতে না হতেই বাইরে থেকে বেশ কয়েক জনের ভারী পায়ের আওয়াজ শোনা গেলো। আর তখনি অ্যানা রুথের উদ্দ্যেশ্যে বলল,
— ভালো থাকো রুথ।
আর এ কথা বলেই ও বিদ্যুৎ গতিতে জানালা দিয়ে ঝাপ দিলো বাইরে, আর সেই মুহুর্তেই ঝড়ের গতিতে রুথের কামরার দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করলো একদল মেটালিক আর্মর পরিহিত অত্যাধুনিক অস্ত্রধারী সোলজার্স। তারা ঢুকেই আগে তাদের কয়েক জন রুথ কে ঘিরে দাঁড়িয়ে ওর সেইফটির ব্যাবস্থা করলো, আর অন্য কয়েকজন কামরা টার চারপাশ ভালো ভাবে তল্লাসি চালাতে শুরু করলো।
রুথ কে ঘিরে দাঁড়ানো সে সৌলজার্স দের ভেতরের একজন তড়িঘড়ি সুরে রুথ কে জিজ্ঞেস করলো,
— আপনি ঠিক আছেন?
এই মুহুর্তে এখানে ঠিক কি চলছে কেন চলছে এসব কিছুই রুথের মাথায় আসছে না। তবুও সে সৌলজার টার কথায় ও দ্রুত গতিতে ওপর নিচে মাথা নাড়িয়ে বোঝালো যে ও ঠিক আছে৷ রুথের ত্থেকে এ কথা শুনেই সে সৌলজার টা বড় বড় পা ফেলে গেলো জানালার পাশে, তারপর জানালা দিয়ে বাইরে উকি মেরে দেখলো সে। আর উকি মারতেই ওর চোখ পড়লো প্রাসাদের পেছনের জঙ্গলে থাকা অত্যান্ত লম্বা লম্বা পাইন গাছ গুলোর একটির মাথাতে জ্বল জ্বল করতে থাকা দুইটা চোখ, যেগুলো হীরক খন্ডের ন্যায় দ্যুতি ছড়িয়ে সে পাইন গাছের মাথা টাকে আলোকিত করে তুলছে।
এ দৃশ্য দেখামাত্রই সৌলজার টা তৎক্ষনাৎ নিজের দৃষ্টি নামিয়ে নিলো৷ তারপর সেই পাইন গাছ টির ওপর উপবিষ্টা শ্রদ্ধেয় মানবীটির প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে ধীর গতিতে রুথের কামরার জানালার গ্লাস টা টেনে দিয়ে লক করে দিলো। তারপর জানালার পাশ থেকে সরে এসে রুথের সামনে দাঁড়িয়ে গম্ভীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
— উনি কি আপনার কোনো ক্ষতি করেছেন?
এমন উদ্ভট পরিস্থিতি তে পড়ে রুথের আউলা মাথা আরও আউলা হয়ে গেলো, ও কিছুটা ক্ষেপে উঠে বলে উঠলো,
— অ্যানা আমার ক্ষতি কেন করবে! সে মোটেও আমার কোনো ক্ষতি করতে আসেনি৷ সে আমাকে একটা খঞ্জর দিয়েছিলো সেটাই নিতে এসেছিলো। আর এই সামান্য কারণে আপনারা তার ওপর চড়াও হতে পারেন না৷
সৌলজার টি নিজের হাতের অস্ত্রটি হাত বদল করে রুথের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— আপনি নিশ্চিত যে সে আপনার কোনো ক্ষতি করতে আসেনি? আমাদের কে সিউরলি বলুন।
রুথ এদের কাজ কর্মে বিরক্ত হলো প্রচন্ড, ভ্রু কুচকে ও বলে উঠলো,
— আশ্চর্য, ও কেন আমার কোনো ক্ষতি করতে আসবে? ওকে আমি খুব ভালো ভাবেই চিনি, ও অকারণে কখনোই কাউকে কিছু বলেনা৷ সেখানে ও আমাকে কেন কিছু বলতে যাবে? ও তো শুধু ওর দেওয়া খঞ্জরটা ফেরত নিতে এসেছিলো!
সৌলজার টি শব্দ করে নাক দিয়ে একটা নিঃশ্বাস ফেলে স্বগতোক্তি করলো,
— হ্যা, উনি অকারণে কাউকে কিছু বলেন না।
তারপর বাকি সৌলজার দের উদ্দ্যেশ্যে বলে উঠলো,
— এভরিথিং লুকস গ্যুড, নাথিং ট্যু ওয়্যারি অ্যাবাউট! ফিরে চলো সবাই।
তারপর রুথের দিকে তাকিয়ে গমগমে গলায় বলল,
— কামরার জানালা টা আপাতত খোলার প্রয়োজন নেই। খুব বেশি বোরিং লাগলে কামরার বাইরে বেরিয়ে প্রাসাদ টা ঘুরে দেখবেন।
আর এরপর সে সৌলজার টি নিজের শক্ত বুটের গটগট শব্দ তুলে কামরার দরজা ঠেলে চলে গেলো বাইরে, আর তার পেছন পেছন বাইরে চলে গেলো তার সাথে আসা বাকি সৌলজার গুলোও৷ আর ওরা চলে গেলে রুথ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে কামরার দরজা টা বন্ধ করে দিয়ে এসে বসলো বিছানায়। তারপর মনে মনে সেই সৌলজার গুলোর উদ্দ্যেশ্যে কয়েকটা কটুবাক্য উচ্চারণ করে বিছানায় এলিয়ে দিলো ওর শ্রান্ত শরীর খানা৷
35. রাতের প্রায় দুইটা। ব্রায়ান বসে আছে লাইব্রেরি এরিয়াতে। ঘুমাতে গেছিলো ও, কিন্তু ঘুম আসছে না ওর। তাই বিছানা ছেড়ে উঠে চলে এসেছে৷ চেয়ারে বসে টেবিলের ওপর একটা বই মেলে রেখে বই এর দিকে তাকিয়ে আছে, কিন্তু পড়ছে না৷ বই এর দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে চিন্তা করছে৷
কিছু একটা ঝামেলা হচ্ছে অ্যানার সাথে, যা সে বা শার্লট কেউই বুঝতে পারছে না, আর অ্যানাও ওদের কে বুঝাতে চাইছে না৷ এবং সে ঝামেলা টা হয়তো গুরুতর কিছু একটা। কিন্তু সেটা কি?
অ্যানার চোখ জোড়াও আজ কয়েক বার খেয়াল করেছে ও, সে জোড়া খুব লাল। তখনের ইন্সিডেন্ট এর পর কি অ্যানার খুব খারাপ লেগেছে? তার জন্য কি ও এইরকম করছে! কিন্তু ও তো এমন করছে আরও আগে থেকেই, তাহলে ব্যাপার টা কি!
ব্রায়ান অধৈর্য হয়ে উঠলো। ফোস করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে সামনের খোলা বইটা বন্ধ করে চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বুজলো ও। ঠিক সেই মুহুর্তেই আউটসাইডার্স দের আবাসিক এরিয়ার কোনো এক কোণা থেকে একটা চাপা মেয়েলি কন্ঠের আর্তনাদ শুনতে পেলো ও, যেন কেউ কোনো মেয়ের মুখ চেপে ধরেছে আর সে মেয়েটি একটু আওয়াজ করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে চলেছে৷
ধাম করে চোখ মেলে তাকালো ব্রায়ান, তারপর নিজের মাথার ওপরে থাকা বৈদ্যুতিক বাল্ব টা সুইচ টিপে বন্ধ করে দিলো নিঃশব্দে, যেন তার উপস্থিতি সেই অ্যাটাকার কোনো ভাবেই টের না পায়।
এরপর ধীর পায়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে ও নিঃশব্দে কয়েক কদম হেটে আউটসাইডার্স দের তাবুর দিকে দৃষ্টি দিলো কিছু দেখা যায় নাকি! আর সেই মুহুর্তেই আবারও কারো চাপা চিৎকার আর সাথে ধস্তাধস্তির আওয়াজ কানে এলো ওর৷
ব্রায়ান ঢোক গিললো একটা। সেখানে যা-ই হোক না কেন তার একা যাওয়া ঠিক হবে না, অন্য কাউকে সঙ্গে নিতে হবে, নইলে শত্রুপক্ষকে বাগে আনা যাবে না৷ ব্রায়ান নিঃশব্দে ঘুরে আবার মাঞ্জারের দিকে গেলো। সে লিডার হওয়ার কারণে ওয়ার্কার্স দের আবাসিক এলাকার প্রথম মাঞ্জারটা থিয়োডরের হাত থেকে এখন ওর হয়েছে, আর থিয়োডরের টা ব্রায়ানের পুরাতন মাঞ্জারের কাছাকাছি।
ব্রায়ান দ্রুত পায়ে হেটে গেলো সেখানে, তারপর থিয়োডরের মাঞ্জারের দরজায় গিয়ে ছোট্ট ছোট্ট করে নক করলো। কয়েক বার নক করার পর ভেতর থেকে থিয়োডর ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে উঠলো,
— কে?
ব্রায়ান চাপা গলায় উত্তর দিলো,
— থিয়োডর, আমি ব্রায়ান বলছি। বাইরে আসো দ্রুত৷
ব্রায়ান কথা শেষ করার পর ভেতর থেকে আর কোনো আওয়াজ এলো না৷ ব্রায়ান দরজায় কান পেতে থিয়োডরের উত্তরের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রইলো, আর তার কিছুক্ষণ পরেই খট করে মাঞ্জারের দরজা খুলে চোখ ডলতে ডলতে বেরিয়ে এলো থিয়োডর। তারপর ব্রায়ান কে দেখে গলাটা যথাসম্ভব গম্ভীর করে বলল,
— কি ব্যাপার, এত রাতে তুমি এখানে কেন?
ব্রায়ান গলা খাকারি দিয়ে বলল,
— আমার মনে হয় আউটসাইডার্স দের এরিয়াতে কিছু একটা হচ্ছে, আমি ওদিক টায় কারো গলার আওয়াজ আর ধস্তাধস্তির শব্দ শুনেছি। আই থিংক সামথিং ইজ রং!
ব্রায়ানের কথায় থিয়োডর কিছুক্ষণ ভ্রুকুটি করে চিন্তা করলো, তারপর বলল,
— চলো, দেখি!
বলেই কামরা থেকে রাতের পোশাক পরা অবস্থাতেই ও বেরিয়ে গেলো ব্রায়ানের সাথে। দুজনে মিলে অন্ধকারে নিমজ্জিত মিটিং জোন পার হয়ে আউটসাইডার্স দের আবাসিক এলাকার দিকে পা বাড়ালো, কিন্তু সাথে অন্ধকার নিবারণের জন্য কোনো কিছু নিলো না৷ চুপিচুপি, নিঃশব্দে দুজনে হেটে চলল।
আউটসাইডার্স দের আবাসিক এলাকার কাছাকাছি আসতেই সেই চাপা কন্ঠস্বর আর ধস্তাধস্তির আওয়াজ আবার ও কানে এলো ওদের দুজনের। সাথে সাথেই দাঁড়িয়ে গেলো থিয়োডর সাথে ব্রায়ান ও৷ দুজনে কিছুক্ষণ ঠাহরকরে নিলো শব্দ টা আবাসিক এরিয়ার ঠিক কোন দিক থেকে আসছে৷ এরপর সে দিক টা আন্দাজ করেই দুজনে এগোলো আউটসাইডার্স দের আবাসিক এরিয়ার একদম শেষের দিকে, যেখানে সেইফ জোন শেষ হয়ে ব্লু আর রেড জোন শুরু হয়েছে।
দুজনের সেদিকে পা বাড়ানোর সাথে সাথে ধস্তাধস্তির আওয়াজ টাও গাঢ় হতে শুরু করলো, দ্রুত কিন্তু নিঃশব্দে পা চালাতে লাগলো ওরা দুজনেই। স্পষ্টতই কারো বিপদ টের পেলো ওরা, কিন্তু সেইফ জোনের ভেতরে বাইরে থেকে কেউ বা কিছু তো আসবে না! তাহলে কি ভেতরের কেউই কারো বিপদের কারণ হলো!
কিছুক্ষণ দ্রুত পায়ে, প্রায় দৌড়ে আবাসিক এলাকার পেছন দিক টাতে পৌছালো ওরা। আর পৌছেই যা দেখলো তাতে চোখ কপালে উঠে গেলো ওদের দুজনের! আউটসাইডার্স দের দুই তিনটা মেয়েকে হাত পা আর মুখ বেধে ফেলে রাখা হয়েছে মাটিতে, পোশাক ওদের ওদের এলোমেলো; প্রায় অর্ধনগ্ন, আর অসহায় দৃষ্টির সে চোখে কান্না! সাহায্য পাওয়ার আশায় সামান্য শব্দ করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে চলেছে তারা! আর ওদের আশেপাশে, ওদের কে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে প্রায় জনা দশেক ছেলে, সব গুলার মুখেই হিংস্র হাসি, চোখের দৃষ্টি লোলূপ।
আবছা আলোতে সে ছেলে গুলোকে চেনার চেষ্টা করলো ব্রায়ান আর থিয়োডর, কিন্তু দূর থেকে ঠিক বোঝার উপায় নেই ওরা আউটসাইডার্স নাকি ওয়ার্কার্স। ব্রায়ান আরও কিছুক্ষণ চোখ লাগিয়ে দেখার পর হঠাৎ করেই চমকে উঠে থিয়োডরের উদ্দ্যেশ্যে বলে উঠলো,
— থিয়োডর, এই ছেলে গুলোকে আমি চিনতে পেরেছি, এরা ওয়ার্কার্স এ যুক্ত হওয়া সেই নতুন ছেলে গুলো!
( ছোট করেই দিলাম, অল্প সময়ের ভিত্রে আর কতটুকুই বা লিখবো! এইটুকু নিয়ে খুশি থাকেন প্লিজ! 🥹
দেশের অবস্থা ঠিক থাকলে আর আমি বেচে থাকলে সামনের দিনে বড় পর্ব দিবো 😇 )