প্রাপ্তমনস্ক_এলার্ট #বাদশাহ_নামা #পর্বসংখ্যা_৩৯ #আ_মি_না

0
85

#প্রাপ্তমনস্ক_এলার্ট
#বাদশাহ_নামা
#পর্বসংখ্যা_৩৯
#আ_মি_না

ঘুম ভেঙে কিছুক্ষণ আশেপাশের পরিবেশ টা ঠাহর করার চেষ্টা করলো অ্যানা। মীর ওকে নিজের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। কিন্তু এপাশে তো শার্লট ঘুমিয়ে ছিলো, কোথায় গেলো ও! অ্যানা মীরের আলিঙ্গন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে উঠে বসতে নিলো। কিন্তু মীর ওকে দ্বিগুণ জোরে নিজের সাথে পিষে নিয়ে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল,

— লাফালাফি করো না, ঘুমাতে দাও।

মীরের চাপে মীরের বুকের সাথে লেগে গেলো অ্যনা। মীর জেগে আছে দেখে ও ওভাবে থেকেই কৌতুহলি কন্ঠে প্রশ্ন করলো,

— তুমি এখানে কি করছো? শার্লট কোথায়? লিন্ডাই বা কোথায়!

নিজের নাম শুনে বিছানার এক কোণায় বসে বসে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে এদের রঙ্গলীলা দেখতে থাকা লিন্ডা মিয়াও’ শব্দ করে বোঝালো যে সে এখানেই আছে, এবং এই লাভবার্ড দ্বয়ের উপস্থিতিতে তার ঘুমে অত্যান্ত ব্যাঘাত ঘটছে।

লিন্ডা এতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলো দেখে মীর ওকে কিছু বলেনি। কিন্তু লিন্ডা ঘুম থেকে উঠে যাওয়ায় মীর অ্যানাকে ছেড়ে দিয়ে উঠে বসে লিন্ডার ঘাড়ের কাছের চামড়াটা নিজের ডান হাতের তর্জনী আর বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা ধরে নিয়ে মাঞ্জারের জানালা দিয়ে আলতো করে বাইরে ছুড়ে মারলো। উড়ে গিয়ে মাটিতে পড়ে লিন্ডা ক্যাক’ করে ডেকে উঠলো। বিছানায় শুয়ে থাকা অ্যানা তৎক্ষনাৎ লাফিয়ে উঠে বসে চাপা, তেজি গলায় বলে উঠলো,

— এটা কি করলে তুমি? ও কি ব্যাথা পায়নি? আর শার্লট কোথায়?

— ওকে ফ্যালকনের সাথে হাওয়া খেতে পাঠিয়ে দিয়েছি।

আবার আয়েস করে বিছানায় পিঠ ঠেকিয়ে, জানালা দিয়ে উদ্ভ্রান্তের ন্যায় বাইরে তাকিয়ে থাকা অ্যানাকে দুহাতে হেচকা টান মেরে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিতে নিতে চোখ জোড়া বন্ধ করে নির্বিকার কন্ঠে উত্তর দিলো মীর৷ মীরের কথা শুনে অ্যানার চোখ কপালে উঠলো,

— ফ্যালকনের সাথে মানে? কোথায় পাঠিয়েছো তুমি ওকে? ও কি জেগে আছে? ও জেগে থাকলে কি হবে তুমি ভেবে দেখেছো?

ভ্রু জোড়া কুচকে উদ্বিগ্ন হয়ে এক নাগাড়ে প্রশ্ন গুলো করলো অ্যানা৷ মীর আগের মতো করেই বলে উঠলো,

— হাইপার হইয়ো না ও ঘুমিয়েই আছে, আপাতত ওর ঘুম ভাঙার কোনো চান্স নেই। ফ্যালকন ওকে কোথায় নিয়ে গেছে জানিনা, ভোরেই এসে দিয়ে যাবে। এখন আমাকে একটু ঘুমাতে দাও।

অ্যানা মীরের বুকের নিকট থেকে সরে, ওর আলিঙ্গন থেকে নিজেকে কিঞ্চিৎ ছাড়িয়ে, বালিশে মাথা রেখে শুয়ে থাকা মীরের মুখ পানে তাকালো কিছুক্ষণ। ওকে তাকাতে অনুভব করে মীর নিজেও চোখ মেললো। দুজনের চোখাচোখি হতেই অ্যানা মীরের মুখ খানা ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করলো, তারপর ভ্রু জোড়া কিঞ্চিৎ কুচকে চিন্তিত কন্ঠে শুধালো,

— তুমি কি অসুস্থ?

— কই, না তো!

সাথে সাথেই মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিলো মীর। অ্যানা নিজের শুভ্র কোমল হাত জোড়া দিয়ে মীরের কুচকুচে কালো রঙা মুখ খানাকে আগলে নিয়ে মীরের মুগ্ধ, অপলক চোখ জোড়ার দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ। তারপর জিভ দিয়ে নিজের ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে নিয়ে গভীর দৃষ্টিতে মীর কে পর্যবেক্ষণ করতে করতে নরম গলায় প্রশ্ন করলো,

— কি হয়েছে তোমার? তোমার চোখ জোড়া এমন ফোলাফোলা লাগছে কেন? লালও হয়ে আছে দেখি! তোমার চোখের লেন্স এর স্বর্ণালি আভাটাও কেমন যেন ফ্যাকাসে লাগছে। মুখ খানাও কেমন যেন শুকনো শুকনো লাগছে! কি হয়েছে বলোতো!

অ্যানার প্রশ্নে মীর অপ্রস্তুত হলে যেন। ওর চোখে মুখে ভীতির আভাস দেখা গেলো সামান্য। শুকনো একটা ঢোক গিলে ও বলে উঠলো,

— গত কয়েকদিন ধরে রাতে ঘুম হচ্ছে না। অশান্তি অশান্তি ফিল হচ্ছে সারাক্ষণ। সামান্য একটু ঘুম আসলেও সেটা আধা ঘণ্টার বেশি লাস্ট করছে না। তাই হয়তো এমন লাগছে।

অ্যানা নিজের বৃধাঙ্গুলিদ্বয় মীরের শক্তপোক্ত চোয়ালের ওপর বুলিয়ে দিতে দিতে কোমল কন্ঠে শুধালো,

— কি নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করছো এত? কোনো অসুবিধা হচ্ছে তোমার?

— আমার দুঃশ্চিন্তা সব তোমাকে নিয়ে।

অ্যানাকে টেনে নিজের একেবারে কাছে নিয়ে এসে বলল মীর। অ্যনার মুখের ওপর মীরের ভারী নিঃশ্বাস পড়তে লাগলে ক্ষণে ক্ষণে৷ অ্যানা মীরের চোখের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে কপট অভিমান করে টেনে টেনে বলল,

— ওহ! এখন বুঝি আমি তোমার দুঃশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছি!

অ্যানার কথার এমন অদ্ভুত সুরে মীর হাসলো শব্দ করে। তারপর হাসি থামিয়ে অ্যানার মুখ খানার দিকে আরও এগিয়ে এসে ওর নাকে নাক লাগিয়ে দিয়ে বলল,

— এরকম মিষ্টি একটা দুঃশ্চিন্তা আছে বলেই এখনো আমি হাসতে পারি। নইলে এতদিনে আমি অনুভূতি শূন্য বন্য পশুতে পরিণত হতাম।

— আরও একটা জিনিস হতে পারতে, ভুরি ভুরি বাচ্চার বাবা। কিন্তু আমার জন্য তো তোমার সেটাও হচ্ছে না৷

মীরের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে তেজিয়ান কন্ঠে বলল অ্যানা। অ্যানার কথা কর্ণগোচর হওয়া মাত্রই মীরের মুখ থেকে হাসিটা মিলিয়ে গেলো। মুখ খানা থমথমে হয়ে সেখানে এসে ভর করলো এক রাশ অপরাধবোধ।
মীর কে হঠাৎ এমন চুপ হয়ে যেতে দেখে বালিশে সোজা হয়ে শুয়ে থাকা অ্যানা নিজের বাদিকে তাকিয়ে দেখলো একবার মীর কে৷ মীরের এমন চেহারা দেখে ও অবাক হলো কিছুটা। এর আগে যতবার বাচ্চার কথা উঠেছে ততবারই মীর হেসে উড়িয়ে দিয়েছে, নয়তো ওকে আদর দিয়ে মানিয়েছে৷ কিন্তু আজ কি হলো? মীর এমন চুপ মেরে গেলো কেন? এর পেছনে কি কোনো কারণ লুকিয়ে আছে!

অ্যানার ভাবনার মাঝেই ওকে চমকে দিয়ে মীর হঠাৎ ঝাপিয়ে পড়ে দখল করে নিলো অ্যানার সুডৌল বুক খানা। তারপর বুকের ভাজে মুখ গুজে দিয়ে পরম আয়েসে সেখানে মাথা রেখে জড়ানো গলায় বলে উঠলো,

— আমার ঘুম প্রয়োজন শিনু! অনেক ঘুম প্রয়োজন! এত সব আর আমার মস্তিষ্ক নিতে পারছেনা। তুমি আমাকে একটু ঘুম পাড়িয়ে দাও, তোমার ম্যাজিকাল ভয়েস দিয়ে। নইলে ঘুমের অভাবে আমি কখন মারা যাবো!

মীরের মুখে মৃত্যুর কথা শুনে ধড়াস করে উঠলো অ্যানার বুকের ভেতর টা। মীর স্পষ্ট টের পেলো সেটা। অ্যানাকে আরও গভীরভাবে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে ও অস্ফুটস্বরে আবারও বলল,

— ঘুম পাড়িয়ে দাও আমাকে শিনু, দ্রুত!

অ্যানা নিজের দুহাত দ্বারা মীরের ঘাড় বাবরি ঝাকড়া চুল গুলোকে এলোমেলো করে দিতে দিতে একটা চুমু খেলো ওর মাথায়, তারপর শুরু করলো ওর সুরের মূর্ছনা। ওর মিষ্টি কণ্ঠনিঃসৃত সেই মোহনীয় সুরে যেন নেশা ধরে গেলো মীরের, চোখ জোড়া বন্ধ হয়ে আসতে শুরু করলো ওর। বিগত অনেক গুলো নির্ঘুম রাত কে বিদায় জানিয়ে পরম আয়েসে অ্যানার কোমল বুকের ওপর ঘুমের সাগরে ডুব দিলো ও। ক্রমে ভারী হয়ে এলো ওর নিঃশ্বাস।

শিরো মিদোরির প্রতিটি বৃক্ষের পাতায় পাতায় বয়ে গেলো সুক্ষ্ম আলোকরশ্মির খেলা। প্রকৃতি হয়ে এলো স্নিগ্ধ, কোমল। শীতল পরশ ছড়িয়ে গেলো সমস্ত শিরো মিদোরি জুড়ে। ওর মোহনীয় সুরে ঘুম আরও গাঢ় হলো সেইফ জোনের বাসিন্দা দের৷

৫৭. এরপর কেটে গেলো প্রায় বেশকয়েক দিন। সেরাতের পর থেকে প্রায় প্রতিরাতেই মীর ঘুমানোর বাহানা নিয়ে অ্যানার মাঞ্জারে এসে উপস্থিত হয়। অ্যানা এখনো ঠাহর করতে পারেনি সত্যিই মীরের ঘুমের অসুবিধা হচ্ছে নাকি অন্য কোনো কারণ! তবে ও এটা নিশ্চিত ওর আড়ালে কিছু একটা হয়ে চলেছে, কিন্তু সেটা কি সে সম্পর্কে ও কিছুই জানে না৷ কয়েকবার ফ্যালকন কে দিয়ে স্পাইগিরি করিয়েও কোনো লাভ হয়নি, ফ্যালকন কিছুই উদ্ধার করতে পারেনি। কিন্তু অ্যানা মুখিয়ে আছে তার অগোচরে কি চলছে সেটা জানার জন্য। মীর কি নতুন কোনো দাসী এনেছে! রুথ তো সেই কবেই খালাস।

কিন্তু অ্যানা মনস্থির করে নিয়েছে, মীর যদি এবার আবার কোনো দাসী খুজে নিয়ে আসে তবে ও কিছুই বলবে না। মীরের এতই যখন একটা সন্তানের শখ তখন একটা সন্তান ও পাক কারো থেকে! ক্ষতি কি! সেই তো দাসীদেরকে ও ছুয়েছেই, সেখানে একটা সন্তান পেয়ে গেলে তো আর ছুবে না! নাকি ছুবে! উফফফ! চিন্তায় চিন্তায় এবার মাথা টা হয়তো শেষ হয়ে যাবে!

নিজের মনে বিড়বিড় করতে করতে কিচেনের পেছন দিকে ব্রায়ানের তৈরিকৃত শাকসবজীর ক্ষেতে কাজ করছিলো অ্যানা। ক্ষেত টাতে প্রচুর ঘাস জমেছে সেগুলোই পরিষ্কারের ভার পড়েছে ওর ওপর৷ ব্রায়ান আশেপাশেই আছে কোথাও, চারা গাছ গুলোতে পানি দিয়ে বেড়াচ্ছে৷

অ্যানা আবার নিজের ভাবনায় ফিরে গেলো। মীর আজকাল খুব বাচ্চামো করছে৷ রাত বিরাতে এক এক বায়না ধরে বসছে, আগের দিন গুলোর মতো! সেদিন রাতে বলল ওকে এখনি রান্না করে খাওয়াও, অ্যানার যেটা ইচ্ছা সেটা। ও নাকি খায়নি দুদিন ধরে কিছু! কিন্তু প্রাসাদে থেকেও দুদিন না খাওয়ার কোনো কারণ দেখলো না অ্যানা৷
আবার সেদিন মাঝরাতে ওকে টানাটানি করে নিয়ে গেলো রেড জোনে, জঙ্গলের রেডউড গাছ গুলোর ভেতরে। তারপর অ্যানাকে নিয়ে উঠলো সবচেয়ে লম্বা গাছটির শক্তপোক্ত মগডাল টাতে। তারপর বাকি সমস্ত রাত টা ওরা পার করলো তারাভরা সুরমা রঙা আকাশ দেখতে দেখতে।

সেরাতেও মীর অনেক হেয়ালি কথাবার্তা বলছিলো। অ্যানাকে নিজের কোলের ভেতর বসিয়ে ওর মাথা টা নিজের বুকে চেপে ধরে অ্যানার সাদা রঙা চুলের একগুচ্ছ কে নিজের বাহাতের তর্জনীতে পেচিয়ে নিতে নিতে বলেছিলো,

— লাইফে যতযাই হয়ে যাক না কেন, যা-ই ঘটুক না কেন, তুমি সবসময় জেনো আমি তোমাকে ভালোবাসি, নিজের থেকেও বেশি, অনেক অনেক বেশি।

এ কথার পর অ্যানা ব্যাকুল হয়ে ওকে সরাসরিই প্রশ্ন করেছিলো,

— তুমি আমার থেকে কি লুকোচ্ছো মীর!

কিন্তু মীর সেদিন ওর কথার কোনো সদুত্তর দেয়নি, শুধু অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে দুপাশে দুবার মাথা নাড়িয়ে অ্যানার সমস্ত মুখখানা জুড়ে একেরপর এক উষ্ণ চুম্বন দিয়ে গেছে।

অ্যানা দীর্ঘশ্বাস ফেললো একটা। তারপর আবার মন দিলো কাজে। আজ রাতে মীর ওর হাতের খাবার খেতে চেয়েছে আবারও, ওর নাকি প্রাসাদের খাবার ভালো লাগছে না। তার জন্য আবার কিছু রান্না করা লাগবে। সমুদ্র থেকে কয়েকটা স্যামন ধরে নিয়ে রান্না করলে মন্দ হয় না।
অ্যানা প্রাসাদে লোক লাগিয়ে খোজ নিয়ে দেখেছে, মীর কোনো খাবারই মুখ তুলতে চাচ্ছে না, যেটাই নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেটাই ফিরিয়ে দিচ্ছে ও। মীরের এমন কাজকর্মের কোনো কূল কিনারা খুজে পাচ্ছে না ও। মীরের হলো টা কি! এরকম চলতে থাকলে তো ও অসুস্থ হয়ে পড়বে!

নানান চিন্তাভাবনা করতে করতে ওয়ার্কিং জোনের কাজ শেষ করে দুপুরের খাবারের বিরতিতে অ্যানা চলে গেলো সমুদ্রে, মীরের জন্য কয়েকটা স্যামন জোগাড় করতে। আজ রাতে মীর কে পেট পুরে খাইয়ে ঢোল বানিয়ে দিবে৷

.

রাতে মীর যখন এলো তখন ঘড়ির কাটা মধ্যরাত্রি পার হয়ে তৃতীয় প্রহরের দিকে এগিয়ে চলেছে। অ্যানা নিজের নিতম্ব ছাড়ানো সাদা রঙা চুল গুলোকে চিরুনি করে বেনী করতে নিচ্ছিলো। তখনি হুড়মুড়িয়ে কামরায় ঢুকে পড়ল মীর। মীরের ভেতরে প্রবেশের দুড়ুম দাড়াম শব্দে বিছানার এক কোণায় চিৎপাত হয়ে ঘুমানো লিন্ডা হকচকিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে গেলো, ধারালো নখ গুলো দিয়ে সে আকড়ে ধরলো অ্যানার বিছানা। লেজ টা খাড়া হয়ে গেলো ভয়ে। পরক্ষণেই দরজায় মীর কে দেখে নিশ্চিন্ত হলো লিন্ডা, কিন্তু মিরের দিকে তাকিয়েই স্থীর হয়ে গেলো ও।

ধুসর রঙা একটা ট্রাউজারের সাথে বুক খোলা চারকোল রঙা রোব পরিহিতা মীর কে দেখে থমকে গেলো লিন্ডা। হা করে তাকিয়ে দাঁড়ানো থেকে ধাম করে বসে পড়লো বিছানায়। অ্যানা চুলে বেনী করা রেখে তাকালো দরজার দিকে। গাঢ় ছাই রঙা ঘাড় বাবরি ঝাকড়া চুলের মীরের মুখে খোচাখোচা দাড়ীর আভাস যেন ওর সৌন্দর্য কে দ্বিগুণ করে তুলেছে। শক্তপোক্ত লোমশ বুক আর পেট টা কামরার বাতির আলোতে চকচক করে উঠছে। স্বর্ণালি চোখ জোড়ার ব্যাকুল দৃষ্টি দিয়ে ও তাকিয়ে আছে অ্যানার দিকে। অ্যানা নিজেও মীর কে দেখে কয়েক মুহুর্তের জন্য থমকালো যেন।

আজ কয়েকদিন খাবারে অনিয়ম করে মীরের মুখ খানা কিঞ্চিৎ শীর্ণ হয়ে গেছে, কিন্তু তাতে ওর সৌন্দর্য এক ফোটাও কমেনি, বরং ওর ম্যাজেস্টিক চেহারা টা আরও ধারালো হয়েছে। কিন্তু মীরের চোখে মুখে কেমন যেন উদভ্রান্ত ভাব! যেন কোনো কিছু নিয়ে ও প্রচন্ড চিন্তিত, বিক্ষিপ্ত, সেই চিন্তা যেন কোনো মনস্টার হয়ে দিনরাত তাড়া করে চলেছে ওকে! অ্যানা যার কোনো কূল কিনারা খুজে পাচ্ছে না।

খোলা চুলে এগিয়ে গিয়ে মীর কে আগলে নিলো অ্যানা। ওর প্রাণপ্রিয় অর্ধাংশ টা যত্নের অভাবে কেমনতর হয়ে যাচ্ছে দিন দিন৷ অ্যানার মায়া হলো প্রচন্ড। অনেক গুলো দিন পর মীরের নিকট ও নিজে থেকেই আজ অ্যাপ্রোচ করলো। দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে মীরের সামনে এসে দাঁড়িয়ে পায়ে ভর দিয়ে উচু হয়ে মীরের কপালে চুমু খেয়ে মীরের অশান্ত মন টাকে শান্ত করে দিলো ও৷ তারপর মীর কে বিছানায় বসতে বলে মীরের জন্য তৈরি করা খাবার গুলো নিয়ে আসতে যেতে নিলো কিচেনে৷ কিন্তু তার আগেই বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসা মীর ওকে এক টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে এসে ওকে দুহাতে জড়িয়ে নিয়ে ওর বুকে মুখ ডুবিয়ে আবদারের সুরে বলল,

— এভাবে থাকো এখানে কিছুক্ষণ!

অ্যানা ওর ঝাকড়া চুল গুলোর ভেতরে নিজের আঙুল গুলো সঞ্চালন করতে করতে শুধালো,

— ক্ষিদে পায়নি? খাবে না?

— পেয়েছো তো, অনেক রকমের ক্ষিদে। তার একটা এখন মেটাচ্ছি।

নিজের বাহুবন্ধনী আরও একটু শক্ত করে নিয়ে বলল মীর৷ অ্যানা ওর মুখ খানা নিজের দুহাতে নিয়ে উচু করে নিজের দিকে ফিরিয়ে ওর ঠোঁটে আলতো করে একটা চুমু খেয়ে স্নিগ্ধ কন্ঠে বলল,

— আগে খেয়ে দেয়ে পেট ভরিয়ে নাও, তারপর তোমার অন্য ক্ষিদে গুলোর ব্যবস্থা করা হবে।

চলবে……

( অনেক কাজ থাকায় বেশি লিখতে পারিনি 😐, আগামী দিন বড় পর্ব দিবো প্রমিস 🤥)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here