বাদশাহ_নামা #পর্বসংখ্যা_৩৪ #আ_মি_না

0
2

#বাদশাহ_নামা
#পর্বসংখ্যা_৩৪
#আ_মি_না

সমুদ্রের নকশাদার ঝিনুকের ভেতরে সযত্নে লালিত হওয়া মুক্তার ন্যায় রঙের শরীরের অধিকারিনী সেই বিড়াল ছানার ন্যায় তুলতুলে মেয়েটির নাম রাখা হলো আনাবিয়া ফারহা দেমিয়ান। আসওয়াদ নিজেই নামকরণ করলো তার। একদম বাবার মুখের আদল পাওয়া আনাবিয়ার ছোট্ট, একটুখানি মুখ টার দিকে ঘন্টার পর ঘন্টা তাকিয়ে থাকতো আসওয়াদ৷ ওই মুখ টার দিকে তাকালেই এক রাশ মায়া এসে ঘিরে ধরতো ওকে। ওর পাষাণ হৃদয় নরম হয়ে আসতো, স্বাভাবিক হয়ে যেতো ওর কুঞ্চিত ভ্রুদ্বয়।

দেমিয়ান বংশের রীতি অনুযায়ী প্রত্যেক শেহজাদী কে জন্মের পর নিয়ে যেতে হতো লাইফ ট্রির নিকট৷ আনাবিয়ার ক্ষেত্রেও তার ব্যাতিক্রম ঘটলো না৷ একদিন যথাসময়ে রেশমি কাপড়ে মোড়ানো আনাবিয়া কে কোলে নিয়ে লাইফ ট্রির নিকট এলো আসওয়াদ৷ ইলহাম আর আজলান ও এল ওর সাথে৷

কিন্তু এবার আর ওদের গিয়ে লাইফ ট্রির জেগে ওঠার জন্য অপেক্ষা করা লাগলো না। ওরা যেতে যেতেই জেগে উঠতে থাকলো লাইফ ট্রি। ওরা লাইফ ট্রির দিকে যতই আগাচ্ছিলো আনাবিয়ার শরীরের খোদাইকৃত নকশা, মাথা ভর্তি সাদা রঙা চুল আর হীরক খন্ডের ন্যায় চোখ জোড়া উজ্জ্বল থেকে উজ্জলতর হয়ে উঠছিল। আর সেই সাথে একটু একটু করে জেগে উঠছিলো লাইফ ট্রি। আর আনাবিয়া কে নিয়ে লাইফ ট্রির কাছাকাছি পৌছানো মাত্রই লাইফ ট্রি তার ডালপালা গুলো দূর থেকেই বাড়িয়ে দিয়ে আসওয়াদের কোল থেকে এক প্রকার ছিনিয়ে নিয়েছিলো আনাবিয়া কে। আর এরপর নিজের ডালপালা গুলো দিয়েই আনাবিয়া কে দিয়েছিলো এক গাদা আদর। ছোট্ট আনাবিয়া নিজের কুটি কুটি হাত দিয়ে ধরে রেখেছিলো লাইফ ট্রির সরু ডাল। হয়তো এক মুহুর্তের জন্য ওর মনে হয়েছিলো যে ও নিজের মাকে পেয়ে গেছে।

আর এর পরমুহূর্তেই লাইফ ট্রির বিশাল কান্ডের ভেতর থেকে বের হয়েছিলো একটি লম্বা, সরু মেটালিক দরজা। বিপুল উজ্জ্বল আলো টিকরে পড়ছিলো সে দরজার ভেতর থেকে। আর সেখানে নিজের ডালপালা গুলোতে জড়িয়ে নিয়ে আনাবিয়া কে ভেতরে ঢুকিয়ে নিয়েছিলো লাইফ ট্রি। আর সেদিনই আসওয়াদ বুঝেছিলো যে এই লাইফ ট্রির আদল গাছের মতো হলেও এটা আসলে গাছ নয়, অন্য কোনো কিছু। কিন্তু ঠিক কি সেটা ওরা কেউই জানে না!

কিছুক্ষণ নিজের ভেতরে রাখার পরই আনাবিয়া কে বের করলো লাইফ ট্রি। ওর সাথে ঠিক কি করা হলো সেটা আসওয়াদ জানে না। জিজ্ঞেস করারও কোনো অপশন নেই। নিজের বুকের ভেতর থেকে বের করে দিয়ে আনাবিয়া কে আবার আসওয়াদের কোলে দিলো লাইফ ট্রি। আর এরপরই লাইফ ট্রি দিলো সবচেয়ে আশ্চর্যজনক মেসেজ টি।

আনাবিয়া কে আসওয়াদের কোলে দিয়ে নিজের সরু ডাল গুলো দিয়ে আসওয়াদের হাতের ভেতরে আনাবিয়ার ছোট্ট হাতটা রেখে, নিজের ডাল দিয়েই ওদের দুজনের আঙুলে আঙটি বদলের ন্যায় পরিয়ে দিয়ে ডাল পালা দিয়ে আসওয়াদের সামনে লিখলো,

— মেইক হা’ ইয়ো’ ওয়্যাইফ।

লাইফ ট্রির এমন মেসেজে অবাক হলো ওখানে উপস্থিত সবাই। ওরা যতদূর জানতো দেমিয়ান বংশে নিজেদের ভেতরে বিয়ে সম্পুর্ন নিষিদ্ধ, হোক সেটা জায়েজ তবুও। কারণ এতে শেহজাদী দের প্রাণনাশের বিপুল আশঙ্কা থাকে। কিন্তু সবকিছু জেনেও লাইফ ট্রির এমন সিদ্ধান্ত অবাক করলো আসওয়াদ কে। দ্বিধাভরা দৃষ্টিতে নিজের কোলে থাকা আনাবিয়া কে একবার পরখ করলো ও, বড়বড় দৃষ্টি নিয়ে আনাবিয়া তার দিকেই তাকিয়ে আছে। আসওয়াদ ভাবলো কিছুক্ষণ, তারপর নিজের মনেই বলে উঠলো, ‘মন্দ হয় না!’

.

ছোট্ট তুলতুলে আনাবিয়া দেমিয়ান প্রাসাদের বিপুল আভিজাত্যে বেড়ে উঠতে থাকলো ধীরে ধীরে। কিন্তু তার অনেক বাতিক! সে এতটুকুন হলে কি হবে, সে তার রক্তের সম্পর্কের পাবলিক ছাড়া অন্য কারো কাছে কখনোই শান্ত থাকতো না। দাসী দের কেউ তাকে ধরলেই সে তারস্বরে চিৎকার পাড়তো। আর তার এই চিৎকারে অতিষ্ট হয়ে শেষ পর্যন্ত এই দুধের বাচ্চা টার দায়িত্ব নিতে হলো স্বয়ং আসওয়াদ কে৷ তার নাওয়া খাওয়া থেকে শুরু করে পটি করানোটাও সে নিজে হাতে করা শুরু করলো। এমন কি তার দুধ মা এসে যতক্ষণ তাকে খাওয়াবে ততক্ষণ আসওয়াদ নয়তো ইলহাম যে কারো একজন কে সেখানে উপস্তিত থাকতে হবে৷ দুজনের একই চেহারা হওয়ায় আনাবিয়া পার্থক্য ধরতে পারতো না, কিন্তু যেকোনো একজন কে সেখানে উপস্থিত থাকা চাই-ই চাই।

আজলান মাঝে মাঝে আসতো নাতনী কে দেখতে; সালিমের মুখের আদল পেয়েছে কিনা! ছেলে কে হত্যা করে কোথাও না কোথাও আজলানের যেন এতটুকু আফসোস থেকে গেছিলো। নাতনীর ওই হীরক খন্ডের ন্যায় উজ্জ্বল চোখ জোড়ায় যেন সে তার সন্তানের ছায়া খুজে বেড়াতো রোজ। আনাবিয়াও পরম শান্তিতে তার দাদাজানের বুকে মুখ লুকাতো, সে তো আর জানতো না যে তার সবচেয়ে আপন লোকটির হত্যাকারীর বুকেই সে শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ছে।

আনাবিয়ার সারাদিন টা কাটতো আসওয়াদ, ইলহাম নয়তো আজলানের কোলে। এর বাইরে আর কারো ছোয়া সে বরদাস্ত করতো না, রেগে ক্ষেপে উঠতো। আজলান তাই রসিকতা করে তার নাম দিয়েছিলো অ্যাংরি দেমিয়ান।

.

আসওয়াদ আজলানের বিগত কৃতকর্মের প্রমাণ জোগাড় করার জন্য দিন রাত এক করে ফেলতে শুরু করলো। কারণ একজন রাজপরিবারের সদস্য কে কোনো প্রমাণ ছাড়া সে কোনো অপরাধের জন্য অ্যাকিউজড করতে পারবে না। এতে তার শাসন ক্ষমতার ওপর প্রভাব পড়বে৷ কিন্তু উপযুক্ত প্রমাণ কোনোভাবেই জোগাড় করতে পারছিলো না ও, তবুও চেষ্টার ত্রুটি রাখছিলো না৷

কিন্তু এরপরই একদিন ঘটলো একটা অপ্রত্যাশিত ঘটনা। আনাবিয়া তখন তেরো মাসে পড়েছে। ও কারো কাছে থাকতে না চাওয়ার কারণে আসওয়াদ ওকে নিজের কামরাতেই রাখতো। ওর বিছানার পাসে ছোট্ট একটি কারুকার্য খচিত স্বর্ণের তৈরি দোলনাতে ঘুমাতো আনাবিয়া আর যতক্ষণ জেগে থাকতো ততক্ষণ থাকতো আসওয়াদের বিছানায়, হাজার চেষ্টা করলেও সেখান থেকে ওকে নড়ানো যেতো না। আসওয়াদের গায়ে পা তুলে দিয়ে শুয়ে শুয়ে খেলা করতো ও সারাক্ষণ। আসওয়াদ ওকে একা রেখে চলে যেতে নিলেই কান্না জুড়ে দিতো। তাই ওকে ঘুম পাড়িয়ে রেখেই আসওয়াদ কে বাইরে যেতে হতো সবসময়।

এমনি একদিনে আসওয়াদ বরাবরের মতো ওকে নিজের কামরায় অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখে কোনো এক কাজে চলে গেছিলো প্রাসাদের বাইরে। ও যখনি বাইরে যেত কামরার বাইরে বসিয়ে রেখে যেত কড়া গার্ড, যেন কোনোভাবেই কোনো শত্রু তার আনাবিয়ার একটি পশমও ছুয়ে দিতে না পারে৷ কিন্তু সেদিন কাজ শেষে প্রাসাদে ফেরার পরই নিজের কামরায় ঢোকার পথের অবস্থা দেখে আত্মা উড়ে গেলো ওর!

কামরার বাইরে থাকা সকল গার্ড গুলো অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে মেঝেতে। গার্ড দের এমন অবস্থা দেখে আসওয়াদ ঝড়ের গতিতে গিয়ে ঢুকলো নিজের কামরায়, ঢুকেই আগে দোলনা টা চেইক করলো। কিন্তু না, কোথাও নেই তার আনাবিয়া! সাথে সাথেই হন্তদন্ত হয়ে চার দিকে লোক পাঠালো আসওয়াদ। আর নিজে বসলো সিসি টিভি ফুটেজ চেইক করতে।

কিছুক্ষণ চেইক করার পরেই বুঝলো প্রাসাদের দাস দের ভেতরেরই একজন উচ্চপদস্থ দাস গার্ড দের দুপুরের খাবারের সাথে ড্রাগ মিশিয়ে খাইয়ে দিয়েছে৷ আর ওরা জ্ঞান হারালেই আনাবিয়া কে নিয়ে ভেগেছে। আসওয়াদ আর এক মুহুর্ত ও দাড়ালো না, নিজেও গার্ড নিয়ে চলল আনাবিয়া কে খুজতে।

আর আনাবিয়া কে খুজতে বের হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই আসওয়াদের নিকট তার ব্যিস্ট স্কোয়াডস এর থেকে খবর এলো জঙ্গলের এক কোণায় তার আনাবিয়া কে নিয়ে তারই পরিবারের সদস্য রা সওদা করছে কারো সাথে।

সেই মুহুর্তেই আসওয়াদ গার্ড নিয়ে রওনা দিলো সেদিকে। আর এরপর পৌছে গেলো সেই নির্দিষ্ট জায়গায় যেখানে আজলান আর ইলহাম মিলে আনাবিয়া কে সেই দাস টির থেকে নিয়ে তাকে তার পাওনা বুঝিয়ে দিচ্ছিলো।

আসওয়াদের উপস্থিতি টের পাওয়া মাত্রই তিনজন তিন দিকে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলো, কিন্তু তাদের সে চেষ্টা তৎক্ষনাৎ মাঠে মারা খেলো। ওরা পালানোর আগেই আসওয়াদের গার্ড গুলো ধরে ফেললো ওদের। আর এরপর জঙ্গলের ভেতরেই বিচার বসানো হলো ওদের তিনজনের।

এইসব পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্পুর্ন উদাসীন ছোট্ট আনাবিয়া এতক্ষণ চুপটি করে ওর দাদাজানের বুকে মাথা রেখে শুয়ে ছিলো নিশ্চিন্তে। চোখ জোড়া পিটপিট করে তাকাচ্ছিলো চারদিকে। কিন্তু আসওয়াদ কে দেখা মাত্রই আসওয়াদের দিকে নিজের কুট্টু কুট্টু হাত জোড়া বাড়িয়ে দিলো ও। আসওয়াদ এগিয়ে এসে আজলানের ভীতসন্ত্রস্ত চোখ জোড়াতে হাড়হীম করা দৃষ্টি রেখে হাত বাড়িয়ে আনাবিয়া কে নিয়ে নিলো নিজের বুকে। তারপর গার্ড দের কে নির্দেশ দিলো আজলানের হাত জোড়া কড়া করে বাধার।

আনাবিয়া কে চুরি করে আনা দাস টার শাস্তি প্রথমেই দেওয়া হলো। আজলান আর ইলহাম দুজন কে সামনে রেখেই সে দাস টিকে নিজের ব্যিস্ট স্কোয়াডস এর মুখে হাত পা বেধে ছেড়ে ফিলো আসওয়াদ। হিংস্র পশু গুলো জীবন্ত অবস্থাতেই নিজেদের ধারালো দাঁতে পিষে দাস টাকে ছিড়ে ছিড়ে খেয়ে ফেললো ওদের সামনেই!

এ দৃশ্য দেখে আজলান বমি করে দিলো সাথে সাথে, আর ইলহাম আতঙ্কিত হয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে একনাগাড়ে আসওয়াদ কে বলে দিল সব। যা বলল তার সারমর্ম এই যে, আজলান তাকে এতদিন ধরে বলছিলো যে দেমিয়ান বংশের শেহজাদী গুলো বিপুল ক্ষমতার অধিকারী হয়। তাই আসওয়াদের বদলে যদি সে আনাবিয়া কে বিয়ে করতে পারে তবে তাকে পঞ্চদ্বীপের বাদশাহ হওয়া থেকে কেউ তকে আটকাতে পারবে না৷ তাই আনাবিয়া কে আসওয়াদের থেকে দূরে রেখে দিয়ে তাকে নিজে বড় করার জন্যই আনাবিয়া কে ওর কিডন্যাপ করা।

আসওয়াদ আজলানের নিকট তার এমন কথা ও কাজের জবাব চাইলে আজলান উত্তরে বলে যে আনাবিয়া তার নাতনী, তাই তাকে সে কি করবে না করবে সেটা তার ব্যাপার।

আজলানের এমন উত্তরের প্রতিউত্তরে আসওয়াদ একে একে আজলানের করা খুন এবং অপরাধের আদ্যপান্ত বিবরণ দিতে শুরু করলে আজলানের পাশে থাকা ইলহাম ঝটকা খেলো একটা। এতদিন যার সাথে সে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করেছে শেষ মেশ সেই তার বাবার হত্যাকারী শুনে ইলহাম যেন আকাশ থেকে পড়লো! আর আজলান যে এতদিন ক্ষমতা পাওয়ার আশায় ইলহাম কে ব্যাবহার করে কাজ চালিয়ে নিয়েছে, এবং তার নিজ সন্তান কেও সে-ই হত্যা করেছে এইটা শুনে আরও বেশি চমকালো ইলহাম। নিজেকে ওর বড্ড বোকা মনে হলো! কিন্তু তখন আর কিছুই করার নেই। যা হওয়ার তা তো ইতোমধ্যেই হয়ে গেছে!

আসওয়াদ রাজপরিবারের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য কে অপহরণের চেষ্টায় অভিযুক্ত করে ইলহাম কে আজীবনের জন্য পঞ্চদ্বীপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ওকে ডার্ক প্যালেসে নির্বাসিত করার হুকুম জারি করলো। আর আজলান কে শাস্তি দিলো তার চিরাচরিত নিয়মে।

রেড জোনের জঙ্গলে ওকে ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যেতে বলল আসওয়াদ। আর নিজের ব্যিস্ট স্কোয়াডস এর সমস্ত সদস্য কে লেলিয়ে দিলো ওর পেছনে। আর ওদের কে বলে দিলো আজলান কে একটু একটু করে ছিড়ে ছিড়ে খেতে, যেন ওর শরীরের শেষ মাংস টুকরো টা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওর মৃত্যু না হয়। আর এসব বিষয় থেকে সম্পুর্ন উদাসীন আজলান নিজের প্রাণ বাচানোর শেষ চেষ্টা পেয়ে দিকবিদিকশুন্য হয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটলো জঙ্গলের ভেতরের দিকে। আর সে জঙ্গলে ঢোকার কয়েক মুহুর্ত পর থেকেই আসওয়াদের কানে ভেসে আসতে থাকলো আজলানের গগনবিদারী চিৎকার। থেকে থেকে আজলানের করা সেই প্রচন্ড যন্ত্রণার চিৎকারে আসওয়াদের মনে নেমে এলো প্রশান্তি। এদিকে আসওয়াদের বুকে চুপটি করে লেপ্টে থাকা ছোট্ট আনাবিয়ার মস্তিষ্ক আজলানের এমন চিৎকারের কারণ বুঝতে না পেরে ক্ষণে ক্ষণে আতঙ্কে কেঁপে উঠতে থাকলো। আর আসওয়াদ তার বুকের ভেতর গুটিসুটি মেরে পড়ে থাকা আনাবিয়া কে শক্ত করে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো,

— ন্যো ওয়ান’স এভার গ’না হার্ট ইয়্যু লাভ
আ’ম গ’না গ্যিভ ইয়্যু অল অভ মা’ লাভ
ন্যো বাডি ম্যাটার্স লাইক ইয়্যু (রকাবাই বেইবি)

.

দুপুর গড়িয়ে বিকেলের দিকে এগোচ্ছে। রিসোর্টের স্যুইমিং পুলের ওপর ছায়া পড়ে গেছে৷ ম্যাটের ওপর বসে কোনো এক অনির্দিষ্ট বস্তুর দিকে অপলকে তাকিয়ে ধ্যানমগ্ন হয়ে আছে অ্যানা৷ ফ্যালকন একপাশে বসে নাক টানছে আর মাঝে মাঝে চোখের কোণা মুছছে৷ এত ট্রাজিক হিস্ট্রি ওর সহ্য হয়নি।

জায়ান চুপ করে বসে আছেন। কিছুক্ষণ পর পাশে থাকা বোতল থেকে দুই চুমুক পানি খেয়ে নিয়ে নিরবতা ভেঙে তিনি অ্যানার উদ্দ্যেশ্যে বললেন,

— হ্যিজ ম্যাজেস্টির একটি সন্তানের জন্য এত ডেস্পারেট হওয়ার কারণ এটাই। যে সাম্রাজ্যের জন্য উনি ওনার পরিবারের প্রত্যেকটি মানুষ কে হারিয়ে ফেললেন সেই সাম্রাজ্য কে উনি কখনোই হারিয়ে যেতে দেবেন না। উনি যদি কোনো সাধারণ মানুষ হতেন আর আপনি যদি সন্তান জন্মদানে অক্ষম হতেন তবে কখনই উনি আপনাকে এই সন্তানের কথা মুখ ফুটেও বলতেন না, কোনোদিন এই নিয়ে আফসোস ও করতেন না৷ উনি এই পঞ্চদ্বীপের বাদশাহ, নিজের সাম্রাজ্য কে এগিয়ে নিতে ওনার একটা সন্তানের অবশ্যই প্রয়োজন। এখন এই সন্তান লাভের দুইটা রাস্তা, প্রথম টা হলো তাকে দাসী দের সাথে থেকে সন্তান লাভ করতে হবে, আর দ্বিতীয় টা হলো আপনাকে অন্য কারো সাথে বিয়ে দিয়ে আপনার সন্তান কে রাজ সিংহাসনে বসাতে হবে। দুই ক্ষেত্রেই কাউকে না কাউকে অন্য কারো হতে হবে। কিন্তু দ্বিতীয় রাস্তার কথা মুখে আনলেও বিপদ। উনি বেচে থাকতে আপনার দিকে কেউ চোখ তুলে তাকানোরও সাহস পাবে না। সুতরাং প্রথম রাস্তা ছাড়া আর অন্য কিছু রইলো না।

জায়ানের কথা শেষ হলে অ্যানা শূন্যে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো একটা। তারপর ম্যাট থেকে উঠে দাড়াতে দাড়াতে নির্লিপ্ত গলায় বলল,

— আপনারা বসুন, আমি খাবার গরম করে নিয়ে আসি৷

বলেই সেখান থেকে প্রস্থান করলো ও। আর তার কিছু মুহুর্ত পরেই কিমালেবের আকাশ জুড়ে দেখা দিলো ছাই রঙা মেঘের ঘনঘটা, আর তার পরপরই শুরু হলো বৃষ্টি; স্নিগ্ধ, ঝিরঝিরে বৃষ্টি……

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here