প্রাপ্তমনস্ক_এলার্ট #বাদশাহ_নামা #পর্বসংখ্যা_৩৫_দ্বিতীয়াংশ #আ_মি_না

0
2

#প্রাপ্তমনস্ক_এলার্ট
#বাদশাহ_নামা
#পর্বসংখ্যা_৩৫_দ্বিতীয়াংশ
#আ_মি_না

৫০. বেলা প্রায় দশটা। পানিশমেন্ট এরিয়ায় শাস্তিপ্রাপ্ত ছেলে গুলোকে সকাল বেলা তে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে কিছুই পেটে না পড়ায় ওরা এখন ডাইনিং টেবিলে বসে গোগ্রাসে গিলছে। নিজেদের কে পরিষ্কার করার মতো সময় ও ওদের হয়নি। কোনো রকমে হাত মুখ ধুয়েই খেতে বসে গেছে। গা থেকে বিশ্রী, উটকো গন্ধ আসছে ওদের।

আজকে ডাইনিং এরিয়াতে সার্ভিং এর দায়িত্ব শার্লটের। ছেলে গুলোর টেবিলে সার্ভ করতে গিয়ে শার্লটের গা গুলিয়ে আসছে। তবুও নাক মুখ চেপে নিজের দায়িত্ব পালন করে চলেছে ও৷ ব্রায়ান বসে আছে লম্বা ডাইনিং টেবিল টির অন্য প্রান্তে। বসে বসে ছেলে গুলোকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তে পর্যবেক্ষণ করছে ও।

ছেলে গুলো না খেয়ে খেয়ে শুকিয়ে আমসি হয়ে গেছে ঠিকই, কিন্তু চেহারার তেজ কমেনি একটারও। এখনো আশেপাশের মেয়ে গুলোর দিকে বিশ্রী দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে ওরা! এই জন্যই হয়তো বলে, কয়লা ধুইলে ময়লা যায় না!

ব্রায়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছেলে গুলোর থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে উঠে যেতে নিলো কিচেনের পেছন দিকে করা ওর শাক সবজির বাগানের দিকে। তখনি রেসিডেন্স এরিয়ার দিক থেকে হেটে হেটে এদিকে আসতে দেখা গেলো অ্যানাকে।

কালো রঙা হুডির সাথে ছাই রঙা ট্রাউজার পরিহিতা অ্যানা আজ আর মুখে মাস্ক পরেনি। ব্রায়ান সেদিকে তাকিয়েই থমকে গেলো! এই তো সেই মুখ খানা, যেটা দেখে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ও অ্যানা কে চুমু খেয়ে বসেছিলো! আর তারপর থেকেই তো অ্যানা ওর ওপর বেজার হয়ে আছে!
শুকনো একটা ঢোক গিললো ব্রায়ান! অ্যানার ওই শুভ্র মুখশ্রীর টেরাকোটা রঙা ঠোঁটের ওপর থেকে চোখ সরিয়ে নিতে চাইলেও সরাতে পারলো না ও। হা হয়ে তাকিয়ে রইলো অ্যানার চেহারার দিকে। ব্রায়ানের আশেপাশে কর্মরত নারী, পুরুষ সব ওয়ার্কার্স দেরই কাজ থেমে গেলো এক প্রকার! এর আগে কখনো অ্যানার চেহারা টা ওরা দেখেনি কেউ। আজ অ্যানার শুভ্র মুখ খানা দেখে হা হয়ে গেলো ওরা! একটা মানুষ এত টা সুশ্রী কিভাবে হতে পারে মাথায় এলো না ওদের!

হঠাৎ চারপাশ টা অত্যাধিক নিরব অনুভব করে ডাইনিং টেবিলে কর্মরত শার্লটও ফিরে তাকালো সেদিকে। আর তাকিয়েই চোখ কপালে উঠে গেলো ওর! পুতুলের মতো চেহারার একটি মেয়ে ধীর গতিতে হেটে আসছে ওরই দিকে! মুখ খানাতে যেন তার আভিজাত্য ফুটে ফুটে উঠেছে! শার্লট অবাক হলো! এটা ওদের অ্যানা! এমন সুন্দরী! এই মাত্রাতিরিক্ত সুন্দরী টা তাদের সাথে কি করছে! কি অপরাধ করেছে ও যার জন্য আজ ও এইখানে! এমন হীরের মতো চমকানো একটা মেয়েকে ওরা কিভাবে শাস্তি দিতে পারলো! ওর স্থান তো হওয়া উচিত ছিলো শিরো মিদোরির প্রাসাদে! ওর হওয়া উচিত ছিলো বাদশাহর খাস দাসী! শিরো মিদোরির বেগম! ও এখানে কেন!

ব্রায়ান কে পাশ কাটিয়ে ধীর পায়ে শার্লটের কাছাকাছি এগিয়ে এলো অ্যানা। অ্যানা কে এগিয়ে আসতে দেখে হতভম্ব মুখ নিয়ে শার্লট ও এগিয়ে গেলো সেদিকে। অ্যানা ওর দিকে তাকিয়ে ওর চিরাচরিত গাম্ভীর্যতা বজায় রেখে বলে উঠলো,

— মুখ বন্ধ কর, মাছি ঢুকবে।

শার্লট সাথে সাথেই নিজের হা হয়ে থাকা মুখ টা বন্ধ করে নিলো। তারপর আরও কিছুক্ষণ অ্যানার স্নিগ্ধ মুখের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থেকে বলে উঠলো,

— তুই কত সুন্দর রে অ্যানা! তোকে দেখে তো আমার এখন হিংসা হচ্ছে!

শার্লটের কথায় অ্যানা লজ্জা পেলো যেন, মৃদু হাসলো ও৷ শার্লট ওর শুভ্র, নরম হাত টা ধরে নিজের মুঠির ভেতর পুরে আবার জিজ্ঞেস করলো,

— কখন এসেছিস তুই? এই কদিনে তোকে কত মিস করেছি! কোথায় গেছিলি বলতো?

— কোথায় গেছিলাম সেটা বলতে পারবো না৷ তবে আশেপাশেই ছিলাম! কাল রাতে এসে পৌঁছেছি, তোরা ঘুমিয়ে গেছিলি ততক্ষনে।

মৃদুস্বরে উত্তর করলো অ্যানা। শার্লট ওর দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই হঠাৎ উচ্ছসিত হয়ে বলে উঠলো,

— অ্যাই, তুই তো ছিলি না! আমাদের ওয়ার্কার্স দের ভেতরে তো বিয়ে লেগেছে রে!

— কি বলিস! সিরিয়্যাসল্যি! কারা বিয়ে বসছে?

— লিলি, আর পিটার! ওদের নাকি এক সাথে কাজ করতে করতে প্রেম হয়ে গেছে! এখন শাস্তি কবে শেষ হবে তার তো কোনো ইয়ত্তা নেই! তাই ওরা এখানেই বিয়ে টা সেরে নিতে চায়।

— প্রাসাদ থেকে পারমিশন দিয়েছে?

— হ্যাঁ! ভাইয়া প্রাসাদে গিয়ে ওখানের কর্মচারী দের সাথে কথা বলেছিলো গতকাল। ওরা বলেছে বিয়ের অনুষ্ঠান করা যাবে, অসুবিধা নেই। আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে বিয়ে উপলক্ষে আমাদের কে এই মাসের বেতনের সাথে ফিফটি পার্সেন্ট বোনাসও দেওয়া হচ্ছে, শপিং এর জন্য! এর আগে কখনো এমন হয়নি নাকি, তাই! আমার তো খুশিতে নাচতে ইচ্ছা করছে রে অ্যানা!

শার্লটের এমন খুশি দেখে ওর ফোলা ফোলা গাল দুটো দুহাতে চেপে দিলো অ্যানা। তারপর বলল,

— কালকেই বেতন তুলে শপিং করিস।

— হ্যাঁ, ভাইয়া গতকাল প্রাসাদে গিয়ে ওখানের বোচকা ওয়ালা বুড়ি কে বলে এসেছে আগামী কাল ভালো ভালো পোশাক নিয়ে আসতে। আমাদের মেয়েরা কিনবে। আমি তো ভাইয়া কে বলে দিয়েছি বোচকা ওয়ালা বুড়ি আসলে আমি আগে যাবো তার কাছে, গিয়ে আমাদের বেগমের থেকে কোনো পোশাক এসেছে কিনা দেখবো! তুই জানিস না! কয়েক বছর আগে লিলি একটা পোশাক পেয়েছিলো বেগমের, বোচকা ওয়ালা বুড়ির কাছে। এত্ত দারুণ, এত্ত দারুণ যে কি বলবো! পার্লের মতো রঙ, এত্ত ফ্লাপি, আর এত্ত স্মুদ! শুধু হাত দিয়ে ছুয়ে দিতে ইচ্ছা করছিলো পোশাক টাতে! কিন্তু লিলি শয়তান আমাকে বকেছিলো হাত দিয়েছিলাম তাই! হতচ্ছাড়া বেডি! লিলি বোধ হয় বিয়েতে ওটাই পরবে।

অ্যানা ঠোঁট টিপে হেসে জিজ্ঞেস করলো,

— বেগমের পোশাক পরার খুব শখ?

— অন্নেএএএএএক!

— ঠিক আছে, আমি ব্যাবস্থা করে দিবো। প্রাসাদের এক লোকের সাথে আমার কানেকশন আছে, জোগাড় হয়ে যাবে। ফ্রি তে।

— ফ্রি তে! কিন্তু কিভাবে সম্ভব? বোচকা ওয়ালা বুড়ি তো বলে অনেক দাম দিয়ে নিয়ে আসে নাকি!

— ও বুড়ি মিথ্যা বলে। যে পোশাক গুলো প্রাসাদ থেকে আসে সেগুলো প্রাসাদের মেয়ে রা ওকে এমনিতেই দিয়ে দেয় বাইরের স্বল্পাবস্থা সম্পন্ন মেয়েদেরকে দান করে দেওয়ার জন্য। কিন্তু বোচকা বুড়ি সেটা না করে পোশাক গুলো এইখানে এনে দাম দিয়ে বিক্রি করে বিজনেস করে!

— কিইইইই! বুড়ি তো খুব শয়তান দেখি! কাল আসুক বুড়ি, হবে ওর!

নাকের পাটা ফুলিয়ে তেজ দেখিয়ে বলল শার্লট। অ্যানা ওর তেজ দেখে হাসলো সামান্য। তারপর বলল,

— আমাকে কাজে যেতে হবে। আসি এখন।

অ্যানা চলে যেতে নিতেই শার্লট ফট করে চাপা গলায় বলে উঠলো,

— এই বিয়ে টা শেষ হওয়ার পর খুব শিঘ্রই আমরা আর এক জোড়ার বিয়ে দেখবো হয়তো। আশা করি আমাদের সুন্দরী পাত্রী অমত করবে না! আমাদের পাত্র টা তো খারাপ না! ওরকম ছেলে একশতে একটা মিলে।

অ্যানা চলে যেতে নিয়েও আবার দাঁড়িয়ে গেলো। মুখ খানা সামান্য ঘুরিয়ে পেছনে থাকা শার্লটের উদ্দ্যেশ্যে চোখে হেসে বলে উঠলো,

— পাত্র টা খারাপ না। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমি বিবাহিতা! নইলে ভেবে দেখতাম।

— বিবাহিতা মানে? সত্যি তুই বিবাহিতা?

ভ্যাবাচেকা খেয়ে হতভম্ব মুখ করে প্রশ্ন টা করলো শার্লট। অ্যানা ঠোঁট টিপে হেসে বলল,

— হ্যাঁ, এই তো আগামী মাসের দশ তারিখে আমাদের ফিফ্‌টি এইটথ্‌ অ্যানিভার্সারি।

শার্লট হা হয়ে কিছুক্ষণ অ্যানার বলা কথাটা মাথার ভেতরে নাড়াচাড়া করলো, আর তারপরই নিজের ডান হাত খানা বাতাসে নাড়িয়ে অ্যানার কথা টাকে সম্পুর্ন উড়িয়ে দিয়ে হাসি মুখে বলল,

— যাহ্‌, দুষ্টু মেয়ে! শুধু মিথ্যা কথা বলে!

তারপর আবার ফিরে গেলো ডাইনিং টেবিলের দিকে। ছেলে গুলোর খাওয়া প্রায় শেষের দিকে। অ্যানা ওর যাওয়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে গোফের তলে হেসে সেখান থেকে প্রস্থান করলো। সত্যি কথার আসলেই ভাত নেই!

৬০. রাতের প্রায় দুইটা। মীরের চোখ জোড়া সামান্য লেগে এসেছিলো। এত রাত হওয়ার পরও নিজের কামরার স্বর্ণ আর রৌপ্যের নকশা করা মাঝারি আকৃতির চন্দন কাঠের তৈরি টেবিলটায় বসে বসে রাজ্যের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ঘাটাঘাটি করছিলো ও৷ কখন চোখ টা লেগে এসেছে টেরই পায়নি। কাজের চাপে ও দম ফেলার ফুরসতটুকুও পাচ্ছে না।

জোরে শ্বাস ফেলে চেয়ার ছেড়ে উঠে গেলো মীর৷ তারপর ওয়াশরুমে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে এসে আবার চেয়ারে বসার প্রস্তুতি নিলো৷ তখনি ওর বুকের ভেতর টা কেঁপে উঠলো সামান্য।
মৃদু হাসলো মীর। ওর আদরের শিনু তবে ওর কাছাকাছিই আছে! চেয়ারে বসার সিদ্ধান্ত টা বাদ দিয়ে কামরার ডান দিকে থাকা সাদা রঙা সরু দরজা টা খুলে চলে গেলো ও অ্যানার কামরায়।

কিছুক্ষণ বাদেই অ্যানার কামরার জানালা টার গ্লাসের পাশে থাকা সরু, চিকন জায়গাটা দিয়ে কামরার ভেতরে চলে এলো একটি ছোট্ট সরু ডাল। তারপর ধীরগতিতে, নিঃশব্দে সেটা খুলে ফেললো জানালার গ্লাস টা৷ আর তার পরমুহূর্তেই কামরার ভেতরে প্রবেশ করলো অ্যানা৷ ভেতরে ঢুকে জানালার গ্লাস টা আবার আটকে দিয়ে চাপা গলায় বলে উঠলো,

— লাইটস অন।

ওর কমান্ডের সাথে সাথেই জ্বলে উঠলো কামরার সিলিঙের সাথে লাগোয়া, এক তোড়া বুনো ফুলের ন্যায় নকশার সোনা রঙা স্ফটিকের ঝাড়বাতি। মুহুর্তেই স্বর্ণালি আলোয় আলোকিত হয়ে উঠলো অ্যানার কামরাটা। অ্যানা কামরার মাঝখান টায় দাঁড়িয়ে কামরার চারপাশ টায় এক বার নজর বুলালো।
অনেক অনেক গুলো দিন পর আজ নিজের কামরায় এলো অ্যানা। এই কামরা টায় কতই না স্মৃতি লুকিয়ে আছে ওর আর মীরের! মীরের সাথে ঘুমাবে বলে কত কাহিনীই না করতো ও! কিন্তু ওর তখনও বয়স হয়নি বলে মীর ওকে কাছেই নিতে চাইতো না! সমস্ত রাত গাল ফুলিয়ে ও বসে থাকতো বিছানায়, ঘুমাতো না। শেষ মেশ মীর এসে ওকে নিয়ে যেতো ওর কামরায়।

সমুদ্রের ঝিনুকের আকৃতির ন্যায় বিছানা টার দিকে তাকালো ও একবার। এই বিছানা টায় মীরের সাথে কতই না আদর সোহাগ হয়েছে ওর! হঠাৎ হঠাৎ মাঝরাতে এসে উপস্থিত হয়ে ওর ফিটফাট বিছানাটাকে কত্ত অগোছালো করে দিয়েই না মীর ভোর বেলা বীরদর্পে বেরিয়ে যেতো! বেরিয়ে যাওয়ার আগে ওর কাঁচা ঘুম টা ভেঙে দিয়ে ওকে জ্বালাতন করতে ভুলতো না!

সবকিছু যেন এখনো চোখের সামনে ভাসছে অ্যানার। মৃদু হেসে বিছানার দিক থেকে চোখ সরিয়ে ও এগোলো ওর ক্লজেটের দিকে। ক্লজেট বললে ভুল হবে, বলা যেতে পারে আস্ত একটা শপিং মল! ওর জুতা থেকে জুয়েলারি, সবকিছুর যে কত শত কালেকশন এখানে আছে তা ও নিজেও জানে না! একটা জিনিসও কখনো ওর নিজ হাতে কেনা নয়। পোশাক গুলো সব ওর মীর নিজে থেকে প্রাসাদের দক্ষ ফ্যাশন ডিজাইনার্স আর টেইলর্স দিয়ে বানিয়ে দিয়েছে। জুয়েলারি গুলোও প্রাসাদের দক্ষ জুয়েলার্স দের দিয়েই বানানো। বাইরে থেকে খুব কম জিনিসই কেনা ওর।

ক্লজেটের দরজাটা আস্তে করে ঠেলে ভেতরে ঢুকলো অ্যানা। ভেতরে ঢোকা মাত্রই ওর নাকে এসে বাড়ি খেলো মীরের শরীরের ঘ্রাণ। কিছুক্ষণের জন্য থমকালো অ্যানা। তারপর ভাবলো মীর তো পাশের রুমেই থাকে। ওর শরীরের ঘ্রাণ এখানে আসা অস্বাভাবিক কিছু না! তারপর চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো ওর পোশাক কালেকশনের দিকে, নিঃশব্দে হেটে গেলো যেন কোনো রকম কোনো শব্দে মীরের ঘুম টা না ভেঙে যায়!

শার্লটের জন্য একটা সুন্দর পোশাক নেওয়া দরকার। লিলির জন্যও নেওয়া প্রয়োজন। মেয়েটা নাকি নিজের বিয়েতে পুরোনো পোশাক পরবে! বিয়ে জিনিস টা জীবনে একবারই আসে। এদিনে সবকিছু সুন্দর, নতুন হওয়া চাই। আর মেয়েটা কিনা একটা পুরোনো পোশাক পরবে! ব্যাপার টা মেনে নেওয়া কষ্টকর!

নিজের একেবারে নতুন পোশাক গুলোর ভেতর থেকে শার্লটের জন্য একটা মেরুণ রঙা, ফ্লাপি, অফ শোল্ডার টি লেঙ্গথ এর গাউন নিলো অ্যানা। এরপর লিলির জন্য সাদার ভেতরে কোনো গাউন আছে কিনা খুজতে শুরু করলো। নতুনের ভেতরে কোনো সাদা গাউন পেলো না। তাই এবার গেলো একটু স্বল্প পুরোনোর দিকে।
কিছুক্ষণ খুজতেই পেয়ে গেলো একটা সাদা রঙা, স্টোনের কাজ করা বল গাউন। কুরো আহমারে কোনো এক অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য মীর এটা তৈরি করে দিয়েছিলো ওকে। ওই একবারই পরা হয়েছে এটা ওর৷ হাত বাড়িয়ে সে পোশাক টা নামালো ও। তারপর পোশাকের কোথাও কোনো খুত আছে কিনা দেখতে লেগে গেলো।
ঠিক তখনি পেছন এক জোড়া কালো কুচকুচে, পেশিবহুল ইস্পাত-দৃঢ় হাত এসে জড়িয়ে নিলো ওকে। সাথে সাথেই চমকে উঠলো অ্যানা। হাত জোড়ার মালিক নিজের প্রশস্ত বুকের সাথে অ্যানার শুভ্র মোলায়েম পিঠ খানা ঠেকিয়ে নিয়ে অ্যানার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে মোলায়েম কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,

— তোমার জন্য কোনটা নিবে? আমি চ্যুজ করে দিবো?

অ্যানা দুই হাতে দুইটা পোশাক ধরা অবস্থাতেই স্থির হয়ে রইলো৷ অতঃপর একটা ঢোক গিলে উত্তর দিলো,

— প্রয়োজন নেই। বিয়েতে আমি যাচ্ছিনা!

— কেন যাচ্ছোনা? যেও! একটু আনন্দ ফুর্তি করো তোমার না হওয়া ননদের সাথে। সারাক্ষণ এইভাবে মন খারাপ করে থাকতে হয় না! হাসি খুশি থাকবে সবসময়, আগে যেমন থাকতে! তুমি এইভাবে মন খারাপ করে থাকলে আমার ভালো লাগে না একটুও!

অ্যানার ফর্সা কাধের ওপর থেকে হুডির কিছু অংশ সরিয়ে সেখানে ঠোঁট ছুইয়ে বলল মীর৷ অ্যানা স্থীর হয়ে দাঁড়িয়ে থেকেই ঝাঝাল কন্ঠে উত্তর দিলো,

— খারাপ লাগতেও তো দেখছিনা! আর আমি এমন কেন থাকি সেটা তুমি ভালো করেই জানো। তাই এসব নাটক আমার সামনে করবে না!

— ঠিক আছে করবো না নাটক, সিনেমা করবো। তুমি চাইলে সিরিজও করবো।

বলে আরও একটু অ্যানার সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করলো মীর। মীরের মতলব বুঝতে পারা মাত্রই ঝড়ের গতিতে মীর কে নিজের থেকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিয়ে, ভ্রু জোড়া কুচকে অ্যানা ঝাঝিয়ে বলে উঠলো,

— ওই! হতচ্ছাড়া কালাভুনা! আমার একাকিত্বের সুযোগ নিতে চাও তুমি!

ধাক্কা খেয়ে অ্যানার থেকে কিছুটা দূরে সরে যাওয়া মীর অ্যানার এমন চেহারা দেখে সশব্দে হেসে উঠলো, তারপর হাসি থামিয়ে বলল,

— এই তো! পুরোনো ফর্মে ফিরে আসছো৷ আরও একটু আসো!

মীর কে ঘর কাপিয়ে হাসতে দেখে মেজাজ তুঙ্গে উঠে গেলো অ্যানার। পোশাক দুটোকে ধাম করে হ্যাঙারে ঝুলিয়ে রেখে আবার দুকদম মীরের দিকে এগিয়ে এসে ওর বুক বরাবর নিজের দুহাত দিয়ে আরও একবার ধাক্কা দিয়ে তেজি গলায় বলে উঠলো,

— অ্যাই, কি ভেবেছো তুমি? আমার সাথে এমন তুলা তুলা খেললে আমি তোমার সামনে আমার লেইগ স্প্রেইড করে দেবো? কখনোই না, মিস্টার নামীর আসওয়াদ দেমিয়ান!

মীর মুখ কুচকে বলল,

— ছিহঃ! কি সমস্ত কথা বার্তা বলো!

তারপর মুখে হাত রেখে গলা খাকারি দিয়ে বলে উঠলো,

— প্লিজ, কন্টিন্যিউ!

অ্যানা কিছুক্ষণ শক্ত দৃষ্টিতে মীরের দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর পেছন ফিরে হ্যাঙার থেকে গাউন দুটো নামিয়ে, চোখ মুখ শক্ত করে সেখান থেকে চলে যেতে উদ্যত হলো। কিন্তু মীর কে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার আগেই নিজের শক্ত হাত জোড়া দিয়ে অ্যানা কে ধরে ফেললো মীর। তারপর ওকে আষ্টেপৃষ্টে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে ওর হাত থেকে পোশাক দুটো এক প্রকার ছিনিয়ে নিয়ে ছুড়ে ফেলে দিলো ক্লজেটের মেঝেতে। আর এরপর অ্যানা কিছু বুঝে ওঠার আগেই মীর ওর ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো অ্যানার ঠোঁট জোড়ায়! তারপর ওকে নিজের সাথে জড়িয়ে রেখেই ক্লজেটের ভেতর থেকে বের হয়ে চলে এলো অ্যানার কামরায়। তারপর অ্যানা কে নিয়েই ঝাপিয়ে পড়লো অ্যানার বিছানার ওপর৷

এতক্ষণ মীরের বাহুডোর থেকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য হাত পা ছোড়াছুড়ি করতে থাকা অ্যানা হাপিয়ে উঠে এক ঝটকায় নিজের মুখ খানা সরিয়ে নিলো মীরের মুখ থেকে। তারপর হাঁফাতে হাঁফাতে তেজি গলায় বলল,

— শুনো মীর! ছেড়ে দাও আমাকে, মোটেও আমার সাথে ইয়ে করার চেষ্টা করবে না!

— কিয়ে?

এক হাতে অ্যানা কে চেপে ধরে অন্য হাতে ওকে অনাবৃত করতে করতে মোহনীয় কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো মীর। অ্যানা প্রতিবাদ করে মীর কে কিছু বলতে নেওয়ার আগেই আবার নিজের ঠোঁট জোড়া দিয়ে অ্যানার সমস্ত কথা থামিয়ে দিলো মীর। এরপর ধীরে ধীরে পরিণত হতে শুরু করলো একটা ক্ষ্যাপাটে পাগলা ষাঁড়ে, সেই সাথে ক্ষেপিয়ে তুলতে থাকলো অ্যানাকেও। অ্যানার ভেতরে থাকা প্রতিবাদ গুলো মীরের উত্তরোত্তর বাড়ন্ত আদরের তোপে নিভে এলো যেন!

ঘনিষ্ঠ হওয়ার চরম মুহুর্তে অ্যানার কানের কাছে মুখ নিয়ে মীর ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো,

— কে যেন বলছিলো…..

অ্যানা শেষ করতে দিলো না ওর কথা টা! নিজের হাত টা মীরের মুখে চাপা দিয়ে ওর মুখ বন্ধ করে দিলো!

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here