প্রাপ্তমনস্ক_এলার্ট #বাদশাহ_নামা #পর্বসংখ্যা_৪৬ #রানী_আমিনা

0
3

#প্রাপ্তমনস্ক_এলার্ট
#বাদশাহ_নামা
#পর্বসংখ্যা_৪৬
#রানী_আমিনা

ছোট্ট চিরকুট টা পড়ে অ্যানার চোখে মুখে খুশির ঝিলিক দিয়ে উঠলো। এতসব ঝামেলার চক্করে অ্যানা তো ভুলেই গেছিলো আজ ওদের অ্যানিভার্সারি। কালাভুনা টা তবে এইসব করতে সারাদিন এর সামনে আসেনি!
গত দুবছরে মীর চাইলেও অ্যানা ওদের অ্যানিভার্সারি পালন করতে দেয়নি৷ শুধু কি অ্যানিভার্সারি, কিছুই পালন করেনি ও। বিশেষ দিনগুলোতে ও দিনের বেলাটা সমুদ্রের পাড়ে আর রাতের বেলাটা লাইফট্রির আশেপাশে ঘুর ঘুর করে কাটিয়ে দিতো। মীরের হাজার অনুরোধেও কোনো কাজ হতো না! কিন্তু এবার মীরের ওপর থাকা অভিমানের পাল্লাটা হালকা হয়ে গিয়েছে অনেক! আর কতগুলো দিন মানুষ টিকে বঞ্চিত করবে ও!

অ্যানা তাড়াহুড়ো করে বক্সের মুখ টা খুলে মেলে ধরলো সামনে। ভেতরে তাকাতেই দেখতে পেলো আর একটা চিরকুট। সেটা হাতে নিয়ে মেলে ধরে পড়লো,

“রাতের ন’টার ভেতর রেডি হয়ে বসে থাকবে, নটার ওপাশে যতগুলো সেকেন্ড লেইট করবে তত গুলো চুমু আমার পাওনা।”

লেখাটা পড়ে অ্যানার ঠোঁট জোড়া প্রসারিত হলো। কি ভেবে ও এবার চিরকুটের পেছন দিকটা মেলে ধরলো সামনে। সেখানে মীরের হাতে লেখা,

“ তুমি চাইলে দু ঘন্টা লেইট করতে পারো, আমি কিছু মনে করবো না”

অ্যানা ফিক করে হেসে দিলো। তারপর চিরকুট টা পাশে রেখে বক্সের ভেতর গিফট টাকে ঢেকে রাখা লালা রঙা রেশমি কাপড় টা সরালো অ্যানা৷ সরাতেই ওর চোখ জোড়া খুশিতে পরিপূর্ণ হয়ে গেলো। বিয়ের দিনের স্মৃতি গুলো মুহুর্তেই তরতাজা হয়ে উঠলো ওর। না চাইতেও চোখ থেকে দুফোটা নোনা জল গড়িয়ে পড়লো ওর কোলের পরে৷

৬৫. প্রাসাদের অন্দরমহলের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে চারজন বলিষ্ঠ শরীরের সুপুরুষ। সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিজেদের ভেতর হাসি তামাসা করছে তারা এসে থেকে৷ এ ওরে খোঁচাচ্ছে, ও এরে খোচাচ্ছে! সকলেরই পরণে সাদা রঙা শার্ট আর তার সাথে চারকোল রঙা প্যান্ট। শার্টের হাতা গুলো গোটানো, বুকের কাছটা আঁটসাঁট ভাবে লেগে আছে দেহের সাথে৷ তাদের কথার ফুলঝুরিতে প্রাসাদের অন্দরমহলে থাকা দাসী গুলো মাঝে মাঝেই উঁকি মেরে দেখে চলেছে এই সুদর্শন চার যুবককে৷

এমন সময় সেখানে এসে উপস্থিত হলো প্রাসাদের অন্দরমহলের গার্ড ইয়াসির। তাকে দেখা মাত্রই চারজন যুবকের ভেতরের সবচেয়ে বড়সড়, লম্বা ছেলেটা শুধালো,

— আম্মার রেডি হওয়া কতদূর ইয়াসির?

— শেহজাদী নামছেন। অন্দরমহল পেরিয়েই চলে আসবেন এক্ষুনি। আপনারা আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন৷

কোকোর দিকে এক পলক তাকিয়ে উত্তর করলো ইয়াসির। তারপর আবার অন্দরমহলের দিকে হাটা দিলো।

বাদশাহ এবং তার একমাত্র বেগমের আটান্নতম অ্যানিভার্সারি উপলক্ষে প্রাসাদ জুড়ে উৎসব চলছে৷ দাসীরা নিজেদের ভেতর খলবলিয়ে কথা বলে চলেছে৷ তাদের কথার প্রধান টপিক হলো শেহজাদী। শেহজাদী তাদের অন্দরমহলে আসেননা বললেই চলে! তাই এখানের বেশিরভাগ দাসীই শেহজাদীকে কখনো চোখের দেখা দেখেনি। শুধুমাত্র শুনেছে শেহজাদীর রূপের গল্প আর বাদশাহকে তার চোখ ধাধানো রূপের মোহে আটকে রাখার গল্প।

প্রাসাদের প্রৌঢ়বয়সী দাসী গুলোর অনেকেই শেহজাদীকে পছন্দ করেন না। তাদের অন্দরমহলে শেহজাদী ‘হোয়াইট উইচ’ নামে পরিচিত। আজ যদি শেহজাদী না থাকতো তবে প্রাসাদে তাদেরই রাজত্ব চলত। তাদের গর্ভেধারনকৃত সন্তানের ন্যায় দীর্ঘ জীবন তারা না পেলেও যতগুলো দিন বাঁচতো নিজেকে শেহজাদার মা হিসেবে পরিচয় দিয়ে অন্তত গর্ববোধ করতে পারতো! সেই কটা দিন অন্তত রানীর হালে থাকতো!
কিন্তু এই শেহজাদীর জন্য তাদের জীবনটাই বরবাদ হলো। যৌবন গুলো নষ্ট হলো অকারণে!

দাসীদের গল্পের মাঝেই ইয়াসির সহ আরও বেশ কয়েকজন গার্ড মেয়েদের অন্দরমহলের মাঝে তড়িঘড়ি করে এসে পৌছে তাড়াহুড়ো করে বলতে শুরু করলো,

— মেয়েরা, সবাই লাইনে দাঁড়িয়ে যাও। কেউ এক ফোটাও নড়বে না। মাথা নিচু করে থাকবে। শেহজাদী আসছেন! যাও, যাও!

ইয়াসিরের কথায় অন্দরমহলে হৈচৈ পড়ে গেলো। দাসী গুলো যে যার জায়গা থেকে দ্রুত উঠে অন্দরমহলের মাঝের চলার রাস্তা টার দুপাশে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে গেলো সারিবদ্ধ ভাবে। শেহজাদী কে প্রথমবার চোখে দেখার উত্তেজনায় অনেকের হাত পা কাঁপতে শুরু করলো। নিজেদেরকে সামলে নিয়ে ঠাই দাঁড়িয়ে রইলো তারা।
ইয়াসির এবং অন্যান্য অন্দরমহলের গার্ড গুলোও দাসীদের পাশে এসে দাঁড়িয়ে পড়লো। তার কিছুক্ষণ পরেই প্রাসাদের অন্দরমহলের অভ্যন্তরীণ প্রবেশদ্বারের রয়্যাল মেমবার ইন্ডিকেটরে একটা ফিমেইল ভয়েস বলে উঠলো,

— অ্যাটেনশান! আওয়ার অনারেবল বেগাম অ্যান্ড শেহজাদী আনাবিয়া ফারহা দেমিয়ান।

অ্যানার পুরো নাম টা শোনা মাত্রই সমস্ত অন্দরমহলের হলরুম টা জুড়ে নেমে এলো পিনপতন নিরবতা। আর তার কিছুক্ষণ পরেই প্রাসাদের সাদা রঙা মার্বেল পাথরে মৃদু মিষ্টি সুর তুলে হলরুমে প্রবেশ করলো অ্যানা। আর অ্যানা প্রবেশ করতেই সেখানের সবার দৃষ্টি যেন থমকে গেলো ওকে দেখে।

পরণের অফ হোয়াইটের ফুল স্লিভ বল গাউন টা যেন এক টুকরো চাঁদনীর মতো জড়িয়ে আছে ওকে। সমস্ত গাউন টা জুড়ে ছোট্ট ছোট্ট মুক্তা আর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র হীরককণার অপূর্ব নকশা, আলোর ঝলকে ঠিকরে উঠে সেগুলো চারপাশ টাকে আরও উজ্জ্বল করে তুলছে!

নিজের প্রতিটা পদক্ষেপে রাজকীয় স্নিগ্ধতা মিশিয়ে, ধীর গতিতে এক অনন্য মাধুর্য আর দৃঢ় আত্মবিশ্বাসের সাথে হেটে সামনে এগোতে লাগলো অ্যানা। গাউনের পেছনের ভারী কাপড় মেঝেতে আলতো ভাবে ছুয়ে টেনে চলতে লাগলো ওর সাথে। প্রতি পদক্ষেপের সাথে সাথে ওর পায়ের নুপুরের মৃদু ঝংকার তৈরি করতে লাগলো সুরের মূর্ছনা।

মাখনের মতো মসৃণ, কোমল গাল দুটোতে ব্লাশের মৃদু ছোয়া, যেন সেখানে স্পর্শ করা মাত্রই গলে যাবে। টেরাকোটা রঙা ঠোঁট জোড়াতে সুক্ষ্ম, দুর্বোধ্য হাসি। কুচকুচে ঘন কালো রঙা চোখের পাপড়ির নিচে হীরকখণ্ডের ন্যায় চোখ জোড়াতে স্নিগ্ধতা, প্রজ্ঞা আর মায়ার মিশেল।
গাউনের পেছন টা ব্যাকলেস। চুল গুলো মাথার ওপরে দারুন করে বেধে রাখা, পেছন থেকে কয়েক গুচ্ছ বেবি হেয়ার কার্ল হয়ে ছড়িয়ে আছে শুভ্র মোলায়েল খোলা পিঠখানার ওপর, যা ওর সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তুলেছে কয়েক গুন! চুলগুলোর ওপরে হীরক খচিত ছোট্ট একটি টায়রা। কানে ছোট্ট ছোট্ট হীরার দুল। সেগুলোতে আলো পড়ে চারদিকটা ঝলমলিয়ে উঠছে বারে বারে।

অ্যানার এমন চোখ ধাধানো চেহারা দেখে দাসীরা মাথা নিচু রাখতে ভুলে গেলো যেন! এক ধ্যানে ওরা দেখে চলল তাদের সামনে দিয়ে কোমরে ঢেউ তুলে হেটে যাওয়া এই অসম্ভব রূপবতী মেয়েটিকে। সময় টা যেন থমকে গেলো একেবারে। অ্যানা এগোনোর সাথে সাথে ওর শরীর থেকে ছড়িয়ে পড়তে লাগলো অসাধারণ এক ম্যাজেস্টিক মিষ্টি ঘ্রাণ, দাসীদের যেন ঘোর লেগে গেলো তাতে! মুগ্ধ চোখে ওরা তাকিয়ে রইলো অ্যানার দিকে।

হাটতে হাটতে নিজের বা দিকে সামান্য ঘাড় ঘুরিয়ে অ্যানা তাকালো কয়েকটা দাসীর দিকে। ওর সে গভীরতা পূর্ণ মায়াবী চাহনি দেখা মাত্রই ওরা কয়েকজন স্থীর হয়ে গেলো। অ্যানা ওদের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিজের মনে একটু হেসে নিয়ে ধীর গতিতে এগোলো সামনে। ওর এই নজর থেকে বাঁচার সাধ্য আছে কার! যেখানে দেমিয়ান বংশের ওই শক্তিশালী পুরুষটি পর্যন্ত ওর এই মোহনীয় দৃষ্টিকে উপেক্ষা করতে পারে না, সেখানে এরা কিভাবে পারবে!

অ্যানা হলরুম পেরিয়ে বাইরে বেরিয়ে যাওয়া মাত্রই দাসীরা যেন এবার দম নিলো বুক ভরে। ওই অত্যান্ত সুন্দরী মেয়েটা যেন এতক্ষণ ওদের দম আটকে রেখেছিলো! মুহুর্তেই উচ্ছসিত হয়ে উঠে নিজেদের ভেতর আবারও আলোচনায় বসে গেলো ওরা। কেউ পড়লো অ্যানার চেহারা নিয়ে, কেউ পড়লো ওর চোখ নিয়ে, কেউ পড়লো ওর পোশাক নিয়ে, কেউ বা পড়লো ওর হাটার ভঙ্গি নিয়ে। তাদের কল্পনাকে ছাপিয়ে যাওয়া এই দম আটকানো অপ্সরা কে নিয়ে চলতে থাকলো তাদের আলাপচারিতার গুঞ্জন।

ফ্যালকন, কোকো, হাইনা আর জোভি দাঁড়িয়ে ছিলো কিছুটা সামনেই। অ্যানার জন্য অপেক্ষা করতে করতে এরই মাঝে ফ্যালকনের সাথে এক দফা মারামারি ঝাকাঝাকি হয়ে গেছে কোকোর। অ্যানা অন্দরমহল থেকে থেকে বেরিয়ে ওদের দিকে যেতে নিলেই কোকো ফ্যালকন দের চোখ গেলো সেদিকে। মারামারি ভুলে ফ্যালকন কোকো দুজনেই দাঁড়িয়ে গেলো অ্যানার দিকে চেয়ে।
ফ্যালকন অ্যানার দিকে অপলকে তাকিয়ে থেকে কোকোর হৃষ্টপুষ্ট পেট টাতে কনুই দিয়ে গুতা দিয়ে চাপা, উত্তেজিত গলায় বলে উঠলো,

— ভাইরে ভাইইইই! আমাদের শেহজাদী কে আজ হুরপরী লাগছে রেএএএএ!

ফ্যালকনের কথা শুনে সকলে তাকালো অ্যানার দিকে। কোকো নিজের বুকের বা পাশ টা ডান হাতে দিয়ে চেপে ধরে ফ্যালকনের মতো করে উত্তর দিলো,

— আজকে আমার আব্বাজান শ্যাষ রে ফ্যালকন! এই সাদা পরীটাকে দেখে আব্বাজান সামলাতে না পেরে হার্টঅ্যাটাক না করলেই হলো!

ফ্যালকন আর কোকোকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে অ্যানা হেসে দিলো এবার৷

— কিরে, তোরা এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? মনে হচ্ছে আজ নতুন দেখছিস আমাকে!

চোখ ঘুরিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলল অ্যানা৷ অ্যানার কথা শেষ হতে না হতেই ফ্যালকন ওপাশ থেকে নালিশের সুরে বলে উঠলো,

— শেহজাদী, কোকো হিজ ম্যাজেস্টি কে আব……

ফ্যালকন কথা শেষ করার আগেই কোকো ওর মোটাসোটা হাত খানা দিয়ে ফ্যালকনের মুখ চেপে ধরে ওকে থামিয়ে দিয়ে ওর দিকে কটমটে চোখে তাকালো। অ্যানা ওদের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে কপট রাগ দেখিয়ে বলে উঠলো,

— আজকের দিনেও তোরা মারামারি করবি?

অ্যানার ধমকে কোকো ফ্যালকন দুজনেই থেমে গেলো, তারপর কোকো ফ্যালকন কে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গলা খাকারি দিয়ে সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল,

— চলুন শেহজাদী, হিজ ম্যাজেস্টি আপনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।

কোকোর ভঙ্গি দেখে অ্যানা ফিক করে হাসলো, তারপর ওদের সামনে এগোতে এগোতে শুধোলো,

— কোথায় যাচ্ছি আমরা?

পেছন থেকে ফ্যালকন বলে উঠলো,

— লোকেশন বললে চাকরি থাকবে না। গলাও উধাও হয়ে যেতে পারে!

৬৬. মীরের ব্যাক্তিগত কালো রঙা রয়্যাল কারে অজানার উদ্দ্যেশ্যে পাড়ি দিয়েছে অ্যানা। ওকে বলা হয়নি ঠিক কোথায় যাচ্ছে ওরা। অটো ড্রাইভ এর গাড়িটা মৃদু মন্দ গতিতে এগিয়ে চলেছে গন্তব্যের দিকে। পেছনের সিটে গাড়ির উইন্ডোতে দুই হাত ঠেকিয়ে সেখানে থুতনি ঠেকিয়ে বসে আছে অ্যানা, চোখ জোড়া ওর বাইরে। রেড জোনের রাতের সৌন্দর্যটা একমনে উপভোগ করছে ও৷

কোকো ফ্যালকনেরা অন্য গাড়িতে। মীরের গাড়িতে ওঠার অধিকার অ্যানা ছাড়া আর কারো নেই। বেশিরভাগ সময়ে মীর নিজেই গাড়ি চালায়, নয়তো অটো ড্রাইভিং মোড অন করে রাখে।
অ্যানা জানালার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে গাড়িটার ভেতরে তাকালো। এই গাড়িটার কোণায় কোণায় ওদের ভালোবাসার স্মৃতি। কত্তগুলো পাগলাটে, ভালোবাসাময় রাত ওরা এই গাড়িতেই কাটিয়েছে সে হিসাব করতে গেলে ওর বছর লেগে যাবে! কত রাত মীর ওকে নিয়ে হুট করেই বেরিয়ে পড়েছে ঘুরতে। ঘুম ঘুম চোখে থাকা অ্যানার ঘুম উড়িয়ে দিয়েছে নিজের শরীরের গাঢ় স্পর্শ দিয়ে। কত মান অভিমানের পালা চলেছে ওদের এই গাড়ির ভেতরে!

আনমনে হাসলো অ্যানা। আটান্ন টা বছর! এত্ত গুলো বছর কিভাবে ওই কালাভুনাটার সাথে কেটে গেলো ওর! এখনো মনে পড়লে মনে হয় এইতো সেদিনের কথা, মীর ওকে দুম করেই বিয়ে করে নিয়েছিলো, অথচ অ্যানা তখনও পরিপক্ক হয়ে উঠেনি। সেই অ্যানাকে নিজের বুকে রেখেও আদর করতে না পেরে তড়পাতে থাকা মীরের মুখ খানা তখন দেখার মতো হতো!

অ্যানা শব্দ করে হাসলো এবার। পাশে থাকা ফোন টাতে তখনই টুংটাং শব্দ তুলে বার্তা এলো। অ্যানা মৃদু হেসে ফোন টা হাতে তুলে নিয়ে মেসেজে ঢুকলো। ওপরে কালাভুনা’ নাম টা ফুটে আছে।

“এত মিষ্টি করে হেসো না, হৃৎপিণ্ডটা বেরিয়ে আসবে আমার”

মেসেজটি পড়ে অ্যানার ঠোঁট জোড়া মিষ্টি হাসিতে প্রসারিত হলো। নিঃশব্দে হেসে নিজের বা কাঁধের ওপর হাত বোলালো ও। কতশত দিন পূর্বে ওর শরীরে ট্র‍্যাকার সেট করে দিয়েছিলো মীর। সেবার অ্যানা ভার্সিটি থেকে ক্যিডন্যাপ হওয়ার পর মীরের ভেতরে ভয় ঢুকে গেছিলো যে, আবার না ওর শিনজো ওর থেকে হারিয়ে যায়৷ সেদিনের পর থেকে একটা মূহুর্তের জন্যেও মীরের নজরের বাইরে যেতে পারেনি ও৷ কোনো না কোনোভাবে অ্যানার প্রতিটা পদক্ষেপ ওর নখদর্পনে, তাই সে যেভাবেই হোক!

আনমনে স্মৃতিচারণ করতে করতেই গাড়িটা হঠাৎ করে থেমে গেলো। অ্যানা চমকালো, পৌঁছে গেছে! গাড়ির ভেতর থেকে সামনে তাকালো ও। সমুদ্রের পাড়ে এসে দাঁড়িয়েছে গাড়িটা। সামনে বিশাল সমুদ্রের জলরাশি। সেদিক থেকে বারে বারে ধেয়ে আসছে লবণাক্ত শীতল বাতাস।

অ্যানার গাড়ির সামনেই দৃঢ় চিত্তে দাঁড়িয়ে আছে লাল, সাদা আর গোলাপি রঙা গোলাপ দিয়ে সাজানো একটি বিশালাকার আর্ক। গাড়িটা যেখানে থেমেছে সেখান থেকে শুরু করে আর্কের ভেতর দিয়ে সোজা সামনে চলে গেছে একটি লালরঙা মখমলি গালিচা। গালিচার দুপাশে বাচ্চাদের জন্য দুচার টা টেবিল রাখা৷ গালিচা টা যেখানে শেষ হয়েছে সেখানে দাঁড়িয়ে আছে ফুল দিয়ে তৈরি একটি ছোট্ট সিলিং লেস প্যান্ডেল। লিও কাঞ্জিরা দাঁড়িয়ে আছে সেখানে। কোকোরাও পাশের গাড়ি থেকে নেমে গেছে৷ কিন্তু মীর কই?

কোকো ফ্যালকনেরা গাড়ি থেকে নেমেই ছুটলো প্যান্ডেল টির দিকে। প্যান্ডেলের বেদীর ওপর উঠেই হুড়োহুড়ি শুরু করলো ওরা সকলে। অ্যানা ওদের দিকে থেকে চোখ সরিয়ে গাড়ির উইন্ডো দিয়ে তাকিয়ে আশে পাশে তাকিয়ে মীরকে খুজতে ব্যাস্ত হলো। তখনি ওর গাড়ির দরজাটা সশব্দে খুললো কেউ। চমকে সেদিকে তাকালো অ্যানা। তাকাতেই ওর চোখে পড়লো স্বর্ণালি আভা ছড়ানো শিকারী চোখের অধিকারী মীরের চেহারাটা।

কালো জমীনের ওপর সোনলি রঙা বর্ডার দেওয়া ঢিলাডালা রোব আর সাদা রঙা ঢোলা প্যান্ট পরণে ওর৷ ঘাড় বাবরি ঝাকড়া চুলগুলো বাতাসে মৃদু মন্দ উড়ছে। ঠোঁট জুড়ে ওর মুগ্ধ করা হাসি। রোবের বুকের কাছ টা উন্মুক্ত, পেশিবহুল বলিষ্ঠ বুকটা প্যান্ডেলের দিক থেকে ভেসে আসা আলোতে চকচক করছে। সেদিকে তাকিয়ে অ্যানার চোখ জোড়া আটকে গেলো। এই লোকটা সারাক্ষণ বুক খুলে রাখে কেন? অ্যানাকে সিডিউস করার ধান্ধা!

অ্যানাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মীর ওর হাত টা বাড়িয়ে দিলো গাড়িতে বসা অ্যানার দিকে। অ্যানা মীরের বুকের ওপর থেকে চোখ সরিয়ে তাকালো মীরের বাড়িয়ে দেওয়া ইস্পাত-দৃঢ় হাতটির পানে৷ তারপর নিজের হীরকখন্ডের ন্যায় দৃষ্টি টা মীরের চোখ জোড়ার ওপর নিবদ্ধিত রেখে মীরের হাত টা ধরে গাড়ির ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো ও৷ আর অ্যানার মুখের ওপর প্যান্ডেলের ঝলমলে আলো পড়তেই এক মুহুর্তের জন্য থমকে গেলো মীর৷ সমস্ত বুক টা জুড়ে বাটারফ্লাই খেলে গেলো ওর। অপলক দৃষ্টিতে অ্যানার শুভ্র, স্নিগ্ধ মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে রইলো ও।
দূরে কোথাও ডেকে উঠলো এক ঝাক রাতের পাখি। সমুদ্র বাতাসের সাথে ষড়যন্ত্র করে তুলতে লাগলো একের পর এক বিশাল ঢেউয়ের গর্জন। এই অতীব সুন্দরী মেয়েটির রূপ দেখতে বাধা দিতে একের পর এক বাতাসের শক্তিশালী ঝাপটা এসে আছড়ে পড়তে লাগলো মীরের চোখে মুখে। কিন্তু তাদের কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হলো না। মুগ্ধ দৃষ্টি টাকে এক মুহুর্তের জন্যও টলাতে সক্ষম হলোনা তারা কেউ!

প্যান্ডেলের বেদীর ওপর দাঁড়ানো কোকো ফ্যালকন কে গুতা মেরে বলে উঠলো,

— বলেছিলাম না! এখন প্রমাণ দেখ সামনাসামনি।

ফ্যালকন ওর কথায় মীর অ্যানার দিকে তাকিয়ে হাসলো মৃদু। দুজনকে একসাথে এভাবে দেখে চোখ জোড়া জুড়িয়ে এলো ওদের সবার।

মীর অ্যানাকে নিজের কাছে টেনে দুহাতে জড়িয়ে নিয়ে ওর কপালে নিজের উষ্ণ ঠোঁট জোড়া ছুইয়ে দিয়ে কপালে ঠোঁট ঠেকিয়ে রেখেই মৃদু কন্ঠে বলে উঠলো,

— মা’ আই স্যুদিং বিয়্যুটিফ্যুল অর্কিড, মা’ লাইফ, মা’ হ্যাপিনেস, মা’ প্যিস, মা’ এভরিথিং!

অ্যানা চোখ বুজে নিলো। মীরের মুখনিঃসৃত কথা গুলো ওর হৃদয় ছুয়ে দিলো যেন৷ শান্ত হয়ে এলো ও পুরোপুরি। কিছুক্ষণ পর মীর ওর কপাল থেকে ঠোঁট সরিয়ে, ওকে নিজের আলিঙ্গন থেকে মুক্ত করে ওর হাতটা নিজের মুঠির ভেতরে ধরে নিয়ে এগোলো বেদীর দিকে

.

কেক কাটা শেষে, খাওয়া দাওয়া করে প্রচন্ডরকম হুটোপুটি করে সমুদ্র পাড় টাকে সচকিত করে তুললো বাচ্চারা। বেদীর ওপরে মীরের খোলা বুকে পিঠ ঠেকিয়ে বসে অ্যানা দেখে চলেছে সেসব। আর মীর দেখে চলেছে ওকে। ওর কানের কাছের কোকড়ানো চুল, চোখের ঘন কালো পাপড়ির বার বার ওঠানামা, দ্যুতি ছড়ানো মণী জোড়ার বার বার স্থান পরিবর্তন, টেরাকোটা রঙা ঠোঁট জোড়াতে হাসির উত্থান পতন, বিউটি বোনের চকচকে খাজটা, তার থেকে কিছুটা নিচে মীর কে চুম্বকের মতো টানতে থাকা ক্লিভেজ!
অ্যানার কোমল শরীর টা নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসতে ওর আর তর সইছে না।

অ্যানার কানের কাছে মুখ ঠেকিয়ে ও নেশালো গলায় বলে উঠলো,

— দেরি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু!

বাচ্চাদের হুটোপুটি উপভোগ করতে থাকা অ্যানা চমকে তাকালো মীরের দিকে, তারপর জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে প্রশ্ন করলো,

— কিসের?

— সুনামির ন্যায় একটি রোম্যান্সের।

মুখ ভার করে উত্তর করলো মীর। অ্যানা ভ্রুকুটি করে মীরের চোয়ালটা দুহাতের ভেতরে নিয়ে শাসনের ছলে চেপে দিয়ে বলে উঠলো,

— মাথায় শুধু ওসবই ঘোরে তোমার সারাক্ষণ! বাচ্চারা আছে দেখছো না?

অ্যানার কথা শোনা মাত্রই মীর অ্যানার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে ওদের থেকে বেশ খানিকটা দূরে কাহিনি করতে থাকা বাচ্চা গুলোর উদ্দ্যেশে উচ্চ স্বরে বলে উঠলো,

— বাচ্চা রা!

মীরের গলার আওয়াজ পাওয়া মাত্রই সকলে যে যার কাজ ফেলে সোজা হয়ে তাকালো মীরের দিকে। আর তার পরমুহূর্তেই কেস টা কি বুঝতে পেরে কোকো ফ্যালকন জোভি হাইনা সকলে ওদের দিকে থেকে চোখ সরিয়ে তাড়াহুড়ো করে চলে গেলো ওদের গাড়ির কাছে৷ লিও লিন্ডাকে নিজের কাঁধে তুলে ছুটলো ওদের পেছন পেছন। আর এরপর সকলে মিলে চাপাচাপি করে গাড়িতে বসে সেখান থেকে দুমদাম করে প্রস্থান করলো। ব্যাপার টা এত দ্রুত ঘটলো যে অ্যানা হা হয়ে দেখলো শুধু, কিছু বলার মতো সুযোগ পেলোনা কাউকে!

ওরা চলে যেতেই চোখ গরম করে মীরের দিকে তাকালো অ্যানা। মীর ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে অ্যানার দিকে ভ্রু তুলে তাকিয়ে রইলো।

— অ্যাই, তুমি ওদের কে এভাবে পাঠিয়ে দিলে! কি ভাববে ওরা?

— আমি তো একবারও ওদের কে চলে যেতে বলিনি!

আগের মতো করেই বলল মীর। অ্যানা তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে থাকলো ওর দিকে কিছুক্ষণ, তারপর হঠাৎ করেই মীরের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে ওর গলা চেপে ধরলো। মীর শব্দ করে হেসে উঠলো সাথে সাথে। আর তারপর ওর গলায় থাকা অ্যানার হাত জোড়া দুহাতে ধরে সেদুটোকে একসাথে করে নিজের এক হাতের মুঠির ভেতর ধরলো মীর। এরপর হুট করেই কোলে তুলে নিলো অ্যানকে। তারপর প্রেমময় কন্ঠে বলে উঠলো,

— চলো!

— কোথায়?

ভ্রু তুলে শুধোলো অ্যানা। মীর উত্তরে শুধু একটা মিষ্টি হাসি ফিরিয়ে দিলো ওকে।

৬৭. এই মুহুর্তে অ্যানা দাঁড়িয়ে আছে শিরো মিদোরি থেকে অনেক অনেক দূরে, সমুদ্রের ভেতরে থাকা একটি ছোট্ট দ্বিপে, কয়েকটি গাছপালা আর একটি ছোট্ট কুঠিবাড়ি ছাড়া সেখানে আর কিছুই নেই। তারই কিনারে, জলরাশির ধারে রাখা একটি চওড়া, সাদা রঙা বিছানা। লাল রঙা গোলাপের পাপড়ি ছড়ানো সে বিছানার চারপাশে মৃদু নীলরঙের আলোচ্ছটা। বিছানার পাশে হেলান দিয়ে রাখা একটি গিটার।
স্ট্যান্ডের চারপাশটা পাতলা পর্দা দ্বারা আবৃত, সমুদ্র থেকে বয়ে আসা বাতাসের ঝাপটা বারে বারে উড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে সে পর্দা গুলো। বিছানার সিলিং টা স্বচ্ছ পর্দা দ্বারা ঢাকা, নক্ষত্রখচিত আকাশটা সেখান থেকে স্পষ্টতা অস্পষ্টতা মিলিয়ে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে৷

মীর তাকিয়ে ছিলো অ্যানার বিস্মিত, লাজরাঙা মুখ খানার দিকে। কিছুক্ষণ ওভাবে তাকিয়ে থেকে এরপর অ্যানার একেবারে নিকটে এসে ও বলে উঠলো,

— পোশাক টা ভারী লাগলে খুলে দিই?

অ্যানা তাকালো ওর দিকে। তারপর মৃদুভাবে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। মীর সম্মতি পেয়ে গেলো ওদের পেছন দিকে থাকা কুটিবাড়িটার ভেতরে, তারপর সেখান থেকে হাতে একটা প্যাকেট নিয়ে এলো অ্যানার কাছে।
প্যাকেটটা থেকে একটা লেট্যুস কাটিং এর নাইট টপ আর একটা শর্টস বের করলো ও। তারপর অ্যানার শরীর থেকে ভারী গাউন টা খুলে দিয়ে টপ আর শর্টস টা পরিয়ে দিলো। শরীর থেকে বাকি এক্সেসরিজ গুলোও খুলে দিলো একে একে, শুধু কোমরে থাকা হীরকখণ্ড বসানো কোমর বন্ধনী আর পায়ের রুমঝুম শব্দ তোলা পায়েল জোড়া রেখে দিলো। তারপর সেখান থেকে আবারও অ্যানাকে কোলে তুলে নিয়ে মীর হেটে গেলো বিছানার দিকে।

অ্যানাকে মাটিতে পা ঝুলিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে মীর নিজে হাটু গেড়ে বসে পড়লো অ্যানার সামনে, মাটিতে। তারপর ঝুকে অ্যানার উন্মুক্ত উরুতে সশব্দে একটা চুমু খেয়ে অ্যানার সরু কোমর টা দুহাতে জড়িয়ে নিয়ে অ্যানার মুখের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে গাঢ় কন্ঠে বলে উঠলো,

— হ্যাপি অ্যানিভার্সারি মা’ কুয়্যিন!

তারপর কিছুক্ষণ অপলকে অ্যানার চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে আবার বলে উঠলো,

— তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ উপহার শিনু! আমার জীবনের গল্পের সবচেয়ে সুন্দর অধ্যায় তুমি, যাকে পড়লেই আমার বুকের ভেতর টা শীতলতায় ছেয়ে যায়, যাকে দেখা মাত্রই আমার হাজার চিন্তায় ভারী হয়ে থাকা মস্তিষ্ক টা সমস্ত চিন্তা মুক্ত হয়ে হালকা হয়ে যায়!
তোমাকে নিজের সাথে বেধে নেওয়ার পর থেকে যত সময় বয়েছে, ততই আমি তোমার প্রেমের গভীরতায় একটু একটু করে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি! জীবনের বাকি দিনগুলোতেও আমি তোমার ভেতরেই হারিয়ে যেতে চাই বার বার! তোমাকে হাজার বার হাজার ভাবে ভালোবাসতে চাই।

আমার জীবনে তোমার মূল্য যে কতখানি সেটা তুমি কখোনোই জানবে না শিনু! আমার এই সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপনে তুমি যে কতখানি অবদান রেখেছো সেটা আমি আর আমার সৃষ্টিকর্তা ছাড়া আর কেউ জানে না! আমি আমার জীবনের শেষ মুহুর্ত টা পর্যন্ত তোমার সাথে থাকতে চাই, ঠিক এভাবে।
আমি কখনোই কোনো ঝড়ঝাপটাকে আমাদের একে অপরের থেকে আলাদা করে দিতে দেবো না শিনু! তুমি যতবারই ভুল বুঝে, অভিমান করে আমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে ততবারই আমি তোমার কাছে গিয়ে দাড়াবো! তোমাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসবো নিজের কাছে।
শুধু একটাই অনুরোধ তোমার কাছে, নিজেকে কখনো এমন কঠিন করে নিও না যেন আমার এই এক আকাশ পরিমাণ ভালোবাসাও তোমার সে অভিমান গলিয়ে দিতে না পারে!
এমন টা যদি কখনো হয় তবে আমি একেবারে মরে যাবো শিনু। তুমি আমার কাছে নেই এটা আমি কখনোই মেনে নিতে পারবো না! কোনোদিনও না এবং কোনো অবস্থাতেই না!
তুমি যখন, যেখানে, যে অবস্থাতেই থাকো না কেন আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তুমি আমার হয়েই থাকবে, শুধুমাত্র আমার! তোমাকে আমি নিজের থেকে দূরে যেতে কখনোই দেখতে পারবো না শিনু!

শেষোক্ত কথা গুলো বলতে গিয়ে গলা ধরে এলো মীরের। অ্যানা ওকে থামিয়ে দিয়ে নিজের কাছে টেনে নিয়ে স্নিগ্ধ প্রেমময়ী কন্ঠে বলল,

— চুপ করো! এসব কথা বলে মন খারাপ করো না! এদিকে আসো, বিছানায় উঠে আসো। তুমি গিটার এনেছো যে! গান শোনাবে না আমাকে?

নিজের চোখের কোণা জোড়া আলতো হাতে মুছে নিলো মীর। তারপর মাটি থেকে উঠে দাঁড়িয়ে অ্যানার দিকে এক পলক তাকিয়ে গিটার খানা হাতে তুলে নিলো ও। এরপর বিছানায় বসে অ্যানাকে নিজের কোলের ওপর টেনে নিয়ে, গিটার টা অ্যানার কোলে রেখে সেটাতে মৃদু শব্দ তুললো মীর৷ তারপর ওর বুকে মাথা ঠেকিয়ে রাখা অ্যানার কপালে একবার ঠোঁট ছুইয়ে নেশালো কন্ঠে গেয়ে উঠলো,


Yuhi Baras Baras Kaali Ghata Barse
Hum Yaar Bheeg Jaaye
Is Chaahat Ki Baarish Mein

Teri Khuyli Khuli Lato Ko Suljhaaun
Main Apni Ungliyon Se
MainTo Hoon Isi Khwaayish Mein

Sardi Ki Raaton Mein
Hum Soye Rahe Ek Chaadar Mein
Hum Dono Tanha Ho Na
Koi Bhi Rahe Is Ghar Mein

Zara Zara Behekta Hain Mehekta Hain Aaj To Mera
Tan Badan Main Pyaasi Hoon
MujheBhar Le Apni Baahon Mein

Zara Zara Behekta Hain Mehekta Hain Aaj To Mera
Tan Badan Main Pyaasi Hoon
MujheBhar Le Apni Baahon Mein

নিজেদের ঘনিষ্ঠ সময়ে অ্যানার কানের কাছে মুখ নিয়ে মীর আজ আবারও বলল,

— যা-ই হয়ে যাক না কেন, তুমি জেনো আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি, শুধুমাত্র তোমাকে ভালোবাসি, আর কাউকে না!

কিন্তু সে কথার মর্মার্থ উদ্ধার করতে পারলো না অ্যানা৷ মীরের বাহুবন্ধনীতে নিজেকে সপে দিলো পুরোপুরি।

চলবে……

( আমার মন ভালো নাই, লিখতে পারছিনা। এলোমেলো হয়েছে হয়তো অনেক, ভুল ত্রুটি মার্জনীয়)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here