বাদশাহ_নামা #পর্বসংখ্যা_৫০ #রানী_আমিনা

0
2

#বাদশাহ_নামা
#পর্বসংখ্যা_৫০
#রানী_আমিনা

হন্তদন্ত হয়ে শিরো মিদোরির পশ্চিম কোণায় থাকা অর্কিড বাগানটায় ছুটে এলো মীর। চারদিকে সন্ধানী দৃষ্টি বুলালো একবার। ওর শিনুর শরীরের ঘ্রাণ এখানে প্রকট, কিন্তু কই ওর শিনু!

মীর উদভ্রান্তের ন্যায় নিজ সন্তানের কবরের চারপাশে একবার ঘুরে চারদিকে নজর বুলালো, শিনু নেই, এখানেও নেই! একটু আগেই হয়তো ছিলো, নইলে ওর শরীরের ঘ্রাণ এতটা গাঢ় হতো না৷

চারদিকে তাকাতে তাকাতে হাঁসফাঁস করতে শুরু করলো মীর৷ এই কয়েকটা দিন ও ওর শিনজো কে একটা বারের জন্যেও দেখেনি, ওর কন্ঠটা শোনেনি একটা মুহুর্তের জন্যেও!
প্রাসাদে ফিরে অ্যানার নিখোঁজ সংবাদ পাওয়ার পর থেকেই প্রচন্ড সাফোক্যেটিং লাগছে ওর! দম নিতে কষ্ট হচ্ছে ওর প্রচন্ড! বুকের ভেতরটা যেন চিনচিনে এক যন্ত্রণায় জমে যাচ্ছে বার বার!

মীর চারদিকে আর একবার দৃষ্টি দিয়ে বড় বড় দম নিতে নিতে আকুল কন্ঠে, উচ্চস্বরে ডেকে উঠলো,

— শিনজো! আমি জানি তুমি আমার আশেপাশেই আছো! একটাবার আমার সামনে আসো প্রাণ আমার! একটা বার আমার কথা গুলো শোনো প্লিজ! আ’ ক্যান এক্সপ্লেইন! প্লিজ শিনু, একটাবার দেখা দাও আমাকে, প্লিজ!

শেষোক্ত কথা টা ভ্রু তুলে অনুরোধের সুরে বলল মীর৷ কিন্তু অ্যানার সাড়া পাওয়া গেলো না কোথাও! শুধুমাত্র উন্মত্ত বাতাসের উচ্ছল খেলায় আলুথালু হয়ে যাওয়া শুকনো পাতার শব্দ ছাড়া আর কিছুই শোনা গেলো না সেখানে। মীর আশাহত হলো! ওর শিনু তো ওর ওপর রাগ করে এভাবে পালিয়ে লুকিয়ে থাকে না কখনো! এর আগেও তো কতবার অভিমান করে প্রাসাদ থেকে পালিয়ে রেড জোনে চলে এসেছে ও, হয়তো লাইফ ট্রির কাছে, নয়তো ওদের ট্রি হাউজে, নয়তো রেড উড গাছের মগডালে! চেনা জায়গা ছাড়া অ্যানা যে কোথাও যায় না!
আর মীর প্রতিবারই ওকে খুঁজে নিয়ে নিজের বুকে জড়িয়ে ওর অভিমানের শেষ বিন্দুটাও চুমুতে চুমুতে শুষে নিয়ে প্রাসাদে ফিরে গিয়েছে!
কিন্তু আজ কই ওর শিনু! ওর শিনু তো ওকে দেখাও দিচ্ছে না! কি করবে ও এখন! কিভাবে মানাবে ও ওর শিনু কে! মীর অসহায় ভঙ্গিতে আবারও ডেকে উঠে বলল,

— শিনু! আমি জানি তুমি আমার খুব খুব কাছে আছো! আমার প্রতিটা নিঃশ্বাসে আমি তোমার উপস্থিতি অনুভব করছি! তোমার অভিমান আমাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে শিনু!
আমি জানি আমি ভুল করেছি, আমার তোমার সাথে সরাসরি কথা বলা উচিত ছিলো! কিন্তু তুমি তো কখনো শুনতে চাওনি, মানতে চাওনি! কি করতাম আমি!
আমি জানি আমি তোমাকে তোমার উপযুক্ত গুরুত্ব, ভালোবাসা দিতে চেয়েও ব্যর্থ হয়েছি; কিন্তু আমি তোমাকে একটা মুহুর্তের জন্যেও কখনো ভুলিনি শিনু! আমার এ হৃদয় টা জুড়ে শুধু তোমারই বসবাস শিনু, আর অন্য কারো নয়!
তোমাকে আমি অনেক অনেক ভালোবাসি শিনু, তুমি নিজেও জানো! ফিরে আসো শিনু, আমরা আমাদের ভেতর কথা বলে সব ঠিক করে নেবো শিনু! তারপর তুমি আমাকে যে শাস্তি দিতে চাও আমি মাথা পেতে নেবো, কিন্তু এভাবে আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে থেকো না, আমার থেকে দূরে চলে যেও না শিনু! তুমি এমন করলে আমি মরে যাবো, প্রাণ আমার!
তুমি ছাড়া আমার সব কিছু অন্ধকার শিনু, নিথর সমস্তটা! তুমি আমার হৃদয়ের তন্ত্রী, যার সুর ছাড়া আমি অস্তিত্বহীন! সেই তুমি এভাবে নিরব হয়ে গেলে আমি কি করবো শিনু! তুমি আমার কাছে আসো, আমাকে মারো বকো যা ইচ্ছা করো, কিন্তু চুপ থেকো না শিনু প্লিজ! ফিরে এসো তুমি আমার কাছে!
আমি তোমার আওয়াজ পাচ্ছিনা শিনু! দম বন্ধ লাগছে আমার! একটাবার তোমার নিরবতাকে ভেঙে আমার কাছে আসো শিনু! তোমার হৃদয়ের কথা গুলো শোনাও আমাকে, সব শুনবো আমি, গালি দাও সেটাও শুনবো, তবুও কথা বলো! একটা বার তোমার কন্ঠস্বর শুনতে দাও আমাকে প্লিজ!
আমাকে তুমি ভুল বুঝোনা শিনু, আমি শুধু তোমারই, আমার এ হৃদয়টা শুধুমাত্র তোমারই, আমার সবকিছু কেবলমাত্র তোমার জন্যই! তুমি ছাড়া আমি অর্থহীন শিনু! একটাবার ফিরে আসো প্লিজ!”

মীরের ব্যাথাতুর আর্তনাদ শেষ হলো, কিন্তু অ্যানার কোনো অস্তিত্বই পাওয়া গেলো না সেখানে। চারদিকে নেমে এলো নিস্তব্ধতা। বাতাসটাও যেন নিজের প্রবাহ বন্ধ করে দিলো এবার।

অ্যানা ওর সামনে আসছে না ভাবতেই হাঁসফাঁস করে উঠলো মীর। হাপরের মতো করে দম নিতে শুরু করলো ও, চোখ জোড়া বিস্ফোরিত হয়ে আসছে! বুকের ভেতর ভীষণ ভয় ঘূর্ণি পাকিয়ে উঠে আসছে।
ওর শিনু কি এবার আর ফিরবে না? ওর শিনু কি আর ওর কথায় অভিমান ভেঙে ওর বুকে ঝাপিয়ে পড়বে না? ওর উষ্ণ আদরে ভিজবে না? এতটা অভিমান হয়েছে ওর শিনুর! ওকে কন্ঠস্বর টা পর্যন্ত শুনতে দিচ্ছে না! কোথায় গেলো ওর শিনু ওকে ছেড়ে! কি হবে এবার ওর!

হাটু গেড়ে ধপ করে মাটিতে বসে পড়লো মীর। হাতের আঙুল গুলো কাঁপতে শুরু করেছে ওর অস্বাভাবিক ভাবে! নিজের কাঁপতে থাকা হাত জোড়া সামনে নিয়ে একটা বার তাকালো মীর। হাঁসফাঁস লাগলো ওর আরও বেশি, আর তার পরমুহূর্তেই কন্ঠে চরম আকুলতা নিয়ে ও চিৎকার করে বলে উঠলো,

— শিনু, ফিরে আসো আমার কাছে! শেষ বারের মতো! দয়া করো আমার ওপর!

৭৪.
— উনি কি আমাকে বিয়ে করবেন না আফিয়া?

অনদরমহলে, দাসীদের হলরুমে গোছগাছ করার সময়ে হঠাৎ পাশ থেকে এমন প্রশ্ন শুনে ঘুরে তাকালো আফিয়া। চোখে মুখে চরম উৎকন্ঠা নিয়ে প্রশ্ন করে আফিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে লাল রঙা চুলের মেয়েটি৷ আফিয়া ওর দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার নিজের কাজে হাত লাগাতে লাগাতে বলে উঠলো,

— করবেন না কেন? অবশ্যই করবেন। উনি তো তোমাকে এনেছেনই বিয়ে করার জন্য। কিন্তু ওই ডাইনি টা চলে গেলো যে! দুইটা মাস হলো তার কোনো খোঁজ নেই। এই মুহুর্তে উনি বিয়ে নিয়ে কিছু ভাববেন বলে আমার মনে হয় না!

কিছুক্ষণ চুপ থেকে আফিয়া আবার বলে উঠলো,

— হিজ ম্যাজেস্টির মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না! চোয়াল ভেঙে গেছে ওনার, চোখ দুটো যেন গর্তে চলে গেছে! অথচ তার কোনো খোঁজ নেই! এর আগেও তো কত বাদশাহ এসেছেন আর গেছেন, তাদেরও তো হাজার হাজার দাসী ছিলো, কারো কারো একের অধিক স্ত্রী ও ছিলো, কিন্তু কাউকে এমন করতে দেখিনি বাবা!
জন্মের পর থেকে হিজ ম্যাজেস্টি কে একদম শুষে খেয়ে নিলো হোয়াইট উইচ টা! দুদন্ড শান্তি দিলো না কখনো!

শেষোক্ত কথাটা বলা মাত্রই কারো হাতের হেচকা টানে হাতে থাকা এতক্ষণের গোছানো কাপড় গুলো ঝুপঝাপ করে পড়ে গেলো মেঝেতে, আর এরপর কিছু বুঝে ওঠার আগেই আফিয়ার চোয়ালে সজোরে এসে পড়লো একটা থাপ্পড়! আফিয়ার কানে তালা লেগে গেলো যেন। কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে থাপ্পড় দাতার দিকে তাকালো ও! ইয়াসমিন!

চারদিকে দাসীরা জড়ো হয়ে গেছে ইতোমধ্যে, এখন একটা দারুন শো দেখা যাবে, মাঝে মাঝে এমন শো হলে মন্দ হয়না ওদের৷ বিনোদনের অভাব টা পূর্ণ হয়ে যায়।
আফিয়া নিজের আঘাত পাওয়া গালে হাত রেখে ইয়াসমিনের দিকে বিস্ফোরিত নয়নে তাকিয়ে বাজখাই গলায় বলে উঠলো,

— আপনি আমার গায়ে হাত তুললেন!

— বেশ করেছি হাত তুলেছি! তোমার সাহস কি করে হয় একজন শেহজাদীর সম্পর্কে এমন কথা বলার! এত স্পর্ধা তোমাকে কে দিয়েছে আফিয়া? কাদের সাথে মেশো তুমি? এই প্রাসাদে কার দয়ায় আছো তুমি? নেমকহারামী করো কোন সাহসে!

আফিয়ার চোখের দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে বজ্রকন্ঠে বলে উঠলো ইয়াসমিন।

— হ্যাঁ তো! আমি মিথ্যা কি বলেছি? উনি কি বেশি বেশি করছেন না? দুইটা মাস হতে চলল তার কোনো পাত্তা নেই! তার জন্য আমাদের সবকিছু থমকে আছে। সাম্রাজ্যের কাজে হিজ ম্যাজেস্টির কোনো মন নেই! ওই ডাইনিটা…….

পুরো কথা শেষ করতে পারলো না আফিয়া, তার আগেই আর একটা ভারী থাপ্পড় ওর মুখে এসে পড়লো,

— আবার! আবার তুমি শেহজাদী কে ডাইনি বলে ডাকলে! আজকেই, এই মুহুর্তে তুমি প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে যাবে! আর কখনো ফিরে আসবে না। তোমাকে তোমার চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হলো!

— কে বরখাস্ত করবে আফিয়া কে?

হুমায়রা তাইরের কন্ঠে শুনে সামনে তাকালো ইয়াসমিন। ধীর গতিতে মুখে দাম্ভিকতা ঝুলিয়ে সে এগিয়ে এলো ওদের দিকে। ইয়াসমিন হুমায়রার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,

— আমি বরখাস্ত করবো ওকে। ওর এতবড় স্পর্ধা, ও আমাদের শেহজাদী কে নিয়ে বাজে কথা বলে! শুধু ও নয়, যে-ই আমাদের শেহজাদী কে নিয়ে কোনো ধরণের বাজে কথা বলবে তাকেই এই প্রাসাদ থেকে বের করে দেওয়া হবে!

শেষোক্ত কথাটা যে তাকে উদ্দ্যেশ্য করেই বলা হয়েছে সেটা ভালোভাবেই টের পেলো হুমায়রা৷ বাকা হেসে সে এগিয়ে এলো ইয়াসমিনের দিকে৷

— ইয়াসমিন, তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছো যে আমি প্রাসাদের দাসীদের প্রধান নিয়ন্ত্রক। কে থাকবে আর কে যাবে সেটা আমি ডিসাইড করবো, তুমি নও। তুমি শেহজাদীর খাস দাসী, তাই বলে এই নয় যে তুমি সব ক্ষমতা পেয়ে গেছো! ক্ষমতা এখনো আমার হাতে। এখন শেহজাদী নেই, আর সে ডাইনিটা ফিরে আসবে কিনা সেটারও আর কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই তোমাকে এই প্রাসাদ থেকে সরিয়ে ফেলতে আমার দুইটা মিনিট ও লাগবে না। হিজ ম্যাজেস্টিও তার ব্যাক্তিগত সমস্যা নিয়ে জর্জরিত, তারও একবারের জন্যেও দেখার কৌতুহল জাগবে না যে তার বেগমের ব্যাক্তিগত দাসী টা আছে না গেছে! তাই এখন থেকে সাবধানে চলবে৷ আর শেহজাদী একটা ডাইনি, সে নিজের চার্ম দিয়ে ভুলিয়ে রেখেছ সবাই কে, তোমাকেও।তাকে ছাড়া কেউ কিছু বুঝে না৷ তাই ডাইনি কে ডাইনিই বলা সই! এখন সরো আমার সামনে থেকে, আমার ত্রী সীমানায় যেন তোমার চেহারা না দেখি, শেহজাদীর চামচা!

হুমায়রার কথা শেষ হতে না হতেই হলরুমের প্রবেশদ্বারে থাকা রয়্যাল মেম্বার ইন্ডিকেটরে একটি ফিমেইল ভয়েস সমস্ত অন্দরমহল টাকে নিস্তব্ধ করে দিয়ে বলে উঠলো,

— অ্যাটেনশন, আওয়ার অনারেবল কিং, নামীর আসওয়াদ দেমিয়ান!

মীরের নাম টা শোনা মাত্রই হলরুমে জড়ো হয়ে ঝামেলা দেখতে থাকা দাসী গুলো তড়িঘড়ি করে হলরুমের দুপাশে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে পড়লো৷ নিজেদের কে সংযত করে নিলো যেন সামান্যতম ত্রুটিও বাদশাহর চোখে না পড়ে!

হুমায়রা প্রমাদ গুণলো! ওর কথা কোনোভাবে বাদশাহ শুনে ফেলেননি তো! নইলে উনি এই অসময়ে এখানে কেন আসবেন!
আফিয়া সটান দাঁড়িয়ে রইলো, ভয়ে ওর শীরদাড়া ঠান্ডা হয়ে আসছে! ওদের কথা যদি এখন ইয়াসমিন হিজ ম্যাজেস্টির কানে তুলে দেয়, তাহলে কি হবে!

ইয়াসমিন ওর চোখে মুখে ফুটে থাকা ক্রোধ টাকে যথাসম্ভব দমন করে রেখে নিজের মুখের অভিব্যক্তি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো, কিন্তু ওর সে চেষ্টা বিশেষ কাজে এলো না৷ আর তার পরমুহূর্তেই ধীর, ভারী পা ফেলে হলরুমে এসে উপস্থিত হলো মীর৷ তীক্ষ্ণ চোখ জোড়া ওর হুমায়রার দিকে।

হলরুম জুড়ে পিনপতন নিরবতা। কেউ সামান্যতম নড়াচড়াও করছে না৷ মীর এগিয়ে এলো আরও একটু। চোয়াল জোড়া ভেঙে গেছে ওর, হৃষ্টপুষ্ট চেহারা টা বিষণ্ণ, মলিন। বসে যাওয়া চোখে নিদ্রাহীন রাতের ছাপ। স্বর্ণালী আভা টা ম্লান হয়ে এসেছে ভীষণ ভাবে। চোখ জোড়াতে নিকষ কালো অন্ধকারে সামান্য আলোর দেখা পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠা পথিকের দৃষ্টি। কিন্তু তাতে তার সৌন্দর্য এক ফোটাও কমেনি, শাণিত চেহারাটা যেন আরও ধারালো হয়ে উঠেছে!
ইয়াসির নামক গার্ড টা পেছনেই দাঁড়িয়ে ছিলো, মীর কঠিন গলায় ডেকে উঠলো,

— ইয়াসির!

ইয়াসির দ্রুত পায়ে মীরের সামনে এগিয়ে এসে মাথাটা সামান্য নত করে বলে উঠলো,

— আদেশ করুন ইয়োর ম্যাজেস্টি!

মীর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে হুমায়রা আর আফিয়ার দিকে নির্দেশ করে ইয়াসিরের উদ্দেশ্যে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,

— এই দুই জঘন্য নারীকে এই মুহুর্তে আমার চোখের সামনে থেকে সরিয়ে রেড জোনে ফেলে দিয়ে এসো, এবং নিশ্চিত করে আসো যেন রেড জোনের পশু গুলো এদের শরীরের পুরোটাই ছিড়ে ছিড়ে খেয়ে নেয়, একটা টুকরোও যেন অবশিষ্ট না থাকে!

ইয়াসির মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে বলে উঠলো,

— আপনার আদেশ শিরোধার্য ইয়োর ম্যাজেস্টি!

আর এরপর পেছন থেকে আরও কয়েকজন গার্ড কে ইশারায় ডেকে নিয়ে সে এগোলো হুমায়রা আর আফিয়ার দিকে।
আত্মা কেঁপে উঠলো হুমায়রার। আতঙ্কিত হয়ে বিস্ফোরিত নয়নে সে আর একবার মস্তিষ্কের ভেতরে হিজ ম্যাজেস্টির কথা গুলো আওড়ালো, আর তার পরমুহূর্তেই হাউমাউ করে ছুটে এসে মীরের পায়ে পড়ে গেলো। কিন্তু মীর কে স্পর্শ করার আগেই হুমায়রার দিকে প্রচন্ড ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকিয়ে দু কদম পেছনে ফিরে গেলো মীর। হুমায়রা হাউমাউ করে কেঁদে উঠে মিনতি পূর্ণ কন্ঠে বলল,

— ক্ষমা করে দিন ইয়োর ম্যাজেস্টি! এমন ভুল আর কখনোই হবে না! আর কখনো এমন কথা উচ্চারণ করার কথা মাথায়ও আনবোনা ইয়োর ম্যাজেস্টি! ক্ষমা করে দিন আমায়! দয়া করুন!

হুমায়রার আহাজারিতেও মীরের ঘৃণার দৃষ্টুর কোনো পরিবর্তন হলো না! ঘৃণার সাথে এবার চোখে এসে জড়ো হলো এক রাশ বিরক্তি। হুমায়রার দিক থেকে চোখ সরিয়ে ইয়াসিরের দিকে চোখ তুলে তাকাতেই ইয়াসির তড়িঘড়ি করে গার্ড গুলোর সহায়তায় আহাজারি করতে থাকা হুমায়রা আর আফিয়া কে ধরে বেধে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে চলে গেলো প্রাসাদের বাইরে।
ওরা চলে যেতেই মীর হলরুমে দাঁড়িয়ে থাকা সমস্ত দাসীদের দিকে দৃকপাত করে শকুনি দৃষ্টিতে তাকিয়ে হুঙ্কার দিয়ে বলে উঠলো,

— দ্বিতীয়বার যদি কেউ আমার স্ত্রীর নামে কোনো ধরণের অসম্মানজনক কথা বলার মতো স্পর্ধা দেখায় তবে তাকে ফুটন্ত গরম পানিতে সেদ্ধ করে তার চামড়া ছিলে লবণ মাখিয়ে গলায় দড়ি বেধে অন্দরমহলের দরজায় ঝুলিয়ে রেখে দিবো। তাই সে যে-ই হোক না কেন!

মীরের এমন কন্ঠ শুনে দাসী গুলো আতঙ্কে জড়সড় হয়ে উঠলো। মীর চোয়াল শক্ত করে তাদের দিকে থেকে চোখ নামিয়ে অন্দরমহল ছেড়ে বেরিয়ে যেতে যেতে ইয়াসমিনের উদ্দ্যেশ্যে বলে উঠলো,

— হেরেম এখন থেকে তোমার দায়িত্বে ইয়াসমিন!

বলেই গটগট পায়ে বেরিয়ে গেলো সেখান থেকে। ইয়াসমিন কৃতজ্ঞতা জানানোর সময়টুকুও পেলো না।

মীরের যাওয়ার পানে তাকিয়ে ইয়াসমিন দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো একটা, তারপর নিজের নতুন দায়িত্ব বুঝে নিতে পা বাড়ালো। তখনি পেছন থেকে নরম সুরে কেউ প্রশ্ন করে উঠলো,

— উনি কি শেহজাদীকে খুব ভালোবাসেন?

প্রশ্ন শুনে থমকে দাঁড়িয়ে পেছনে ফিরলো ইয়াসমিন৷ লাল রঙা কোকড়া চুলের নীল নয়না মেয়েটি চোখে একরাশ কৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে৷ ইয়াসমিন দু কদম এগিয়ে গেলো তার দিকে, তারপর জিজ্ঞেস করলো,

— কি নাম তোমার?

— বাহার, গুল বাহার।

— শুনো বাহার! এই পৃথিবীতে হিজ ম্যাজেস্টি সর্বমোট চারজন মানুষ কে ভালোবেসেছেন; তার দাদাজান, তার আম্মা, তার চাচাতো ভাই আর শেহজাদী। প্রথম তিন জনকে তিনি অনেক আগেই হারিয়েছেন। তাই চতুর্থ জনকে তিনি তার সমস্ত ভালোবাসা উজাড় করে দিয়েছেন, কোনোভাবেই আর তাকে হারাতে দিবেন না৷ নশ্বর কারো ক্ষমতা হবে না শেহজাদী কে বাদশাহর থেকে আলাদা করার। তাই এতদিন হুমায়রা আর আফিয়া মিলে তোমাকে যে দিবাস্বপ্ন দেখিয়েছে সেগুলো ভুলে যাও।

কথা শেষ করে বাহারের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ইয়াসমিন চলে যেতে নিচ্ছিলো। তখনি বাহার পেছন থেকে আত্মবিশ্বাসের সাথে আবার প্রশ্ন করলো,

— উনি কি আমার থেকেও সুন্দরী?

ইয়াসমিন ঘুরে দাঁড়িয়ে একবার বাহারকে আপাদমস্তক দেখে নিলো, তারপর সামান্য শব্দ করে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,

— কোথায় চাঁদের কণা আর কোথায় কচুরিপানা!

৭৫. সশব্দে দরজা ঠেলে অ্যানার কামরায় ঢুকলো মীর। দরজা খুলতেই একটা নরম, স্নিগ্ধ বাতাস এসে বাড়ি খেলো মীরের দেহে। ব্যালকনির দরজা টা খোলা। অ্যানা হারিয়ে যাওয়ার পর থেকে দরজাটা সারাক্ষণ খোলাই রাখে মীর। যদি মেয়েটা কখনো ভুলবসতও কামরাটায় একটু উঁকি মেরে যায়!

একপা দুপা করে কামরার ভেতরে এগোলো মীর। এই সেই কামরাটা, যেখানে ওর শিনুর ভালোবাসার চাদরে সারাটাক্ষন নিজেকে মুড়িয়ে রাখতো ও! আজ সেখানে বিষণ্ণতার স্রোত বইছে! ওর শিনুর ছোয়া গুলো আজ হারিয়ে যেতে বসেছে কামরা টা থেকে!
মীর এগিয়ে গেলো অ্যানার ড্রেসিং টেবিলটার দিকে। এখানে বসে রোজ নিজের দীঘল শুভ্র কেশগুচ্ছ আলগা করতো অ্যানা। নিজের শুভ্র কোমল চেহারাটা দেখতো ওই আয়নায়! অ্যানার নিতম্ব ছাড়ানো চুল গুলোতে রোজ রাতে তেল লাগিয়ে দিতো মীর। সযত্নে আচড়ে বেনী করে দিতো ওর রেশমী চুল গুলো! সবখানেই নিজের আলতো, কোমল স্পর্শ রেখে গেছে সে!

ড্রেসিং টেবিলটার সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে সেখান থেকে সরে মীর এবার এগোলো অ্যানার বিছানার দিকে। ঝিনুকের আকৃতির ন্যায় বিশাল বিছানাটার মোলায়েম ফোমের ওপর নিজের পিঠ ঠেকিয়ে শুয়ে পড়লো ও, তারপর পরম আবেশে চোখ বুজে নিলো।

এই বিছানায় কতশতবার ওদের ভালোবাসাবাসি হয়েছে। অগণিত মান অভিমানের পালা চলেছে! মান অভিমান শেষে আবার একে অপরের বুকে ঝাপিয়ে পড়েছে! এই বিছানাতেই হয়েছে কত শত আবদার, কত শত আদর! কত রাত আদরে আদরে ও পাগল করে তুলেছে ওর শিনু কে! শিনুর প্রেমের ঝুমবৃষ্টিতে ভিজেছে ও রাতভর! সংযমের রাত গুলোতে অ্যানার যন্ত্রণা যুক্ত পেটটাকে আগলে নিয়েছে নিজের উষ্ণ হাতের তলায়! ওর হাতের ওই ভালোবাসাময় উষ্ণতা না পেলে যে ওর শিনুর যন্ত্রণা কমতো না! তবে এখন কি করছে ওর শিনু! ওর শিনু ওকে ছেড়ে কিভাবে আছে?

বিছানা থেকে অ্যানার শরীরের ক্ষীণ সুঘ্রাণ ভেসে আসছে। বুক ভরে অ্যানার ঘ্রাণ মিশ্রিত বাতাস টেনে নিতে চাইলো মীর!
কিন্তু এ কি! অ্যানার শরীরের ঘ্রাণ টা আগের মতো আর পাওয়া যাচ্ছে না কেন! ম্লান হয়ে আসছে যে!
মীর চোখ মেলে তাকালো তখনি! ক্ষীপ্র গতিতে উঠে বসে পাশ থেকে অ্যানার মাথার বালিশ টা নিয়ে সেখানে নাক ডুবালো! আসছে না ওর শিনুর ঘ্রাণ! আর আসছে না! সব কিছু মিলিয়ে যাচ্ছে, ফিকে হয়ে যাচ্ছে! এমন কেন হচ্ছে!
আর কতদিন! আর কতদিন থাকবে এ ঘ্রাণ! ধীরে ধীরে তো সবই মিলিয়ে যাচ্ছে হাওয়ায়! কি করবে এবার ও! ওর শিনুকে ছাড়া কিভাবে থাকবে ও এখানে!

মেয়েটা সেই চলে গেলো! আর তারপর এতগুলো দিন ধরে এত খোজাখুজি করেও তার কোনো হদিস পেলো না মীর! সমস্ত রেড জোন তন্নতন্ন করে খুঁজেছে ও অনেক অনেক বার! কিন্তু যাকে খোঁজার জন্য ওর এত পরিশ্রম, একটা বারের জন্যও তার উপস্থিতি কোথাও পেলো না মীর! কোথাও না!
পঞ্চদ্বীপের একটা দ্বীপও খুজতে বাকি রাখেনি মীর। সবখানে খোঁজা হয়ে গেছে ওর! কিন্তু কোথাও ওর শিনুকে ও খুঁজে পায়নি!

অ্যানার বালিশ টা আগের জায়গায় রেখে দিয়ে আবার দুর্বল ভঙ্গিতে শুয়ে পড়লো মীর। শুয়ে শুয়ে গত দুমাসের সমস্ত ঘটনা গুলো একবার চোখের সামনে দেখে নিলো ও। একটাবারের জন্যেও অ্যানার উপস্থিতি ও কোথাও পায়নি ভাবতেই অস্ফুট এক আর্তনাদ বেরিয়ে এলো ওর বুক চিরে!

আবার চোখ বুজে নিলো ও। একটা শুকনো ঢোক গিলে আবারও অ্যানার শরীরের ঘ্রাণ নেওয়ার চেষ্টা করলো। হঠাৎ করেই ওর মনে হলো অ্যানা যেন ওর পাশেই ঘুমিয়ে আছে, এইতো এখনি ঘুম থেকে স্বল্প ইস্তফা দিয়ে ওর ডান পা টা মীরের শরীরের ওপর উঠিয়ে দিয়ে বেঘোরে আবার ঘুমিয়ে পড়বে!
অ্যানার উপস্থিতির কথা মনে হতেই মীরের বুকের ভেতর টা ধক করে উঠলো হঠাৎ। জানে কোনো উত্তর আসবে না, তবুও একবার অস্ফুটস্বরে ও ডেকে উঠলো,

— শিনু!

কোনো উত্তর এলো না, কেউ সে ডাকে সাড়া দিয়ে বলে উঠলো না, ‘এইতো আমি, তোমার কাছেই’
নিস্তব্ধ, সব নিস্তব্ধ, সব নিশ্চুপ! তবুও যেন মীরের মনটা মানতে চাইলো না! নিজের বা হাত টা আস্তে আস্তে অ্যানার দিকের বিছানার দিকে বাড়ালো। যদি কোনো অলৌকিক শক্তি বলে ওর শিনু ওর কাছে চলে আসে!

মীরের বুকে জন্মানো এই শিশুসুলভ ক্ষীন আশা বিফলে গেলো সম্পুর্ন। হাত টা বিছানার ওপর রেখে সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে ডুবে যেতে থাকা ব্যাক্তি যেভাবে একটা অবলম্বন খোঁজার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে, ঠিক সেভাবেই বিছানার অপর পাশটা হাতড়াতে লাগলো মীর!

নেই নেই নেই! কেউ নেই এখানে! কোথাও নেই ওর শিনু! কোথাও না! ওর ওপর অভিমান করে চলে গেছে কোনো দূর অজানায়, যেখানে ও পৌছাতে পারছে না, কিছুতেই পৌছাতে পারছে না, কিছুতেই না!
হঠাৎ করেই দুঃস্বপ্ন দেখে জেগে ওঠা শিশুর ন্যায় ডুকরে কেদে উঠলো মীর। ওর বুকটা আজ ফাঁকা, ভীষণ রকম ফাঁকা! নিজের কান্না থামানোর বৃথা চেষ্টা করতে করতে নিজের হাফিয়ে যাওয়া ফুসফুসকে সামান্য শান্তি দিতে শিনুর উদ্দ্যেশ্যে ও অস্ফুটস্বরে বলে উঠলো,

— শিনু! প্রাণ আমার! তোমার অভিমানের কারণে আজ আমার সমস্ত জীবন বিষণ্ণতায় ভরে উঠেছে, যেখানে আলো বলতে আর কিছুই নেই, আঁধারে ছেয়ে আছে সবকিছু।
তোমার সেই ঝংকার তোলা মিষ্টি হাসির জায়গায় এখন এই কামরার নিস্তব্ধতায় আমি কেবল শুনছি আমার নিজেরই হাহাকার।
আমার প্রতিটি প্রহর কাটতো তোমার ওই মায়াভরা চোখের দিকে তাকিয়ে, অথচ আজ তুমি নেই। আমার হৃদয়ের প্রতিটি স্পন্দনে তুমি মিশে আছো, অথচ এই শূন্য কামরায় তোমার ছায়া আর ফেরে না। তোমার আদরের প্রতিটি স্পর্শ আমার স্মৃতির পরতে পরতে লেপ্টে আছে!
আর আমি ওই আকশের দিকে মুখ তুলে চেয়ে আছি তোমার অপেক্ষায়… আমার প্রতিটি দুয়াতে তোমার উপস্থিতি, যেন এখনি তুমি আমার কাছে ফিরে আসবে; আমার বুকের ভেতরে প্রতিনিয়ত ঝড় তোলা এই যন্ত্রণাকে চিরতরে মুছে দিতে! ফিরে এসো শিনু! ফিরে এসো একটিবার!”

৭৬. সন্ধ্যা নেমেছে কিছুক্ষণ আগে। বিশাল সমুদ্রের এক কোণায় এখনো সূর্যের লালচে কিরণ দেখা যাচ্ছে কিঞ্চিৎ। ওয়ার্কিং জোনে রাত নেমে এসেছে, চারদিকে ধীর ধীরে জ্বলে উঠছে বৈদ্যুতিক বাতি৷

রাতের বেলা কাজের চাপ কম। ওয়ার্কার্স রা সবাই মিটিং জোনে বসে গল্প করছে টুকটাক। কেউ কেউ নিজেদের বেচে থাকা কাজ গুলো সমাপ্ত করছে।

শার্লট ওর ভাইয়ের বাহুতে মাথা ঠেকিয়ে মিটিং জোনে বসে বসে সবার গল্প শুনছে, মাঝে মাঝে গল্পের প্রয়োজনে মৃদু মৃদু হাসছে। ব্রায়ানও সে গল্পে শামিল হচ্ছে মাঝে মাঝে।

কিছুক্ষণ পর ব্রায়ান হঠাৎ করে উঠে যেতে নিলো। আরামের জায়গাটা সরে পড়ায় শার্লট ভাইয়ের গমন পথের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,

— কোথায় যাচ্ছো ভাইয়া?

— হাটতে যাচ্ছি একটু, ভালো লাগছে না!

বলে নিজের পকেটে দু হাত ভরে ধীর পায়ে নিজেদের রেসিডেন্সিয়াল এরিয়ার দিকে এগোলো ব্রায়ান।
অ্যানা চলে যাওয়ার পর থেকে ওর সমস্ত আনন্দে ভাটা পড়েছে। সেদিনের পর থেকে আর কোনো কিছুতেই মনোযোগ দিতে পারেনি ও। সব কিছুতেই চলে আসছে বিরক্তি!
অ্যানাকে নিয়ে ওই লোক গুলো কি করলো সেটা আজও জানিতে পারেনি ওরা কেউ৷ শার্লট টা প্রায়ই জিজ্ঞেস করে অ্যানার ব্যাপারে, ব্রায়ান কোনোভাবে কিছু জানতে পেরেছে কিনা!
কিন্তু ব্রায়ান বিরাবরই নিশ্চুপ। কি উত্তর দেবে ও? কিভাবেই বা জানবে অ্যানা কোথায় আছে, ওর কি হয়েছে! ওর তো জানার মতো কোনো সোর্স নেই!

মাঞ্জারের ভেতরের সরু পথ বেয়ে হেটে চলেছে ব্রায়ান। রাস্তার দুপাশে ফুটে আছে হরেক রকমের ফুল। মৃদুমন্দ বাতাসে থেকে থেকে দুলে উঠছে সেগুলো, তাদের মোহনীয় সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে বাতাসে।
বুক ভরে ঠান্ডা বাতাস টেনে নিয়ে সামনে এগোলো ব্রায়ান। হাটতে হাটতে পৌছে গেলো মাঞ্জারের শেষ সীমানায়, ব্লু জোনের নিকটে।

কিছু স্মৃতি তাজা হয়ে উঠলো ওর। সে রাতে অ্যানা এখানেই সেই ছেলেগুলোকে খুন করেছিলো! বাঁচিয়েছিলো ওর আর ওর বোনের প্রাণ! কিন্তু সেই অ্যানাকে বাচাতে ও কিছুই করতে পারলো না। ওর চোখের সামনে দিয়ে অ্যানাকে নিয়ে চলে গেলো ওরা! আর ও হাত গুটিয়ে বসে বসে দেখলো শুধু!

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো ব্রায়ান। তারপর কিছুক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে রেড জোনের জঙ্গলের দিকে এক পলক তাকিয়ে ফিরে আসতে নিলো। তখনি ওর চোখ গেলো রেড জোনের ভেতরে থাকা একটি বিশাল, বিস্তৃত বটবৃক্ষের চওড়া ডালের ওপর। সেখানে শুয়ে আছে কেউ, চুল গুলো তার সাদা, গাছের ডালটাকে ছাড়িয়ে অভিকর্ষের টানে সে শুভ্র কেশ গুচ্ছ ঝুলে আছে নিচের দিকে! মৃদুমন্দ বাতাসে মিহি সুর তুলে উড়ছে সেগুলো!

চলবে…….

( ঠান্ডা লাগছে অনেক, নাকের পানি অটো হয়ে গেছে 🤧। আপনারা আমারে গালাইয়েন না 😐)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here