“তোমার পছন্দের ওই ভোলাভালা,নাদুস-নুদুস ইঞ্জিনিয়ার সাহেব কে আমি বিয়ে করতে পারবো না বাবা।”
“রফিক মির্জা সোফায় বসে হেলান দিয়ে ম্যাগাজিন পড়ছিলেন।হঠাৎ কর্ণকুহরে তার বড় মেয়ে নিধির রসকষহীন কন্ঠে কথা পৌঁছাতেই,ম্যাগাজিন টি এক পাশে রেখে চশমার ফাঁক গলিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটির দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
‘মাহতিম কে তোমার অপছন্দ হওয়ার কারণ কি?ছেলেটা তো যথেষ্ট ভদ্র,শিক্ষিত এবং সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান।তাহলে সমস্যা কোথায়?”
“নিধি ভ্রু জোড়া কুঁচকে বললো,’বাবা আমি তোমার কাছে আরেকটু সময় চাই।সবে তো অনার্স পাশ করেছি।আর কিছুদিন পর না হয় বিয়ে নিয়ে ভাববো।”
“রফিক মির্জা বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলেন।কন্ঠে তেজ নিয়ে বললেন,
‘আর কতভাবে বিয়ে গুলো ভাঙবে বলো তো?এই পর্যন্ত ৮টা বিয়ের সম্বন্ধ ভেঙে দিয়েছো।তুমি কি ভেবেছো,আমি কিছুই বুঝিনা?তুমি পাত্রদের সাথে রুমে আলাদা কথা বলবে বলে,তাদের কে পেট বানিয়ে মিথ্যা-বানোয়াট কথা বলো।তারপর তারা এসে নাকচ করে দেয়।এগুলো সব আমার জানা আছে।প্রথমে আমি বুঝতে পারিনি। কিন্তুু পরপর ৩টা বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর ঠিকই বুঝতে পেরেছি।সব তোমার ওই দুষ্টু মাথার শ**য়*তানি বুদ্ধি।দ্যাখো মেয়ে,তোমাকে আমি যেমন ভালোবাসি,তেমন শাসন করারও অধিকার রাখি।অনার্স ফোর্থ ইয়ারে দুই সাবজেক্ট এ একবার ফেল করেছো,তখন কিছুই বলিনি।এইবার পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছো।আমি নিজে একজন জার্নালিস্ট।সবার খবরাখবর সংগ্রহ করা আমার কাজ।সেখানে তোমাকে আমি স্বাধীন ভাবে চলাফেরা করতে দিয়েছি,আর এখন তুমি আমার মাথার ওপর উঠে লবণ দিয়ে বড়ই খাওয়ার প্ল্যান করছো?বিষয়টি খুবই দুঃখজনক!তুমি কি ভুলে গেছো,তোমার থেকে ২বছরের ছোট একটা বোন আছে?কিছুদিন পর ওকেও তো বিয়ে দিতে হবে।তাছাড়া তোমার বয়স কিন্তুু অনেক আগেই ২০এর কোঠা পেরিয়ে গেছে।সেটা মাথায় আছে তোমার?”
“রফিক মির্জা ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে আবারও বললেন,’সারাজীবন তোমার মায়ের কোলে তো আর তোমাকে বসিয়ে রাখা সম্ভব না।একদিন না একদিন শ্বশুর বাড়ি যেতে হবে।আর এখন যেহেতু আমি লেখালেখি করি না।তাই আমার সময় কা’টে না।আমি চাই খুব তাড়াতাড়ি নাতি-নাতনি নিয়ে খেলাধুলা করতে।অথচ তুমি একের পর এক বিয়ে ভাঙছো।”
“মাহতিম কে তোমার মায়ের এবং আমার খুব পছন্দ হয়েছে।আর আমি তাদের ফাইনাল কথা দিয়ে ফেলেছি।ওর সাথেই তোমার বিয়ে হবে।আমি আর কোনো বাহানা শুনতে চাইনা।দিস ইজ মাই অর্ডার।’বলেই রফিক মির্জা সেখান থেকে বড় বড় পা ফেলে চলে গেলেন।”
“নিধি এক দৃষ্টিতে ওর বাবার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো।ওর চোখজোড়া ছলছল করে উঠলো।মায়ের থেকে বাবার সাথে ওর বন্ধুত্বের সম্পর্ক বেশি।হাজার ভুল করলেও ওর বাবা ওকে হাসি মুখে ক্ষমা করে দেয়।আর সেখানে আজ এতো কঠোর ভাবে কিভাবে কথাগুলো বললো!ভেবে নিধি দিশেহারা হয়ে গেলো।”
“তখনই পেছন থেকে নিধির কাঁধে হাত রাখলেন তাহমিনা বেগম।নিধি পেছনে ফিরে ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে,কিছুক্ষণ আগের কথা মনে করলো।”
ফ্ল্যাশব্যাক-
“পড়ন্ত বিকালে বেলকনিতে দোলনায় বসে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছিলো নিধি।
‘পাগলু পাগলু
ও মাই পাগলু
লাভ ইউ লাভ ইউ
ও মাই পাগলু।”
আর গানের সাথে হাত-পা এদিক-সেদিক ছুঁড়ে নাচানাচি করছিলো।নিধি তেমন নাচতে পারেনা,গাইতে পারে।কলেজে ওর গানের কন্ঠের বেশ সুনাম আছে।তো পেছনে দাঁড়িয়ে নিধির এই হাত-পা ছুঁড়ে পা**গলের মতো নাচানাচি, এতক্ষণ যাবৎ খুব ধৈর্যের সহিত দেখছিলেন তাহমিনা বেগম।”
“কয়েক মিনিট পর নিধির কান থেকে হেডফোন সরিয়ে, একটা পাসপোর্ট সাইজের ছবি নিধির দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,’এই নে তোর ৯ম সম্বন্ধ।তুই কিছুদিন আগে তোহা কে নিয়ে শপিং করতে গিয়েছিলি।সেখানে শপিংমলে ছেলেটা তোকে দেখে পছন্দ করেছে।তারপর তোদের ফলো করে আমাদের বাসায় এসেছে।আর সরাসরি তোর বাবার সাথে কথা বলে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে।তোর বাবা ওর সম্পর্কে এবং ওর পরিবার সম্পর্কে সব ধরনের খোঁজ-খবর নিয়েছে।ছেলেটার নাম মাহতিম চৌধুরী;পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার।দেখতেও সুন্দর,শিক্ষিত এবং সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান।আমি জানি, তোর মাথায় সারাদিন দুষ্ট কোকিল ঘোরাফেরা করে।আগের সম্বন্ধ গুলো তুই ভেঙেছিস।আর সবার সামনে আমাদের মাথা টা নিচু করেছিস।এখন দয়া করে এইসব বন্ধ করে, চুপচাপ বিয়ে করতে রাজি হয়ে যা।তোর সম্মতি পেলে ২-৩দিনের মধ্যে পাত্রপক্ষ আমাদের বাসায় এসে বিয়ের কথা ফাইনাল করবে।”
“মায়ের কথাগুলো শুনে নিধির মাথায় মনে হয় আগুন ধরে গেলো।কটমটিয়ে একবার তাহমিনা বেগমের দিকে তাকালো,তারপর ছবিটির দিকে তাকিয়ে তেলাপোকা দেখার মতো লাফ দিয়ে উঠলো।তাহমিনা বেগমের দিকে তাকিয়ে চোখ পাকিয়ে বললো,’এই নাদুস-নুদুস মোটা ছেলে হবে আমার লাইফ পার্টনার? ইম্পসিবল।বাবা কি করে একে আমার জন্য পছন্দ করলো বলো তো?না না না আমি এই বিয়ে করবো না।তুমি তো জানো,আমার ফ্রেন্ডদের হাসবেন্ড গুলো কি হ্যান্ডসাম।শুধু রেশমির হাসবেন্ড একটু মোটা আর কালো।আর এটা নিয়ে আমাদের বন্ধু মহলে অনেক মজা করেছিলাম।আর বেশি মজা করেছিলাম আমি।’ও রেগে গিয়ে বলেছে,’ প্রকৃতি নাকি সময় বুঝে ঠিক রিভেঞ্জ নিয়ে নেয়।’তুমি ভাবতে পারছো, এই ছেলে কে বিয়ে করলে বন্ধু মহলে আমাকে কতোটা হ্যা’রা’স হতে হবে?
না মা এই প্রস্তাবটা না করে দাও।আমি কথা দিচ্ছি, পরবর্তী প্রস্তাব টা আমার মনের মতো হলে, ভুলেও আর উল্টাপাল্টা কাজ করবো না।”
“তাহমিনা বেগম নিধির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে;ক্ষিপ্ত কন্ঠে বললেন,’নিজেকে কি বিশ্বসুন্দরী ভাবিস?মোটা,চিকন এই স্বাস্থ্য সৃষ্টিকর্তার দান।এগুলো কে হেয় করে দেখা মোটেও উচিত না।তাছাড়া আল্লাহ যাকে তোর ভাগ্যে লিখে রাখবেন,তার সাথেই তোর বিয়ে হবে।তুই হাজারবার বিয়ে ভাঙলেও তার সাথেই হবে।আর তোর বাবা কে গিয়ে এইসব ভাষণ ছাড়।আমার সাথে এই বিষয়ে ভুলেও কথা বলবিনা।বাপ-বেটি মিলে আমাকে অনেক জ্বালিয়েছিস।’বলেই তাহমিনা বেগম হনহন করে সেখান থেকে প্রস্থান করলেন।”
“নিধি সেদিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থেকে, রুমে ঢুকে নিজেকে একবার আয়নায় ঘুরে ঘুরে দেখলো।আর ভাবলো,’আমি কতো স্লিম,দেখতেও মাশা-আল্লাহ। ওই লোকটাও দেখতে সুন্দর; কিন্তুু নাদুস-নুদুস। আমার পাশে হাঁটলে কেমন লাগবে?’ভেবেই নিধি একটু কল্পনা করে হকচকিয়ে উঠে বললো,’না না না আমি মোটা ছেলে কিছুতেই বিয়ে করবো না।যতো সুদর্শন হোক না কেন।তাহলে বান্ধবী মহলে আমার প্রেস্টিজের ফালুদা হয়ে যাবে।যে করেই হোক, এই বিয়ে আমাকে ভাঙতেই হবে।আর ওই লোকটাই বা কি রকম?আমাকে দেখলো আর পছন্দ হয়ে গেলো?আর ওমনি ধেই ধেই করে নাচতে নাচতে আমার বাসায় এসে বিয়ের প্রস্তাব দিলো!’ভেবে নিধি ড্রয়িং রুমে চলে গেলো।”
‘সোফায় বসে রফিক মির্জা তখন মনযোগ দিয়ে ম্যাগাজিন পড়ছিলো।তখনই নিধি এই কথাগুলো ওর বাবাকে বলতেই, বি**স্ফো**রণ ঘটে গেলো।”
————
“কথাগুলো ভেবে নিধি বর্তমানে ফিরে এলো।তাহমিনা বেগমের সাথে কথা না বলে,নিধি এলোমেলো পা ফেলে নিজের রুমে এসে ওর ছোট বোন তোহা কে কল করলো।
২বার রিং হওয়ার পর তোহা কল রিসিভ করে বললো,’আপু কি হলো?হঠাৎ ফোন করলে যে?”
“নিধি চিন্তিত কন্ঠে বললো,’তোর সাথে জরুরি কিছু কথা আছে।তাড়াতাড়ি বাসায় আয়।”
“আরে আপু আমি তো বান্ধবীদের সাথে ঘুরতে এসেছি।১ঘন্টা পর আসবো।”
“আরে তোর ঘোরাঘুরি গোল্লায় যাক।তুই ১০মিনিটের মধ্যে বাসায় আসবি।যদি আমার কথা না শুনিস তাহলে কিছুদিন আগে তোর জন্য যেই নতুন গাউন টা কিনেছিস,ওটা আমি কু**চি কু**চি করে কে**টে ফেলবো।জানিস তো আমি কা*টা*কা*টি তে কতোটা এক্সপার্ট।”
“তোহা শুকনো ঢোক গিলে ভাবলো,’কোথায় এই কথাগুলো ঘরের ছোট সন্তান হয়ে আমি বলবো।সেখানে কিনা আপু বলছে।মা-বাবা কি আমাদের জন্মসনদ উল্টেপাল্টে দিয়েছে?মাঝে মাঝে মনে হয় আমি বড়,আর আপু ছোট।’কথাগুলো ভেবে বললো,’ওকে ওকে আপু আমি ১০মিনিটের মধ্যে আসছি।তুমি প্লিজ আমার নতুন গাউনটার সাথে অত্যাচার করবে না।কয়েকদিন আগে তোমাকে এক গ্লাস পানি এনে দেইনি বলে, তুমি আমার ইংরেজি বইয়ের শেষের পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ফেলেছো।এখন আবার এগুলো করো না প্লিজ।”
“নিধি বিশ্বজয়ের হাসি দিয়ে বললো,’এই তো গুড গার্ল।এই না হলে আমার ছোট বোন!ওকে রাখছি,আমার ফোনে ১২ টাকা আছে।এটা শেষ হয়ে গেলে আমার বেস্টি নাদিয়ার সাথে যোগাযোগ করতে পারবো না।’বলেই কট করে ফোন টা কেটে দিলো।”
“তোহা প্রায় ১৫মিনিট পর বাসায় এসে হন্তদন্ত হয়ে রুমে গিয়ে নিধি কে উত্তেজিত কন্ঠে বললো,’আপু বলো কি বলবে?”
“নিধি কানে হেডফোন লাগিয়ে আবারও সেই ‘পাগলু পাগলু’ গান টা শুনছিলো।তবে এইবার আর নাচানাচি করে নি।মন টা একটু খারাপ তাই।হঠাৎ তোহার রগরগে কন্ঠ শুনে হেডফোন সরিয়ে বললো,’ওই মাইয়া এতো জোরে চেঁচাস ক্যারে?”
“তোহা নিধির কাছে এসে বললো,’আপু আমি এখন আঞ্চলিক ভাষা নিয়ে মজা করার মুডে নেই।কিসের জন্য এতো জরুরি তলব করলে আগে সেটা বলো।”
“নিধি একটু ভাব নিয়ে মুচকি হেসে বললো,’তুই ডিটেক্টিভ হলে খুব ভালো হতো।রিয়েলি আ’ম প্রাউড অফ ইউ।এনিওয়ে শোন।’বলেই নিধি কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া পুরো ঘটনা তোহা কে বললো।”
“তোহা সবকিছু শুনে বড় বড় চোখ করে বললো,
‘আপু ছেলেটা মোটা বলে এইবারও তুমি বিয়েটা ভাঙবে?”
“নিধি মুখ ভেংচি কে’টে বললো, ‘তো তুই এই নাদুস-নুদুস পুরুষ কে বিয়ে করে নে;তাহলেই তো হয়।তোর নাকের সাথে আমার নাকের খুব মিল আছে।চেহারাটাও মোটামুটি মিলে যায়।তুই তাকে বিয়ে করে নে।”
“না আপু আমি তাকে কিছুতেই বিয়ে করবো না।তুমি তো তোমার একটা ফ্রেন্ডের হাসবেন্ড কে নিয়ে মজা করেছো।আর আমি তো আমার ৩টা ফ্রেন্ডের হাসবেন্ডদের নিয়ে মজা করেছি।ওরাও আমাকে ন্যাচারাল রিভেঞ্জের কথা বলেছে।জেনে-বুঝে এই কাজ করবো না।তবুও ভাগ্যে থাকলে তো কিছু করার নেই।তাছাড়া এই পর্যন্ত ৮টা বিয়ে ভাঙতে তো আমিই তোমাকে সাহায্য করেছি।কেউ কিচ্ছুটি টের পায় নি।দরকার হলে এইবারও করবো।”
“নিধি দুষ্টু হেসে বললো,’এই না হলে আমার বিশ্বস্ত গোয়েন্দা!আচ্ছা আমার মাথায় একটা ঝাকানাকা প্ল্যান এসেছে;তোকে বলি।’বলেই
নিধি তোহা কে প্ল্যানের ব্যাপারে সবকিছু বললো।তারপর ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,’,প্ল্যান টা সাকসেসফুল হলে তোকে সিরাজগঞ্জের চলনবিলে ঘুরতে নিয়ে যাবো।’
তোহা তো এটা শুনে খুশি তে লাফ দিয়ে উঠলো।”
“নিধি ব্যঙ্গ করে বললো,’আরে এতো লাফালাফি করিস না।তাহলে তোর ব্রয়লার মুরগির মতো বিখ্যাত ঠ্যাং দু’টো ভেঙে গেলে আর ঘুরতে যেতে পারবিনা।’নিধির মুখে এটা শুনে তোহা স্থির হয়ে চুপচাপ বিছানায় বসলো।”
———–
“রাত ১১টার দিকে তোহা চুপিচুপি রফিক মির্জার বেডরুমে ঢুকলো।তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে পুরো রুমটি সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করলো।দেখলো, ওর বাবা নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে।আর তার পেটের ওপর হাত রেখে তাহমিনা বেগম বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। তোহা খুব খুশি হয়ে গেলো।তারপর বিড়াল পায়ে হেঁটে গিয়ে রফিক মির্জার বালিশের পাশ থেকে নিঃশব্দে ফোন নিয়ে, কন্টাক্ট লিস্টে গিয়ে ‘মাহতিম’ লিখে সার্চ করতেই;জ্বলজ্বল করে একটি নাম ভেসে উঠলো।কন্টাক্ট লিস্টে একাধিক ‘মাহতিম’ নামটি না থাকায় তোহা বুঝে গেলো এটাই সেই লোক,যার জন্য এতো আয়োজন।’তোহা তাড়াতাড়ি করে মাহতিমের নাম্বার টা নিজের ফোনে উঠিয়ে,সুন্দর করে মোবাইলটি যথাস্থানে রেখে বিড়াল পায়ে সেখান থেকে প্রস্থান করলো।”
“তোহা রুমে গিয়ে নিধি কে নাম্বার দিতেই,নিধি কুটিল হেসে বললো,’চমলক্ক একটা কাজ করেছিস।’বলেই তোহার গালে হাত দিয়ে নিজের ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে শব্দ করে বললো,’উউউম্মা..নেহ তোকে ফ্রী তে ফ্লাইং কিস দিলাম।এখন মটু সাহেব কে একটা ফোন দেই।আর শোন আমি যখন কথা বলবো,তখন তুই একদম ফুসুর-ফাসুর করবি না; মনে থাকে যেনো।”
“তোহা হাসি মুখে ‘হ্যা’ বোধক মাথা নাড়লো।নিধি নাম্বার টি তে ডায়াল করলো।৪বার রিং হতেই কল রিসিভ করে অপর পাশ থেকে পুরুষালি কন্ঠস্বর ভেসে এলো,’হ্যালো কে বলছেন?”
” নিধি বেলকনিতে থাকা দোলনায় পায়ের ওপর পা তুলে বসে ঠোঁট টিপে হেসে কোমল কন্ঠে বললো,’আমি নিরুপমা ইসলাম নিধি বলছিলাম।”
“নিধির কন্ঠস্বর শুনে চমকে গেলো মাহতিম।একবার ফোনের নাম্বার টির দিকে তাকিয়ে, আবারও কানে দিয়ে বিস্ময়ের কন্ঠে বললো,’নিধি আপনি আমাকে ফোন করেছেন?তাও আবার এতো রাতে?”
“তো কি ডাইনী ফোন করবে?”
“মাহতিম মুচকি হাসলো,’না মানে এতো রাতে আপনি আমায় ফোন করলেন।আমার নাম্বার কোথায় পেলেন?”
” আপনি যেভাবে আমায় পেয়েছেন সেভাবেই।আচ্ছা শুনুন, আপনার বিষয়ে আমার বাবা-মা আমাকে সবকিছু বলেছে।কিন্তুু…
“মাহতিম উত্তেজিত কন্ঠে বললো,’কিন্তুু কি?”
“হিহিহি কিন্তুু আমি আপনার সাথে সরাসরি মিট করতে চাই।বিয়ের আগে আমাদের দু’জনের সামনাসামনি দেখা হওয়া টা জরুরি।তারপর না হয় আপনি আমাদের বাসায় আসবেন।”
“মাহতিম ঠোঁট জোড়া চেপে একটু ভেবে বললো,’ওকে।এটা তো খুবই ভালো কথা।কথাটা আগে আমার বলা উচিত ছিলো।এনিওয়ে, কখন কোথায় দেখা করবো বলুন।”
“নিধি ঠোঁট জোড়া প্রসারিত করে কানের কাছ থেকে ছোট ছোট চুলগুলো আঙ্গুলে পেঁচিয়ে মাহতিম কে একটা রেস্টুরেন্টে দেখা করার কথা বললো, আর ঠিকানা এবং সময় ও বলে দিলো।”
“মাহতিমের মনে তো খুশিতে লাড্ডু ফুটছে।”
“নিধি ফোন রেখে তোহা কে বিরক্তিকর কন্ঠে বললো,’উফফ কথা বলার সময় এমন কানের সাথে আঠার মতো লেগে থাকিস কেনো?আমার আনইজি লাগে না?”
‘তো কি করবো?তুমি তো লাউডস্পিকারে দাও না।তাই তো কষ্ট করতে হয়।’
‘ওকে আর কষ্ট করা লাগবে না।আগামীকাল বিকালে ‘কেল্লাফতে’ রেস্টুরেন্টে মটু সাহেবের সাথে দেখা করবো।ছেলেটা আমার সাথে দেখা করার জন্য হাপিত্যেশ করে বসে আছে।এখন শুয়ে পর;আমিও ঘুমাবো।’বলেই নিধি বিছানার এক পাশে গিয়ে কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো।নিধি এবং তোহা দু’জনেই ঘুমিয়ে গেলো।”
“বিকালের দিকে তোহা নিধি কে সুন্দর করে হিজাব পড়িয়ে দিলো।মেরুন রঙের থ্রি পিসের সাথে ম্যাচিং হিজাবে নিধি কে বেশ ভালো লাগছে।নিধি দেখতে খুব সুন্দরী নয়।তবে প্রথম দেখাতে পছন্দ হওয়ার মতো মেয়ে।তোহা মিষ্টি করে হেসে বললো,’আপু রে আমার হবু মটু দুলাভাই তো তোমাকে দেখে ফিদা হয়ে যাবে রে।”
” হয়েছে এতো পটর পটর করিস না।বিকাল ৪টা বেজে গেছে।বাবা-মা যেহেতু ঘুমিয়েছে,তাই তাড়াতাড়ি চল।ওনাকে তো সাড়ে ৪টায় আসতে বলেছি।’বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।”
“লিফটের ফোর্থ ফ্লোরে ‘কেল্লাফতে’ রেস্টুরেন্টে ৩গ্লাস কোল্ড কফি সামনে নিয়ে মুখোমুখি বসে আছে নিধি,তোহা এবং মাহতিম।
নিধি এবং তোহা একসাথে বসেছে।বিপরীত দিকে মাহতিম বসেছে।”
“নিধি মাহতিমের দিকে একবার আড়চোখে তাকালো।মাহতিম অ্যাশ কালার শার্ট পড়েছে;ফরমাল পোশাকে এসেছে।ক্লিন শেভ করা,গায়ের রং উজ্জ্বল ফর্সা।ছবিতে দেখতে যতোটা গুলুমুলু লাগছিলো, ততটা নয়।তবে স্বাস্থ্য একটু ভালো।নিধির গুলুমুলু বাচ্চা খুব পছন্দ।গুলুমুলু বাচ্চা দেখলেই গাল দু’টো টিপে দিতে ইচ্ছা করে।এই মুহুর্তে মাহতিমের গুলুমুলু গাল দুটো টিপে দিতে ইচ্ছে করছে।কিন্তুু এখন এইসব বাচ্চামো করলে চলবে না।সিরিয়াস মুডে থাকতে হবে।”
“নিধির দিকে তাকিয়ে কোল্ড কফির স্ট্র তে একবার ঠোঁট জোড়া স্পর্শ করে; সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে মাহতিম বললো,’আপনাকে দেখতে খুব গর্জিয়াস লাগছে।”
“নিধি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে,
আই নো আ’ম লুকিং সো গর্জিয়াস।”
“মাহতিম ভ্রু জোড়া কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো, ‘তাই নাকি?নিজের সম্পর্কে আর কি কি জানেন আপনি?”
“নিধি কাঁধের কাছে আসা চুলগুলো হাত দিয়ে ঢং করে সরিয়ে বললো,’আ’ম সুইট,বিউটিফুল, কিউট,হ**টি,ন**টি গার্ল ব্লা ব্লা ব্লা..”
“নিধির কথা শুনে তোহার কাশি উঠে গেলো।কোনরকমে কাশি থামিয়ে;নিধির কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললো,’আপু একটু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে না?লোকটা তো তোমাকে অহংকারী ভাববে।”
“নিধিও ফিসফিস করে বললো,’তো ভাবলে ভাবুক।আমি তো সেটাই চাই।তাই তো সব কথা গুছিয়ে এখানে এসেছি।তুই চুপ করে এনজয় কর।’বলে মাহতিমের দিকে তাকিয়ে বললো,’শুনুন মি.মাহতিম চৌধুরী আমি খুব স্পষ্টভাষী মেয়ে।ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে কথা বলতে আমার একদম ভালো লাগে না।আপনি দেখতে যথেষ্ট হ্যান্ডসাম আর এস্টাবলিশ হলেও, আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না।আমার বয়ফ্রেন্ড আছে।তার নাম তুষার।ঢাকা মেডিকেল থেকে পাশ করে বেরিয়ে ইন্টার্নি করছে।১বছর পর মেডিকেলে জয়েন করলে বাবা কে বলে আমি তাকেই বিয়ে করবো।এখন আপনি বলুন, রিলেশনশিপে থাকা একজন মেয়ে কে জেনে-শুনে আপনি বিয়ে করবেন?”
“মাহতিম কফির গ্লাস থেকে স্ট্র সরিয়ে, কোল্ড কফিটি এক চুমুকে খেয়ে ফেললো।তারপর টিস্যু পেপার দিয়ে ঠোঁট জোড়া মুছতে মুছতে বললো,’বিয়ের আগে এমন বয়ফ্রেন্ড বেশিরভাগ মেয়েদেরই থাকে।এটা কোনো ব্যাপার না।আমার আপনাকে যেহেতু পছন্দ হয়েছে,সো আমি আপনাকেই বিয়ে করবো।”
“নিধি বিস্ময়ের শীর্ষে পৌঁছে গিয়ে মৃদু স্বরে চেঁচিয়ে বললো,’হোয়াট?”
🔴আমার গল্প ভালো লাগলে গল্পের গ্রুপে যুক্ত হয়ে নিন👇
https://facebook.com/groups/540631661830855/
#চলবে…
#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ১
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ
(আসসালামু আলাইকুম আপনারা কেমন আছেন?নতুন একটি সাইকো টাইপ গল্প নিয়ে হাজির হলাম।সূচনা পর্বটি কেমন হলো গঠনমূলক মন্তব্য করে জানাবেন প্লিজ।ভালোবাসা অবিরাম।)