হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ #পর্বঃ১৪ #লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

0
79

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ১৪
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

“মন তৎক্ষনাৎ দুষ্টু হেসে বললো,’এতোকিছু করার পরেও যদি সে তোমার না হয়;তাহলে তাকে শেষ করে ফেলবে,সিম্পল।”

“নির্জন ভ্রু জোড়া কুঁচকে বললো,’ভালোবাসার মানুষ কে শেষ করে ফেলতে তো আমার হাত কাঁপবে।তুমি মজা করছো আমার সাথে?”

“মন বললো,’একি নির্জন তুমি দেখছি নিধির প্রেমে অন্ধ হয়ে গেছো।তুমি তো দেখছি প্রতিনিয়ত নিজেকেই ভুলে যাচ্ছো।নিজের প্রতি এতটা কেয়ারলেস হলে,পরবর্তীতে তোমাকেই পস্তাতে হবে।”

“হঠাৎ করে ‘হৃদয়’ কপট রাগ দেখিয়ে বলে উঠলো,’নির্জন তুমি আমার কথা একটু বোঝার চেষ্টা করো।মনের দুষ্টু বুদ্ধিগুলো অগ্রাহ্য করে, ইতিবাচক দিকে ধাবিত হও।সে যদি তোমার না হয়,তাহলে কেনো তাকে শেষ করে ফেলবে?সেও তো তোমার মতোই একজন র**ক্তে মাংসে গড়া মানুষ।তার ভেতরেও একটা মন আছে।আর তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তোমার তাকে জোর করা উচিত হবে না।ভালোবাসা আসে মন থেকে।আগে তোমার প্রতি তার মনে ভালোবাসা জাগ্রত করো,তারপর দেখো সে কি করে।ধৈর্যের ফল সর্বদা মিষ্টি হয়।”

“এদিকে ‘মন’ ক্ষিপ্ত স্বরে বললো,’নির্জন একদম ওর কথা শুনবে না।তুমি শুধু আমার কথা শুনবে।”

“নির্জন তার দিব্যশক্তি দিয়ে তাকিয়ে ‘হৃদয়’ কে বললো,’আমার কাছে তোমার কথাটা ভালো লেগেছে।আমার মনে হচ্ছে এই ভালো লাগাটা ‘অবচেতন মন’ সৃষ্টি করেছে তাই না?”

“এই প্রথম হৃদয়ের কথায় নির্জন এতটা গুরুত্ব দিলো।হৃদয় খুশি হয়ে, নির্জন কে বিশুদ্ধ ভাবে শ্বাস গ্রহণ করতে সুবিধা করে দিলো।মুচকি হেসে বললো,’হুমম ঠিক ধরেছো।কারণ ‘মন’ তোমাকে আমার কথা কখনোই ভালোভাবে ভাবাবে না।এটা ‘অবচেতন মনের’ কাজ।তবে আমি এটা বলব না যে ‘মন’ সবসময় নেতিবাচক উপদেশ দেয়।তবে মনের মধ্যে শ**য়তানের বসবাস স্থায়ী।”

“নির্জন তার চিবুকে তর্জনী ঠেকিয়ে বললো,’ওকে ডার্ক কুইন কে আমি ৩০ টারও বেশি চিঠি দিবো।দেখবো সে রাজি না হয়ে থাকে কিভাবে।”

“হৃদয় এবং নির্জনের এহেন কথা শুনে ‘মন’ রেগে গিয়ে বললো,’তুমি থাকো তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড ‘হৃদয়’ কে নিয়ে।বিপদে পড়লে প্রথমে তো আমাকেই ডাকো,এখন ‘হৃদয়’ তোমার বেশি আপন হয়ে গেলো তাই না?”

“নির্জন ভ্রু জোড়া কুঁচকে বললো,’মন তুমি বড়ই অকৃতজ্ঞ।তুমি কি জানো না,হৃদয়ে স্পন্দন না হলে তুমি আর আমি নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতাম?তখন কিন্তুু আমরা নিজেদের মধ্যে এতো কথপোকথনও করতে পারতাম না।যাইহোক,হৃদয়ের কথা আমার ভালো লেগেছে।আমি আমার ডার্ক কুইনের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য ধৈর্য ধারণ করবো।আমাদের মিটিং এখানেই সমাপ্ত করা হলো।”

——-
“এদিকে নির্জনের দেওয়া ২য় চিঠিটি প্রায় ১ঘন্টা যাবৎ হাতে নিয়ে বসে আছে নিধি।তোহা মাহিরের সাথে দুষ্টু-মিষ্টি কথা বলে এসে নিধি কে এভাবে সোজা হয়ে বসে থাকতে দেখে অবাক হয়ে গেলো।হঠাৎ তোহার চোখ জোড়া আটকে গেলো নিধির হাতের মুঠোয় থাকা ধবধবে সাদা একটি কাগজে।”

“তোহা সেদিকে তাকিয়ে নিধির কাছে গিয়ে বললো,’আপু উনি কি আবারও তোমাকে চিঠি দিয়েছে?”

“তোহার কথায় নিধির ধ্যান ভা**ঙলো।আনমনেই বলে উঠলো,’হুম।”

“এখন কি হবে আপু?এক কাজ করো, চিঠিটা বাবা কে দেখাও।বাবা দেখলে লোকটা কে ডেকে কড়া সুরে কয়েকটি বাক্য শুনিয়ে দিলেই কাজ হয়ে যাবে।এর আগেও তো তোমাদের ক্যাম্পাসে একটা ছেলে তোমায় ৩টা চিঠি দিয়েছিলো।তুমি তো বাবা কে দেখিয়ে তাকে উত্তম-মধ্যম দিয়েছো।চলো বাবার কাছে চিঠি টা দিয়ে আসি।’বলেই তোহা নিধির হাত টান দিলো।কিন্তুু নিধি এক চুল পরিমাণ নড়ল না।আরও শক্ত হয়ে বসলো।”

“তোহা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,’একি আপু তুমি উঠছো না কেনো?তুমি কি যাবে না?”

“নিধি ফ্লোরে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে বললো,’নাহ!”

“কেনো যাবে না?”

“এমনি যাবো না।লোকটা তো আমার কোনো ক্ষতি করছে না;শুধু চিঠিই দিচ্ছে।ক্যাম্পাসের ঐ ছেলেটার চিঠি পড়তে তো আমার দাঁত ভে**ঙে যাচ্ছিলো।এতো পরিমাণে অগোছালো লেখা,সেই সাথে বানানে প্রচুর ভুল।এই লেখা নিয়ে কিভাবে পাশ করলো কে জানে।যদিও আরেকটা ছেলে খুব সুন্দর করে চিঠি লিখেছিলো।কিন্তুু অতিরিক্ত হাদারাম বলে রিজেক্ট করে দিয়েছি।”

“তোহা বিছানার এক কোণে বসে বললো,’আপু সত্যি করে বলোতো, তুমি কি নির্জন ভাইয়ার প্রেমে পড়ে গেছো?না মানে..তাহলে তো আমার তাকে হবু দুলাভাই ডাকতে হবে।”

“নিধি কটমটিয়ে তোহার কান টেনে বললো,’ডাক্তার সাহেবের সাথে বিয়ে ঠিক হওয়ার পর,বেশি পাকা পাকা কথা বলছিস তাই না?আমি কি একবারও বলেছি,আমি ঐ অ্যাটম বো**ম,গম্ভীর লোকের প্রেমে পড়েছি?তবে লোকটার প্রেম পত্র টি বেশ ইন্টারেস্টিং লেগেছে।একদম ইউনিক স্টাইল।পুরো কাগজে র**ক্তের ছোপ ছোপ দাগ, সেই সাথে স্পষ্ট ভাষায় নির্ভুল চিঠি।প্রথমে ভয় লাগলেও এখন ভালোই লাগছে।”

“তোহা দুষ্টু হেসে বললো,’এইবার বুঝেছি।এই জন্যই তো তুমি বাবা কে জানাতে চাওনি।তবে দুলাভাইয়ের চিঠি দেখে মনে হচ্ছে, সে কিছুটা সাইকো টাইপের;যেমন টা তুমি চাও।”

“নিধি নির্জনের সাথে ঘটা পুরনো স্মৃতি ভেবে ঠোঁট টিপে হেসে বললো, ‘একদম ঠিক বলেছিস।চিঠি লেখার ধরণ দেখে বোঝা যাচ্ছে, সে কিছুটা সাইকো ক্যাটাগরির।তবে মাত্র ২টা চিঠি পেয়ে,এতো সহজে আমি তার কাছে ধরা দেবো না।আরেকটু পিছু ঘুরিয়ে তারপর ভেবে দেখবো।”

“তোহা মুচকি হেসে বললো,’যাক অবশেষে আমার বড় বোন নিধি আপুর মনেও প্রেমের ফুল ফুটলো।সাইকো
দুলাভাইয়ের সাইকো বউ।উফফ.. তোমাদের দু’জন কে দারুণ মানাবে হিহিহি।”

———-
“এদিকে নাদিয়া দিগন্ত কে চুপিচুপি ইহানের ফোন নাম্বার ম্যাসেজ করে দিয়েছে।দিগন্ত ইহানের সেই নাম্বার টিতে অনেকবার কল দেওয়ার চেষ্টা করেছে; কিন্তুু কোনোভাবেই কল যাচ্ছে না।আর নাদিয়ার সাথেও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।দিগন্ত দিক-বিদিকশুন্য হয়ে তার মা-বাবার কাছে নাদিয়ার ব্যাপারে সবকিছু খুলে বললো।”

“দিগন্তের মুখে নাদিয়ার বংশপরিচয় সম্পর্কে সবকিছু শুনে, দিগন্তের বাবা-মা হাসি মুখে রাজি হয়ে গেলো।দিগন্ত কে অবাক করে দিয়ে দিগন্তের বাবা সজিব চৌধুরী বললেন,’আগামী শুক্রবার তিনি নাদিয়াদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবেন।”

“বাবার মুখে এমন অপ্রত্যাশিত বাণী শুনে,দিগন্ত মনে হয় আকাশের চাঁদ হাতে পেলো।মুহূর্তের মধ্যেই তার বিষন্ন চেহারায় মুক্ত হাসির রেখা ফুটে উঠলো।খুশি হয়ে তৎক্ষনাৎ সে তার বাবা কে জড়িয়ে ধরে বললো,’থ্যাংক ইউ,থ্যাংক ইউ,থ্যাংক ইউ সো মাচ বাবা।তুমি আমার বেস্ট বাবা।”

“দিগন্ত কে এতো খুশি হতে দেখে দিগন্তের মা বললেন,’আরে আমার ছেলে তো দেখছি বিয়ের খুশি তে লাফাতে শুরু করেছে।চিন্তা করিস না,নাদিয়াদের বাসায় গিয়ে আমি আর তোর বাবা তাদের কে সবকিছু বুঝিয়ে বলবো।তাছাড়া তুই তো খুব ভালো একটা জব করিস।তোর বংশপরিচয় ওদের থেকে কোনো অংশে কম নয়।তুই এতো টেনশন না করে অফিসের কাজে মন দে।আমরা এইদিক টা দেখছি।”

“দিগন্ত খুশিতে গদগদ হয়ে,দ্রুত সেখান থেকে প্রস্থান করলো।তারপর নির্জন কে ফোন করলো।নির্জন কল রিসিভ না করায়,ফোনে ম্যাসেজ করে পুরো বিষয়টি বললো।আজ যেনো সব খুশিরা দিগন্তের মাঝে জেগে উঠেছে।”

———–
“সময় চিরবহমান।দেখতে দেখতে কে**টে গেলো ২৮দিন।আগের ২টা চিঠি মিলিয়ে এই কয়দিনে রাত সাড়ে ১১টার দিকে, নির্জন নিধিকে মোট ৩০টি চিরকুট দিয়েছে।আর প্রতিটি চিঠির শেষে নির্জনের ফোন নাম্বার লিখে দিয়েছে।”

“নিধি প্রতিদিন এই সময়ে ফ্রী হয়ে,নির্জনের চিঠির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছে।যখনই নির্জন সেই র**ক্তমাখা অদ্ভুত চিঠি দিতো;নিধি অবাক হয়ে সেই চিঠির প্রতিটি লাইন মনযোগ দিয়ে পড়তো।নিধি নির্জনের চিঠি গুলো সযত্নে রাখার জন্য বেবি পিংক কালার একটা ঝুড়ি কিনেছে।সেটাতেই নির্জনের ৩০টি চিঠি ভাজ করে রাখা আছে।নিধির যখন মন চায়,তখনই একেকটা চিঠির ভাজ খুলে পড়ার টেবিলের ওপর দুই হাত ভর দিয়ে,দুই গালে হাত রেখে মনযোগ দিয়ে পড়ে।ঐ মুহূর্তে নিধি কে দেখলে মনে হবে,সে মনযোগ দিয়ে পড়াশোনা করছে; আর ফাইনাল পরীক্ষার জন্য প্রস্তুুতি নিচ্ছে।”

“তোহার মাহিরের সাথে কথপোকথন অনেক টা বৃদ্ধি পেয়েছে।মাহির তোহার কথা অনুযায়ী ৩মাস পর বিয়ের ডেট ঠিক করতে রাজি হয়েছে।মাহিরের রিকোয়েস্টে ওরা দু’জনে রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে ইশারায় কথপোকথন করেছে।তোহা লং গাউন এবং হিজাব পড়ে, মুখে মাস্ক পড়েছিলো।মাহির তোহা কে ইশারায় মাস্ক খুলতে বলেছিলো।কিন্তুু তোহা লজ্জায় চোখজোড়া দিয়ে ‘না’ বোধক ইশারা দিয়ে মুচকি হেসে চলে গেছে।”

“তোহা যে হেসেছে, সেটা ওর চোখ জোড়া দেখেই মাহির বুঝেছে।কারণ মানুষ হাসলে,তার চক্ষুদ্বয় অটোমেটিক প্রসারিত হয়।”

“অপরদিকে,দিগন্তের বাবা-মা নাদিয়াদের বাসায় এই পর্যন্ত ২বার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গেছে।কিন্তুু তারা ২বারই নাকচ করে দিয়েছে।আর নাদিয়াকে ওর বাবা-মা অনেক কটু কথা শুনিয়েছে। বেচারি নাদিয়ার চোখের অশ্রু ঝরতে ঝরতে,চোখের নিচে কালো দাগ পরে গেছে।কিন্তুু এতে নাদিয়ার বাবা-মায়ের মন কিঞ্চিৎ পরিমাণ বিগলিত হয় নি।তারা তাদের সিদ্ধান্তে অনড়।আগামী সপ্তাহে ইহান বাংলাদেশে এলে,৩দিনের মধ্যে ওদের বিয়ের কার্য সম্পন্ন হবে।”

“নাদিয়ার পরিবার ২বার রিজেক্ট করাতে, দিগন্তের বাবা-মা বেঁকে বসেছেন।এতো অপমান তারা কিছুতেই হজম করতে পারছেন না।তাদের ছেলে সব দিক থেকে পার্ফেক্ট। তবুও কেনো তাদের কে ফিরিয়ে দেওয়া হলো?তাই রাজ্জাক হাসান দিগন্ত কে সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন,তিনি আর নাদিয়াদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবেন না।”

“সবকিছু শুনে দিগন্ত আজ ৩দিন যাবৎ অফিসে না গিয়ে,না খেয়ে দেবদাসের মতো নিজেকে ঘরবন্দী করে নিয়েছে।নির্জন দিগন্ত কে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত দিয়েছে।কিন্তুু নাদিয়া কোনোভাবেই পালাতে রাজি নয়।কারণ ও ওর বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান।সন্তান ১টা হোক বা ১০টা হোক,সব সন্তান কে বাবা-মা ছোটবেলা থেকে খুব কষ্ট করে লালন-পালন করে।তাই বাবা-মায়ের মুখে চুনকালি মেখে, নাদিয়া এই কাজ কিছুতেই করতে পারবে না।এই নিয়ে দিগন্তের সাথে নাদিয়ার অনেক কথা কা**টা*কা**টি হয়েছে।কিন্তুু নাদিয়া ওর সিদ্ধান্তে অটল থেকেছে।”

“দিগন্ত সবকিছু নির্জন কে বলেছে।কিন্তুু নির্জন কিছু একটা ভেবে বলেছে,’যখন ইহান বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখবে,তখন যেনো দিগন্ত নির্জন কে বিষয়টি জানায়।
নির্জনের কথা শুনে,মন ভা**ঙা দিগন্ত কোনো প্রশ্ন না করে মাথা নেড়ে ‘হুম’ শব্দ করে সায় জানিয়েছে।”

————-
“একাধারে ৩০টি চিঠি পাওয়ার পরেও,এখন পর্যন্ত কোনো চিঠির উত্তর দিলো না নিধি।নিধির এহেন কার্যে স্তব্ধ হয়ে গেছে নির্জন।নিধির জায়গায় অন্য কোনো মেয়ে থাকলে, হয়তো এতক্ষণে পটে যেতো।কিন্তুু এ কেমন নিষ্ঠুর হৃদয়ের নারী!’
কথাগুলো একমনে বিড়বিড় করছে নির্জন।হঠাৎ ভেতর থেকে ‘মন’ বলে উঠলো,’আমার কথা তো শুনলে না।এখন আর কি করার, বসে বসে দেবদাস হওয়ার পরিকল্পনা করো হুহ..।”

“মনের কথার পরিপ্রেক্ষিতে নির্জন কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে গেলো।বিড়বিড় করে বললো,’তাহলে এতোদিনের অক্লান্ত সাধনা সব বিফলে চলে গেলো?”

———
“কে**টে গেলো ৫দিন।এই ৫দিন নির্জন নিধিকে চিঠি দেয় নি।কারণ সে অফিসের কাজে ভীষণ ব্যস্ত।অফিস থেকে রাতে দেরি করে বাসায় ফিরে,আবারও ল্যাপটপে কাজে বসতে হতো।তবে নিয়ম করে সে তার ডার্ক কুইন কে প্রতিদিন অসংখ্যবার মনে করেছে।কিন্তুু শুভ্র কাগজে কলমের কালি লেপ্টে দেওয়া হয়নি।”

“এদিকে টানা ৫দিন যাবৎ অধীর আগ্রহে নির্জনের চিঠির অপেক্ষায়, প্রতিদিন রাত সাড়ে ১১টায় বেলকনির দোলনায় বসেছিলো নিধি।কয়েক ঘন্টা অপেক্ষা করার পরেও নির্জনের চিঠির দেখা মেলেনি।নির্জনের চিন্তায় নিধির চেহারায় নেমে এসেছে একরাশ বিষন্নতা।বিষয়টি নজর এড়ায়নি তোহার।”

“তোহা নিধি কে বললো,’আপু তোমার কি কোনো কারণে মন খারাপ?গতকাল রাতে দেখলাম,বেলকনির দোলনায় বসে ঘুমিয়ে গেলে।কি হয়েছে বলোতো?”

“নিধি বিছানায় বসে নির্জনের কথা ভাবছিলো।তোহার এহেন প্রশ্নে নিধি তোহার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’সে কি আমাকে ভুলে গেছে তোহা?সে তো ৫দিন যাবৎ কোনো চিঠি দিচ্ছে না।এতটুকুতেই হাঁপিয়ে গেলো?”

“তোহা কিছু একটা ভেবে বললো,’আপু অলরেডি ৩০টি চিঠি তো দিয়েছে।তাকে আর কতো ঘুরাবে?সবকিছুরই একটা লিমিট থাকে।তুমি তো বলেছো,যে সে প্রতিটি চিঠির নিচে তার ফোন নাম্বার দিয়েছে।তুমি এক কাজ করো,তুমি তাকে ফোন দাও।তারপর তার সাথে তোমার মনে জমে থাকা কথাগুলো বলো।হয়তো এতগুলো চিঠি দেওয়ার পরেও,তোমার থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে,সেও অভিমান করেছে।”

“নিধি বসা থেকে হঠাৎ করেই দাঁড়িয়ে গিয়ে তোহাকে জড়িয়ে ধরে বললো,’তুই ঠিক বলেছিস,সে হয়তো আমার সাথে অভিমান করেছে।তাই তো কোনো চিঠি দিচ্ছে না।আমি তাকে এখনই ফোন দিবো।’বলেই ঝুড়ি থেকে একটা চিঠি নিয়ে ভাজ খুলে নির্জনের দেওয়া নাম্বারটিতে ডায়াল করতেই,অপরপাশ থেকে মিষ্টি স্বরে কর্ণকুহরে একটি নারী কন্ঠস্বর ভেসে এলো,’দুঃখিত!এই নাম্বারে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।অনুগ্রহ করে একটু পরে আবার চেষ্টা করুন,ধন্যবাদ।”

“একাধারে ৪বার ডায়াল করার পর, একই কন্ঠস্বর শুনে নিধির কান টা মনে হয় তিক্ত হয়ে গেলো।বিরক্তিতে ভ্রু জোড়া কুঁচকে তোহা কে বললো,’তার ফোন টাও তো বন্ধ।এখন কি করি?কেনো যে এতোদিন ভাব দেখাতে গেলাম!এর আগেই যদি রাজি হয়ে যেতাম,কতো ভালো হতো!ধ্যাত,ভালো লাগেনা।’

“কে**টে গেলো আরও একটি দিন।রাত সাড়ে ১১টায় নিধি বেলকনির দোলনায় নির্জনের চিঠির অপেক্ষায় বসে আছে।মূলত এটা ওর অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে।নিধি নির্জনের সাথে কিভাবে যোগাযোগ করবে,এইসব বিষয়ে ভাবছে।তখনই নিধি ফ্লোরে কিছু পড়ার আওয়াজ পেয়ে মুখ তুলে তাকালো।দোলনা থেকে উঠে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো কেউ নেই।তারপর ফ্লোরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই থমকে গেলো নিধি।আবারও সেই চার কোণায় ভাজ করা চিঠিটি দেখে, খুশিতে আত্মহারা হয়ে নেত্রকোণায় কিছুটা জল চলে এলো নিধির।এ যেন টানা ৫ দিনের প্রতীক্ষার ফল।নিধি ফ্লোরে বসে এমন ভাবে চিঠিটি হাতে নিয়ে বুকের মধ্যে জাপটে ধরলো,যেন সে কতদিনের অনাহারী।”

“নিধি তড়িঘড়ি করে চিঠিটি খুলে র**ক্তের ছোপ ছোপ দাগ দেখে, একবার আলতো করে পুরো চিঠিতে হাত বুলালো।সবার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ একরকম নয়।নির্জনের টা হয়তো সবার থেকে ব্যতিক্রম।নিধি এখন আর এই র**ক্তা*ক্ত চিঠি কে ভয় পায় না।সে এটাতেই অভ্যস্থ হয়ে গেছে।বরং চিঠিতে র**ক্তের ছোপ ছোপ দাগ না থাকলেই,হয়তো নিধি অবাক হয়ে যতো।নিধি চিঠিটি বিড়বিড় করে পড়তে থাকল,

“ডার্ক কুইন..কেমন আছো তুমি?জানো, এই ৫দিন অফিসের কাজের প্রেশারে তোমায় চিঠি লেখার সুযোগ হয়ে ওঠে নি।তবে নিয়ম করে প্রতিদিন তোমায় অসংখ্যবার মনে করেছি।আমার আঁধারের রানী কে আমি কি ভুলে থাকতে পারি?আজ আমার ৩১তম চিঠিতেও কি তোমার উত্তর পাবো না?তুমি আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছো?নাকি বিগত দিনে তোমার সাথে আমার করা কাজগুলোর জন্য প্রতিশোধ নিচ্ছো?তবে তুমি যাই ভাবো না কেনো,আমি কিন্তুু তোমারই আছি আর তোমারই থাকবো।

“তোমার বুকের অন্তঃকরণে
আমার বসবাস,
আমার এই বক্ষগহ্বরে
তুমি আমার শ্বাস,
তোমার অগভীর হৃদ-মাঝারে
চলবে আমার ত্রাস…”

ইতি তোমার পা**গল প্রেমিক পুরুষ
নির্জন
—————
“শেষ..আজ অর্ধ পৃষ্ঠায়, কয়েকটি লাইনে চিঠিটি শেষ হয়ে গেলো।চিঠিতে লেখা ছিলো কয়েকটি প্রশ্ন,কিছু গোছানো বাক্য।শেষে হৃদয় নিংড়ানো কবিতার কয়েকটি লাইন।তবুও নিধি ৭-৮বার চিঠিতে চোখ বুলিয়ে বিড়বিড় করে পড়তে থাকল।এলোমেলো চুলে কান্নারত অবস্থায় নিধিকে এভাবে ফ্লোরে হাঁটু গেড়ে বসে, যদি কেউ পড়তে দেখতো।তাহলে নিশ্চিত নিধির একটা নাম
হয়ে যেতো ‘পাগলনি’।”

“নিধি নির্জনের একটি র**ক্তমাখা চিঠি বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে নাক টেনে গেয়ে উঠলো,

🎶চিঠি লিখেছে প্রেমিক আমার
র**ক্তমাখা হাতে,
বাত্তি জ্বালাইয়া,নিভাইয়া
জোছনা জোছনা রাতে..🎶

“তোহা রুমে এসে দেখলো, নিধি কাঁদো কাঁদো কন্ঠে গান গাইছে।নিধির গান শুনে তোহার ঠোঁট জোড়া অটোমেটিক ফাঁক হয়ে গেলো।কয়েক সেকেন্ড হা করে তাকিয়ে থেকে বললো,’আপু গো তুৃমি দেখছি এতো সুন্দর গানের ইজ্জত-মান পুরো প্লাস্টিক বানিয়ে দিলে।প্রেমিকের জায়গায় ‘বউ’ হবে,র**ক্তমাখার জায়গায় ‘ভাঙ্গা ভাঙ্গা’ হবে,বাত্তির জায়গায় ‘লন্ঠন’ হবে, আর জোছনার জায়গায় ‘চমকে চমকে’ হবে।কিন্তুু তুমি…

“নিধি তোহার দিকে তেড়ে এসে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললো,’এই তুই আমার ইমোশনের ১৩টা বাজিয়ে দিলি কেনো?এটা ডিজিটাল যুগ।তাই নিজের ভাষায় ডিজিটাল স্টাইলে গেয়েছি,লাইনের মধ্যে সত্যি কথা তুলে ধরেছি।এতে এতো ভুল ধরার কি আছে?যাইহোক এখান থেকে এখন যা,তোকে আমার দেখতে ইচ্ছে করছে না।”

“তোহা মন খারাপ করে বললো,’শুনেছি মানুষ প্রেমে পড়লে মন ভালো থাকে,আর সবার সাথে ভালো আচরণ করে।কিন্তুু তুমি দেখি খিটখিটে হয়ে গেছো।”

“ওই বেশি কথা বলবি,তো তোর ডাক্তার সাহেব কে ফোন দিয়ে,পেট বানিয়ে বলবো যে তোর কয়েকটা বি এফ ছিলো।তারা তোকে ছ্যাকা দিয়েছে।তাই তুই ডাক্তার সাহেবের গলায় ঝুলে পড়েছিস।তখন বুঝবি মজা।”

“তোহা রেগে গিয়ে উত্তেজিত স্বরে বললো, ‘আপু?পা**গল হয়ে গেছো?আমার ভালো কথাও তোমার সহ্য হচ্ছে না দেখছি।আসলে তুমিও যেমন,তোমার ওই প্রেমিকও তেমন;দু’জনেই সাইকো।’বলেই আর এক সেকেন্ড ও দাঁড়ালো না তোহা।তড়িৎ গতিতে রুম ত্যাগ করলো।নিধি সেদিকে পিটপিট করে তাকিয়ে মুখ ভেং**চি কা**টলো।”

“নিধি চিঠিতে আরেকবার আলতো করে হাত ছুঁইয়ে বিছানায় ফেলে রাখা ফোন টা হাতে নিয়ে,আবারও নির্জনের নাম্বার টিতে চোখ বুলালো।সে চায় না,আবারও সেই অপ্রত্যাশিত নারী কন্ঠটি ‘সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না’ বলে মন টা ভে**ঙে দিক।”

———
“সোডিয়ামের টিমটিমে আলোতে পিচঢালা রাস্তার পাশ ঘেঁষে এলোমেলো পা ফেলে হেঁটে যাচ্ছে নির্জন।মাঝে মাঝে পা দিয়ে কয়েকটি নুড়িপাথরের টুকরো গুলো কে অদূরে ঠেলে দিচ্ছে।এই মুহূর্তে তাকে দেখলে মনে হবে,প্রতিদ্বন্দ্বীবিহীন সে রাস্তায় ফুটবল খেলার প্র্যাক্টিস করছে।রাস্তা দিয়ে শাঁ শাঁ শব্দ করে অ্যাম্বুলেন্স এবং পুলিশের গাড়ি আসা-যাওয়া করছে।কিছুদিন যাবৎ র**ক্তের ভ্যাপসা গন্ধে এবং স্বাধীন ভাবে বাঁচার আকুতিতে কিছু ভাই-বোনদের গগনবিদারী আ**র্তনাদে ঢাকা-শহর থেকে শুরু করে, বিভিন্ন স্থানে থমথমে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।এ যেন ১৫জুলাই নয়,এটা হলো ২৫শে মার্চের কালরাত্রি।রাত থেকে ভারী বৃষ্টি,বাহিরে আন্দোলনের প্রস্তুুতি। এ যেন ‘রেইনকোট’ গল্পের প্রতিচ্ছবি!”

“নির্জন নিয়নের আলোতে সেদিকে তাকিয়ে ঠাট্টা সুলভ হাসি দিয়ে অকপটে বলে উঠলো,’আমাদের দেশ কি আদৌ স্বাধীন হয়েছিলো?নাকি নামে মাত্র স্বাধীন বাংলাদেশ?”

“নির্জনের অবিচ্ছেদ্য অংশ ‘মন’ হঠাৎ করে বলে উঠলো,’তুমি শেষে যেটা ভেবেছো সেটাই।”

“মনের কথা শুনে আনমনে হাসলো নির্জন।ভাবলো,’মন তো সত্যি বলেছে।এই স্বাধীন নামক পরাধীন দেশে আমিও তো কখনো স্বাধীনতা পাইনি।ছোটবেলা থেকেই তো পরাধীনতার বেড়াজালে আবদ্ধ থেকেছি আমি।আমার এই ছন্নছাড়া
জীবনে যার আবর্তন হবে,তাকেও তো আমি এভাবে বন্দী…

“আর কিছু বলতে পারলো না নির্জন।তার আগেই কর্ণকুহরে বেজে উঠলো, হাতে থাকা ফোনে ভাইব্রেশনের ঝিমঝিম শব্দ।নির্জন ফোনের দিকে তাকিয়ে হতবিহ্বল হয়ে গেলো।আশ্চর্য হলেও সত্যি, সে ভুল দেখছে না।একটু নিশ্চিত হওয়ার জন্য চোখের চশমাটা খুলে পকেট থেকে শুভ্র রঙা রুমাল বের করে ভালো করে চশমাটি মুছে,চশমা পড়ে আবারও ফোনের স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করে ভেসে ওঠা নামটির দিকে তাকালো।ফোনে ট্রু কলার অ্যাপস থাকায় নামটি স্পষ্ট ভেসে উঠলো(নিরুপমা ইসলাম নিধি)।নির্জন স্ক্রিনের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে, নাম টির ওপর হাত বুলিয়ে দিলো।পুরো মুখে অনাবিল হাসি নিয়ে বলে উঠলো,’ডার্ক কুইন।”

#চলবে…
(আসসালামু আলাইকুম কেমন আছেন পাঠকমহল?১৮দিন পর গল্প লিখলাম।এত দেরি করে গল্প দেওয়ার কারণ টাও সবার জানা।যারা গত পর্বের কাহিনী ভুলে গেছেন,তারা আবার নতুন করে পড়ে নিবেন। যাইহোক,সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন।ভালোবাসা অবিরাম।হ্যাপি রিডার্স।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here