হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ #পর্বঃ১১ #লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

0
1

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ১১
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

[আজকের পর্বের শেষে আমি কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা লিখেছি।অনুগ্রহ করে সবাই পড়বেন।]

“শরীরের অবিচ্ছেদ্য অংশ ‘হৃদয়ের’ কথা শুনে নির্জনের চক্ষুদ্বয় মুহূর্তেই র**ক্তিম বর্ণ ধারণ করলো।”

“নির্জন তার চোখজোড়া কয়েক সেকেন্ডের জন্য বন্ধ করে আবার তাকালো।তারপর ‘হৃদয়’ কে বললো,’তোমার কথা অনুযায়ী যদি কাজ টা ‘অবচেতন মন’ করে থাকে, তাহলে আমি সারাদিন যেই কাজগুলো করি,যেসব বিষয়ে ভাবি,সেটা না দেখে কেনো শুধু ঐ মেয়েটাকে স্বপ্ন দেখি?”

“হৃদয় খুব বুদ্ধিমত্তার সাথে উত্তর দিলো,’এটা খুবই সহজ প্রশ্ন করেছো।আমার কথাগুলো একটু মনযোগ দিয়ে শুনলেই বুঝতে পারবে।অবশ্য তুমি এমনিতেও খুব মনযোগী।একবার ভালোভাবে বুঝিয়ে বললে, তুমি সেটা কে মাইন্ডে সেভ করে নাও।যেটা খুব কম সংখ্যক মানুষ পারে।এইজন্য তোমাকে আমি এতটা ভালোবাসি।অবশ্য সব প্রাণীর ‘হৃদয়’ তাদের মালিক কে খুব ভালোবাসে।এখন আসল কথায় আসি।”

“প্রতিটি মানবজাতির মধ্যে ‘হৃদয় এবং মনের’ বাহিরেও একটি ‘অবচেতন মন’ বিদ্যমান।আমরা সারাদিন যা করি,ভাবি তার রেশ আমাদের মস্তিষ্কে কিছুটা থেকে যায়।আর রাতে আমরা সেই অংশগুলোকেই স্বপ্ন রূপে দেখি।কিন্তুু তুমি একটু খেয়াল করে দেখবে, অনেক সময় আমরা আমাদের কাজ এবং ভাবনার বাইরেও ধাপে ধাপে বিভিন্ন ধরনের স্বপ্ন দেখি।’
‘যেমনঃতুমি সারাদিন ফুলের বাগানে ঘুরে মন টা কে ফ্রেশ করেছো এবং ফুল বাগানের সুন্দর ফুল গাছগুলোকে নিয়ে ভেবেছো।অথচ রাতে ঘুমাতে গিয়ে তুমি স্বপ্ন দেখলে,’তুমি একটি গহীন জঙ্গলে দৌড়ে যাচ্ছো,আর তোমার পেছনে ভ**য়া*নক জ”ন্তুুর দল তাড়া করছে।কিন্তুু তোমার পথের সমাপ্তি হয় না,বরং আরও দীর্ঘ হয়।আর তুমি দ্রুত গতিতে দৌঁড়াতেও পারছো না।এক পর্যায়ে পরাজিত হয়ে যখন তোমার ঘুম ভেঙে যাবে,তখন তুমি ভ**য়ে ভ**য়ে ভাববে,’আমি তো সারাদিন ফুল বাগানে ঘুরেছি আর ফুল গুলোকে নিয়ে সুন্দর স্বপ্ন দেখার কথা ভেবেছি।এই ধরনের বিষয়বস্তুু নিয়ে চিন্তাও করিনি। তাহলে আমি এতো ভ**য়ং**কর স্বপ্ন কেনো দেখলাম?’
তুমি কি আমার কথা বুঝতে পারছো নির্জন?”

“নির্জন স্থির দৃষ্টিতে তার কল্পনার ‘হৃদয়ের’ দিকে তাকিয়ে বললো,’হুমম বুঝতে পারছি।তারপর?”

“হৃদয় মুচকি হেসে আবারও বলতে শুরু করলো,’এই যে তুমি সারাদিন সুন্দর চিন্তা ভাবনার পরেও, এইরকম ভ**য়ং**কর স্বপ্ন দেখলে,এই কথাগুলো তোমাকে তোমার অজান্তে ‘অবচেতন মন’ ভাবিয়েছে;যেটা তুমি নিজেও জানো না।তবে সে তোমার ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।আর যে কথাগুলো তুমি সারাদিন স্বাভাবিক ভাবে ভাবো,সেগুলো তোমার বেস্টফ্রেন্ড ‘মন’ ভাবায়।যে তোমার সুখে-দুঃখে সর্বদা তোমাকে সঙ্গ দেয়।আশা করি আমার কথাগুলো বুঝতে তোমার অসুবিধা হয় নি।”

“হৃদয়ের কথাগুলো শেষ হতেই,’মন’ বলে উঠলো, ‘এই যে তোমরা কোনো কিছুর সাথে ব্যথা পেয়ে কান্না করো,নিজেদের সুখ-দুঃখের অনুভূতিগুলো অন্যের কাছে প্রকাশ করো।এগুলো সব তোমাদের মস্তিষ্ক নির্ধারণ করে দেয়।তোমরা যখন কোনো কিছুর দ্বারা আ**ঘাত পাও,সেটা সর্বপ্রথম মস্তিষ্কে গিয়ে পৌঁছায়,তারপর মস্তিষ্ক সিগন্যাল দিলে সেটা তোমাদের শরীরে গিয়ে পৌঁছায়,আর শরীর ব্যথার সিগন্যাল দিলে সেটা আমাদের মনে গিয়ে পৌঁছায়।আর তখনই আমরা(মন) তোমাদের সিগন্যাল দিলে,তোমরা কষ্ট অনুভব করে কান্না করো।আর শারীরিক এবং মানসিক ভাবে অতিরিক্ত বিকারগস্ত হওয়ার ফলে তোমাদের #হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ শুরু হয়।”

“নিধি কে নিয়ে এই ভাবনাগুলো উদয় হয়েছে তোমার সাথে ওর প্রথম স্পর্শের অনুভূতি থেকে।পৃথিবীতে চলতে গেলে অনেকের সাথেই আমাদের চামড়ার ঘর্ষণ হয়।তাই বলে যে, সবার প্রতি গভীর ভালো লাগার অনুভূতি জাগ্রত হবে,এইরকম কোনো কথা নেই।এটা যার যার ব্রেইন সেট করে দেয়।তুমি ওকে অনেকবার পরিপাটি বেশে দেখার পরেও, তোমার ওর প্রতি কোনো অনুভূতি জাগ্রত হয় নি।যেখানে একজন পুরুষ একজন নারীর প্রতি তার পরিপাটি রূপ-লাবণ্য দেখে আকৃষ্ট হবে;সেখানে তুমি তার সেই ভ**য়া**র্ত অগোছালো র**ক্তিম মুখমন্ডল দেখে আকৃষ্ট হয়েছো।আর তারপর থেকে তুমি তাকে কোনো ভাবেই ভুলতে পারছো না।বিষয়টি একটু গভীর ভাবে ভেবে দেখো,আসলে তোমার মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে তাকে গ্রহণ করে নিয়েছে।সে একজন সৌভাগ্যবতী নারী,,যে কিনা তোমার মতো সুস্থ স্বাভাবিক,ভদ্র,মেধাবী ছেলেকে বশ করতে পেরেছে।তুমি তার প্রেমে পড়ে গেছো।তুমি তাকে ভালোবেসে ফেলেছো নির্জন।তোমার অতীতের সকল বি**ষাক্ত স্মৃতি মুছে দিতে খুব তাড়াতাড়ি তার আগমন ঘটবে।তবে এর জন্য তোমাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।কারণ আমি তাকে যতটুকু চিনেছি, তার পার্সোনালিটি আর ৫জন সাধারণ নারীদের থেকেও আলাদা।সে তোমার মতো নীরব ঘা**তক নয়।সে বাঘিনীর ন্যায় গ**র্জন করে ওঠে।তাকে বশ করতে হলে,তোমার কিছু চিরাচরিত অভ্যাসগুলো কে সাময়িক সময়ের জন্য বর্জন করতে হবে।”

“সত্যি আমি তোমাকে নিয়ে খুব গর্ববোধ করি নির্জন।তোমার অস্তিত্বে আমার বসবাস,এটা আমার জন্য সবচেয়ে সুখকর বিষয়।”

“হৃদয় এবং মনের মুখে এতক্ষণ জ্ঞানের বাণী শুনে আকস্মিক নির্জনের মুখে মুচকি হাসির ঝলক দেখা গেলো।কৃতজ্ঞতার সহিত বললো,’হৃদয় তুমি যদি না থাকতে, তাহলে তো আমার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যেতো।শুধু থেকে যেতো আমার মাটির নিষ্প্রাণ দেহ।তোমার স্পন্দন ছাড়া যে আমি অচল।সত্যি আমার জীবনে তোমার নিঃস্বার্থ অবদান অনস্বীকার্য।”

“তারপর নির্জন ‘মনের’ দিকে তাকিয়ে বললো,’তুমি আমাকে ছোটবেলা থেকে সবসময় সাপোর্ট করে এসেছো।তোমার সহযোগিতা না পেলে, আমি এতগুলো যুদ্ধে জয়ী হতে পারতাম না।তুমি সমান ভাবে আমার সুখ-দুঃখের সঙ্গী হয়ে পাশে থেকেছো।জীবনের শেষ নিঃশ্বাসেও তোমাকে এভাবে পাশে চাই।তোমরা দু’জন সবসময় এভাবে আমার পাশে থাকবে তো?”

“মন মুচকি হেসে বললো,’অবশ্যই পাশে থাকব,সবসময় তোমার সাথে মিশে থাকব।’হৃদয় বললো,’আমি তো ন্যানোসেকেন্ডে তোমার বুকে স্পন্দনের সুর তুলি।দিন-রাত ২৪ঘন্টা আমার ওপর দিয়ে অনেক খাটুনি যায়।তাই তুমি এখন আমায় একটা ট্রিট দাও।”

“নির্জন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,’কি ট্রিট দিবো?”

“উমম সারাদিন এই ধুলা বালুময় ঢাকা-শহরের দুর্গন্ধময় বাতাসে আমার হৃদয় টা দূষিত হয়ে যায়।তাই মাঝে মাঝে তোমার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়।তাই বলছিলাম,আমাকে একটু র**ক্তিম সন্ধ্যার আকাশ থেকে ভেসে আসা দখিনা বাতাস আহার করিয়ে তৃষ্ণা মেটাও।”

“নির্জন মুচকি হেসে বললো,’ওকে আমি এক্ষুনি ছাদে যাচ্ছি।তুমি মন ভরে বিশুদ্ধ বাতাস গ্রহণ করবে।আর আমি তোমার সুখগুলো গভীরভাবে অনুভব করবো।আফটার অল তোমরা আমার অন্তর্জগতের বেস্টফ্রেন্ড।’বলে নির্জন তার মিটিং সমাপ্ত করে ছাদে চলে গেলো।”

————–
” কে”টে গেলো আরও একটি রাত।আজ শুক্রবার।রাতে রিমঝিম বৃষ্টি হয়েছে।ভোর থেকে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে।বৃষ্টিরা যেনো আজ ধরণীর বুক ঠান্ডা করার জন্য প্রতিযোগিতায় নেমেছে।মাঝে মাঝে গুড়ুম গুড়ুম করে বজ্রপাতের তীব্র আওয়াজ কর্নকুহরে ভেসে আসছে।সকাল ৯টার দিকে নিধি এবং তোহা কম্ফোর্টারের ভেতরে ঢুকে জড়সড় হয়ে ঘুমিয়ে আছে।ঝুম বৃষ্টির সাথে সাথে ওদের ঘুম পাখিরাও যেনো গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন।”

“তাহমিনা বেগম নিধি এবং তোহা কে কয়েকবার ডেকে গেছেন। কিন্তুু মায়ের ডাক শুনে তার দুই মেয়ের ঘুম যেন আরও গভীর হয়েছে।তাহমিনা বেগম সকাল থেকে রান্নাবান্নায় ব্যস্ত।তিনি নিধি এবং তোহা কে হাতে হাতে কাজ করার জন্য ডাকছেন।রফিক মির্জা কাউচে বসে এক হাতে চায়ের কাপ নিয়ে পেপারে নিমগ্ন।”

“তাহমিনা বেগম এইবার রেগে গিয়ে মেয়েদের রুমে গিয়ে,ওদের গায়ে জড়িয়ে থাকা কম্ফোর্টার এক টানে সরিয়ে ফেললেন।কঠোর স্বরে বললেন,’তোরা কি উঠবি?নাকি বিছানায় পানি ঢেলে দিবো?”

“তাহমিনা বেগমের এমন কন্ঠস্বর শুনে তোহা ধরফরিয়ে উঠে বসলো।ও তো ঘুমের তোড়ে ভুলেই গেছিলো যে,আজ বাসায় ওকে দেখতে পাত্রপক্ষ আসবে।নিধি পিটপিট করে ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে,আবারও চোখ জোড়া বন্ধ করে বললো,’আমাদের বিছানায় পানি ঢেলে দিলে,তোমাদের বিছানায় গিয়ে ঘুমাবো,সিম্পল ব্যাপার।’বলেই কোলবালিশ জড়িয়ে ধরলো।”

“তাহমিনা বেগম এইবার রেগেমেগে বিছানার ঝাঁটা হাতে নিয়ে বললেন,’উঠবি নাকি আবারও ঝাঁটার বা””রি খাবি?আজ তোহা কে দেখতে পাত্রপক্ষ আসবে।আর তুই পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিস।নিজের বিয়ে তো ভে”ঙে দিয়েছিস,এখন কি ছোট বোনের বিয়ে টাও ভে”ঙে দিবি?”

“উফফ! মা সকাল টা কি খোঁটার বাণী দিয়ে শুরু করতে চাও?এই নিয়ে ২০+বার বলে ফেলেছো।তুমি কি আমার সত্যিকারের মা নাকি পাশের বাসার ঐ কু”’টনি আন্টি?অবশ্য তোমার চেহারার সাথে আমার কিছুটা মিল আছে।কিন্তুু তোমার আচরণে আমার যথেষ্ট সন্দেহ হয়।”

“তাহমিনা ঝাঁটা ফ্লোরে ফেলে দিয়ে বললেন,’নিজে যেদিন মা হবি,সেদিন বুঝবি সন্তানেরা বাবা-মায়ের কথার অবাধ্য হলে তাদের কেমন লাগে।’কথাগুলো বলে হনহন করে রুম থেকে চলে গেলেন।”

“নিজের মায়ের মুখের শেষ লাইনটি মনে হয় নিধির বুকে গিয়ে তীরের মতো বিঁধলো।মুহূর্তেই ঘুম পাখিরা ডানা মেলে উড়ে গেলো।তোহা অনেক আগেই ফ্রেশ হতে চলে গেছে।নিধিও ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলো।তারপর ২বোন কিচেনে গিয়ে চুপচাপ ওদের মায়ের কাজে সাহায্য করলো।”

“বিকালের দিকে পাত্রপক্ষ চলে আসলো।নিধি তোহা কে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে,তবে বেশি গর্জিয়াস না।তোহা খয়েরী রঙের জর্জেট থ্রি-পিস পড়েছে।নিধি খুব সুন্দর করে তোহা কে হিজাব বেঁধে দিয়েছে।ড্রয়িং রুমে অচেনা কয়েকজনের কথা বলার আওয়াজ শুনে তোহার বুক ঢিপঢিপ করছে।এই প্রথম কোনো পাত্রপক্ষ তোহা কে দেখতে আসলো।এর আগে অনেকেই রফিক মির্জার কাছে তোহার বিয়ের ব্যাপারে প্রস্তাব দিয়েছিলো।কিন্তুু তিনি নিধির কথা ভেবে নাকচ করে দিয়েছেন।”

“তোহার লজ্জামাখা মুখ দেখে নিধি বললো,’তুই তো দেখছি এখনই লজ্জায় হলুদ হয়ে যাচ্ছিস।পাত্র যখন তোর সাথে আলাদা করে কথা বলবে,তখন কি হবে?”

“উফফ আপু একে তো আমি টেনশনে শেষ,তার ওপর তুমি আরও টেনশন দিচ্ছো।প্রথম প্রথম সবকিছুর অনুভূতি একটু অন্যরকম হয়।”

“হাহাহা আচ্ছা বাদ দে।এখন চল,মা বলেছে তোকে তাদের সামনে নিয়ে যেতে।আমাদের ডাক্তার সাহেব তোর জন্য অপেক্ষা করছে।আহা!নিজেকে কেমন রোগী রোগী ফিল হচ্ছে।’বলেই ফিচেল হাসলো নিধি।”

“তোহা কে পাত্র পক্ষের সামনে নিয়ে যাওয়া হলো।তোহা সোফায় বসে চোখজোড়া ফ্লোরে আবদ্ধ করে রেখেছে।এদিকে শপিংমলের মধ্যে দেখা হওয়া সেই ভদ্র মহিলা,তার স্বামী এবং তাদের ছেলে মাহির এহসান তোহা কে টুকটাক প্রশ্ন করলো।তোহা সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে প্রশ্নগুলোর ঠিকঠাক উত্তর দিলো,তবে চোখ জোড়া এখনও ফ্লোরে নিবদ্ধ।তোহা যখন ড্রয়িং রুমে এসেছে, তখনই মাহির তোহার দিকে একবার তাকিয়েছে।তোহা কে দেখে মাহিরের কেমন যেন খটকা লাগলো।চলনবিলে নদীতে চি**ৎকার করে সাহায্য চাওয়া সেই মানবীর কথা মনে পড়ে গেলো।”

“দুই পরিবার আরও কিছুক্ষণ কথা বললো।তারপর মাহিরের বাবা সজিব এহসান ওদের দু’জনকে আলাদা ভাবে কথা বলার জন্য প্রস্তাব রাখলেন।এটা শুনে তোহার লজ্জায় ম”’রি ম””রি অবস্থা হয়ে গেলো।”

“যথাক্রমে মাহির এবং তোহাকে আলাদা ভাবে কথা বলার জন্য তোহার রুমে নিয়ে যাওয়া হলো।তোহা বিছানার একপাশে বসে লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে।এদিকে মাহির চেয়ারে বসে তোহা কে সূক্ষ্মভাবে দেখে চলেছে।সেদিন সন্ধ্যার আবছা-আলোতে তোহার অবয়ব দেখলেও, চেহারা স্পষ্ট ভাবে দেখা যায় নি।নীরবতা ভে”ঙে মাহির বলে উঠলো,’আমার নাম টা যেহেতু অনেকবার বলা হয়েছে,আশা করি নতুন করে আর নামের সাথে পরিচয় করাতে হবে না।তবে আপনি চাইলে আমায় যেকোনো প্রশ্ন করতে পারেন।আর হ্যা, আমি খুব স্পষ্টবাদী মানুষ।আপনার আগেও আমি ৪জন পাত্রী দেখেছি।তাদের সাথে কোনো কারণে হয়তো বিয়ে ঠিক হয় নি।তবে আমার মায়ের কাছে আপনার বেশ প্রশংসা শুনেছি।তাই আপনাকে দেখার আগ্রহ আমার মনে অনেক আগেই জাগ্রত হয়েছে।আমি শুধু অপেক্ষার প্রহর গুনছিলাম।আর আমার আপনাকে খুব পছন্দ হয়েছে।আপনি মতামত দিলে আমাদের বিয়েটা হতে পারে।এখন কোনো প্রশ্ন থাকলে করতে পারেন।”

“তোহা ফ্লোরে চোখজোড়া নিবদ্ধ রেখে ‘না’ বোধক মাথা নাড়লো।মানে ও কোনো প্রশ্ন করতে চায় না।”

“মাহির কিছুটা অবাক হলো।ওর জানা মতে, এই যুগের মেয়েরা এইসবে এখন লজ্জা পায় না।এর আগেও তো ৪জন কে দেখেছে।তারা তো সমান তালে মাহির কে প্রশ্ন করেছে।তবে এই মেয়ে একদম অন্যরকম।ব্যাপারটা মাহিরের কাছে বেশ ইন্টারেস্টিং লাগল।”

“মাহির মুচকি হেসে বুকের ওপর দুই হাত ভাজ করে,সরস কন্ঠে বললো,’আপনি যেহেতু প্রশ্ন করবেন না,তাহলে আমি প্রশ্ন করি।’বলেই মাহির তোহার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,’আপনি কি ৭দিন আগে কোথাও ঘুরতে গিয়েছিলেন?আপনাকে প্রথম দেখায় আমার খুব চেনা চেনা লাগছে।তাই জিজ্ঞেস করলাম।”

“তোহা এইবার মাহিরের দিকে একবার তাকালো।তারপর আবারও চোখজোড়া নিচে নামিয়ে কোমল স্বরে বললো,’৭দিন আগে আমি আর
আমার বড় বোন এবং তার বান্ধবী মিলে সিরাজগঞ্জের চলনবিলে ঘুরতে গিয়েছিলাম।”

“ব্যাস তোহার মুখনিঃসৃত এতটুকু উক্তি যেনো মাহিরের জন্য যথেষ্ট ছিলো।নিজের অজান্তেই মাহিরের মুখে হাসি ফুটে উঠলো।ভাবলো,’যাক গুমোট অন্ধকারে সেই অদেখা নারীটি অবশেষে নিজে থেকেই আমার সম্মুখে দৃশ্যমান হলো।’কথাগুলো ভেবে মাহির গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,’এই প্রশ্ন টা কেনো করলাম,জানতে চাইবেন না?”

“তোহা এমনিতেই এই সুদর্শন পুরুষটির সামনে লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছে।সেখানে কেন এই প্রশ্ন করেছে,সেটা জানতে চাওয়ার প্রশ্নই আসে না।লোকটি এখান থেকে গেলে তোহা হাফ ছেড়ে বাঁচবে।তোহা আবারও ‘না’ বোধক মাথা নাড়লো।”

“মাহির আবারও বিস্মিত হলো।মনে মনে কিছু একটা ভেবে ঠোঁটের কোণা প্রসারিত করে বললো,’ওকে..আমি কি আপনার ফোন নাম্বার পেতে পারি?”

“চলনবিল থেকে এসে নিধি এবং তোহা নতুন ফোন এবং নতুন সিমকার্ড কিনেছে।তোহা মৃদু স্বরে নিজের ফোন নাম্বার টা বললো।মাহির তোহার ফোন নাম্বার তার মোবাইলে ‘স্বপ্ন-চারীনি’ লিখে সেভ করে নিলো।তারপর বসা থেকে দাঁড়িয়ে;তোহার দিকে তাকিয়ে আবারও মুচকি হাসি দিয়ে বললো, ‘বেঁচে থাকলে আমাদের আবার দেখা হবে স্বপ্ন-চারীনি’ বলেই রুম থেকে হনহন করে বেরিয়ে গেলো।”

“মাহিরের মুখে ‘স্বপ্ন-চারীনি’ শব্দ টি শুনে আকস্মিকভাবে তোহার হার্টবিট যেন দ্বিগুণ বেড়ে গেলো।”

“এদিকে পর্দার আড়াল থেকে নিধি ওদের দু’জনের সব কথা শুনে ফেলেছে।মাহির চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াতেই,নিধি আড়ালে চলে গেলো।মাহির রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর তোহার কাছে এসে বললো,’কিরে তোহা রানী ডাক্তার সাহেবের মিষ্টি মিষ্টি কথা শুনে তোর মনের মধ্যে কি ডুগডুগি বাজল নাকি?ছেলেটা একবার চাইতেই,ঢ্যাং ঢ্যাং করে ফোন নাম্বারটা দিয়ে দিলি।বুঝি বুঝি সবই বুঝি..ডাক্তার সাহেব কে তোর পছন্দ হয়েছে।এখন বাসর রাতের অপেক্ষায় আছিস।তবে তুই কিন্তুু একটা কথা ভুলে গেছিস,তোর কিন্তুু ৩মাস পর ফাইনাল এক্সাম।ছেলেটা যদি তোকে ফোন করে,তাহলে এই বিষয়ে গুরুত্বের সহিত কথা বলবি।যদি বিয়ের জন্য ৩মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করে তো ভালো।আর যদি অপেক্ষা না করে, তাহলে তোর বড় বোনের ছায়া তোর মাথার ওপর আছে।জানিসই তো বিয়ে ভা”ঙায় আমি কতটা এক্সপার্ট।এখন যাই..গিয়ে শুনে আসি পাত্রপক্ষ কি বললো।’কথাগুলো বলে নিধি চঞ্চলা পায়ে সেখান থেকে প্রস্থান করলো।নিধির যাওয়ার পানে তোহা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো।”

——–
“চলনবিল থেকে আসার পর থেকে ৭দিন যাবৎ দিগন্ত নতুন ফোন কিনে,নিয়ম করে নাদিয়া কে ফোন করেছে।অথচ নাদিয়ার ফোন অনবরত সুইচ অফ বলছে।দিগন্ত তো টেনশনে প্রায় শেষ।নাদিয়াদের বাসার সামনে অফিস থেকে বাসায় যাওয়ার পথে ২-৩দিন ঘুরঘুর করেছে।কিন্তুু নাদিয়ার দেখা পায় নি।এদিকে সেই রাতে নিধি নির্জন কে নদীতে ফেলে দেওয়ায়, তার ফোন টাও নষ্ট হয়ে গেছে।দিগন্ত নির্জনের নতুন ফোনে আজ ২দিন যাবৎ কল দিচ্ছে।কিন্তুু নির্জন ফোন রিসিভ করছেনা।দিগন্ত বেচারা ভাবলো,’বুঝলাম না একদিকে জ**ল্লাদ গার্লফ্রেন্ড, আরেকদিকে গম্ভীর নির্জন দু’জনে মিলে কি আমার সাথে শ”ত্রুতা শুরু করলো নাকি?সবাই আমাকে কেমন ইগনোর করছে।অথচ ইগনোর করার কারণ টাই আমি জানিনা।’ভেবে চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে, কপাল মাসাজ করতে থাকল দিগন্ত।একমনে গেয়ে উঠলো,
‘কেনো পিরিতি বাড়াইলা রে বন্ধু
ছেড়ে যাইবা যদি…”

———
“অপরদিকে গতকাল রাতেও নির্জন নিধিকে ধাপে ধাপে কয়েকবার স্বপ্ন দেখেছে।বর্তমানে নিধির স্বপ্নের মধ্যে এসে লাভ টর্চারে নির্জন পা**গল প্রায়।সে ভেবে পায় না এমন একটা দস্যি মেয়ের প্রেমে কিভাবে পড়লো!অফিসে তো কয়েকজন মেয়ে কলিগ তাকে কতো ভদ্র ভাবে প্রপোজ করেছিলো।অথচ নির্জন বুদ্ধিমত্তার সাথে তাদের প্রপোজাল রিজেক্ট করেছে।আর এই দস্যি পা**গলি মেয়ে এক রাতের ধা’ক্কাতেই তাকে বশ করে ফেলেছে।’ভেবে আনমনে হাসলো নির্জন।”

“আজ সন্ধ্যায় ঝুম বৃষ্টির পানি নির্জনের রুমের বেলকনিতে আসায়,নির্জন বেলকনির দরজা আটকাতে গেলে,হঠাৎ ভেতর থেকে ‘মন’ বলে ওঠে,’নির্জন এখনই মোক্ষম সময়।ঝুম বৃষ্টিতে মানব মন ফুরফুরে এবং খুব রোমান্টিক থাকে।তুমি তোমার ডার্ক কুইন কে পটানোর জন্য প্রথম ধাপ অবলম্বন করো।তার উদ্দেশ্যে তোমার মনের মাধুরী মিশিয়ে ঝটপট একটা চিঠি লিখে ফেলো।আর হ্যা, মোট ৩০টি চিঠি লিখবে।১দিনে না পারলে,২দিনে লিখবে।কারণ এই মেয়ে হয়তো একটা চিঠিতে পটবে না।যাইহোক,তাড়াতাড়ি মিশন শুরু করো।”

“মনের এহেন কথায় নির্জনের মুখে হাসি ফুটে উঠলো।বেলকনির দরজা খোলা রেখে কিছুক্ষণ রিমিঝিমি বৃষ্টির দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে,টেবিল থেকে খাতা-কলম নিয়ে,চশমা পড়ে চেয়ারে বসে চোখ জোড়া বন্ধ করে কিছুক্ষণ ভাবলো।তারপর মুচকি হেসে লিখতে শুরু করলো।

~চিঠি~

“আমার প্রিয় ‘ডার্ক কুইন’ প্রথমেই আমার থেকে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা গ্রহণ করো।তুমি বিশ্বাস করবে কিনা জানি না।তবে এই প্রথম কোনো মানবীর উদ্দেশ্যে আমার অপরিপক্ব হাত দিয়ে চিঠি লিখছি।আশা করি তোমার কাছে ততটা খারাপ লাগবে না।যাইহোক,মূল কথা হলো আমি জানি, তুমি খুব চঞ্চল স্বভাবের এবং একটু পা**গলী টাইপের মেয়ে।তবে আমার তাতে কোনো সমস্যা নেই।আমি সম্পূর্ণ সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষ।আজ থেকে আমি তোমার অগভীর হৃদয়ের প্রেমিক পুরুষ।নিজের অজান্তেই তোমাকে ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছি।আমি জানি,চিঠি টা পড়ার সময় তুমি ভাববে,যে এতো সুন্দর করে কে চিঠি লিখলো!আমি লিখেছি ডার্ক কুইন..আমি খুব যত্ন করে চিঠিটি তোমার জন্য হৃদয় উজার করে লিখেছি।প্রতি রাতে আমার স্বপ্নে এসে তুমি আমার সবকিছু এলোমেলো করে দিয়েছো
‘মাই ড্রিমগার্ল’।আমি এতো ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা বলতে পছন্দ করি না।তাই চিঠির মাধ্যমে সরাসরি বলছি,’আমি তোমাকে ভীষণ ভীষণ ভীষণ ভালোবাসি ডার্ক কুইন।তুমি যদি আমার এই নিঃস্বার্থ ভালোবাসা গ্রহণ না করো,তাহলে আমি আবারও তোমাকে চিঠি দেবো,তুমি একদম চিন্তা করো না।ইউ আর অনলি মাইন ডার্ক কুইন।আর হ্যা, এখন থেকে প্রতিশোধপরায়ণ মনোভাব টা একটু কমাবে।তোমার সাথে এখন থেকে আমার মধুর আলাপন হবে।আমি আমাদের মাঝ থেকে প্রতিশোধের দেয়াল ভে”’ঙে ফেলেছি।আমাদের মাঝখানে কোনো ভগ্ন টুকরো কণা কেও আমি সহ্য করবো না।বুঝেছো ডার্ক কুইন?এখন আমার হাত খুব ব্যথা করছে।তাই চিঠিটা এখানেই সমাপ্ত করলাম।আর চিঠিটা যেহেতু ঝুম বৃষ্টিতে রিমঝিম ধারাতে লিখলাম।তাই তোমার জন্য দু’টো গানের লাইন আমার পক্ষ থেকে,আমার কন্ঠস্বর মনের গহীন থেকে উপলব্ধি করো,

“রিমঝিম এ ধারাতে চায় মন হারাতে
এই ভালোবাসাতে আমাকে ভাসাতে..”

ইতি তোমার হবু ব্যক্তিগত প্রেমিক পুরুষ
‘নির্জন’

#চলবে…
(পাঠকমহল আপনাদের কিছু কথা বলতে চাই।দয়া করে মনযোগ দিয়ে পড়বেন।প্রতিটি লেখিকা যখন একটা গল্প লিখে,তখন সেই গল্পের প্রতিটি পর্বের পেছনে প্রচুর মাথা ব্যথার মতো অসুস্থতা লুকিয়ে থাকে।আপনারা যেই পর্বটি ১০মিনিটে পড়ে শেষ করেন।সেই ১টি পর্ব ঠান্ডা মাথায় ভেবেচিন্তে লিখতে গেলে মাথা প্রচুর ব্যথা করে,সেই সাথে ২-৩+ঘন্টা সময় নিয়ে লেখার কারণে হাত ব্যথায় ফুলে যায়।আমরা তো এই গল্প লিখি শুধু ভালোবেসে শখের বশে।আর আপনাদের বিনোদন দেওয়ার জন্য।অথচ যখনই গল্পের নায়ক বা নায়িকা আপনাদের মনের মতো না হয়।তখনই শুরু হয়ে যায় পার্সোনাল অ্যা”টাক।
আমার লেখা এই গল্পের শুরুটা প্রথমে সাদামাটা ভাবে শুরু হলেও, আমি গল্পের শুরুতেই বলেছিলাম,এটা সাইকো টাইপ গল্প হবে।গল্পের মেইন চরিত্র মাত্রাতিরিক্ত সাইকো থাকবে।এই গল্পে কোনো সাহিত্য,বাস্তবতা খুঁজে পাবেন না।যারা এই ধরনের গল্প পছন্দ করেন না, তারা দয়া করে উল্টাপাল্টা কমেন্ট না করে ইগনোর করবেন।আমার গত দুই টা গল্পের থেকে কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিলো।তাই আমি শুরু থেকেই ক্যাটাগরি গুলো বারবার উল্লেখ করছি।একজনের লেখা সবার কাছে ভালো লাগবে এমন কোনো কথা নেই।আর সবাই কে এই গল্প আমি পড়তে বলিনি।বিশেষ করে যারা সুস্থ চিন্তাধারার মানুষ।আমার মতে যে এই টাইপের গল্প লিখে সে হাফ সাইকো।আর যারা পড়ে তারাও হাফ সাইকো।
হাফ সাইকো+হাফ সাইকো=ফুল সাইকো।তো তাদের জন্যই শুধু এই গল্পটা লেখা।আমি কখনোই বলিনি, আমার গল্পে এতগুলো পাঠক চাই,এতগুলো কমেন্ট চাই।স্পষ্ট বাংলা ভাষায় ক্যাটাগরি উল্লেখ করেছি,ভালো না লাগলে ইগনোর করতে বলেছি।তবুও কিছু সুস্থ পাঠক এসে আমার এই গল্প টা পড়ে উল্টাপাল্টা কমেন্ট করেন।কেন ভাই?সমস্যা কি?একজন মানুষ কে হাসি-খুশি দেখলেই,একটা বি”’ষাক্ত কমেন্ট করে তার মন টা বি”ষিয়ে দিয়ে খুব মজা পান তাই না?আমি তো প্রতিটি পর্বে বাস্তবভিত্তিক অনেক ম্যাসেজ দেই।সেটা কি আপনাদের চোখে পড়ে না?আপনাদের এখনও অনুরোধ করছি, গল্প টা ভালো না লাগলে দয়া করে ইগনোর করুন।শুধু সাইকো লাভার রা এই গল্প টা পড়বেন।আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো আমার গল্পে
কোন নায়ক নেই;সব ভিলেন।যাকে আপনারা নায়ক ভাবছেন, সে একজন ভিলেন।এটা নায়কবিহীন গল্প। তাই সুস্থ চিন্তাধারার পাঠকরা দয়া করে গল্পটি ইগনোর করুন।আমাকে আর কষ্ট দিবেন না প্লিজ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here