হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ #পর্বঃ১২ #লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

0
2

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ১২
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

“রিমঝিম এ ধারাতে চায় মন হারাতে
এই ভালোবাসাতে আমাকে ভাসাতে..”

ইতি তোমার হবু ব্যক্তিগত প্রেমিক পুরুষ
‘নির্জন’

“চিঠিটা লিখে নির্জন ২-৩বার বিড়বিড় করে পড়লো।বানান,দাঁড়ি,কমা সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা ভালোভাবে দেখলো।সূক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ পরে পুরো চিঠিতে তেমন কোনো ভুল খুঁজে পেলো না।নির্জন বানানের দিকে খুব সেন্সিটিভ।সফটওয়্যারে কোনো ডকুমেন্টস রেডি করতে গেলে, সে ঠান্ডা মাথায় বানানগুলো কয়েকবার চেক করে; তারপর ডকুমেন্টস ফুলফিল করে।এইজন্য অফিসে তার বেশ সুনাম।যেকোনো লেখার মধ্যে বানান ভুল হলে,পড়তে খুব আনইজি লাগে।সেই সাথে সেই বিষয়টি পরবর্তীতে অধ্যায়ন করার জন্য,দ্বিতীয়বার আগ্রহ জাগে না।তাই নির্জন স্কুল লাইফ থেকে এই বিষয় গুলো খুব সূক্ষ্মভাবে খেয়াল করে এসেছে।চিঠিতে আরেকবার চোখ বুলিয়ে, মুচকি হেসে ‘মন’ কে জিজ্ঞেস করলো,’মন চিঠি তো লিখলাম;কিন্তুু কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।কিছু একটা মিসিং মনে হচ্ছে।”

“মন বললো,’আরে… আরে এখানে তো তোমার র”ক্ত মিসিং।তুমি তো এখানে র”ক্তের ফোঁটা গুলো যোগ করোনি।”

“নির্জন চিবুকে হাত দিয়ে একটু ভেবে বললো,’গতবার তো ও আমার শ”’ত্রু ছিলো বলে,পায়ের থেকে র”ক্ত নিয়ে চিঠিতে লাগিয়েছিলাম।এখন তো ও আমার সবচেয়ে প্রিয় নারী,তাহলে এখন কোন জায়গা থেকে র”ক্ত দেবো?”

“মন একটু ভেবে বললো,’আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে,প্রথম চিঠিতে এই নারী পটবে না।তুমি এক কাজ করো,আপাতত হাতের কনুইয়ের উপরের অংশ থেকে কিছুটা কে”’টে দাও।তারপর যদি তার মন বিগলিত না হয়,তাহলে এর পরের চিঠিগুলো তে শরীরের সেন্সিটিভ জায়গা বাদে কিছু কিছু জায়গা থেকে কে””টে র”ক্ত বের করে চিঠিতে মাখিয়ে দিবে।এটাই হবে তোমার নিঃস্বার্থ ভালোবাসার সবচেয়ে সুন্দর বহিঃপ্রকাশ।”

“মনের কথা শেষ হতেই,হঠাৎ ‘হৃদয়’ রেগেমেগে বলে উঠলো,’নির্জন তুমি ‘মনের’ কথা একদম শুনবে না।ও সবসময় শ”’য়””তানি বুদ্ধি মাথায় নিয়ে ঘোরে।তুমি আমার কথা শোনো,সৃষ্টিকর্তা তোমায় এতটা যত্ন করে বানিয়েছে কা””টা”’ছেঁড়া করার জন্য নয়।অন্যের জন্য কেনো নিজের এতো সুন্দর শরীর কে কষ্ট দিবে?তুমি যখন নিজেকে আ””’ঘাত করো,তখন আমার হৃদয়ে খুব ব্যথা অনুভব হয়।সেই সাথে তোমারও তো নিঃশ্বাস গ্রহণ করতে কষ্ট হয়।তবুও কেনো জেনে-বুঝে নিজের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রতি এমন অবিচার করো?এগুলো সব শ””য়””তানের ধোকা।দয়া করে এই বদঅভ্যাস টি বর্জন করো।নইলে একদিন তোমাকে খুব করে পস্তাতে হবে।তখন এই ‘হৃদয়ের’ কথা প্রতিটি পদে পদে স্মরণ করবে।কিন্তুু ততদিনে আমিও দুর্বল হয়ে যাবো।”

“মন কটমটিয়ে বললো,’নির্জন তুমি আমার সাথে সব কথা শেয়ার করো, তাই ‘হৃদয়’ জেলাস ফিল করে।আমি তোমাকে যেটা করতে বলেছি,সেটা ঝটপট করে ফেলো।তুমিই তো বলো, ছোটবেলা থেকে আমি তোমাকে সাপোর্ট না করলে,তুমি কোনো যুদ্ধে জয়ী হতে পারতে না।তাই আমার কথা শোনো।আর ‘হৃদয়’ তোমাকে চাইলেও ছাড়তে পারবেনা,কারণ সে তোমার শরীরের প্রধান অবিচ্ছেদ্য অংশ।”

“নির্জন ‘হৃদয়’ এবং ‘মনের’ কথাগুলো শুনে ডেভিল হাসি দিয়ে, সবসময়ের মতো এইবারেও ‘মনের’ কথা শুনলো।ড্রয়ার থেকে ধা”রা”লো ছু”’রি বের করে, বাম হাতের কনুইয়ের ওপরের কিঞ্চিৎ অংশ কে””টে চিঠিতে র””ক্তের ছোপ ছোপ দা”গ মেখে দিলো।”

“এটা দেখে ‘হৃদয়’ খুব কষ্ট পেলো।নির্জন তার সুপরামর্শ কখনোই শোনেনা।শুধু স্বার্থের জন্য মুখে মুখে বেস্টফ্রেন্ড বলে।এই পৃথিবীতে সব প্রাণী স্বার্থপর।সবসময় আমাদের ‘হৃদস্পন্দন’ কে ব্যবহার করে অপকর্ম করে বেড়ায়।’ভেবে ‘হৃদয়’ আবারও নিজের কাজ করতে থাকল।যতোই সে নির্জনের ওপর রাগ করে থাকুক,ভালোভাবে স্পন্দন না করলে যে নির্জনের খুব কষ্ট হবে।এটা সে কিছুতেই দেখতে পারবে না।”

———–
“রাত সাড়ে ১০টায় নাদিয়ার হেঁচকি তুলে কান্না করে নাক টেনে কথা বলাতে, দিগন্তের বুকটা মনে হয় ফে””টে যাচ্ছে।আজ ৭দিন পর তার প্রেয়সীর সাথে কথা হচ্ছে।যেখানে দিগন্ত মনের মধ্যে অনেক রাগ,ক্ষো”ভ,আবেগ পুষে রেখেছিলো।ভেবেছিলো,একবার নাদিয়ার সাথে কথা বলতে পারলে,সব অভিমান গুলো বই পড়ার মতো রিডিং পড়ে শোনাবে।কিন্তুু কিছুক্ষণ আগে নাদিয়ার ফোন পেয়ে;রিসিভ করতেই,অপরপাশ থেকে নাদিয়ার কাঁদো কাঁদো কন্ঠে কথাগুলো শুনে,দিগন্তের পুরো পৃথিবী মনে হয় ওলট-পালট হয়ে গেলো।”

“সেদিন সেই অসমাপ্ত ট্যুর থেকে আসার পর মধ্য রাতে নাদিয়ার যখন জ্ঞান ফিরলো,তখনই নাদিয়া ওর মাথার কাছে ওর একমাত্র ফুফু কে দেখতে পায়।তিনি নাদিয়ার মাথায় স্নেহের স্পর্শ দিয়ে হাসি মুখে বললেন,’আলহামদুলিল্লাহ অবশেষে আমার হবু বৌমার জ্ঞান ফিরেছে।আমার ছেলেটা তো কানাডা থেকে কয়েকবার আমাকে ভিডিও কল দিয়ে পা**গল করে ফেলেছে,নাদিয়ার টেনশনে ও এখনও কিছু খাওয়া-দাওয়া করেনি।”

“নাদিয়া তো এটা শুনে বেশ অবাক হলো,পিটপিট করে ফুফুর দিকে তাকিয়ে বললো,’ফুফু আমার কথা ভেবে ইহান ভাইয়া কেনো খাওয়া-দাওয়া করলো না?আর তুমি আমায় হবু বৌমা বললে কেনো?”

“নাদিয়ার ফুফু সেলিনা বেগম বললেন,’শোনো মেয়ের কথা! তোর জন্যই তো সুদূর কানাডা থেকে আমি এসে পড়েছি।ইহানের কিছু কাজ আছে,সেটা হয়ে গেলে ও কিছুদিনের মধ্যেই এখানে চলে আসবে।আর তারপর তোদের দু’জনের ৪হাত এক করতে পারলেই, আমার আর তোর ফুফার শান্তি।এখন তাড়াতাড়ি উঠে একটু লেমন জুস খেয়ে নে।তোর শরীরের দুর্বলতা কে”’টে যাবে।’আর কিছুক্ষণ আগেই আমি তোদের বাসায় এসেছি।তোকে এই অবস্থায় দেখে এতক্ষণ তোর পাশেই বসেছিলাম।এখন আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।আমি ফ্রেশ হয়ে ঘুমাবো।আমি যাই।’বলেই সেলিনা বেগম নাদিয়ার মাথায় স্নেহের পরশ বুলিয়ে রুম থেকে প্রস্থান করলেন।”

“সেলিনা বেগম চলে যাওয়ার পর নাদিয়ার মা ঘরে ঢুকতেই,নাদিয়া কটমটিয়ে বললো,’মা ফুফু এইমাত্র কি বলে গেলো?”

“কি বলে গেলো?”

“আমি নাকি তার হবু বৌমা?ইহান ভাইয়া নাকি আমার চিন্তায় না খেয়ে বসে আছে?এইসব কি শুনছি আমি?ফুফুরা তো সপরিবারে আরও ১৫বছর আগে এই দেশ ছেড়ে কানাডা পাড়ি জমিয়েছে।তাহলে এতোদিন পর এসে এগুলো কি বলছে সে?”

“নাদিয়ার মা ম্লান হেসে মলিন স্বরে বললেন,’আসলে তোদের বিয়ের কথা আমরা আগে থেকেই বলে রেখেছিলাম। এতোদিন শুধু তোর পড়ালেখা শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করেছি।আর ইহানও খুব ভদ্র ছেলে।ও কানাডায় সেটেল এবং ভালো একটা জব ও করে। তাই ও কানাডা থেকে এলে,যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তোদের বিয়ে টা দিয়ে দিবো।”

“নাদিয়া রেগেমেগে উচ্চস্বরে বলে উঠলো,’এই বিষয়ে তোমাদের আগে আমাকে জানানো উচিত ছিলো মা।”

“দেখ আমরা যদি এই বিষয়ে আগে থেকে তোকে জানাতাম,তাহলে ইহান কে নিয়ে তোর মনের মধ্যে অজানা একটা অনুভূতি সৃষ্টি হতো।আর পড়ালেখা বাদ দিয়ে তোরা লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করতি।এই বিষয়ে আমি সবকিছু ভালোভাবে জানি।কারণ তোদের এই বয়সে আমিও পড়ালেখা বাদ দিয়ে,তোর বাবার সাথে প্রেম করেছিলাম।আর দেখ,আমি কলেজ টাও টপকাতে পারলাম না।এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে;আমি আর তোর বাবা কখনোই তোর ক্ষেত্রে এমন টা হোক, এটা কিছুতেই চাই নি।তাই তোকে ইহানের বিষয়টি জানাইনি।তবে তুই চাইলে এখন ইহানের সাথে যোগাযোগ করতে পারিস।এখন আর তোকে আমরা বাঁধা দেবো না।বিয়ের আগে ছেলে-মেয়ে একে-অপরের সম্পর্কে বোঝাপড়া করাটা অতীব জরুরি।”

“নাদিয়া ওর মায়ের মুখে কথাগুলো শুনে কান্না-কাটি করে বললো,’মা আমি কিছুক্ষণের জন্য একা থাকতে চাই।দয়া করে এখন তুমি যাও।আর এখন আমার ক্ষুধা নেই।যখন ক্ষুধা লাগবে, তখন খেয়ে নেবো।প্লিজ আর কথা বাড়িয়ো না মা।”

“নিজের মেয়ের মুখে এহেন কথা শুনে নাদিয়ার মা কিছু একটা ভেবে,সেখান থেকে চলে গেলেন।সেই রাতে নাদিয়ার আর ঘুম হলো না।পরের দিন সকাল ১১টায় ঘুম থেকে উঠে দেখলো, হোয়াটসঅ্যাপে ইহানের নাম্বার থেকে প্রায় ২৫+বার ভিডিও কল দেওয়া হয়েছে।এটা দেখে নাদিয়া তো পুরো থ হয়ে গেলো।হোয়াটসঅ্যাপ প্রোফাইলে ইহানের ছবি দেখে নিশ্চিত হয়ে গেলো,ইহান কে নাদিয়ার ফোন নাম্বার ওর মা দিয়েছে।”

“কথাগুলো ভাবতেই, আবারও ইহানের কল এলো।নাদিয়া নিজের রাগ কে কখনোই কন্ট্রোল করতে পারে না।তাই ইহানের নাম্বার দেখে রেগেমেগে ফোন খুব জোরে ফ্লোরে ছু”ড়ে মা””রলো।ব্যাস তৎক্ষনাৎ ফোনের ১৫টা বেজে গেলো।তারপর থেকে টানা ৭দিন নাদিয়া নিজেকে পুরোপুরি ঘর বন্দী করে রেখেছে।পরিবারের কারো সাথে সে কথা বলেনি।নাদিয়া ওর বাবা-মাকে কিভাবে দিগন্তের কথা জানাবে, সেটা ভেবে অস্থির হয়ে আছে।কারণ, এই প্রেম নামক জিনিসটির জন্যই তারা ইহানের বিষয়টি নাদিয়া কে বলেনি।”

“বর্তমানে নাদিয়া ওর বাবা-মায়ের রুম থেকে ওর মায়ের ফোন চুপিচুপি নিয়ে এসে, দিগন্তের সাথে কান্না জড়িত কন্ঠে পুরো ঘটনাটি বললো।”

“অপরদিকে দিগন্তের অবস্থা নাজেহাল প্রায়।নাদিয়ার পারিবারিক সিচুয়েশন টা দিগন্ত খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করছে।সেই সাথে ইহানের কথা শুনে ভেতরে ভেতরে জ্বলে-পু””ড়ে নিঃশ্বেস হয়ে যাচ্ছে।কিন্তুু এই মুহুর্তে তাকে শান্ত থাকতে হবে।নিজের দুর্বলতা গুলো প্রকাশ করলে, নাদিয়া পুরোপুরি ভে””ঙে পড়বে।”

“নির্জনের সাথে ইমিডিয়েট কথা বলে, একটা সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।’ভেবে দিগন্ত তার শুকনো গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,’হানি তুমি এভাবে কেঁদো না প্লিজ।আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।তুমি কোনো চিন্তা করো না।ঐ আমার একমাত্র শত্রু ব্রিটিশ ইহান আসার আগেই, আমি কিছু একটা ব্যবস্থা করবো।তবে ততক্ষণ পর্যন্ত তোমাকে একটু ধৈর্য ধারণ করতে হবে।আর হ্যা,পারলে ইহানের ফোন নাম্বার টা আমাকে দাও।
আর এখন থেকে ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করবে।তোমার শরীর দুর্বল হয়ে গেলে, আমাদের বিয়ের পর রোমান্স করতে কষ্ট হবে তো,তাই না হানি?এখন একটু হাসো প্লিজ।”

“দিগন্তের মুখে স্বান্তনার বাণী গুলো শুনে, নিজের অজান্তেই অনেক দিন পর খিলখিল করে হেসে উঠলো নাদিয়া।ম্লান স্বরে বললো,’আমার ফোনটা তো ভে””ঙে ফেলেছি।আমি ফুফুর কাছ থেকে ইহান ভাইয়ার নাম্বার নিয়ে তোমাকে দিবো।আর হ্যা, এখন রাখছি;মা যদি কোনক্রমে টের পেয়ে যায়,তাহলে অনেক বড় ঝামেলা হয়ে যাবে।আমি সুযোগ বুঝে তোমায় কল দিবো।আর তুমি কিন্তুু ফোন ভুলেও সাইলেন্ট করে ঘুমাবে না।দিনে-রাতে যখন সুযোগ পাবো,তখনই তোমায় ফোন দেবো জান।অনেক ভালোবাসি তোমায় আমার ভালোবাসা;রাখছি।’বলেই কট করে ফোনটা কে””টে দিয়ে বুকের মধ্যে জাপটে ধরে খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো নাদিয়া।কতদিন পর মন ভরে প্রিয়জনের কাছে নিজের আবেগগুলো স্পষ্ট ভাবে প্রকাশ করতে পারলো।’ভেবেই খুশিতে মন টা নেচে উঠলো।তারপর আবারও চুপিচুপি বাবা-মায়ের রুমে ঢুকে,ফোন টা যথাস্থানে রেখে দিলো।”

———-
“রাত ১১টা ১৫মিনিট।বাইরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে।নিধি কম্ফোর্টারের নিচে গিয়ে ফেইসবুক স্ক্রল করছে।বর্তমানে নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হওয়া কিছু হাস্যকর ভিডিও দেখে, মাঝে মাঝে হাহা হুহু করে হেসে উঠছে।”

“তোহা পড়াশোনা শেষ করে,বই-খাতা গুছিয়ে টেবিলে রাখলো।তখনই তোহার ফোনে অচেনা নাম্বার থেকে কল আসলো।তোহার ফোনে ‘ট্রু কলার’ অ্যাপস থাকার কারণে তোহা নাম্বারটির দিকে তাকিয়ে বেশ অবাক হয়ে গেলো।মুহূর্তের মধ্যই লজ্জায় রংধনু হয়ে গেলো।ফোনের স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করে একটা নাম ভেসে উঠলো,’মাহির এহসান’।কয়েক সেকেন্ড নামটির দিকে তাকিয়ে থেকে,তোহা কল রিসিভ করে মিহি স্বরে ‘হ্যালো’ বললো।”

“তোহার কোমল কন্ঠস্বর শুনে মাহিরের মন আনন্দে গান গেয়ে উঠলো।মাহিরের মনে সুখ পাখিরা মনে হয় ডানা ঝাপটে উড়তে থাকল।কয়েক সেকেন্ড নীরবতা পালন করে বললো,’চিনতে পেরেছেন আমাকে?”

“পুরুষালি মোহনীয় কন্ঠস্বর শুনে, তোহার মনে অদ্ভুত ভালো লাগার আলোড়ন সৃষ্টি হলো।অস্ফুটস্বরে বলে উঠলো,’হুমম।”

“মাহির বালিশ একটু উচু করে হেলান দিয়ে,অর্ধ-শোয়া অবস্থায় মুচকি হেসে বললো,’কেমন আছেন স্বপ্ন-চারীনি?”

“আবারও ‘স্বপ্ন-চারীনি’ অসম্ভব সুন্দর একটি নাম কর্ণপাত হলো তোহার।কই, এর আগেও তো তোহা কে কয়েকজন ছেলে প্রপোজ করেছে।কেউ তো ওকে এমন সুন্দর একটা উপনামে ডাকেনি!কিন্তুু এই ডাক্তার সাহেব তো প্রথম দর্শনেই তোহা কে অদ্ভুত সুন্দর একটি উপনামে ডেকেছে।’ভেবে তোহা কন্ঠ আরও খাদে নামিয়ে বললো,’খুব ভালো আছি।আপনি?”

” উমম এতক্ষণ একটু কষ্টে ছিলাম,যখন ৪বার রিং হওয়ার পরেও আপনি ফোন রিসিভ করছিলেন না।কিন্তুু পরক্ষণে আপনার মোহনীয় কন্ঠস্বর শুনে, মন টা ফুরফুরে হয়ে গেলো।নাউ আ’ম ভেরি ফাইন স্বপ্ন-চারীনি।”

“উফফ! আবারও সেই নাম।তোহা বক্ষ মাঝে হাত দিয়ে হৃদস্পন্দনের গতিবিধি পরীক্ষা করলো।একটু দ্রুত হার্টবিট হচ্ছে।নাহ!এই লাজুক কন্ঠে তোহা আর কথা বলতে পারবে না।তাই মিহি স্বরে বললো,’অনেক রাত হয়েছে।আমি এখন ঘুমাবো।”

“মাহির বিস্ময়ের স্বরে বললো,’একি আমি তো এখনোও কথাই শুরু করলাম না।তার আগেই ঘুমানোর কথা বলছেন?আপনার কি আমার সাথে কথা বলতে ভালো লাগছে না?”

“তোহা ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে মনে মনে আঞ্চলিক ভাষায় বুলি আওড়ালো,’এই ডাক্তার ব্যাটা… আমনের ওমন মিঠা মিঠা কথার জ্বালায়,আমার কান টা তো পিঁপড়ায় ধরবো।মগা ব্যাটা কি বোঝে না,যে ব্যাটা মাইনষের মিঠা মিঠা কথা হুনলে মাইয়া গো সরম করে!”

“কথাগুলো ভেবে তোহা গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,’আমি ফোন টা রাখছি।আপু আর আমি এক রুমে থাকি।এই সময় কথা বলতে দেখলে, আপু খুব রাগ করবে। আপনার সাথে আগামীকাল সুযোগ করে কথা বলবো।শুভ রাত্রি।’বলেই তোহা তড়িৎ গতিতে ফোন টা কে””টে দিয়ে, বুকে হাত দিয়ে হার্টবিট চেক করলো।নাহ!এখন স্বাভাবিক গতিতে হৃদস্পন্দন হচ্ছে।সত্যি প্রথম সবকিছুর অনুভূতি গুলো অন্যরকম হয়;সেটা সুখ হোক কিংবা দুঃখ হোক।”

“অপরদিকে তোহা হঠাৎ করে ফোন কে””টে দেওয়া তে মাহির পুরো বোকা বনে গেলো।সেদিন বেডরুমে তোহার অগোচরে চুপিসারে, তোহার নিচে তাকিয়ে থাকা একটা ছবি তুলে ফোনের ওয়ালপেপারে রেখে দিয়েছে মাহির।স্ক্রিনে ক্লিক করলেই,তোহার লাজে রাঙা স্নিগ্ধ মুখস্রি জ্বলজ্বল করে ভেসে ওঠে মাহিরের ফোনে।মাহির ছবিটির ওপর আলতো করে হাত বুলিয়ে বললো,’এতো লাজুক কেন তুমি?এখনই আমার থেকে দূরে পালাতে চাও।বাসর রাতে এই চার দেয়ালের মধ্যে থেকে কোথায় পালাবে লাজুক লতা?সমস্যা নেই, তোমার হবু ডক্টর হাসবেন্ড তোমার লজ্জা ভা””ঙার জন্য ভালোভাবে প্রস্তুুতি নিচ্ছে।বি রেডি ফর মাই রোমান্টিক টর্চার স্বপ্ন-চারীনি।”

———
“তোহা হেলেদুলে বেলকনির দরজা আটকাতে গেলো।দরজার সামনে যেতেই দেখলো, ফ্লোরে ভাজ করা একটা চিঠি পড়ে আছে।চিঠিটা বৃষ্টির পানিতে খানিকটা ভিজে গেছে।তোহা খুব অবাক হয়ে আশে-পাশে তাকিয়ে চিঠিটি হাতে নিয়ে,ভাজ খুলতেই ভ”’য়ে ‘ও আপু গো’ বলে চি””ৎকার দিলো।”

“আকস্মিক তোহার চি””ৎকার শুনে ধরফরিয়ে উঠলো নিধি।কন্ঠে একরাশ বিরক্তি নিয়ে বললো,’এই মাইয়া রাইত-বিরাইতে কাউয়ার মতো কা কা করোস ক্যারে?কিতা হইছে তোর?”

“তোহা চি””ৎকার করে চিঠিটি ফ্লোরে ফেলে দিয়েছিলো।
নিধির দিকে ভ””য়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলে বললো,’আপু এখানে আসো।দেখো ফ্লোরে একটা ভ””য়ং”কর র””ক্তা”ক্ত চিঠি পড়ে আছে।জানি না এটা কে দিয়েছে।”

“তোহার কথা শুনে নিধি তড়িৎ গতিতে বিছানা থেকে নেমে বেলকনিতে গিয়ে দেখলো,অর্ধভাজ করা একটা চিঠি।নিধি চিঠিটি তুলে পুরো ভাজ খুলতেই, ভ””য়ে আ””তকে উঠলো।পুরো চিঠিতে র””ক্তের ছোপ ছোপ দাগ।নিধির মনে পড়ে গেলো সেই র””ক্ত”মাখা চিঠিটির কথা।”

“নিধি মনে কিছুটা সাহস যুগিয়ে পুরো চিঠিতে একবার চোখ বুলিয়ে পড়তে থাকল।এতো সুন্দর নির্ভুল হাতের লেখা দেখে চমকে গেলো নিধি।সেই একইরকম লেখা!সেই একইরকম র””ক্তের ছোপ ছোপ দা”গ।নিধি এইবার আর চিঠি টি নাসারন্ধ্রের কাছে নিলো না।এইরকম অদ্ভুত প্রেমপত্রের শেষে যখন নির্জনের নাম দেখলো।তৎক্ষনাৎ নিধির বুকে মনে হয় হা”তুড়ি দিয়ে কেউ খুব জোরে আ””ঘাত করলো।ভ””য়ে জড়সড় হয়ে গেলো নিধি।”

“চলনবিল থেকে আসার পর নির্জন কে প্রায় ভুলে গিয়েছিলো নিধি।সেই সাথে নির্জনের দেওয়া প্রথম র””ক্ত”মাখা চিঠি,নির্জনের ধাপে ধাপে প্রতিশোধ নেওয়ার কাহিনী সবকিছু ভুলে গুলিয়ে খেয়েছে নিধি।কিন্তুু এতোদিন পর হঠাৎ এমন অদ্ভুত চিঠি পেয়ে, নিধি ওর মাথায় হাত রাখলো।আনমনে প্রশ্ন করলো,’এটা কি সত্যি প্রেমপত্র নাকি হু”’মকি পত্র?”

“এদিকে ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে শুনশান পিচঢালা রাস্তায় দুই হাত দুই দিকে মেলে, মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে লম্বাচওড়া উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের একজন সুদর্শন পুরুষ।রিমলেস চশমা টি ভেদ করে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির পানি নির্জনের চোখ দু’টোর সাথে বারবার মিলিত হচ্ছে।মুহূর্তের মধ্যে ঘোলাটে হয়ে গেলো চশমাটি।নির্জন চশমাটি খুলে প্যান্টের পকেটে রেখে আবারও দুই হাত মেলে খুব জোরে চি””ৎকার করে বলে উঠলো,
‘ও পৃথিবী আমি উচ্চশব্দ পছন্দ করি না।কিন্তুু নিজের হৃদয় নিংড়ে বলা কথাগুলো সবসময় দারুণ ভাবে উপভোগ করি।যেমন ভাবে আজ উপভোগ করেছে আমার ‘ডার্ক কুইন’।আজ আমি একা দাঁড়িয়ে তোমার আকাশ ভেদ করে আসা বৃষ্টি উপভোগ করছি।কিন্তুু যখন আমার ড্রিমগার্ল আমার বক্ষমাঝে চলে আসবে,তখন আমি তোমার ওই বৃষ্টির বিন্দু বিন্দু পানির ফোঁটা তার ধারে-কাছেও ঘেঁষতে দেবো না।তাই যতো পারো আমাকে ভিজিয়ে নাও।তবে আমার ওপর বজ্রপাত নিক্ষেপ করো না।কারণ আমার জীবনের শেষ নিঃশ্বাস টা,আমার প্রিয়তমার বক্ষে ত্যাগ করতে চাই।মনে রেখো,সে আমার.. আর শুধুই আমার হবে।যদি সে আমার না হয়,তাহলে কারো হবে না।”
“My Dark Queen was born just for me.She is only,only & only mine forever.”

#চলবে..
(প্রিয় পাঠকমহল গতকাল আপনাদের এতো সুন্দর কমেন্ট পেয়ে, আজ আমার মন টা খুব ভালো হয়ে গেছে।গল্পের জগতে এসে আপনাদের থেকে এতোটা ভালোবাসা পাবো, এটা কল্পনাও করিনি।আমার মন খারাপের সময় আপনাদের স্বান্তনামূলক বাণীগুলো সত্যি আমাকে মুগ্ধ করেছে এবং অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।অনেক অনেক ভালোবাসা আপনাদের জন্য।আর আজকের পর্ব টি কেমন হলো, গঠনমূলক মন্তব্য করে জানাবেন।ভালোবাসা অবিরাম।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here