হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ #পর্বঃ১৩ #লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

0
2

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ১৩
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

“মনে রেখো,সে আমার.. আর শুধুই আমার হবে।যদি সে আমার না হয়,তাহলে কারো হবে না।”
“My Dark Queen was born just for me.She is only,only & only mine forever.”

“একাধারে চি**ৎকার করে কথাগুলো বলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো নির্জন।মনের অজান্তেই তার মুখমন্ডলে মুচকি হাসির ঝলক ফুটে উঠলো।তার অন্যতম কারণ হলো,পৃথিবীকে সে জানিয়ে দিয়েছে,’তার ডার্ক কুইন শুধু,শুধু এবং শুধুই তার।”

“রাত সাড়ে ১২টা।নির্জন শাওয়ার নিয়ে ব্ল্যাক টি-শার্ট এবং ব্ল্যাক ট্রাউজার পরিধান করে বেড়িয়ে এলো।নিধির জন্য প্রথম চিঠি সমাপ্ত করে,আরও ১৪টি চিঠি বিভিন্ন ভাবে সে লিখেছে।কোনোটাতে ৩-৪টা কবিতা,ছন্দ,সাহিত্যিক লাইন,মনের মধ্যে সাজানো বিভিন্ন সুমধুর শব্দচয়ন থেকে শুরু করে বিভিন্ন ভাবে চিঠি লিখেছে।বর্তমানে নির্জন ডুমুর ফল খাচ্ছে, আর প্রতিটি চিঠিতে র**ক্তের ছোপ ছোপ দাগ এঁকে দিচ্ছে।র**ক্ত মাখিয়ে চোখ-মুখ কুৃঁচকে তৃপ্তির হাসি দিলো নির্জন।তার প্রিয়তমার জন্য সে যে আরও কত-কত আয়োজন করে রেখেছে,যেটা তার কল্পনারও বাইরে।”

“নির্জন চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে, বুকের ওপর দুই হাত ভাজ করে আনমনে ভাবলো,
‘যখন তুমি আসবে আমার হৃদ মাঝারে,
খুব করে দুই হাত দিয়ে বেঁধে রাখবো তোমায়,
আমার এই শক্ত বাহুডোরে,
ঐ কোমল শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে,
ভালোবাসার গভীর পরশ এঁকে সুখ সায়রে ভাসাবো তোমায়…
কখনো ভুলতে দেবো না তোমায়,
কারণ তোমার প্রতিটি অঙ্গ, ভালোবাসার চিহ্ন মনে করিয়ে দিবে আমায়।’
আমার ডার্ক কুইন আর মাত্র কয়েকদিনের অপেক্ষা..একটু ধৈর্য ধারণ..তারপর…তারপর তুমি শুধু আমার আর আমি শুধুই তোমার।যে তোমার আর আমার মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে, তাকে ছি**ন্ন-বি**চ্ছিন্ন করতে আমি ন্যানো সেকেন্ডও ভাববো না ডার্ক কুইন💖
” Don’t you know?My heart bleeds without you.”

———
“কে**টে গেলো আরও একটি রাত।সারারাত ধরনীতে মুষলধারে বারিধারা বয়ে গেছে।ঢাকার সড়কপথে রিকশাওয়ালারা যাত্রী নিয়ে রাস্তায় কোমর অবধি পানির মধ্যে খুব সন্তর্পনে হেঁটে হেঁটে,রিকশা টেনে নিয়ে যাচ্ছে।২দিন যাবৎ টানা বৃষ্টির কারণে, ঢাকার সড়কপথ নাজেহাল প্রায়।তবে কিছু উঁচু এলাকাতে এখনও পানি ওঠেনি।”

“রাস্তার এক সাইডে দাঁড়িয়ে একের পর এক যাত্রী কে ভাবুক দৃষ্টিতে দেখে চলেছে নিধি।
সে আজ নাদিয়ার বাসায় যাবে বলে বেরিয়েছে।নাদিয়ার ফোন বন্ধ পেয়ে, নিধির খুব চিন্তা হচ্ছিলো।গতকাল রাতে নির্জনের সেই র**ক্তমাখা চিঠি পড়ে, সারা রাতে চোখজোড়া এক করতে পারেনি নিধি এবং তোহা।নির্জনের অদ্ভুত সেই চিঠি ওদের দুই বোনের ঘুম কেড়ে নিয়েছে।নির্জন যে নিধি কে এভাবে চিঠি লিখে প্রেম নিবেদন করবে,সেটা নিধির কল্পনারও বাইরে ছিলো।নিধি নির্জনকে রেগেমেগে মনে মনে অনেকগুলো নাম দিয়েছিলো,(রসকষহীন,কাটখোট্টা,গম্ভীর, অ্যা**টম বো**ম,গোলা*বা**রুদ, নিরামিষ ইত্যাদি।)কিন্তুু নির্জনের এইরকম অনাকাঙ্ক্ষিত চিঠি পেয়ে,নিধি যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো।”

“ভোরের দিকে তোহা এবং নিধি ঘুমিয়েছিলো।সকাল ৯টায় নিধির ঘুম ভেঙে গেলো।আসলে মস্তিষ্কে চিন্তা রা ঘুরপাক খেলে,চোখ জোড়া বন্ধ করলেও ঘুম হয়ে ওঠে না।
তাই নিধি ঘুম থেকে উঠে ঝটপট ফ্রেশ হয়ে হালকা নাস্তা করে,তাহমিনা বেগম কে বলে নাদিয়ার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।”

“নিধি নাদিয়াদের বাসায় যেতেই, দেখলো নাদিয়ার ফুফু ডাইনিং টেবিলে খাবার পরিবেশন করছেন আর জহির সাহেব এবং নাদিয়ার মায়ের সাথে গল্প করছেন।সেখানে নাদিয়া কে দেখতে না পেয়ে,নিধি গলা খাঁকারি দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,’আসসালামু আলাইকুম আন্টি কেমন আছেন? নাদিয়া কোথায়?”

“নাদিয়ার মা রুনা বেগম সদর দরজার কাছে নিধি কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললেন,’আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি মামনি।তুমি ভেতরে আসো।আর নাদিয়া
তো ঘুমাচ্ছে। যাও ওকে জাগিয়ে কান ধরে এখানে নিয়ে আসো।৭দিন যাবৎ রোবটের মতো মুখ করে থাকে।কারো সাথে ভালোভাবে কথা বলে না।আমি অনেকবার ওকে জিজ্ঞেস করেছি,ওর কি হয়েছে।কিন্তুু মেয়েটা কোনো কিছুই বলে না।দেখো তোমাকে কিছু বলে কি না।”

“রুনা বেগমের কথা শুনে,নিধি চিন্তিত মুখ নিয়ে বললো,’ওকে আন্টি আমি ওর কাছে যাচ্ছি।’বলেই দ্রুত পায়ে নাদিয়ার রুমে গেলো।দরজা ঠেলে রুমে ঢুকতেই দেখলো,নাদিয়া অর্ধ-শোয়া অবস্থায় ফুপিয়ে কাঁদছে।নাদিয়া কে এভাবে কাঁদতে দেখে, নিধির মন বিষন্ন হয়ে গেলো।নিধি তড়িঘড়ি করে নাদিয়ার কাছে গিয়ে ওর কাঁধে হাত রেখে বললো,’কি হলো নাদিয়া এভাবে কাদঁছিস কেনো?আর তোর ফোন সুইচ অফ কেনো?”

“নাদিয়া নিধি কে দেখে প্রথমে ভূ’ত দেখার মতো চমকে গেলো।পরক্ষণেই স্বাভাবিক হয়ে নিধিকে অবাক করে দিয়ে
ওকে জড়িয়ে ধরে, আবারও নাক টেনে কেঁদে উঠলো।”

“নিধি নাদিয়ার পিঠে হাত বুলিয়ে বললো,’ফ্যাঁচফ্যাঁচ করে না কেঁদে,কি হয়েছে বলবি তো?”

“নাদিয়া নিধি কে ছেড়ে দিয়ে আসন করে বসে,হেঁচকি তুলে কেঁদে বিগত ৭দিনে ঘটে যাওয়া সবকিছু নিধি কে বললো।সবকিছু শুনে নিধি তো পুরো শকড হয়ে গেলো।নাদিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,’দিগন্ত ভাইয়া তো ভালো কোম্পানি তে জব করে।আর তার পরিবারও স্বচ্ছল।তাহলে তুই আন্টি কে প্রেমের বিষয়টি গোপন রেখে এটা বল, যে তোরা দু’জন দু’জন কে পছন্দ করিস।আর ইহান তোকে বিয়ের পর কানাডা নিয়ে যাবে,এটা তোর পছন্দ নয়।তুই এদেশেই থাকবি।’এভাবে বুঝিয়ে বল।”

“নাদিয়া নিধির মাথায় গাট্টা মে**রে বললো,’ঐ তোর মাথা টা গেছে নাকি?মা আমার বয়স পার করে এসেছে।আমি ইনিয়ে-বিনিয়ে মিথ্যা কথা বললাম,আর মা এতো সহজে বিশ্বাস করে নিবে?বোকা নাকি তুই?তারা আমাদের থেকে যেমন বয়সে বড়;তেমন তাদের বুদ্ধিও আমাদের থেকে অনেক প্রখর।”

“নিধি চিবুকে তর্জনী ঠেকিয়ে কিছু একটা ভেবে দুষ্টু হাসি দিয়ে বললো,’একটা জবরদস্ত আইডিয়া পেয়েছি।তুই তোর সেই বিখ্যাত টেকনিক ফলো করে,ইহান বেবির কাছে তোর আর দিগন্ত ভাইয়ার পিকচার পাঠা।তাছাড়া তোদের এমনিতেও তো কাপল পিক আছে।দেখবি ইহান বেপ্পি ওগুলো দেখে ছ্যাকা খেয়ে ব্যাঁকা হয়ে তোর পিছু ছেড়ে দিবে।আইডিয়া টা দারুণ না?”

“নিধির কথা শুনে নাদিয়া খুশিতে গদগদ হয়ে গেলো।এভাবে ও কত মানুষের বিয়ে ভে**ঙে উপকার করেছে।অথচ নিজের বেলাতে এই চমলক্ক বুদ্ধি টা মাথায় আসেনি। নিজেকে নিজেই একবার ধি*ক্কার জানালো নাদিয়া।হাসি মুখে বললো,’এতো কিউট একটা বুদ্ধি দেওয়ার জন্য তোকে আমার পক্ষ থেকে ৪-৫টা সুইট ললিপপ খাওয়াবো বেপ্পি।”

“ললিপপের কথা শুনে নিধির জিহ্বায় জল চলে এলো।সাধারণত মেয়েরা যেখানে তেঁতুল দেখলে লোভ সামলাতে পারে না।সেখানে নিধি রাস্তায় কোনো বাচ্চা কে ললিপপ খেতে দেখলে, লোভ সামলাতে পারে না।খুশিতে টইটম্বুর হয়ে বললো,’ওকে.. ওকে আরও কোনো ঝাকানাকা টিপস লাগলে বলিস।আমার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি তে ভরপুর।
নাদিয়ার সাথে কথা বলতে বলতে নিধি ভুলেই গেছিলো যে, ও এখানে কি উদ্দেশ্যে এসেছে।”

“হঠাৎ নিধির নির্জনের কথা মনে পড়তেই, চাঁদ মুখ টা মুহুর্তেই চুপসে এতটুকু হয়ে গেলো।নাদিয়ার দিকে ভ**য়ার্ত চাহনি নিক্ষেপ করে বললো,’দোস্ত নির্জন আমাকে লাভ লেটার দিয়েছে।”

“নাদিয়া নিধির সাথে কথা বলে টি-টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে, সবেমাত্র মুখে দিয়েছিলো।নিধির মুখে এহেন কথা শুনে, নাদিয়ার মুখ থেকে সব পানি নিধির মুখে গিয়ে পড়তেই,হকচকিয়ে উঠলো নিধি।কটমটিয়ে বললো,’এটা কি করলি?তোর বাসি মুখের পানি আমার ওপর ফেললি কেনো?শাঁকচুন্নি, পেঁচামুখী এখন আমার মুখের কি হবে?”

“নাদিয়া হাসি আটকে মুখে হাত দিয়ে চেপে ধরে অস্ফুটস্বরে বললো,’সরি দোস্ত কিভাবে কি হয়ে গেলো বুঝতে পারিনি। তুই ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়।আমার একটা কালো রঙের ঝিকিমিকি ফেসওয়াশ আছে,ওটা দিলে তোর মুখমন্ডল চকচক করবে।”

“নাদিয়া বলতেই,নিধি এক দৌড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে এলো।তারপর নাদিয়া কে শপিংমলে নির্জনের ধা”ক্কা দেওয়া,সেই র**ক্ত*মাখা প্রথম চিঠি,চলনবিলে নির্জনের ওকে নদীতে ধা”ক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া,জঙ্গলে নির্জনের ওর পিছু নেওয়া,ছু**রি দিয়ে নির্জনের হাত কে**টে ১৩টা বাজানো,আর গতকাল রাতের সেই প্রেমপত্রের নামে হু**মকি পত্র..সবকিছু পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে নাদিয়া কে বললো।”

“সবকিছু শুনে নাদিয়ার কোমায় যাওয়ার মতো অবস্থা হলো।নাদিয়া কিছুক্ষণ হা করে তাকিয়ে থেকে বললো,’এতো দেখি বহুরূপী মানুষ!বাবারে কি সাং**ঘাতিক লোক!নির্জন ভাইয়া কে দেখলে তো মনে হয়, ভাজা মাছ বেছে খেতে পারেনা।কি সুন্দর চার চক্ষুওয়ালা ইনোসেন্ট চেহারা।অথচ ভেতরে ভেতরে এই কাহিনী?দিগন্ত ঠিকই বলেছিলো,নির্জন ভাইয়া ভীষণ ডে”ঞ্জারাস টাইপ ছেলে।’বলে নিধি কে বললো,’এখন কি তুই তার চিঠির উত্তর দিবি?নাকি বিষয়টি আঙ্কেল-আন্টি কে জানাবি?”

“নিধি চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো,’বাবা-মা কে বললে তারা শুধু শুধু চিন্তা করবে।তবে লোকটা সেদিন চাইলেই, ওই গহীন জঙ্গলে আমার সম্ভ্রমহানি করতে পারতো।কিন্তুু সেটা না করে আমার ভুলগুলো ধরিয়ে দিয়েছে।তবে আমার প্রতি এতোগুলো টর্চার করার জন্য,ক্রোধের বশবর্তী হয়ে আমিও তার হাত কে**টে,নদীতে ধা”ক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিলাম।কিন্তুু উনি যে এভাবে আমায় প্রপোজ করবে, সেটা সত্যি ভাবিনি।বুঝতে পারছি না কি করবো।”

“নাদিয়া একটু ভেবে বললো,’আচ্ছা তোর হাত কা**টার জন্য, উনি আবার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য নতুন কোনো ফন্দি আঁটে নি তো?যেই ডে”ঞ্জারাস লোক!”

“উমম চিঠি দেখে এমন টা মনে হলো না।দুষ্টুর লিডার আমি,,ওইরকম হলে আমি বুঝে যেতাম।আর লোকটা কে দেখে মনে হয় না, সে এই বিষয়টি নিয়ে মজা করবে।”

“নাদিয়া দুষ্টু হেসে নিধির কাঁধে আলতো করে ধা”ক্কা দিয়ে বললো,’বান্দুপি এর মানে কুছ কুছ হোতা হ্যায়।”

———
“বিকাল ৫টায় অফিস শেষ করে, প্রায় ১ঘন্টা যাবৎ নির্জনের অফিসের সামনের রাস্তার এক সাইডে শঙের মতো দাঁড়িয়ে আছে দিগন্ত।আজ সে পণ করেছে, যেভাবেই হোক নির্জনের সাথে দেখা করবে।নির্জন কেনো তার ফোন রিসিভ করছে না,তার জন্য কড়া জবাবদিহি করতে হবে।’কথাগুলো ভাবতেই,নির্জন অফিসের গেটের বাইরে আসতেই,দিগন্তের চোখে-মুখে খুশির ঝলক দেখা গেলো।তবে তৎক্ষণাৎ সেটা লুকিয়ে ফেললো।খুশিটা বাইরে প্রকাশ না করে,নির্জনের মতো গম্ভীর রূপ ধারণ করে সোজা হয়ে দাঁড়ালো দিগন্ত।”

“নির্জন গেটের বাইরে আসতেই তার চোখ জোড়া আটকে গেলো, অপরপাশের রাস্তায় রোবটের ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকা ফরমাল ড্রেস পরিহিত প্রিয় মানুষটির দিকে।নির্জন ঠোঁটের কোণা হালকা প্রসারিত করে, রাস্তা ক্রস করে দিগন্তের সামনে গিয়ে বললো,’কিরে কেমন আছিস?এখানে এভাবে দাঁড়াশ কাঠির মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?মনে হয় স্কুলের মাঠে দাঁড়িয়ে আরামে দাঁড়ানোর প্রস্তুুতি নিচ্ছিস।”

“দিগন্ত ভ্রু জোড়া কুঁচকে বললো,’শা**লা ফোন না ধরে আমার সাথে মজা নিচ্ছিস?কতবার তোকে ফোন দিয়েছি,ধরিস নি কেনো?”

“দিগন্তের কথা শুনে নির্জনের মুখের ভঙ্গিমা পরিবর্তন হয়ে গেলো।সেতো নিধির জন্য চিঠি লেখা এবং অফিসের কাজে এতটাই ব্যস্ত ছিলো, যে নতুন কেনা বাটন মোবাইল ধরার সময় পায় নি।আর নতুন কেনা এন্ড্রয়েড সেটের নাম্বার দিগন্তকে দেয়নি।এর থেকেও সবচেয়ে বড় কথা হলো,নিধির ভাবনায় নির্জন এতোটাই বিভোর হয়েছিলো,যে দিগন্তের কথা তার মস্তিষ্কেই আসেনি।কিন্তুু এই কথা যদি দিগন্ত শোনে ,তাহলে ভীষণ কষ্ট পাবে।”

“একমনে কথাগুলো ভেবে নির্জন কপালে আসা চুল গুলো ডান হাত দিয়ে একপাশে সরিয়ে বললো,
“দোস্ত সরি রে..আসলে আমার বাটন ফোন টা আমি সাইলেন্ট করে রেখেছিলাম।আর তোকে এন্ড্রয়েড সেটের নাম্বার দিতে ভুলে গেছি।তাই ফোন রিসিভ করতে পারিনি।আর তাছাড়াও একটা ঘটনা ঘটে গেছে।”

“দিগন্ত অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘কি ঘটনা?”

“আগে তোর টা বল।আমি জানি,তুই নিশ্চয়ই কিছু বলার জন্য আমার অফিসের সামনে এসেছিস।নাদিয়ার সাথে কিছু হয়েছে?”

“দিগন্ত এইজন্যই নির্জন কে এতটা ভালোবাসে।চেহারা দেখে কিভাবে মনের কথা বুঝে ফেললো;বেস্টফ্রেন্ড বলে কথা।অবশ্য দিগন্ত শত চেষ্টা করেও,এই বহুরূপী মানুষটা কে বুঝতে পারেনা।তবে নির্জন কে মন থেকে খুব ভালোবাসে।”

“দিগন্ত বললো,’চল রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কথা বলি।”

“আরে হাঁটবো কেনো?আমার বাইক আছে তো।চল বাইকে উঠে বস।তারপর তোর বকবক শুরু কর।’বলেই নির্জন পার্কিং এরিয়া থেকে বাইক নিয়ে আসলে, দু’জনে বাইকে উঠলো।
দিগন্ত নির্জন কে সব কষ্টের কথা খুলে বললো।”

“বেচারা দিগন্তের এই করুণ পরিস্থিতি দেখে, নির্জনের কিছুটা খারাপ লাগল।এই ক্ষেত্রে নির্জন হলে কোনো বি**ভৎ*স প্ল্যান তৈরি করতো।কিন্তুু নির্জনের অদ্ভুত টিপস কখনোই দিগন্ত গ্রহণ করবে না।তাই গম্ভীর কন্ঠে বললো,’তুই এক কাজ কর,নাদিয়ার কাছ থেকে ইহানের নাম্বার নিয়ে ওকে সব বুঝিয়ে বল।তারপর যদি না মানে,তাহলে নাদিয়া রাজি থাকলে পালিয়ে বিয়ে করবি।কয়েকদিন তোদের দু’জনের বাবা-মা কান্নাকাটি করে,তোদের ঘরের বাইরে বের করে দিবে।কিছুদিন গেলে দেখবি,তারা ঠিক মেনে নেবে।বাবা-মায়েরা এমনই হয়।হুম আমি জানি,কাজ টা মোটেও ঠিক হবে না।তাহলে তোদের দু’জনের বাবা-মা খুব কষ্ট পাবে।তবে এ ছাড়া তো কোনো গতি নেই।বাবা-মায়ের সাথে তোর র**ক্তের সম্পর্ক কখনোই ছিন্ন হবে না।কিন্তুু সবচেয়ে প্রিয় কাছের মানুষ টি কে হারিয়ে ফেললে,সারাজীবন আফসোস করলেও তাকে ফিরে পাবি না।তুই আঙ্কেল-আন্টি কে আগে বিষয়টি বুঝিয়ে বল।তারা যদি না মানে,তাহলে ওটাই কর।তবে মনে রাখিস,নাদিয়াকে ভালোভাবে ব্রেইন ওয়াশ করতে হবে।যদি সে না শোনে,তাহলে নেক্সট প্ল্যান তোকে বলবো।”

“দিগন্ত খুশি হয়ে বললো,’এই জন্যই তোর কাছে এসেছি।আমি জানতাম, তুই পারবি আমাকে সঠিক বুদ্ধি দিতে হিহিহি।’দুই বন্ধু কথা বলতে বলতেই নির্জন দিগন্তের বাসার সামনে ব্রেক কষলো।এতে দিগন্তের শরীর কিছুটা নির্জনের ওপর ঝুঁকে পড়তেই,রেগে গেলো নির্জন। মুহূর্তেই তার চোখ জোড়া র**ক্তিম বর্ণ ধারণ করলো।দিগন্ত বাইক থেকে নামতেই,নির্জন হেলমেট খুলে কপালে চার আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করে, দিগন্তের শার্টের কলার ধরে ক্ষিপ্ত কন্ঠে বলে উঠলো,
‘নেক্সট টাইম আমার শরীরের সাথে ভুল করেও ঘেঁষতে আসবি না।তাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।এই শরীর এবং মন শুধু আমার ডার্ক কুইনের দখলে থাকবে,মাইন্ড ইট।’বলেই হেলমেট পড়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে,দ্রুত গতিতে সেখান থেকে প্রস্থান করলো।”

“আকস্মিক ঘটনায় দিগন্ত ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।বাচ্চাদের মতো ঠোঁট জোড়া উল্টে বললো,’যাহ!আমি আবার কি করলাম?ও নিজেই তো খুব জোরে ব্রেক কষলো আর ওর পিঠের সাথে আমার শরীরের কিঞ্চিৎ ঘর্ষণ হলো।এতে আমার কি দোষ?আর এই ডার্ক কুইন টা কে?একটু আগে তো বললো, ‘কি যেন একটা ঘটনা ঘটেছে।আমি তো নিজের টা বলতে গিয়ে ওরটাই শুনলাম না।”

———–
“এদিকে রাত ৮টার দিকে ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে,কানে হেডফোন গুজে তোহা মাহিরের সাথে কথা বলছে।মাহির একের পর এক কথা বলে যাচ্ছে, আর তোহা শুধু মুগ্ধ হয়ে শুনে যাচ্ছে।”

“তোহা কে এতো নীরব থাকতে দেখে মাহির বললো,’নিজে থেকে ফোন দিয়েছেন কি আমার বকবক শোনার জন্য?আপনার ভান্ডারে কি কোনো শব্দ নেই?”

“তোহা লাজুক হেসে কোমল স্বরে বললো,’আপনাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে।”

“ওম্মা এটা কি শুনলো মাহির!নিজের কান কেই যেনো বিশ্বাস করতে পারছেনা।নিজের হাতে একটা চি”মটি কে**টে বললো,’কি বললেন?শুনতে পাইনি।আবার বলুন প্লিজ।”

“তোহা বললো,’যখন বলতে শুরু করবো,তখন আপনার ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ এইরকম অবস্থা হবে।তাই বিয়ের আগ পর্যন্ত আপনি বলতে থাকুন;আমি শুনি।”

“মাহির অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,’সত্যি তুমি এতো কথা বলতে পারো?
উফফ সরি!তুমি বলে ফেললাম।”

“তোহা মুচকি হেসে মুখ ভেং**চি কে**টে বললো,’হয়েছে হিরোদের মতো এতো ঢং করতে হবে না।আমি জানি,আপনার আমাকে ‘তুমি’ করে বলার জন্য মন
আঁকুপাঁকু করছিলো।বলতে পারেন,আমি আপনার অনেক ছোট।আমি কিছু মনে করবো না।”

“মাহির তোহার সম্মতি পেয়ে খুশিতে গদগদ হয়ে গেলো।মনে মনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই ‘অপরিচিতা’ গল্পের শেষ লাইনটি বললো,’এই তো জায়গা পেয়েছি।”

—–
“তোহা ছাদের এক কোণে কানে হেডফোন গুজে, দাঁড়িয়ে মাহিরের সাথে কথা বলছে আর নিধি ডাইনিং রুম থেকে তোহা কে ডাকতে ডাকতে কন্ঠনালী ফাটিয়ে ফেলছে।বিরক্ত হয়ে নিধি নিজের রুমে ঢুকতেই দেখলো, বেলকনির ফ্লোরে আরেকটা চিঠি পড়ে আছে।নিধির এইবার বুঝতে দেরি হলো না চিঠিটি কার।কাঁপা কাঁপা হাতে নিধি চিঠি নিয়ে ভাজ খুলে, আবারও সেই র**ক্তের ছোপ ছোপ দাগ দেখলো।বক্ষ মাঝে হাত রেখে, শুকনো ঢোক গিলে পুরো চিঠিটা পড়লো।এক পৃষ্ঠার চিঠিতে প্রায় ১৫টি লাইনে ধাপে ধাপে রোমান্টিক কবিতা দিয়ে পূর্ণ করা।আর শেষে একটি ফোন নাম্বার দেওয়া।নিধি বুঝে গেলো, এটা নির্জনের ফোন নাম্বার।”

——-
“নিধিকে চিঠি দিয়ে, নির্জন তার বাসায় এসে ডিম লাইটের র**ক্তিম আলোতে ‘মন’ কে জিজ্ঞেস করলো, ‘মন এটা তো আমার দ্বিতীয় চিঠি।ধরো, ৩০টি চিঠি ডার্ক কুইন কে দিলাম।এরপরেও যদি সে রাজি না হয়,তখন কি করবো?”

“মন তৎক্ষনাৎ দুষ্টু হেসে বললো,’এতোকিছু করার পরেও যদি সে তোমার না হয়;তাহলে তাকে শেষ করে ফেলবে,সিম্পল।”

#চলবে….
(প্রিয় পাঠকমহল আমরা কেউ ভুল-ত্রুটির ঊর্ধ্বে নয়।গল্প লেখার পর, আমি প্রায় ১ঘন্টা সময় নিয়ে ২বার রিচেক দেই।তবুও পোস্ট করার পরে দেখি, অনেকসময় আমার লেখার বানানে ভুল হয়।এই বিষয়টি আমার খুবই অপছন্দ। আসলে ২বার রিচেক দেওয়ার পরেও, অনিচ্ছাকৃত ভাবে অনেক সময় কি-বোর্ডে টাইপিং মিস্টেক হয়।এর জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।
আগামীকাল গল্প দিবো না।দয়া করে কেউ অপেক্ষা করবেন না।আর গল্পটিতে গঠনমূলক মন্তব্য করে উৎসাহিত করবেন।হ্যাপি রিডার্স।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here