#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ১৬
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ
“অতঃপর মৃদু স্বরে বললো,’আমি বরাবরই হট কফি পছন্দ করি ডার্ক কুইন।”
“নির্জনের এভাবে চোখে চোখ রেখে উত্তর দেওয়াতে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো নিধি।ভাবলো,’আমি কি প্রশ্ন টা করে ভুল করলাম?নাকি সে উত্তর টা অন্যভাবে দিয়েছে?নাকি আমি ভুল ভাবছি?”
“নিধির ভাবুক চেহারা দেখে অন্যদিকে ফিরে ঠোঁট টিপে হাসলো নির্জন।নিধি কে এভাবে জব্দ করতে পেরে বেশ মজা পেয়েছে নির্জন।”
“নিধি মেনু কার্ডের দিকে চোখ বুলিয়ে ভাবতে থাকল,’ধুর..আমিও না,কি যে উল্টাপাল্টা কথা ভাবি।মানুষের সম্পর্কে নেগেটিভ চিন্তা করতে করতে মনটাই নেগেটিভ হয়ে গেছে।সহজ কথা হলো,আমি যেমন প্রশ্ন করেছি,সে তেমন সহজ ভাষায় উত্তর দিয়েছে।এতটা দুষ্টুও সে নয়।”
“নির্জন ওয়েটার কে ডেকে নিধির কথা অনুযায়ী খাবারের অর্ডার দিলো,সাথে নিজের জন্য হট কফি অর্ডার দিলো।তারপর নিধির দিকে তাকিয়ে বললো,’আরও কিছু অর্ডার দিবেন?এখনও মেনু কার্ড দেখছেন যে?”
“নিধি থতমত খেয়ে মেনু কার্ড রেখে বললো,’না না আর কিছু অর্ডার দিবো না।আমি আবার ডায়েট কন্ট্রোল করি।”
“নিধির মুখে ডায়েট কন্ট্রোলের কথা শুনে,বিস্ময়কর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল নির্জন।উত্তেজিত স্বরে জিজ্ঞেস করলো,’আর ইউ সিরিয়াস!তৈলাক্ত খাবার খেয়ে ডায়েট কন্ট্রোল?”
“নির্জনের কথা শুনে নিধি বেশ লজ্জা পেলো।টেবিলের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে বললো,’ওই আর কি মাঝে মাঝে এইসব খেলে কিছু হয় না।”
“নির্জন এইবার মৃদুস্বরে হো হো করে হেসে উঠলো।নিধি এইবার সত্যি বেশ লজ্জা পেলো।নির্জন কে ডায়েট কন্ট্রোলের কথা বলা উচিত হয়নি।ওর এই ভুগিচুগি ডায়েট কন্ট্রোলের কথা শুনে যে কেউ হেসে ফেলবে।’ভেবে নিজেকেই নিজে ধি*ক্কার দিলো নিধি।”
“এদিকে নিধিকে এভাবে লজ্জা পেতে দেখে নির্জনের বেশ রাগ হলো।কিন্তুু এইমুহূর্তে রেগে গেলে হার নিশ্চিত।তাই মনে মনে মুখে এক প্রকার সুপার গ্লু লাগিয়ে নিলো নির্জন।নিধির দিকে তীর্যক দৃষ্টিতে তাকিয়ে, সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করতে থাকল।”
“নিধি আজ কালো গাউন এবং কালো হিজাব পড়ে এসেছে।সেটা অবশ্য নির্জনের রিকোয়েস্টে পড়েছে।রাতে নির্জন ম্যাসেজ করে বলেছিলো,নিধি যেনো শপিংমলে পড়ে যাওয়া সেই ব্ল্যাক কালার গাউন এবং ব্ল্যাক হিজাব পড়ে আসে।আর অবশ্যই মুখে মাস্ক পড়ে আসবে।নিধি নির্জনের কথা অনুযায়ী সেভাবে এসেছে।কিছুক্ষণ আগে নিধি মাস্ক খুলে ফেলেছে।”
“আজ নির্জন ডেনিম প্যান্ট এবং ব্ল্যাক কালার ফুল হাতার শার্ট পড়েছে এবং হাতে ব্ল্যাক ওয়াচ।চকচকে রিমলেস চশমা পরিহিত উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের পুরুষটির শরীরে ব্ল্যাক শার্ট টি বেশ মানিয়েছে।নিধির চোখজোড়া নিজের অজান্তেই মাঝে মাঝে আটকে যাচ্ছে নির্জনের ইনোসেন্ট চেহারার দিকে।নির্জন সেটা বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারছে।আর ভাবছে,’এভাবে আমাকে লুকিয়ে দেখা আমি একদম পছন্দ করি না ডার্ক কুইন। খুব তাড়াতাড়ি তুমি আমায় সরাসরি দৃষ্টি দিয়ে দেখতে পারবে।সেই দৃষ্টিতে না থাকবে কোনো জড়তা,আর না থাকবে কোনো লজ্জা।’ভেবে আনমনে হাসলো নির্জন।”
“দু’জনের চোখের আলাপনের মধ্যে ওয়েটার খাবার নিয়ে চলে এলো।ওয়েটার খাবার সার্ভ করতে করতে নিধির দিকে তাকিয়ে সৌজন্যমূলক হাসি দিলো।নিধি কোল্ড কফিতে স্ট্র দিয়ে আলতো হাতে নেড়ে ওয়েটার কে হাসি মুখে বললো,’থ্যাংকস।’ওয়েটার হাসি মুখে বললো,’ওয়েলকাম।”
“নিধিকে এভাবে হাসিমুখে ওয়েটারের সাথে কথা বলতে দেখে,নির্জন এইবার কন্ট্রোললেস হয়ে গেলো।কি করবে..কি করবে ভেবে পেলো না।পরক্ষণেই নিজের জন্য বরাদ্দ করা হট কফির দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো নির্জন।আশেপাশে একবার সতর্ক দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।অতঃপর ওয়েটারের দিকে একবার আড়চোখে তাকিয়ে,ফুল হাতার শার্ট টি ফোল্ড করে ধোঁয়া ওঠা হট কফির গ্লাস টি আলতো হাতে ফেলে দিলো ওয়েটারের হাতের ওপর।আকস্মিক ঘটনায় হতভম্ব হয়ে গেলো ওয়েটার।ধোঁয়া ওঠা গরম কফি হাতের কব্জিতে পড়ায়,তীব্র যন্ত্রণায় আর্তচি**ৎকার করে উঠলো সে।এহেন ঘটনায় নিধিও ভড়কে গেলো।আশেপাশে থাকা সুইট কাপলগুলোও ড্যাবড্যাব করে সেদিকে তাকিয়ে রইলো।এদিকে নির্জন চশমাটা ঠিকঠাক করে ইনোসেন্ট ফেইস করে ওয়েটারের ঝলসে যাওয়া হাতে জোরে চেপে ধরে বললো,’সরি সরি..আ’ম এক্সট্রিমলি সরি।”
“নির্জন এত জোরে হাত চেপে ধরায় ওয়েটার আরো জোরে চি**ৎকার করে উঠলো।ওয়েটারের আর্তচি**ৎকারে রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার সহ বাকি ওয়েটার গুলো সেখানে এসে উপস্থিত হলো।নির্জন তৎক্ষনাৎ ওয়েটারের হাত ছেড়ে দিয়ে অনুনয়ের স্বরে বলতে থাকল,’সরি,সরি,রিয়েলি ভেরি সরি.. আমি সত্যি বুঝতে পারিনি,যে আপনার হাতে গরম কফিটি পড়ে যাবে।আমি তো টেবিলের পাশ থেকে টিস্যু পেপার নিচ্ছিলাম।”
“নির্জনের নমনীয় কন্ঠে এতোবার সরি শুনে ম্যানেজার সহ সবাই বুঝতে পারলো,যে দুর্ঘটনাটি পুরোটাই অনিচ্ছাকৃত ভাবে হয়েছে।তাছাড়া একজন ওয়েটারের সাথে কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে এমন একটা কাজ করবে না এটাই স্বাভাবিক।’ভেবে ম্যানেজার বললো,’ওকে স্যার,আমরা বিষয়টি বুঝতে পেরেছি।এখানে আপনাকে দোষারোপ করা অনুচিত হবে।”
“নির্জন ম্যানেজারের দিকে তাকিয়ে কৃতজ্ঞতার সহিত ম্লান হাসলো।তারপর পকেট থেকে এক হাজার টাকার চকচকে নোট বের করে,ব্যথায় চোখ-মুখ কুঁচকে যাওয়া ওয়েটারের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,’টাকাটা গ্রহণ করুণ প্লিজ।ইমিডিয়েট ভালো কোনো ডক্টর দেখিয়ে নিবেন।আর আপনি চাইলে আমি আপনাকে ভালো কোনো ডক্টরের কাছে নিয়ে যাবো,ডোন্ট ওয়ারি।”
“নির্জনের এত নরম স্বরে কথা শুনে ওয়েটার অস্ফুটস্বরে আর্তনাদ করে খুব কষ্ট করে বললো,’না স্যার, আমি নিজেই ভালো ডক্টর দেখিয়ে নিবো।আর আপনার টাকা আপনার কাছে রাখুন প্লিজ।”
“নির্জন কিছুতেই ওয়েটারের কথা শুনলো না।চেহারায় বিষন্নতার ছাপ এঁটে বললো,’অসম্ভব!এই টাকা আমি কিছুতেই রাখতে পারবো না।অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও আমার দ্বারা আপনার ক্ষতি হয়েছে।তাই ক্ষতিপূরণ না হলেও,এই টাকা টা আপনাকে রাখতেই হবে।এটা আমার অনুরোধ।”
“নির্জনের এহেন আবদার ফেলতে পারলো না ওয়েটার।নির্জনের হাত থেকে টাকা নিয়ে প্যান্টের পকেটে ভরলো।ম্যানেজার সহ বাকি ওয়েটার গুলো নির্জনের সৌজন্যমূলক আচরণে খুবই খুশি হলো।সেই সাথে নিধিও মুগ্ধ নয়নে নির্জনের দিকে তাকিয়ে রইলো।অবচেতন মনে ভাবলো,’লোকটা কতটা মহৎ এবং উদার মানসিকতার মানুষ।সত্যি আমি খুব ভাগ্যবতী।’ভেবে লাজুক হাসলো নিধি।”
“সবাই চলে যাওয়ার পর নিধি কোল্ড কফি অর্ধেক টা খেয়ে,নির্জন কে বললো,’আপনার হট কফির তো ২৪টা বেজে গেলো।এক কাজ করুন,আপনি আরেকটা কফি অর্ডার করুন।”
“নির্জন বুকের ওপর দুই হাত ভাজ করে বললো,’অর্ডার করতে হবে না।আপনার খাওয়া বাকি অর্ধেক কোল্ড কফি খেলেই আমার হয়ে যাবে।”
“নির্জনের কথায় হকচকিয়ে গেলো নিধি।বললো,
‘অ্যা?আমি তো এটা এঁটো করে ফেলেছি।তবুও আপনি এটা খাবেন?”
“নির্জন ঠোঁটের কোণা প্রসারিত করলো,মৃদুস্বরে বললো,’তো কি হয়েছে?ভবিষ্যতে তো আপনার সব এঁটো খাবারই আমার খেতে হবে।এখন থেকে না হয় প্র্যাক্টিস করি।”
“নিধি আর কিছু বললো না।গ্লাস থেকে স্ট্র তুলে বললো,’এটা তে আরেক টা স্ট্র ডুবিয়ে খেয়ে ফেলুন।”
“নিধির কথায় বেশ মন খারাপ হলো নির্জনের।তবুও চেহারার বাচন ভঙ্গি স্বাভাবিক রেখে, বাকি অর্ধেক কফি স্ট্র ছাড়াই ঢকঢক করে খেয়ে ফেললো।এদিকে নিধি চিকেন বার্গারে কা**মড় বসিয়ে, নির্জনের দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকল।”
——–
“বাইরের একটি ক্যাফেটেরিয়াতে স্যান্ড উইচ আর পিজ্জা নিয়ে, মুখোমুখি বসে আছে মাহির এবং তোহা।মাহির চামচ দিয়ে পিজ্জা কে**টে তোহা কে বললো,’কি হলো?প্রায় ১৫মিনিট যাবৎ দেখছি গভীর ভাবনায় ডুবে আছো।আমার সাথে ঠিকভাবে কথাও বলছো না।কি হয়েছে বলোতো?”
“তোহা চিন্তিত মুখমণ্ডল নিয়ে বললো,’আসলে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় বাবা- মা কে বলেছি,আমার বান্ধবী তানিয়ার কাছ থেকে নোটস আর সাজেশন নিতে যাচ্ছি।আর নিধি আপু আমার সাথে যাবে।এটা শুনে মা-বাবা বিশ্বাস করে,আমাদের বাইরে বের হতে দিয়েছে।এখন বাসায় কি নিয়ে যাবো সেটাই ভাবছি।তানিয়া কে ফোন দিলাম, ও বললো ও নাকি গতকাল ওর নানু বাড়ি বেড়াতে গিয়েছে।ও ছাড়া আর কারো বাসা আমি চিনিনা।এখন বাসায় যদি নোটস আর সাজেশন নিয়ে যেতে না পারি, তাহলে মায়ের হাতের লাঠির বা**রি থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।”
“তোহার কথা শুনে মাহির উচ্চশব্দে হেসে উঠলো।তোহা বললো,’আরে আরে আস্তে হাসুন।সবাই দেখবে তো।”
“মাহির হাসি থামিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে বললো,’তুমি চোখ থাকতেও অন্ধ।আশেপাশে তাকিয়ে দেখো, ২জোড়া গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড একে অপরের হাত ধরে বসে আছে আর চুপি চুপি কত কথা বলছে।আর তুমি নিরামিষভোজী মেয়ে;চিন্তায় চিন্তায় এতটাই বেখেয়ালি হয়ে গেছো যে,তোমার সামনে একজন হ্যান্ডসাম,অ্যাট্রাক্টিভ সিঙ্গেল প্রোম্যাক্স বসে আছে,সেদিকে তোমার কোনো হুশ নেই।’বলেই মাহির মন খারাপ করে পিজ্জার স্লাইস মুখে দিলো।”
“মাহিরের অভিমানী কন্ঠে কথা শুনে, এতক্ষণে তোহা মাহিরের দিকে তাকিয়ে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলো।নেভি ব্লু কালার ফুল হাতার শার্ট এবং বানানো প্যান্ট পড়েছে মাহির।এক কথায় যাকে বলে ফরমাল ড্রেস।মাহিরের ফর্সা চেহারায় কপালের ডান দিকে একটা পিম্পল উঠেছে।চুলগুলো হালকা কোকড়ানো।তবুও সেগুলোকে জেল দিয়ে লেপ্টে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করেছে সে।ছোট ছোট চাপ দাড়িতে ফর্সা মুখস্রির সৌন্দর্য যেনো দ্বিগুণ বেড়ে গিয়েছে।এই যে,মাহির মন খারাপ করে গোমড়া মুখে পিজ্জা খাচ্ছে,তবুও তাকে কতো কিউট লাগছে।’ভেবে মুচকি হাসলো তোহা।স্যান্ডউইচ মুখের কাছে নিয়ে বললো,’আপনাকে দেখতে অসাধারণ লাগছে মাহির।আমার তো চোখ ফেরানো দায় হয়ে পড়েছে।তবুও অনেক কষ্টে চোখ দু’টো কে কন্ট্রোল করে স্যান্ডউইচ খাচ্ছি।”
“তোহার এহেন মন্তব্যে মাহিরের মুখে থাকা পিজ্জা মনে হয় গলায় গিয়ে ঠেকলো।হঠাৎ করেই তার কাশি উঠে গেলো।সেটা দেখে তোহা তড়িঘড়ি করে মাহিরের দিকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে,তার পিঠে হাত বুলিয়ে দিলো।মাহির পানি খেয়ে কয়েক সেকেন্ড পর শান্ত হলো।মাহির কে ঠিকঠাক দেখে, তোহা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে নিজের জায়গায় বসে স্যান্ডউইচ মুখে দিলো।মাহির তোহার দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হেসে বললো,’এমন নরম হাতের ছোঁয়া পেলে তো আমি প্রতিদিন খাওয়ার সময় কাশি দিতে রাজি আছি স্বপ্নচারীনি।”
“মাহিরের রসিকতা দেখে তোহা মুখে থাকা স্যান্ডউইচ গোগ্রাসে গিলে,বোতল থেকে পানি খেয়ে ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,’উফফ আপনি মাঝে মাঝে এমন এমন কথা বলেন,যে না খেলেও আমার বিষম উঠে যায়।আপনার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে,আমি তাকে এভাবেই সাহায্য করতাম।”
“মাহির ভ্রু জোড়া কুঁচকে বললো,
‘ওহ রিয়েলি!এভাবে পিঠে হাত বুলিয়ে হেল্প করতে?”
“মাহিরের মুখ ভঙ্গিমায় এহেন কথা শুনে তোহা বুঝে ফেললো,’যে তোহার কথায় মাহির জেলাস ফিল করছে।নম্র ভদ্র মেয়ে তোহা মাহিরকে জেলাসি ফিল করিয়ে কষ্ট দিতে চায় না।তাই চোখজোড়া টেবিলে নিবদ্ধ রেখে বললো,’না মানে এমনি পানি এগিয়ে দিয়ে সাহায্য করতাম।”
“তোহার লাজুক ভঙ্গিমায়,কোমল স্বরে সহজ স্বীকারোক্তি শুনে মনে অনাবিল আনন্দ পেলো মাহির।তোহার কনিষ্ঠ আঙ্গুলে নিজের কনিষ্ঠ আঙ্গুল ঠেকিয়ে মুচকি হেসে বললো,’তুমি হলে আমার সেই স্বপ্নচারীনি;যাকে আমি আমার বাস্তব জীবনেও ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রাখতে চাই।”
———–
“এদিকে রুফটপের কর্ণারে দাঁড়িয়ে শরীরে স্নিগ্ধ বাতাস মাখছে নিধি।আশেপাশ থেকে ভেসে আসা অবাধ্য বাতাসে,মাঝে মাঝে ওর হিজাব টা উড়ে যেতে চাইছে।বারবার হিজাব টা হাত দিয়ে ঠিকঠাক করছে নিধি।সেদিকে রুঢ় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ডান হাত মুষ্টিযুদ্ধ করে, নিধির থেকে কিছুটা দূরত্বে রেলিঙে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নির্জন। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে নিধি নির্জন কে রেস্টুরেন্টের রুফটপে যাওয়ার কথা বললে,নির্জন ও সায় জানায়।তারপর দু’জনেই রেস্টুরেন্টের সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর রুফটপে চলে আসে।রুফটপে সারি সারি কয়েক টি টেবিল এবং চেয়ার বসানো হয়েছে।পাশেই রং বেরঙের ফুলের টব রাখা হয়েছে।অনেকেই এখানে এসে ডিনার করছে।সাথে মনোরম মুক্ত বাতাস উপভোগ করছে।”
“নিধির দৃষ্টি আকাশের বুকে আটকে আছে।আজ আকাশে ২-৩টা তারা দেখা যাচ্ছে।আরও অনেক তারা হয়তো উঁকি দিয়েছে।কিন্তুু নিধির চোখ জোড়ায় মাত্র ২-৩টি তারা ধরা দিচ্ছে।আজ আকাশের বাতাস টা বেশ বিশুদ্ধ লাগছে।মনে হচ্ছে স্বাধীনতার সুঘ্রাণ ভেসে আসছে।তবে কি আমাদের দেশ আবার স্বাধীন হবে নাকি হলো?’আনমনে নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করলো নিধি।মুচকি হেসে ভাবলো,এতগুলো শহীদ ভাই-বোনদের তাজা র**ক্ত ঝরানো বিফলে যাবে না।”
“কিয়ৎক্ষণ পর নিধির হাসি মুখ টা চুপসে গেলো।কারণ দূর আকাশে থাকা তারাগুলো কে কিছুক্ষণ পরপর কালো মেঘ এসে ঢেকে দিচ্ছে।সেদিকে বিরক্তি ভাব নিয়ে তাকালো নিধি। নির্জনের দিকে তাকিয়ে,আকাশের দিকে আঙ্গুল তুলে অভিমানী স্বরে বললো,’দেখেছেন মেঘগুলো তারাগুলো কে কত ডিস্টার্ব করে?বারবার এসে ঢেকে দিচ্ছে।মন ভরে দেখতেও পারছিনা।”
“নিধিকে এভাবে আকাশের দিকে আঙ্গুল তুলতে দেখে,নির্জনের ক্রোধ গুলো যেনো ঝড়ের গতিতে শো শো করে বেড়ে চলেছে।নিজের অনাকাঙ্ক্ষিত ক্রোধ গুলো কে অনবরত দমিয়ে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করছে নির্জন।ভেতর থেকে ‘হৃদয়’ বলে উঠলো,’এখন নয় নির্জন।ধৈর্য ধরো।”
“হৃদয়ের কথা শুনলো নির্জন।কালো মেঘে ঢাকা আকাশের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে গম্ভীর স্বরে বললো,’আমার মনে হয় মেঘগুলো তারাগুলো কে খুব গভীরভাবে ভালোবাসে।তাই সবচেয়ে প্রিয় জিনিস কে সবার চোখের আড়ালে রাখতে,বারবার এসে তারাগুলো কে কালো ধোঁয়া দিয়ে ঢেকে দেয়।যেমন ভাবে আমিও একদিন আলো থেকে বহুদূরে নিয়ে,আমার আঁধারের রাজ্যে ঢেকে রাখবো তোমায় ডার্ক কুইন।”
“আকস্মিক নির্জনের গম্ভীর কন্ঠে এহেন কথা শুনে নিধি তৎক্ষনাৎ আঙ্গুল নামিয়ে;নির্জনের দিকে তাকিয়ে বললো,’হোয়াট?”
“নিধি কে এভাবে চমকে যেতে দেখে হো হো করে হেসে উঠলো নির্জন।কপালের সামনে আসা ছোট ছোট চুলগুলো ডান হাত দিয়ে এক পাশে সরিয়ে বললো,’আপনাকে কয়েক বাক্যে ‘তুমি’ বলার প্র্যাক্টিস করছিলাম।বলেছিলাম যে,সামনা-সামনি দেখা হলে ‘তুমি’ বলে ডাকব।আপনার ভালো না লাগলে ‘আপনি’ করেই ডাকব।”
“নিধির অজান্তেই ওর মাইন্ড কন্ট্রোল করে ফেলেছে নির্জন।কিন্তুু বোকা নিধি তার কিছুই বুঝলো না।মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে বললো,’আপনার মুখে ‘তুমি’ ডাক টা বেশ ভালো লাগে।প্রিয়জনকে ‘তুমি’ ডাকার অনুভূতি টাই আলাদা।তবে আমি আপনাকে ‘আপনি’ সম্বোধন করবো।আমি আপনাতে আবদ্ধ থাকতে চাই নির্জন।”
“নিধির শেষ বাক্যটি নির্জনের কর্ণপাত হতেই,মন ভেতর থেকে বলে উঠলো,’ইউ আর আ গ্রেট মাইন্ডগেমার & বেস্ট লাভার নির্জন।”
“মনের অপরিসীম প্রশংসা শুনে বিজয়ের হাসি হাসলো নির্জন।তারপর নিধি নির্জন কে মাহতিম কে নিয়ে মোট ৯টা বিয়ে কিভাবে ভে**ঙেছে,সবকিছু খুব মজা করে বললো।”
“নিধির এতোগুলো বিয়ে ভা**ঙার কথা শুনে পৈ**শাচিক আনন্দ পেলো নির্জন।পরক্ষণেই মনে হলো,’ডার্ক কুইন যদি এতোগুলো বিয়ে না ভা**ঙতো,তাহলে তো আজ ওকে আমি পেতাম না।অথচ ওকে আমি কতগুলো শাস্তি দিয়েছি।অবশ্য শাস্তি গুলো দেওয়ার পেছনে যথাযথ কারণ ও ছিলো।যাইহোক,আমার হৃদয় উজার করা ভালোবাসা দিয়ে ডার্ক কুইনের সব কষ্ট পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে ভুলিয়ে দেবো।আই প্রমিস মাইসেল্ফ।”
———
“রাত সাড়ে ৮টা।নাদিয়া বিছানায় বসে ডায়েরি তে তার প্রেমকাহিনী লিখতে ব্যস্ত।ও ধরে নিয়েছে,যে ইহানের সাথে ওর বিয়ে হবে।তাই মাঝে মাঝে স্মৃতিচারণ করার জন্য ডায়েরি লিখছে আর টপটপ করে চোখের পানি ফেলছে।”
“হঠাৎ করেই নাদিয়ার মনে হলো,খোলা জানালা থেকে কেউ ওকে দেখছে।নাদিয়া একবার খোলা জানালায় চোখ বুলিয়ে,মনের ভুল ভেবে আবারও ডায়েরি লেখায় মনযোগ দিলো।নাদিয়ার বেড জানালার সাথে দেওয়া হয়েছে,আর জানালার পাশে বসেই খোলা চুলে ডায়েরি লিখছে।মাঝে মাঝে দখিনা বাতাসে অবাদ্ধ চুলগুলো হেলদোল খাচ্ছে।হঠাৎ করেই নাদিয়ার হাত চেপে ধরলো কেউ।”
“নাদিয়া ভয়ে চি**ৎকার করতে যাবে,তখনই জানালার অপরপাশ থেকে চিরচেনা ব্যক্তিটি ওর মুখ চেপে ধরে বললো,’হানি.. হানি ভয় পেয়ো না।আমি তোমার দিগন্ত।প্লিজ প্লিজ নড়াচড়া করবে না।তাহলে মই ভে**ঙে নিচে পড়ে গিয়ে আমি অকালেই অ**ক্কা যাবো।”
#চলবে…
(আলহামদুলিল্লাহ আমাদের দেশ নতুন করে স্বাধীন হয়েছে।সত্যি আজ আমি এবং আমরা সবাই ভীষণ খুশি।সবার জন্য ভালোবাসা অবিরাম।গঠনমূলক মন্তব্য করবেন প্লিজ।হ্যাপি রিডার্স।)