#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ২১
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ
“দ্রুত মাস্ক পড়ে নাও।নইলে ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলো।”
“নিধি বিস্ময়ের দৃষ্টিতে নির্জনের দিকে তাকিয়ে বললো,’আমার সারপ্রাইজ টা কি আপনার পছন্দ হয় নি?আমি তো..
“যেটা বলছি সেটা করো,আর এখান থেকে চলো।জায়গাটা নিরাপদ নয়।’বলেই নির্জন দাঁড়িয়ে গেলো।নিধি এখনও ঠায় বসে থেকে,নির্জনের দিকে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল।কয়েক সেকেন্ড পর ওর চোখজোড়া আটকে গেলো সেই ছেলেগুলোর দিকে।ছেলেগুলো কে এভাবে তাকাতে দেখে নিধি বুঝে গেলো,নির্জন কেনো এই কথা বলেছে।নিধি খুশি হয়ে মনে মনে ভাবলো,’নির্জন কতটা কেয়ারিং।আমার ছোট ছোট বিষয়গুলো কতটা খেয়াল করে।তবে এটা তো ছোট কোনো ব্যাপার নয়।তাই হয়তো রেগে গেছে।’ভেবে নিধি তৎক্ষণাৎ ওড়না দিয়ে মুখ ঢাকল।তারপর ওরা দু’জন সেই জায়গা থেকে চলে গেলো।যাওয়ার আগে ঘাসগুলো কে জুতা দিয়ে মাটির সাথে পিষিয়ে দিয়ে যেতে ভুললো না নির্জন।”
“বোটানিক্যাল গার্ডেনের এরিয়া টা মোটামুটি বড়।নিধি আর নাদিয়া কলেজ ফাঁকি দিয়ে মাঝে মাঝে এখানে ঘুরতে আসতো।”
“নির্জন এবং নিধি কিছুদূর যাওয়ার পর ওরা একটা বেঞ্চে বসলো।নির্জন বললো,’এখানে ৫মিনিট বসো,আমি আসছি।’
নিধির কাছে শান্ত পরিবেশ টা ভালোই লাগছিলো।নিধি মাথা নাড়িয়ে সায় জানাতেই,নির্জন মুচকি হেসে চলে গেলো।”
“ঠিক ৫মিনিট পর নির্জন চলে এলো হাতে দুই টা হাওয়াই মিঠাই নিয়ে।নিধি তো এটা দেখে খুব খুশি হয়ে গেলো।নির্জন এগিয়ে দিতেই,মুহূর্তের মধ্যে নিধি ১টা হাওয়াই মিঠাই খেয়ে ফেললো।তারপর নির্জনের দিকে তাকিয়ে বললো,’একি আপনার টা খাচ্ছেন না কেনো?”
“নির্জন আবারও মুচকি হাসি উপহার দিয়ে বললো,’আমি বাইরের খাবার খুব বেশি পছন্দ করি না।আর এটাও তোমার জন্য এনেছি ডার্ক কুইন।”
“নির্জনের মুখে এহেন কথা শুনে নিধির খুশি দেখে কে।নিধি ছো মে**রে হাওয়াই মিঠাই নিয়ে প্যাকেট খুলে খেতে থাকল।সেদিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো নির্জন।মনে মনে অনেক কথা গোছালো।কিন্তুু এখন সবকিছু সিক্রেট রাখতে হবে।”
“খাওয়া শেষ করে নিধি বললো,’হাওয়াই মিঠাই আমার খুব পছন্দ।আপনি এটা কিভাবে জানলেন?”
‘চিঠিতে বলেছিলে।’
“ওহ।হ্যা..হ্যা মনে পড়েছে চিঠিতে বলেছিলাম।দেখেছেন আমার কি ভুলো মন?জানেন,আমার আরও অনেক কিছু পছন্দ।যেমনঃ ফাস্টফুড আইটেম,শপিং করা;
ফুল গাছের মধ্যে হাসনাহেনা,নয়নতারা,বেলি ফুল,কাঠগোলাপ;
আর ফলের মধ্যে-আম,লিচু,আতা ফল,বেদানা,স্ট্রবেরি.. আর মনে পড়ছে না।”
“নিধির মুখে ওর এতগুলো প্রিয় জিনিসের কথা শুনে হিংসারা যেনো নির্জন কে আকড়ে ধরেছে।রিমলেস চশমার ফাঁক গলিয়ে নিধির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’আমাকে তোমার কতটা পছন্দ ডার্ক কুইন?আমাদের কয়েকবার দেখা হলো।কই আমার সম্পর্কে তো একবারও কিছু বললে না?তাহলে কি ভেবে নেবো আমি ওই ফুল গাছ বা ফলের জায়গাও দখল করতে পারিনি?”
“নির্জনের কথা শুনে নিধির মুখ পুরো হা হয়ে গেলো।ভাবলো,’ঠিকই তো! লোকটা তো আমার সম্পর্কে অনেক কিউট কিউট কমেন্ট করেছে;আমি তো একবারও কিছু বলিনি।আমিও না ভীষণ আন-রোমান্টিক।’ভেবে নিধি নির্জনের চেহারার দিকে সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকালো।নির্জন এখনও মুখ গোমড়া করে আছে।তাকে দেখে মনে হচ্ছে এখানে কিছুক্ষণ আগে কাল বৈশাখী ঝড় হয়েছে।”
“নির্জনের মন খারাপ বুঝতে পেরে নিধির ও একটু মন খারাপ হলো।নিধি করুণ স্বরে বললো,’সরি.. সরি,সত্যি আমি একটা মাথা মোটা।চোখের সামনে এতো সুদর্শন একজন পুরুষ বসে আছে,আর আমি ওগুলো নিয়ে পড়ে আছি।”
“নিধির মুখনিঃসৃত ‘সুদর্শন’ কথাটি শুনে মুচকি হাসলো নির্জন।তার ডার্ক কুইন তাকে সুদর্শন বলেছে; আর কি চাই?কপালের কাছে আসা চুল গুলো ডান হাত দিয়ে উল্টিয়ে বললো,’থ্যাংকস।”
“নিধি মুচকি হেসে বললো,’আপনার চেহারা টা একদম ইনোসেন্ট।মনে হয় কিছুই বোঝেন না।অথচ আপনি খুব দুষ্টু হিহিহি।তবে আপনার চুলগুলো ও খুব ভালো লাগে,দেখলেই এলোমেলো করে দিতে ইচ্ছে করে।এতে আপনার কিউটনেস আরও বেড়ে যাবে।”
“নির্জন মুচকি হেসে মাথা এগিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,’ধরবে?ধরলে ধরতে পারো।আমি কিছু মনে করবো না।”
“উহুম আমি এই পরীক্ষায় কিছুতেই ফেল করতে চাই না।বিয়ের পর ধরবো।”
“নির্জন বুঝতে পারলো,নিধি সেদিনের ছাদের ঘটনা মনে করে কথা গুলো বললো।”
“নিধি আবারও বলে উঠলো,’আপনাকে ব্ল্যাক টি-শার্ট বা শার্টে দারুণ লাগে।আপনার উজ্জ্বল শ্যামরঙা মুখস্রি আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।সত্যি আপনাকে আজ ভীষণ হ্যান্ডসাম লাগছে।ওহ আরেকটা ইম্পর্ট্যান্ট কথা বলতে আমি ভুলেই গেছি।”
“কি বলতে ভুলে গেছো?”
“নিধি মুচকি হেসে চোখজোড়া নিচে নামিয়ে বললো,’চশমিস টাইপের ছেলেদের আমি খুব বেশি পছন্দ করতাম না।দেখলেই মনে হতো বোকা-বোকা,আর সারাদিন পড়াশোনা করে।কেমন যেন বিরক্ত লাগতো।কিন্তুু আপনাকে রিমলেস চশমা পড়া দেখার পর থেকে, আমার চয়েজ পাল্টে গেছে।চশমা পড়া অবস্থায় আপনার ইনোসেন্ট চেহারা টা আরও বেশি ইনোসেন্ট লাগে।সবমিলিয়ে আমার কাছে আপনি খুব সুদর্শন একজন পুরুষ।”
“নিধির শেষোক্ত প্রশংসায় মন ভরলো না নির্জনের।ভ্রু জোড়া কিঞ্চিৎ কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,’শুধু খুব সুদর্শন?সবচেয়ে সুদর্শন নয়?”
“নিধি খিলখিলিয়ে হেসে বললো,’এখন নয়,বিয়ের পর হবেন হিহিহি।’নিধির সহজ স্বীকারোক্তি।কিন্তুু ওর মন খোলা উত্তর টি অপছন্দ হলো নির্জনের।এতক্ষণের করা প্রশংসা গুলোতে নির্জন ঠিক যতটা খুশি হচ্ছিলো,শেষের কথাটি তে ততটাই মন খারাপ হয়ে গেলো।কারণ,নিধি তো জানে না যে নির্জন ওর প্রতি ঠিক কতটা পজেসিভ।”
“হঠাৎ ভেতর থেকে ‘মন’ বলে উঠলো,’এখন থেকেই তাকে কন্ট্রোল করো নির্জন।নইলে যেকোনো সময় হাত ছাড়া হয়ে যাবে।অপরপাশ থেকে ‘হৃদয়’ প্রতিবাদী স্বরে বললো,’নির্জন কন্ট্রোল ইউরসেল্ফ।সামান্য একটা শব্দের এদিক-সেদিক হওয়ায়,এতটা হাইপার হবে না।নইলে এতদিনের সব কষ্ট কয়েক সেকেন্ডে ভেস্তে যাবে।একবার তাকে পুরোপুরি নিজের করে পেয়ে যাও,তারপর তোমার আচরণে ধীরে ধীরে সে নিজেই তোমাকে বুঝতে শুরু করবে।আর একসময় দেখবে সেও তোমার মতো হয়ে যাবে।তাই ধৈর্য ধারণ করো।”
“হৃদয়ের বলা কথাগুলো নির্জনের কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হলো।অতঃপর ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে নিধি কে বললো,’আমি তোমাকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসি ডার্ক কুইন।আমি কখনোও বলতে পারব না,কেনো তোমাকে ভালোবাসি।তোমাকে ভালোবাসার কোনো কারণ নেই।যদি কোনো কারণ থাকে,তাহলে সেই ভালোবাসার মধ্যে স্বার্থপরতা লুকিয়ে থাকবে।এখন তুমি যদি মুমূর্ষু হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে যাও;তবুও বলবো আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।আমি পুরো তুমিটাকেই নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসি।তোমার কাছে
একটা রিকোয়েস্ট থাকবে,আমাদের বিয়ের পর জীবনে যত দুঃখ-কষ্ট,বাঁধা-বিপত্তি আসুক না কেনো;আমার হাত তুমি কখনোই ছাড়বে না।কথা দিতে পারবে ডার্ক কুইন?’বলেই নিধির দিকে মলিন দৃষ্টিতে তাকালো নির্জন।তার চোখে-মুখে কিছু হারিয়ে ফেলার ভয় স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।সেটা বুঝতে পেরে বিষন্ন লাগল নিধির।”
“নিধি বেঞ্চের ওপরে রাখা নির্জনের ডান হাতের ওপর আলতো করে নিজের হাত রেখে ভরসার সুরে বললো,’আমিও আপনাকে ভীষণ ভালোবাসি নির্জন।তাই তো আমার মতো একজন দস্যি মেয়ে একজন ছেলের কাছে নিজেকে সারা জীবনের জন্য নির্দ্বিধায় সপে দিতে চায়।আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি,আমি আপনার হাত কখনোই ছাড়বো না।আপনার হাত কে**টে গেলে, পা ধরে বসে থাকব।আর পা না থাকলে, আপনার শরীর নিয়ে থাকব।তবুও আপনাকে কিছুতেই ছাড়বো না।আপনি চাইলেও না।’ বলেই নির্জনের হাতের ওপর থেকে হাত উঠিয়ে,খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো নিধি।”
“নিধির হাসির ঝংকারে নির্জনের কর্ণগহ্বরে ও যেনো শীতল স্রোত ধারা বয়ে গেলো।অপরদিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,’Finally I was completely successful.I love you Dark Queen.You are my heart & soul forever.’
এই প্রথম তুমি নিজে থেকে আমায় স্পর্শ করলে।ধীরে ধীরে পা**গল করে দিচ্ছো আমায়।এর শাস্তিও তুমি পাবে।তবে অন্যভাবে।”
“নিধি মোবাইলে সময় দেখে জিহ্বায় আলতো করে কা**মড় দিয়ে ভাবলো,’এই রে দেড় ঘন্টা হয়েছে বাসা থেকে বেরিয়েছি।মা কে তো ২ঘন্টার কথা বলে বেরিয়েছি।বেশি দেরি হলে মা নিশ্চিত সন্দেহ করে বসবে।তাছাড়া বাসা থেকে বের হওয়ার আগে নাদিয়া কে তো বলিনি।উফফ.. নাদিয়ার বাচ্চা ফোনটা ভা**ঙার আর সময় পেলো না।এই সময় ওর সাপোর্ট খুব জরুরি ছিলো।ধুর..বিয়ের পর নির্জনের সাথে জমিয়ে প্রেম করবো।তখন তো আর কোনো ভয় থাকবে না;আর না থাকবে এতো এতো বেড়াজাল।’
ভেবে নিধি নির্জন কে বললো,’শুনুন,আমরা এখানে এসেছি প্রায় দেড় ঘন্টা হয়ে গেলো।আপনার সাথে এই সময়টুকু সত্যি খুব সুন্দর কে**টেছে।আশা করি আগামী দিনগুলোতে আমরা আরও সুন্দর সময় কা**টাবো।’বলেই মুচকি হাসলো নিধি।পরক্ষণেই ভাবলো,’ছিঃ আমি কি ঠোঁট কা**টা হয়ে গেছি।ফটফট করে মনের জমানো কথাগুলো বলে দিচ্ছি।উফফ.. মুখে লাগাম দিতে হবে।নইলে সব দুর্বলতা প্রকাশ পেয়ে যাবে।’ভেবে গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,’এখন আমাকে বাসায় যেতে হবে।নইলে মা খুব বকবে।তাহলে আমরা উঠি হ্যা?”
“নিধির চলে যাওয়ার কথা শুনে মুহূর্তেই নির্জনের হাসি মুখ টা চুপসে গেলো।এখন চাইলেও এই মানবীকে সে বেঁধে রাখতে পারবে না।তাই অগত্যা অনুরোধ করে কোনো লাভ নেই।তবে সময় টা যদি আরও দীর্ঘ হতো,তাহলে হয়তো দু’টি মনের সুপ্ত অনুভূতি গুলো আরও গভীর হতো।’ভেবে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো নির্জন।ম্লান হেসে বললো,’চলো যাওয়া যাক।”
—————
“এদিকে তপ্ত গরমে তোহা ২ টা স্ট্রবেরি ফ্লেভারের কোণ আইসক্রিম খেয়ে, ঠোঁটের এদিক-সেদিক মাখিয়ে ফেলেছে।মাহির তোহার দিকে ফ্যালফ্যাল করে বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে, কিছুক্ষণ পরপর ঠোঁট মোছার জন্য পকেট থেকে টিস্যু বের করে এগিয়ে দিচ্ছে।তোহা টিস্যু দিয়ে ঠোঁট মুছে, আবারও পরম সুখে আইসক্রিম খেতে থাকল।”
“তোহা কে এভাবে খেতে দেখে মাহির ভাবলো,’প্রথমে ২ প্যাকেট ডংডং চিপস কিনে আনতে বললো।সেটা খাওয়ার পর,৪টা ডেইরি মিল্ক কিনতে বললো।সেগুলো খাওয়ার পর,২ টা কোণ আইসক্রিম কিনে আনতে বললো।সেগুলোও একাই খেয়ে নিলো।অথচ পাশে যে একজন অসহায় ডাক্তার ক্ষুধার্ত দৃষ্টিতে হবু বউয়ের দিকে তাকিয়ে আছে,সেদিকে তো দেখছি তার কোনো নজর নেই।এটা কোনো কথা হলো?আর বারবার ঠোঁটে আইসক্রিম লেগে যাচ্ছে, সেগুলো আবার চেটেপুটে খাচ্ছে।এগুলো দেখে আমার মনে বারবার যে দুষ্টু ইচ্ছে জাগছে,সেটা তো সে খেয়ালই করছে না।এই তপ্ত গরমে নিজেকে কিভাবে কন্ট্রোল করছি, সেটা শুধু আমি জানি।ধুর..এর থেকে একটা ঠান্ডা ড্রিংকু কিনে নিলে খুব ভালো হতো।এভাবে চোরের মতো তাকিয়ে থাকতে হতো না।’ভেবে মাহির তোহার দিকে অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।”
“আইসক্রিম খাওয়া শেষ করে তোহা মাহিরের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বললো,’থ্যাংক ইউ সো মাচ।আমার ফেভারিট খাবার গুলো কিনে দেওয়ার জন্য।কিন্তুু আপনি তো কিছুই খেলেন না।হসপিটালের ক্যান্টিন থেকে খেয়ে এসেছেন?”
“তোহার এহেন কথা শুনে মাহিরের চুপসানো মুখ টা আরও চুপসে গেলো।মিনমিনিয়ে বললো,’এতক্ষণে আমার খবর নেওয়ার সময় হয়েছে?যাক শেষ পর্যন্ত তো খবর নিলে।আমি তো ভেবেছিলাম, এই গাছগুলোর মতো আমাকেও গাছ ভেবে একা একা খাবার খাচ্ছো।আমি সকালে নাস্তা করার পর আর কিছুই খাই নি।ভেবেছিলাম, তুমি আর আমি একটা রোমান্টিক পরিবেশে রোমান্টিক কথা বলবো,আর রোমান্টিক ভাব নিয়ে খাবো।কিন্তুু তুমি তো একাই…যাক এইসব কথা বাদ দাও।তোমার মন ভরেছে,এতেই আমার শান্তি।”
“মাহিরের শেষ বাক্যটি শুনে খুব লজ্জা পেলো তোহা।ভাবলো,’ইশশ খাওয়ার সময় তাকে জিজ্ঞেস করা উচিত ছিলো।আমিও না..সকাল থেকে ক্ষুধার জ্বালায় একটার পর একটা ভুল করেই চলেছি।’ভেবে মাহিরের দিকে অপরাধীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’আসলে আমি সকালে নাস্তা না করে আপুর সাথে বেরিয়েছি।মা অনেকবার ব্রেকফাস্ট করতে বলেছিলো।কিন্তুু এখানে আসার কথা শুনে কিছু সময়ের জন্য ক্ষুধারা পালিয়ে গিয়েছিলো।আ’ম সরি..আমি আসলে বুঝতে পারিনি।নেক্সট টাইম থেকে এমন ভুল আর হবে না।প্লিজ আপনি কিছু খেয়ে নিন।আর রোমান্টিক কথা সামনা-সামনি শুনতে আমার খুব লজ্জা লাগে।ফোনে শুনতে খুব ভালো লাগে।তাই বাসায় গিয়ে ফোনে কথা বলবো।প্লিজ রাগ করবেন না।”
“তোহার কথা শুনে মাহিরের সব মন খারাপ চলে গেলো।উচ্চস্বরে হেসে বললো,’যাক অবশেষে তুমি স্বীকার করলে, যে আমার রোমান্টিক কথা গুলো তোমার ফোনে শুনতে খুব ভালো লাগে।তবে সেটা শুধু কিছুদিনের জন্য।বিয়ের পর থেকে তুমি না বললেও,আমি কিন্তুু মৌখিক এবং প্র্যাক্টিক্যালি দু’ভাবেই রোমান্স করবো।”
“মাহির যে এমন দুষ্টু টাইপ কথা বলে তোহা কে লজ্জা দিবে,সেটা ও ভাবতে পারে নি।মাহিরের দিকে কটমটিয়ে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে,ঠিক তখনই ফোনে রিংটোন বেজে উঠলো।পার্স থেকে ফোন বের করে দেখলো,’নিধি কল দিয়েছে।তোহা কল রিসিভ করতেই,নিধি ওকে গেটের সামনে আসতে বললো।’তোহা ‘হ্যা’ সূচক জবাব দিয়ে ফোন রেখে দিলো।”
” মাহিরের দিকে তাকিয়ে কটমটিয়ে বললো,’আমাকে দেওয়া লজ্জার প্রতিশোধ আমি নেবোই নেবো মি.মাহির এহসান;নইলে আমার নাম ও তোহা না হুহ..।আপু গেটের সামনে যেতে বলছে,চলুন।’বলেই উঠে গেলো তোহা।”
“মাহির মুচকি হেসে তোহার পেছনে হাঁটতে থাকল।তোহা কে এত জোরে পা চালাতে দেখে,মাহির রসিকতা করে বললো,ধীরে ধীরে হাঁটুন ম্যাম।এখানে কোনো অলিম্পিকের প্রতিযোগিতা চলছে না।মাঝপথে পড়ে গেলে শেষমেশ আমার কোলেই সারাজীবন চড়তে হবে,তখন চাইলেও আমার থেকে ছাড়া পাবেন না হাহাহাহা।”
“মাহিরের রসাত্মক কথা শুনে তোহা পেছনে তাকিয়ে মুখ ভেং**চি কে**টে বললো,’দেখা যাবে কে কাকে কোলে চড়ায় হুহ..আমিও অনেক স্ট্রং।’বলেই আবারও দ্রুত পা ফেলে হাঁটতে থাকল।”
————
“নির্জন,নিধি,মাহির এবং তোহা গেটের সামনে আসতেই দেখলো,৬-৭জন পুলিশ ৬জন যুবক কে হ্যান্ডকাপ পড়িয়ে, টিকিট কাউন্টারের সামনে লাঠি দিয়ে উত্তম-মধ্যম দিচ্ছে।আর কিছু চলিত ভাষায় বকছে।ছেলেগুলো অপরাধীর ন্যায় মাথা নিচু করে আছে।মনে হচ্ছে ওরা কোনো খু**ন করে এসেছে।”
“পুলিশ অফিসার টিকিট কাউন্টারের কর্তৃপক্ষ কে কঠোর কন্ঠে বলছে,’আপনাদের কি এখানে বসে বসে সিগারেট ফুঁকতে দেওয়া হয়েছে?আপনাদের কে ডিজিটাল ডিভাইস দেওয়া হয়েছে প্রত্যেক টুরিস্ট কে চেক করার জন্য।অথচ আপনারা এখানে বসে বসে আঙ্গুল চুষছেন।আর এদিকে নর**পি**শাচের দল গুলো ই*য়াবা,ফেন**সিডিল পকেটে নিয়ে গার্ডেনে ঘোরাফেরা করছে।আজকেই আপনাদের চাকরি বাতিল করার ব্যবস্থা করছি।যেনো আজকের ভুল থেকে আপনাদের উচিত শিক্ষা হয়।”
“পুলিশ অফিসারের কাটকাট কথা শুনে লোকটি অসহায় স্বরে বলে উঠলো,’স্যার..স্যার দয়া করে আমাদের চাকরি নিয়ে টান দিবেন না।নইলে এই ঢাকা-শহরের মতো জায়গায় বউ বাচ্চা নিয়ে ভিক্ষা করা ছাড়া উপায় থাকবে না।আমি কথা দিচ্ছি,এরপর আমরা সবাই এই বিষয়ে কঠোর ভাবে তৎপর থাকবো।প্রতিটি টুরিস্ট কে সূক্ষ্মভাবে চেক করে প্রবেশ করতে দিবো।এই ভুল আর দ্বিতীয় বার হবে না।প্লিজ স্যার এই একটা সুযোগ দিন।’
‘লোকটির সাথে সেখানে কর্মরত আরও ৩জন লোক হাত জোর করে বললো,’স্যার এইবারের মতো আমাদের ক্ষমা করে দিন।এরপর থেকে আর কোনো অভিযোগ করার সুযোগ দিবো না,প্লিজ স্যার।”
“লোকগুলোর কথা শুনে পুলিশ অফিসারের মনে কিছুটা দয়া হলো।ভাবলো,’বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের যেই উর্ধ্বগতি;উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবার গুলোও প্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে।সেখানে তারা তো আরও অসহায়।’
ভেবে কন্ঠে গম্ভীর ভাব বজায় রেখে বললো,’হুম এটাই শেষ সুযোগ।নেক্সট টাইম এমন কিছু হলে,আপনাদের কেও জেলে ভরতে দু’বার ভাববো না।’বলেই ছেলেগুলো কে টেনে-হিঁচড়ে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে গেলো।”
“এতক্ষণে গেটের সামনে টুরিস্ট সহ রাস্তার মানুষগুলো ভীর জমিয়েছে।সেদিকে তাকিয়ে পৈ**শাচিক আনন্দ পেলো নির্জন।ডেভিল হেসে কিছুক্ষণ আগের কথা ভাবলো।”
“নিধি কে নিয়ে সেখান থেকে চলে যাওয়ার সময় নির্জন ছেলেগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখলো,দু’জনের হাতে ফেন**সিডিলের ২টা প্যাকেট।সেটা দেখে নির্জনের মনে দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেলো।কষ্ট করে আর অন্যভাবে প্রতিশোধ নেওয়ার প্ল্যান করতে হলো না।নিধি কে বসিয়ে রেখে,৫মিনিট পর আসার কথা বলে; সেখানে গিয়ে ছেলেগুলোর আড়ালে, দূর থেকে মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ওদের ফেন**সিডিল সহ হাসি মুখের ক্যাপচার ধারন করলো।অতঃপর 999 এ ডায়াল করে পুলিশ কে সব ইনফরমেশন দিলো।তারপর পুলিশ অফিসার তাকে পার্সোনাল নাম্বার দিলে,সেই নাম্বারের হোয়াটসঅ্যাপে ৩টা ক্লিয়ার ফটো পাঠিয়ে দিলো।তৎক্ষণাৎ পুলিশ তাদের ফোর্স নিয়ে এখানে চলে এলো।তারপর নির্জনের আশার চেয়েও বেশি ড্রামা করলো পুলিশ অফিসার।পুলিশ তার ধামাকাদার পারফরম্যান্স দেখালো।’ভেবে কপালে চার আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করে আবারও ডেভিল হাসলো নির্জন।”
“মাহির এবং তোহা বাকিদের মতো অবাক দৃষ্টিতে সব ঘটনা পর্যবেক্ষণ করলো। নিধি নির্জন কে বললো,’এরা তো সেই ছেলেগুলো,যারা তখন আমার দিকে ওইভাবে বা**জে নজরে তাকিয়েছিলো তাই না?হিহিহি একবারে উচিত শিক্ষা হয়েছে।এভাবেই বখাটের দলগুলো কে শাস্তি দিলে,দেশে এতো এতো মেয়ের সম্ভ্রমহানি হতো না।”
“নির্জন নিধির দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বললো,’মেয়েদের উচিত রাস্তা-ঘাটে শালীনতা বজায় রেখে চলা।স্পর্শকাতর অঙ্গগুলোকে সুন্দর ভাবে পর্দার আড়ালে ঢেকে রাখা।যদিও আজকাল পর্দানশীল নারীরাও এই জা***র দের কাছ থেকে ছাড় পায় না।শুনশান রাস্তায় কোনো মধ্যবয়স্ক নারীকে দেখলেও হিং**স্র পশুর মতো ঝাঁপিয়ে পড়তে দ্বিধাবোধ করে না।যাইহোক,নেক্সট টাইম থেকে আমার কথার বিপরীত কাজ করবে না।একক ভাবে ছেলেদের দোষ দিলে হবে না।ছেলেদের অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে উত্তেজনা এবং বিরূপ আকর্ষণ সৃষ্টি করার জন্য অনেকাংশে মেয়েরাও শতভাগ দায়ী।মেয়েরা রাস্তা দিয়ে পোশাক উল্টে-পাল্টে নিজেদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দেখিয়ে হাঁটবে;আর ছেলেরা অন্ধের ন্যায় চোখ বন্ধ করে থাকবে,এটা ভাবা নিছক বোকামি ছাড়া কিছুই না।মেয়েদের শালীনতার বিষয়ে পরিবার ও সমাজ কে সচেতন হওয়া অতীব জরুরি।”
#চলবে…
(দিগন্ত এবং নাদিয়ার পার্ট আগামীকাল আসবে।গঠনমূলক মন্তব্য করে পাশে থাকবেন।সবার জন্য ভালোবাসা অবিরাম।)