#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ২২
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ
[কঠোর থেকে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।]
“মেয়েদের শালীনতার বিষয়ে পরিবার ও সমাজ কে সচেতন হওয়া অতীব জরুরি।”
“নির্জনের বলা শেষ বাক্যটি মনে হয় হৃদয়ের এক কোণে গিয়ে লাগল নিধির।কত সুন্দর করে গুছিয়ে এবং বুঝিয়ে কথাগুলো বললো নির্জন।ভাবলো,’সত্যি সব পুরুষ খারাপ না।কিছু কিছু ব**খাটেদের জন্য, ভালো মানুষগুলো কে বিশ্বাস করতেও ভয় লাগে।এই যে নির্জন কতবার আমাকে স্পর্শ করার সুযোগ পেয়েছে,কিন্তুু সুযোগের নেতিবাচক ব্যবহার একবারও করেনি।সত্যি এমন একজন মানুষ কে জীবনে পেয়ে জনম সার্থক হলো।’ভেবে নিচের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে মুচকি হাসলো নিধি।মন মহুয়ায় প্রিয়তম প্রেমিকের ইতিবাচক দিকগুলো যেনো ডানা ঝাপটে উড়ে বেড়াচ্ছে।আহা! কি আনন্দ আকাশে বাতাসে।”
“নির্জনের সাথে আরও কয়েক মিনিট কথা বলে,সেখান থেকে বিদায় নিলো নিধি এবং তোহা।যাওয়ার সময় তোহা মাহিরের দিকে তাকাতেই,মাহির তৎক্ষণাৎ চোখ টিপে হাত কানের কাছে নিয়ে বৃদ্ধাঙ্গুল এবং কনিষ্ঠ আঙ্গুল উঠিয়ে ইশারায় ফোন দিতে বললো।সেদিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসলো তোহা।চোখের পলক ফেলে ‘হ্যা’ সূচক মাথা নেড়ে সেখান থেকে প্রস্থান করলো।”
———–
“নাদিয়া রুমে বসে দিগন্ত কে নিয়ে ডায়েরি লিখে,সেগুলো বিড়বিড় করে পড়ছিলো।ঠিক তখনই দরজায় তীব্র আওয়াজে ঠকঠক আওয়াজ হলো।নাদিয়া ডায়েরিটা বালিশের নিচে রেখে দরজা খুলতেই,নাদিয়ার ফুফু সেলিনা বেগম চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে নাদিয়া কে জড়িয়ে ধরলো।বিলাপ করে বলতে শুরু করলেন,
‘গেলো রে..সব শেষ হয়ে গেলো।তুই আমাকে ক্ষমা করে দিস মা।”
“সেলিনা বেগমের এহেন কথায় নাদিয়া তো বিস্ময়ের শীর্ষে পৌঁছালো।নিজের ফুফুর পিঠে হাত বুলিয়ে বললো,’কি হয়েছে ফুফু?কি হয়েছে?আর তুমি আমার কাছে এভাবে ক্ষমা চাইছো কেনো?”
“সেলিনা বেগম নাদিয়া কে ছেড়ে ফ্লোরে বসে মাথায় হাত রেখে বললেন,’আমার ইহান নেই রে..”
“চকিত নয়নে তাকালো নাদিয়া।’ইহান নেই’ কথাটি যেনো সরাসরি নরম হৃদয়ে গিয়ে বিষাক্ত তীরের ন্যায় বিঁধলো।নেত্রকোণে নোনা জল চলে এলো।খুব কষ্টে কণ্ঠনিঃসৃত হয়ে বেড়িয়ে এলো,’ক.. ক.. কি বলছো ফুফু,ইহান ভাইয়া নেই মানে?”
“সেলিনা বেগম এখনও মাথায় হাত দিয়ে মলিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।তার চোখ জোড়া কিছুটা ফুলে আছে।দেখেই বোঝা যাচ্ছে,আরো আগেই কান্নাকা**টি করেছে।নাদিয়া ফের একই প্রশ্ন করলো।কিন্তুু কোনো জবাব এলো না।তখনই নাদিয়ার মা রুনা বেগম এসে, সেখানে মলিন মুখস্রি নিয়ে হাজির হলেন।নাদিয়ার কাছে এসে ম্লান স্বরে বললেন,’তোর সাথে আমরা অনেক অন্যায় করেছি রে মা।আগেই যদি তোর কথা মেনে নিতাম;তাহলে এই দিন আমার দেখতে হত না।আমাকে আর তোর বাবা কে ক্ষমা করে দিস মা।”
“কি হয়েছে মা?কথার মধ্যে ঘোরপ্যাঁচ না রেখে সরাসরি বললেই তো হয়।ইহান ভাইয়ার কি হয়েছে?আর তুমি হঠাৎ এই ধরনের কথা বলছো কেনো?'(উত্তেজিত স্বরে বললো নাদিয়া।)”
“নাদিয়ার মা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,’ইহান আজ খুব ভোরে চলে গেছে।ও আবারও কানাডা ফিরে যাবে।সেখানে নাকি ও ‘নোভা’ নামে একজন বিদেশিনী কে বিয়ে করেছে।মূলত এটা জানাতেই ও বাংলাদেশে এসেছে।গতকাল রাতে আমাদের কে সবকিছু বলেছে।তারপর তোর বাবা ওকে কয়েকটা কটু কথা শুনিয়েছে।আর আজ খুব ভোরে ও আমাদের না জানিয়ে চলে গেছে।তোর কপাল টা পু**ড়লো রে মা।’বলে কান্না শুরু করে দিলেন রুনা বেগম।”
“নাদিয়া যা বোঝার বুঝে গেলো।ইহান যে বিয়ে টা ভা**ঙার জন্য ডাহা মিথ্যা কথা বলেছে,এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়।কারণ গতকাল নাদিয়ার কাছে এসে ইহানের রাতের বলা কথাগুলো কতটা খাঁটি ছিলো,সেটা ইহানের গভীর চাহনি বলে দিয়েছে।এই মুহূর্তে নাদিয়ার বুক চিঁড়ে কান্না আসছে।নাদিয়া নিজেকেই মনে মনে প্রশ্ন করলো,’হায়..ভালোবাসা কেনো এত অসহায়?”
“সেলিনা বেগম বসা থেকে দাঁড়িয়ে শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখের পানি মুছে,রুনা বেগম কে বললেন,’ভাবি আমি আজকেই আমাদের চট্টগ্রামের বাড়িতে চলে যাবো।সেখানেই ইহান গিয়েছে।ওর সাথে আমার অনেক বোঝাপড়া আছে।আর আমার ভাই কে বলে দিবেন,সে যেনো আমাকে ওয়াদা ভঙ্গ করার জন্য ক্ষমা করে দেয়।আমি হয়তো আর তার সামনা-সামনি হতে পারবো না।আপনিও আমাকে ক্ষমা করে দিবেন।’তারপর নাদিয়ার দিকে তাকিয়ে,ওর মাথায় স্নেহের পরশ বুলিয়ে দ্রুত পায়ে প্রস্থান করলেন।নাদিয়া এবং রুনা বেগম সেদিকে অনুভূতিহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।”
“নীরবতা ভে**ঙে রুনা বেগম বললেন,’তুই কি দিগন্তের সাথে একবার কথা বলবি?তাহলে ওর বাবা-মায়ের কাছে আমি আর তোর বাবা মিলে তোদের দু’জনের বিয়ের কথা বলতে যাবো এবং তাদের কাছে হাত জোর করে ক্ষমা চাইবো।এতদিন আমরা চোখ থাকতেও অন্ধ ছিলাম।”
“আকস্মিক রুনা বেগমের মুখে অপ্রত্যাশিত কথাটি শুনে,মুহূর্তেই নাদিয়ার মন খুশিতে নেচে উঠলো।ভাবলো,’এই পৃথিবীতে ভালোবাসার মানুষ কে একান্ত করে পাওয়ার মতো সুখ আর নেই।কিন্তুু সবাই চাইলেই সবকিছু পায় না।হয়তো সৃষ্টিকর্তা তার ভাগ্যে সেটা লিখে রাখেনি।নইলে, ইহান ভাইয়া এতো ভালোবাসার পরেও কেনো আমাকে আপন করতে পারলো না?কত মানুষ তো ভালোবাসে।কিন্তুু বিয়ে হয় অন্য কারো সাথে।সত্যি ইহান ভাইয়ার এই ঋণ আমি আর দিগন্ত কখনো শোধ করতে পারবো না।’ভেবে নাদিয়া হাসি মুখে বললো,’ঠিকাছে মা; আমি আজকেই তোমার ফোন থেকে দিগন্ত কে কল করে সবকিছু বুঝিয়ে বলবো।থ্যাংক ইউ,থ্যাংক ইউ,থ্যাংক ইউ সো মাচ মা।দেরি করে হলেও আমাদের বিষয়টি বুঝতে পেরেছো।’বলেই রুনা বেগম কে জড়িয়ে ধরলো।কতদিন পর রুনা বেগমের সামনে মন খুলে হাসলো নাদিয়া।নিজের মেয়ের মন খোলা হাসি দেখে রুনা বেগম ও হেসে উঠলেন।”
——-
“রাতে তোহা কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে কানের ওপর ফোন রেখে মাহিরের সাথে কথা বলছে।মাহির এমন ভাবে কথা বলছে যেনো চোর-পুলিশ খেলছে।মাহির ফিসফিস করে বললো,’স্বপ্নচারিনী দেশ যেহেতু নতুন করে স্বাধীন হয়েছে,সেই আনন্দে একটা কবিতা শুনবে?”
“তোহা কটমটিয়ে বললো,’এতদিন পর?”
“বেশিদিন হয় নি।আচ্ছা বাদ দাও..এখন বলো কবিতা শুনবে?আমি কিন্তুু এখন হটি-নটি মুডে আছি।”
“তোহা মিটমিট করে হেসে বললো,’আপনি এমন ফুসুরফাসুর করে কথা বলছেন কেনো?আপনার পেছনে পুলিশ ধাওয়া করেছে নাকি?”
“মাহির মুচকি হেসে বললো,’আরে নাহ।হটি-নটি মুডে থাকলে আমার ভয়েস অটোমেটিক এমন হয়ে যায়।”
“ছিহঃ কি নি*র্লজ্জ।আরেকটু জোরে কথা বলুন।লাউডস্পিকারে দিলে আপু শুনে ফেলবে।তাই একটু জোরে বলুন।”
“মাহির কন্ঠস্বর একটু বাড়ালো।অতঃপর বললো,
“Hug me
But don’t let go
I want you to stay
I want you to know
I need you with me
You make me feel bright
So just hug me
Right through the night..”
“মাহির আরও বলতে যাবে, তার আগেই তোহা উত্তেজিত স্বরে বললো,’আরে আরে..আমি ভেবেছিলাম দেশ স্বাধীন হয়েছে বলে আপনি বাংলা কবিতা শুনাবেন।অথচ আপনি দেখছি ইংরেজি তে হাগ-টাগ শুরু করেছেন।”
“মাহির নিচু স্বরে বললো,’আরে পুরো কবিতাটাই তো বলতে দিলে না।কি ফিলিংস নিয়ে কবিতা আবৃত্তি করছিলাম।আর তুমি তার ১২টা বাজিয়ে দিলে।আচ্ছা সমস্যা নেই ফুলসজ্জার রাতে পুরো কবিতাটা সম্পূর্ণ করবো,আর তারপর…
“মাহির…আপনি থামবেন?আমি কিন্তুু ফোন রেখে দিবো।লু**চু ডাক্তার সবসময় নেগেটিভ কথা বলার ধান্দায় থাকে।”
“ছিঃ ছিঃ ছিহ! কিছু না করেই এত বড় ভয়ং**কর একটা উপাধি দিয়ে দিলে?আমার চরিত্র বিশুদ্ধ পানির মতো পবিত্র।আর ওগুলো তো তোমার সাথে করবো বলে জমিয়ে রেখেছি।আচ্ছা শোনো, আমি ভেবে রেখেছি ফুলসজ্জার বিছানায় তুমি যখন ঘোমটা দিয়ে গুটিসুটি হয়ে বসে থাকবে,তখন আমি তোমার সামনে এক বাটি রসমালাই নিয়ে যাবো।তারপর আগে সেটা আমার মুখে নিবো,তারপর বাকি অর্ধেক টা তুমি আমার মুখ থেকে নিবে।ব্যাস হয়ে যাবে আমাদের মিষ্টি মিষ্টি লিপ কিস।এক ঢিলে দুই পাখি মা**রা হবে।মিষ্টি মুখ ও করা হবে; আবার লিপ কিস ও করা হবে,সেই সাথে তোমার লজ্জা টাও কমে যাবে..আর তারপর ধীরে ধীরে তোমার শাড়ি…”
“আর কিছু বলতে পারলো না মাহির তার আগেই তোহা ফোন কে**টে দিলো।মাহির বিস্ময়ের দৃষ্টিতে ফোনের দিকে তাকালো।মৃদুস্বরে বললো,’যাহ হটি-নটি মুডটাই নষ্ট করে দিলো।একবার কাছে পেয়ে নেই তারপর দেখাবো মজা।’বলেই ফোনের ওয়ালপেপারে থাকা তোহার লাজুক মুখ খানার ছবিটিতে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ালো।মুচকি হেসে বললো,’তোমাকে ছাড়া একেকটা দিন,একেকটা ক্ষণ যে আমার কা**টাতে কতটা কষ্ট হচ্ছে,সেটা কিভাবে বোঝাবো তোমায় স্বপ্নচারিনী?”
“এদিকে ফোন কে**টে বুকে হাত দিয়ে তোহা ঘনঘন নিঃশ্বাস ছেড়ে ভাবলো,’হায়..একটু হলেই মনে হয় দম টা ফেটে যেতো।কি বেহায়া..একটুও লজ্জা নেই।ঠোঁট কা**টা লোক।যা আসছে মুখে বলে ফেলছে।
এদিকে আমি যে লজ্জায় মূর্ছা যাচ্ছি, সেদিকে তার কোনো হুঁশ নেই।সাদা মূলা কোথাকার!’বলেই কোলবালিশে মুখ গুজে নিঃশব্দে হাসলো তোহা।”
———-
“বেলকনির দোলনায় বসে নির্জনের সাথে কথা বলছে নিধি।নির্জন কত সুন্দর করে কথা বলে,কত গুছিয়ে কথা বলে।এই মানুষটির মুখনিঃসৃত প্রতিটি বাক্য প্রেমে পড়ার মতো।
নিধির এখন ভীষণ আফসোস হচ্ছে।ভাবছে,’ইশশ আরেকটু আগে প্রেমে পড়লে কি হতো?”
“নিধির ভাবনাচ্ছেদ ঘটলো নির্জনের কথায়।নির্জন বললো,’ডার্ক কুইন একটা গান শুনবে?”
“নিধি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,’আপনি গান গাইতে পারেন?”
“হুমম পারি তো।গিটার বাজিয়ে গাইবো।শুনবে?”
“এক্সাইটেড হয়ে গেলো নিধি।খুশি হয়ে বললো,’হুম অবশ্যই.. অবশ্যই।”
“নির্জন মুচকি হেসে বললো,’ ওকে শোনাচ্ছি।গান টা আমার খুব প্রিয়।শুধু তোমার জন্য ডেডিকেট করলাম।’বলেই গিটারে টুংটাং আওয়াজ তুললো নির্জন,
🎶Khamoshiyaan Aawaz Hain,
Tum Sunne To Aao Kabhi,
Chhu Kar Tumhe Khill Jayengi,
Ghar Inko Bulao Kabhi,
Bekarar Hain Baat Karne Ko,
Kehne Do Inko Zara…
Khamoshiyaan.. Teri Meri Khamoshiyaan,
Khamoshiyaan.. Lipti Hui Khamoshiyaan..🎶
“আর গাইলো না নির্জন।নিধি চোখজোড়া বন্ধ করে গান শুনছিলো।মনে হচ্ছিলো,চোখের সামনে নির্জন বসে আছে।আর চশমার ফাঁক গলিয়ে নিধির দিকে গভীর চাহনি নিক্ষেপ করে হাস্কি ভয়েসে একের পর এক লাইন গেয়ে চলেছে।”
“নির্জন বললো,’ডার্ক কুইন কেমন হলো গান টা?”
“ধ্যান ভা**ঙলো নিধির।নিজের ভাবনার কথা ভেবে মুচকি হেসে বললো,’উফফ দারুণ গেয়েছেন।এক কথায় অসাধারণ।মনে হচ্ছে লাইভ পারফরম্যান্স দেখছিলাম।আপনার যে এতো মেধা আছে আগে তো বলেন নি?”
“নির্জন ফোনের অপরপাশ থেকে হাই ভলিউমে কিস করে বললো,’আরও অনেক মেধা আছে।যখন পুরোপুরি আমার হয়ে যাবে,তখন শোনাবো+দেখাবো।আরেকটু অপেক্ষা..একটুউউ….
“নির্জন চুমু দিয়েছে।ইশশ কি অনুভূতি!বুকে ধুকপুকানি শুরু হয়ে গেছে নিধির।এই মুহূর্তে কল না কা**টলে নিধিও হয়তো অঘটন বাঁধিয়ে ফেলবে।’ভেবে গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,’নির্জন ফোন টা রাখি।খুব ঘুম পাচ্ছে।”
“নির্জনের খুব মন খারাপ হলো।স্নায়ুতন্ত্র গুলো রাগে যেনো এলোমেলো হতে লাগল।বিরক্ত হয়ে ভাবলো,’আবারও লজ্জা পাচ্ছে ডার্ক কুইন?আই অলসো হেট ইট!’
অতঃপর চোখ-মুখ শক্ত করে ফোনের দিকে তাকিয়ে আবার ভাবলো,
‘মাত্র ২৩মিনিট কথা বলেছি ডার্ক কুইনের সাথে।এখনই এতো ক্লান্ত!সামনা-সামনি না জানি কি বেহাল দশা হবে।তখন তো ডার্ক কুইনের কোনো কথা শুনবো না আমি।ইশশ…সময় টা যেনো ফুরাতেই চায় না।’ভেবে দুষ্টু হাসলো নির্জন।
ফোনের অপরপাশ থেকে ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে আবারও একটা চুমু দিয়ে বললো,’ওকে ডার্ক কুইন গুড নাইট।আর হ্যা, স্বপ্ন শুধু আমাকে নিয়ে দেখবে।অন্য কিছু নিয়ে নয়।ওকে?”
“নির্জন আরেকবার চুমু দেওয়াতে নিধির হার্টবিট বেড়ে গিয়েছিলো।কিন্তুু শেষের কথায় হার্টবিট যেনো কমে স্থির হয়ে গেলো।অকপটে প্রশ্ন করলো,’স্বপ্ন তো সবসময় নিজের ইচ্ছা তে দেখা যায় না।অনেক সময় আমরা যা ভাবি সেটা দেখি না;উল্টো টা দেখি।”
“নির্জন দৃঢ়তার সাথে বললো,’উহুমম আমি তো কখনোও উল্টোটা দেখি না।তোমাকে ভালোবাসার পর থেকে তোমাকে নিয়ে ভাবি,আর প্রতি রাতে তোমাকেই স্বপ্ন দেখি।কারণ আমার বাহ্যিক মন এবং অবচেতন মনে তোমাকে পুরোপুরি গেঁথে নিয়েছি।তুমি হয়তো করো নি,তাই এমন হয়।”
“নির্জনের অদ্ভুত যুক্তিতে হার মানলো নিধি।নিচু স্বরে বললো,’ওকে.. আমিও চেষ্টা করবো আপনাকে আমার বাহ্যিক মন এবং অবচেতন মনে গেঁথে নেওয়ার।গুড নাইট।”
“নিধির সহজ স্বীকারোক্তি শুনে নির্জনের মন পুলকিত হলো।ফোনের অপরপাশ থেকে এইবার আরও গভীরভাবে চুমু দিলো।হাস্কি ভয়েসে বললো,’ভালোবাসি তোমায়;ভীষণ ভালোবাসি ডার্ক কুইন।”
“নিধি এইবার সত্যি খুব লজ্জা পেলো।মুচকি হেসে কিছু না বলেই ফোন কে**টে দিলো।মনে মনে ভাবলো,’লোকটা আমায় সত্যি খুব তাড়াতাড়ি পা**গল করে দিবে উফফ!”
———-
“কে**টে গেলো আরও ৩টি দিন।৩দিনে আর ৫টি সাধারণ পরিবারের মতোই নির্জন,নিধি,তোহা,মাহির,দিগন্ত এবং নাদিয়াদের পরিবারেও ঘটে গেছে অনেক কিছু।”
“নাদিয়া দিগন্ত কে সবকিছু বলার পর দিগন্ত খুশিতে লুঙ্গি ডান্স দিয়ে, তৎক্ষণাৎ নির্জন কে ফোন করে সবকিছু জানায়।প্রিয় বন্ধুর খুশিতে নির্জনও খুব খুশি হয়।দিগন্ত তার বাবা-মা কে সবকিছু বুঝিয়ে বলার পর,তারা নাদিয়াদের বাসায় তৃতীয় বার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যেতে অসম্মতি জানায়।পুরনো দিনের অপমান তারা এখনও ভুলতে পারে নি।কিন্তুু তাদের সব রাগ-অভিমান দিগন্তের মলিন চেহারা এবং ক্লান্ত চাহনির নিক্ষেপে হার মেনে যায়।তারা খুব কাছ থেকে তাদের প্রিয় সন্তান কে কষ্ট পেতে দেখেছে।তাছাড়া নাদিয়ার বাবা-মা যেমনই হোক,নাদিয়া কে তাদের বেশ ভালো লেগেছে।ছেলের সুখের কথা ভেবে,তাই তারা গতকাল আবারও নাদিয়াদের বাসায় গিয়ে বিয়ের প্রস্তাব রাখেন।”
“নাদিয়ার বাবা-মা ভেবেছিলো,তারা নিজে গিয়ে দিগন্তের বাবা-মায়ের কাছে ক্ষমা চাইবে,আর ওদের দু’জনের হাত মিলিয়ে দিবে।কিন্তুু তাদের আগেই দিগন্তের পরিবার এসে হাজির হয়েছে।নাদিয়া সহ ওর পরিবার তো ভীষণ খুশি।তারা খুব ভালোভাবে বুঝতে পারলো যে দিগন্তের পরিবার কতটা মহৎ এবং নিরহংকারী।চাইলেই তারা অপমানের পাল্টা জবাব দিতে পারতো।কিন্তুু তারা তাদের সৌজন্যমূলক আচরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে যে,সবসময় অপমানের প্রতিশোধ অপমান দিয়ে নয়,ভালোবাসা দিয়েও নেওয়া যায়।নাদিয়ার বাবা-মা তাদের আপ্যায়নে কোনো কমতি রাখলেন না।বরং করুণ স্বরে দু’জনে ক্ষমা চাইলেন।দিগন্তের বাবা-মা ও ভীষণ খুশি হলো।মানুষ তার ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চাইলে,অবশ্যই তাকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিত।কারণ ক্ষমা একটি মহৎ গুণ।অবশেষে দুই পরিবার মিলে বিয়ের দিন-ক্ষণ পাকাপাকি করলো।”
“দিগন্ত আগেই বলে দিয়েছে,সে কোনো এংগেজমেন্টের আয়োজন করতে চায় না।সরাসরি বিয়ে করবে।তারপর বাসর রাতে নাদিয়ার আঙ্গুলে ১০টা আংটি পড়াবে।দিগন্তের যে বিয়ের জন্য আর তড় সইছে না;সেটা খুব ভালো ভাবেই তার বাবা-মা বুঝতে পেরেছে।
তারা আরো কিছুক্ষণ আলোচনা করে আগামী শুক্রবার বিয়ের তারিখ ঠিক করলো।”
“এদিকে রুমের দরজার কার্ণিশে দাঁড়িয়ে, দুই পরিবারের সব কথা শুনছিলো নাদিয়া।আর কিছুক্ষণ পরপর বিয়ের খুশিতে লাফিয়ে উঠছিলো।ইশশ কত কষ্টের পর প্রিয়জনকে নিজের করে পেতে যাচ্ছে।’ভেবে লাফিয়ে উঠলো নাদিয়া।দরজা বন্ধ করে নিধি কে ম্যাসেজ করে সবকিছু জানালো।তারপর দিগন্ত কে ফোন দিয়ে সবকিছু বললো।দিগন্ত অফিসের ডেস্কে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলো।এই খবর শুনে দিগন্ত তো খুশিতে পারলে ল্যাপটপ নিয়ে লাফিয়ে উঠে।কিন্তুু মান-সম্মানের ভয়ে মিটিমিটি হেসে মৃদুস্বরে বললো,’হানি…হানি গো আর কতো রাত একা থাকব?”
“আর মাত্র ৫টি রাত থাকতে হবে জানু।’মুচকি হেসে বললো নাদিয়া।”
“হুমম তারপর তোমাকে ১০টা আংটি পড়িয়ে আমরা জমিয়ে বাসর করবো।”
“কি বলো জানু?জমিয়ে বাসর কিভাবে করে?”
“দিগন্ত ঠোঁট টিপে হেসে আশেপাশে তাকিয়ে নিচু স্বরে বললো,’সুইট,কিউট,ঝাল-টক-মিষ্টি রোমান্স করবো হানি।”
#চলবে….
(প্রিয় পাঠকমহল দিগন্ত এবং নাদিয়ার বিয়েতে আপনাদের দাওয়াত রইলো।আর আমি আগেই বলেছিলাম, আমার গল্পে রোমান্টিক সিন অনেক পরে আসে।যারা এতদিন যাবৎ রোমান্টিক মোমেন্ট চেয়ে আমাকে পা**গল করে দিচ্ছিলেন,সেই রোমান্টিক পাঠকদের জন্য বিশেষ ভাবে আগামীকাল থেকে প্রতিটি পর্বে রোমান্টিক মোমেন্ট থাকবে+ক্যাটাগরি অনুযায়ী ভিলেনের সাইকোগিরি থাকবে।আর আগেই বলছি,যারা রোমান্টিক মোমেন্ট পছন্দ করেন না।তারা দয়া করে আগামী পর্ব গুলো ইগনোর করবেন।অযথা উল্টাপাল্টা মন্তব্য করে রুচির দুর্ভিক্ষ ঘটাবেন না।আমার সাইকো লাভারদের জন্য বলছি,’হ্যাপি রোমান্টিক+সাইকো জার্নি।’)