হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ #পর্বঃ২৩ #লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

0
64

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ২৩
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

[কঠোর থেকে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য।]

“দিগন্ত ঠোঁট টিপে হেসে আশেপাশে তাকিয়ে নিচু স্বরে বললো,’সুইট,কিউট,ঝাল-টক-মিষ্টি রোমান্স করবো হানি।”

“দিগন্তের এহেন কথায় লজ্জা পেলো নাদিয়া।পরক্ষণেই মুখ ভেং**চি কে**টে বললো,’বাসর রাতে তোমায় টক-ঝাল মিষ্টি শাস্তি দিবো।কেনো দিবো,সেটা বাসর রাতেই বলবো।’বলেই ফোন কে**টে দিলো নাদিয়া।”

“হঠাৎ করে ফোন কে**টে দেওয়ায় দিগন্ত হতভম্ব হয়ে গেলো।ভাবলো,’কি হলো?রোমান্টিক কথায় কি ওর এলার্জি আছে নাকি?মধুর কথা বললেই দেখি তেলাপোকা দেখার মতো লাফিয়ে ওঠে।নাহ,বিষয়টি ভালো করে খতিয়ে দেখতে হবে।নইলে পরবর্তীতে বাচ্চা নেওয়ার পরিকল্পনার ক্ষেত্রে ঝামেলা হবে।’ভেবে দুষ্টু হাসলো দিগন্ত।”

———-
“দেখতে দেখতে বিয়ের দিন ঘনিয়ে এলো।রাতে নীলাভ ডিম লাইটের মৃদু আলোতে বালিশে হেলান দিয়ে, অর্ধশোয়া অবস্থায় মুঠোফোনে কথা বলছে নিধি এবং নির্জন।আর আজ তোহা কে নিধি বেলকনিতে পাঠিয়ে দিয়েছে।তোহা বেলকনিতে যেতে চায় নি।কারণ বেলকনিতে খুব মশা জ্বালাতন করে।কয়েলের ধোঁয়ার গন্ধ খুব বিশ্রী লাগে তোহার কাছে।কিন্তুু নিধি আজ কিছুতেই বেলকনিতে যাবে না।তাই তোহা কে জোর করে পাঠিয়েছে।”

“তোহা প্রথমে বেলকনিতে না যাওয়ার জন্য পায়চারি করছিলো।কিন্তুু নিধি যখনই বলেছে,ওর কথা না শুনলে তোহার নতুন ফোন বেলকনি থেকে ফেলে দিবে;তখনই তোহা হনহন করে চলে গেছে।তাছাড়া মাহিরের সাথেও তো প্রেমালাপ করতে হবে।ফাইনাল পরীক্ষার আর মাত্র ২১ দিন বাকি আছে।পড়াশোনার প্রেশারে মাহির কে তোহা তেমন ভাবে সময় দিতে পারে না।মাহির বিষয়টি বুঝতে পেরে,তোহা কে শুধু ঘুমানোর আগে ১০মিনিট কথা বলার জন্য অনুরোধ করেছে।এই অনুরোধ কিভাবে ফেলবে তোহা?প্রিয়জনের এতটুকু আবদার রাখাই যায়।তাই ঘুমানোর আগে তোহা বেলকনির দোলনায় বসে মাহির কে ফোন দিলো।”

“এদিকে বিছানায় পা দুলিয়ে নিধি নির্জনের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।নিধি নির্জন কে বললো,’আগামীকাল তো দিগন্ত ভাইয়া এবং নাদিয়ার বিয়ে।আমি নাদিয়া কে একটা সোনার আংটি উপহার দিবো।আপনি কি উপহার দিবেন?”

“নির্জন বললো,’আমি দিগন্ত কে আমার লেখা একটা বই দিবো।কিভাবে নিজের প্রিয়জনকে নিজের আয়ত্তে রাখা যায়;এই টপিক নিয়ে লেখা।আর একটা ব্র্যান্ডের হ্যান্ড ওয়াচ গিফট করবো।”

“নির্জনের কথা শুনে নিধি অবাক হয়ে,অর্ধশোয়া থেকে পুরোপুরি বসে পড়লো।উত্তেজিত স্বরে বললো,’তাই নাকি?আপনি বইও লিখেন?ওয়াও..ইন্টারেস্টিং।তো আপনার লেখা বইয়ের নাম কি?”

“নির্জন বাঁকা হেসে বললো,’বিষাদের ক্রান্তিলগ্নে’।”

“বইয়ের নাম শুনে নিধির খুব পছন্দ হলো।এক্সাইটেড হয়ে বললো,’বইয়ের আরও কোনো কপি আছে?আমাকে দেওয়া যাবে?”

“নির্জন মুচকি হেসে বললো,’উহুম তোমার আর আমার জন্য অন্য আরেকটি বই লিখবো।অলরেডি লেখা শুরু করেছি।তবে নাম টা এখনও ঠিক করিনি।এই বই শুধু তুমি পড়বে আর আমাকেও পড়ে শোনাবে।তবে সেটা বিয়ের পর।ওকে ডার্ক কুইন?”

“খুশি হয়ে গেলো নিধি।হাসিমুখে বললো,’হুম হুম অবশ্যই..আমি তো ভীষণ এক্সাইটেড আপনার লেখা বই পড়ার জন্য।আমার তো এখনই আপনার কাছে উড়ে যেতে ইচ্ছে করছে।আমার যদি পাখির মতো ডানা থাকত,তাহলে আমি ঠিক আপনার কাছে চলে যেতাম।”

“উফফ! কতো সুন্দর করে কথাগুলো বললো ডার্ক কুইন।কথাগুলো যেনো নির্জনের হৃদয়ের গভীরে গিয়ে ভালো লাগার আস্তরণ তৈরি করলো।হাস্কি ভয়েসে বললো,’চলে এসো না ডার্ক কুইন।তুমি আমার কাছে এলে,নির্দ্বিধায় তুমি আমাকে দেখবে আর আমি তোমাকে।তবে স্পর্শ করবো না তোমায়; কথা দিলাম।শুধু মন ভরে গভীর অনুভূতি নিয়ে দেখবো তোমায়।আসবে জানপাখি?আমি তোমার বাসার সামনে আসি?”

“নির্জনের এহেন কথায় আশ্চর্যান্বিত হলো নিধি।ভাবলো,’ওমা! আমি তো এমনি খুশি হয়ে বললাম।সে তো দেখছি পুরোপুরি সিরিয়াস!ধুরো, আমিও না…সবসময় উল্টাপাল্টা কথা বলি।’ভেবে গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,’নির্জন পা**গল নাকি আপনি?এতো রাতে আমি একা একটা মেয়ে আপনার বাসায় যাবো?তাছাড়া আমাদের বিয়েও হয় নি।কেউ দেখলে কি ভাববে?আর আমি তো এটা মজা করে বললাম।আপনি তো দেখছি সিরিয়াসলি নিয়েছেন হিহিহি।”

“নিধির রসিকতা শুনে চোখ-মুখ শক্ত হয়ে গেলো নির্জনের।কর্কশ স্বরে বললো,’এর মানে তুমি আমার প্রতি সিরিয়াস না তাই তো?সবসময় মজা করে কথা বলো তাই না?আমার অনুভূতি তোমার কাছে মূল্যহীন?এতোগুলো কথা ফিল করে বললাম,সেগুলো তোমার মন ছুঁতে পারেনি?কি হলো কথা বলছো না কেনো?আনসার মি!”

“এই প্রথম নির্জন এতটা রেগে কথা বলায় হকচকিয়ে গেলো নিধি।আনমনে ভাবলো, ‘আমি আবার কি ভুল বললাম?আমি জাস্ট দেখা করার বিষয়টি নিয়ে বুঝালাম।এই লোক তো দেখছি উল্টা বুঝে বসে আছে।’ভেবে শুকনো ঢোক গিলে বললো,’নির্জন আমি কিন্তুু এটা বলি নি।আমি বলেছি যে,এতো রাতে অবিবাহিত একজন মেয়ে অবিবাহিত একজন ছেলের বাসায় যাওয়া অনুচিত।যতই আমরা প্রেম করিনা কেনো।প্রেমের মানে তো আর রুমডেট বাধ্যতামূলক নয় তাই না?আর আপনি আমার সাথে কিছু না করলেও,বাহিরের মানুষ তো সেটা কে অন্য চোখে দেখবে।আমি সেটাই বোঝাতে চেয়েছি।প্লিজ আপনি এতটা রেগে যাবেন না।”

“নিধির কথায় নির্জন কিছুটা স্থির হলো।বাহ্যিক ভাবে সে থেমে গেলেও,মস্তিষ্কের ভয়ং**কর চিন্তা ধারা থেমে থাকে নি।কিন্তুু আপাতত নিজেকে দমিয়ে রাখতে কিছুটা সক্ষম হলো নির্জন।হয়তো নিধি সামনে থাকলে সেটাও হতো না।মস্তিষ্কের নার্ভগুলো হয়তো হিং**স্রতায় সক্রিয় হয়ে উঠতো।”

“দীর্ঘশ্বাস ফেলে নির্জন স্বাভাবিক স্বরে বললো,’ডার্ক কুইন আমি যতটুকু জানি, বিয়েতে সাধারণত বর পক্ষ থেকে টাকা উঠানো,বরের জুতা চুরি করা থেকে শুরু করে বেয়াই-বেয়ানদের মধ্যে অনেক ধরনের আড্ডা হয়।এগুলো আমি পছন্দ করি না।আমি বরপক্ষ হলেও এগুলো থেকে দূরত্ব বজায় রাখবো।আশা করি তুমিও দূরে থাকবে।আর বিয়েতে কোনো গর্জিয়াস সাজ দিবে না।বোরকা আর হিজাব পড়ে আসবে।আর পুরো বিয়েতে মুখে মাস্ক পড়ে থাকবে।শুধু খাওয়ার সময় খুলবে।মনে থাকবে?”

“নিধির প্রতি নির্জন কতটা কেয়ারিং আর পজেসিভ।’ভেবে নিধির মনে প্রজাপতিরা ডানা মেলে উড়তে থাকল।কিন্তুু নাদিয়ার বিয়েতে তো নিধির খুব সাজতে ইচ্ছে করছে;বেস্টফ্রেন্ড বলে কথা!ভাবলো,’বোরকা আর হিজাব পড়ে একটু সাজবো হুমম।এতে নির্জনও খুশি হবে।কিন্তুু এটা এখন বলা যাবে না।এখন এগুলো বললে নির্জন রেগে যেতে পারে।’ভেবে নিধি নিজের কাজে নিজেই অবাক হয়ে ফের ভাবলো,’হায়…আমার মতো খিটখিটে স্বভাবের মেয়ে কিনা আরেকজনের রাগের পরোয়া করছে?ইশশ…আমাকে নিশ্চয়ই নির্জনের প্রেমরোগে ধরেছে।তাই তো আমার মেজাজ আকাশে উঠে গেছে।তার ওপর নির্জনের দুষ্টু-মিষ্টি কথায় বেশ লজ্জাও পাচ্ছি।অবশ্য লজ্জা পাওয়াটাই স্বাভাবিক।কারন,লজ্জা নারীর ভূষণ।’ভেবে কপালে হাতের উল্টো পিঠ ঠেকিয়ে লাজুক হাসলো নিধি।”

“নিধির স্মিত হাসির শব্দ শুনতে পেলো নির্জন।হাস্কি ভয়েসে বললো,’আমার কথা ভেবে হাসছো ডার্ক কুইন?”

“আপনি বুঝলেন কিভাবে?”

“উমম..কারণ,তোমার মাইন্ড এখন আমার কন্ট্রোলে।এনিওয়ে,এখন একটা ডিপলি কিস করো আমার মতো করে।”

“লজ্জায় যেনো বেগুনি হয়ে গেলো নিধি।ফোনের অপরপাশ থেকেই বুকে ধুকপুকানি শুরু হলো।লজ্জায় হাসফাস করতে থাকল নিধি।ঠোঁট কা**মড়ে বললো,’আগামীকাল দেখা হবে নির্জন।আমি এখন ঘুমাবো।”

“নির্জনের মন ক্ষুন্ন হলো।কপট রাগ দেখিয়ে বললো,’সামনা-সামনি তো দিতে বলিনি।আর সেটা আমি চাইও না।ফোনে তো দিতেই পারো।”

“কথা ঘুরাতে চাইলেও নির্জনের কথায় আটকে গেলো নিধি।মৃদুস্বরে বললো,’নির্জন গুড নাইট।প্লিজ রাখি;আমার খুব লজ্জা লাগছে।”

“নির্জন রেগেমেগে কিছু বলতে যাবে,ঠিক তখনই ভেতর থেকে ‘হৃদয়’ বলে উঠলো,’নির্জন স্টপ প্লিজ।তোমার কথা অমান্য করার জন্য তাকে সামনা-সামনি শাস্তুি দিবে।এখন নয়।”

“থেমে গেলো নির্জন।রাগ কন্ট্রোল করার জন্য কপালে চার আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করে বাঁকা হেসে, ফোনের অপর পাশ থেকে কয়েকবার ডিপলি কিস করে হাস্কি ভয়েসে বললো,’বিয়ের পর আর কোনো কথা শুনবো না।তখন চাইলেও বাঁধা দিতে পারবে না।গুড নাইট মাই ডার্ক কুইন।লাভ ইউ জানপাখি।’বলেই ফোন কে**টে দিলো নির্জন।”

“নির্জন ফোন রাখতেই বুকে হাত দিয়ে ঘনঘন নিঃশ্বাস ছাড়লো নিধি।কিছুক্ষণ আগের কথা ভেবে মুচকি হেসে বললো,’ইশশ! নির্জন কতো রোমান্টিক।দেখলে একটুও বোঝা যায় না।এমন একজন কেই তো জীবনে চেয়েছিলাম।উফফ! আমি কতো লাকি।’ভেবে কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর চেষ্টা করলো।কিন্তুু ঘুম পাখিরা আজ কোনোক্রমেই ধরা দিচ্ছে না।তাই নিধি সেই ভুগিচুগি ‘স্লিপিং এক্সারসাইজ’ করে,একসময় ঘুমের রাজ্যে পারি জমালো।”

———-
“নিধির সাথে কথোপকথন শেষ করে নির্জন ল্যাপটপে কিছু ডকুমেন্টস রেডি করলো।তারপর ফ্রেশ হয়ে,নিধির দেওয়া সেই চিঠিটি নিয়ে বিছানায় অর্ধ-শোয়া অবস্থায় মনযোগ দিয়ে পড়তে থাকল।একসময় চিঠিতে গভীরভাবে চুমু দেওয়ার জন্য ঠোঁট এগিয়ে নিতেই,হঠাৎ করে চিঠির ওপর দিয়ে একটি আরশোলা/তেলাপোকা উড়ে গেলো।”

“নির্জন কটমটিয়ে তাকালো আরশোলাটির দিকে।রুঢ় দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো সে।ভাবলো,’আমি তো কখনোও রুম ক্লিনিং এ কার্পণ্যতা করি নাা।তাহলে এই ইডিয়ট টা কোথা থেকে এলো?’ভাবতেই নির্জনের চোখজোড়া আটকে গেলো জানালায় আবদ্ধ সারি সারি গ্রিলের দিকে। নির্জনের আর বুঝতে বাকি রইলো না,যে আরশোলাটি গ্রিল ভেদ করে এসেছে।”

“আরশোলাটি যেনো গা জ্বালানোর জন্য আরেকটু ভালোভাবে প্রস্তুত হয়ে এসেছে।আরশোলা টি দ্বিতীয় বার চিঠির ওপর পড়তেই,নির্জন সেটাকে খপ করে মুষ্টিবদ্ধ করে পৈ***শাচিক হাসি দিলো।”

“ভেতর থেকে ‘মন’ বলে উঠলো,’বাহ!নির্জন তুমি তো দেখছি আগের ফর্মে ফিরে এসেছো।ওয়াও গুড জব।নাও এইবার নিঁখুত অপারেশন শুরু করো,যেমন টা অতীতে করতে।আমি তোমার সাথে আছি।”

“নির্জন বাঁকা হেসে অতীতে ব্যাক করলো,
‘কলেজের ল্যাবে কেউ যখন ব্যাঙ দ্বি-খণ্ডিত করতে সাহস পেতো না অথবা প্রথম অবস্থায় খুব ভয় পেতো;তখন নির্জন খুব বীরত্বের সাথে ধা**রালো ছু**রি দিয়ে ব্যাঙ কে বিভক্ত করে, সবাইকে অতি নিখুঁত ভাবে তার বর্ণনা দিতো।”

“নির্জনের সাহসিকতায় মুগ্ধ হয়ে কলেজের বায়োলজি টিচার সবাইকে বলতো,’দেখো দেখো..ছেলেটা কতো সাহসী।জীবনে চলতে হলে ওর মতো বুকে সাহস নিয়ে চলতে হবে।তোমাদের দ্বারা তো কিচ্ছুটি হবে না,ভীতুর দল কোথাকার!’বলেই নির্জনের কাঁধে চাপড় মে**রে বাহবার সুরে বলতো,’দোয়া করি,তোমার এই অদম্য সাহস এবং প্রবল আত্মবিশ্বাস নিয়ে অনেক দূর এগিয়ে যাও।”

“সত্যি অনেক দূর এগিয়েছে নির্জন।কা**টাকা**টিতে সে দারুণ এক্সপার্ট।”

“অতীতের স্মৃতি গুলো ভেবে নির্জন বাঁকা হেসে, দ্রুত বিছানা ত্যাগ করে টেবিলের ড্রয়ার থেকে ধা**রালো একটি ছোট ছু**রি বের করলো।অতঃপর আরশোলার দিকে র**ক্তিম দৃষ্টিতে তাকিয়ে, বিভ**ৎস হাসি দিয়ে মৃদু স্বরে বললো,’আমার ডার্ক কুইনের চিঠি স্পর্শ করে ভয়ং**কর অপরাধ করেছিস তুই।এর জন্য তোকে ভ**য়ানক শাস্তি পেতে হবে।আচ্ছা তোর বৈজ্ঞানিক নাম টা যেন কি?
ওহ,মনে পড়েছে,’Periplaneta americana’.
আজ তো তোর ৩জোড়া পা, আর ২জোড়া পাখা অচিরেই গায়েব হয়ে যাবে।’বলেই আরশোলাটি কে টেবিলে রেখে ন্যানো সেকেন্ডের মধ্যে ডানা সহ ক্ষুদ্র দেহটি কু**টি কু**টি করে কে**টে ফেললো।
কিন্তুু এটা করেই সে ক্ষান্ত হলো না।হ্যান্ড গ্লাভস পড়ে,আরশোলার দেহের অতি ক্ষুদ্র অংশগুলো কে হাত দিয়ে ইচ্ছেমতো পিষিয়ে দিলো।যে কেউ দেখলে ভাববে,২-৩টা শুকনো মরিচ হাত দিয়ে পিষিয়ে ভর্তা করেছে নির্জন।’নিজের কার্য নিখুঁত ভাবে সমাপ্ত করে,তৃপ্তির হাসি হাসলো নির্জন।”

————
“এদিকে মাহির তোহা কে একের পর এক ইংরেজি কবিতা শুনিয়ে যাচ্ছে।কবিতার মূল টপিক হলো,
‘Love,Kiss & Hug’
এগুলো শুনে তোহার কানটা লজ্জায় গরম হয়ে যাচ্ছে।কিন্তুু মাহির নাছোড়বান্দা,সে শোনাবেই।তাই তোহাও কান পেতে শুনছে।ফোনের অপরপাশ থেকে মাহিরের মৃদু কন্ঠস্বরে কবিতা শুনে, বারবার শিহরণে রিনরিনিয়ে উঠছে তোহার সর্বাঙ্গ।”

“কবিতা পর্ব শেষ করে মাহির বললো,’স্বপ্নচারিনী আগামীকাল তোমার জন্য একটা গিফট আনব।যেহেতু দিগন্ত ভাইয়া এবং নাদিয়া তাদের বিয়েতে আমাকেও ইনভাইট করেছে,তাই গিফট টা সেখানে গিয়ে দিবো।”

“গিফটের কথা শুনে তোহা খুশিতে গদগদ হয়ে বললো,’সত্যি?ওকে…ওকে আমি অপেক্ষা করবো।ইশশ!খুশি তে আমার তো আজ ঘুমই হবে না।”

“মুচকি হাসলো মাহির।মৃদুস্বরে বললো,’ঘুমাও..ঘুমাও নইলে চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল পড়ে যাবে।এখনই যদি ডার্ক সার্কেল পড়ে যায়;তাহলে ফুলসজ্জা রাতে তো গাল পর্যন্ত ডার্ক সার্কেল পড়ে যাবে।”

“মাহিরের ঠোঁট কা**টা টাইপ কথা শুনে তোহা কন্ঠ খাদে নামিয়ে বললো,’বেহায়া পুরুষ।একটুও লজ্জা-সরম নাই।’
বলেই ফোন কে**টে দিলো।”

“মাহির জানতো, তোহা ফোন কে**টে দিবে।কারণ, যখনই মাহির দুষ্টু কথা বলে,তখনই তোহা ফোন কে**টে দেয়।’ভেবে হো হো করে হেসে উঠলো।অতঃপর ফোনের ওয়ালপেপারে থাকা তোহার লাজুক ছবিতে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ালো।প্রিয়তমার লাজে রাঙা মুখস্রি দেখতে দেখতে একসময় ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেলো মাহির।”

————-
“রাত ২টা।ঘুম নেই দিগন্তের চোখে।এপাশ-ওপাশ ফিরে মিটিমিটি হেসে একাকার হয়ে যাচ্ছে সে।আগামী রাত্রি আরেকজন রমনী তার পাশে ঘুমাবে, ভেবেই শিরদাঁড়ায় শীতলতার আলোড়ন বয়ে গেলো।ফোন হাতে নিয়ে নাদিয়ার মায়ের ফোনে কল দিতেই,নাদিয়া তৎক্ষণাৎ ফোন রিসিভ করলো।”

“অপরপাশ থেকে দিগন্ত কথা না বলে নিশ্চুপ হয়ে রইলো।কারণ, ফোন টা যদি নাদিয়ার মা রিসিভ করে; তাহলে তো কেল্লাফতে।”

“দিগন্ত কে চুপ থাকতে দেখে নাদিয়া বললো,’ওই কথা বলো না কেনো?”

“নাদিয়ার কন্ঠ পেয়ে বিস্ময়ের স্বরে দিগন্ত বললো,’অ্যা? হানি তুমি ফোন ধরেছো?তুমি জানতে আমি ফোন দিবো?এতো রাতে তুমি ঘুমাও নি কেনো?বাই দ্যা ওয়ে, তুমিও কি আমার মতোই একা বিছানায় ছটফট করছিলে হানি?”

“দিগন্তের নির্লজ্জ টাইপ কথায় লজ্জা পেলো নাদিয়া।সত্যি তো বিয়ের আগের রাতের অনুভূতিগুলোই আলাদা হয়।প্রিয়জন কে নিয়ে বিভিন্ন চিন্তাধারা জল্পনা-কল্পনায় বারংবার উঁকি দেয়।প্রিয় মানুষটির কাছে প্রথম রাতে কিভাবে নিজেকে উপস্থাপন করবে,তার সাথে বাকি জীবন কিভাবে কা**টাবে;এগুলোই তো ভাবছিলো নাদিয়া।তবুও সেটাকে দমিয়ে রেখে কটমটিয়ে বললো,’এমনি ঘুম আসছিলো না।তাই মায়ের ফোনে সাপ নিয়ে খেলা করছিলাম।”

“দিগন্ত দুষ্টু হেসে নাদিয়া কে একটু জ্বালানোর জন্য বললো,’ওকে হানি ভালো করে সাপের সাথে খেলা করো।আগামীকাল রাত থেকে তো আমার সাথে খেলা করতে করতে,অন্যকিছু করার সময় পাবে না।এখনই শেষ খেলা খেলে নাও।”

“প্রচন্ড লজ্জা আর রাগে উড়নচণ্ডী হয়ে গেলো নাদিয়া।কঠোর স্বরে বললো,’হুম ভালো করে খেলবো তোমার সাথে।তোমার জন্য অনেক বড় শাস্তি অপেক্ষা করছে।আগামী রাত টা আসুক,তারপর ভালো করে খেলবো।
বি রেডি ফর মাই হট পানিশমেন্ট ডার্লিং।’বলেই ফোন রেখে দিলো নাদিয়া।”

“এভাবে ফোন রেখে দেওয়াতে হকচকিয়ে গেলো দিগন্ত।মনে মনে ভাবলো,’ওম্মা এতো দেখছি আমার থেকেও কয়েক ধাপ এগিয়ে।ভালো করে খেলতে চায়।কিন্তুু…কিন্তুু কি শাস্তির কথা বললো?কিসের শাস্তি দিবে?আমি তো কোনো অপরাধ করিনি!আবার চলনবিলের মতো শাস্তি দিবে নাতো?’ভেবে শুকনো ঢোক গিললো দিগন্ত।দুই হাত এক করে মোনাজাত ধরে বললো,’হে আল্লাহ!তুমি আমার হানির মন টা বিশুদ্ধ পানির মতো শীতল করে দাও।যেনো আমার প্রতি তার ভালোবাসা উতলে উতলে পড়ে;আমিন।’বলেই বুকে হাত দিয়ে বললো,’ইশশ! আমার দুষ্টু মন টা কিছুতেই আজ রাতটুকু মেনে নিতে পারছে না।সময় টা সংক্ষিপ্ত হলে কতো ভালোই না হতো।’বলে মুচকি হাসলো দিগন্ত।”

————
“কে**টে গেলো আরো একটি নিস্তব্ধ রাত।প্রতিটি রাতের পর সূর্য রশ্মি কারো জীবনে আঁধারের ঘনঘটা বয়ে আনে,আবার কারো জীবনে উজ্জ্বল আলোর বিকিরণ ছড়ায়।”

“অবশেষে এসে পড়লো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।আজ দিগন্ত এবং নাদিয়ার বিয়ে।গতকাল রাত থেকে ওদের দুই পরিবারের বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনের আগমন ঘটেছে।সকাল হতে না হতেই বাকিরাও এসে হাজির।নিধি এবং তোহা সকালে একবার এসে নাদিয়াকে হলুদ দিয়ে,পুরো মুখ মাখিয়ে দিয়ে গেছে।”

“এদিকে দিগন্ত কাউকে হলুদ ছোঁয়াতে দেয়নি।সে চায়, বাসর রাতে তার প্রিয়তমা স্ত্রী তাকে প্রথম হলুদ ছোঁয়াবে।তাছাড়াও এইসব রীতিনীতিতে তার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই।সে তো নাদিয়ার সাথে কিভাবে মধুচন্দ্রিমায় মত্ত হবে, সেই চিন্তায় বিভোর।সকাল থেকে নাদিয়া কে ওর মায়ের ফোনে কয়েকবার ফোন করেছে।কিন্তুু নাদিয়া ফোন সাইলেন্ট করে রেখেছে।ঘর ভর্তি আত্মীয়-স্বজনের কিচির-মিচির শব্দে ফোনের কোনো হদিস নেই।সবাই যেনো আজ নাদিয়া কে নিয়ে ব্যস্ত।কাজিন থেকে শুরু করে প্রতিবেশীরাও দুষ্টু-মিষ্টি কথা বলছে নাদিয়ার সাথে।এদিকে নাদিয়া লজ্জায় লাল, নীল,বেগুনি হয়ে যাচ্ছে।এটাই তো স্বাভাবিক।”

———
“রাত ৮টার পর একটি নামিদামি কমিউনিটি সেন্টারের সেকেন্ড ফ্লোরে নির্ধারিত স্থানে এসে সবাই উপস্থিত হলো।কমিউনিটি সেন্টারের চাকচিক্য এবং ঝলমলে উজ্জ্বল পরিবেশ টি মন কেড়ে নিচ্ছে সবার।সেই সাথে প্রাকৃতিক এবং কৃত্রিম ফুলের সুবাসে মুখরিত চারিদিক।বাহারি রঙের লাইট এবং কয়েকটি ক্যামেরার লাইট তাক করে রাখা হয়েছে, দিগন্ত এবং নাদিয়ার জন্য বরাদ্দকৃত স্টেজের দিকে।সবাই অধীর আগ্রহে দিগন্ত এবং নাদিয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।”

“এরই মধ্যে নিধি এবং তোহা পার্লার থেকে নাদিয়াকে নিয়ে,কমিউনিটি সেন্টারের সেকেন্ড ফ্লোরে প্রবেশ করলো।এতটুকু সময়ের মধ্যে নিধি যে নাদিয়ার সাথে কত রকমের দুষ্টামি করেছে,সেটা না বললেই নয়।”

“নাদিয়া পড়েছে ধূসর রঙা ভারী কাজের লেহেঙ্গা।সেই সাথে গোল্ডেন কালার দোপাট্টা এবং ম্যাচিং জুয়েলারি আর সেই সাথে গর্জিয়াস সাজ-সজ্জা।কারণ,দিগন্তের খুব ইচ্ছে ফুলসজ্জার পর, ভোরের দিকে নাদিয়া কে নিয়ে শেষ রাতের আকাশে ধোঁয়াশা মেঘের আনাগোনা উপভোগ করবে।সেই সাথে তার ‘মেঘ বালিকা’ কে আদরে আদরে ভরিয়ে দিবে।তাই খুব পছন্দ করে নিজের জন্য ধূসর রঙা এবং গোল্ডেন স্টোনের শেরওয়ানি কিনেছে আর নাদিয়ার জন্য সেইম কালার লেহেঙ্গা কিনেছে।”

“নিধি,নাদিয়া এবং তোহা কমিউনিটি সেন্টারে প্রবেশ করতেই সকল আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে ক্যামেরা ম্যান তাদের ক্যামেরার লাইট তাক করলো ওদের দিকে।নাদিয়ার গর্জিয়াস নববধূর সাজ দেখে মুগ্ধ সবাই।আত্মীয় মহলের প্রশংসায় ভাসছে সে।মুহূর্তের মধ্যেই মুঠোফোন থেকে শুরু করে সবার ক্যামেরা বন্দি হয়ে গেলো নাদিয়া।
নাদিয়া স্টেজে উঠে তার জন্য বরাদ্দকৃত ফুল দিয়ে সজ্জিত চেয়ারে বসলো।তার চোখজোড়া খোলা দরজায় নিবদ্ধ।মনে মনে উদ্ভ্রান্তের ন্যায় দিগন্ত কে খুঁজছে।মুখ ভরা খোলা হাসি লেপ্টে ভাবছে,’ দিগন্ত কে আজ কেমন লাগবে দেখতে?তারপর আমাকে দেখে দিগন্তের রি-অ্যাকশন কেমন হবে?সে এখনও আসছে না কেনো?উফফ! আস্তো একটা ঢিলা কোম্পানি।”

“নাদিয়ার ভাবনার মাঝেই খোলা দরজায় হৈ চৈ পড়ে গেলো।নাদিয়া সামনে তাকিয়ে দেখলো, দিগন্ত প্রবেশ করেছে।আর তার দুই পাশে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে নির্জন,মাহির এবং দিগন্তের বন্ধু সহ বাকি অফিস কলিগ।”

“দিগন্ত কে দেখে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠলো নাদিয়ার মুখে।আজ ধূসর রঙা শেরওয়ানি,আর পাগড়ি তে দিগন্ত কে মনে হচ্ছে পাঞ্জাব থেকে কোনো হিরো বাংলার মাটিতে পদার্পণ করেছে।এ যেনো তার স্বপ্নে দেখা সেই ‘মেঘরাজ’।সত্যি নাদিয়ার পছন্দ অতি প্রশংসনীয়।”

“দিগন্ত গেটের সামনে আসতেই, হুড়মুড়িয়ে পড়লো নাদিয়ার আত্মীয়-স্বজন।সেই চিরাচরিত প্রথা অর্থাৎ বিশাল অঙ্কের টাকার আবদার তাদের।আবদার পূরণ না করলে ভেতরে ঢুকতে দিবে না।এদিকে এগুলো দেখে তোহাও সামিল হয়েছে তাদের সাথে।সবার এতো আনন্দ দেখে লোভ সামলাতে না পেরে, নিধিও যখনই ওই ভীরের মধ্যে গেলো;ওমনি চোখের সামনে সাদা শার্টের ওপর নেভী ব্লু কালার ব্লেজার পরিহিত উজ্জ্বল শ্যামরঙা সুদর্শন পুরুষ টি কে দেখে থমকে গেলো ওর চোখজোড়া।আজ নির্জন কে দেখতে অন্যরকম লাগছে;পুরো অসাধারণ।”

“এদিকে এতো নারীর ভীরেও নির্জনের নজর আটকে গেলো কালো বোরকা, কালো হিজাব এবং কালো মাস্ক পরিহিত উজ্জ্বল ফর্সা রঙা, মায়াবী চক্ষুদ্বয়ের মানবীর দিকে।ভাবলো,
‘এই তো, দস্যি মেয়েটা আমার সাথে মানিয়ে নিতে সক্ষম হচ্ছে।’ভেবে মুচকি হেসে রিমলেস চশমার ফাঁক গলিয়ে ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল উঠিয়ে ইশারায় বোঝালো, ‘থ্যাংকস ডার্ক কুইন।”

“নির্জনের সেই চোখের গাঢ় ভাষা বুঝতে সক্ষম হলো নিধি।মুচকি হেসে তর্জনী এবং বৃদ্ধাঙ্গুল একত্র করে বোঝালো,
‘আপনাকে আজ দারুণ লাগছে।”

“প্রেয়সীর ইশারায় প্রশংসা বুঝতে পেরে, ফের মুচকি হাসলো নির্জন।”

———
“এদিকে তোহা আর মাহির তো একে-অপরের দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে।আজ অদ্ভুত ভাবে দু’জনের ড্রেসআপে মিলে গেছে,যেটা অকল্পনীয়।আজ তোহা নীল রঙের একটি ঝিকিমিকি গাউন এবং ম্যাচিং হিজাব পড়েছে।সেই সাথে গর্জিয়াস সাজ তো আছেই।
এদিকে মাহিরও নীল রঙের পাঞ্জাবি এবং উপরে সাদা কোটি পড়েছে।সেই সাথে হাতে ব্ল্যাক ঘড়ি।কোঁকড়া চুল গুলো জেল দিয়ে কোনোরকমে সেটআপ করেছে।তবুও চওড়া কপালে লেপ্টে আছে কিছু অবাধ্য চুল।মুচকি হাসি দেওয়া পুরুষটির প্রেমে দ্বিতীয় বার পড়লো তোহা।মাহির দুষ্টু হেসে চোখ টিপ মারতেই,লাজুক হেসে মুখ ভেং**চি কা**টলো তোহা।অতঃপর দু’জন দু’জন কে ইশারায় তাদের রূপের প্রশংসা করলো।”

———
“গতকাল নির্জনের শীতল শাসনের ভয়ে নিধির আর এই আনন্দে অংশগ্রহণ করা হলো না।অবশেষে দুই পক্ষের দুষ্টু-মিষ্টি ঝগড়ার পর, সেন্টারের ভেতরে ঢুকতে সক্ষম হলো বরপক্ষ।”

“নিজের জন্য বরাদ্দকৃত চেয়ারের দিকে চোখ যেতেই,দৃষ্টি থমকে গেলো দিগন্তের।প্রিয়তমার দিকে শুকনো ঢোক গিলে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ভাবলো,’ওমা এটা কে?এতো দেখছি মেঘের কোলে রোদ!হায় হায়..এখন আমার কি হবে?আমার তো এখনই পা**গল পা**গল লাগছে!নিজেকে কিভাবে সামলাবো আমি?’ভেবে দ্রুত পায়ে স্টেজের দিকে হাঁটতে থাকলো দিগন্ত।এদিকে ক্যামেরা ম্যান দিগন্ত কে একটু পোজ নিতে বলেছিলো।দিগন্ত আড়চোখে সেদিকে তাকিয়ে বললো,’আরে রাখুন আপনার পোজ।আগে আমার বউয়ের সাথে দাঁড়াই,তারপর যত ইচ্ছে পোজ দিবো।’বলেই বড় বড় পা ফেলে নাদিয়ার সামনে চলে গেলো।”

“এদিকে দিগন্তের কাহিনী দেখে হেসে কু**টিকু**টি হলো নাদিয়া।দিগন্ত নাদিয়ার সামনে এসে,পাশের চেয়ারে বসলো।আশেপাশে না তাকিয়ে, সরাসরি ওর হাত ধরে বললো,’এতো দেখছি স্বয়ং হুরপরী!যদিও আটা-ময়দা ছাড়া তোমায় দেখতে হেব্বি লাগে হানি।কিন্তুু আজ আমার তো তোমাকে দেখে সবকিছু কন্ট্রোল করা দায় হয়ে পড়ছে।অনুষ্ঠান শেষ হতে আর কতক্ষণ লাগবে হানি?”(বাচ্চাদের ন্যায় প্রশ্ন করলো দিগন্ত।)

“আকস্মিক দিগন্তের এহেন কথায় হকচকিয়ে গেলো নাদিয়া।আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো, সবার দৃষ্টি ওদের দিকে আবদ্ধ।মুখে কৃত্রিম হাসি ঝুলিয়ে দিগন্তের দিকে একটু ঝুঁকে, দাঁত কিড়মিড় করে বললো,’আশেপাশে সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে জানু।কন্ট্রোল ইউরসেল্ফ।আর এতো সহজে আমি তোমার হবো না।আগে তোমায় কঠোর শাস্তি দেবো;তারপর ভেবে দেখবো।”

“নাদিয়ার মুখনিঃসৃত বাক্যটি শুনে দিগন্ত উত্তেজিত স্বরে কিছু বলতে যাবে,তখনই নিধি এবং তোহা সেখানে এসে হাজির হলো।তোহা দিগন্ত কে বললো,’ভাইয়া আজ কে না আপনাকে পুরো পাঞ্জাবের হিরোদের মতো লাগছে।’

অপরপাশ থেকে নিধি মুচকি হেসে বললো,’সত্যি ভাইয়া আজ কিন্তুু আপনাকে দেখতে হেব্বি লাগছে,পুরো ঝাক্কাস।আমার বান্ধবী তো চোখ ফেরাতেই পারছে না।আর সেই সাথে আমরাও হিহিহি।”

“নিধির প্রশংসা শুনে দিগন্ত কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো।তার মনে পড়ে গেলো নির্জনের সেই শান্ত হু**মকি।নিধি কে নিয়ে কথা বলা কঠোরভাবে বারণ করেছে নির্জন।এদিকে নাদিয়া ও কটমটিয়ে তাকিয়ে আছে।সবকিছু ভেবে অসহায় দিগন্ত অন্য দিকে দৃষ্টি ফেলে ম্লান হাসলো।কিন্তুু কিছুই বললো না।মনে হয় সে নীরবতা পালন করার জন্য ধ্যানে বসেছে।”

“এদিকে নিধির এই উক্তিটি যেনো তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ালো।স্টেজের একটু দূরে দাঁড়িয়ে র**ক্তিম দৃষ্টিতে তাকিয়ে সবকিছু শুনছিলো নির্জন।হিং**স্র দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো দিগন্তের দিকে।দীর্ঘ দিনের মানসিক অবসাদে ক্লান্ত নির্জনের মুখে নিমিষেই পৈ**শাচিক হাসি ফুটে উঠলো।দিগন্তের দিকে ঈর্ষান্বিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে; আপন মনে বিড়বিড় করে বললো,’উত্তর টা না দিয়ে ভালোই করেছিস বন্ধু।’বলেই হাতে থাকা কালো ঘড়িটির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কুটিল হাসলো।অতঃপর সবার চোখের আড়ালে বড় বড় পা ফেলে হন হন করে কমিউনিটি সেন্টার থেকে প্রস্থান করলো।”

#চলবে…
(প্রিয় পাঠকমহল আজকের পর্ব অনেক বড় করে দিয়েছি।সাড়ে ৩ঘন্টা+ সময় লেগেছে।অবশ্যই আমার সাইকো লাভারদের বড় করে,কিউট করে কমেন্ট চাই।আর আমি আবারও বলছি,সাইকো টাইপ গল্প যারা অপছন্দ করেন, তারা দ্রুত গল্পটি ইগনোর করুন প্লিজ।অযথা উল্টাপাল্টা কমেন্ট করে, আমার মন ব্যথিত করবেন না প্লিজ।আমি আপনাদের গঠনমূলক মন্তব্য+রিপ্লাই করতে খুব ভালোবাসি।আর আগামী ২দিন আমি খুব ব্যস্ত থাকব,তাই গল্প দিবো না।শনিবার থেকে আবার রেগুলার হবো। হ্যাপি রিডার্স।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here