হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ #পর্বঃ২৫ #লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

0
67

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ২৫
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

[কঠোর থেকে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য।]

“বিভ**ৎস হাসি দিয়ে বিড়বিড় করে আওড়ালো,
‘অনেক বড় অন্যায় করেছিস তুই। আজ তোর সাথে খুব মজা করে ‘মৃ**ত্যু খেলা’ খেলবো।’
‘The game of death will begin now..3,2,1..start..

“কানামাছি ভোঁ ভোঁ, যাকে পাবি তাকে ছোঁ।”

“নির্জন এভাবে তার বলিষ্ঠ শরীরের সব ভর ছেড়ে দেওয়ায়,যুবকটির মুখমন্ডল টাইলস করা পিচ্ছিল ফ্লোরে লেপ্টে রইলো।মুখ দিয়ে অস্ফুটস্বরে আর্তনাদ করে বললো,
‘কে তুৃই?আমাকে ছাড়,হিম্মত থাকলে সামনে আয় জা…..র এর বাচ্চা।”

“যুবকটির কথায় বেশ মজা পেলো নির্জন।শীতল চাহনি নিক্ষেপ করে,নিগুঢ় স্বরে বললো,
‘সামনে তো আসবই,আগে তোর সাথে কিছুক্ষণ কানামাছি খেলে নেই তারপর।’বলেই পাশে থাকা ল্যাপটপের ব্যাগ থেকে মোটা রশি বের করে ছেলেটার হাত দু’টো পেছনে এনে,হাতের কব্জিতে শক্ত করে বেঁধে দিলো।তারপর ব্যাগ থেকে স্কচ টেপ বের করে, ছেলেটার ঠোঁট থেকে শুরু করে ঘাড়ের পেছন পর্যন্ত শক্ত করে কয়েকবার প্যাঁচালো।অতঃপর দাঁড়িয়ে গেলো।”

“হৃদয়-হরণ করা মুচকি হাসি দিয়ে বললো,
‘ওঠ….তোকে একটা লাস্ট চান্স দিচ্ছি।এই চার দেয়ালের মধ্যে যদি আমায় ধরতে পারিস,তাহলে তোকে ছেড়ে দিবো।আর যদি না ধরতে পারিস,তাহলে এখানেই তোর সাথে রঙ্গলীলা করবো।ওহ!তুই আবার ওগুলো ভাবিস না।আমি আবার ‘গে’ নই।’বলেই ডেভিল হাসলো নির্জন।”

“একে তো অনাবৃত পিঠে লা**থি পড়ায় ছেলেটার চামড়ার অবস্থা নাজেহাল।তার উপর নির্জন যেভাবে তার ভারিক্কি শরীর নিয়ে বসেছিলো, এতে শরীরের বাকি শক্তিটুকুও নিস্তেজ হওয়ার পথে।তবুও ছেলেটি শেষ সঞ্চয় করা শক্তি টুকু দিয়ে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলো।একবার হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেলো।সেটা দেখে পৈ**শাচিক হাসলো নির্জন।ততক্ষণে নির্জন তার চশমা খুলে ব্যাগে রাখল।তারপর একটা কালো মাস্ক এবং কালো সানগ্লাস পড়লো।যুবকটি উঠতে গিয়ে আবারও হুমড়ি খেয়ে পড়লো।সেদিকে তাকিয়ে তৃপ্তির হাসি দিয়ে নির্জন কমিউনিটি সেন্টারে প্রথমে যেই গেটআপে ঢুকেছিলো,সেগুলো আবার পরিধান করলো।ততক্ষণে যুবকটি টলমল শরীরে উঠে দাঁড়ালো।এই মুহূর্তে তার শ্বাস নিতেও খুব কষ্ট হচ্ছে।কারণ তার মুখ খুব শক্ত করে বেঁধে রেখেছে নির্জন।তবে সে এটা বুঝে গেছে, যে সে এখন মৃ**তুপুরীতে আছে।এখান থেকে নিস্তার পাওয়া খুব কঠিন।এই মুহূর্তে যদি কেউ এই রুম টি তে চলে আসত;তাহলে হয়তো মিরাক্কেল হতো।বেঁচে যেতো তার প্রাণ।কিন্তুু ভাগ্য তার সহায় হলো না।”

“নির্জন ব্যাগ থেকে তার প্রয়োজনীয় কা**টাকা**টির ধা**রালো অস্ত্র গুলো বের করলো।এগুলো তার ব্যাগের গোপন একটি পকেটে সবসময় থাকে।”

“কুটিল হেসে নির্জন বললো,’তাহলে খেলা শুরু হোক;রেডি,স্টেডি,গো…
নির্জন রুমের এক কর্ণারে গিয়ে বললো,
‘কাম অন বেবস্,আমি এখানে।”

“ছেলেটি সেই শব্দ অনুসরণ করে সেদিকে যেতে থাকল।নির্জন কুটিল হেসে সেখান থেকে সরে গিয়ে আবারও বললো,’কানামাছি ভোঁ ভোঁ, যাকে পাবি তাকে ছোঁ।”

“ছেলেটি বুঝলো,লোকটার মাথার দশটা তার-ছেঁড়া।সে একজন ভয়ং**কর সাইকোপ্যাথ।এই মৃ**ত্যুপুরী থেকে কিভাবে রেহাই পাবে সে?’ভেবে আবারও নির্জনের শব্দ অনুসরণ করে সেদিকে যেতে থাকল।এভাবে খেলা চললো ৭ মিনিট।”

“নির্জন হাতে থাকা ঘড়ির দিকে লক্ষ্য করে ভাবলো,
‘অনুষ্ঠান শেষের পথে।যা করার দ্রুত করতে হবে।”

ভেবে বাঁকা হেসে এইবার দেয়ালের কর্ণারে গিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে বললো,
‘আয়, আয় এদিকে আয়..তোর জন্য আমার খুব মায়া হচ্ছে রে..।আয়,আমি নিজে থেকেই তোর কাছে ধরা দিবো।অনেকক্ষণ খেলেছিস;খুব হাঁপিয়ে গেছিস,আহারে..।’বলেই কুটিল হেসে বুকের ওপর দুই হাত ভাজ করে সেখানে দাঁড়িয়ে রইলো।”

“নির্জনের কথা শুনে যুবকটি নিজের অজান্তেই খুশি হলো বেশ।সে দৌড়ে গিয়ে নির্জন কে ধরতে গেলেই,তৎক্ষণাৎ নির্জন সেখান থেকে সরে গেলো।যুবকটির কপাল থেকে শুরু করে পুরো মুখোমন্ডল দেয়ালে গিয়ে প্রচন্ড ভাবে আ**ঘাত পেলো।বসে পড়লো ফ্লোরে।উফফ..ব্যথায় নাক-মুখ কুঁচকে যেতে চাইলো।কিন্তুু নির্জন যেভাবে কালো কাপড় দিয়ে চোখ এবং স্কচ টেপ দিয়ে মুখ বেঁধে দিয়েছে।তাই চেয়েও তার বাহ্যিক অভিব্যক্তি টুকু প্রকাশ করতে পারলো না।আহ!কি যন্ত্রণা;কি কষ্ট!এর থেকে তো মৃ**ত্যুও শ্রেয়।’মনে মনে আওড়ালো যুবকটি।”

“মাইন্ড গেমার নির্জন বুঝতে পারলো,ছেলেটির যন্ত্রণা।কিন্তুু এই যন্ত্রণা নির্জনের কাছে দুধ-ভাতের মতো।এর থেকেও বেশি যন্ত্রণা পেয়েছে সে।তাই তো সে আজ শক্ত পাথরে পরিণত হয়েছে।সেই শক্ত পাথরের বুকে অচিরেই এক ফালি সুখ হয়ে ধরা দিয়েছে নিধি।আর তার দিকে নজর দিয়েছে নর**পিশাচ।ছাড়বো না..কাউকে ছাড়বো না।’বিড়বিড় করে বলে যুবকটির দিকে হিং**স্র দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো নির্জন।তড়িৎ গতিতে মস্তিষ্কের উগ্র পোকা গুলো কিলবিল করে উঠলো।”

“বাঘের ন্যায় হিং**স্র গ**র্জন করে, দ্রুত পায়ে যুবকটির কাছে গিয়ে স্পাইক করা চুল গুলোকে টেনে ধরে বললো,

‘তোর সাহস তো কম নয়।তুই আমার ডার্ক কুইনের দিকে নোং**রা দৃষ্টি দিয়েছিস।এই..তোর বাসার ঠিকানা বল..সব ধ্বংস করে ফেলবো।বল..ঠিকানা বল।কি হলো বলছিস না কেনো?উফফ!প্রচন্ড রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে আমার।
কাম অন,টেল মি!স্কাউন্ড্রেল,শু…র।
আরও বিভিন্ন টাইপের গা**লাগা**লি করতে থাকল নির্জন।মুখ যেনো আজ লাগামহীন ঘোড়ার ন্যায় ছুটছে।কপালের নীলাভ রগ গুলো রাগে দপদপ করছে।কপালের চামড়া ভেদ করে বিন্দু বিন্দু নোনা ঘাম বেরিয়ে আসছে।সেগুলো কে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুছে,যুবকটির দিকে হিং**স্র দৃষ্টি নিক্ষেপ করে গলা টিপে ধরলো।কঠোর স্বরে ফের শুধালো,
‘কি হলো?এতক্ষণ যাবৎ জিজ্ঞেস করছি,বলছিস না কেনো?”

“নির্জন আকস্মিক গলা টিপে ধরায় প্রচন্ড ভয়ে,আর নিঃশ্বাস আটকে যাওয়ায়,যুবকটি গোঙাতে শুরু করলো।গোঙানির আওয়াজ কর্ণকুহরে যেতেই নির্জন বুঝতে পারলো,মুখে স্কচ টেপ দেওয়াতে ছেলেটি কথা বলতে পারছে না।তাহলে ঠিকানা বলবে কিভাবে?’
ভেবে হো হো করে হেসে উঠলো নির্জন।কিছু একটা ভেবে, মোটা রশি দিয়ে ছেলেটির পা দু’টো শক্ত করে বাঁধলো।তারপর ছেলেটির মুখ থেকে স্কচ টেপ খুলে দিলো।চোখে বাঁধা কালো কাপড় টিও খুলে দিলো।কিন্তুু হাতের বাঁধন খুললো না।”

“চোখ-মুখ খুলে দেওয়ায় দীর্ঘ সময় পর এতো যন্ত্রণার মাঝেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো যুবকটি।অস্ফুটস্বরে বললো,’কে তুই?একবার সামনে আয়।”

“হো হো করে হেসে উঠলো নির্জন।মেকি স্বরে বললো,’উমম.. আমি তোর সামনেই আছি।এই যে দেখ আমায়।”

“মুখ ঢেকে আছিস কেনো?মুখ দেখা।আর আমাকে এভাবে মা**রার কারণ কি? সেটাও বল।” (মৃদু আর্তনাদ করে বললো যুবকটি)

“নির্জন ডেভিল হেসে ছেলেটির প্যান্টের পকেট থেকে আইফোন বের করলো।ফিচেল হেসে বলো,’বাহ!বেশ বড়লোক্স তুই।বোঝাই যাচ্ছে, বাপের হোটেলে বসে মাছি মা**রিস।ওকে নো প্রবলেম,চল একটা সেলফি তুলে নে।জীবনের শেষ সেলফি।”

“কিরে..তোর ফোনে দেখি লক দিয়ে রেখেছিস!নে.. নে লক খুলে দে।ওহ!তুই তো পারবি না।এক কাজ কর,আমাকে বল,কোন লক দিয়েছিস।”

“যুবকটি জানে লক না খুললে, এখনই তার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে হবে।এতো তাড়াতাড়ি ম**রতে চায় না সে।তাই মৃদু স্বরে বললো,’ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলের ফিঙ্গার লক।”

“নির্জনের মুখে কুটিল হাসি ফুটে উঠলো।যুবকটির চুলগুলো শক্ত করে টেনে ধরে বললো,
‘বাহ!তুই কতো ভদ্র।জানিস,আমি না বেশি কথা বলতে একদম পছন্দ করি না।তবে আমার শিকারদের সাথে মৃ**ত্যুর আগ মুহূর্তে গল্প করতে খুব পছন্দ করি।তাদের মনের কথাগুলো খুব উপভোগ করে শুনি।আমি তাদের সাথে ভীষণ ফ্রেন্ডলি হাহাহা।’
‘আমার হাসি টা সুন্দর না?আই নো,আমার হাসি চমৎকার!আমার ডার্ক কুইন সবসময় বলে।তখন আমার কি যে ভালো লাগে।মন চায়,ওর সাথে ডার্ক রোমান্স করি।কিন্তুু এখন তো সেটা সম্ভব নয়।ও যখন আমার কথা না শুনবে;তখন করবো।আর ভালোভাবে শুনলে নরমাল রোমান্স করবো।যদিও আমার নরমাল রোমান্সের লোড নিতেও ওর একটু কষ্ট হবে।তবে ধীরে ধীরে অভ্যাস হয়ে যাবে।’
বলেই চোখ-মুখ কুঁচকে বললো,’এই তোর কাছে আমি আমার ডার্ক কুইনের কথা বলছি কেনো?তুই তোর কান দু’টো দিয়ে আমাদের পার্সোনাল কথা শুনলি কেনো?”

“যুবকটি নিভু নিভু চোখজোড়া দিয়ে একমনে তাকিয়ে রইলো নির্জনের দিকে।যেন সে মৃ**ত্যুর প্রহর গুণছে।আর চোখের সামনে স্বয়ং ভয়ং**কর য**মদূত দেখছে।অস্ফুটস্বরে কিছু বলতে চাইলো,কিন্তুু বলতে পারলো না।তার আগেই নির্জন ওর পেছনে বেঁধে রাখা ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলের ছাপ নিয়ে ফোনের লক খুলে ফেললো।”

“ফোনের লক খুলে মুখে হাত দিয়ে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকল নির্জন।বিস্ময়ের স্বরে বললো,
‘একি রে..তোর সব অ্যাপস গুলো তে এমন তালা ঝুলিয়ে রেখেছিস কেনো?আবার দেখি ‘গ্যালারি লক অ্যাপস’ নামিয়েছিস।’
শ**য়তানি হাসি দিয়ে আবার বললো,
‘উমম… বুঝেছি হটি-নটি কিছু আছে তাই না?হুম..বুঝি,বুঝি.. তোকে দেখেই বোঝা যায়।আচ্ছা, আপাতত আমায় গ্যালারির লক বললেই হবে।দেখি এটার মধ্যে তুই কি কি দেখিস।ছু**রির আ**ঘাত খাওয়ার আগে ঝটপট বল।”

“যুবকটি নিরুপায় হয়ে গ্যালারির লক বলে দিলো।নির্জন লক খুলতেই,তার চোখ জোড়া ছানাবড়া হয়ে গেলো।যা ভেবেছিলো তাই হলো।একবার মোবাইলের দিকে তাকিয়ে,আবার ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ওই তোকে তো আমার এখন সন্দেহ হচ্ছে!তুই আদৌ পুরুষ নাকি মহিলা নাকি থার্ড জেন্ডার?এখানে তো মিক্স ভিডিও প্লাস ফটো আছে।’

‘দেখি..দেখি,বিষয়টি এক্সপেরিমেন্ট করতে হবে।’বলেই ছেলেটির প্যান্টে হাত দিতেই,পরক্ষণে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হাসি দিয়ে বললো,’উহুম..এখন এগুলো দেখে সময় নষ্ট করে লাভ নেই।এগুলো পোস্টমর্টেম এ উঠে আসবে।আমি তাদের সাহায্য করার জন্য একটু কাজ এগিয়ে দেই।তার আগে আমার চাঁদ মুখ খানা দেখে নে।আমার চেহারা দেখে আবার ক্রাশ খাবি না।তোকে তো আমার সন্দেহ হচ্ছে।তবে আমার ডার্ক কুইনের দিকে তাকানো তোর উচিত হয় নি।’
বলেই নিজের বুকের বা পাশে হাত রাখল নির্জন।হিং**স্র স্বরে বললো,’ এই তাকা,এদিকে তাকা..দেখ দেখ,তুই যখন আমার ডার্ক কুইনের দিকে নোং**রা দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলি;তারপর তোর ওই খশখশে জিহ্বা টা নাড়াচাড়া করছিলি,তখন আমার এখানে..এই যে এখানে খুব কষ্ট হচ্ছিলো।আমার #হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ হচ্ছিলো।কিরে তাকাচ্ছিস না কেনো?”

“নির্জনের ভ**য়ংকর রূপ দেখে যুবকটির নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে।নির্জন ঘাড় কাত করে র**ক্তিম দৃষ্টিতে ছেলেটির দিকে তাকালো।এই মুহূর্তে নির্জনের ভয়ং**কর রূপ যদি কেউ দেখতো,সে অকপটে বলে দিতো
‘সে একজন ভয়ং**কর সিরিয়াল কিলার;যার সংক্ষিপ্ত নাম হলো ‘সাইকো’।”

“প্রচন্ড ভয়ে ছেলেটির চোখজোড়া স্থির হয়ে তাকিয়ে রইলো নির্জনের দিকে।সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে, নির্জন আগে থেকে বের করা ধা**রালো দু’টি ছু**রি দেখতে থাকল।একটা ছোট,আরেকটা বড়।আর সাথে একটা কালো রঙের কলম বের করলো।অফিসের এম ডি তাকে গিফট দিয়েছিলো।”

“নির্জন দু’টো ছু**রি দেখিয়ে হাসি মুখে বললো,’দেখ ছু**রি দু’টো চকচক করছে,তাই না?যেদিন ডার্ক কুইন ফোন করে আমায় ভালোবাসার কথা জানালো,তার পরদিন এই ছু**রি দু’টো কিনেছি।এই তুই এখন আমার ডার্ক কুইন কে,সেটা আবার জিজ্ঞেস করিস না।”

“আচ্ছা শোন,বড় ছু**রি টা দিয়ে তোর হাতের কব্জি কা**টবো বুঝেছিস?কারণ, তুই ওই হাতের কব্জি নাড়িয়ে ওয়েটার কে মিষ্টি দই দেওয়ার কথা বলেছিলি।আর ছোট ছু**রি দিয়ে তোর হাতের আঙ্গুল গুলো,নখ গুলো কা**টবো।তারপর তোর কান আর জিহ্বা কা**টবো।কারণ,তুই ওই নোং**রা কান দিয়ে আমার ডার্ক কুইনের মিষ্টি কন্ঠস্বর শোনার চেষ্টা করেছিস, আর জিহ্বা নোং**রা ভাবে নাড়িয়ে খারাপ ইঙ্গিত করেছিস।তাই এইসব আগাছা কে**টে ফেলবো।তাহলে তোর শরীর টা কিছুটা শুদ্ধ হবে।হাহাহাহা দারুণ আইডিয়া তাই না?আমার আবার কা**টাকা**টি করতে খুব ভালো লাগে।”

“আরও শোন,এই কলম টা দেখছিস,এটা দিয়ে তোর চোখের কালো মণিতে ইচ্ছে মতো আ**ঘাত করে উঠিয়ে ফেলবো।কারণ, ওই চোখজোড়া দিয়ে শতশত নারীর দিকে লোলুপ দৃষ্টি দিয়েছিস,আর সবচেয়ে বড় অপরাধ করেছিস আমার ‘হার্ট কুইনের’ দিকে তাকিয়ে।’

‘উফফ!বকবক করতে করতে আমার সফট গাল দু’টো ব্যথা হয়ে গেলো।এখন শুভ কাজ টা করে ফেলি।জানিস,অনেকদিন যাবৎ মানুষ শিকার করা হয় না।তাই হাত টা কেমন কাঁচা হয়ে গেছে।ডার্ক কুইন যেহেতু এসে গেছে, এখন হাত টা আবার পাঁকা করতে হবে।বুঝতেই পারছিস, লাভ লাইন কে প্রোটেক্ট করতে হবে।”

“ওকে, এইবার ফাইনাল রাউন্ড শুরু হবে।সেটা হলো কা**টাকা**টির রাউন্ড।আর এই রাউন্ডে কোনো প্রতিযোগী থাকবে না।আমি একাই থাকব।আর বিচারক থাকবে আমার দুই বেস্ট ফ্রেন্ড ‘হৃদয়’ এবং ‘মন’।’
বলেই ডেভিল হাসল নির্জন।তারপর নিজের মুখের মাস্ক আর সানগ্লাস খুলে ফেললো।ছেলেটি নিভু নিভু চোখে নির্জন কে শেষ দেখা দেখলো।কিন্তুু ততক্ষণে মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্র কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।তাই চিনতে পারল না নির্জন কে।”

” ব্যাস শুরু হয়ে গেলো নিখুঁত কাজ।খুব মনযোগ দিয়ে নির্জন প্রথমে যুবকটির মুখ আবারও স্কচ টেপ দিয়ে বেঁধে দিলো,যেন চি**ৎকার করতে না পারে।তারপর তার হাতে বড় ছু**রি দিয়ে গভীরভাবে টান দিলো এবং নীলাভ রগ গুলো ধীরে ধীরে কা**টল।অতঃপর সন্তর্পণে হাত থেকে কব্জি দ্বয় আলাদা করে নিলো।মৃ**ত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে যুবকটি তখনই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো।নির্জন সেদিকে তাকিয়ে এমনভাবে মুচকি হাসি দিলো,যেন কিছুই হয় নি।তারপর আবারও কা**টাকা**টিতে মনযোগ দিলো।”

“মুখ থেকে স্কচটেপ খুলে বিভ**ৎস হাসি দিয়ে যুবকটির মুখ ফাঁক করে জিহ্বা টা ক্যা**চক্যা**চ করে কে**টে নিলো।কিছুটা র**ক্ত ছিটকে আসলো নির্জনের মুখমন্ডলে।এগুলো নির্জনের কাছে কোনো ব্যাপার না।সে ব্যাগ থেকে একটি কালো রঙের সফট রুমাল বের করে রক্তগুলো মুছে নিলো।তারপর কান দু’টো অতি নিঁখুত ভাবে কা**টলো।শেষে চোখ দু’টো কে ছু**রির সাহায্যে খুলে, কুচকুচে কালো রঙের কলমটি দিয়ে ইচ্ছেমতো আ**ঘাত করলো।এক পর্যায়ে চোখ ভেদ করে মণি দু’টো বের করে নিয়ে এলো।”

“পরিশেষে ফিচেল হেসে বললো,’ওউ নো…বেবস্, তোর তো একটি সেলফি তোলা হলো না।আচ্ছা বাদ দে,একটু পর মিডিয়া এসে শতশত সেলফি তুলবে।সেগুলো আবার ফেইসবুকের নিউজফিডে ঘুরবে।সবাই সেখানে স্যাড ইমোজি দিবে।চিন্তা করিস না,আমিও দিবো।আহারে সোনা টা..কত কষ্ট পেয়ে ম**রলো।অবশ্য শুনশান জায়গায় থাকলে এর থেকে ডাবল কষ্ট পেতি।একটুর জন্য কম কষ্ট দিলাম;বুঝিসই তো,পাবলিক প্লেস।”

“আচ্ছা, এখন তোর কুকর্ম গুলোর মধ্যে সবচেয়ে হট পিকচার টা ফোনের ওয়াল পেপারে সেভ করে দেই।’যেনো পুলিশ আর পাবলিক দের বুঝতে কষ্ট না হয়।’বলেই নির্জন গ্যালারির সবচেয়ে নি**কৃষ্ট পিকচার ওয়াল-পেপারে সেভ করে দিলো।তারপর শুভ্র রঙা রুমাল দিয়ে সুন্দর করে ফোনটা মুছে দিলো।যেনো ফরেনসিক রিপোর্টে কিছু না আসে।নিজের ফোন টা তো আগেই সেকেন্ড ফ্লোরের ওয়াশরুমের ভেন্টিলেটরে রেখে এসেছে।”

“যুবকটির দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হেসে, ওর পুরো শরীরে রুমাল দিয়ে মুছে র**ক্ত আরও লেপ্টে দিলো।তারপর বললো,
‘ওয়াও প্রিটি বয়।র**ক্তমাখা শরীরে দারুণ লাগছে তোকে।আয় তোর জন্য একটা গান হয়ে যাক।নির্জন গেয়ে উঠলো,

🎶র**ক্তের ধারা বয়ে যায় সীমানার বাইরে,
নরকের দরজা খোলে, প্রতিশোধের আগুনে,
আঁকা হয় এক নৃ**শংস চিত্র,
যেখানে মিশে যায় প্রাণের হাহাকার,
মৃ**ত্যুর উৎসব বাজে র**ক্তের রঙে,
আঁকা হয় এক নরকের গান,নতুন কোনো ঢঙে..🎶

~মেহের~

” সুরেলা কন্ঠে গানটি গেয়ে বললো,
‘দারুণ হয়েছে তাই না?হাহাহা জানিস, আমার অনেক সৃজনশীল প্রতিভা আছে।ক্লাসে এর জন্য খুব প্রশংসিত ছিলাম।আচ্ছা, এখন আমার চলে যেতে হবে।একটু পর তো এখানে আবার ভীর জমে যাবে।তোর জন্য একটা কবিতা লিখছি।একটু ওয়েট কর।’

“বলেই ব্যাগের ভেতর থেকে কলম,আর একটি খাতা বের করে ৪-৫মিনিট ভাবলো।তারপর ছি**ন্নভি**ন্ন বিভ**ৎস লা**শটির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে লেখা শুরু করলো।লেখাগুলো অন্যভাবে লিখলো,যেনো কেউ বুঝতে না পারে, যে এটা নির্জনের হাতের লেখা।”

“লেখা শেষে নিখুঁত দৃষ্টি দিয়ে কয়েকবার পর্যবেক্ষণ করলো।কোনো বানানে ভুল হওয়া যাবে না।
নাহ!বানানে ভুল নেই।তারপর খাতা থেকে পৃষ্ঠা ছিঁড়ে, যুবকটির ক্ষ**ত-বিক্ষ**ত লা**শের পাশে রেখে দিলো।তারপর শুভ্র রঙা রুমাল দিয়ে কাগজটি সুন্দর করে মুছে দিলো।এখানেও যেনো কোনো হাতের ছাপ না থাকে।অতঃপর বললো,
‘তুই তো এতক্ষণে আত্মা হয়ে গেছিস।ওকে, এটা তোর আত্মার জন্য উৎসর্গ করলাম।’
বলেই শূন্যে তাকিয়ে বললো,
‘ওহে আত্মা শোন,এই ভয়ং**কর সুন্দর কবিতাটা তোর জন্য লিখেছি।আমি চাই না, তুই নি**কৃষ্ট ‘কারিন জ্বিন’ হয়ে আমার ডার্ক কুইনের দিকে নজর দিস।আচ্ছা মনযোগ দিয়ে শোন,

“যদি তোমার চোখ পড়ে তার দিকে,
চোখের চামড়ায় আঁচড়ের অপেক্ষা,
প্রিয়মণির দিকে নজর দিও না,
অন্যথায় পাবে ভয়ং**কর অভিশাপ।

তার পাশ থেকে থেকো তুমি দূরে,
অন্যথায় হবে তীব্র পরিণতি,
মনে রেখো, আমার ক্রোধের ছাঁয়া,
তোমার জন্য হয়ে উঠবে এক দুঃস্বপ্ন।

যদি তুমি তার দিকে এক মুহূর্তও চোখ রাখো,
জানো, তোমার ভ**য়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করে।
প্রিয়তমার দিকে যে দৃষ্টি সঞ্চারিত হয়,
সে চোখকে আমি চিরকাল শান্ত করে দেবো, বুঝে নাও।

তার অক্ষরে যদি থাকে অন্য কারো চিন্তা,
তোমার জন্য অপেক্ষা করছে এক কঠোর শাস্তি।
মিথ্যা দৃষ্টির ফলাফল হবে ভয়ং**র ও মারা**ত্মক,
তার নিরাপত্তার জন্য আমি নিশ্চিত করবো প্রতিটি রাতের গার্ড।

প্রিয়তমার দিকে তোমার নজর পড়লে,
আমার প্রতিশোধের অগ্নিতে তুমি পুড়বে, বুঝে নাও।
তার প্রতি তোমার চাহনি যদি একটুও হলে,
তোমার জীবন হয়ে উঠবে এক ভ**য়াবহ বিপদের কাল।
এ যেন মৃ**ত্যু যন্ত্রণার সুমধুর ফলাফল।”

~মেহের~

“নির্জন কবিতা আবৃত্তি করে ব্যাগপত্র গুছিয়ে, আবারও সেই শেরওয়ানি পরিধান করে রুমের দরজা খুলে আশেপাশে তাকিয়ে বললো,
‘এখানে সি সি ক্যামেরা থাকলে,মার্ডার টা অন্যভাবে করা হতো।’বলেই বাঁকা হেসে একটু এগিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে মিলিয়ে গেলো।তারপর সেকেন্ড ফ্লোরের ওয়াশরুমে গিয়ে মোবাইল নিয়ে, সেখান থেকে বেরিয়ে সরাসরি লিফট দিয়ে নেমে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলো।”

———
“এদিকে নিধির চোখজোড়া নির্জন কে খুঁজে হয়রান।তার ফোন টাও বন্ধ।মন খারাপ করে বসে থাকল নিধি।পরক্ষণেই ভাবলো,
‘হয়তো খাওয়া-দাওয়া করে চলে গেছে।কি যেনো একটা শুভ কাজে যাওয়ার কথা বলেছিলো।হয়তো, সেই কাজে গেছে।ধুর,ভাল্লাগে না।”

“নিধির পাশের চেয়ারে বসে তোহার মনে খুশিতে লাড্ডু ফুটছে।মাহির কি গিফট দিয়েছে,সেটা দেখার জন্য যেনো তর সইছিলো না।তাই এখানেই দেখা শুরু করলো।শপিং ব্যাগ খুলতেই, তোহার চোখজোড়া খুশিতে চকচক করে উঠলো।তোহার পছন্দের ব্রাউন কালার শাড়ি,পায়েল,এয়ারিং,ব্রেসলাইট থেকে শুরু করে ম্যাচিং জুয়েলারি।নেভি ব্লু কালার বোরকা,সাথে ম্যাচিং হিজাব।সেই সাথে একটি নীল রঙের ভাজ করা চিরকুট।
তোহা তো খুশিতে পা**গল প্রায়।”

“মাহির বিদায় নিয়ে কিছুক্ষণ আগেই চলে গেছে।তাই খুশিটা আর শেয়ার করা হলো না।তোহা চিরকুট টি আর পড়লো না।বাসায় গিয়ে পড়বে।’ভেবে শপিং ব্যাগে রেখে দিলো।অতঃপর মনে মনে মাহির কে অনেকবার ‘আই লাভ ইউ’ বলে ফেললো।প্রিয়জনের কাছ থেকে ছোট ছোট উপহার পেলে,মেয়েরা ভীষণ খুশি হয়।”

———–
“বিদায়ের সময় ঘনিয়ে এসেছে। দিগন্তের চোখজোড়া তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু নির্জন কে অনেকবার খুঁজেছে।কয়েকবার ফোন ও করেছে।কিন্তুু বারবার বন্ধ পাচ্ছে।কিছুই করার নেই।নির্জনের দেওয়া গিফটের দিকে তাকিয়ে ভাবলো,
‘তুই সত্যি সবার থেকে আলাদা নির্জন।তোর এতো কাছে থেকেও, আজ পর্যন্ত তোর মন পড়তে পারলাম না।এটাই আমার সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা।”

“এদিকে মা-বাবা থেকে শুরু করে সব মহিলাদের জড়িয়ে ধরে, বিদায়ের কান্না জুড়ে দিয়েছে নাদিয়া।সেই সাথে কনে পক্ষের আত্মীয়-স্বজনও প্রতিযোগিতা দিয়ে কান্না করছে।সবার ভারী মেকআপ নষ্ট হয়ে, ভূতের মতো অবস্থা তৈরী হয়েছে।বিষয়টি অতি স্বাভাবিক।নিজের বাড়ি ছেড়ে পরের বাড়িকে এবং সেই সদস্য গুলোকে আপন করে নেওয়ার বিষয়টি একজন নববধূর কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।”

“নাদিয়া কে এত কান্না করতে দেখে,দিগন্ত সবার মধ্যে ওর হাত ধরে উত্তেজিত স্বরে বলে উঠলো,
‘বউ গো..ও বউ..ওওও হানি এতো কেঁদো না সোনা।বাসায় গিয়ে একটু পর তো আবার কাঁদতে হবে;এখন একটু কম কাঁদো প্লিজ হানি।”

“দিগন্তের এহেন কথা বুঝতে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে সবার।যখন বিষয়টি বুঝলো,সবাই যেনো লজ্জায় মিইয়ে গেলো।”

#চলবে…
(উফফ!অনেক দিন পর আজকের পর্ব টি লিখে মানসিক শান্তি পেলাম।কিছুক্ষণের জন্য নিজেকে মনে হচ্ছিলো ‘সাইকো লেডি কিলার’।
যাইহোক, আপনাদের লেখিকা কিন্তুু খুব সহজ-সরল।আর গল্পের ভিলেনের ‘সাইকো টাইপ কবিতা+গান’ ভাবতে কয়েক মিনিট লাগলেও,আপনাদের লেখিকার কয়েক ঘন্টা সময় লেগেছে।এই গল্পে যতগুলো কবিতা থাকবে,সবগুলোর শব্দ চয়নে একেকটি ম্যাসেজ থাকবে।আশা করি, আমার আসল সাইকো লাভার রা বুঝবে।সবার গঠনমূলক মন্তব্য চাই।ভালোবাসা অবিরাম।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here