হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ #পর্বঃ২৬ #লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

0
57

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ২৬
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

[কঠোর থেকে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য।]

“নাদিয়া কে এত কান্না করতে দেখে,দিগন্ত সবার মধ্যে ওর হাত ধরে উত্তেজিত স্বরে বলে উঠলো,
‘বউ গো..ও বউ..ওওও হানি এতো কেঁদো না সোনা।বাসায় গিয়ে একটু পর তো আবার কাঁদতে হবে;এখন একটু কম কাঁদো প্লিজ হানি।”

“দিগন্তের এহেন কথা বুঝতে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে সবার।যখন বিষয়টি বুঝলো,সবাই যেনো লজ্জায় মিইয়ে গেলো।”

“বরপক্ষ এবং কনে পক্ষের আত্মীয়-স্বজন একে-অপরের দিকে বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।এতক্ষণে সবার মধ্যে রটে গেলো,’দিগন্ত বউ পা**গল।’
সবার কানাঘুঁষা কিছুটা শুনতে পেলো দিগন্ত।মুচকি হেসে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো,
‘দীর্ঘ ২৭বছর বিয়ে করলাম,এখনও কি আমি বাচ্চা হয়ে থাকব নাকি?বউ পা**গল হওয়ার জন্যই তো বিয়ে করেছি।”

“দিগন্তের এহেন কথা শুনে, নাদিয়া কান্না থামিয়ে কটমটিয়ে তাকিয়ে রইলো।যেনো এখনই দিগন্ত কে কাঁচা চিবিয়ে খাবে। এদিকে নিধি আর তোহা হাসতে হাসতে একে-অপরের ওপর পড়লো।আগত অতিথিরাও হাসতে থাকল।সেখানে আগত বয়স্ক লোক গুলো বলে উঠলো,
‘ছিঃ ছিঃ ছিহ! এ কোন যুগে বাস করছি আমরা?আজকালকার ছেলে-মেয়েরা লজ্জা-শরম সব গুলিয়ে খেয়েছে।’
একজন বয়স্ক পুরুষ বলে উঠলেন,
‘আমাদের যুগে বাসর ঘরে রুমে ঢুকে, তারপর ঘোমটা খুলে বউয়ের মুখ দেখতাম।এমনকি গুরুজনদের সামনে স্ত্রীর সাথে ভালোভাবে কথাও বলতাম না।আর এখন দেখছি,ছেলে-মেয়েরা গুরুজনদের সামনেই,ছিঃ, ছিঃ, ছিহ!”

“এদের কথা শুনে লজ্জায় মাথা কা**টা গেলো নাদিয়ার।চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে রইলো দিগন্তের দিকে।
দিগন্তের এইসব গায়ে মাখার সময় নেই।পাছে লোকে কিছু বলে।তবে এটা মানতে হবে,’ওল্ড ইজ গোল্ড।’

ভেবে দিগন্ত মুচকি হেসে বললো,
‘আপনাদের সমালোচনা শেষ হলে, আমি কি আমার বউ কে নিয়ে যেতে পারি?আমার কিন্তু্ু খুব ঘুম পাচ্ছে।’বলেই হাই তুললো দিগন্ত।
সবাই বাকরুদ্ধ হয়ে দিগন্তের কার্যকলাপ দেখতে থাকল।শুধু দেখলো না দিগন্তের বাবা।কারণ, তিনি আগেই নিচে গিয়ে গাড়ির সামনে অপেক্ষা করছেন।”

“অবশেষে অনেক কান্নাকাটির পর কনে বিদায় দিয়ে, সবাই যে যার বাড়ি চলে গেলো।দিগন্তের কিছু আত্মীয়-স্বজন তাদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য গাড়িতে উঠলো।দিগন্ত এবং নাদিয়া তাদের জন্য বরাদ্দকৃত ফুল দিয়ে সজ্জিত গাড়িতে উঠলো।ওদের গাড়িতে দিগন্তের এক কাজিন বসতে চেয়েছিলো,কিন্তুু দিগন্ত তাকে বিড়াল তাড়ানোর মতো পাঠিয়ে দিয়েছে।কারণ, গাড়ির মধ্যে তো একটু-আধটু রোমান্স করতে হবে।কতদিনের সাধনা বলে কথা।”

“গাড়ি চলছে তার আপন গতিতে।দিগন্ত সামনে থাকা অল্প বয়সী ড্রাইভার কে বললো,’এই পেছনের সিটের লাইট অফ করো তো,মাথা ব্যথা করছে।এখন একটু আরাম করবো।আর হ্যা, তোমার সামনের ওই আয়না টা অন্য দিকে ঘুরাও,আমার আনইজি লাগছে।’বলেই নাদিয়ার দিকে মুচকি হেসে তাকালো।”

“এদিকে নাদিয়া এখনও টিস্যু দিয়ে চোখের পানি মুছতে ব্যস্ত।অন্যদিকে কিছুক্ষণ পরপর ফ্যাঁচফ্যাঁচ করে নাক টানছে।সেটা দেখে খুব বিরক্ত লাগছে দিগন্তের।চোখ-মুখ কুঁচকে নাদিয়ার কাছে ঘেঁষে,ওর মাথা নিজের কাঁধের ওপর রেখে বললো,
‘আহারে..কাঁদে না লক্ষ্মী।দেখো এখনই নাক টানতে পারছো না।কিছুক্ষণ পর তো কয়েকবার শাওয়ার নেওয়ার ফলে আরও পারবে না।”

“রেগে গেলো নাদিয়া।কাঁধ থেকে মাথা উঠিয়ে বড় বড় চোখ করে তাকালো দিগন্তের দিকে।তেজি স্বরে বললো,
‘বিয়ে করার পর থেকে দেখছি তোমার মুখে কোনো লাগাম নেই।সবার সামনে তো আমার কান টা কে**টে দিলে,এখন আবার গাড়িতেও।এই তোমার কি লজ্জা-শরম সব আকাশে উঠে গেছে?”

“নাদিয়ার কথা শুনে শুকনো ঢোক গিললো দিগন্ত।মনে সাহস যুগিয়ে গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,
‘ঠিক বলেছো,তবে লজ্জা-শরম আকাশে ওঠে নি।শুধু তোমার সামনে উঠে গেছে।কি বলোতো,তোমাকে দেখলেই আমার মনে ড্রাম বাজে।এতদিন তো কিছু করতে পারিনি,শুধু জমিয়ে রেখেছিলাম।এখন তোমাকে পুরোপুরি পাওয়ার ফলে, সব আবেগ গুলো উতলে-উতলে পড়ছে হানি।আর এটা তো তোমার সৌভাগ্য, যে আমি তোমার জন্য এতটা পা**গলামি করি।দেখলে না, ওই বুড়ো লোকটা কি বললো?গুরুজনদের সামনেও নাকি বউয়ের সাথে কথা বলতো না।কতটা আন-রোমান্টিক দেখেছো?”

“দিগন্তের দিকে তীর্যক দৃষ্টিতে তাকিয়ে নাদিয়া বললো,
‘এটা কে আন-রোমান্টিক বলে না।বিবেক-বোধ আর সম্মান বলে।ঠোঁট কা**টা কোথাকার!”

“নাদিয়ার কথায় পাত্তা দিলো না দিগন্ত।নাদিয়ার মাথা এইবার বুকের কাছে আলতো করে চেপে ধরে বললো,
‘হানি,এখন যদি আমাকে আরেকবার অপমান করো ,তাহলে কিন্তুু বাসর টা এখানেই হয়ে যাবে।ড্রাইভার কে বের করে দিবো?”

বলেই আবার বললো,’উহুমম.. একদম উঁচু গলায় কথা বলবে না।এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছো, আমি কতটা নির্লজ্জ।এতদিন অনেক সহ্য করেছি আর নয়।”

“দিগন্তের এহেন কথায় অবাক হয়ে গেলো নাদিয়া।ভাবলো,’এ আমি কোন দিগন্ত কে দেখছি?ভীতু দিগন্ত দেখছি পুরো বীরপুরুষ হয়ে গেছে।নাহ!প্ল্যান টা চেঞ্জ করতে হবে।তাকে অন্যভাবে শাস্তি দিবো হিহিহি।’
ভেবে দিগন্তের বুকে চুপটি করে মাথা ঠেকিয়ে রাখল নাদিয়া।এদিকে নাদিয়ার মাথায় ঝটপট কয়েকবার চুমু দিয়ে ফেললো দিগন্ত।এই বিশেষ দিনটার জন্যই তো সে অপেক্ষার প্রহর গুণছিলো।”

———–
“টানা ৩০মিনিট শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হলো নির্জন।ধবধবে সাদা টাওয়াল পরিহিত নির্জনের উজ্জ্বল শ্যাম রঙা শরীরে বিন্দু বিন্দু পানির ফোটা বিদ্যমান। চুলে আলতো করে হাত বুলিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালো সে।ঘুরে ঘুরে নিজেকে বারকয়েক দেখলো।বাঁকা হেসে ভাবলো,
‘অনেক দিন পর মনের মতো শিকার ধরলাম।কিন্তুু শাস্তিটা মনের মতো হয় নি।যাক এটা তো জাস্ট ট্রেইলার, সামনে এমন অনেক আসবে;নো প্রবলেম।”

“আকস্মিক ভেতর থেকে ‘মন’ বলে উঠলো,
‘নির্জন খেলা টা কিন্তুু সেই হয়েছে।একেবারে ফা**টাফা**টি।প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকিয়েছো।আ’ম প্রাউড অফ ইউ।’
তৎক্ষণাৎ ‘হৃদয়’ ও বলে উঠলো,
‘সত্যি আমার ভাবনারও বাইরে খেলাটি চমৎকার ভাবে সম্পন্ন করেছো।তবে নিরিবিলি জায়গায় থাকলে খেলাটা আরও ভালো জমতো।আর তোমার প্রতিভা টা আরও বিকশিত হতো।ব্যাপার না,নেক্সট শিকার মনের মত হলে,তোমার ধামাকাদার পারফরম্যান্স দেখাবে।আমরা অপেক্ষায় থাকব।”

“নির্জন মুচকি হেসে বললো,
‘থ্যাংকস,সবসময় আমাকে এভাবে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য।আচ্ছা ডার্ক কুইন যদি কখনও আমার এই রূপ জেনে যায়,তখন কি হবে?”

“মন বলে উঠলো, ‘সিম্পল ব্যাপার,তাকে সবকিছু বুঝিয়ে বলবে।আর সে কি অবুঝ নাকি?এগুলো বলার পাশাপাশি, তুমি তাকে কতটা ভালোবাসো সেটাও শারীরিক-মানসিক ভাবে বুঝিয়ে দিবে।”

“তারপরেও যদি ও আমার ভালোবাসা কে অগ্রাহ্য করে, তখন কি করবো?”

“মন শ**য়তানি হাসি দিয়ে বলে উঠলো,
‘দেখো, তার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য এতদিন তুৃমি ধৈর্য ধরেছো।অবশেষে সফলও হয়েছো।এখন শুধু বিয়ে করাটা বাকি।বিয়ে করার পর তার সর্বস্ব তোমার।তার সর্বাঙ্গের ইঞ্চি তে ইঞ্চি তে তার প্রতি তোমার গভীর ভালোবাসা প্রকাশ করবে।তারপর ধীরে ধীরে তার সাথে তোমার আসল রূপের পরিচিতি ঘটাবে।প্রথম দিকে একটু কষ্ট হবে।কিন্তুু একসময় ধীরে ধীরে মানিয়ে নিবে।কারণ, তোমার নিঃস্বার্থ ভালোবাসায় তো কোনো খাঁদ নেই।”

“আর তারপরেও যদি না মানে,তাহলে আগেই তো বলেছি, তাকে শেষ করে ফেলবে।তবে দেহ কা**টবে না,জাস্ট শ্বাসরোধ করে অথবা চা**পাতি দিয়ে মাথা থেকে গলাটা আলাদা করে দিবে,তাহলেই হবে।আর এগুলো তো তোমার বাম হাতের খেলা।
তারপর রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করে তোমার ভালোবাসা প্রকাশ করবে,সিম্পল।
তবুও তাকে কারো দিকে তাকাতে দিবে না।সে শুধু,শুধু এবং শুধুই তোমার।’
মনের সাথে ‘হৃদয়’ ও তাল মিলিয়ে একই কথা বললো।ইদানীং মনের প্রতিটি কথায় হৃদয়ও সায় জানায়।”

“মন এবং হৃদয়ের যুক্তিযুক্ত কথা শুনে নির্জন ডেভিল হেসে বললো,
‘হুম ঠিক বলেছো,সে জীবিত অবস্থায়ও আমার;আর মৃ**ত অবস্থায়ও আমারই হবে হাহাহাহা..আমার ডার্ক কুইন।”

“আরও দীর্ঘ সময় নিজেদের মধ্যে কথা বলে,কিছু গুরুত্বপূর্ণ পৈ**শাচিক আলোচনা করে, মিটিং সমাপ্ত করলো নির্জন।অতঃপর ল্যাপটপে অফিসের কিছু ফাইল রেডি করে,নিধির সেই চিঠিটি পড়তে পড়তে অসংখ্যবার গভীর ভাবে চুম্বন করে, ঘুমের রাজ্যে পারি দিলো।”

———-
“বাসায় এসে বাবা-মায়ের সাথে নাদিয়ার বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পর্কে কিছুক্ষণ কথা বলে, নিধি আর তোহা নিজেদের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হলো।নিধির শরীর ভীষণ ক্লান্ত।তবুও নির্জন কে একবার ফোন করলো।কিন্তুু এইবারও সেই একই কান্ড ঘটল।ফোন সুইচ অফ।মুখে বিরক্তিভাব এনে ফোন টা বিছানায় খুব জোরে ছুঁড়ে মা**রলো নিধি।যেন প্রিয়জনের প্রতি সব অভিমান এই ফোনের ওপর দিয়ে ঝারলো।”

“এদিকে তোহা শপিং ব্যাগ থেকে মাহিরের দেওয়া সেই গিফট গুলো নতুন করে আবারও দেখলো।চোখে-মুখে রাজ্যের হাসি হেসে উঠলো তোহা।মাহিরের চিঠিতে আলতো করে ঠোঁট ছাঁয়ালো।অতঃপর নীল চিরকুটের চার ভাজ খুলে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে মনে মনে পড়তে থাকল।

“প্রিয়তমা স্বপ্নচারিনী,

কীভাবে তোমার কাছে নিজের অনুভূতিগুলো প্রকাশ করবো, তা নিয়ে ভাবতে ভাবতে কত রাত যে কে**টে গেছে, তা বলতেই পারব না। তুমি আমার জীবনকে এক নতুন অর্থ দিয়েছো, এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছো। তোমাকে যখন প্রথম দেখি, তখনই যেনো আমার হৃদয় বলে উঠেছিলো—
‘এই তো সেই মেয়ে, যার জন্য আমার সমস্ত অপেক্ষা, যার জন্য আমার সমস্ত স্বপ্ন।’

তোমাকে ‘স্বপ্নচারিনী’ বলে ডাকি, কারণ তুমি শুধু আমার স্বপ্নে আসো না, তুমি আমার বাস্তবতাকেও রাঙিয়ে দিয়েছো। তোমার হাসি, তোমার চাহনি, তোমার সেই মিষ্টি কথাগুলো—সবকিছু মিলিয়ে তুমি যেনো আমার হৃদয়ের একমাত্র অধিকারিণী। তোমার সঙ্গে কা**টানো প্রতিটি মুহূর্ত আমার জীবনে এক নতুন গল্পের সূচনা করেছে, এক নতুন অধ্যায়ের সৃষ্টি করেছে।

তুমি কি জানো, আমি তোমাকে কেবল ভালোবাসি না, তোমার সাথে আমার জীবনের সমস্ত পথচলা শেয়ার করতে চাই? আমি চাই, তোমার হাত ধরে একসাথে পথ চলতে, তোমার সঙ্গে আমার প্রতিটি সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিতে। আমি চাই, আমাদের জীবনের প্রতিটি অধ্যায় তুমি এবং আমি মিলে একসাথে লিখি।

তুমি কি আমার জীবনের গল্পের নায়িকা হতে চাও? তুমি কি চাও, আমরা একসাথে সেই স্বপ্নের রাজ্যে বাস করি, যেখানে প্রতিটি দিনই হবে আমাদের জন্য একটি নতুন সূচনা?

আমি তোমার উত্তর শোনার জন্য অপেক্ষা করছি। আমি জানি, তুমি আমার প্রতিটি স্বপ্নের অংশ হবে এবং সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে তুমি আমার পাশে থাকবে।

তোমার উত্তরের অপেক্ষায়,
তোমার স্বপ্ন পুরুষ মাহির”

————
“মাহিরের অনুভূতি মিশ্রিত চিঠিটি পড়ে, আবেগে নেত্রকোণায় নোনা জল চলে এলো তোহার।চিঠিটি বক্ষ মাঝে রেখে মনে মনে আওড়ালো,
‘আমি রাজি মাহির।খুব ভালোবেসে ফেলেছি আপনাকে।আমিও আপনাকে চিঠিতে আমার উত্তর জানাবো।আপু ঠিকই বলে,চিঠির মাধ্যমে প্রেম নিবেদনের অনুভূতিটাই অন্যরকম।’
ভেবে খোলা চিঠির মধ্যখানে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ালো তোহা।”

———–
“রাত সাড়ে ১১টা।দিগন্ত জামা-কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে যেতেই,সেদিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো নাদিয়া।মনে মনে বললো,
‘এইবার বোঝাবো তোমায়, এই নাদিয়ার ম্যাজিক কেমন হয়।রোমান্টিক ম্যাজিক দেখাবো তোমায়।বিয়ের আগেই আমাকে প্রেগন্যান্ট করার প্রতিশোধ তো আমি নেবোই নেবো।’
ভেবে ব্যাগভর্তি জামা-কাপড়ের মধ্যে থেকে একটা খয়েরি রঙের হাতা কা**টা নাইটি বের করলো।মুহূর্তের মধ্যেই পরনের লেহেঙ্গা খুলে ফেললো।তারপর ধীরে ধীরে জুয়েলারি গুলো খুলে ফেললো।তারপর নাইটি পড়ে আয়নার সামনে গিয়ে এপাশ-ওপাশ ফিরে ঢং করে হাসলো।অতঃপর ঠোঁটের কোণা কা**মড়ে কোমরে এক হাত দিয়ে, ঢং করে হেঁটে গিয়ে ওয়াশরুমের সামনে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো।”

“দিগন্ত শাওয়ার শেষ করে যখনই দরজা খুললো,নাদিয়াকে এমন আবেদনময়ী অবস্থায় দেখে তার চোখজোড়া ছানাবড়া হয়ে গেলো।দুই হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ জোড়া কঁচলে, আবারও তাকিয়ে বিস্ময়ের স্বরে বললো,
‘একি… তুমি দেখছি আমার থেকেও অ্যাডভান্স!আমি আরও ভাবলাম, এইসব উটকো ঝামেলা খুলতে কত সময় লাগবে!যাক ভালোই হয়েছে,আমার আর কসরত করতে হবে না।এখন ভালোয় ভালোয় শুভ কাজটা হলেই ভালো।’বলে চোখ টিপ মে**রে, ঠোঁট টিপে হাসলো দিগন্ত।”

“নাদিয়া মিষ্টি করে হেসে একবার পেছন ফিরে,আরেকবার সামনে ফিরে দিগন্ত কে আরেকটু আকর্ষণ করার চেষ্টা করলো।যখনই দিগন্ত নাদিয়ার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো,তখনই উচ্চস্বরে হেসে উঠলো নাদিয়া।দিগন্ত কিছু বুঝে ওঠার আগেই,তার বুকে ধা**ক্কা দিয়ে ওয়াশরুমের ভেতরে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।”

“আকস্মিক ঘটনায় হতভম্ব হয়ে গেলো দিগন্ত।সে তো নাদিয়ার মোহনীয় রূপে মগ্ন ছিলো।কিন্তুু এটা কি হলো?এভাবে রূপ দেখিয়ে দরজা আটকে দিলো কেনো?’
ভেবে জোরে দরজা ধা**ক্কাতে লাগল দিগন্ত।এদিকে নাদিয়া তো হেসে কু**টিকু**টি হচ্ছে।উচ্চ স্বরে বললো,
‘বাড়িতে অনেক আত্মীয়-স্বজন আছে।এভাবে চেঁচাতে থাকলে, সবাই এসে আমাকে নাইটি পড়া আর তোমাকে ওয়াশরুমে আটকানো অবস্থায় দেখলে কি হবে, ভেবে দেখেছো?লজ্জায় মুখ দেখাতে পারবে না।এটা হলো ইহান ভাইয়ার কাছে আমার নামে পেট বানিয়ে ‘অন্তঃসত্ত্বা’ বলার শাস্তি।ওখানে ১ঘন্টা থাকবে।তারপর ভেবে
দেখবো।”

“নাদিয়ার এহেন কথায় বেশামাল হয়ে গেলো দিগন্ত।নাদিয়া কে এই রূপে দেখে একে তো মনের নিষিদ্ধ অনুভূতি গুলো নাড়াচাড়া দিয়ে উঠেছে;তার ওপর এখন আবার মেলোড্রামা শুরু করেছে।’ভেবে নরম সুরে বললো,
‘হানি…ও হানি,আ’ম সরি সোনা।ওই বিয়ের বিষয় টি নির্জন বুদ্ধি দিলেও,প্রেগন্যান্সির বুদ্ধি টা আমার মাথায় এসেছে।নইলে ওই বেহায়া, ব্রিটিশ টা তো তোমার ঘাড় থেকে নামতো না তাই।আচ্ছা, আমি তোমার সামনে এসে অনেকবার কান ধরে উঠবস করবো।প্লিজ..এভাবে আমায় ওয়াশরুমে আটকে রেখো না।আমি তোমার স্বামী হই।একটুতো সম্মান করো।”

“দেখলে না, কত কষ্ট করে সবার সামনে তোমায় কোলে তুলে উপরে নিয়ে আসলাম।তারপর মধুচন্দ্রিমা দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য, আমার কাজিনগুলো কে ধমক দিয়ে পাঠিয়ে দিলাম।বুঝতে পারছো,আমার এখন কি অবস্থা?
হানি,এখানে বেশিক্ষণ থাকলে আমি নিশ্চিত অজ্ঞান হয়ে যাবো।আজকের তাপমাত্রা তো দেখেছো, ৩৯ডিগ্রি সেলসিয়াস।”

“হুমম, তুমি আমার ঠোঁট কা**টা,বেহায়া স্বামী।লু**চু কোথাকার!সবসময় এইসব চিন্তা তোমার মাথায় ঘুরপাক খায় তাই না?”

“অপরপাশ থেকে দিগন্তের কোনো আওয়াজ এলো না।নাদিয়া ৫-৬মিনিট দিগন্ত কে ডাকল।কিন্তুু অপরপাশ থেকে দিগন্তের সাড়াশব্দ না পেয়ে, মনে কিছুটা ভয় জাগ্রত হলো।ভাবলো,
‘যদি সত্যি অজ্ঞান হয়ে যায়,তাহলে তো আমার পক্ষে এই ভারী দেহ ওয়াশরুম থেকে টেনে বের করা অসম্ভব।তাছাড়া লোক জানাজানি হয়ে গেলে অঘটন ঘটে যাবে।’ভেবে দ্রুত দরজা খুলে দিলো।”

“নাদিয়া দরজা খুলতেই,কুটিল হাসি দিয়ে তড়িঘড়ি করে বের হয়ে আসলো দিগন্ত।চোখ টিপে বললো,
‘কি ভেবেছিলে,আমি অজ্ঞান হয়ে গেছি?হাহাহা.. আমি তো তোমার কথা শুনছিলাম,আর লুঙ্গিটা ভালো করে বাঁধছিলাম।”

“অ্যা! লুঙ্গি?বাসর রাতে তুমি আমার কাছে লুঙ্গি পড়ে এসেছো?নির্লজ্জ, বেশরম..যাও ট্রাউজার পড়ে আসো।নইলে আমি কিন্তুু…”

“নাদিয়া কে আর কথা বলতে দিলো না দিগন্ত।তার আগেই ওর কোমর ধরে কাছে টেনে ঠোঁট জোড়া আঁকড়ে ধরলো।কয়েক সেকেন্ড পর ছেড়ে বললো,
‘উফফ!বেস্ট হ্যাপিনেস এটাতে.. উম্মাহ.. হানি।কত সুইট তুমি।চুমু না খেলে তো বুঝতামই না।”

“দিগন্তের আকস্মিক চুমু তে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো নাদিয়া।সব ভাষা তার হারিয়ে গেলো।সেটা বুঝতে পেরে,দুষ্টু হেসে নাদিয়ার পুরো মুখমন্ডলে অসংখ্য চুমু এঁকে দিয়ে বললো,
‘লুঙ্গি হচ্ছে পুরুষদের জন্য সবচেয়ে শান্তির বস্ত্র।এটাকে অপমান করা অনুচিত।আসো, তোমাকে আমার সৃষ্টি করা একটা ঝাকানাকা কবিতা শোনাই।তাহলে ভালোভাবে বুঝতে পারবে।’বলে নাদিয়ার কোমর ধরে কাছে টেনে মৃদু স্বরে বললো,

**লুঙ্গির শান্তি**

“আমার হানি, শোনো কথা, লুঙ্গির মজা খাঁটি,
যখন পরি, তখনই পাই, এক স্বর্গীয় শান্তি।
প্যান্টের সাথে ঝামেলা, কোমর খোঁচা দেয়,
লুঙ্গি পরে বসলে হানি, আরাম আসে গায়।

হাওয়ার সাথে লুঙ্গি দোলে, মনে লাগে ছন্দ,
পায়ের কাছে সরে যায়, খুলে দেয় সব দ্বন্দ্ব।
তুমি বোঝো না, সোনা বউ, এ সুখের কী দাম,
লুঙ্গি পরলেই বুঝবে তুমি, কীভাবে আসে আরাম!

লুঙ্গি পরে বসলে আমি, মনটা যায় হারিয়ে,
প্যান্টে যা হয় না পাওয়া, লুঙ্গিতে সব পাওয়া যায়।
তুমি হাসো, বোকা বলো, তবু জানো মোর কথা,
লুঙ্গির মাঝে থাকে যে, এক অমলিন শান্তির পাতা।

~মেহের~

” দিগন্তের মুখে লুঙ্গি নিয়ে এহেন কবিতা শুনে,নাদিয়া সব ভুলে গিয়ে হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়লো দিগন্তের বুকে।দিগন্ত তো খুশিতে আটখানা হয়ে নাদিয়ার নরম শরীর টি নিজের সাথে ভালো করে মিশিয়ে নিলো।”

“দিগন্তের গভীর ছোঁয়ায় ঈষৎ কেঁপে উঠলো নাদিয়া।মৃদুস্বরে বললো,’আমার প্রতিশোধ নেওয়া এখনও হয়নি দিগন্ত।”

“দিগন্ত চোখজোড়া বন্ধ করে বললো,
‘এই ভয়ং**কর অনুভূতি নিয়ে কান ধরে উঠবস করতে আমার ইচ্ছে করছে না।তাই আমি আজ তোমায় আমার সুপ্ত প্রতিভা দেখাবো হানি।’
বলে মুচকি হেসে নাদিয়া কে ছেড়ে, ফোনে ইয়ো ইয়ো হানি সিং এর সেই বিখ্যাত গান ছাড়লো,

” লুঙ্গি ডান্স,লুঙ্গি ডান্স,লুঙ্গি ডান্স….”

গানের সাথে তাল মিলিয়ে লুঙ্গি ওলট-পালট করে নাচতে থাকল।এদিকে দিগন্তের এই পা**গলামি কাহিনী দেখে, হাসতে হাসতে ফ্লোরে বসে পড়লো নাদিয়া।”

“নাদিয়া যখন হাসতে হাসতে ক্লান্ত প্রায়,সেই সুযোগ টাকেই কাজে লাগালো দিগন্ত।গান বন্ধ করে নাদিয়ার কাছে গিয়ে বসে মৃদু স্বরে বললো,
‘আমি কিন্তুু ভালো গান ও গাইতে পারি;শুনাই।’বলে মমতাজের সেই বিখ্যাত গানটি গাওয়া শুরু করলো,

🎶আমি নষ্ট মনে নষ্ট চোখে, দেখি তোমাকে
মন আমার কি চায়,বোঝাই কেমনে..🎶

দিগন্তের সাথে তাল মিলিয়ে এইবার নাদিয়া লাজুক হেসে গাইলো,

🎶আপনি গুরু, আমি শিষ্য
বুদ্ধি আমার কম,
আপনি বুঝাইয়া দিলে, বুঝিতে সক্ষম…🎶

“নাদিয়ার এহেন সাড়া পেয়ে, দিগন্ত তো খুশিতে শেষ।দুষ্টু হেসে কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো,
‘ওকে হানি..এখনই বোঝাবো তোমায়।’
বলেই নাদিয়াকে পাঁজা কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শোয়ালো।”

“অগণিত চুৃমুতে ভরিয়ে দিলো নাদিয়ার মুখমন্ডল।দিগন্তের হাত ধীরে ধীরে বিচরণ করলো প্রিয় অর্ধাঙ্গিনীর সর্বাঙ্গে।পুরুষালি হাতের গভীর স্পর্শে অজানা অনুভূতির অগভীর সায়রে ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকল নাদিয়া।অবশেষে হার মানল সেই মাতাল করা স্পর্শের কাছে।নিজেও তাল মেলাতে থাকলো ব্যক্তিগত জীবন সাথীর সাথে।দু’জনের মধ্যে যেনো ভালোবাসার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেলো।”

“স্বামী-স্ত্রীর মিলনের রোমান্টিক মুহূর্তে একে-অপরের কাছাকাছি এসে, পরস্পরের হৃদস্পন্দনকে অনুভব করতে থাকলো।প্রতিটি স্পর্শ, প্রতিটি চুম্বন যেন একটি গভীর প্রেমের প্রমাণ হয়ে উঠলো। রাতের নীরবতা যেন তাদের একান্ত মুহূর্তকে আরও বিশেষ করে তুললো।শরীরের প্রতিটি কনফিগারেশন,চোখের মায়া এবং হৃদয়ের বেদনা, সবকিছু মিলেমিশে একাকার হয়ে গেলো। এই মুহূর্তে অনাবৃত দু’টি দেহের প্রেম যেন আরও গভীর থেকে গভীর হতে থাকল।”

#চলবে…
(আজ আমি শেষ।আগামীকাল কানামাছির মতো নতুন খেলা হবে।দোয়া করি সেই পর্যন্ত আপনারা সুস্থ থাকুন।আমাকেও দোয়ায় রাখবেন।ভালোবাসা অবিরাম।আর হ্যা,রোমান্টিক পাঠকমহল গতকাল আপনারা অনেকে ভয় পেয়েছিলেন,তাই আপনাদের জন্য আজ রোমান্টিক সিন উপহার দিলাম।সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here